পর্ব-০৩
#তমিস্র_প্রভা🍁
#লেখিকা-লামিয়া_রহমান_মেঘালা
অন্ধকারের মাঝেই দৌড়াচ্ছিল ছায়া।
কোথাও একটু আলোর সন্ধান পেতে কিন্তু সে গত প্রায় ৩০ মিনিট ধরেই সমান ভাবে দৌড়াচ্ছে কোথাও কোন আলো বা কোন দিকে কোন কিছুর কুল কিনারা পাচ্ছে না৷
কিন্তু মাঝে মধ্যেই মনে হচ্ছে যেন একটা কিছুর পায়ের শব্দ তাকে তাড়া করছে,
ছায়া ভীষণ ভয়ে আছে আর এই পায়ের শব্দ তাকে আরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছে,
ছায়া হটাৎ ই কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে সোজা গিয়ে মাটিতে পরে,
আর সেখানে তাকে সামনে থেকে অনেক গুলো বিরাট আকৃতির শেয়াল ঘিরে ফেলে,
ছায়া অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারে না শুধু তাদের চোখ বাদে কারন তাদের চোখ গুলো অন্ধকারে জ্বল জ্বল করছিল৷
হটাৎ ই তারা ছায়ার পায়ের উপর আক্রমণ করে,
ছায়া ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে,
কিছুক্ষণ পরেই চোখের সামনে সব অন্ধকার গুলোও নিরুদ্দেশ হয়ে যায়,
,★★★
নির্ঝর এর হাতের ইসারায় সব পশু গুলো পেছনে সরে যায় মাথা নামিয়ে,
নির্ঝর ছায়ার কাছে এসে বসে,
–আমি জানি তুমি কে। কেন এখানে এসেছো। কিভাবে এসেছো ।
কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি আমার নাদিয়ার মতো দেখতে,
তোমার চোখ তোমার নাক তোমার সব কিছু,
আমি ত ওকে হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু তোমায় হারাতে পারবো না৷
না কখনো না,
নির্ঝর ছায়াকে কোলে তুলে নেয়,
তার প্রাসাদে নিয়ে আসে,
–মেয়েটার জন্য খাবার আর কাপড় এর ব্যাবস্থা করো।
নির্ঝর ছায়াকে নিয়ে তার রুমে শুইয়ে দেয়।
ছায়ার ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজ করে দেয়,
ছায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তার পরেই হটাৎ বলে ওঠে,
–সুন্দর, ভিশন সুন্দর তুমি।
যখন তুমি কাঁদো তখন আরও বেশি সুন্দর দেখায় তোমায়,
আমি ভালোবাসি তোমায়,
ছায়ার কপালে একটা ভালোবাসা একে দেয় নির্ঝর,
–কিন্তু এখন রবির শাস্তির পালা ওর জন্য তোমায় আমি কষ্ট দিয়েছি,
তোমার কষ্ট হলে তা আমি সহ্য কি করে করি বলো,
নির্ঝর উঠে আসে,
★★★
জঙ্গল থেকে অনেক বহু দুরে ছায়ার বাড়িতে,
–অনুপমা খেয়ে নেও৷
–আমার মেয়েটা কোথায় আছে কি করছে আমি কিছু জানি না।
গত ২ টা দিন ধরে ও আমার ঘরে নেই আর তুমি বলছো খেয়ে নেও অনুপমা কি করে বলছো এগুলো,
–তুমি গত ২ দিন ধরে কিছু খাচ্ছো না।
–মা তুমি আমার কথা ভেবে কিছু মুখে দেও,(তুষা)
–তুমি কেন পুলিশ রিপোর্ট করছো না ছায়ার আব্বু ?
— আমি রিপোর্ট করে কিছু হবে না ওরা রিপোর্ট নিচ্ছে না।
–কেন ১ দিনের বেশি হয়ে গেছে মেয়েটা বাসায় নেই,
–তোমার মেয়ের আশে পাশে নির্ঝর চৌধুরী এর গাড়ি দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজ এ তাই ওরা কোন রিপোর্ট লিখতে ভয় পাচ্ছে,
–ছায়ার আব্বু আমার মেয়েটা বেঁচে আছে ত ( অনুপমা বেগম কান্নায় ভেঙে পরে,)
ছায়ার বাবা আরিফ খান ও ভেঙে পরেছে সব কিছুর জন্য,
মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসে পরিবারের সবাই,
— মা তুমি এমন করো না তোমার আগে এক বার হর্ট এটাক হয়েছিল এখন যদি আবার হয় তাহলে কি করে হবে .
আমরা কি করব মা প্লিজ খেয়ে নেও।
তুষা (ছায়ার ছোট বোন),
–অনুপমা।
–আমি খাবো না আমার মেয়েকে এনে দেও আগে,
বাড়ির প্রতিটা মানুষ ঘাবড়ে গেছে প্রতিটা মানুষ কান্নায় ভেঙে পরেছে,
,
★★★
নির্ঝর এর সামনে হাটু মুড়ে বসে আছে রবি,
–নির্ঝর তুই আমায় এভাবে কেন নিয়ে এলি?
–ছায়া কে?
–ছায়া মানে,
ও ত সেই মেয়েটা।
–তুই জানিস এই মেয়ের পরিবার সম্পর্কে?
–নির্ঝর,
–তুই আমার সাথে গত ১০ বছর ধরে আছিস দয়া করে আমায় আর মিথ্যা বলিস না।
–আসলে আমরা ভুল মেয়েকে,
রবিকে থমিয়ে দিলো নির্ঝর
–আমি জানি তোরা ভুল মেয়েকে তুলে এনেছিস,
আমি সেই গল্প শুনতে চাই নি,
–তাহলে কি?
–তুই এই মেয়েটার সম্পর্কে কিছু জানিস?
–হ্যা জানি।
ও অনুপমা বেগম আর আরিফ খানের এর দুই মাত্র মেয়ে।
সে বড়ো মেয়ে তার একটা বোন আছে ক্লাস ৯ এ পড়ে,
ওর নাম তুষা।
আর ওর নাম বর্ণালী ছায়া।
ও এবার ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী,
–আচ্ছা,
আর কিছু?
–না।
–ঠিক আছে তুই আমার ভিশন কাছের এক জন মানুষ ছিলি রবি কিন্তু আমি আসলে কাউকে দ্বিতীয় সুযোগ দেই না৷
তোকেও না,
নির্ঝর গান পয়েন্ট করে রবির কপালে,
–তুই আমার জীবন এক দিন বাঁচিয়ে ছিলি তাই তুই যদি নিয়ে নিস আমার কোন আফসোস থাকবে না,
রবি চোখ বন্ধ করে নেয়,
আর বিকট শব্দ হয় পর পর ৩ টা গুলির,
–পরিষ্কার করো সব কিছু,
সব গর্ড রা ভয়ে কুচুমুচু হয়ে আছে,
লোকটা এতো নির্দয় কিভাবে হতে পারে,
নিজের এতো বছরের বিশস্ত কর্মী,
সে ত নির্ঝর কে তুই করে বলে,
নির্ঝর তাকেই মেরে ফেলল৷
নির্ঝর কি করে পারলো এটা করতে,
নির্ঝর এক দিন রবিকে বাঁচিয়েছিল এই জঙ্গল থেকে,
নির্ঝর কখনো কারোর উপর দয়া দেখিয়ে তাকে হেল্প করে নি রবি প্রথম মানুষ যাকে সহায়তা করে নির্ঝর,
তার পর থেকেই রবি নির্ঝর এর সাথে থাকে সব কিছুর খেয়াল রাখে,
নির্ঝর ছায়ার কাছে চলে আসে,।
ছায়া এখনো ঘুম,
নির্ঝর ছায়ার দিকে তাকিয়ে ই রাত কাটিয়ে দেয়,
সকালে,
ছায়া চোখ খুলতে নিজের সামনে নির্ঝর কে দেখতে পায়,
ভয়ে লাফিয়ে উঠে পেছনে সরে যায় ছায়া,
–ভয় পাচ্ছো? হুম ভিশন ভালো।
এটা আমার পছন্দ,
–আমায় যেতে দিন প্লিজ আমি বাসায় যাবো।
–উহু না যেতে পারবে না আমি তোমায় ভালোবাসি তুমি এখানে থাকবে আমার সাথে,
–মানে,
–মানে সোজা এখনে থাকবে আমার সাথে,
–কিন্তু আমি আপনাকে চিনি না আপনিও আমাকে চিনেন না কেন থাকব আমি এখানে?
–আমি নির্ঝর চৌধুরী,
এটা আমার বাড়ি,
–( লোকটা একটা পাগল একটা দৈত্য কি করব আমি) ছায়া মনে মনে,
–কি হলো?
–আমার পরিক্ষা সামনে আর কিছু দিন আছে আমি পরিক্ষা টা দি,
–না কোন পরিক্ষা না তুমি এখানে থাকবে আমার সাথে,
–আমি কথা দিচ্ছি পরিক্ষা শেষে আমি চলে আসব৷
–আমি কিভবে তোমায় বিশ্বাস করব।
–আমি যদি না আসি আমায় তুলে নিয়ে যেয়েন,
–তুমি জানো আমি এটা করতে পারি যে কোন মুহুর্তে।
–হ্যাঁ, জানি।
–তাহলে কেন পরিক্ষা দিতে চাও৷ পরিক্ষা দিয়ে কোন লাভ নেই,
–দেখুন আপনি আমায় ভালোবাসেন?
–হ্যাঁ,
–এভাবে কি ভালোবাসা হয়,
–কেন এভাবেই ভালোবাসতে হয়,
–দেখুন এটাকে ভালোবাসা বলে না,
–কে বলেছে তোমাকে,
–আমি বলছি৷
এভবে,
ছায়াকে কথা শেষ করতে না দিয়ে নির্ঝর বলল,
–হুস স্টপ,
ছায়া চুপ হয়ে যায়,
–তুমি পরিক্ষা দিতে কয় দিন লাগবে,
–বেশি না ৪ মাস,
–তার পর একা চলে আসবে?
–হ্যাঁ।
–নাহলে কি হবে?
–হ্যাঁ,
–নাহলে কি হবে?
–আমি জানি না।
–তোমার মা বাবা বোনকে মেরে দিবো
–ক কে ব বলেছে আ আমার মা বাবা ভাই বোন আছে,
আমার কিছু নাই,
–হাহা হা মিসেস চৌধুরী,
আপনি আমায় এতো বোকা ভাবেন।
–মানে,
–মানে আপনি না ফিরে আসলে সবাই সাফার করবে।
ছায়া মাথা নিচু করে নেয়,
ভীষণ কান্না পাচ্ছে এখন,
এতো বড়ো একটা রাক্ষস এই ছেলেটা,
আস্ত একটা রাক্ষস,
–ছায়া।
–হুম,
–যাবে বাসায়?
–হুম
–ওকে আমি যেতে দিবো তোমায় রাজি আমার সর্তে?
–হুম রাজি,
–ওকে চলো,
চলবে