তবুও তোমায় ভালোবেসেছি পর্ব ৯

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৯

অতীত ভুলে নতুন করে সংসার শুরু করেছি তাও বিপদ আমাকে ছাড়ে না। কি করে তমালের খারাপ উদ্দেশ্য সবার সামনে প্রকাশ করবো ভেবে পাচ্ছি না? আবিরকে বলতে খুব ভয় লাগছে যদি আমাকে ভুল বুঝে। খুব অস্থির লাগছে তাই বারান্দায় গিয়ে পায়চারি করি। বেশ কিছুক্ষণ পরে ঠিক করি আবিরকে গিয়ে সব বলে দিবো। রুমে গিয়ে দেখি উনি ঘুমাচ্ছে আর কিছু বলা হলো না।

সকালে শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে বসে কাজ করেছি তখন মাকে জিজ্ঞেস করি,
-তমাল ছেলেটা কেমন?
-শুনেছি তো ভালো। আমি ওকে আমাদের বাসায় রাখতে চাই নি কিন্তু ওর বাবা অনেক বার বলেছে রাখতে।
-মা একটা কথা বলবো,
-হ্যাঁ বলো
-ও খুব খারাপ (তমাল যা যা করেছে সব মাকে বললাম)
-আমি একক্ষুণি ওর ব্যাবস্হা করছি
মা রেগে গিয়ে আবিরের কাছে যাবে কিন্তু আমি তাকে যেতে না দিয়ে বললাম,
-ও মিথ্যে কথা বলে পাড় পেয়ে যাবে নয়তো আমাকে দোষী করবে তাই হাতে নাতে ধরিয়ে দিতে হবে।
-আজই আমাদের বাসায় ওর শেষ দিন

মিশ্মি -তিশ্মি কান্না করছে তাই রুমে গেলাম। আবির অবশ্য ওদের কোলে নিয়ে সামলাচ্ছে।
“ওদের আমার কাছে দিয়ে নিজে খেতে যান ”
“আমার মেয়েরা কিছু খায় নি সেদিন তোমার খেয়াল আছে? ”
“বারে আমার খেয়াল থাকবে না তো কার থাকবে? আপনি ওদের খেয়াল রাখেন নাকি সব কাজ তো আমি করি”
“আমাকে কথা শুনাবে না, বাচ্চাদের খাওয়ানো তেমন কঠিন কিছু না”
“এই নিন ফিটার এখন খাইয়ে দেন ”
“হুম”

মিশ্মির বাবা ওর মুখে ফিটার ধরেছে কিন্তু দুধ মুখে যাচ্ছে না মুখের দুই পাশ দিয়ে পরে যাচ্ছে আর মিশ্মিও কাঁদছে।
“আচ্ছা শুনো, তুমি ওকে খাইয়ে দেও আমার অফিসে যেতে লেট হবে যাবে”
“হাহাহাহ্, দেখলেন তো বাচ্চাদের খাওয়ানো অনেক সহজ না তাও আবার এক সাথে দুজন ”
“আমার সময় নেই নয়তো আমি পারতাম ”
“ভাঙ্গবেন তবুও মচকাবে না”
“ওদের খাইয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি আমার জন্য খাবার বাড়ো”

দরজায় নক করে তমাল বললো,
-ভাইয়া আসবো?
-হ্যাঁ ভিতরে আয়
-তুমি অফিসে যাবে কখন?
-এতো একটু পরে, কেনো?
-তোমার সাথে আমিও যাবো, তোমার অফিসে ইন্টারভিউ আছে। ওখানে চাকরিটা হলে ভালোই হবে
-কেনো? অফিসের পাশে কি বাসা ঠিক করেছিস?
-না শহরের কিছু চিনি না আগে তোমাদের বাসায় যদি কয়েক থেকে,,,,,
-হ্যাঁ থাকতে পারিস সমস্যা নেই।
-আচ্ছা

তমাল রুম থেকে চলে গেলো, এতোক্ষণ আমি বাচ্চাদের কোলে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ছিলাম।

আবির রেডি হয়ে আমাকে বললো,
“বিয়ের পরে বাবার বাড়ি যাও নি কালকে শুক্রবার আছে যদি যেতে চাও নিয়ে যাবো ”
“সত্যি নিয়ে যাবেন তো? ”
“হ্যাঁ ”
“আমি কয়েক দিন থাকবো”
“আপনি থাকলে আমার মেয়েদের কে দেখবে শুনি? ”
“ওদের নিয়ে থাকবো ”
“নাহ্, সকালে যাবো আবার বিকেলে চলে আসবো ”
“নাহ্ দুটো দিন থাকবো ”
“তাহলে যাওয়ার দরকার নেই ”

কথাটা বলে রুম থেকে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো। আমিও উনার পিছন পিছন গেলাম। ডাইনিং টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাচ্ছি তখন আবির মাকে বললো,
-মা কালকে আমার সবাই ইভার বাবার বাড়ি যাবো
-আমার যাওয়ার দরকার নেই তোরা যাস
-না সবাই যাবো, তমাল তুই যাবি
-আচ্ছা ভাইয়া (তমাল)

তমাল বজ্জাত, হারামি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে ওর হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে খারাপ উদ্দেশ্য, সেটা হতে দেওয়া যাবে না
অনুভব করি আমার পায়ের উপর কেউ পা রেখেছে। কেউ বলতে তমাল ছাড়া কেউ না তাই পা সরিয়ে দিলাম একটা লাথি।
-আআআআহহ্ পা গেলো
-তমাল তোর কি হয়েছে?
-না ভাইয়া কিছু না
-তুই ব্যাথা পেয়েছি?
-নাহ্ হঠাৎ করে পায়ের রগে টান লেগেছে
-সাবধানে বসবি তো
-পা একটু নাড়াচাড়া দিলে ঠিক হয়ে যাবে

তমালে চেহারা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে, শ্বাশুড়ি মা-ও বুজেছে কাজটা আমি করেছি। তমাল বাসা থেকে বেড় হবার সময়,
“কাজটা ঠিক করলে না,এরজন্য তোমাকে পস্তাতে হবে ”

আমি কোনো কথার উওর দিলাম না। কাজে করিয়ে দেখাবো।

বাচ্চাদের গোসল করিয়ে জামাকাপড় পরিয়ে মায়ের কাছে দিয়ে এসে আমি গোসল করবো তার আগে মা রুমে আসে ওদের নিতে,
-ইভা তুমি কিন্তু ভুল করছো তমালের কথা আবিরকে না বলে।
-মা আমি চাই একটা প্রমান সহ ওকে ধরিয়ে দিতে
-আজকে যা করলে তাতে ও তোমার উপর খেপে আছে এর বদলা ঠিক নিবে
-আজই ওর শেষ দিন, আপনি সাথে থাকবেন মা
-হুম থাকবো।

সারাদিনে তমাল বাসায় আসে নি। অপেক্ষা করছি কখন বাসায় আসবে। সন্ধ্যায় আবিরের সাথে তমাল বাসায় আসে। মুখ দেখে মন হয় চাকরি হয় নি, আমি তো খুশি হয়েছি।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here