ডেঞ্জারাস লাভারস পর্ব -০৪ ও শেষ

#ডেঞ্জারাস_লাভারস
#পর্ব_৪(অন্তিম পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
বিরাট ভার্সিটিতে এসেই পিহু খোঁজ করতে থাকে। পিহু ভয়ে লুকিয়ে ছিল। পিহুর ভয় বিরাটকে নিয়ে। যতই সে বিরাটকে শায়েস্তা করুক না কেন পিহু নিজেও জানে বিরাট অনেক বেশি ডেঞ্জারাস। তাই পিহু বিরাটের সাথে আর লা°গতে চায়না।

কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। পিহুর সাথেই সেটা হলো। ভার্সিটিতে ঢুকেই বিরাট পিহুর খোঁজ পেয়ে গেল। পিহুর হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে থাকে। সে বিরাটকে কিছু বলতে যাবেই তার আগে বিরাট পিহুকে বলে,
—আমি জানি আমি খুব ডেঞ্জারাস। এই কারণে আজ অব্দি কোন মেয়ে আমার কাছে ঘেষার সাহস পায়নি। কোন ছেলেও আমার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার সাহস পায়নি। সেখানে তুমি একটা মেয়ে হয়ে… ইন্টারেস্টিং। আই লাইক ইট। তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তোমাকেই নিজের স্ত্রীরূপে দেখতে চাই।

পিহু ঢোক গিলে বলে,
—আপনি এসব কি শুরু করেছেন? প্রথমে বললেন গার্লফ্রেন্ড আর এখন বলছেন স্ত্রী করতে চান। আমি না তো আপনার গার্লফ্রেন্ড আর না আপনার বউ হতে চাই। সরে যান আমার সামনে থেকে।

বিরাট আরো শক্ত করে ধরে পিহুকে। বলে,
—এত বেশি এটিটিউড কিন্তু আমার পছন্দ নয়। ভালোয় ভালোয় বলছি আমার কথা শুনে নাও। আমি নিজের ডেঞ্জারাস রূপে এখনো তোমার সামনে আসিনি কিন্তু।

পিহু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যায়। বিরাট মুচকি হাসে। বিরাটের বন্ধু সূর্য তার পিঠে হাত রাখে। বিরাট সূর্যকে দেখে বলে,
—তোকে যেটা জেনে আসতে বলেছিলাম সেটা কি জেনে এসেছিস?

সূর্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করে। বলে,
—তুই একদম ঠিক ভেবেছিলি বিরাট। ঐ মাহিনের হাত রয়েছে এসবের পেছনে। মাহিনই তোর আর পিহুর ভিডিও ধারণা করে সেটা ফেসবুকে আপলোড করেছে। আমি এটা খোঁজ লাগিয়ে বের করেছি।

—তার মানে পিহুকে চিঠিও মাহিনই দিয়েছিল। সবকিছু ওই করেছে। যাইহোক এখন মাহিনকে কিভাবে দেখে নিতে হবে সেটা আমি বুঝে নিব। তুই একটা কাজ কর আমার বিয়ের কার্ড ছাপানো শুরু করে দে।

সূর্য অবাক হয়ে বলে,
—বিয়ের কার্ড মানে? তুই আবার কাকে বিয়ে করবি?

—পিহুকে বিয়ে করব আমি।

সূর্য আর কিছু না বলে চলে যায়। বিরাট পিহুর কথা ভেবে বলে,
—তোমার শেষ গন্তব্য আমিই হবো। তোমাকে আমার হতেই হবে পিহু।
_________________________
পিহুর সামনে মাহিনকে এনে হাজির করেছে বিরাট। মাহিনকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে তার উপর অনেক অ*ত্যা*চার করা হয়েছে। মাহিনের সারা গায়ে তাই তো আ-ঘা*তের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। পিহু রক্তিম চোখে বিরাটের দিকে তাকায়। বিরাটের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলে,
—এসবের মানে কি? ছেলেটার উপর এমন অমানবিক ব্যবহার কেন করেছেন? এভাবে মে*রে*ছেন কেন ওকে?

বিরাট পিহুর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে,
—এই ছেলেটাকে দেখে তোমার খুব মায়া হচ্ছে। নিশ্চয়ই আমার উপর রাগ হচ্ছে। ভাবছ আমি কতটা খারাপ লোক যেই এইভাবে একজনের উপর নির্মম নি*র্যা*তন করেছি। আমার কথা শুনলেই বুঝবে আমি ঠিক করেছি না ভুল।

—কি কথা থাকতে পারে আপনার? আপনি একটা ডেঞ্জারাস লোক।

—হ্যাঁ আমি সবার জন্যই ডেঞ্জারাস। তোমার জন্যেও আমি ডেঞ্জারাস লাভার। আর শোনো যেই ঘটনার জন্য তোমার আমার উপর এত রাগ মানে সেই যে আমাদের ঘনিষ্ঠ ভিডিও ভাইরাল হওয়া তার পেছনে এই ছেলেটারই হাত রয়েছে। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞাসা করো ওকে।

পিহু মাহিনের দিকে তাকায়। মাহিন কাপাকাপা গলায় বলে,
—বিরাট ঠিক বলেছে। যা করার সব আমি করেছি। প্রথমদিন বিরাট আমাকে ডেয়ার দিয়েছিল যে, আমি যদি ভার্সিটির নতুন কোন স্টুডেন্টকে চ*ড় মা*রতে পারি এবং সেও যদি আমাকে চ*ড় মা*রর তাহলে আমাকে বিরাট ছাত্র সংগঠনের সভাপতি করে দেবে। আমার অনেক দিনের লোভ ছিল ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হওয়ার। কারণ সাধারণ সম্পাদক হয়ে আমি নিজের ইচ্ছামতো চলতে পারছিলাম না। একদিন শুধু একটা মেয়েকে কি*স করতে গিয়েছিলাম জন্য এই বিরাট আমাকে….যাইহোক বিরাটকে ক্ষমতাচ্যুত করে আমি ভার্সিটিতে স্বেচ্ছাচারিতা করতাম। বিরাট সেটা জানতো জন্য সুকৌশলে আমাকে অপমান করিয়ে নিয়েছিল৷ এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আমি তোমার কাছে চিরকুট পাঠাই। আর তারপর তুমি যখন ছাদে গিয়ে ভুলবশত বিরাটের উপর পড়ে গেলে সেই ঘটনার ভিডিও করে নেই। আর সেটা ফেসবুকে আপলোড করি। আমার উদ্দ্যেশ্য….

মাহিন নিজের কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই পিহু তাকে একটার পর একটা থা*প্পড় মা*রে। বিরাটের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
—এই শ*য়তানটাকে ইচ্ছামতো মা*রুন। আমার সামনে মা*রুন। তাহলে আমি শান্তি পাব।

বিরাট পিহুকে থামিয়ে বলে,
—রিল্যাক্স। যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছ ও। আমি এবার ভিসিকে বলে ওকে ভার্সিটি থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ইউ জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
★★★
সময় কিছুদিন এগিয়ে গেছে। পিহু এখন আর বিরাটকে খারাপ নজরে দেখে না। বরং তাকে সম্মান করে। পিহু বুঝতে পেরেছে বিরাট যতোই ডেঞ্জারাস হোক মানুষ হিসেবে সে অনেক ভালো। বিরাটও এখন আর আগের মতো পিহুকে বিরক্ত করে না।

একদিন পিহুকে রাস্তায় কিছু ছেলে বিরক্ত করে। কোথা থেকে যেন বিরাট এসে হাজির হয়। বিরাটকে দেখে ছেলেগুলো ভয়ে পালিয়ে যায়। বিরাট সোজা এসে পিহুকে বলে,
—নিজের খেয়াল রাখতে পারো না তুমি। যত ডেঞ্জারাস শুধু আমার সাথেই না। তোমাকে এভাবে একা ছাড়া আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। আমি তোমাকে আহ্বান জানাবো এই ডেঞ্জারাস লোকটাকে ডেঞ্জারাস লাভার হওয়ার সুযোগ করে দিতে।

পিহু কিছু একটা ভেবে বলে,
—আপনি কেন? আমি আপনার ডেঞ্জারাস লাভার হবো।

বিরাট খুশিতে পিহুকে জড়িয়ে ধরে। বলে,
—আজ আমি খুব খুশি। এট লাস্ট,তুমি আমার লাভার হয়ে গেল।

—যেমন তেমন লাভার না ডেঞ্জারাস লাভার।
★★★
পিহুর বাবা আজ ভার্সিটিতে এসেছে। পিহুর উপর অনেক রাগারাগি করে বলছে,
—এইজন্যই তোরে আমি শহরে আসতে দিতে চাই নাই৷ শহরে আসি মান সম্মান শেষ করে দিলি।

পিহুর বান্ধবী লিপি বলে,
—চাচা, ভুল বুঝতেছেন। পিহু এমন কিছু করে নাই।

—তুমি চুপ করো মাইয়া। আমার বেটি আমি বুঝে নিব। এই তোর সাথে নাকি কার ভিডিও বার হইছে।

পিহু বলে,
—আব্বু তুমি আমার কথা শোনো৷ সব একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল।

—কোন ভুল বোঝাবুঝি না। আজই তুই আমার লগে গ্রামে যাবি।

পিহুর বাবা কোন কথা না শুনে তাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। লিপি আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।

এমন সময় বিরাট এসে সামনে দাঁড়ায়।মার্জিতভাবে বলে,
—সালাম নেবেন আংকেল। আপনি পিহুকে নিয়ে যান তাতে আমার সমস্যা নেই জাস্ট একটা রিকোয়েস্ট আই মিন অনুরোধ করব।

পিহুর বাবা কাঠকাঠ গলায় বলেন,
—কি অনুরোধ?

—আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।

পিহুর বাবা রাগি চোখে নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
—এই পোলাডা যা বলতেছে তাকি সত্য?

পিহু মিনমিনে স্বরে বলে,
—জ্বি।

পিহুর বাবা বলে,
—আমি ভেবে দেখব। আগে আমার সাথে গ্রামে চল।
★★★
পিহুর গ্রামে ফিরে যাওয়ার একদিন হয়ে গেছে। বিরাট উদাস হয়ে ভার্সিটিতে ঘুরছিল। আচমকা আস্কারা বিরাটের সামনে আসে। বিরাটকে বলে,
—আমি জানি এটা বলে কোন লাভ নেই। তুমি শুধু আর শুধু পিহুকেই ভালোবাসো। কিন্তু আমি নিজের অনুভূতি শুধু তোমার কাছে প্রকাশ করতে চাই। আমি তোমাকে পছন্দ করি বিরাট।

—তুমি তো জানো আস্কারা আমার উত্তর কি হবে।

—হ্যাঁ জানি। আমি মন খারাপ করিনি। বরং খুশি হয়েছি তোমার মতো ডেঞ্জারাস লাভার যে আমার ভাগ্যে নেই। আশা করি পিহুকে নিয়ে সুখী হবে তুমি।

আস্কারা অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল গোপন করে চলে যায়। একতরফা ভালোবাসা যে সত্যি অনেক কষ্টের।

এদিকে পিহু বিরাটকে ফোন করে। ফোন রিসিভ করতেই পিহু বলে,
—তুমি তাড়াতাড়ি নিজের মা-বাবাকে নিয়ে আমার গ্রামে চলে আসো। আমি ঠিকানা দিচ্ছি।

—মানে?

—আমার ডেঞ্জারাস রূপ দেখতে না চাইলে চলে এসো বিরাট। আমি শুধু তোমাকেই বিয়ে করব।

পিহু কল কে-টে দেয়। বিরাট আর একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে নিজের মা-বাবাকে নিয়ে পিহুদের গ্রামে চলে যায়। বিরাট ও পিহুর অভিভাবক কথা বলে। দুপক্ষই বিয়েতে রাজি হয়। কাজি ডেকে বিয়ে পরানো হয়। পরিণতি পায় দুইজন ডেঞ্জারাস লাভারের ভালোবাসা।
(সমাপ্ত)
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here