ডাক্তার বর পর্ব ৪

গল্পঃ- ডাক্তার বর

পার্টঃ-………. ০৪
.
.
.
.
– দেখো আম্মু আমি…..
– আমি দেখতে পারবো না। ভাবছি বিয়ে করবি নয়তো এখন থেকে কাজের মেয়ের হাতেই রান্না খেতে হবে। সেই কবে থেকেই তো দেখে আসছি।

” আম্মু কথা গুলো বলেই চলে যেতে চাইলো। আম্মু যে আমার উপর বেশ বিরক্ত সেটা কথায় বেশ বুঝতে পারছি। আমাকে বিয়ে করানোর জন্য যেনো উঠে পড়ে লেগেছে। সব দোষ জুইঁয়ের ইচ্ছে হচ্ছে এমন কু-মন্ত্র দেওয়ার জন্য বিয়ে দিয়ে তাকেই আগে বাসা থেকে বিদায় করি।

আম্মু চলে যাওয়ার জন্যই পিছন থেকে ডেকে বললাম;-

– কাজের মেয়ের হাতের রান্না আমি খেতে পারবো না।
– তাহলে বিয়ে করে বউমা নিয়ে আয়। সেটাও তো করিস না। হয় এই মেয়ের হাতের রান্না খাবি নয়তো নিজে রান্না করে খা।
– আম্মু শোন….
– এতো বকবক করিস না তো। যা বলার বর্ষাকে বল,আমার আবার টিভির সিরিয়াল মিস হয়ে যাবে।

” আম্মুর মুখের কথা শুনে থো বনে গেলাম। বলে কি? টিভির সিরিয়াল কবে থেকে আবার এই নেশা শুরু হলো? আগে তো টিভির কথা শুনলেই রেগে যেতো। এই নিয়ে জুইঁকে কত কথা শুনতে হয়েছে। সারাক্ষণই টিভি আর টিভি। সবকিছুই যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

” আম্মুর মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল হয়ে বোকার মতো তাকিয়ে আছি। তখনি আম্মু বললো;

– বর্ষা, চা খাওয়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি হাতের কাজ গুলো সেরে নে। আমি যাই টিভির সিরিয়াল এখনি শুরু হয়ে যাবে।
– আম্মু,শোন……
– বল কি বলবি?

” আম্মু পিছনে ফিরে তাকিয়ে জানতে চাইলে বললাম;

– জানা নেই শোনা নেই আর কাজের মেয়ে রেখে দিলে?

” আমার কথা শুনেই বর্ষা দেখি রেগে তাকিয়ে আছে। বর্ষার রাগ কে পাত্তা না দিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আম্মু বললো;

– তোর থেকে আমার মেয়ে খুব ভালো বুঝে। তোর থেকে উপদেশ নিতে হবে না। জুইঁ সব জেনে বুঝেই করেছে।
– আম্মু শোনবা তো…

যখনই আম্মু কে ডাক দিলাম তখনই জুইঁ বলে উঠলো;

– ওই চুপ কর তো। ভ্যা ভ্যা করবি না। আম্মু টিভি দেখতে যাচ্ছে আর তুই পিছন থেকে ডাকিস কেনো?

” জুইঁয়ের কথা শুনেই বর্ষা মুচকি হাসা শুরু করলো। তা দেখে শরীর জ্বলে যাচ্ছে, আর জুইঁও কি-না সাথে সাথে হাসে।

জুইঁকে ধরার জন্য চায়ের কাপ টা রেখেই বললাম;

– তরে আজকে……..
– আম্মু দেখো ভাইয়া আমাকে মারতে আসছে……

” জুই কথা গুলো বলেই দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো বর্ষা তাই বর্ষাকে ছাড়িয়ে জুইঁ কে আর ধরতে পারেনি। বর্ষা এমন ভাবে আগলে দাঁড়ালো যে কোনো ভাবেই পাশ ফিরে যেতে পারবো না। বর্ষা কেমন রাগী রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। বর্ষা আম্মুর রুমের সামনে গিয়েই মুখ ভেংচি কেটে দিলো। তা দেখে রাগে হাত গুলো নিষপীষ করছে কখন ধরতে পেরে দুটা দিতে পারবো।

” জুইঁকে ধরতে না পেরে বর্ষার দিকে তাকাতেই বললো;

– কিহ? আমাকে কাজের মেয়ে বলা না?

” বর্ষা ওড়না টা গলা থেকে নামিয়ে কোড়রে পিছিয়ে রাগী গলায় জানতে চাইলো। বর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম;-

– কাজের মেয়ে কে কি বলবো?

– তোর কাজের মেয়ে বলা বের করছি। তাড়াতাড়ি চা খেয়ে কাপ দে….
– আমি চা খাবো না।
– কি? এতো কষ্ট করে চা করে এনেছি খাবি না। না খেলে মুখে ঢেলে দিবো।

” বর্ষার রাগী কথা শুনেই ভয় পেয়ে গেলাম। এ কেমন মেয়ে রা বাবা কার পাল্লায় পড়লাম। আর আম্মু না জেনে শুনেই জুইঁয়ের কথা শুনে কাকে বাসায় নিয়ে আসলো। বর্ষার রাগী চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে বললাম ;-

– খাচ্ছি, এমন করার কি আছে?
– এই তো লক্ষী ছেলের মতো কথা। চা খেয়ে টিভি দেখেন আমি রান্না করতে যাই।

” বর্ষা কথা গুলো বলেই চায়ের কাপ টা আমার হাতে দিয়ে মুচকি হেসে রান্না ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করলো। বর্ষার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে মনে বিপদের আশংকা দেখতে পারছি। আমার কপালে না জানি কি লেখা আছে ??

” বর্ষা যে খুব রাগী মেয়ে সেটা প্রথম বার দেখার হওয়ার পরেই বুঝে ছিলাম। বর্ষাকে প্রথম বার বিয়ে বাড়িতে দেখেছিলাম। সেই প্রথম দেখায় ভালো লেগে যায়। আমি সবে মাত্র মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি আমার বন্ধুর বোনের বিয়ে ছিলো। বর্ষার মুখের হাসি প্রথম দেখায় এ হৃদয় কেড়ে নিয়েছিল।

” সেই থেকে বিয়ে বাড়িতে বর্ষাকে ফলো করতে থাকি। কোথায় যাচ্ছে কি করছে? খুব হাসি খুশি একটা মেয়ে। মনে হয়নি যে কোনো বিয়ে বাড়িতে এসেছে। বর্ষা কে দূর থেকে লক্ষ্য করছি ঠিক বিপত্তি বাঁধে ঠিক তখনি। হয়তো বর্ষা দেখে ফেলেছি বা বুঝতে পেরেছিলো। বর্ষার সাথে চোখাচোখি হতেই সেখান থেকে কিছুটা লজ্জায় তাড়াতাড়ি চলে আসি।

– এই যে…….

হঠাৎ করেই ডাক শুনে পিছনে ফিরে দেখি বর্ষা ও তাঁর বান্ধবীরা পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষার নাম টা অবশ্য তখনো জানা হয়নি, তবে দেখে কিছুটা ভয় পেয় গেলাম যদি আবার কিছু বলে। পিছনে ফিরে বললাম;-

– আমাকে বললেন?
– জ্বি হ্যা, সেই কখন থেকে দেখছি ফলো করছেন মতলব টা কি হে?
– না কিছু না
– কিছু না মানে? তাহলে এতো পিছু পিছু ঘুরছেন কেনো?

” বর্ষার কথা শুনেই ঢোপ গেলে না করতেই রাগী গলায় বললো। বর্ষার রাগ দেখেই বললাম;

– না,মানে ওই দিকে দেখতে গিয়েছিলাম।
– দেখতে না মেয়ে দেখতে পিছু পিছু। ফের যদি দেখি ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো। মেয়ে মানুষ দেখলেই ইচ্ছে করে ঘুরঘুর করতে?
– না মানে……..

” ঠিক তখনি আমার বন্ধু রাজ এসে থামিয়ে দিয়ে বললো;-

– ওই, তরে খুঁজে মরি আর তুই এখানে আয় তোর সাথে কথা আছে।

” রাজ আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে টেনে নিয়ে আসলো। বর্ষা যেনো রাগে ফুলে আছে। বিয়ে বাড়ি বলে কিছু বলতে পারছে না। রাজের উপর বেশ রাগ হলো এমন একটা সুযোগ পেলাম কথা বলার জন্য সেটাই হাতছাড়া হয়ে গেলো।

” রাজ যখন একেবারে বাড়ির অন্য দিকে নিয়ে আসলো তখনি রেগে গিয়ে বললাম;-

– শা**** তুই এটা কাজ করলি? তোর জন্য কথা বলতে পারলাম না।

” আমার কথা শুনেই রাজ বললো;

– কথা বলার মানুষ পেলি না। বর্ষা যে রাগী মেয়ে তোর যে নাক ফাটিয়ে দেয়নি সেটাই ভাগ্য। ওই দেখ শুভ কে। তোর মতোই পিছু পিছু ঘুরঘুর করেছিল এখন নাকে ব্যান্ডেজ করা।

” রাজের কথা শুনেই তাকিয়ে দেখি সত্যি সত্যি একটা ছেলের নাকে ব্যান্ডেজ করা। কি মেয়ে রা বাবা? দেখেই আতংকে উঠলাম। ভাগ্যিস রাজ ছিলো নয়তো আমার দষা এ রকম হতো। মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিলেও রাজের উপর কিছু টা রাগ যে তাঁর জন্য কথা বলতে পারলাম না।

” পরে অবশ্য অনেক খুঁজ খবর নিতে থাকি। একদিন অনেক সাহস করে গিফট পাঠিয়েছিলাম তবে বর্ষা ফিরিয়ে দিয়েছিলো। বলে ছিলো যেনো পারলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ের কথা বলি। এইসব প্রেম টেম সে করতে পারবে না। সেই থেকে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলেও সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি।

“হঠাৎ করেই ভাবনার জগতে ছেদ পড়ে ডাক শুনে। জুইঁ দরজয় নক করে বললো;

– ভাইয়া, ভাত খাওয়ার জন্য ডাকছে।

“জুইঁয়ের কথা শুনেই সমস্ত ভাবনা মূহুর্তের মাঝেই হারিয়ে গেলো। অনেকটা রেগে গিয়ে বললাম;

– আমি খাবো না।
– খাবি না কেনো?
– এমনি….
– আচ্ছা, তাহলে তো ভালোই হবে। বিরয়ানী আমি একাই খেতে পারবো।

” কিহ? বিরয়ানী। আজকে হঠাৎ বিরয়ানী কে করলো? নাহ তাহলে তো না খেয়ে থাকা যাবে না। তড়িঘড়ি করেই উঠে পড়লাম। আবার বিরয়ানী আমার বেশি প্রিয়। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি আমার জন্য অপেক্ষা না করেই খাবার খাওয়া শুর করে দিলো। কিছুটা রাগ হলো,তবে সব থেকে বেশি অবাক হলাম বর্ষাকে এক সাথে খাবার খেতে দেখে। তাও আবার বর্ষার পাশেই আমার চেয়ার তাঁর সাথেই বসে খেতে হবে।

” দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি ঠিক তখনি আম্মু বলে উঠলো;

– দাঁড়িয়ে থেকে কি ভাবছিস? বসে খা…..আজ কত দিন পর বাসায় বিরয়ানী…..
– আম্মু এই মেয়ের পাশে বসে খেতে পারবো না।
– না পারলে পরে তুই নিজেড হাতে খেয়ে নিস। যা খাওয়ার সময় বিরক্ত করবি না।

” আম্মুর কথা শুনেই মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এ কে কাকে দেখছেন? নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছি না। এইটা কি আমার আম্মু নাকি অন্য কেউ। এই একদিনেই এতো পরিবর্তন?

” আম্মু কে কোনো ভাবেই মিলাতে পারছি না। আব্বু বাসায় নেই ব্যবসায়িক কাজে বাহিরে আছেন। এতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি অথচ কারো কোনো নজর নেই। সবাই খেয়ে যাচ্ছে আর জুইঁয়ের সাথে নাটকের সিরিয়াল নিয়ে কথা বলছে। মাঝে মাঝে বর্ষাও একটু আধটু কথা বলছে। আড়চোখে একবার বর্ষা আমার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলে। কোনো ভাবেই মিলাতে পারছিলাম না। সব যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

” রাগে সেখান থেকে না খেয়েই চলে আসলাম। দিন দিন যেনো আমার দাম নেই এই বাড়িতে। সবকিছুতেই যেনো অন্য রকম চোখে দেখা শুরু করলো। শুধু মাত্র তাঁদের কথা মাত্র বিয়ে করলাম না বলে। না খাওয়ার জন্য অবশ্য কেউ কিছু না বললেও একবার জুইঁ এসে ডাক দিলো। দরজা না খোলে চুপচাপ বসে ছিলাম।

” জুইঁ চলে যেতেই পরক্ষনেই বর্ষা এসে বললো;

– স্যার, খেয়ে নিন। রাতে না খেয়ে থাকতে নেই।

” বর্ষার কথা শুনেই রাগ হলো। সবকিছুই বর্ষার জন্য হচ্ছে। বর্ষা আর জুইঁ মিলে সবকিছুই করছে। যদিও সন্দেহ আছে আম্মু জানে কি-না। তবে আম্মুর জানার কথা নই সেই বিষয়ে আমি সিওর। বর্ষার কথা শুনেই বললাম;-

– আমি খাবো না। আপনার তাতে কি ?
– খেলে খাবেন না খেলে নেই। অবশ্য বিরয়ানী আমার হাতেই রান্না করেছি। রেখল গেলাম খেয়ে নিয়েন নয়তো আবার শরীর খারাপ করবে।

” বর্ষা কথা গুলো বলেই চলে গেলো। আমর ডাক ভেসে আসছে বর্ষা আসছি বলে গেলো। একবার উঠতে গিয়েও উঠা হলো না। রাগ করেই বসে রইলাম পেঠে ক্ষুধা সত্বেও। কোন ভাবেই মিলাতে পারছিলাম এতে পরিবর্তন আর বর্ষা কেনো কাজের মেয়ে সেজে বাসায় আসলো।

” আমার পরের দিন ছুটি থাকায় মাঝ রাত অব্দি গল্পের বই পড়লাম। এটাই যেনো রুটিন ছুটি থাকলে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে গল্পের বই পড়ি। এর মাঝেই অনেক ক্ষুধা লাগলো। চুপিচুপি দরজা খোলে দেখি বাহিরে খাবার রাখা আছে। বাহ রান্না ঘের যেতে হবে না। খাবার নিয়েই রুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম। তবে হঠাৎ করেই আম্মুর এতো পরিবর্তন আর টিভিতে সিরিয়াল দেখার প্রবণতা আসলো কি করে?

– বাহ! বিরয়ানী তো সেই জোশ। গরম গরম খেতে পারলে আর আর ভালো হতো। মনে মনে অনেক খুশি হলাম।

” দুচোখ থেকে যেনো ঘুম হারিয়ে গেলো। বর্ষার এতো পরিবর্তন আর জুইঁ কেনো এতো কিছু করছে। তাঁদের মতলব টা কি কিছু তেই বুঝতে পারছি না। নাহ আমাকে জানতেই হবে।
এর মাঝেই যে কখন চোখে ঘুম চলে আসলো। আর হারিয়ে গেলাম যেনো স্বপ্নের মাঝে……….

– কি রে উঠবি তুই??

অসহ্য, এমন ঘুমাতে আমি কাউকে দেখিনি। কি হলো টা কি!

“সকাল বেলায় চিৎকারে কানে বালিশ চাপা দিয়ে ডান দিক থেকে এবার বাঁ দিকে ফিরে শুয়ে পড়লাম। তাতেও শেষ রক্ষা হলো না।

আজ ঘুম থেকে উঠতে কিছুতেই মন চাইছে না। অথচ সকাল বেলায় ডাক দেওয়ার জন্য ঘুমিয়েও শান্তি নেই।

কানের ওপর থেকে বালিশটা ফেলে দিয়েই মহারাণী বলে উঠলাম-

– একটু ঘুমোতে দাও না ..কাল শুতে শুতে অনেক রাত হয়েছে…. প্লিজ, বিরক্ত করো না ।”

মহারাণী যেনো আরো বিরক্ত হয়ে বললেন–

– ঠিক, এই মূহুর্তে যদি…………(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here