তবুও তোমায় ভালোবেসেছি পর্ব ১৪

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৪

“বিশ বছর বয়সে এই বাড়িতে বৌ হয়ে এসেছি। বিয়ের এক বছরের মাথায় আবিরের জন্ম হয় তার পাঁচ বছর পরে রিফাতের জন্ম হয়। বিয়ের দশ বছর পর্যন্ত আমার শ্বাশুড়ি মাকে পাই। সেই দশ বছরে শ্বাশুড়ি মাকে একদিনের জন্য বুঝি নি সে আমার শ্বাশুড়ি মা নিজের মায়ের জায়গায় রেখেছি সেও আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতো। কাজে ভুল হলে হেসে বলতো” পরের বার ঠিক হবে, আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি “। আর তুমি বৌ হয়ে প্রথম দিন এসে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করেছো। হ্যাঁ মেনে নিলাম তুমি বিদেশে থেকেছো তাই বলে কি ভদ্রতা বলতে কিছু থাকবে না ”

শ্বাশুড়ি মায়ের কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। সে যেমন ভাগ্য করে শ্বাশুড়ি পেয়েছে তেমন আমার ভাগ্য খুব ভালো তার মতো আমিও মা পেয়েছি । রিনি মায়ের কথা শুনে বললো,
“মা আপনাদের পুরোনো দিনের কথা বলে এখন কি লাভ? আজকাল এরকম হয় না। আমি আর রিফাত ঠিক করেছি আমাদের সব কাজ শেষ করে বিদেশে চলে যাবো আর কখনো দেশে আসার প্রশ্ন আসে না”
“আচ্ছা বেশ, তবে আর কতোদিন দেশে আছো? ”

রিফাত অনেকগুলো খাবারের প্যাকেট ডাইনিং টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলে,
“মা খুব খিদে পেয়েছে, তাড়াতাড়ি বেড়ে দেও”
“দাঁড়া এতো তারাহুরো কিসের? ইভা তুমি যাও তো আবিরকে ডেকে নিয়ে আসো ”
“হ্যাঁ মা যাচ্ছি ”

মায়ের কথা মতো আমি আবিরকে ডাকতে রুমে এসে দেখি দুই মেয়েকে বুকের উপর রেখে ঘুমাচ্ছে। আমি মিশ্মিকে কোলে নিতে আবির চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,
“কি হলো এটা? আমার মেয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলো যে”
“সন্ধ্যাবেলা এখন কিসের ঘুম হ্যাঁ, এখন উঠুন তো”
“সপ্তাহে একদিন আমার মেয়েদের সাথে সময় কাটাতে পারি, তুমি কি সেটাও হতে দিবে না? ”
“পরিবারের সবার সাথে সময় দিতে হয়, এবার চলুন তো মা ডেকেছে ”
“কেনো?কি হয়েছে? ”
“আমি কি করে জানবো ”
“হ্যাঁ তাও তো ঠিক ”

আবির তিশ্মিকে কোলে নিলো আর আমি মিশ্মিকে কোলে নিয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম।মিশ্মিকে মায়ের কোলে দিয়ে সবার জন্য নুডলস আর রিনির জন্য কফি টেবিল উপর রেখেছি। রিনি কফি হাতে নিয়ে রুমের দিকে চলে যাচ্ছে দেখে মা বললো,
“আমার কথা শুনে তারপর যেখানে খুশি সেখানে যেও ”
রিনি দাঁড়িয়ে থাকলো। রিফাত বললো,
“ভাইয়া তো এসেছে, এখন বলো তোমার কি কথা আছে?”
“হ্যাঁ বলছি তোরা দেশে কতোদিন থাকবি? সেই অনুযায়ী কাগজপত্র তৈরি করতে হবে? ”
“ওরা কতোদিন থাকবে সেটা যেনে কি কাগজপত্র তৈরি করবে? দেখো মা আমাদের ভাইয়ের মধ্যে কোনো ভাগ হোক সেটা চাই না। (আবির)
” তুই চুপ কর, আমার সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য তোকে ডেকেছি। তোর মতামত জানার জন্য না ”
“মা তো ভালো কথা বলেছে, আমাদের ভাগে যতোটা সম্পত্তি পাবো সেগুলো বিক্রি করে বিদেশে যেতে পারলে খুব ভালো হবে ” (রিনি)
“আমি একবারও বলি নি যে আমি সম্পত্তি ভাগ করে দিবো তাহলে সম্পত্তি নিয়ে এতে কথা হচ্ছে কেনো? ”
“সম্পত্তি ভাগ করবে না কেনো? আমরা দেশে যতোদিন আছি ততোদিনের মধ্যে তাড়াতাড়ি আমার ভাগ বুঝে নিতে চাই ” (রিফাত)
“আচ্ছা ঠিক আছে, তোর ভাগ তোকে বুঝিয়ে দিবো কিন্তু হ্যাঁ আমার বাবার দেওয়া যে বাড়ি আর জমি আছে সেটা পাবে যে বৌমা আমাকে মায়ের মতো ভালোবাসবে, এ বাড়ির যোগ্য বৌ হবে তাকে দিবো ”
“মা এটা আবার কেমন কথা বললে, যার যার ভাগ তাকে দিয়ে দিলে তো হয় ” (রিফাত)
“আপনার বাড়ির যোগ্য বৌ তো ইভা আপু হবে কারন উনি তো সব কাজ করতে পারে, আপনার মনের মতো কাজ এখন সুবিধা হলো যাতে সম্পত্তি পেয়ে যায় “(রিনি)
” দেখেছো মা, সম্পত্তির ভাগ করতে গিয়ে ইভাকে অপমান করার সুযোগ বেশি পেয়েছে “(আবির)
” আহ্ বাপু তোরা চুপ কর, নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করিস না। আমি যা বলেছি সে কথার নড়চড় হবে না ”

রিনি আর রিফাত কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেলো৷ মা মিশ্মি তিশ্মিকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো। আমি আর আবির চেয়ারে বসে আছি। সংসারে কয়েকদিন এসে পুরো সংসারের দায়িত্ব নেওয়া বা সম্পত্তি ভাগ হওয়া এসব চাইছি না আবার মায়ের কাছে এক ছেলের বৌ ভালো হয়ে থাকবে আরেক ছেলের বৌ খারাপ হয়ে থাকবে এটা একদম ভালো লাগছে না। আমাদের পরিবারের সাথে কিছুদিন রিনি থাকলে, ও সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে ওকে কিছু দিন সময় দিবে হবে।

“এতো কি ভাবছো? ”
আবিরের কথা শুনে হুঁশ হলো, ভাবনার জগৎতে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
“কই না তো কিছু না ”
“কতোদিন হলো ছাঁদে গিয়ে চাঁদে আলো উপভোগ করি না তুমি যাবে আমার সাথে? ”
“হুম যাবো”

ছাঁদে ফুরফুরে বাতাস,চাঁদের আলো খুব ভালো লাগছে। বহুদিন পরে সুন্দর একটা প্রকৃতির মাঝে আছি। সারাদিনে সংসারের কাজে ভুলে যাই আমার আলাদা করে ভালো লাগার কথার।

“এই যে আপনাকে বলছি শুনেছে? ”
“হুম বলুন ”
“একটা অনুরোধ করবো রাখবে? ”
“উফফফ্ এতো হেয়ালি না করে সোজাভাবে বলুন তো কি বলবেন? ”
“কালকে তুমি আমার সাথে শপিংয়ে যাবে, আমি চাই না আমার জন্য তোমাকে আরো পাঁচটা মানুষ অপমান করার সুযোগ পাক। জানি বিয়ের প্রথম দিন থেকে তোমার সাথে অনন্যায় করে আসছি। আমাদের বিয়েটা যে পরিস্থিতিতে হোক না কেনো সেটাকে সম্মান দিতে হবে। আসলে ঐশীকে এতোটা ভালোবাসি যে কখনো ওর জায়গায় কাউকে দিতে পারবো না তাই তোমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি। ”

আবিরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ওর কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তে ওর বুকে মাথা রাখি। আবির আমার মাথায় হাত রেখে বলে,
“নতুন করে সংসার শুরু করতে চাই, তুমি চাও তো আমার সাথে থাকতে ”
“হুম খুব চাই ”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here