ডেভিলের মিষ্টি অত্যাচার পর্ব -০৫

#ডেভিলের_মিষ্টি_অত্যাচার (৫)
#স্বপ্নীল_আজিম
আমান ঈশিকাদের বাড়ির বেশ খানিকটা আগে গাড়ি থামালো। নোভাকে আসার পথে কল করে আগেই সেখানে আসতে বলে রেখেছিলো সে। দেখলো রাস্তার একটু আগে নোভা দাঁড়িয়ে ফোন চাপছে। ওরা যে এসেছে সেটা হয়তো খেয়াল করেনি। আমান ঈশিকার দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরেটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার। এখনি চলে যাবে মেয়েটা। আবার কবে একটু এতো কাছে পাবে কে জানে! এই কিছু সময়ের মধ্যেই মেয়েটার নেশা আরো তীব্রভাবে ঝেঁকে ধরেছে তাকে। নাহ! এবার তাড়াতাড়ি কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঈশিকাকে ডেকে ঘুম থেকে তুললো আমান। তারপর ঈশিকার ব্যাগ আর ফোনটা হাতে দিয়ে নরম গলায় বললো,
—-” নিয়মমাফিক খাবে। খাওয়ায় যেনো কোনো গাফিলতি না হয়। আর মনে করে মেডিসিন নেবে৷ পা পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ভার্সিটি যাবার দরকার নেই। কল করলে কল ধরবে৷ ফোন বন্ধ রাখবে না।”

ঈশিকা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো৷ কিন্তু মুখে কিছু বললো না। তার ভেতরেও কেমন যেনো শূন্যতা অনুভব করছে। মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ই আমান ঈশিকার হাত ধরে কিছুটা কাছে টেনে এনে কপালে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে বললো,
—-” নিজের খেয়াল রেখো লক্ষীটা!”
ঈশিকা “হুম” বলে মাথা নিচু করে রইলো।

এরইমধ্যে হঠাৎ নোভা আমানের গাড়ি দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো। ঈশিকা সামনে তাকিয়ে নোভাকে দেখে আমানের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালে আমান বললো,
—-” আমি আসতে বলেছি ওকে।”
ঈশিকা আর কিছু বললো না। গাড়ির ডোর খুলে নামলে নোভা কাছে এসে ধরলো। বললো,
—-” কিরে পায়ের কি অবস্থা?”
—-” আগের থেকে কিছুটা ভালো।”
তারপর আমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” আসছি…!”
আমান মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ঈশিকা সামনে তাকিয়ে ফের পেছনে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,
—” ভালো থাকবেন।”
বলে আর দাড়ালো না। নোভার হাত ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো। আমানও ঈশিকার যাওয়ার দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফস করে একটা শ্বাস ফেলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো। উফ! এতো কেনো কষ্ট হচ্ছে!!!

প্রথম কথাটা নোভাই শুরু করলো।
—-” ব্যাপারটা কি বলতো? আমান ভাইয়া কাল হুট করে এসে অমন করে নিয়ে গেলো তোকে। আবার কল করে আমাকে বললো আন্টিকে বলতে যে তুই আমার বাসায় থাকবি দুদিন। আবার আজকেই বললো তোদের বাড়ির কাছে আসতে তোর নাকি পায়ে চোট! মানে বুঝলাম না! কাহিনি কি?”

ঈশিকা থেমে গিয়ে নোভার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” পরে সব বলবো তোকে। আপাতত বাসায় এ ব্যাপারে কিছু বলিস না।”
—-” আচ্ছা ঠিকাছে। আর সে তো আমি এমনিতেও বলবো না। ভাইয়া আগেই নিষেধ করে দিয়েছে।”
ঈশিকা আর কিছু বললো না। ভেতরটা হঠাৎ ই গুমোট মেরে আছে!
.
.
.
ঈশিকা কলিংবেল চাপতেই কাজের মহিলা দরজা খুলে দিলো। ঘরে ঢুকতেই আফসানা চৌধুরী এগিয়ে এলেন। ঈশিকাকে দেখে হাল্কা রাগ মেশানো গলায় বললো,
—-” কি? বেড়ানো শেষ? তা আজকেই এলে কেনো? দু’দিন না থাকার কথা ছিলো?”
ঈশিকা উত্তর না দিয়ে নোভার হাত ধরে আস্তে আস্তে সোফায় বসতে নিলে আফসানা চৌধুরীর চোখ যায় পায়ের দিকে। ভ্রু কুচকে বললো,
—-” একিরে! পায়ের আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ কিসের?”
ঈশিকা কি বলবে বুঝতে পারছে না। নোভাই কিছু একটা ভেবে আমতা আমতা করে বললো,
—-” আসলে আন্টি…বাথরুমে পা পিছলে পরে গেছিলো। তাই আঙ্গুলে একটু চোট পেয়েছে৷”
—-” একটু চোট পেলে ব্যান্ডেজ কেনো!? আর হ্যাঁ রে…তুই কি কোনো কালেও নিজের খেয়াল রাখতে শিখবি না? এতো বড় মেয়ে…”
—-” আন্টি থাক না…মেজর কিছুনা। আর ইচ্ছা করে তো আর পরেনি। এক্সিডেন্ট ছিলো মাত্র৷” বাধা দিয়ে বললো নোভা। আর ঈশিকা বকা শুনে মুখ হাড়ি বানিয়ে আছে৷ সব দোষ ওই লম্বু শয়তান টার।

আফসানা চৌধুরী আর কিছু বললো না। বিরক্তি নিয়ে নোভা কে বলে ঈশিকাকে ঘরে নিয়ে যেতে বললেন। এরমধেই ঈশিকার ভাই ইয়ান ফুটবল খেলে এসে মাটি পা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। এবার আফসানা চৌধুরীর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। লেগে পরলো তার পিছনে। ঈশিকার ওপরের রাগ যেনো তার ওপর ঝারছে।
.
.
.
.
আমান বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যার একটু আগে। আমানকে দেখে আরমান আহমেদ আর রাজিয়া বেগম অবাক ই হলেন। ছেলের তো দু’দিনের আগে বাড়ি মুখো হওয়ার কথা ছিলোনা। হঠাৎ আজকেই ফিরে এলো! আরমান আহমেদ কারণ জানতে চাইলে আমান অন্য বাহানা দেখিয়ে কাটিয়ে দিয়ে ওপরে চলে গেলো। রাজিয়া বেগমও আর বিশেষ কিছু বললেন না। খুব রাগ অভিমান জমে আছে ছেলের ওপর। বয়স আটাশ এর কোটায় অথচ খাম খেয়ালি পনা গেলো না। আগে তো বিয়ে থার কথা বললে কাটিয়ে যেতো আর এখন তো…! সব কিছুতেই নিজের মর্জির মালিক সে।
.
.
রাতে অফিস থেকে ফিরে ইফতেখার চৌধুরী মেয়ের পা এর খবর শুনে ছুটে এলেন মেয়ের ঘরে৷ মেয়েটা তার বড্ড আদরের৷ আরো চেহারাখানা তার মায়ের মতো হয়েছে কিনা? মেয়েটাকে দেখলেই মায়ের কথা মনে পরে যায়। কিন্তু এসে দেখলেন ঘুমিয়ে গেছে ঈশিকা। তিনি আর জাগালেন না তাকে। মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে গায়ে চাদর টেনে বাতি নিভিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
.
.
আমানের ঘুম ভেঙে গেলো রাত এগারোটার দিক। ভীষন টায়ার্ড লাগায় এসেই ফ্রেস হয়ে খেয়ে শুয়ে পরেছিলো। তার আগে যদিও দুবার ঈশিকাকে কল করেছিলো কিন্তু ফোন বন্ধ তার৷ এতো পই পই করে বলে দিলো ফোন বন্ধ না রাখতে অথচ কে শোনে কার কথা? সে আর তার ঘুম একদিকে তো বাকি দুনিয়া আরেকদিকে। কে জানে পায়ের কি হাল? খেলো কিনা ঠিকমতো? নাকি না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। খাওয়া নিয়ে যে ঝামেলা করে বাচ্চাদের মতো!!

ঈশিকাকে একবার কল করার কথা ভেবেও করলো না আমান। এখন ফোন অন থাকলেও নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পরেছে। সেদিন রাতের কথা পরতেই হাসি পেয়ে গেলো আমানের। কেমন ভুতের ভয়ে বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে তার বুকের সাথে সেটে শুয়ে ছিলো! আমান আনমনে হেসে পাশবালিশটা জড়িয়ে ধরেই বিড়বিড় করে বললো,

” সারাজীবনের জন্য এই বুকের পাজরের ভেতর রেখে দিতে চাই তোমায় ঈশু! বড্ড ভালোবাসি যে লক্ষীটা!”
.
আজ ৬ দিন পর ঈশিকা ভার্সিটি যাচ্ছে। পা এর হাল এখন ভালোই ঠিক। এই ৬ দিনে আমান হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও পালা করে কল করে যে কতবার খাবার মেডিসিন এর কথা মনে করিয়েছে, খোঁজ নিয়েছে তার ইয়োত্তা নেই। ঈশিকা বাসা থেকে বের হতে পারবেনা বলে তো দু’দিন রাতে আমান ঈশিকাদের বাড়ির নিচেই চলে এসেছে। বারান্দার দূরত্ব থেকে হলেও একটিবার দেখার জন্য তার ঈশুকে।

ঈশিকা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে এসব ভাবছে আর আনমনে হাসছে। ” ইশ! সেদিন রাতে ফোন অফ ছিলো বলে পরদিন কি বকাটাই না বকলো লম্বু শয়তানটা!”

তবে আমানের কেয়ার গুলোর সাথে সাথে এই বকাগুলোও আজকাল ঈশিকার কাছে অদ্ভুতভাবে অন্যরকম ভালোলাগে৷ শুনেছে প্রেমে পরলে নাকি করলাও মিষ্টি লাগে। আচ্ছা? সে কি আমানের প্রেমে পরে গেলো নাকি? ভালোবেসে ফেললো তাকে?” পরক্ষণেই আবার মনে পরলো, তার অজান্তেই কিভাবে বিয়ে করে বউ বানিয়ে ফেললো খোক্কশটা!

—“বউ!” ঈশিকা বিড়বিড় করে মুখে শব্দটা আওড়ালো। হ্যাঁ বউ! এখন সে আমানের বউ! কথাটা মনে আসলেই নিজের অজান্তেই ঠোঁটের হাসিটা চওড়া হয়ে উঠলো। আয়নায় তাকাতেই দেখলো ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছে। সে লজ্জা পাচ্ছে!! আর লজ্জা পাচ্ছে ভেবেও আরো বেশি লজ্জা পাচ্ছে!!

বেরনোর আগে ঈশিকা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আজ আমান একটাও কল করেনি। এমনি তো ডেইলি সকাল বেলা কল করে ঘুম ভাঙায়। কিন্তু আজ এখনো অবধি কল করলো না যে!? ভেবেই ঈশিকার মন খারাপ হয়ে গেলো।
.
.
________________________________________________
ভার্সিটি যেতেই বন্ধুরা হই হই করে উঠলো ঈশিকাকে দেখে। তৌসিফ বলে উঠলো,
—-” হেই…ক্যাম্পাস কুইন। যাক! এলি তাহলে?”
রিমি বললো,
—-” তা তোর পায়ের অবস্থা কি এখন? ”
—-” এখন ভালো।” হাল্কা হেসে বললো ঈশিকা।
এরপর রিমি কিছু একটা বলতে নেবে তখনি শোয়েব আসলো। এসেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে ঈশিকাকে জিজ্ঞেস করলো,
—-” ঈশি.. কেমন আছিস এখন? দেখি পা…”
—-” এখন ঠিক আছি। আর দেখার মতো অতো কিছু নেই। মেজর কোনো কিছু হয়নি আমার।” হেসে বললো ঈশিকা।
শোয়েব গম্ভীর গলায় বললো,
—-” একটু দেখে শুনে চলতে পারিস না? সেদিন নোভা বললো বাথরুমে পা পিছলে পরে বেড রেস্টে আছিস। জানিস কতোটা টেনশন হচ্ছিলো আমার?”
ঈশিকা শোয়েবের কথা শুনে হেসে ফেললো। শোয়েব কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
—-” একদম হাসবি না। আর আমার নাম্বার কি তুই ব্লক করেছিস? কল যায়না কেনো?!”
কথাটা শুনে ঈশিকার হাসি মিলিয়ে গেলো। সে তো করেনি। পরক্ষণেই বুঝলো নিশ্চয়ই এটা আমানের কাজ। সেদিনই হয়তো শোয়েবের নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছিলো। তারপর ঈশিকা মুখ করুন করে বললো,
—-” কিজানি দোস্ত…হয়তো ভুলে চাপ লেগে ব্লক হয়ে গেছে। দারা আমি এক্ষুনি দেখছি।” বলেই ফোন বের করলো।
—-” হুম হবেই তো…থাক! আর লাগবে না।” অভিমানের সুরে বললো শোয়েব।
ঈশিকা অপরাধী কন্ঠে বললো,
—-” সরি দোস্ত! আমি ইচ্ছা করে করিনি বিশ্বাস কর। এই দেখ আনব্লক করে ফেলেছি। প্লিজ আর রাগ করিস না প্লিজ!”
শোয়েব ঈশিকার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। কি আছে এই মেয়েতে? যে রাগ করতে চাইলেও করতে পারেনা সে। যা পারে তা শুধুই….!
ভেবেই শোয়েব ছোট একটা নিশ্বাস ছাড়লো।
তখনি রিমি বলে উঠলো,
—-” এই শেষ হয়েছে তোদের রাগ অভিমানের পালা? এখন শোন, আগামী পরশু বাড়িতে গ্র‍্যান্ড পার্টি হচ্ছে আমার বার্থডে উপলক্ষে। সবাই চলে আসবি কিন্তু। আর তোরা পরবি শাড়ি এন্ড এটা মাস্ট।” নোভা আর ঈশিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো রিমি।
ঈশিকা বললো,
—-“এই আমি কিন্তু পরছিনা। শাড়িতে আমি ভীষন আনকম্ফোর্ট ফিল করি।”
—-” নোউউ! কোনো কথা শুনছি না৷ পরতেই হবে। অ্যাট লিস্ট আমার জন্য পরবি প্লিজ! এই নোভা বলনা ওকে।” বললো রিমি।
—-” আরে একদিনি তো ঈশি। পরিস কি প্রবলেম?” ঈশিকার দিকে তাকিয়ে বললো নোভা।
—-” প্লিজ দোস্ত! একদিনই তো। আমার জন্য এইটুকু করতে পারবিনা বল?” ঈশিকার হাত ধরে বললো রিমি।
ঈশিকা হেসে বললো,
—-” আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে…পরবো। এখন আপাতত ক্লাসে চল। টাইম হয়ে গেছে।”
.
.
_______________________________________
ক্লাস শেষে তৌসিফ তার বাইকে রিমিকে নিয়ে চলে গেলো৷ তখনি শোয়েব বাইক নিয়ে এসে ঈশিকা আর নোভার সামনে দাঁড়ালো। ঈশিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-” চল তোকে ড্রপ করে দেই।”
ঈশিকা একবার নোভার দিকে তাকালো। তারপর বললো,
—-” না রে লাগবে না।”
—-” কেনো? আমার বাইকে বসতে কি কেউ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে নাকি?” তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো শোয়েব।
—-” কে নিষেধ করবে?” ভ্রু কুচকে বললো ঈশিকা।
—-” কে আবার? আমান আহমেদ!”
ঈশিকার ভ্রু সোজা হয়ে গেলো। কথাটা তো সত্যি! আমান তো বলেছেই শোয়েবের থেকে দূরে থাকতে। ঈশিকা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ঈশিকাকে চুপ থাকতে দেখে শোয়েব মলিন হেসে বললো,
—-” বুঝেছি! আচ্ছা ঠিকাছে সাবধানে যাস।” বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। ঈশিকা কিছু বলার সুযোগ ও পেলো না।

শোয়েব চলে যেতেই নোভা বললো,
—-” ঈশি.. তুই কিন্তু এখনো সেদিনের ঘটনার কথা বললি না আমাকে? ভাগ্যিস সেদিন আমি ছাড়া ওরা কেউ ছিলোনা তখন। তাহলে তোর কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো বুঝতে পারছিস? এবার বল কি হয়েছিলো সেদিন?”

ঈশিকা হাটতে হাটতে নোভাকে সব খুলে বললো। সব শুনে নোভা অবাক হয়ে বললো,
—-” তার মানে তোদের বিয়ে হয়ে গেছে!! সিরিয়াসলি ঈশি! এতো বড় একটা কথা অথচ বাসার কাউকে জানাসনি কেনো?”
—-” কি বলতাম? উলটে সবাই আমাকেই ভুল বুঝতো। আর তাছাড়াও আমার মনে হয় আমানের জন্যও আমার মনে ফিলিংস তৈরি হয়েছে এই কদিনে। ওর কেয়ারগুলো আগে আমার পাগলামি মনে হলেও ইদানীং অন্য রকম একটা অনুভূতি দেয়।”
—-” হুম বুঝলাম…তো এখন কি করবি?”
ঈশিকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—-” জানিনা!”
এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—-” আচ্ছা বাদ দে এসব! এখন একটা রিকশা নে…কিরে কি হলো? দাঁড়িয়ে পরলি কেনো?”
ঈশিকা নোভার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই দেখলো আমান তার গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমানকে দেখতেই ঈশিকার মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
নোভা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
—-” তোমার পার্মানেন্ট ড্রাইভার এসে গেছে। এখন আর রিকশার দরকার নেই। যাও যাও।”
ঈশিকা আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো আমানের দিকে৷ পুরো ফর্মাল লুকে আছে আমান। কি হ্যান্ডসাম লাগছে দেখতে!
ঈশিকা সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কিছু না বলে গাড়ির ডোর খুলে দিলো আমান। ঈশিকা একবার আমানের দিকে তাকিয়ে গাড়িতে ওঠে পরলো।

ঈশিকা ভাবলো এবার জিজ্ঞেস করবে কেনো আজকে সকালে একবারো ফোন করলো না সে। তখনি ড্রাইভ করতে করতে আমান বললো,
—-” আধ ঘন্টা পর আমার ফ্লাইট।”
ঈশিকা চকিতে তাকালো আমানের দিকে। অবাক হয়ে বললো,
—-” কোথায় যাচ্ছেন?”
—-” দুবাই। বিজনেসের কাজে। দু’দিনের জন্য।”
ঈশিকা আস্তে করে বললো,
—-” ওহ!”

নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো ঈশিকার। হঠাৎ ই গাড়ি থামালো আমান। তারপর ঈশিকাকে টেনে নিয়ে ঈশিকার ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিলো। প্রথমে আচমকা ঘটনায় ঈশিকা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেও পরে বুঝতে পেরে শান্ত হয়ে গেলো। আজ কিছুই বললো না। সেও কেনো যেনো মানুষটার এই উষ্ণ ছোঁয়াটুকু বড্ড মিস করছিলো এ কদিন।

বেশ কিছুক্ষন পর ঈশিকা ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে আমান বললো,
—-” এই ৬ দিনের জমানো পাওনার হিসাব আর আগামী দু’দিনের অগ্রীম পাওনা হিসাব। বুঝে নিলাম।”

তারপর ঈশিকার গাল দুটো নিজের হাতের আজলে নিয়ে কপালে আস্তে করে চুমু খেলো। ঈশিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” খুব মিস করবো তোমাকে লক্ষীটা।”
ঈশিকা নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে ঠেকে ঠেকে বললো,
—-” আ..আমিও।”
কথাটা শুনেই আমান হেসে ফেললো। তারপর ঈশিকাকে ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে একেবারে ঈশিকাদের বাড়ির মোরে এসে থামালো। তারপর
গাড়ি থেকে নেমে গেলো ঈশিকা। ফের ঘুরে তাকালো আমানের দিকে। কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। ফের সামনে তাকিয়ে জোরে জোরে পা ফেলে চলে গেলো বাড়ির দিকে। কেনো যেনো খুব কান্না পাচ্ছে।

আমান ঈশিকার যাওয়ার দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফের একটা ছোট করে শ্বাস ফেলে গাড়ি ঘুরিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।
.
.
.
চলবে…??????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here