তমসার জল পর্ব -০৮

#তমসার_জল
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
।।পর্ব৮।।
(কার্টেসী ব্যতীত কপি নিষেধ)

বেশ অনেকদিন ধরেই জলের তলপেটে ব্যথা ছিলো।এই ব্যথাই ই মূলত জলের জ্বরের কারণ।ভারী ভারীও লাগে ইদানীং তলপেটটা।তবে জল কি প্রেগ্ন্যান্ট?কিন্তু গতমাসেও তো জলের পিরিয়ড হয়েছে।তাও বলা যায় না।বর্ষণকে কি বলবে প্রেগ্ন্যাসির টেস্ট কিট আনতে?কিন্তু শেষমেশ যদি আদিবার মতো হয়?ড্রেসিনটেবিলের ড্রয়ার থেকে ডায়েরীটা বের করে আদিবার শেষ লেখাটায় চোখ বুলায় জল।তারিখ লেখা এমনকি আদিবার অশ্রু সবকিছুর দাগ স্পষ্ট লেখাটায়।

২৮শে সেপ্টেম্বর ২০১৮

তিন মাসের প্রেগন্যান্ট আমি।বর্ষণ আর ওর মা এবোরশনের কথা বলেছে।কিন্তু আমার তো মন সায় দিচ্ছে নাহ।আমি না হয় ভুল করেছি তাই একটু একটু করে ম-রছি।কিন্তু আমার অনাগত সন্তান!সে তো কোনো দোষ করেনি।সে কেন ম*রবে? পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা-মা ত্যাজ্য করলো।যে সুখের আশায় বাবা-মাকে ছাড়লাম সেই সুখই আমার কপালে জুটলো না।অনাগত সন্তানটা সুস্থ ভাবে দুনিয়ায় এলে ওকে নিয়ে না হয় কোনো জায়গায় পালিয়ে যাবো!

পৃষ্ঠা উল্টাতেই মোটা কালি দিয়ে তীব্র কষ্ট নিয়ে আদিবার লেখা পায়।লেখাটা জলেরও হৃদয়ে কাঁটার মতো বিদ্ধ হয়।

❝নারীদের অর্ধেক কষ্ট দেয় পরিবার আর বাকি অর্ধেক দেয় সেই পুরুষ যা কে সে ভালোবাসে❞

জল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।বেচারি খুব কষ্ট নিয়ে মা*রা গেছে।ম*রার পরও শান্তি পাই নি মেয়েটা।রেহায় পায়নি বর্ষণের পৈশাচিকতা থেকে।
ইদানীং বর্ষণ বেরিয়ে যাবার পর সাহস করে বের হয় জল।পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর সাথে তার বেশ ভালোই ভাব জমেছে।একটা ছেলে আছে ভাবীর।সেই মিষ্টি আর দুষ্টু।জলকে দুষ্টুমি করে ওয়াটার আন্টি বা পানি আন্টি বলে ডাকে। জেরিন ভাবির ফ্ল্যাটের কলিংবেল বাজাতেই ছোট্ট জায়ান এসে দরজা খুলে দেয়।

” আম্মু ওয়াটার আন্টি এসেছে।”

হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বের হন জেরিন ভাবী।হাল্কা রেগে ছেলেকে বলেন,,,

” জল ভেতরে এসো আর জায়ান তোমাকে বলেছি না জল আন্টি বলতে।”

” থাক ভাবী।ওর ডাকটা আমি বের ভালোই ইঞ্জয় করি।যে কারণে আসা!আমার গত মাসেও ভাবী পিরিয়ড হয়েছিলো।কিন্তু ইদানীং পেটে প্রচন্ড ব্যথা আর তলপেট ভারী লাগে।”

” প্রেগন্যান্সি কিট কিনে টেস্ট করতে পারো।”

জল জেরিনের কথায় আমতা আমতা করে।জিনিসটা কিনতে জলের খুব জড়তা কাজ করছে।তাছাড়াও জলের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই।সাধারণ বাঙালি গৃহিনী জল।বর্ষণ তাকে এক কানা-কড়িও দেয় না।শুধু দরকার পরলে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কিনে দেয়।

” ভাবী আপনি তো জায়ানকে নিয়ে স্কুলে যান।তখন যদিই……”

জলের কথায় জেরিন লাজুক হাসি দেয়।চোখ মেরে বলে,,,

” থাক বলতে হবে না।বুঝতে পেরেছি হাবিকে সারপ্রাইজ দিবে তাই না?”

জল কৃত্রিম লাজুক হাসি দেয়।

” আমি কালকে সকালে এনে দেবো নি।”

” আচ্ছা ভাবী ধন্যবাদ। আজ আসি।”

জল মুচকী হেসে চলে যায়।জেরিন দরজা আটকিয়ে সংসারের কাজে মন দেয়।

জল ফ্ল্যাটে গিয়ে আবার আদিবার ডায়েরী খুলে বসে।পুরো ডায়েরীতে আদিবার লেখা একটা কবিতা ছিলো।জলের এত ভালোলাগে কবিতাটা!!স্কুল কলেজে থাকতে জল বিভিন্ন প্রোগ্রামে কবিতা আবৃত্তি করতো।এখন তা আর করা হয় না।সময়ের সাথে সব হারিয়ে গেছে।জল ডায়েরীটা খুলে আদিবার লেখা কবিতাটা আবৃত্তির ভঙ্গিমায় পড়তে লাগে।

সময় আমার সমঝে চলুক,
মগের মুল্লুক থাক একা!
আমি বরং জোনাকি খুঁজি,
শহর ধূসর পথ ব্যাঁকা।
লাল মাটি লাল কাদা মাখি,
রাতের সাথেই চাঁদের দেখা।
রাতের হাতের স্পর্শে ঘুম,
রাত জেগেই স্বপ্ন দেখা!
আমি বরং আবার জোনাকি খুঁজি!
আর রাতের সাথেই হোক দেখা!

_______°_°

পরের দিন জায়ানের মা প্রেগ্ন্যাসি টেস্ট কীট এনে দিলে জল প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে।ফলাফল নেগেটিভ আসে।কিন্তু তলপেটে ভারী আর ব্যথা অনুভুতি দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।জল জলের গাইনী বিশেষজ্ঞ এক ডাক্তার বন্ধুর থেকে পরামর্শ নেয়।সে জলকে আল্ট্রাস্নোগ্রাফির পরামর্শ দেয়।আরেক যুদ্ধ।জ্বর হলেই যে মানুষ খোঁজ খবর নেয় না সে আবার আল্ট্রা করাতে নিয়ে যাবে!ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর।কিন্তু বিষয়টা জলের সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।সে সাহস করে বর্ষণকে বলেই ফেলে আল্ট্রার কথা।বর্ষণ সাফ তা ন্যাকামো বলে দেয়।জল ছলনার আশ্রয় নিয়ে বলে,,,,

” না করালে আল্ট্রা।একটু একটু করে মরার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়া ভালো।কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে তোমায় দেখে।পর পর দুই বউয়ের নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনলে নিশ্চয়ই আর কেউ তোমায় মেয়ে দেবে না!তখন তুমি কাকে ভোগের বস্তু বানাবে?”

জলের মুখে দুই বউয়ের কথা শুনে বর্ষণ আকাশ থেকে পরে।জল কি তাহলে আদিবার কথা জেনে গেলো?

” দুই বউ মানে?কি বলতে চাইছো তুমি?”

সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে বর্ষণ।জল হেসে বলে,,,

” আমি মারা যাওয়ার পর না হয় তুমি আরেকটা বিয়ে করতে পারবে!কিন্তু পর পর দুই বউ দুনিয়া থেকে হাপিশ হলে বিষয়টা কেমন হয়ে যায় না?”

” রেডি হয়ে আসো যাও।”

বর্ষণের কথা শুনে জল বোরখা পরে রেডি হয়ে আসে।পার্শবর্তী একটা হসপিটালে আল্ট্রা করা হয়।রিপোর্টে আসে জলের জরায়ুতে টিউমার হয়েছে।ভাসমান টিউমার।মেডিসিন এর বৃদ্ধি আটকাতে পারবে।যেহেতু ভাসমান তাই পিরিয়ডের সাথে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।তাতে কাজ না হলে সার্জারি। রিপোর্ট দেখার পরক্ষণেই জলের খেয়ালে আসে টিউমারের কারণ।এর জন্য আর কেউ দায়ী নয়।বর্ষণই দায়ী এর জন্য।পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শারীরিক সম্পর্ক করলে জরায়ুর ভেতর রক্ত জমাট বাঁধে।জলের ক্ষেত্রেও হয়তো তাইই হয়েছিলো।পরে ওই জমাট বাঁধা রক্তই টিউমারে রূপ নিয়েছে।জলের খুব রাগ হয় সাথে কষ্টও।দুটো বছরের রাগ কষ্ট সব আগ্নেয়গিরির লাভার মতো মনের গভীর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগে।সেদিনই জল সিদ্ধান্ত নেয় বর্ষণকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া।বর্ষণ বেঁচে থাকলে অন্য মেয়েরও কপালে জল আদিবার মতো করুণ পরিনিতি জুটতে পারে।আর জল তা চায় না।খুব ঠান্ডা মাথায় ছক সাজায় জল।বর্ষণের পুরুষ শক্তির সাথে পেরে ওঠতে পারবে না জল।ছলনার আশ্রয় নিতে হবে মানুষটাকে মা*রার জন্যে।ভাগ্যিস বিধাতা মেয়েদের ছলনা নামক জিনিসটা দিয়েছিলো!

______°_°

সেদিন ছিলো শুক্রবার।বর্ষণ আজ সারাদিন বাসায়।মৃত্যুর আগে আদিবা কষ্ট পেয়েছিলো অনেক।জলের ইচ্ছা মানবতার খাতিরে হলেও মরার আগে বর্ষণকে একটু শান্তি দেবে।সেদিন বর্ষণের সব পছন্দের খাবার রান্না করে জল। বর্ষণের হিংস্রতায়ও সেদিন জল পৃথিবীর সব সুখ ঢেলে দেওয়া চেষ্টা করে।তারপর বর্ষণ ঘুমিয়ে গেলে নিজের শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে বর্ষণের মুখে বালিশ চেপে ধরে জল।মৃত্যু যন্ত্রণায় বর্ষণ ছটফট করতে লাগে।কিছু মুহুর্তের মধ্যেই বর্ষণের ছটফটানি কমে যায়।নিস্তেজ হয়ে যায় একটি মানুষরূপী পশু।মৃত বর্ষণের মুখ দেখে জলের ভেতরের সব রাগ ক্ষোপ কষ্ট পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা গরম লাভার ন্যায় বেরিয়ে আসে।জল টেনে হিঁচড়ে মৃত বর্ষণকে খাট থেকে নামায়।রান্নাঘরে থাকা ধারালো ছুরি এনে প্রথমে বর্ষণের হাত পায়ের আঙুল আলাদা করে।বাঙালি নারীরা সাধারণ বটি দিয়ে কা*টাকা-টিতে পারদর্শ হয়।কিন্তু জল বটি ধরতেই পারে না এক কথায়।রেস্টুরেন্টের দক্ষ সেফের মতো ছুরি চালাতে পারে জল।সেই দক্ষতাকেই কাজে লাগায় সে।অত্যন্ত নিঁখুত ভাবে সে বর্ষণের শ-রীরের চামড়া ছাড়ায়।থাই,রানের মতো অঙ্গ থেকে মাং-স আলাদা করে সেগুলো পলিথিনের ছোট ছোট প্যাকেটে করে ফ্রিজে রাখে। ভোর রাতের মধ্যে বর্ষণের দে*হ মাং-সহীন কংকালে পরিনত হয়।জায়গায় জায়গায় মাং*স লেগে থাকায় দে*হটি আরও বিভৎস রূপ নিয়ে বের রুমে পরে থাকে।
জল স্টিলের একটা বাটি এনে বর্ষণের রক্ত গুলো তুলে রাখে।ফল কাটার ছোট ছুড়ি দিয়ে চোখ উপরে সেগুলো অত্যন্ত মিহি ভাবে ছোট ছোট পিস করে।অক্ষিগোলক দুটো অত্যন্ত অনাদরে রান্না ঘরের ডাস্টবিনে ফেলে দেয় জল। ফ্রিজ থেকে দুটো ডিম বের করে কুসুম আলাদা করে একটা প্যানে রাখে জল।তারপর সেখানে মিহি করে রাখা চোখের মাং-সল অংশটুকু ঢেলে দেয় সাথে পাতলা পাতলা করে কাটা বর্ষণের কিছু মা*ংস।সয়া সস,ওয়েস্টার্ন সস,চিলি সস,টমেটো সস আর কর্ণ ফ্লাওয়ার দিয়ে ভালো ভাবে নেড়ে তারপর ৩কাপের মতো পানি ঢেলে দেয় জল।মুহুর্তের মধ্যেই মিশ্রণটা ঘন থাই স্যুপে রূপ নেয়।মানুষের চো-খের থাই স্যুপ।বর্ষণের চো*খের থাই স্যুপ। জল একটা স্যুপ বোলে স্যুপটুকু ঢেলে অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে খায়।

চলবে,,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here