তি আমো পর্ব -০১

আমি আশফীয়া তারিন। এই মুহূর্তে আমার সাথে খুবই অদ্ভুত একটি ঘটনা ঘটছে। প্রায় ত্রিশ জন পুরুষের হাত ঘড়ি আমার সামনে রাখা। এদের মধ্যে থেকে পরিচিত ঘড়িটি আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমাকে দেখার জন্য ভীড় জমিয়েছে অনেক মানুষ। সকলে কানাঘুঁষা করছে। ব্যাপারটা কানাঘুঁষা করার মতোই।

কিছুক্ষণ আগে আমি মেকাপ রুমে ছিলাম। তখন লোডশেডিং ছিল। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিজেকেও দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় আমি অনুভব করলাম গায়ে কেউ স্পর্শ করছে। ভয়ে গা অসাড় হয়ে গেল। কারণ মেকাপ রুমে ওই মুহূর্তে আমি ছাড়া অন্যকারো উপস্থিতি ছিল না। মানুষটি অবশ্যই পুরুষ। সেটা হাতের ছোয়াতেই অনুমান করা যায়। সে আমার কানে কানে অস্পষ্ট ভাবে বলল,” তি আমো।”

এই বিদেশী শব্দের অর্থ বোঝার মতো অবস্থাতে আমি তখন ছিলাম না। কি’ন্তু তারপরেই ছেলেটা ঠিক আমার ডান গালে চু’মু দিল। আমি ভীষণ জোরে চিৎকার করে উঠলাম। এর কয়েক মুহূর্ত পরেই লাইট চলে এলো। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে কাউকে খুঁজে না পেয়ে ভয়ে পুনরায় চিৎকার দিলাম। আমার গগনবিদারী চিৎকার শুনে মানুষ জড়ো হয়ে গেল। এই হচ্ছে ঘটনা।

” কি হয়েছে তারু? ভয় পেয়েছিস?”

আমি মাথা তুলে দেখলাম নিহা অস্থির হয়ে তাকিয়ে আছে। আজ তারই এংগেজমেন্ট। আমি ঢোক গিলতে গিলতে বললাম,

” একটা ছেলে এসেছিল এখানে। লাইট আচমকা বন্ধ হয়ে গেল আর তারপর…”

” তারপর কি?”

আমি আড়ষ্টভাবে বললাম,” সে আমার গায়ে হাত দিল।”

” কি বলছিস এসব?”

নিহা যেন বিশ্বাসই করতে পারল না। আমি মুখে হাত দিয়ে আবার কাঁদতে লাগলাম। এই ঘটনা আমার জন্য কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। আমি ছোট থেকেই খুব কনজার্ভেটিভ পরিবারে বড় হয়েছি। ভাইয়া আমাকে ছেলেদের সাথে মেশা তো দূর, কথা পর্যন্ত বলতে দেননি। জীবনে কখনও বিপরীত লিংগের সংস্পর্শে না আসা আমার জন্য এমন একটি ঘটনা ভয়াবহ দূর্ঘটনারই সামিল।

নিহা আমাকে খুব ভালো বুঝতে পারে। সে মেকাপ রুমে থেকে সবাইকে চলে যেতে বলল৷ তারপর দরজা আটকে আমার পাশে বসল। মাথায় হাত রেখে বলল,

“শোন তারু, তুই একদম ঘাবড়াবি না। শুধু আমাকে ছেলেটার বর্ণনা দে। দেখতে কেমন ছিল? ”

আমি অসহায়ভাবে বললাম,” আমি ছেলেটার চেহারা দেখতে পারিনি। কিন্তু সে বেশ লম্বা ছিল।”

” আচ্ছা, আরও ক্লু দে। তারপর আমি খুঁজে বের করছি। দেখিস কি করি! এই পার্টিতে সবাই আমাদের পরিচিত। কোনো আউটসাইডার নেই। আমি তো ভাবতেই পারছি না, কে তোর সাথে এমন কাজ করল? তুই কাঁদিস না প্লিজ।”

আমি চোখের জল মুছলাম। একটু শান্ত হতেই বললাম,” মনে পড়েছে, আমি ছেলেটার হাতে একটা ঘড়ি দেখেছিলাম। অন্ধকারেও ঘড়ির কাটা আর নম্বর জ্বলজ্বল করছিল।”

নিহা আশা ফিরে পাওয়ার মতো বলল,” ইয়েস! এতেই চলবে। তুই আয় আমার সঙ্গে।”

” তুই কি করতে চাইছিস?”

” দ্যাখ কি করি!”

আমি চুপচাপ নিহার সাথে যেতে লাগলাম। সে আমাকে নিয়ে সাফিন ভাইয়ার কাছে গেল। সাফিন ভাইয়ার সাথেই আজ নিহার এংগেজমেন্ট। তাদের প্রায় চার বছরের সম্পর্ক। নিহা সবকিছু জানাল সাফিন ভাইয়াকে। তিনি ভ্রু ট্রু কুচকে বললেন,” এখন তুমি কি করতে চাইছো? সবার হাতের ঘড়ি অন্ধকারে নিয়ে পরীক্ষা করবে? কারটা জ্বলছে আর কারটা জ্বলছে না?”

বুদ্ধিটা নিহার বেশ মনে ধরল। সে হাত দিয়ে চুটকি বাজিয়ে বলল,” এক্সক্টলি।” সাফিন ভাইয়া হতবিহ্বল কণ্ঠে বললেন,” ধূর,মানুষ কি ভাববে? এটা একটা পাগলামি। এসব করার দরকার নেই।”

সাফিন ভাইয়ার চেহারার রঙ বদলে গেছে। সাথে আমারও। কারণ আমরা দু’জনেই জানি, নিহা এই কাজ অবশ্যই করবে। পৃথিবীর সমস্ত পাগলামি ধরণের কাজ এই মেয়েকে দিয়ে সম্ভব। তাছাড়া আমার ব্যাপারে সে সবসময় অনেক সেন্সিটিভ। সাফিন ভাইয়া নিহার কথায় রাজি হচ্ছিলেন না। তাই নিহা আমাকে অন্য একজনের কাছে নিয়ে এলো।

ক্যাটারিং পর্যবেক্ষণ করছিল ছেলেটি। নিহা ডাকল,” ঈশান ভাইয়া, একটা হেল্প লাগবে।”

ছেলেটা এতোক্ষণ আমাদের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সে পেছনে ঘুরতেই আমি তাকে প্রথম বারের মতো দেখলাম। নিজেও জানি না, ওই মুহূর্তে কেন ছেলেটিকে এতো খুঁটিয়ে দেখছিলাম। ফরসা মুখ, কালো চুল। সে যখন হাসল, তার ঝকঝকে সাদা দাঁতের মাঝে গজদন্তটিও ভেসে উঠল। সুন্দর কণ্ঠে সে প্রশ্ন করল,

” এনি প্রবলেম?”
” বিরাট বড় প্রবলেম ঈশান ভাইয়া!
ঈশান ভ্রু জোড়া কুচকে একটু বিচলিত হয়ে বলল,”কি হয়েছে?”

নিহা আমার হাত ধরে হেচকা টান মেরে ঈশান ভাইয়ার কাছে আনল। আমি তার আকস্মিক আক্রমণে হালকা কেঁপে উঠলাম। কিছুটা বিব্রতও হলাম। নিহা বলল,” একে দেখুন, আমার বেস্টফ্রেন্ড তারিন।”

ছেলেটি আমাকে আপাদমস্তক দেখতে লাগল। আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। তবে তার পারফিউমের ঘ্রাণটা খুব পরিচিত লাগছিল। মনে হলো কিছুক্ষণ আগে বুঝি মেকাপ রুমে এই পারফিউমের ঘ্রাণটাই আমি পেয়েছি। অবশ্য একই ব্র্যান্ডের পারফউম অনেক মানুষ ব্যবহার করতেই পারে। শুধু ঘ্রাণ শুঁকেই কারো উপর অভিযোগ তোলা ঠিক হবে না। আমি নিজেকে বোঝালাম। ছেলেটি আমাকে দেখা শেষ করে বলল,” হুম দেখলাম। কি হয়েছে এখন?”

নিহা বলতে লাগল,” একটু আগে বাথরুমে একটি ছেলে ওর সাথে অসভ্যতা করেছে।”

ঈশান চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো।
আমি জড়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নিহা ক্ষীপ্ত কণ্ঠে বলল,” আমাদের কিছু করতে হবে, ঈশান ভাইয়া।”

ঈশান নিচের ঠোঁট উল্টে বলল,” কি করতে চাইছিস?”

” বলছি। তার আগে বলুন আপনি আমাদের সাথে আছেন তো?”

ছেলেটি গজদন্ত যুক্ত চমৎকার হাসি দিয়ে বলল,” নিশ্চয়ই আছি। কেন থাকবো না?”

নিহা ঈশানের কাছে এসে বিরবির করে বলল,” ছেলেটার হাতের ঘড়ি ও দেখেছে। অন্ধকারে ডায়াল জ্বলজ্বল করে। আমি ঠিক করেছি পার্টিতে আসা সব ছেলের ঘড়ি খুলে দেখবো।”

ঈশান স্বাভাবিক স্বরে বলল,” কোনো ব্যাপার না।আমি এখনি ব্যবস্থা করছি। কিন্তু যদি অন্ধকারেও জ্বলে এমন একাধিক ঘড়ি পাওয়া যায়, তখন কি হবে?”

নিহা একটু ভেবে বলল,” তখনেরটা তখন দেখা যাবে। আগে ঘড়িওয়ালাদের খুঁজে দাও।”

” ওকে।”

নিহা হাসি হাসি মুখে আমার দিকে চেয়ে বলল,” এখন দেখিস তারু, ঈশান ভাইয়া ইনভলব হয়েছে মানেই খুব দ্রুত প্রবলেম সোলভ হয়ে যাবে।”

আমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললাম,” বাদ দে না। আমি বাড়ি যেতে চাই। আমার এসব ভালো লাগছে না।”

নিহা চোখ বড় বড় করে বলল,” বাড়ি যাবি মানে? যে তোর সাথে এটা করল তাকে একটা উপযুক্ত শিক্ষা দিবি না? আমি তো পাওয়ার সাথে সাথেই দুইটা চড় মারবো। এতোবড় সাহস! আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে অসভ্যতা!”

আমি আর কিছুই বললাম না। পার্টিতে যত ছেলে এসেছিল সবার হাতের ঘড়ি খুলে আনার ব্যবস্থা করা হলো। বাচ্চা থেকে বুড়ো, কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে এই পার্টি কিছুটা ব্যাচেলর পার্টির মত। বেশিরভাগ মানুষই অবিবাহিত। মুরব্বি বলতে তেমন কেউ আসেনি। কেক কাটার জন্য যে বড় টেবিল ছিল সেই টেবিলে সবগুলো ঘড়ি সাজানো হলো। আমি ভাবতেও পারিনি যে নিহা এমন পাগলামি করবে। একদম ছোট বাচ্চাটিরও বেল্টের ঘড়ি দেখা যাচ্ছে। চার বছরের একটা পিচ্চি তার ঘড়ি খুলে নেওয়ার জন্য কেঁদে ভাসাতে লাগল। আমি রেগে বললাম,

” এসব কি নিহা? ওইটুকু ছেলেকেও তুই সন্দেহ কর‍তে ছাড়লি না?”

নিহা চোখ পাকিয়ে বলল,” বাচ্চা হোক আর বুড়ো হোক, ছেলেমানুষ মানেই সন্দেহজনক। তুই দ্রুত চেক কর। এর মধ্যে কোন ঘড়িটা ছিল?”

আমার ইচ্ছা করছিল টেবিল উল্টে সব ঘড়ি নিচে ফেলে দেই। সব মানুষ আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। যেন এখানে লটারী প্রতিযোগিতা হচ্ছে। যারা এই ঘটনা জানতো না তারাও এখন জেনে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত সিচুয়েশন! এর থেকে ভালো ছিল নিহাকে কিছু না জানানো।

নিহা হঠাৎ সাফিন ভাইয়ের হাত ধরে বলল,

” এই, তোমার ঘড়ি দিচ্ছো না কেন? খোলো, এখনি খুলে রাখো এই টেবিলে।”

সাফিন ভাইয়া অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে বিস্মিত এবং আহত স্বরে বললেন,” আমাকেও তোমার সন্দেহ হয়?”
নিহা ঝটপট বলল,” অবশ্যই সন্দেহ হয়। তুমি কি ফেরেশতা যে তোমাকে সন্দেহ করা যাবে না? চুপচাপ ঘড়ি দাও।”

সাফিন ভাইয়া মুখ অন্ধকার করে হাতের ঘড়ি খুলে দিলেন।

ঈশান আমার সামনে দাঁড়ানো। তার হাতের ঘড়িটা তখনও খোলা হয়নি। এদিকে নিহা আমায় তাগাদা দিল,” দ্রুত দ্যাখ তারু। আজকে চোর ধরেই ছাড়বো৷ সিকিউরিটি গার্ডকে ইন্সট্রাকশন দিয়ে রেখেছি। কেউ পালাতে পারবে না। তুই সবকয়টি ঘড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে পরখ কর।”

আমি নিহার কানে কানে বললাম,” ঈশান ভাইয়ের হাতের ঘড়িটা কে খুলবে?”

নিহা ধমকের সুরে বলল,” তুই কি ঈশান ভাইয়াকেও সন্দেহ করিস নাকি?”

আমি অবাক হয়ে বললাম,” কেন? সে কি পুরুষ না?”

” অবশ্যই পুরুষ। কিন্তু সন্দেহ করার মতো পুরুষ নয়।”

” তুই সাফিন ভাইয়াকে পর্যন্ত সন্দেহ করে ফেললি অথচ উনাকে সন্দেহ করতে পারছিস না?”

” সাফিন আমার প্রেমিক। মেয়েরা স্বামী বা প্রেমিককেই সবচেয়ে বেশি সন্দেহ করে জানিস না?আর ঈশান ভাইয়া হচ্ছে বড়ভাই। তাকে নিয়ে ওসব চিন্তাও করা পাপ তারু! হি ইজ দ্যা ভদ্রম্যান অফ আওয়ার অভদ্র সোসাইটি।”

আমি মুখ কুচকে বললাম,” এর মানে কি?”
” অভদ্র সমাজ বুঝিস? আমাদের সমাজটা হলো অভদ্র সমাজ। আর সেখানে ঈশান ভাইয়া হলো একমাত্র ভদ্র ছেলে। তাই আমরা তাকে ডাকি ভদ্রম্যান।”

” সুপারম্যান শুনেছি। কিন্তু ভদ্রম্যান কখনও শুনিনি।”

” এখন তাহলে শুনে রাখ। পৃথিবীর সবাইকে আমি সন্দেহ করতে পারি। কিন্তু ভদ্রম্যানকে কখনও না। সে আমাদের প্রাণের বড় ভাই। তোরও বড়ভাই। সে কোনো মেয়ের সাথে মিসবিহেভ করেছে এই কথা প্রধানমন্ত্রী এসে বললেও আমি বিশ্বাস করবো না। ”

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। কোনো ঘড়িই আমার পরিচিত মনে হলো না। এভাবে সনাক্ত করাও সম্ভব নয়। অন্ধকারে আমি ঘড়ি দেখিনি। শুধু ছোঁয়া পেয়েছি। আর নিহা প্রতিটি ঘড়ি আমাকে ছুঁয়ে দেখতে বলল। আমি অগত্যা সেটাই করলাম। আলো নেভানো হলো। কিন্তু কোনো ঘড়ির ডায়াল জ্বলে উঠল না। আমি হতাশ হয়ে সবার ঘড়ি ফিরিয়ে দিতে বললাম।

নিহা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,” চিন্তা করিস না তারু। এতোবড় রেস্টরন্টে সিসিটিবি ফুটেজ থাকবে না এটা তুই ভাবলি কি করে?”

” বাদ দে নিহা প্লিজ। আমার এসব ভালো লাগছে না আর। মানুষ এটাকে নিয়ে অযথাই সিন ক্রিয়েট করছে। একটা ছোট ব্যাপার অনেক বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে।”

” এটা ছোট ব্যাপার মনে হয় তোর কাছে?”

” তুই যেসব করছিস সেসবের কাছে এই ব্যাপার অবশ্যই ছোট।”

এই কথা বলে আমি বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম।নিহা পেছন থেকে বলল,” আবার একা কোথাও চলে যাস না। সবার মাঝে থাক। নাহলে আবার কখন কি হয়!”

নিহার কথা পাত্তা না দিয়ে হাঁটছিলাম। তারপর হঠাৎ একজন সুন্দরী মহিলার সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলাম। মহিলা হালকা হেসে আমায় স্যরি বললেন। অথচ স্যরি আমার বলা উচিত। কারণ বেখেয়ালি ভাবে হাটঁছিলাম আমি। তবুও স্যরিটা এক্সেপ্ট করে মুচকি হেসে বললাম,

” নো প্রবলেম আন্টি।”

ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে চেয়ারে বসলেন। আমি তাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলাম। ভদ্রমহিলার পারফিউমের ঘ্রাণ খুবই প্রখর। তবে সুগন্ধ খুবই সুন্দর। আর তিনি নিজেও খুব স্মার্ট। হালকা পাতলা সিল্কের শাড়ির সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ পরেছেন। মনে হচ্ছে কোনো নায়িকা। ফিগার ফিটনেস ঠিক থাকায় দেখতেও দারুণ লাগছে। বয়সও মনে হয় বেশি হবে না। চুলগুলো ব্রাউনিশ কালার। কার্ল করে ঘাড়ের এক সাইডে ফেলে রেখেছেন। অন্যসাইড খালি। আমার দিকে আরেকবার তাকিয়ে ভদ্রমহিলা বললেন,

“তুমি কি বসবে? চাইলে আমার পাশে বসতে পারো। জায়গা খালি আছে। ”

আমার পায়ে তখন টনটনে ব্যথা। আমি মাথা নেড়ে বললাম। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,

“নাম কি তোমার?”

আমি সহাস্যে জবাব দিলাম,”আশফীয়া তারিন।”

উনি বেশ আগ্রহ নিয়ে বললেন,” ও। তুমিই তাহলে তারিন? নিহার বেস্টফ্রেন্ড? একটু আগে তোমার জন্যই সব ছেলেদের ঘড়ি চেক করা হচ্ছিল?”

আমি ইতস্তত হয়ে পড়লাম। ব্যাপারটা জানে না এমন কোনো মানুষই অবশিষ্ট নেই দেখছি। ধুর! ভদ্রমহিলা আমার মুখের অবস্থা খেয়াল করে হাসলেন,

” ডোন্ট বি আপসেট। এইখানে তো তোমার কোনো দোষ নেই। দোষ তো ওই ছেলেটার। কি পরিমাণ বাজে মেন্টালিটি হলে এমন কাজ করতে পারে বলোতো? আসলে শিক্ষা-দীক্ষা বলে কিচ্ছু নেই এদের। ফ্যামিলি প্রবলেম। একটা পার্টিতে এসে কেউ এমন আচরণ করে? এতোই যদি নোংরামি করার শখ হয় তাহলে নাইট ক্লাবে যা! এগুলো ভদ্রমানুষের জায়গা। ভদ্রতা না জানলে আসিস কেন? আমার কিন্তু খুব মেজাজ খারাপ হয়েছে ঘটনা শুনে। ওই ছেলের মা-বাবাকে পেলে আমি জিজ্ঞেস করতাম কিভাবে মানুষ করেছে ছেলেকে? আমার ছেলে হলে আমি সঙ্গে সঙ্গে দু’টো চড় ঠাসিয়ে দিতাম। ত্যায্য করতাম। যেই ছেলে মেয়েদের সম্মান করতে জানে না, সেই ছেলে দরকার নেই আমার। ”

ভদ্রমহিলা কথা বলে যেতে লাগলেন। অনেক বেশি কথা বলেন তিনি। আগে জানলে এখানে বসতামই না। আমার মাথা ধরতে লাগল। ভাবলাম বাথরুমে যাওয়ার বাহানা করে উঠে চলে যাবো। এর মাঝেই হাজির হলো ঈশান। তার হাতে জুসের গ্লাস। ভদ্রমহিলার দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

” মম, তোমার জন্য ঠান্ডা এপেল জুস, উইদাউট স্যুগার!”

ভদ্রমহিলা গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটা প্রীতিকর হাসি দিলেন। ছেলেটার গালে হাত রেখে আহ্লাদী কণ্ঠে বললেন,”দেটস মাইবয়। এইযে তারিন, এইটা আমার ছেলে।”

আমি একটু অবাক হলাম। এইরকম একজন মহিলার যে এমন বিশাল সাইজের একটা ছেলে থাকবে তা আমি ভাবিনি। হেসে জবাব দিলাম, ” জ্বী আন্টি, চিনি। কিছুক্ষণ আগেই দেখা হয়েছে।”

” ও তাই? তাহলে নিশ্চয়ই পরিচিত হয়ে গেছো?”

” হ্যাঁ। অলমোস্ট!”

ভদ্রমহিলা তবুও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গল্প করতে লাগলেন। ঈশান চলে যেতে নিলে তিনি জোর করে টেনে বসালেন। ঠিক সেই সময় আমি খেয়াল করলাম আমার কানের একটা দুল ঈশানের ঘাড়ের কাছে আটকে আছে। আমি নিজের কানে হাত দিয়ে দেখলাম দুল নেই। ব্যস, আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না। অভদ্র সোসাইটির একমাত্র ভদ্রম্যানই এই কাজ করেছে! কিন্তু আমার এই কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?

‘তি আমো’ একটি ইতালিয়ান শব্দ। এর বাংলা অর্থ, ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ গল্পটি রিপোস্ট হচ্ছে। প্রতিদিন এইসময় আপ্লোড হবে। যারা পড়ছেন তারা অবশ্যই রেসপন্স করে পেইজ একটিভ রাখবেন। পেইজের রিচ যাতে চলে না যায় সেজন্যই পুরনো গল্প আপ্লোড করছি।

চলবে

#তি_আমো
পর্ব ১
লিখা- Sidratul Muntaz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here