তমিস্র প্রভা পর্ব -০২

পর্ব-০২
#তমিস্র_প্রভা🍁
#লেখিকা-লামিয়া_রহমান_মেঘাল
ছায়া কিছু বলবে তার আগেই ছায়ার মুখে স্প্রে করা হয়৷
কিন্তু কেউ বুঝতে পারছিলো না মেয়েটা এমন করছে কেন।
–রাকিব ( নির্ঝর এর গার্ড) মেয়েটা এমন করলো কেন আর আমরাই বা তাকে স্প্রে কেন করলাম।
–আমি ত বুঝতে পারছি না কিছু।। -(অন্য গর্ড)
–এটা করে বিপদে পরবো না ত।
–জানি না চল ত নিয়ে চল।
ছেলেগুলো ছায়াকে নিয়ে রুমে আসে,
নির্ঝর অনেক শহর থেকে দুরে একটা জঙ্গলের মধ্যে বিরাট এক রাজপ্রাসাদ এর মতো বাড়িতে থাকে,
কিন্তু বাড়ির কোনায় কোনায় অন্ধকারে ভরা।
ছেলেটা যেন একটা ঘোরের মাঝে থাকে সব সময়।
আশে পাশে হিংস্র পশুর বসবাস কিন্তু সে তার মাঝেই থাকতে ভালোবাসে।
ভিশনই শান্ত আর অসম্ভব ভয়ানক সভাবের মানুষ টা৷
যে কেউই তার চোখের দিকে তাকালে প্রথম দৃষ্টিতে প্রেমে পড়ে যাবে কিন্তু পরক্ষণেই ভয়ে মৃত্যু হবে।
ছেলেটা মাত্রাতিরিক্ত ফর্সা,
উচ্চতা প্রায় ৬ ফিট,
অসম্ভব সুন্দর এই ছেলেটার চোখের দুটো এতো সুন্দর।
হয়ত হাসলে তাকে আরও বেশি সুন্দর লাগবে,
অনেক বেশি সুন্দর,
কিন্তু তার হাসি দেখার সৌভাগ্য এখনো কারোর হয় নি।
,
ছায়াকে নির্ঝর এর অন্ধকার রুমে দিয়ে যায় লোক গুলো,
নির্ঝর কে ইনফর্ম করার পরে সে রুমে চলে আসে,
রুমে এসে মেয়েটার অস্তিত্ব তার বিছনায় টের পায়,
মেয়েটার শরীরে এক অসম্ভব সুন্দর ঘ্রাণ আছে,
যার জন্য নির্ঝর থেমে যায় চোখ বন্ধ করে সেই ঘ্রাণ উপভোগ করতে থাকে,
ছায়ার হালকা সেন্স আসতে থাকে,
একটু একটু করে চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে ছায়া
ভয়ে হাত পা কাঁপছে,
ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে ছায়া,
সামনে থেকে যেন তিব্র ঠান্ডা মৃদু হাওয়া বইছে যেটা ছায়াকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে,
ছায়া নিজেকে সামনে উঠতে চায় কিন্তু মাথায় ব্যাথা করছে,
হাত দুটো দিয়ে মাথায় চেপে উঠে দাঁড়াতে কেউ তার ওড়না ধরে টান মারে,
আর তার পরেই এসব ঘটনা ঘটে যায়,
ছায়ার ভিশন ভয় লাগছে,
ছায়া মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ে,
মা বাবা আর ছোট বোন, এই নিয়ে তার পরিবার,
ছায়ার বাবা মা আর বোনের সাথে বেশ আনন্দে থাকে,
হুট করেই কি হচ্ছে তার সাথে কিছুই বুঝতে পারছে না।
জায়গা টা এতো ছমছমে,
কারোর উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না।
ভয়েই ভেতরে খালি খালি লাগা শুরু হয়ে যায়,
ছায়া নিজেকে সামলে উঠে দেখে কোন মতে পালানোর কোন জায়গা পাওয়া যায় কি না।
ছায়া উঠে এটা ওটার সাথে ধাক্কা খেতে থাকে,
কিছুই পাচ্ছে না, শুধু আসবাবপত্রের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে,
অন্ধকারে কিছুই দেখা সম্ভব না,
হটাৎ কিছু একটা ধারালো জিনিসে ছায়ার হাত লাগলো সঙ্গে সঙ্গে রক্ত বের হতে লাগলো আর তিব্র যন্ত্রণা হতে লাগলো,
–আহ, ( ছায়া ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে ওঠে) হে আল্লাহ কোথায় চলে এলাম আমায় রাস্তা দেখাও খোদা,
ছায়া সেখানে বসে,
ছায়া হাঁটুতে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে,
এমন সিচুয়েশনে মাথা কাজ করে না,
আর এখন ভয়ে ছায়ার ভেতর টা শুঁকিয়ে আসছে, গলা শুঁকিয়ে চৈত্র মাসের খড়া।
এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ছায়া।
হটাৎ করেই কারোর হেঁটে আসার শব্দ শুনতে পায় ছায়া।
আর জুতার ঠক ঠক শব্দ ছায়ার কানে বাজছে আর শীতল অনুভব হচ্ছে,
যেন হটাৎ করে হিমালয়ের হাওয়া নিয়ে আসা হয়েছে রুম টায়,
শব্দ টা ক্রমশ ছায়ার দিকে আসছে,
ছায়ার পেছনে দেয়াল পেছনোর জায়গা নেই,
ভয়ে ছায়া একটা শুকনো ঢোক গিলে,
–ক কে,
দ দেখুন আমায় যেতে দিন প্লিজ।
হটাৎ লাল রঙা লাইট জ্বলে ওঠে রুমে,
ছায়ার সামনে সেই মানুষ টার চোহারা ভেসে উঠে,
–কে আপনি কেন আমায় আঁটকে রেখেছেন দয়া করে যেতে দিন আমায় প্লিজ ( ছায়া কান্নায় ভেঙে পরে)
আমি আপনার কোন ক্ষতি করি নি আমি কথা দিচ্ছি আমি কাউকে বলব না আপনি আমায় নিয়ে এসেছেন আমি সত্যি বলছি আমায় ছেড়ে দিন। ( ছায়া দুই হাত জোড় করে নির্ঝর এর সামনে মাথা নিচু করে বলে)
–ওকে ফাইন আমি তোমায় যেতে দিবো কিন্তু তোমায় একা যেতে হবে পারবে যেতে নাদিয়া।
–কে নাদিয়া আমি৷ কোন নাদিয়া নই আমি ছায়া আমি ছায়া৷।।
নির্ঝর রাগে মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়,
–ঠিক আছে তোমার জন্য মেইন গেট খুলে দেওয়া হবে,
কিন্তু তোমায় একা যেতে হবে, পারবে?
–হ্যাঁ পারবো প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন,
–ওকে, as your wish Princess. ( নির্ঝর বাকা হাসে)
চলো,
নির্ঝর ছায়ার কাছে এসে ওর হাত ধরে,
নির্ঝর ছায়ার হাত ধরতে ছায়ার কাটা অংশের রক্ত তার হাতে লেগে যায়,
নির্ঝর এর চোখের রং মুহুর্তে পাল্টে যায়, নির্ঝর পেছনে ফিরে ছায়ার দিকে তাকায়,
নির্ঝর এর তাকানোর জন্য ছায়া ভয় পেয়ে যায়,
–তোমার হাত কেটেছে?
ছায়া আমতা আমতা করে বলে,
— হ হ্যা,
নির্ঝর আলোর গতিতে ছায়াকে নিজের কাছে টেনে নেয়,
নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়,
–আগে বলো নি কেন ( দাঁতে দাঁত চেপে)
–আ আম
–উস কথা বলবে না যাও তুমি মুক্ত,
নির্ঝর ছায়াকে ছেড়ে দেয়,
ছায়া সামনের দিকে দৌড় দেয়,
ছায়া এই বিশাল বাড়িতে কোথায় মেইন ডোর সেটা খুঁজে পাচ্ছে না,
সামনে শিড়ি সেটা বেয়ে নেমে আসতে সামনে বিশাল এক দরজা।
ছায়া আবছা অন্ধকারে সেখান দিয়ে বাইরে চলে আসে,
বাইরে এসে ছায়া ভিশন অবাক হয়ে যায়, ভেতর থেকে বেশি ভয়ানক বাইরে টা চারিদিকে শুধু গাছ আর গাছ, বিন্দুমাত্র আলো আসার রাস্তা নেই,
দিনের আলো ত শেষ,
আর সব হিংস্র পশুর শব্দ শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে,
ছায়া ভয়ে ভয়ে সামনে এগোয়,
কিছুই বুঝতে পারছে না এটা কোথায়,
,
,
নির্ঝর পকেটে হাত দিয়ে তার রুমের বেলকনি থেকে ছায়ার সব কর্ম কান্ড দেখছে আর বাঁকা হাসছে,
–বেবি গার্ল,
আর কিছুক্ষণ তার পর আমাদের আবার দেখা হবে।
–নির্ঝর (রবি)
–হুমম।
–তুই কি ঠিক করলি এই অন্ধকারে মেয়েটাকে যদি কেন পশু আক্রমন করে?
–কোন পশু না আমার পোশা পশুই ওকে আক্রমণ করবে।
–কি বলছিস নির্ঝর তুই,
–হ্যাঁ সত্যি বলছি,
–তুই মেয়েটার সাথে এমন করছিস কেন?
–কেন আমি এমন করলে সমস্যা কি আর তোর এতো খারাপ লাগছে কেন?
— ন না মানে,
আসলে,
–কি আসলে? তুই কি কোন মিথ্যা কথা বলেছিস আমায়,
–না রে মিথ্যা কেন বলব৷
–তাহলে কি হইছে তোর.
–কিছু না দেখ মেয়েটাকে কতো নরম সভাবের মেয়ে মনে হয়,
ওর ত কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না আমি,
–ওর অপরাধ সম্পর্কে তোর কোন ধারনা নেই রবি।
নির্ঝর গভীর শুরে কথাটা বলল,
রবি নির্ঝর এর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
ছেলেটাকে কেউই বুঝতে পারে না,
গত প্রায় ১০ বছর ধরে রবি নির্ঝর এর সাথে এই বাড়িতে থাকে কিন্তু নির্ঝর এর কোন কাজ এর সাথে সে আগে থেকে অবগত হতে পারে না।
নির্ঝর এর নেওয়া প্রতিটা পদক্ষেপ ভয়ানক হয়,
আর নির্ঝর এর বিরুদ্ধে যাওয়ার কারোর সাহস পর্যন্ত নেই,
এ জঙ্গল থেকে বহুদূরে যেখানে মানুষ এর বসবাস,
সেখানেও মানুষ তার উপস্থিতি তে ভয় পায়,
এখানে নির্ঝর কি করে কোন কিছুর খবর ওপার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না,
সব থেকে বড়ো কথা মানুষের মাঝে নির্ঝর একটা হার্টলেস মানুষ।
রবি কথা গুলো ভাবছিল তখনি হটাৎ নির্ঝর রবিকে পাশ কাটিয়ে ছুটে বাইরে চলে আসে,
রবি বুঝতে পারে ছায়া হয়ত ঠিক নেই,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here