ডাক্তার বর পর্ব শেষ

গল্পঃ- ডাক্তার বর

পার্টঃ- ০৬ & শেষ
.
.
.
– কিছু না। হুকুম কি মানতেই হবে মেম সাহেব?
– জ্বি, স্যার……
– মেম সাহেব, তো কি করতে হবে?

” বর্ষার কথা শুনে হাসি মুখে জানতে চাইতেই বর্ষা বললো;

– পাশের সিটে কি জায়গা হবে?
– একদিনের জন্যই বুঝি?
– নাহ! চাইলে সারাজীবন আগলে রাখতে চাই।
– অধিকার টা নিয়ে নিলেই হয়।

” বর্ষার কথা শুনেই হাসি মুখে বলতেই দুজনে হেসে উঠলাম। দুজনের রসায়ন টা যেনো বেশ ভালো জমে উঠেছে। বর্ষা বেশ হাসি খুশি মনেই সামনে এসে কাঁধে হেলান দিয়ে বললো;

– এমন ভাবে রাখতে দিবে তো বাকী টা জীবন?

” বর্ষার কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি অশ্রুজ্বল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। যেনো কোনো অপ্সরা আমার সামনে বসে আছে।

” বর্ষার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম;

– মেম সাহেব, রাখার জন্যই তো এতোকিছু। বাকী টা আপনার মর্জি, যদি আপনি সাকসেফুল না হতে পারেন তাহলে……

” আমার কথা শেষ না হতেই মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে বললো;

– এমন কথা বলবে না। তোমার ভাকবাসায় দেখবে মায়ের মন ঠিক জয় করে নিতে পারব।
– হুম, তোমার উপর সে বিশ্বাস টুকু আছে। তবে…..
– তবে কি…?

” আমার কথা শুনেই বেশ অবাক হয়ে জানতে চাইলো। যেনো কিছু টা ভয় গ্রাস করে রেখেছে। বর্ষার চোখে বেশ ভয় তখন ভয় দূর করার জন্য বললাম;

– মায়ের মন জয় করতে গিয়ে আমার জীবন কী তেজ পাতা করে ফেলবেন?
– কি বললা?
– নাহ, কিছু না। দেরি হয়ে যাচ্ছে চল…….

” বর্ষার রাগী চোখ দেখি আর কিছু বলার সাহস হলো না। যদি বিপরীত হয়ে যায় তাহলে সব কিছুই ভেস্তে যাবে। চাই না একটু ভূলের জন্য বর্ষা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাক। অনেক কষ্ট করে যে বর্ষা কে পেয়েছি।

” ওহ! আড়ালের গল্প টা তো কারো জানাই হলো না। বর্ষা আর আমি দুজন দুজনকে বেশ পছন্দ করি আগে থেকেই। সেই বিয়ে বাড়ির পর থেকেই মাঝে মাঝে কথা হতো। তবে সেটা বন্ধুত্ব হিসেবেই,বর্ষাকে ভালবাসি বললেও বর্ষা আগেই বলে দিয়েছিলো আগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর সবার মন জয় করে পেতে হবে।

” এতো দিন সবকিছুই ঠিকঠাক চললেও মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো যেনো আম্মু। কেননো না আগে আম্মুর মন জয় করে নিতে হবে। আম্মুর একটাই কথা আমি কোনো বউমা চাই না। এই বাড়িতে একটা মেয়ে চাই তাই যে মেয়ে হিসেবে এই বাড়িতে আসতে পারবে সেই বউ হবে এই বাড়ির।

” আম্মুর কথা শুনে চুপসে গেলে বর্ষা সব শুনে বললো;

– আরে এতো টেনশন কিসের। সব আমি বুঝে নিবো তুমি শুধু চুপ করে দেখে যাও।

” জুইঁও কিছু জানে না। জুইঁকে হাত করেই এতো কিছু, বর্ষার কাজের মেয়ে হিসেবে আসা মায়ের মন জয় করা। তবে এই কয়েক দিনে বর্ষাকে ছাড়া যেনো কিছুই বুঝতে পারে না।

” বর্ষা আর আমি দুজনেই মার্কেট চলে আসলাম। বর্ষার মার্কেট করা দেখে চোখ ছন্নছাড়া। এ কি? সারা দুনিয়ায় মার্কেট কি একদিনেই করে ফেলবে? একসময় থাকতে না পেরে আম্মু কে ফোন দিয়ে বললাম;

– আম্মু তুমি কাকে পাঠিয়েছো এতো দেখি সব কিছুই কিনে নিয়ে আসছে।

” আমার কথা শুনেই আম্মু ধমক দিয়ে বললো;

– চুপ করে থাক। যা করছে সেটাই মেনে যা। দুদিন পর পর কে মার্কেট করবে?

” আম্মুর কথা শুনেই ভ্যাবচকা হয়ে গেলাম। বলে কি মাথা কি ঠিক আছে? নাকি সিরিয়ালে দেখে সবকিছুই আউলে গেছে?

” অবশেষে মহারাণীর মার্কেট করা শেষ হলো। যেনো বিয়ের মার্কেট করে নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন। এই দিকে আমার অবস্থা শেষ। আগে জানলে কে আসতো? মনে মনে ডাইনীর উপর প্রচন্ড রেগে আছি। সেজে মেম সাহেব সেজে সবকিছুই আমার দ্বারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

” বাসায় ফিরে দিকে এলাহি কান্ড। বাড়ি দেখেই বুঝায় উপায় নেই এটা বিয়ে বাড়ি ছাড়া অন্য কিছু। অবাক হয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখছি আর ভাবছি কাহিনী এতো কিছু কিসের জন্য। মাথায় যেনো কিছুই কাজ করছে না। এখন তো দেখি নিজেকেই পাগল মনে হচ্ছে। সবকিছুই কেমন যেনো ঘোলে যাচ্ছে। কিছুই বুঝতে পারছি না।

” মার্কেট নিয়ে চারদিকে তাকিয়ে ভাবছি আর উপরে উঠছি তখনি আব্বু কোথা থেকে এসে হাজির। এসেই আমাকে বললো;-

– তোর কি কোনো কান্ড হুস নেই? আজ একটা শুভ দিন আর তুই কই ছিলি?
– মানে…?

” আব্বুর কথা শুনেই অবাক হয়ে জানতে চাইতেই আম্মু এসে বললো;

– আমার ছেলেকে বকা দিবে না তো। আমি পাঠিয়ে ছিলাম তাদের বিয়ের বাজার নিজেরা করে আনতে। তাদের পছন্দ অপছন্দ আছে না।

” আম্মুর আর আব্বুর কথা শুনেই অবাক হয়ে তাঁদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। বলে কি? কি শুনছি আবার কোনো সিরিয়ালের শুটিং আছি না তো?

” সবকিছুই যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আম্মুর কথা শেষ হতেই আব্বু বললো;

– ভালো করেছো। এই রুদ্র এসেছি তাড়াতাড়ি নিয়ে যা।

” আব্বুকে কিছু বলার আগেই বন্ধুরা এসে ধরে নিয়ে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি কাহিনী কি? সবকিছুই যে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নে যেনো সবকিছুই হচ্ছে। নিজেকে চিমটি কেটে পরীক্ষা করে দেখি নাহ সবকিছুই চোখের সামনে হচ্ছে। এতো কিছুর রহস্য ঠিক বুঝতে পারছি না।

” স্বপ্নের ঘোরেই যেনো সবকিছুই হয়ে গেলো। বর্ষা বউ সেজে বসে আছে। বর্ষাকে বেশ কয়েক বার আড়চোখে দেখলেই বর্ষা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। বর্ষার আব্বু এসে তখনি বললো;

– ভাইসাব,শুভ কাজে দেরি করতে নেই।
– হ্যা, এই কাজী তাড়াতাড়ি বিয়ে কাজ শুরু করেন।

” আব্বুর কথা শুনে কাজী সাহেব যখনই এসে সামনে বসলো তখনই বলে উঠলাম;

– আব্বু এই সব কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

” আমার কথা শুনেই আম্মু এগিয়ে এসে বললো;

– আর অভিনয় করতে হবে। অনেক দিন ধরেই লক্ষ্য করছি। কি মনে করেছো তোমাদের উপর কোনো নজর রাখি না। যা ইচ্ছে তাই বলে যাবে আমরাও মেনে নিবো। এই বয়সটা আমরাও পেরিয়ে এসেছি। এখন বাধ্য ছেলের মতো বিয়ে করো।
– মানে……
– মানে? যেনো কিছুই জানে না….

” তখনই আব্বু সব বলতে শুরু করলো….

” আমাকে আর বর্ষাকে একদিন দেখে বাসায় আম্মুর কাছে বলে। তখন আম্মুও বিশ্বাস করতে চাইনি। পরে আম্মুর সামনেও একদিন দুজনকে একসাথে দেখালে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে পড়ে। কেনো বিয়ের কথা বললে এড়িয়ে যায়। আম্মু আর আব্বু বিয়ে করানোর জন্য উঠে উঠে পড়ে লাগে। তবে কোনো কিছু তেই যখন রাজী হচ্ছি না তখনই নিজেদের চালে নিজেরাই ধরা পড়ি।

” বর্ষাকে যখন কাজের মেয়ে হিসেবে নিয়ে আসে তখন আম্মুও কিছু বলে নি। বর্ষাকে অনেক ভালো লেগে যায় আর ইচ্ছে কৃত ভাবেই এতো কিছুর আয়োজন। সবকিছুই যখন জুইঁ জানতে পারে তখন বেজায় চটে গিয়ে এই আয়োজন করে।

” আম্মু আর আব্বুর কথা শুনেই চমকে উঠে। তাহলে তলে তলে এতোকিছুর আয়োজন আর আমরা কি-না??

” আব্বুর কথা শুনে ভাবছি তখনি আম্মু বলে উঠলো;

– এখন বিয়ে কর। শুভ কাজে দেরি কিসের?
– আমি এই কাজের মেয়ে কে বিয়ে করতে পারবো না।
– কি বললি? বর্ষা কাজের মেয়ে…..

” আমার কথা শুনেই আম্মু যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। আম্মুর রাগ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। তখন আম্মু এসে বললো;

– কাজের ছেলে এই হয়ে এই বাড়িতে তুই থাকবি। একজন মেয়ে চেয়েছিলাম আর আমি মেয়ে পেয়ে গেছি।
– আ……

” আর কিছু বলতে যাবো তাঁর আগেই সবাই মিলে ঘিরে ধরলো। বাধ্য হয়ে বিয়ে টা করতেই হলো যদিও মনে মনে অনেক খুশি। হাজার হোক দশটা না পাঁচ টা একটা মাত্র বউ হতে যাচ্ছে। সবকিছুই এতো সিরিয়ালের মতো হয়ে যাবে কে জানতো। তবে এই জন্য অবশ্য বর্ষার সব ক্রেডিট। যা হয়েছে সবকিছুই বর্ষার জন্য।

” বিয়ের আয়োজন টা যেনো সিরিয়ালের মতোই ঘরোয়া পরিবেশে শেষ হয়ে গেলো। ভেবেছিলাম ইতি টানবো তাঁর আগেই যে এতো কিছুর আয়োজন করে রেখেছে কে জানতো। তড়িঘড়ি করে আব্বু দেশে আশা, আর আমাদের হঠাৎ করেই মার্কেট কিছুই বুঝতে পারছি না।

” বিয়ে শেষ হতেই আম্মু এসে বলল;

– বর্ষা, মেয়ে হয়ে মায়ের সাথে এতো চালাকি। কেমন জব্দ করলাম?

” বর্ষা কিছু টা লজ্জা পেয়ে বললো;

– না, মা ভেবেছিলাম আমি…..
– থাক, মা আর ভাবতে হবে না। মায়ের কাছে মেয়ে সবসময়ই মেয়েই থাকতে পারবি না?
– দোয়া কর মা, যেনো তোমাদের আগলে রাখতে পারি।

” বর্ষা আর আম্মুর কথার মাঝ খানেই জুইঁ এসে বললো;

– কি রে ভাইয়া, আমার সাথে এতো চালাকি। এখন কেমন হলো?

” জুইঁয়ের কান মলাই দিয়ে বললাম;

– এখন তো ভালোই হয়েছে। সিরিয়াল দেখে দেখে এতো কিছু শিখে ফেলছিস। তোর বিয়ের কাজ টাও সেরে ফেলতে হচ্ছে।
– বললেই হলো, এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।

” আমাদের ভাই-বোনের কথা শুনেই হেসে উঠলো বর্ষা আম্মু। অন্যরা তখন খোশ গল্পে জমে আছে। বর্ষাকে চোখ টিপ দিয়ে জুইঁ বলে উঠলো;

– আম্মু, চলো ভাইয়া আর ভাবি আলাদা গল্প করুক। হাজার হোক ভূত তাড়ানোর মানুষ এনে দিয়েছি। তোমার ছেলে আর দিনে দুপুরে ভূতের ভয় পাবে না।

” আমাদের কে কথা গুলো বলেই দরজা খোলে চলে গেলো। আম্মু আর জুইঁ চলে যেতেই বর্ষা গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। বর্ষা দরজা বন্ধ করতে করতেই বললাম;-

– দেখো,আমরা কি ভেবেছিলাম আর কি হলো….?

” আমার কথা শুনেই বর্ষা রেগে গিয়ে বললো;

– কি ভেবেছিলি কাজের মেয়ে বিয়ে করবি না?
– কি কি বলছো…?

” বর্ষার রাগ দেখেই জানতে চাইলে বললো;

– মানে? হে সবার সমানে কি বলছিলে কাজের মেয়ে আমি নাহ। তোর জন্যই কাজের মেয়ে এসেছি আর তুই…..

” মেঘ জমে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে আসার আগেই সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে গেলো। এখন আর বৃষ্টি ঝড়াতে চাই না এই দিনে। তাই বর্ষাকে বললাম;

– আরে আমি তো এমনি বলেছিলাম।
– এমনি নাহ..
– হুম, এই যে দেখো কান ধরে বলছি….

” আমার কান ধরা দেখেই বর্ষা হেসে উঠলো। বেশ ভালো করেই জানি বর্ষার সামনে একটু কান ধরে বললে কখনোই রাগ করে থাকতে পারে না। বর্ষা একটু অভিমান সুরেই বললো;

– হয়েছে! আর ঢং করতে হবে না। তবে আমার ইচ্ছে টা পূরন হয়েছে।
– কিহ? আমি ঢং করি আর কিসের ইচ্ছে?

” বর্ষা আমার গলায় জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী সুরে বললো;

– ন্যাক, যে কিছুই জানে না। আমার ডাক্তার বর পাওয়ার ইচ্ছে টা পূরন হলো। অনেক দিন ধরে ভেবে যাচ্ছি কবে সেই ডাক্তার বর পাবো।
– হু, আর আমার যে কাজ…..
– কি?
– না কিছু না।

” বর্ষাকে বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।যদি ভূল করেই বলে ফেলি তাহলেই শেষ। আজ আর কপালে সুখ সইবে না। ওই অভিমান আর রাগ ভাঙাতেই দিন শেষ হয়ে যাবে।

” বর্ষা নীরবতা ভেঙে বললো;

– সত্যি, তোমার মা-বাবার মতো যেনো সবাই বুঝতে পারে।
– আর তুমি……

” বর্ষার কাছে জানতে চাইতেই বর্ষা বললো;

– স্যার, আপনাকে বলতে হবে না। মা-বাবার অধিকার টা যেমন আমার তেমনি এখন থেকে আপনার দায়িত্ব টাও আমার।
– হু……
– আর হু বলতে হবে না। আপনার উপর বেশ রেগে আছি।
– কেনো?

” বর্ষার কথা শুনে অবাক হয়ে জানতে চাইলে অভিমানী সুরে বললো;

– আমার নুপুর….
– ওহ! বলতে হবে না……

” বর্ষার কথা শুনেই তাড়াতাড়ি নুপুর গুলো নিয়ে আসলো। বর্ষাকে দেখাতেই বললো;

– পড়িয়ে দেওয়ার জন্যও কি বলতে হবে?
– নাহ! তবে এখন বৃষ্টি পাবো কোথায়?
– বৃষ্টি কেনো? ওই বুকের মাঝে সুখের বৃষ্টি খুঁজে পেলে বুঝি হবে না।

” বর্ষা কথা গুলো বলেই জড়িয়ে ধরলো। বর্ষাকে কাছে টেনে নিলাম। বর্ষার পায়ে নুপুর গুলো পড়িয়ে দিয়ে আলতু করে কপালে স্পর্শ করে বললাম;

– মেম সাহেব, এই বুকেই বাকী টা সময় রাখতে চাই।
– হুম, থাকবো…কখনোই হারিয়ে যেতে দিবো না।

” দু’জন দুজনকে জড়িয়ে নিলাম। সত্যি এমন দিন যে আসবে কে জানতো। বাকী টা সময় একসাথে থাকার জন্যই নতুন করে পথ চলা। এ যে সিরিয়াল জগত কেও হার মানাবে। ভালবাসি যে…. ভালবাসা গুলো যে কখনোই হারিয়ে যায় না। ইচ্ছে হলেই ভালবাসা টা জয় করে রাখা যায়।

“——————— সমাপ্ত…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here