তবুও তোমায় ভালোবেসেছি পর্ব ১৫

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৫
“আরে আরে কেউ দেখে ফেলবে তো যে আমাকে কোলে তুলেছেন, আমাকে নিচে নামিয়ে দেন”
“বৌয়ের সাথে কি একটু প্রেমও করবো না, কেউ দেখার ভয়ে? ”
“নাহ্ ওতো প্রেম করতে হবে না ”
“প্রেম না করলে সংসার করার মজা থাকে না ”
“আজকে হঠাৎ রোমান্টিক মুড “?
” এতোদিনের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে চাই ”
” সত্যি কি তুমি পারবে আমাকে ভালোবাসতে, স্ত্রীর মর্যাদা দিতে ”
“হুম পারবো কিন্তু তুমি কি বললে আবার বলো? ”
“কি বলেছি? ”
“ওই যে আমাকে তুমি করে বললে সেটা আবার বলো ”
“নাহ্ আপনি করে বললেই ভালো লাগে ”
“তাহলে আমারও ইচ্ছে করছে তোমাকে ধপ্পাস করে নিচে ফেলে দিতে, ভালো লাগার জন্য ”
“নিচে ফেলে দিলে আমার কোমড়ের হাড্ডি একটাও থাকবে না তখন কি হবে? ”
“কি আর হবে? তোমার সেবা করবো আর যখন আপনি করে বলবে তখন আবার কোলে তুলে ফেলে দিবো ”
“খুব বাজে আপনি”
“খুব বেশি বাজে, আবার করে বলেছো এখন তুমি থাকো কোমড় ভেঙ্গে ”
“না না নাহ্ আমাকে ফেলে দিবেন না, তুমি করে বলবো।”
“তাহলে বলো? ”
“শুনো, একটা কথা আছে? ”
“বলো, তোমার হাজারটা কথা শুনতে রাজি আছি ”
“আগে আমাকে কোল থেকে নিচে তো নামাও তারপর বলছি ”
আবির আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো তারপর আমি বললাম,
“রিফাত বিয়ে করেছে সেটা আমাদের আত্মীয় সজন কেউ জানে না আর রিনির পরিবারের সাথে পরিচয় নেই তাই আমরা যদি ঘরোয়া ভাবে আত্মীয় সজন দাওয়াত দিয়ে ওদের বিয়ের কথা জানিয়ে দেই এবং ওর পরিবারের সাথে পরিচিতি হবো তাহলে ভালো হয়, তুমি কি বলো? ”
“হুম খুব ভালো হবে কিন্তু মা যদি রাজি না হয় কারন মা ওদের উপর রেগে আছে ”
“মাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার তুমি শুধু আয়োজন করো ”
“আচ্ছা বেশ ”
“কালকে শপিংয়ে যাবো আর আত্মীয় সজন কয়েকজনকে দাওয়াত দিতে হবে ”
“তুমি সত্যি আমাদের পরিবারে জন্য অনেক বড় পাওয়া ”
“তোমরাই তো আমার সব ”
“দেখেছো আমার মেয়েদের বাসায় রেখে এখানে বসে প্রেম আলাপ শুরু করেছে ”
“হুহ যতো দোষ এখন আমার হলো ”
“হুম ”
“নিচে চলো ”
আবিরের সাথে ছাঁদে বসে গল্প করতে করতে খেয়াল ছিলো রাত এগারোটা বাজে। মা মিশ্মি তিশ্মিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। আমি মায়ের রুম থেকে বাচ্চাদের নিয়ে নিজের রুমে শুয়ে দিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে অবাক করার বিষয় দেখলাম। রিনি এক গ্লাস পানি ঢেলে খাওয়ার মেয়ে না, সে কি না সব খাবার গরম করে টেবিল উপর রেখে সবার জন্য প্লেট খাবার বেড়ে রেখেছে। হঠাৎ করে কাজ করছে দেখে কেমন জানো এটা ঘাপলা লাগলো। সবাই এক সাথে খেতে বসেছি তখন আমি মাকে বললাম,
“মা আমি আর আবির চাই রিনি রিফাতের বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে আয়োজন করে আত্মীয় সজনদের জানাতে ”
“কোনো দরকার নেই, ওরা নিজেরা বিয়ে করে নিয়েছে তখন তো কারো কথা মনে রাখে নি ”
“মা ওরা ভুল করে ফেলেছে তা ছাড়া রিনিকে আমাদের পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে হবে তো” (আবির)
“মা আমি ভুল করে ফেলেছি তোমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে, আমাদের মাফ করে দেও ” (রিফাত)
“আপনি বলেছেন বাড়ির যোগ্য বৌ হয়ে দেখাতে তাই আমাকে একটু সুযোগ দেন মা ” (রিনি)
“আচ্ছা ঠিক আছে তোমাদের সবার কথা মেনে নিলাম ” (মা)
রিনি খাওয়া ছেড়ে এক দৌঁড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“থ্যাংক ইউ এ লট ইভা আপু, তোমার জন্য এতো হ্যাপি লাগছে ”
“আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না, মা রাজি হয়েছে বলে আনুষ্ঠান হবে ”
“তারপরেও সব ক্রেডিট তোমার ”
“এই যে মেয়ে আমার জন্য কি একটু ধন্যবাদ রাখো নি” (মা)
রিনি আমাকে ছেড়ে মায়ের মুখে এক লোকমা ভাত দিয়ে বললো,
“অনেক অনেক ধন্যবাদ মা ”
“পাগলী মেয়ে, যাও নিজে খেতে বসো ” (মা)
খাওয়া দাওয়া শেষ সব থালাবাসন রিনি ধুয়েছে। আমাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না। বিছানায় শুয়ে ভাবতে আছি হঠাৎ করে রিনির আচরন পরিবর্তন হলো কেনো? বেশকিছু ক্ষন পরে মনে হলো মায়ের কথা। মা বলেছে যে বৌ তার সেবা যত্ন করবে মন মতো হবে তাকে আলাদা করে সম্পত্তির ভাগ দিবে তাই রিনি ঘরের কাজ করতে চাই। তবে আমার দেখে ভালো লাগছে যে রিনি কাজ করতে চাইছে, পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে চায়।
সকালে ফজরের নামাজ পরার পরে আমার ঘুম আসছে তাই সকালের নাস্তা রেডি করতে রান্না ঘরে কাজ করি তখন শুনতে পাই রিনি ফোনে কারো সাথে কথা বলে বাসার ঠিকানা আর খাবার অর্ডার দিচ্ছে।
আমি রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে রিনির সামনে দাঁড়াতে ও কেমন যেনো চমকে উঠলো।
“আপু তুমি এতো সকালে ঘুম থেকে উঠেছে যে ”
“নামাজ পরার পরে ঘুম আসছিলো না তাই ভাবলাম নাস্তা রেডি করি”
“ওহ্ আচ্ছা ”
“তুমি কি রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করেছো”?
” না মানে আর কি আপু ”
“শোনা রিনি তুমি আমাদের পরিবারের লোকজনদেন আপন মনে করো, তুমি যে কাজগুলো করবে সেগুলোকে ভালোবেসে করবে কোনো হিংসা দ্বন্দ রাখবে না তাহলে দেখবে তুমি খুব সহজে সব কিছু করতে পারবে ”
রিনি আর কোনো কথা না বলে চলে গেলো। ও বুঝতে পেরেছে যে আমি ওর কথাগুলো শুনেছি তাই লজ্জা পেয়েছে।
সকালের নাস্তা করে দুপুরের জন্য আমি আর রিনি দুজনে মিলে রান্না করেছি। দুপুরে খাওয়া পর মায়ের সাথে গল্প করা। বিকেলে আবির অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে তারপর আমি, আবির, রিফাত,রিনি শপিং করতে গেলাম।
একটা দোকানে খুব সুন্দর শাড়ি দেখে আমার চোখ আটকে গেলো তাই দোকানটিতে গিয়ে জিজ্ঞেসা করলাম,
“এই শাড়িটার প্রাইজ কতো ”
লোকটা আমার দিকে ঘুরে তাকাতে আমার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। সেই চেনা মুখ, প্রথম ভালোবাসার মানুষকে এভাবে দেখতে কষ্ট হচ্ছে। নীল আগের মতো নেই, চেহারায় কষ্টের ছাপ। সারাদিন খাটাখাটি করলে তো চেহার খারাপ হবে।
আমার দিকে তাকিয়ে নীল কোনো কথা বলছে না। আবির আমার কাছে এসে বললো,
“কি কোনো শাড়ি পছন্দ করেছো ”
চোখের পানি মুছে বললাম,
“না, অন্য দোকানে চলো ”
“হুম ”
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here