তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -১২

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
১২.

বিছানায় কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছে নীলা।ওর পরনে থাকা শাড়িটা এলোমেলো হয়ে আছে। শুভ্র জানালার কাছে দাড়িয়ে আছে।জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের প্রকৃতি দৃশ্য দেখছে।আজকাল প্রকৃতি দেখতেও আর ভালো লাগে না।সবকিছুর উপরই বিতৃষ্ণা এসে গেছে।কোনোকিছুই এখন আর মন কে আগের মত উচাটন করেনা কারণ তার বোনের একটা ভুল পদক্ষেপ আজ তার বন্ধু কে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে।

শুভ্র জানেনা নিদ্রার সঙ্গে নিভ্রর কি ঝামেলা হয়েছে কিংবা সেদিন কলেজে নিদ্রা নিভ্র কে কি বলেছিল।তবে তার বোন আর বন্ধুর অনেক বড় ঝামেলা হয়েছে যার সূত্র ধরে আজ ছয় মাস যাবৎ নিভ্রর কোনো খোঁজ নেই। নিভ্র কোথায় আছে কি করছে তার কিছুই জানা নেই।শুধু নিদ্রার কলেজ থেকে ফিরে এসে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল আর বলে গিয়েছিল ওর অবর্তমানে যেন শুভ্র সবটা সামলায় আর সেটাই হচ্ছে।প্রথম প্রথম বড় মা খুব কাদতো তবে এখন সবটা ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে।এখন আর কেউ কান্নাকাটি করেনা।

নিদ্রা আর নিভ্রর মাঝে ঝামেলা হয়েছে বলেই যে নিভ্র চলে গেছে সেটা সবার জানা তবুও নিভ্রর আদেশে কেউ নিদ্রা কে কিছু বলেনি।সবাই ওর সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যাবহার করে তবে এই স্বাভাবিক ব্যবহারও নিদ্রা নিতে পারছে না।ভিতরে ভিতরে নিদ্রাও জানে নিভ্র ওর কারণেই চলে গেছে ।

আজকাল নিদ্রার সেই চটপটে ভাবটা নেই।সারাদিন মলিন মুখে বসে থাকে।কোনমতে মাস্টার্স এক্সাম ক্লিয়ার করে এখন একটা ফ্যাশন হাউজ এ জব নিয়েছে।সারাদিন তাই কাজের চাপেই হোক বাড়ী ফেরা হয়না। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে কাজ শেষ হয়ে যায় তবে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে।ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বাজে। এ নিয়ে নিদ্রা কে কেউ কিছু বলেনা কারণ মেয়েটা নিভ্র চলে যাওয়ার পর থেকে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আজকাল যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে।ছুটির দিনেও পারলে অফিসে চলে যায় আর না পারলে ঘরের জানালার কাছে ডিভানে বসে দূর দূরান্তের দৃশ্য দেখে।

নিভ্র নেই বলে খাওয়ার ঠিক ঠিকানাও নেই নিদ্রার।খাওয়ায় প্রচন্ড অনিয়ম করে আর সবার আদরের বলে কেউ ওকে বকেও খাওয়াতে পারেনা।এই বাড়িতে সবার ছোটো হলো নিদ্রা তাই সবাই ওকে খুব ভালোবাসে।সব ভাইবোনদের মধ্যে মা বাবারও খুব আদরের তাই ওরাও ছোটো মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারেনা।

নিভ্র নেই বলে নিদ্রার খাওয়া দাওয়া ঘুম সব লাটে উঠেছে। চব্বিশ ঘণ্টাই হয় জানালার কাছে উদাস মনে বসে থাকে নয়তো কানে পেন্সিল গুজে অফিসের কাজ করতে থাকে।ওর এই উদাস ভঙ্গিমায় সকলে ভিতর থেকে ভেঙে পড়েছে। একেতো নিভ্রর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না আবার অন্য দিকে নিদ্রার এরকম উদাসীনতা সবদিক দিয়ে যেন চেপে ধরেছে। চিন্তায় চিন্তায় শুভ্রর বিপি বেড়ে হাই হয়ে গেছে।

ছয়মাসের ঘটে যাওয়া ঘটনা ভাবতে ভাবতেই শুভ্রর চোখ যায় বিছানার দিকে।নীলা নড়ছে তারমানে ঘুম ভেংগে গেছে।নীলার সামনে মুখটা এরকম বেজার করে রাখা যাবেনা।আজকাল নীলার অনেক মুড সুইং হচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে মুড চেঞ্জ হয়,হয়তো নিদ্রা আর নিভ্রর টেনশনে।

নীলা আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।কাধে শাড়ি ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে শুভ্রর দিকে চোখ দেয়।নীলার ঘুম ভাঙতে দেখে শুভ্র মুচকি হেসে ওর কাছে এসে বসে।নীলার ঠোঁটে হালকা করে ঠোঁট ছুঁইয়ে মুচকি হেসে বলে,
শুভ্র: ঘুম হয়েছে আপনার নীলাদৃতা?

নীলা কিছুক্ষণ শুভ্রর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে নিরস মুখে বলে,
নীলা: হবে কি করে? আপনি ঘুমোতে দিয়েছিলেন রাতে? সারারাত আমায় আপনার ভালোবাসাময় টর্চার করে নিজে তো ভোরের দিকে আরামসে ঘুমিয়ে গেছেন কিন্তু আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন।এই দেখুন ঘাড়ে, গলায়,কানের নিচে আপনার আঁচড়ের দাগ পড়েছে। এগুলোর ব্যাথায় আমি ঘুমোতেই পারিনি বলেই নীলা ওর ঘাড় আর গলা দেখালো।

শুভ্র নীলার গায়ে ওর নখের আঁচড় দেখে অট্ট হেসে বললো,
শুভ্র: আমি দিয়েছি আর আপনি বুঝি চুপ ছিলেন।আমার পিঠ যদি দেখেন না জ্ঞান হারাবেন।এই দেখুন কি অবস্থা করেছেন আমার পিঠের বলেই শুভ্র ওর শার্ট খুলে নীলা কে দেখালো।

নিজের কান্ডকীর্তি দেখে নীলা কিছুক্ষণের চুপ মেরে গেলো অতঃপর ভ্রু কুচকে বললো,
নীলা: তো কি হয়েছে? আপনি আমাকে দিয়েছেন,আমি আপনাকে দিয়েছি।হিসাব বরাবর..এখন সরুন তো।আমার উঠতে হবে। সাতটা বেজে গেছে কিন্তু এখনও রান্নাঘরেই যেতে পারলাম না বলেই নীলা ওর গাঁয়ে শাড়ি ভালোভাবে জড়িয়ে শুভ্রর পায়ের উপর বসে নেমে যেতে নে কিন্তু শুভ্র আবার ওকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে ওর উপর ঝুঁকে পরে।

নীলা শুভ্রর এহেন কাজে ভ্রু কুচকে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
নীলা: কি হলো?
শুভ্র ওর দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁট লেহন করে বলল,
শুভ্র: মন চাইছে আবারও..
নীলা: শুভ্র ভাই সরুণ….
নীলার কথা শুনে শুভ্রর মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার পরিবর্তে নির্লিপ্ত ভাবে নীলার দিকে তাকিয়ে থাকলো। শুভ্র জানে নীলা ওর রোমান্টিক মুড নষ্ট করার জন্য এরকম করছে যাতে করে ও রেগে গিয়ে সরে যায় কিন্তু নীলা জানেনা শুভ্র ওর থেকেও দুই ধাপ আগে। শুভ্র নীলার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হেসে বললো,
শুভ্র: এখন আমাকে ভাইয়া ডাকার অপরাধে আপনাকে আবারও শাস্তি পেতে হবে নীলাদৃতা।কাল রাতের কথা মনে আছে তো।আবারও আপনার ভাগ্যে শাস্তি জুটবে… সো স্যাড…
নীলা শুভ্রর কাজে অবাক হচ্ছে। ও ভেবেছিল লোকটা কে এভাবে রাগিয়ে দিবে কিন্তু লোকটা ওর চাল ধরে ফেলেছে। শুভ্রর প্রশংসা করতেই হবে।ওর বুদ্ধির জবাব নেই।

শুভ্র নীলার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে রেডি তো মিসেস তালুকদার বলেই নীলার ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ানোর জন্য এগিয়ে গেলো।কিন্তু যেই না শুভ্র নীলা কে কিস করবে তার আগেই নীলা ওকে ঢাকা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দিলো। শুভ্র নীলার এহেন কাজে হতভম্ব হয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।

নীলা দৌড়ে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে কমোড বোলে বমি করতে লাগলো। পেটে যা ছিল সব বেরিয়ে যাচ্ছে।নীলার পিছন পিছন শুভ্রও এলো।নীলার চুলগুলো এক হাত দিয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে নীলার পিঠ ডলে দিতে লাগলো।অনেকক্ষন বমি করার পর নীলা শান্ত হয়।

বিছানার কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে নীলা। শুভ্র ক্রমশ ঘরময় পায়চারি করে চলেছে। রাগে শুভ্রর মাথা ফাটছে। ও শুধু পারছে না নীলা কে মেরে ফেলতে।কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর নীলার সামনে এসে ধপ করে বসে পড়লো তারপর রাগী গলায় বললো,
শুভ্র: এমার্জেন্সি পিল মিস দেওয়ার আগে একবারও আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না।তোমাকে এত সাহস কে দিয়েছে নীলা? বাচ্চার বাবা আমি অথচ আমায় একবারও জানালে না।কেন কেন কেন?

শুভ্রর মুখ থেকে তুমি আর নীলা সম্বোধন শুনেই নীলা বুঝে গেছে শুভ্র ভীষণ রেগে আছে।আর রেগে যাওয়ারও কথা।নীলা তো করেছেই শুভ্রর রেগে যাওয়ার মত কাজ।ওদের ইন্টিমেসির পর ইচ্ছা করে এমার্জেন্সি পিল প্রেফার করেনি।সেটা মিস করে গেছে যার ফলস্বরূপ এখন ও প্রেগনেন্ট।

নীলা তবুও চুপ করে আছে দেখে শুভ্র ওর বাহু দুটো চেপে ধরে বলল,
শুভ্র: হাউ ডেয়ার ইউ নীলা? তোমাকে এত সাহস কে দিয়েছে? তোমার ধারণা আছে তুমি কি করেছ? আমায় না জানিয়ে এরকম একটা ড্রাস্টিক স্টেপ নিলে? একবারও আমার সঙ্গে ডিসকাস করলে না।তোমার কাছে আমার চেয়ে বাচ্চা বেশি? কেন এমন করলে?

নীলা আমতা আমতা করে ধীর কণ্ঠে বলল,
নীলা: শুভ্র আপনি আমার কথা শুনুন।আমি শুধু…
শুভ্র: কি শুনবো তোমার কথা? কি শুনবো? তুমি এখন হাজারটা এক্সকিউজ দিবে।তোমার ধারণা আছে তুমি পিল মিস দিয়ে তোমার জন্য কত বড় বিপদ ডেকে এনেছ? তোমার মনে নেই তিন বছরে আগের তোমার সেই অ্যাক্সিডেন্টের কথা? ডক্টর কি বলেছিল তোমায় অ্যাক্সিডেন্টের পরে তোমার মনে আছে?

ডক্টর বলেছিলো তুমি অ্যাক্সিডেন্টের তিন বছর অব্দি কনসিভ না করলেই ভালো।এরপরও যেন তুমি কনসিভ না করো কারণ রিস্ক থেকেই যায়।যদি করেও থাকো সেটা অনেক রিস্কি। হয়তো অটিতেই তুমি…শেষটা বলতে গিয়ে শুভ্রর গলা বুজে এলো।

নীলা শুভ্রর কাধে হাত রেখে বলল,
নীলা: আপনি আছেন তো…আপনি আগলে নিবেন আমায়…
নীলার কথা শুনে শুভ্র একদৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে রয়। শুভ্রর চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

বাড়ি ঢুকতেই যে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো ভাবতে পারিনি।বাড়িতে লেগে আছে এক হুলস্থুল কান্ড।বাইরে থেকে ফিরতে সময় দেখলাম নিরব আর অভ্র পুরো পাড়ায় মিষ্টি বিতরণ করছে।এসব কি হচ্ছে কি এখানে?সবার মুখাবয়ব হুট করে বদলে গেছে।সকলের এতদিনে মূর্ছা যাওয়া মুখে যেন নতুন করে হাসির ঝলক দেখতে পারছি।

আমি বাড়ি ঢুকতেই দেখলাম ভাইয়া নতুন ভাবী কে কোলে তুলে ঘুরছে খুশিতে।কিন্তু এত খুশি হওয়ার কারণ কি? আমাকে দেখতেই তন্দ্রা দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
তন্দ্রা: নিদ্রা রে আমরা ফুপি হতে চলেছি।
তন্দ্রার কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে কারণ আমি এখনও বুঝতে পারছি না ওর কথা।

আমি এখনও বুঝতে পারিনি দেখে তন্দ্রা আমার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
তন্দ্রা: তোর মাথা শুধু কাজের বেলায় চলে। এছাড়া তুই আন্ডা পারিস। গাধা আমরা ফুপি হবো তারমানে নিশ্চই আমাদের ভাইয়ের বেবী হবে।আর আমাদের এখনই ভাই আছে আর সে হলো….
তন্দ্রা আর বলতে পারলো না তার আগেই আমি ভ্রু কুচকে বললাম শুভ্র ভাই…

তন্দ্রা আমার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো তবে এই কথা শুনে আমি নির্লিপ্ত চাহনি দিয়ে উপরে চলে এলাম।এমন ভাব করলাম যেন এই খবর শুনে আমি খুশিও নই দুঃখীও নই।তবে ঘরে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে লাফিয়ে উঠলাম।এতক্ষণ পারছিলাম না সবার সামনে হাসি ধরে রাখতে।আমি দরজা লাগিয়ে ইয়ে বলে চেচিয়ে উঠলাম। ইয়েস ইয়েস করে ঘরময় লাফাতে লাগলাম।

নিদ্রার চিৎকারের আওয়াজ শুনে তন্দ্রা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে সরু চোখে বললো,
তন্দ্রা: দেখলে ভাইয়া তোমার ছুইটটা বান্দর বোন সবার সামনে এমন এক্সপ্রেশন দিলো যেন এই খবর শুনে ও খুশি হয়নি অথচ ঘরে গিয়ে লাফাচ্ছে দেখো।ওর লাফানোর শব্দ এখানে অব্দি আসছে।
খুশিটা সবার সামনে এক্সপ্রেস করলেই হয়। তানা ঘরে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসছে।কি যে করবো এদের নিয়ে।

তন্দ্রার কথায় সকলে সমস্বরে হেসে উঠে আর তন্দ্রা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
তন্দ্রা: উফফ ভাইয়া এবার তো নতুন ভাবী কে ছাড়ো।ভাবী উড়ে যাচ্ছে না যে ওকে এভাবে কোলে নিয়ে বসে আছো।

তন্দ্রার কথায় নীলা লজ্জা পেয়ে শুভ্র কে ধাক্কা দিয়ে সরে নেমে যায়। বাড়ির বড়রা সত্যি বলতে নিরবদের বাড়ি গেছে এই সুখবর দিতে।বাড়িতে কয়েকজনই আছে।কয়েকজন বলতে অভ্র, নিশী,তন্দ্রা, শুভ্র নীলা আর এখন মাত্র নিদ্রা এলো।নীলা নিজেকে শুভ্রর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
নীলা: আপনারা সবাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি ডাইনিং এ খবর সাজাচ্ছি। বড় মা বাবা আর মা বাবা আজ চৌধুরী বাড়িতেই থাকবে তাই ওদের জন্য অপেক্ষা করতে বারণ করেছে।

শুভ্র নীলার কথা শুনে নীলার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে,
শুভ্র: দুপুরে কি বলেছিলাম মনে নেই নীলা তাই না? এতই ইররেসপন্সিবল হলে কি করে চলবে?
নীলা: না মানে এতটুকু কাজ করলে কি হবে? কিছুই হবে না।আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
শুভ্র এবার দাত মুখ খিঁচিয়ে বললো,
শুভ্র: এই তুমি বড় না আমি বড়? তুমি বেশি জানো নাকি আমি বেশী জানি?আজব তো।তুমি আমার কথা শুনছো না কেন? আমি কি তোমার খারাপ চাই বলে বলছি এ কথা? নীলা তুমি এত অর্ডাসিটি পাও কোথা থেকে?

শুভ্রর কথায় নীলা পুরো চুপসে গেল। খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে ওর এরকম বেহিসাবি চলাফেরার জন্য শুভ্র রেগে যাচ্ছে তাই এখন থেকে ওকে শুভ্রর কথা অনুযায়ী চলতে হবে না হলে ওর কপালে অশেষ দুঃখ আছে। শুভ্র দুপুরে বলে দিয়েছে যে যদি বেবি রাখতে হয় তাহলে ওর কথা শুনে চলতে হবে। আর নীলাও ওর কথা সানন্দে মেনে নিয়েছে কিন্তু এখন যদি অনিয়ম করে তাহলে শুভ্রর থেকে খারাপ কেউ হবে না।

নীলা: আচ্ছা ঠিক আছে আপনি তাহলে আপনার যেটা মন চায় সেটাই করুন আমি ঘরে গেলাম। আপনার তো অনেক সখ না কাজ করার। তাহলে আজ থেকে পুরো বাড়ির কাজ আপনি করবেন বলেই নীলা মুখ ঘুরিয়ে উপরে চলে গেল। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে নীলার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। এমন আহামরি তো কিছু বলেনি যে নীলা এভাবে রেগে যাবে।

টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে শুভ্র সবাইকে খেতে ডাকে।সবাই চলে এলেও তখনও নিদ্রার দেখা মিলল না। চিন্তিত মুখে পা বাড়ালো নিদ্রা কে ডাকতে শুভ্র।

ডেস্কের উপর বসে কানে পেন্সিল গুজে অনবরত হাতে থাকা আরেকটা পেন্সিল চিবিয়ে যাচ্ছি। মনমত ডিজাইন করতে পারছিনা।যেমন চাইছি সেরকম টা আকতে পারছিনা। হাতে সময় আছে আর শুধু আজকের রাতটা। কাল সকাল বেলা নীরহান ফ্যাশন হাটের ওনার আসবে।তাই মিস্টার এমডি আমায় শুধু দুই দিনের সময় দিয়েছিলেন কারণ বর্তমানে এমডি ফ্যাশন হাউজ এড় সবচেয়ে ভালো আর ক্লাসিক ডিজাইনার আমি।কিন্তু কাল সারাদিন আর আজ সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও কোনো ডিজাইন আকতে পারলাম না। হাতে এখন শুধু আজকের রাতটা বাকি। তারপর যদি কোন ডিজাইন এমডিকে দিতে না পারি তাহলে আমাদের ফ্যাশন হাউজের অনেক বড় দুর্নাম হয়ে যাবে। যে করেই হোক একটা মন মত ডিজাইন রেডি করতেই হবে।

অনেক ভেবে চিন্তে একটা ডিজাইন রেডি করছিলাম তখনই মাথায় কারোর বলিষ্ঠ হাতের ছোঁয়া অনুভব করলাম।মুখ উঠিয়ে দেখলাম ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।ভাইয়া আমায় দেখে বললো,
ভাইয়া: কিরে নিদ্রা খেতে যাবি না?
নিদ্রা: আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি…

আমার কথা শুনে ভাইয়া আর কথা বললো না।মলিন মুখে এগিয়ে গেলো বেরিয়ে যাওযার উদ্দেশ্যে।হঠাৎ ভাইয়া কে বললাম,
নিদ্রা: ভাইয়া নিভ্র ভাইয়ের কোনো খোঁজ পেলে?

এমন একটা প্রশ্ন বোনের মুখ থেকে শুনবে সেটা শুভ্র কখনোই আশা করেনি। নিদ্রার এরকম মলিন কণ্ঠ আগে কখনো শোনা হয়নি। নিদ্রার গলাই বুঝিয়ে দিচ্ছে ও কতটা অপেক্ষায় মানুষটার জন্য দিন গুনছে।
শুভ্র: নিভ্রর কথা এত মনে পড়লে ওকে সব ছেড়ে যেতে কেন বাধ্য করেছিলি ?

আমি ভাইয়ার কথায় মলিন হেসে বললাম,
নিদ্রা: মানুষের জীবন একেবারেই অনিশ্চিত।কখন কাকে কোথায় এনে দাঁড় করায় সেটা কেউ বলতে পারবে না।ধরে নাও আমার সঙ্গেও তাই হয়েছে।

আজও নিদ্রা আবারও কথা ঘুরিয়ে দিলো। আজও নিভ্র আর নিদ্রার মাঝে ঘটে যাওয়া সেই ঝামেলা অব্যক্ত রইলো। নিদ্রাও বললো না আর নিভ্রর তো দেখাই মিলছে না। শুভ্র কিছু না বলে নিচে চলে এলো।আজকাল খালি মনে হয় নিজের আশেপাশের সবাই বদলে গেছে।

সারারাত জেগে ডিজাইন করার পর ভোরের দিকে ঘুমানোর কারণে অফিস পৌঁছতে যে এত দেরি হয়ে যাবে সেটা জানা থাকলে কখনোই ঘুমোতাম না।এখন লও ঠেলা। পৌঁছতে পৌঁছতে বোধ হয় ক্লায়েন্টই চলে যাবে। কোম্পানির সুনাম হয়তো আর ধরেই রাখতে পারব না…. আপনমনে বিড়বিড় করতে করতেই অফিসে বসের কেবিনে ঢুকলাম। বসের সামনে একজন ভদ্রলোক বসের দিকে ফিরে বসে আছেন।হয়তো উনিই ক্লায়েন্ট। যাক ক্লায়েন্ট চলে যান নী।এখন ভালোয় ভালোয় ক্লায়েন্টের ডিজাইন পছন্দ হয়ে গেলেই হলো।

আমায় দেখে এমডি স্যার বললেন,
এমডি: যাক তুমি অবশেষে এলে নিদ্রা।নাহলে নীরহান ফ্যাশন হাটের ওনার মিস্টার মেহেরহান হোসেন নিভ্র তো চলেই যেতেন।
আমি ততক্ষণে বসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলাম কিন্তু বসের কথা কানে যেতেই আমি অবিশ্বাস্য চোখে সামনে বসা মানুষটার দিকে তাকালাম।

নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।বারবার মনে হচ্ছে চোখে ভুল দেখছি। হাত দিয়ে ডলে চোখ আবারও পরখ করে নিলাম। নাহ সামনে যে আছে সে আসলেই আমার সামনে আছে আর মানুষটা হলো সেই মানুষ যার অপেক্ষায় এতদিন প্রহর গুনেছি।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here