তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -১৪

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
১৪.

দখিনা হাওয়া বইছে।হয়তো বৃষ্টি হবে। হাওয়া আকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমার মনেও লেগেছে।পরম যতনে নিভ্র ভাইয়ের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। নিভ্র ভাই আলতো হাতে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।আজ অনেক বছর পর ভাইয়ার হাতের ছোঁয়া পেয়েছি।এই ছোঁয়ায় সিক্ত হতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু আপসোস পারবো না কারণ সমাজের চোখে আমাদের ছোটোবেলায় পড়ানো বিয়েটা বিয়ের কাতারে পড়ে না।এখন যদি সামাজিক ভাবে বিয়ে না করে আমরা একে অপরের কাছাকাছি আসি তাহলে সেটা হবে ঘোরতর পাপ তবে আমাদের টানটা দৈহিক নয় মনের টান তাই এক যুগ অপেক্ষা করলেও ক্ষতি হবে না।ভাইয়া আমার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে আমি কিছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ভাবলাম। ব্যপারটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।

বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আমি আর নিভ্র ভাই।অনেকক্ষন ধরেই দুজনে চুপ করে আছি। অসম্ভব রকমের নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে আমাদের মাঝে।অনেকক্ষন চুপ থাকার পর এবার ভাইয়া মুখ খুললো।
নিভ্র: তুই কি করে জানলি আমি নিরা কে ভালোবাসি বলেছি?

পাল্টা উত্তর আমিও দিলাম,
নিদ্রা: পনেরো বছর আগে আমি আমার চিলেকোঠার ঘরে গিয়েছিলাম গিটার নিতে।তখন অনেক বৃষ্টি হচ্ছিলো।আমি ঘর থেকে বের হয়েই যাচ্ছিলাম তখনই দেখি ঘরের জানালা খোলা।জানালা লাগাতে গিয়ে তোমায় আর নিরা আপু কে আলিঙ্গন করতে দেখি।তোমরা বৃষ্টির মধ্যে ভিজছিলে।তোমাদের গায়ের কাপড় একেবারে গায়ে বসে গেছিলো।তুমি আর আপু জানালার কাছাকাছি ছিলে তাই তোমাদের কথা শুনতে পেয়েছিলাম।তুমি আপু কে বলছিলে তোকে অনেক ভালবাসি …অনেক।এতটাই ভালোবাসি যে আমি বলে বুঝাতে পারব না।তোকে আমি আমার নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। #তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা।তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না।

আমার কথা শেষ হতে না হতেই ভাইয়া রাগান্বিত চোখে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।তারপর আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে এলো।প্রথমেই ভাইয়ার রাগান্বিত দৃষ্টি তারপর হুট করে এভাবে আমার কাছে এগিয়ে আসায় আমি ভরকে যাই।ভাইয়া যতই এগোচ্ছে আমি ততই পিছিয়ে যাচ্ছি আর কাপা কাপা কণ্ঠে বলছি,
নিদ্রা: ভাইয়া এভাবে এগোচ্ছ কেন?

ভাইয়া এগোতে এগোতে হঠাৎ করে আমার দিকে ঝুঁকে এলো।তারপর হুট করে আমার গালে কামড় বসিয়ে দিয়ে সরে গেলো।ভাইয়ার অতর্কিত আক্রমণে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।ভাইয়া এটা কি করলো? ভাইয়া কি আমায় কামড় দিল কথাটা ভাবতেই আমি ভাইয়ার দিকে বড় বড় চোখে তাকালাম।আমার দৃষ্টি দেখে ভাইয়া ধমকি দিয়ে বললো,
নিভ্র: ওই চোখ নামা, নামা চোখ বেয়াদব।তোর মত লুচ্চা মেয়েদের জন্যই আজ আমাদের মত ছেলেদের এই অবস্থা। তোরা চোখ দিয়েই আমাদের আস্ত গিলে খাবি।সারাদিন কেও কেও করিস কিন্তু কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। এতগুলো কথা যখন শুনলি তখন এটাই শুনে নীতি যে আমি বলেছি তোকে অনেক ভালবাসি …অনেক।এতটাই ভালোবাসি যে আমি বলে বুঝাতে পারব না।তোকে আমি আমার নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। #তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা।তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না নিদ্রা।আমি তোকে অনেক ভালোবাসি নিদ্রা।পুরোটা শুনতে পারলি না।তার আগেই কেও কেও শুরু করে দিলি।শুধু না পারতে চিল্লাস।কাজের কাজ নিজে তো কিছুই পারিস না আর দোষ দিস আমাদের ছেলেদের।

আমি ভাইয়ার কথা শুনে হতভম্ব দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া এসব কি বললো? ভাইয়া কে কি তাহলে ভুল বুঝেছিলাম আমি? সত্যিই তো ভাইয়ার তো আরো অনেক কিছু বলার ছিল যেটা কথা শুনে বুঝেছিলাম কিন্তু আমি পুরোটা না শুনেই চলে এসেছিলাম।আমার একটু অধৈর্য্য হওয়া আমাকে এত বছর অন্ধকারে রাখলো।আমি অবাক নয়নে ভাইয়া কে বললাম,
নিদ্রা: তারমানে তুমি আমাকে ভালোবাসো? আমি তোমার ভালোবাসার মানুষ?

নিভ্র: শুধু ভালোবাসার মানুষই নস বরং তুই আমার স্ত্রী নিদ্রা আর প্রেমিকা রাত।
এবার আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।স্ত্রী মানে? আমাদের তো বিয়েই হয়নি আর রাত তো আঁধার বলে তাহলে নিভ্র ভাই কেন রাত বলছে?

নিভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
নিভ্র: কি এখনো বুঝলি নাতো? আমার জেদের কাছে হার মেনেই মেঝ বাবা তোর যখন পাঁচ বছর আর আমার যখন বারো বছর তখন আমাদের শরীয়ত মতে বিয়ে পরিয়ে ফেলে।আর রাত বলছি কারন তোর আঁধার রাতের চাঁদনীময় আঁধার আমিই ছিলাম যে রোজ তোকে চিঠি লিখতো।

আমার চোখ এবার যেন কোটর ছেরে বেরিয়ে আসছে।আমি ক্রমশ ঢলে পড়ছিলাম কিন্তু ভাইয়া আমায় ধরে ফেললো অতঃপর কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
নিভ্র: তোকে আমি সেই দশ বছর বয়স থেকে ভালোবাসি যখন তোর বয়স ছিল তিন বছর। তোর ওই লাল টুকটুকে গালটা দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করতো রাত।তুই যখন সদ্য জন্মেছিলি তখন তো আমি সাত বছরের ছিলাম।তোকে আমার জেদের কাছে হার মেনে অনেক সচেতন হয়ে আমার কোলে দিয়েছিল বাবা কারণ আমি বলেছিলাম বাবু কে আগে আমিই নিবো। শুভ্র যেমন জেদ করে নীলা কে আগে নিয়েছিল তেমনি আমিও তোকে নিয়েছিলাম।

তোর আঁধার রাতের চাঁদনীময় আঁধার হতে চেয়েছিলাম বলেই তোর নাম দিয়েছিলাম নিদ্রা আর ভালোবেসে তোকে রাত বলে ডাকতাম।যখন তোর বুঝ হতে শুরু করলো তখন থেকে তোকে আর রাত বলতাম না।তোকে প্রায়শই আঁধার হয়ে চিঠি লিখেছি যখন তোকে অনেক বকাবকি করতাম।তোকে বকাবকি করতাম নিজের থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলাম কারণ তোকে ছাড়া থাকা আমার জন্য দিনদিন অসম্ভব হয়ে পড়ছিলো।আমাদের বিয়ের পর আমাকে তোর থেকে দূরে রাখার শর্ত দিয়েছিল মেঝ বাবা নাহলে তোকে আমার কাছ থেকে সবসময়ের জন্য নিয়ে যাবে কারণ আমার কারণে তোর পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে কিন্তু তুই ছিলি নাছোড়বান্দা। সবসময় নিব্য ভাই নিব্য ভাই বলতে বলতে পিছন পিছন ঘুরতি।আমি জোর করেও তোকে সরাতে পারতাম না।

এইদিকে রোজ মেঝ বাবা আমায় বলছে তোকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে।আমি বিয়ে তো করে নিয়েছি কিন্তু যতদিন না নিজের পায়ে দাঁড়াবো আর তোর পড়ালেখা শেষ করে চাকরি হবে ততদিন অব্দি তোর কাছাকাছি যেতে পারবনা।তাই সবার আড়ালে তোর কাছাকাছি যেতাম।রাতের আঁধারে তোর ললাটে স্নেহমাখা চুম্বন করে তোকে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে রেখে আবার নিজের ঘরে চলে আসতাম।যেদিন তোকে কাছে না পেতাম সেদিন আর ঘুম হতো না।একদিন শুভ্রর কাছে ধরা পড়ে যাই।

ও বলে ও মেঝ বাবা কে বলে দিবে।আমি ভয় পেয়ে যাই।পড়ে ওকে নীলা কে নিয়ে ভয় দেখাই কারণ ও নীলা কে ভালোবাসতো। নীলার কথা যদি কাউকে না বলি তার বদলে ওকে আমার তোর কাছে লুকিয়ে যাওয়ার কথা চেপে যেতে হবে সবার কাছে এটাই শর্ত দেই।বাধ্য হয়ে ও আমার কথা মেনে নে।এরপর থেকে আমি তোর কাছে যেতে না পারলে ও আমায় সুযোগ করে দিত তোর কাছে যাওয়ার।এরপর তুই যখন বড় হলি তখন আর তোর কাছে যেতে পারতাম না তাই তোর সঙ্গে জেদ দেখাতাম কারণ তুই তাড়াতাড়ি বড় হচ্ছিলি না বলেই আমায় এত অপেক্ষা করতে হচ্ছিলো।

এরপর এলো সেই বর্ষণের দিন।সেদিন নিরা আমার তোকে ভালোবাসার কথা জেনে যায়।তখন আমি ওকে অনেক বুঝাই আর ও মেনে নেয়। ও আমায় বলে যে তোকে প্রপোজ করতে।সেটাই ওর সঙ্গে প্রাকটিস করছিলাম আর তুই মনে করলি আমি ওকে ভালবাসি।কিন্তু সেদিন আর তোকে প্রপোজ করা হলো না কারণ মেঝ বাবা আমাকে নিরার সঙ্গে মিলে তোকে প্রপোজ করার প্ল্যান শুনে ফেলেছিল আর সেদিন আমায় অনেক মারে।সেদিন আমার পুরো পিঠ দিয়ে রক্ত বের হয়েছিল মেঝ বাবা মানে তোর বাবার মার খেয়ে।

এরপর আমাকে তোর কাছ থেকে আলাদা রাখতে আমাকে নিরার সঙ্গে খালামুনির বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।তারপর যখন আমি ফিরি তখন তোর বিশ বছর আর আমার সাতাইশ।আমি পড়ালেখা শেষ করে বাবা আর মেঝ বাবার ব্যবসায় যোগ দেই।বাবা আর মেঝ বাবার উপর থেকে ভার কমে আসে।আমি আস্তে আস্তে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাই আর মেঝ বাবা কে বলি তোর সঙ্গে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে খুলে বলতে কিন্তু মেঝ বাবা বললো যতদিন না তুই চাকরি পাচ্ছিস ততদিন তুই যেন আমার ভালোবাসার কথা না জানতে পারিস আর সেই বারের মত আবারও মেঝ বাবার কথা মেনে নেই ।

তুই যেমন আমায় ভালোবেসেছিস তেমনি আমিও ভালোবেসেছি।পার্থক্য শুধু এটাই আমি তোর থেকে বেশি সময় ধরে তোকে ভালবাসি।তোকে আমি বিশ বছর ধরে ভালবাসি।তোকে ভালোবেসে এত বছর ধরে কষ্ট পেয়েছি রাত।তোকে ছাড়া রাতের পর রাত একা থেকেছি। কত রাত আমার নির্ঘুম কেটেছে সেটা হয়তো তুই কল্পনাও করতে পারবি না। এরপরও নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কারোর মনের মানুষ হিসেবে দেখে গিয়ে আমার রেগে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক নয় বলেই নিভ্র ভাই আমার দিকে তাকাল।

এতক্ষণ দুই নিঃশ্বাসে এত গুলো কথা বলছিল ভাইয়া।ভাইয়ার চোখ লাল হয়ে গেছে।চুলগুলো আগের থেকেও উষ্কখুষ্ক।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে ভাইয়ার। শরীর শুকিয়ে গেছে।আমি ভাইয়ার কথা শুনে কাদতে কাদতে উঠে গিয়ে ভাইয়ার মাথা আমার বুকে চেপে ধরে বললাম,
নিদ্রা: কেন এত বছর আমায় এই কথাগুলো বলে না? কেন আমায় অন্ধকারে রাখলে? কেন নিজেও কষ্ট পেলে আর আমাকেও কষ্ট দিলে? জানো তোমায় ভালোবেসে আমিও এত বছর নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি।রাতের পর রাত তোমায় কাছে পাওয়ার জন্য,এক পলক দেখার জন্য কাতরিয়েছি।তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো জেনে গুমরে মরেছি।তুমি আমায় ভালোবাসো সেটা তো সবাই জানতো কিন্তু আমি তোমায় ভালোবাসি সেটা একমাত্র আমিই জানতাম।কাউকে কখনো বলতে পারিনি নিজের মনের কথা।কয়েক বছর আগে সাবু জেনে গেছে।বাধ্য হয়ে ওকে বলেছি।

নিভ্র আমার বুকে মুখ গুজে মলিন কণ্ঠে বললেন,
নিভ্র: চেয়েছিলাম রে বলতে কিন্তু মেঝ বাবা তো একজন বাবার জায়গা থেকে ঠিকই।প্রেম ভালোবাসার চক্করে পরে তুই সত্যিই বেকে বসতে পারিস।আমার জন্য তোর পড়ালেখার ক্ষতি হতো।তোর ব্যর্থতার জন্য লোকে তোকে হাজার কথা শোনাতো যেটা আমার আর মেঝ বাবা কারোর পক্ষেই শোনা সহজ হতো না তাই এতদিন সবটা চেপে রেখেছি ।

আমি আর কিছু বললাম না।শুধু ভাইয়ার বুকে মুখ গুজে বসে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলাম। খানিকক্ষণ বাদে ভাইয়া আমায় তার বক্ষ থেকে উঠিয়ে আমার ললাটে আলতো চুম্বন করে আমায় বলল,
নিভ্র: অনেক কান্নাকাটি করেছিস।এবার চল খেতে হবে। নিশ্চই সকালেও খাস নী।আমি তোর থেকে দূরে যাওয়ার পর থেকেই তো খাওয়ার অনিয়ম শুরু করেছিস।তোর যে এখন অব্দি পেটে কিছুই পড়েনি সেটা আমি জানি কিন্তু আজ কিছু বলিনি কারণ কথাগুলো তোর জন্য উচিত ছিল ।এখন খেয়ে ঘুমাবি।তুই যে খাওয়া ঘুম একেবারে লাটে উঠিয়েছিস সেটা আমার জানা আছে।চল খাবি। আজ থেকে তোর খাওয়া দাওয়া আমি দেখবো।না খেলে চড়িয়ে খাওয়াবো তবুও খাওয়াবো।

ভাইয়ার কথায় আমি কান্নার মাঝেও হেসে দিলাম। ভাইয়াও আমার সাথে হেসে দিল কিন্তু খানিকক্ষণ বাদেই আমার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো কারণ আকস্মিক ভাইয়া আমার গলায় ঠোট ডুবিয়ে দিয়েছে।আমার গলায় অনবরত চুম্বন করে চলেছে।আমি এখনও স্থানুর মতই বসেছি।ভাইয়া আমায় ছেরে দিয়ে আমার কপালের সঙ্গে কপাল ঠেকিয়ে তার একহাত আমার ঘাড়ে আর আরেক হাত আমার কোমরে রেখে বললেন,
নিভ্র: খুব করে চাই তোকে রাত।অতিরিক্ত চাই তোকে কারণ #তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা রাত। তোর ওই মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে যুগ যুগ কাটিয়ে দিতে চাই।তোর গায়ের এই সুগন্ধি নিজ গায়ে মাখতে চাই।তোর মাঝে হারাতে চাই। তোকে খুব করে ভালোবাসতে চাই।

আমি ভাইয়ার দুই গালে হাত রেখে বললাম,
নিদ্রা: তাহলে বাবা কে বলে আমায় আবারও বিয়ে করে নিয়ে যাওনা নিভ্র ভাই।তোমার কাছে থাকতে চাই আমি।তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকাও আমার জন্য সম্ভব নয় কারণ তুমি আমার ভালোবাসার আঁধার।

নিভ্র ভাই আলতো হেসে আমায় আবারও স্নেহের চুম্বন করে আমায় ছেড়ে নেমে গেলেন।ফ্রেশ হয়ে এসে ইন্টারকম দিয়ে ফোন করে খাবার অর্ডার করলেন।এখন বাজে রাত এগারোটা তাই ভাইয়া বললো এত রাতে আর ফিরতে হবে না।কাল একবারে ফিরলেই হবে।

আমি ফ্রেশ হয়ে এসে ভাইয়ার সঙ্গে খুনসুটি করতে করতে খেলাম।তারপর দুজনে অনেকক্ষন হাসি মজা করে নিলাম। শোয়ার সময় আমি বিছানার দিকে তাকিয়ে বললাম,
নিদ্রা: ভাইয়া মানে আমরা দুজন কি একসঙ্গে ঘুমোবো?
নিভ্র আমার কথায় ভ্রু কুচকে বললো,
নিভ্র: এছাড়া তো আমি তোর শোয়ার মত আর কোনো জায়গা দেখছি না। এখানে তো কাউচও নেই যে তুই শুবি।আর এত ভাবার কি আছে? আমি তোর স্বামী।তবুও তোর কমফোর্ট এর জন্য আমি তোর সাথে কিছু করবো না। যা করার একবারে আবার বিয়ে করে বাসর রাতে করবো সেদিন তুই চাইলেও পালাতে পারবি না।তাই এত কাপাকাপি আর ভয় না পেয়ে এসে শুয়ে পর।

আমি আর উপায়ন্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে শুয়ে পড়ি।ভাইয়া আমায় তার বুকে নিয়ে আমার চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো। ব্যাস আর কি ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ ফোনের শব্দে ঘুম ভেংগে গেলো।তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলাম।ভাইয়া এখনো ঘুমোচ্ছে।আমি কোনরকমে চশমা পরে ফোনের স্ক্রিনে চোখ বুলালাম।ফোনের স্ক্রিনে চোখ যেতেই আমার বুক কেপে উঠলো।বাবা ফোন দিচ্ছে।কাল রাতে তো ফোন করে এটাও বলিনি যে আমি আসতে পারবো না।তাহলে কি বাবা রেগে আছে? আমি তাড়াহুড়ো করে ফোন ধরলাম।

ফোন রিসিভ করতেই বাবা বললো,
বাবা: নিদ্রা মা তুই যেখানেই আছিস এখনই বাড়ি আয়।তোর সঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। এখনি বাড়ি আয় বলেই বাবা ফোন কেটে দিলো।আমি কিছু বলারও সুযোগ পেলাম না।

ফোন রেখে পাশ ফিরলাম। নিভ্র ভাইয়া এখনো ঘুমোচ্ছে।ওর মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে ওর এই ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছা করছেনা তাই তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়লাম ওকে না ডেকেই। চিরকুটে লিখলাম ‘ জরুরি একটা কাজ পরে গেছে তাই তোমায় না জানিয়ে যেতে হচ্ছে সরি 😔 ‘। তারপর সেই চিরকুট সাইড টেবিলে ভাইয়ার ফোনের নিচে রেখে চলে এলাম।

তালুকদার হোসেন বাড়ি ঢুকতেই সবকিছু দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।কাল বাড়িটা কেমন ছিল আর আজ কেমন হয়ে গেছে।একদিনের তফাতে বাড়ি এত চেঞ্জ কি করে হয়ে গেলো? আমি ভুল বাড়িতে ঢুকে পড়িনি তো? আশেপাশে তাকিয়ে বড় মা আর মা কে দেখে বুঝলাম এটা আমাদেরই বাড়ি কিন্তু এরকম করে বিয়ে বাড়ির মত সাজানো হয়েছে কেন? কার বিয়ে আজ?

আমার দেখেই বড় মা এগিয়ে এলো আর হাসিমুখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
নাদিরা: তোর বড় বাবা,ছোটো বাবা আর তোর বাবা উপরে স্টাডি রুমে অপেক্ষা করছে তোর জন্য।তোর সাথে কথা আছে।এখনই তাড়াতাড়ি যা।
বড় মার কথায় আমি তাড়াতাড়ি সিড়ি দিয়ে উপরে চলে এলাম।বাবা আমায় দেখে বললো,
বাবা: নিদ্রা তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।আয় এখানে এসে বস বলেই আমায় চেয়ার ইসারায় দেখালো।

বাবার কথামত আমি সেই চেয়ারে বসে পড়লাম।ঘরে বড় বাবা আর ছোট বাবাও আছে।এই অবেলায় ছোটো বাবা কে দেখে অবাক হলেও কিছু বললাম না।এবার বাবা আমার সামনে বসে বললো,
আজিজ: নিদ্রা তুই আমার মেয়ে।ছোটো থেকেই তোকে অনেক আদরে বড় করেছি কিন্তু এর পরিবর্তে আজ অব্দি কিছু চায়নি।তবে আজ চাইছি।তোকে আমার কথা আজ রাখতে হবে নাহলে আমার যে কথার খেলাপ হয়ে যাবে।আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশে যাবে।আমার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।ছোটবেলার বন্ধু কে হারিয়ে ফেলবো।আমার ফ্যামিলিতে চির ধরবে।প্লিজ নিদ্রা আমার কথা শোন।

বাবার কথা শুনে আমি অবাক হই।কি এমন কথা যেটা না শুনলে বাবার এত ক্ষতি হবে? সর্বোপরি বাবার বন্ধুত্বে চির ধরবে আর আমাদের পরিবার ভেঙে যাবে।বাবা যাই বলুক না কেন আমায় সেটা মানতে হবে নাহলে হয়তো সত্যি সত্যি আমাদের পরিবার শেষ হয়ে যাবে ভেবে আমি বাবা কে বললাম,
নিদ্রা: বাবা তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।তুমি শুধু আমাকে বলো কি করতে হবে।আমি তোমার জন্য সব করতে পারি।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here