গল্পঃ- ডাক্তার বর
পার্টঃ-… ০৫
.
.
.
.
– ঠিক, এই মূহুর্তে যদি ঘুম থেকে না উঠিস তাহলে………
– কি করবে?
– মাথায় গরম চা ঢেলে দিবো।
– কিহ…..
” বর্ষার কথা শুনেই লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। বলে কি এই মেয়ে? মাথা কি ঠিক আছে। বর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখি সেই রাগী চোখ গুলো নিয়েই তাকিয়ে আছে। যা মনের ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সবসময়ই জন্য অপেক্ষায় থাকে।
” বর্ষা তখনই রেগে তাকিয়ে বললো;
– এখন উঠবি কি-না।
– পারবো না….
– এই দেখ…..
– ওমা গো………
– এই রুদ্র, কি হয়েছে। দরজা খোল, রুদ্র……….
” হঠাৎ করেই বাহিরে দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকতে থাকে। দরজায় ডাক শুনে ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। কিছু টা সময় লাগলো যেনো বুঝতে। মূহুর্তেই যেনো দুঃস্বপ্ন দেখে সজাগ হয়ে গেলাম। তখনি বুঝতে পারলাম বর্ষা যে প্রতিটি মুহূর্ত দখল করে নিয়েছে। প্রতিটি অস্তিত্ব জুড়েই বসবাস করছে।
” এই দিকে অনবরত দরজায় ধাক্কায় দিয়ে ডাক দিয়েই যাচ্ছে। অনিচ্ছা সত্বেও উঠে গিয়ে দরজা খোলে দিতেই বললো;
– বাবা, কি হয়েছে তোর এমন ভাবে চিৎকার করে উঠলি কেনো?
” আম্মুকে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম;
– কই কি কিছু হয়নি।
– বললেই হলো। কিছু হয়নি,এমন ভাবে কেউ চিৎকার করে।
” আম্মু কে বুঝতে পারছি না। কি করবে না করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। তখনই নজর গেলো বর্ষা হাতের মাঝে চামচ নিয়ে এই দিকে এগিয়ে আসছে। বর্ষাকে দেখেই ঢোক গিললাম।যাকে নিয়ে ভয় সেই এসে হাজির।
” বর্ষার চোখে চোখ পড়তেই চোখ টিপ মারলো। বর্ষার কান্ড কারখানা দেখে চমকে উঠলাম। এ কেমন মেয়ে রে!
আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে দেখি খেয়াল নেই। আম্মু তখনো আমাকে নিয়ে পড়ে আছে। কখনো মাথায় হাত দিয়ে আবার কখনো বুকে ফু দিয়ে বার বার জানতে চাচ্ছে কি হয়েছে?
আমার তো সে দিকে খেয়াল নেই ভাবছি বর্ষা আবার কি করে বসে। তখনি সব ভাবনার জল্পনা কল্পনা বাদ দিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো;
– খালাম্মা, কি হয়েছে?
” খালাম্মা! এ যে সবটুকু গ্রামের মেয়ের মতো চাল চলণ। দেখে কেউ বুঝতেও পারবে না শহরের মেয়ে। পোশাক আশাক যে একদম গ্রামের খাটি মেয়ের কথা। আর কথাও কিভাবে বলতে পারলো।
বর্ষার কথা শুনেই আম্মু বললো;
– দেখ না বর্ষা, ছেলেটা কেমন সাত সকালে ঘুম থেকে চিৎকার করে উঠলো।
” আম্মুর কথা শুনেই বর্ষা আমার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে দিলো। বর্ষার হাবভাব দেখে তাকিয়ে রইলাম আবার কি করে বসে। বর্ষা আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো;
– খালাম্মা, আপনার ছেলে রাত সজাগ থেকে সকালে ঘুমালে এতো এমন বাজে স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে উঠবেই। মনে হয় ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠেছে।
– কিহ! আমার ছেলে এমন হতেই পারে না। ও ভয় পাবার ছেলে না।
– খালাম্মা, আপনি কি যে বলেন। দেখেন নাহ সিরিয়ালে ভূতের ছবি দেখে ভয় পায়। আপনার ছেলেও মনে হয় ভূতের ভয় পেয়েছে।
” বর্ষার আর আম্মুর কথা শুনেই চারদিকে তাকিয়ে বললাম;
– ভূত! কই ভূত কিসের ভূত…..
” আমার কথা শুনেই বর্ষা বললো;
– খালাম্মা,দেখছেন আমার কথা তো বিশ্বাস করতে চাইলেন না। এখন নিজের চোখেই দেখেন আপনার ছেলের কান্ড কারখানা।
– কি হতছাড়া…আজকে তোর রাতের ঘুম বের করছি।
” বর্ষার কথা শুনেই আম্মু আমার দিকে তেড়ে আসলো। আম্মুর অবস্থা দেখেই কিছুটা সরে গেলাম। বর্ষা মিটি মিটি হেসে যাচ্ছে যা দেখে সকাল সকাল রাগ উঠছে। আমাকে মায়ের হাতে বকা খাইয়ে খুব মজা নিচ্ছে। এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।
” বর্ষার মুখের হাসি দেখে ড্রয়িং রুমের দিকে যাচ্ছি তখনই জুইঁ কোথায় হতে ছুটে এসে আম্মুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো;
– আম্মু কি খুঁজ আর ভাইয়া কেনো এমন ভাবে পালিয়ে যাচ্ছে?
– দেখ, হতছাড়া সারা রাত ভূতের ছবি দেখে সাত সকালে চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠলো। আমাদের তো ভয় পাইয়ে দিলো।
” আম্মুর কথা শুনেই জুইঁ একবার আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। পরক্ষনেই বর্ষার দিকে তাকাতেই চোখ টিপ দিয়ে কি যেনো বললো। বর্ষার চোখ টিপ দেখে মুচকি হেসে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো;-
– আম্মু, চল তো। তোমার এতো টেনশন করতে হবে না। তোমার ছেলের ভূত তাড়ানোর লোক আছে। ওনি সব ভূত তাড়িয়ে ঠিক করে নিবেন।
” আমার দিকে কথা গুলো বলেই আম্মু কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। জুইঁয়ের কথা শুনেই হা করে তাকিয়ে রইলাম। বলে কি এইসব? বর্ষাকে চোখের ইশারায় কি যেনো বললো। বর্ষা তখনো মিটি মিটি হেসে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে ইচ্ছে হচ্ছে……. থাক, সে ইচ্ছে টা না হয় থাক। আপাতত নিজেকে রক্ষা করি।
– হতছাড়া, সকাল সকাল আমার সিরিয়াল টা মিস করলাম। ফের যদি কখনো এমন করেছিস তোর হাড্ডি গুলো এক করে ফেলবো।
” আম্মু কথা গুলো বলতে বলতে জুইঁয়ের সাথে যাচ্ছে। আম্মু কে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ এতো সিরিয়াল মাথায় আসলো কি করে?
” আম্মুর কথা শুনে মাথা চুলকিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াতেই বর্ষা ডেকে বললো;-
– এই যে সাহেব এই দিকে আবার কোথায় যাচ্ছেন?
” বর্ষার ডাক শুনেই পুরা বেকুব সেজে গেলাম। কি বলবো কিছুই মাথায় আসছে না। একদিকে আম্মুর কান্ড কারখানা অন্য দিকে বর্ষা কোনো কিছুই বুঝতে পারছি না। নিজেকে মনে হয় যেনো ভূল করে অন্য কোথায় চলে এসেছি।
– কথা কি শুনতে পান নাই নাকি আবার বলতে হবে?
” বর্ষার কথা কথার উত্তর না দিতেই ফের রেগে জানতে চাইলো। বর্ষার কথা শুনেই তাকিয়ে বললাম;
– জাহান্নামে, তাতে আপনার কি?
– আমার নাতো কার কি? অন্য কেউ কি আছে যে তাঁর কিছু আসে যাবে? যদি কখনো শুনেছি না তাহলে নাক ফাটিয়ে দিবো। এতো কষ্ট করে এই বাসায় কেনো আসলাম? হুম……
” বর্ষার কথা শুনে কিছুটা রেগে গিয়ে বলতেই আমার রাগের ধার না ধেরে একদম কাছাকাছি এসে জানতে চাইলো। এই মূহুর্তে বর্ষার নিঃশ্বাস টুকু শুনতে পাচ্ছি। যেনো অনেক কিছুই বলতে যাচ্ছে। বর্ষার চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় দু’জনেই চোখ সরিয়ে নিলাম।
” বর্ষার দিকে আর তাকাতে পারি নি। নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম;
– ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাবো……
– একজন ডাক্তার হয়ে বেলা পর্যন্ত ঘুমানো। এখন থেকে সেটা হবে না। এখন থেকে এই অভ্যাস পরিত্যাগ করে ফেলেন।
– আমি পারবো না।
– পারবেন না মানে…..?
” হাতের চামচ নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জানতে চাইলো রাগের মাথায়। বর্ষার রাগ সম্পর্কে আগেই ধারণা আছে। তাই মিছে মিছি নিজের বিপদ না ডেকে আনাই ভালো।
“বর্ষার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি তাকিয়ে আছে আমার দিকে। নিজেকে রক্ষার জন্য বললাম;
– হ্যা পারবো…..
– এই তো, চা দিচ্ছি খেয়ে বাহির থেকে ঘুরে আসেন।
– জ্বি যাচ্ছি…….
” বর্ষাকে বলতেই হাসতে শুরু করলো। এই মূহুর্তে কথার অবাধ্য হওয়ার সাধ্য নেই। বপশ ভালো করেই বুঝতে পারলাম আম্মুকেও বর্ষা নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছে। সবকিছুই কিছুর জন্য জুইঁ দায়ী। দেখিস তোদের সব কটা কে দেখে নিবো। রাগে গজগজ করতে করতে বের হয়ে গেলাম।
” বর্ষা চা করে দিলেও না খেয়ে আলে গেলাম। সকালের প্রকৃতি টা অনেক সুন্দর। যা সত্যি অনেক মিস করেছি। বর্ষাকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম মনে মনে যে এমন সুন্দর একটা সকালে অধিকার নিয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। তবে সবকিছুই যেনো সিরিয়ালের মতো হচ্ছে। মাথার উপর দিয়ে সবকিছুই যাচ্ছে তবে এই টুকু বুঝতে পারছি অনেক দিন ধরেই এমন কারসাজি হচ্ছে।
” এতো বড় ছেলে নিজের রুম টাও গুছিয়ে রাখতে পারে না।
” কথা গুলো শুনেই জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি বর্ষা নিজের হাতে সবকিছুই পরিষ্কার করছে। অনেক সুন্দর করে আমার রুম সাজিয়ে দিচ্ছে। সেই সাথে যত রাগ সব যেনো তাদের উপর দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছু না বলেই চলে আসলাম।
– কি রে এতো লুকিয়ে লুকিয়ে কার সাথে কথা হচ্ছে?
” জুইঁয়ের রুমের সামনে দিয়ে যেতেই কার সাথে যেনো ফিসফিসয়ে কথা বলছে। তখনি জুইঁকে গিয়ে পিছনে হাতে নাতে ধরে ফেললাম। আমাকে দেখেই জুঁই চমকে উঠে বললো;
– ভাইয়া, তুই…….
– হে, তো তুই কার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলছিস?
– সেটা বলবো কেনো? তুই আমার রুমে নক না করে আসলি কেনো?
” আমার কথা শুনে জুঁই বলতেই ওকে বললাম;
– ওরে বাবা, তোর রুমে নক না করে চলে আসলাম বলে এমন ভাবে বলছিস আর তুই যে আমার পারমিশন ছাড়া অন্য জনকে বাসায় কাজের মেয়ে সাজিয়ে নিয়ে আসলি তাঁর বেলায় কি? বলবি নাকি আম্মু কে বলবো?
– ভাইয়া, প্লিজ আম্মুকে বলিস না। সবকিছুই বলছি……
” আম্মুর ভয়ে জুইঁ সবকিছুই খোলে বললো। জুইঁয়ের কথা শুনেই চোখ ছনছাড়া। বলে কি তাহলে তুমি এতো দূর।
“জুইয়ের কথা শুনেই জুইকে বললাম;
– দেখ,তুই যথেষ্ট বড় হয়েছিস।তোর ইচ্ছে অনিচ্ছা আছে তবে এই টুকু বলবো আমাদের সম্মান নষ্ট হবে আশা করি এমন কিছু করবি না।
– আমি কখনোই এমন কিছু করবো না। তবে……
– তবে কি…?
” জুইঁয়ের কথা শুনেই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলে বললো;
– বর্ষাকে কবে ভাবী করে দিচ্ছিস?
– আগে তোকে বিদায় করে তারপর….
– উহু সেটা হচ্ছে না। তাই তো আগেই নিয়ে এসেছি যেনো আমাকে তাড়াতে না পারিস।
– মানে……
” জুইঁয়ের কথা শুনেই অবাক হয়ে জানতে চাইলে বললো;
– মানে, আম্মুর মন জয় করার জন্য বর্ষাকে এই বাড়িতে কাজের মেয়ে সাজিয়ে এনেছি সেটা ঠিক তবে বর্ষা যেনো আম্মুর মন জয় করে মেয়ে হিসেবে থাকতে পারে সেটাই করে যাচ্ছে। তুই না বলেছিলি আমার বান্ধবীর অহংকার বেশি দেখ,তোর জন্য কতকিছু করছে।আর তুই কি-না….
– আমি কি…?
– সেটা বর্ষা বলবে……
” কথা গুলো ব’লেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। জুইঁ কে আর হাতের নাগালে পাই নি তবে এমন বোন যে ভাইয়ের ভাগ্যে থাকে আর যাই হোক সে ভাই কখনো এমন বোন কে হাতছাড়া করতে চাইবে না।
হঠাৎ করেই আম্মুর ডাক শুনে তড়িঘড়ি করে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে। ওহ! সবাই কোথায় সব থেকে মিস যে আব্বু। যদিও আজ চলে আসার কথা ছিলে তবে কাল আসবে সেটা বলে দিয়েছেন। ব্যাস্ততার জন্য আজকে আসতে পারবেন নাহ।
” আম্মুর কাছে এসে বললাম;
– আম্মু ডেকেছিলে?
– হ্যা, বর্ষা কে নিয়ে মার্কেট থেকে ঘুরে আয়।
” আম্মুর কথা শুনেই অবাক হয়ে বললাম;
– কেনো?
– বর্ষা কাজের মেয়ে দেখে কি এই পোশাকে থাকবে নাকি। আর টিভির নাটকে দেখি কত সুন্দর সুন্দর পোশাক পড়ে কাজের মেয়েরা ঘুরে। বর্ষাও এখন থেকে সেভাবে থাকবে।
– এই সব কি বলছো?
– যা বলছি সেটা কর…..
” আম্মুর ধমক পেয়ে চুপ হয়ে গেলাম। নির্ঘাত এই সিরিয়াল দেখে মাথা সব নষ্ট হয়েছে। কি জানি কবে আমাকে সহ পাগলা গারদে যেতে হবে। এখানে কথা বলাই বৃথা তাই মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।
” বর্ষাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হতেই বর্ষা বললো;
– এই যে মিস্টার….
– জ্বি…
– গাড়ি থামান।
– কেনো?
” বর্ষার কথা শুন জানতেই বললো;
– আমি পিছনে বসে যেতে পারবো না। সামনে একসাথে বসে যাবো।
– পারবো না। যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন।
” আমার কথা শুনেই অনেকটা রাগ নিয়ে বললো;
– পারবি না মানে?
– কিছু নাহুকুম …………………… (চলবে)