#ঝরা পাতার দিনগুলো
#পান্না হাবিব
পর্ব- ৩
মাথা ঝিমঝিম করছে মেহের? প্রশ্ন শুনে সামনে তাকালাম। সাব্বির কখন বাথরুম থেকে বের হয়েছে টেরও পাইনি। আমার দিকে তাকিয়ে গা জালানো হাসি হেসে বলছে।
-সব জেনে শুনে আমাকে বিয়ে করেছ কেন তাহলে? শান্ত কন্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করলাম।
-পাপ করেছিস শাস্তি পাবি না?
-তোমার সাথে তো কিছু করিনি।
-আমার সাথেই তো সবথেকে বড় অন্যায়টা করেছিস্। আবার বড় গলায় কথা বলছিস!! সব জেনে শুনেও তুই কিভাবে পারলি মেহের!!!
-আমি কি করেছি!!!??আজব তো!!
-কিছুই করিসনি?? তাহলে এইগুলা কি? গিফটবক্সটা দেখিয়ে চিৎকার করে উঠলো। রেগে রুম থেকে বের হয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।
আমি চুপচাপ খাটে পা দুলিয়ে বসে আছি। আব্বুর কথা মনে পরছে অনেক। আব্বু থাকলে নিশ্চয়ই এই বিয়েটা হতো না।যতদিন আব্বু বেচে ছিলো সাব্বিরের সাথে বিয়েতে মানা করে দিয়েছে। কিন্তু আব্বু মারা যাওয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যেই কি থেকে কি হয়ে গেলো!!।
আচ্ছা ফয়সালের সাথে তো আমার কিছু হয়নি। কি পাঠাইছে ও। গিফটবক্সটা খুলতেই খুশিতে চোখে আবার পানি চলে আসলো। আমি তো জানি যে ফয়সাল আমার ক্ষতি হোক এমন কিছু করবে না। এমনি এমনি ভয় দেখায় ছেলেটা। এতো কস্ট কেনো হয়!!
কি সুন্দর করে কিটকেট দিয়ে সাজানো বক্স টা!! তাও আবার মালয়শিয়ার কিটকেট গুলো। আর একটা কার্ড। আমাকে আর সাব্বিরকে উইশ করে লিখা।
জিনিস গুলো সাব্বিরের ড্রয়ারে রেখে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।
-বেশি রাগ উঠলে রুম থেকে বের হয়ে যেতে হয়। সিগারেট ধরাতে হয়। আরো বেশি রাগ হলে চুপচাপ ঘুমিয়ে যাবা। দেখবা সব রাগ ফিনিস।
বিরক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল তারপর তুই ফয়সালের সাথে কথা বলতি তাইতো?
আমি মুচকি হেসে বললাম সেটা তো তোমার সামনেই বলতে পারি। এইটা বলে বারান্দায় দাঁড়ানোর আর সাহস করলাম না। বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
আচ্ছা আমার মুখে হাসি কিভাবে আসছে!! ভিতরটা কেমন জানি করছে। সব ভেঙেচুরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু গলার কাছে এসে সব আটকে আছে। আয়নার দিয়ে তাকিয়ে মনে হলো ফয়সাল দাড়িয়ে আছে পিছনে!!
-খুব মজা পাচ্ছো তাই না ফয়সাল?কি হতো আর ২টা দিন পরে ব্রেকআপ টা করলে? তাহলে অন্তত তোমার বাসায় থাকতাম আমি। জানো তোমার আম্মুর পায়ে পর্যন্ত ধরেছি আমি। বাবা মা মরা মেয়েকে নাকি তারা ঘরের বউ করবে না। আচ্ছা বাবা মা কি কারো চিরকাল বেচে থাকে? আচ্ছা আমাদের তো এমন আরো অনেকবার ব্রেকাপ হয়েছিল। কই দুদিন পর তো আবার সব ঠিক হয়ে যেতো। তাহলে এইবার কেনো সব এলোমেলো হয়ে গেলো।
জোড় করে কান্না করার চেষ্টা করছি। কিন্তু চোখের পানি আর গরিয়ে পরছে না। গলা পর্যন্ত এসে মাছের কাটার মতো অাটকে আছে। উল্টো চেহারাটা আরো ব্যাঙের মতো লাগছে। নিজেই জোড়ে জোড়ে হেসে দিলাম আমি।
চোখভর্তি পানি আর মুখে হাসি!! কি অদ্ভুত ব্যাপার একটা!!
বাথরুমের দরজাই জোড়ে ধাক্কার জন্যে অদ্ভুত ব্যাপার হাওয়াই মিলিয়ে গেলো!!
-কি সমস্যা তোর? বাথরুমে কার সাথে কথা বলে হাসছিস? বের হো। তুই বাথরুমে গিয়েও বয়ফ্রেন্ড বানিয়েছিস?
– হুম। দেখো বাথরুমে আমার জন্য সালমাল খান বসে আছে।আর বলতেসে আমাকে নিয়ে যাবে এইখান থেকে। বলেই আরোও জোরে জোরে হাসতে লাগলাম আমি।
সাব্বির খুব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এই দৃষ্টিতে ঠিক আছে আমার জন্যে বুঝতে পারলাম না। সত্যিকার অর্থে আমি এর মানের বের করার অবস্থাতেই নেই!!
মাথার ভিতরে ফয়সাল আর বাইরে সাব্বির। ছোটবেলায় খুব ইচ্ছে ছিল দুই স্বামির এক বধু হবার। ঐটা যে সত্যি হবে জানলে জীবনে কোনদিন বাংলা মুভি দেখতাম কিনা সন্দেহ!!
আমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনলে কেউ বিশ্বাসই করবে না!!! কারণ ফয়সাল তো এখনো চাকরি পায়নি। সব ফ্রেন্ডরা ধরেই নিয়েছে আমার আর ফয়সালের বিয়েটা নেক্সট ইয়ারেই হবে। ভার্সিটিতে সবাই আমাদের সম্পর্কে জানে। আর জানবে নাইবা কেন। দুজন তো একই ভার্সিটি একই ফ্যাকালটি এমনকি মাস্টার্সও একি ডিপার্টমেন্টে!! শুধু ও আমার এক বছরের সিনিয়র। সবাইকে কি বলবো আমি!!
আর সবথেকে বড় কথা আমি ওকে ছাড়া থাকবো কিভাবে!! ফয়সালের সাথে সত্যিকারের ব্রেকাপটা আমার হয়েই গেল….