তার শহরের মায়া ২ পর্ব ১৭+১৮

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৭
#Writer_Liza_moni

এই যে মিস যাবেন না?
অনু হকচকিয়ে গেল।রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো তুমি ও চলো।

এই না। আমি যাবো না। তুমি যাও।আর সন্ধ্যার আগেই ফিরে এসো। আমি আসছি টা টা। বলেই রিয়ানা হাঁটতে থাকে।অনু তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো চলুন।

তূর্য বাইকে উঠে হেলমেট পরে অনুর উদ্দেশ্যে বললো উঠে বসুন।
অনু ও চুপ চাপ বাইকের পিছনে উঠে বসে। জুঁই আর মাকে ছাড়া এই প্রথম অন্য কোনো মেয়ে তূর্যর বাইকে উঠার সুযোগ পেয়েছে।অনু উঠে বসতেই তূর্য বাইক স্টার্ট দিয়ে দেয়।যার ফলে অনু একটু অপ্রস্তুত হয়ে তূর্যর পিঠের জ্যাকেট টা খামচে ধরে।

তূর্য গলার স্বর নরম করে শান্ত কন্ঠে অনুর উদ্দেশ্যে বললো,এই ভাবে ধরবেন না পরমানু।

তূর্যর কথা শুনে অনু চোখ ছোট ছোট করে মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বললো,শখে তো আর ধরি নাই।

গনে গনে দশ মিনিট এর মধ্যে তূর্যদের বাড়ির গেটের সামনে এসে বাইক থামায় তূর্য। তূর্যদের বাড়ির গেটের দিকে তাকাতেই হা হয়ে গেল অনু। মাধবীলতা ফুল দিয়ে কী সুন্দর করে সাজানো গেট।থোকা থোকা মাধবী ফুল ফুটে আছে।

তূর্য মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে এলোমেলো চুল গুলো কে হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে অনুর উদ্দেশ্যে বললো, পছন্দ হয়েছে?

খুব সুন্দর। পছন্দ না হওয়ার মতো কিছু না। তূর্য মুচকি হেসে বললো, আসুন ভেতরে আসুন।
কথাটা বলে তূর্য গেটের ভেতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় কিছু একটা মাথায় আসতে থেমে যায়।অনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তূর্যর দিকে।

ওহ শিট।এখনি সব গড়বড় হয়ে যেতো।
তূর্যর কথা অনু বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো,মানে?কী গড়বড় হতো?

আপনাকে যে কারণে মায়ের সাথে দেখা করাতে আনলাম। সেই কারন টাই বলতে ভুলে গেছি।

ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন বলুন।

তূর্য অনু কে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললে অনু তাজ্জব বনে গেল।
এখন আমাকে আপনার আম্মুর সামনে অভিনয় করতে হবে? আমি আপনাকে পছন্দ করি, আমি আপনার জন্য পাগল, আমি সুইসাইড করতে গেছিলাম ব্লা ব্লা ব্লা
এই গুলো সবই তো ফেক কথা বার্তা।

তূর্য মুখ বাঁকিয়ে বললো,হ্যাঁ এই গুলো যে সব ফেক কথা বার্তা সেটা আমি ও জানি। কথার মাঝে হঠাৎ তূর্যর চোখ পড়লো অনুর হাতের দিকে।ব্যান্ডেজ করতে হবে।কারন সে তো মাকে বলেছে যে মেয়েটা হাত কেটে সুইসাইড করতে গেছিলো।
তূর্য বাইকে উঠে অনুর উদ্দেশ্যে বললো উঠে বসুন আবার।

অনু অবাক হয়ে বললো কেন?

আপনার হাতে ব্যান্ডেজ করতে হবে।

কিন্তু আমার হাত তো কাটে নাই। তাহলে ব্যান্ডেজ করবো কেন?
অনুর কথা শুনে তূর্য বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বললো,
গাঁধা থুরি না গাঁধী একটা।

এই আপনি আমাকে গাঁধী বলছেন কেন?

শুনে নিয়েছেন এত আস্তে বলার পর ও?ভালোই হয়েছে। আপনি আসলেই গাঁধী।এত সময় ধরে কী বললাম?যে এনি মানে ঐ মেয়েটা সুইসাইড করতে গেছিলো।হাত কাটছে।হাত যেহেতু কাটছে সেহেতু নিশ্চয়ই হাতে ব্যান্ডেজ করা থাকবে?আর আমার আম্মু এত বোকা না যে প্যাচ কষতে পারবে না। সেই লেভেলের চালাক মহিলা। এখন বেশি কথা না বলে উঠে বসুন। সামনের ফার্মেসি থেকে না কাটা হাত ব্যান্ডেজ করে আনি।

অনু আর কিছু না বলে উঠে বসলো। ফার্মেসি তে এসে বাঁধল আরেক ঝামেলা।না কাটা হাত ডাক্তার ব্যান্ডেজ করবে না।

ভাই আপনার জন্য কী এখন আমি উনার হাত কাটবো?

এই মিয়া কী বলেন এই সব? আমি হাত কাটতে যাবো কেন? এমনিতেই শরীরে রক্ত নাই। আবার হাত কাটবো।শখ কত,,,

তূর্য অনুকে শান্ত কন্ঠে ধমক দিয়ে বললো, মেয়ে মানুষ এত প্যাক প্যাক করেন কেন বলুন তো? আমি কথা বলছি তো নাকি? আপনি চুপ করে থাকতে পারেন না?
অনু তূর্য কে ভেংচি কেটে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল।

দেখুন ভাই শুধু ব্যান্ডেজটাই করিয়ে দেন।টাকা দিবো বিনে পয়সায় না। আমার বাড়িতে ও ব্যান্ডেজের অভাব নেই। শুধু মাত্র আমার ঈগল চোখা মায়ের জন্য এত নাটক করতে হচ্ছে। কপাল পোড়া হত ভাগা আমি।

অবশেষে অনেক সাধনার পর না কাটা হাতে ব্যান্ডেজ করে আবারো তূর্যদের বাড়ির পথে রওনা দেয় অনু আর তূর্য। এইসব কান্ডে অনুর খুব হাসি পাচ্ছে। তূর্যর মা যে খুব চালাক চতুর মহিলা তা ভালোই বুঝতে পারছে অনু।

তূর্যর সাথে ফ্লাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনু। দুই বার কলিং বেল বাজাতেই ১৭ বছর বয়সী এক টা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে উঁচু গলায় বললো,
আম্মু তোমার ছোট ছেলে আসছে। জুঁই অনু কে খেয়াল করেনি। তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো আমার চকলেট কই? তোকে না আম্মু টাকা দিয়ে ছিল আমার জন্য চকলেট আনতে।আনিসনি কেন?

তূর্য ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,টাকা গুলো দিয়ে বন্ধুদের ট্রিট দিয়ে দিয়েছি।তোকে এত চকলেট খেতে হবে না। তুই আর পিচ্চি বাচ্চা না।

জুঁই তূর্যর পিঠে একটা কিল মেরে সরে আসতেই ওর চোখ গেলো অনুর দিকে। জুঁই একবার অনুর দিকে তাকিয়ে তূর্যর দিকে তাকিয়ে তূর্যর উদ্দেশ্যে বললো কে এই আপু টা?আগে কখনো তো দেখিনি।

তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,ওহ সরি। আসুন ভেতরে আসুন।এই মেয়ে আসার পর থেকেই মাথা খারাপ করে দিয়েছে।অনু মুচকি হাসলো। জুঁই অনুর কাছে গিয়ে বললো, ভাইয়ার ফ্রেন্ড?

অনু ছোট্ট করে জবাব দিলো হুম।

মিসেস তৃনা রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে এসে অনু কে দেখে মুচকি হেসে অনুর কাছে এগিয়ে গেল।অনু মিসেস তৃনাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলো। মহিলার চাল চলনে আভিজাত্যের ছোঁয়া।গায়ে কলা পাতা রং এর শাড়ি। চুল গুলো খোঁপা করা।চোখে চশমা।হাতে স্বর্নের দুটো চিকন চুড়ি।বেশ ফর্সা আর গলুমলু‌ দেখতে।সব মিলিয়ে কেমন টিচার টিচার ভাব।
অনু মুচকি হেসে মিসেস তৃনা কে সালাম দিলো।
আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি।

মিসেস তৃনা ও মুচকি হেসে সালামের জবাব দিলো।
ওয়ালাইকুমুস সালাম।
বসো মা।

জী আন্টি। তূর্য সোফায় বসে মা আর অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।সে দেখছে বসে বসে যে,অনু কেমন অভিনয় করতে পারে। এখন যদি এখানে অনুর জায়গায় এনি থাকতো তাহলে এতক্ষণে ন্যাকামির ঠেলায় এখানে থাকা যেতো না।

মিসেস তৃনা ও অনুর পাশে গিয়ে বসলেন।তার পর জুঁই এর উদ্দেশ্যে বললেন,
রান্না ঘরে ট্রে তে নাস্তা সাজানো আছে।নিয়ে আয়।

জুঁই আচ্ছা বলে রান্না ঘরে চলে গেল।সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।তাই চুপ চাপ মায়ের কথা শুনে যাচ্ছে।

মিসেস তৃনা মুচকি হেসে অনুর উদ্দেশ্যে বললো,
তোমার নাম কী মা?

জী অনুমেঘা রাজমিম।

মাশাআল্লাহ। বেশ সুন্দর নাম। বাড়ির সবাই কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

যাক ভালো।কীসে পড়ছো তুমি?

অর্নাস তৃতীয় বর্ষে।
বাহ বেশ ভালো।দেখতে তো মাশাআল্লাহ। মুখখানি তে মায়ায় ভরা।তা আমার এই বাঁদর ছেলের জন্য সুইসাইড কেন করতে গিয়েছিলে?এরে তোমার কী দেখে পছন্দ হলো?তাল গাছ একটা।

আম্মু তুমি আমাকে অপমান করতেছো কেন? আমি কী তোমার কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে?

তোরে তো রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পাইছে।ম্যা ম্যা করে কানতে ছিলি। আমার আব্বু আম্মু অনেক দয়াবান তো তাই নিয়ে আসছে। নাস্তা নিয়ে আসতে আসতে বললো জুঁই।

জুঁই ফুলের বাচ্চা। আমি তোর আগে পৃথিবীতে আসছি না তুই আমার আগে পৃথিবীতে আসছোস?

জুঁই নাস্তার ট্রে টা রেখে শয়তানি হেসে বললো, তোর আগে পৃথিবীতে আমি আসছি।বড় আপু হই বুঝলি সম্মান কর।

কানের নিচে একটা মেরে সম্মান করবো দাঁড়া। তূর্য বসা থেকে উঠতে যাবে এমন সময় জুঁই হাসতে হাসতে ভৌ দৌড় দিল।

তূর্য আর জুঁই এর কান্ড দেখে অনুর খুব হাসি পাচ্ছে। আবার তেমনি খুব আফসোস হচ্ছে।একটা বড় ভাই নেই দেখে। তাহলে সে ও ভাইয়ের সাথে এমন কত শত দুষ্টুমি করে বেড়াতো।

মিসেস তৃনা অনুর ব্যান্ডেজ করা হাত ধরে দেখতে দেখতে বললো, ওদের কান্ড দেখে কিছু মনে করো না মা।ওরা এমনই।যতক্ষন বাড়িতে থাকবে ততক্ষণ
ওদের এমন খুনসুটি চলবেই।

অনু মুচকি হেসে বললো,না আন্টি কিছু মনে করবো কেন?ভাই বোনের সম্পর্ক গুলো হয়তো এমনি হয়। আমার তো বড় কোনো ভাই নেই।তাই বুঝি ভাই থাকা কতটা দরকার। আমার কিউট একটা বড় বোন আছে।যার কাছে আমার কদর সবার আগে।
#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৮
#Writer_Liza_moni

পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্ত গিয়েছে। সন্ধ্যার আকাশ লাল, কমলা নীলের মিশ্রনে ছেয়ে গেছে। শহরের প্রত্যেকের ফ্লাটে আলো জ্বলে উঠলো। গাড়ির হর্নে মুখরিত চার পাশ।রাস্তার পাশের রেস্তোরাঁ গুলোয় ও মানুষের হইচই।সবাই সবার মতো ব্যস্ত।বাড়ি ফেরার তাড়া অনেক এর। রাত নেমে আসছে বলে কথা।কাক গুলো কর্কশ গলায় কা কা করে উড়ে যাচ্ছে নিজ ঠিকানায়।চার দিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে ওঠে। এইদিকে রাস্তায় আবার জ্যাম বাঁধলো। তূর্য আর অনু বাইকে বসে অপেক্ষা করছে জ্যাম ছাড়ার। পাঁচ মিনিট আগেই অনু তূর্যদের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। তূর্যর মা তো অনু কে আজ কিছুতেই যেতে দিতে চাইছিলেন না। মেয়েটাকে বড্ড মনে ধরেছে তার। তিনি বুঝে উঠলেন না,এত মিষ্টি একটা মেয়ে কে কী করে উনার ছেলে ইগনোর করে?
অনু কে কত করে সাধলো আজ তার কাছে থেকে যেতে।মা বাবা কে ফোন করে কথা বলবেন তিনি। তার এই কথা শুনে অনু বসা থেকে উঠে অসহায় দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকাচ্ছিলো।ভুলি ভালিয়ে অনেক কষ্টে তূর্য তার মাকে ম্যানেজ করে।
না থাকলে নাই, অন্তত ডিনার টুকু করে বাড়ি ফিরলে খুশি হতেন তিনি।
তূর্যর জন্য আজ কত গুলো মিথ্যা কথা বলতে হলো অনু কে।ডিনারের কথা শুনেই অনু বলে ছিল,
তার মা বাবা তাকে ছাড়া খায় না। মিসেস তৃনা মানতে নারাজ। বেশি রাত করে মেসে ফেরা যাবে না। কী থেকে কী ভাববে মানুষ তা ভাবতেই খারাপ লাগে অনুর।না হলে এত বলার পর ও অন্তত ডিনার না করে সে আসতো না। জুঁই নামক মেয়েটাকে বেশ লেগেছে অনুর।সেতো মনে মনে ভেবেই ফেলেছিল। তার যদি একটা ভাই থাকতো তাহলে জুঁই কে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিত।বেশ মিশুক প্রকৃতির মেয়েটা।অল্প সময়ের মধ্যে কেমন আপন করে নিয়েছিল।কী সুন্দর করে ডাক ছিল মেঘ আপু করে।

জ্যাম ছেড়ে দিলো। তূর্য বাইক চালানো তে মন দিল। দুই জনের মধ্যেই নিরবতা বিরাজ করছে।কেউ কোন কথা বলেনি বাইকে উঠার পর। নিরবতা ভেঙ্গে অনুই বললো,

আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

তূর্য ছোট্ট করে উত্তর দিলো, হুম,,

আপনার বড় ভাই আর আব্বু কে তো দেখলাম না।
তূর্য অনুর কথা শুনে দুষ্টুমি করে হেসে বললো, আমার বড় ভাই কে কেন মিস পরমানু?প্রেম টেম করবেন নাকি? অবশ্য আমার ভাইয়া সিঙ্গেল আছে।মেয়ে দেখা হচ্ছে বিয়ের জন্য। আপনি যদি চান তাহলে আমি আপনার কথা আমার মাকে বলবো।

তূর্যর কথা শুনে অনু রেগে গিয়ে ওর পিঠে একটা কিল মেরে বললো,
আমি কী এই সব কথা জিজ্ঞেস করেছি আপনাকে?এত নেগেটিভ ভাবে নিলেন কেন আমার কথা?

পজেটিভ কথায় আমার এলার্জি আছে তো তাই।

শুনেন আমি এমনিতেই জিজ্ঞেস করেছিলাম। দেখি নাই বলে।দেখলে তো আর জিজ্ঞেস করতাম না।

কেন?দেখলে কী সোজা গিয়ে আমার ভাইকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিতেন নাকি?

আপনার সাথে কথা বলাটাই বেকার। বিরক্ত হয়ে কথাটা বলে রাস্তার দিকে তাকালো অনু।
তূর্য ঠোঁট কামড়ে হাসলো।মেয়েটা কে রাগীয়ে দিতে পারলে কেমন যেন ভালো লাগা কাজ করে মনের ভেতর। কিছুক্ষণ পর তূর্য আবার নিজ থেকেই বললো,
আব্বু তখন সামনের একটা টং দোকানে তার বয়সি মানুষদের সাথে বসে চা খাচ্ছিলেন।আর ভাইয়া অফিসে ছিল।ভাইয়া অফিস থেকে রাত করেই বাড়ি ফেরে।

এখন আর আমি এসব শুনতে চাইনি।মুখ বাঁকিয়ে বললো অনু।

হুঁ আপনি তখন শুনতে চেয়ে ছিলেন তাই এখন শুনিয়ে দিয়েছি।হি হি হি। একটু ফান করে ছিলাম তখন।এত রেগে যান কেন বলুন তো?

মেসের সামনে চলে আসছি।থামুন এখানে,,,
তূর্য বাইক থামাতেই অনু বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো।তার পর তূর্যর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো, আমার রাগ আছে তাই রেগে যাই।আর এমন কথাটা আমার পছন্দ হয়নি।

তূর্য হাসলো। ঠোঁটের কোণে হাঁসি রেখেই আবার ও বললো, আমার ভাইয়া কিন্তু অনেক জোশ।দেখতে বেশ সুন্দর। কোঁকড়ানো চুল গুলোর জন্য দেখতে আরো কিউট লাগে।

এই শুনেন,
আমি আপনার কাছে আপনার ভাই দেখতে কেমন তাঁর বর্ণনা শুনতে চাইনি। ঝগড়া করার মুড নাই।তাই ঝগড়া করলাম না।আসছি,,
অনু মেসের গেটের ভেতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় আবার ও পেছনে ফিরে তাকালো।
তূর্য ততক্ষণে বাইক স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে।

অনু নরম গলায় তূর্য কে ডাকলো,
শুনুন,,
তূর্য প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে অনুর দিকে ইশারা করলো কী হয়েছে?

অনু মুচকি হেসে বললো, সাবধানে যাবেন। বেশি জোরে বাইক চালাবেন না। বেশি জোরে বাইক চালালে দেখা যাবে কোন দিন পটল তুলতে চলে গেছেন।

মরে যাওয়ার জন্য কী দোয়া করছেন নাকি? এমন দোয়া করবেন না। এখন ও বউ এর মুখটা দেখি নাই।

বিয়ে পাগল ছেলে। মুচকি হেসে অনু ভেতরে চলে গেল। তূর্য ও বাইক ঘুরিয়ে চললো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।
.
.
মেসে এসে অনু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলো।চারটে সিঙাড়া আর দুই কাপ চা নিয়ে রিয়ানা ও বসলো অনুর সামনে।অনু মোবাইল হাতে নিয়ে মুচকি হেসে রিয়ানার দিকে তাকালো।রিয়ানা অনুর হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে দিয়ে সিঙাড়ায় কামড় বসাতে বসাতে বললো কত দিন ধরে চলছে এই সব?আর বয় ফ্রেন্ড কে কী কেউ আপনি আপনি বলে? ছেলেটা ও দেখলাম তোমাকে আপনি আপনি করে বলছে। ওহ বুঝেছি নতুন নতুন তো তাই।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

অনু বুঝতে না পেরে বললো,মানে?কী বলো এই সব?

মানে বুঝো না খুকি। আমাকে বললে কী আমি তোমার ঐ হ্যান্ডসাম কে কেড়ে নিতাম নাকি?

ওহ আচ্ছা। তুমি তূর্যর কথা বলছো।আরে ও সব কিছু না।we are just friend…

আচ্ছা তাই নাকি? বিশ্বাস হচ্ছে না।
তোমাকে ঐ দিন বলছিলাম না যে, আমি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম আর একটা ছেলে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।এটা সেই ছেলে।

ওহ আচ্ছা। বুঝতে পারছি।তা আজ হঠাৎ ওই ছেলের সাথে ওর বাড়িতে গিয়েছিলে কেন?

অনু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রিয়ানা কে সব বললো।অনুর কাছে পুরো কাহিনী শুনে রিয়ানা হাসলো।হাসি থামিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,
ছেলেটা কিন্তু দেখতে আসলেই সুন্দর।চাপ দাঁড়ির জন্য আরো বেশি হ্যান্ডসাম লাগে।

নজর দিও না।অন্যের আমানত।

হুম।আমানত আবার খেয়ানত হবে।কার জামাই হবে আল্লাহ জানেন।

অনু মুচকি হেসে চায়ের কাপ রেখে মাকে ফোন করলো। দুই বার রিং হতেই ওপাশ থেকে মায়ের কন্ঠ শুনতে পেয়ে মনটা কেমন চঞ্চল হয়ে উঠল অনুর। কিছু দিন ধরে বাড়িতে তেমন সময় দেওয়া হয় না। ফোন করা হয় না।মা বাবা করলে ও দুই চারটা কথা বলে আবার কল কেটে দিতো।

কেমন আছো আম্মু?

এই তো ভালো। তুই কেমন আছিস? এখন ভালো। কিন্তু গতকাল ভালো ছিলাম না।

সেকি কেন?
কী হয়েছে তোর? শরীর ঠিক আছে তো? নিশ্চয়ই খাওয়া দাওয়া করিস না। আইস্ক্রিম খাইছিস তুই?গলা ব্যাথা করছিলো?

আরে আম্মু এত বেশি বুঝো কেন? আমাকে তো বলতে দিবা নাকি?

আচ্ছা বল। আমি চুপ করলাম।যদি খারাপ কিছু শুনি তাহলে ঢাকায় গিয়ে তোকে ঠাসস ঠাসস করে চড় দিবো দেখিস।

ওহ মেরি মা,, চুপ যাও না।আমাকে বলতে দাও।

আচ্ছা বল,,
তারপর অনু রক্ত শুন্যতার কথা এবং ডাক্তার যা যা বলছে সব কিছু বললো মাকে।অনুর সব কথা শুনে তো মিসেস আফরোজা রেগে বোম। তিনি পারছেন না অনু কে ঠাঁটিয়ে কয়কটা চড় মারতে।

তোর দোষেই তোর এমন হইছে।খাবি না ঘুমাবি না। এমন তো হবেই।শাক সবজি খায় না।ফলের আশে পাশে ও তো যাস না।ঠিক মতো খাবার খাইতে তোর আলসেমি।জোর করে ও তোকে এক গ্লাস এর অর্ধেক পানি ছাড়া বেশি পানি খাওয়ানো যায় না।শরীরে ভিটামিন বলতে কিছু আছে?
কোন মেয়ে টা তোর মতো এর চিকন আমাকে বল তো?দেখা তো আমাকে?

ঐ যে আমাদের বাড়ির পাশের মাঠটার শেষ প্রান্তে যে গ্রামটা আছে না? সেখানের একটা মেয়ে আছে তুমি তো চিনবা,জোনাকি নাম মেয়েটার।ও তো আমার থেকে ও চিকন।

গাল ফাটাই ফেলবো তোর।খালি আমি হাতের কাছে পাই।মুখে মুখে তর্ক কর শিখে গেছিস তাই না?

এই যা,,মুখে মুখে তর্ক করলাম কখন? তুমি নিজেই তো বললে আমার থেকে ও চিকন একটা মেয়ে কে তোমাকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।

তোকে তো আমি,,

অনু তড়িগড়ি করে কল কেটে দিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,
মায়ে রা এমন কেন?

চলবে,,,,,
চলবে,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here