তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -০৪

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
৪.

ছাদ সেজে উঠেছে হলুদ রঙের বাহারি ফুল দিয়ে।ছাদের এক পাশে বর আর কনের হলুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রকান্ড স্টেজ।যে কেউ দেখলেই বলবে যে বিয়ের অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিল সে নির্ঘাত সৌখিন মানুষ কারণ প্যান্ডেলের আনাচে কানাচে সৌখিনতার ছোঁয়া।

ছাদে জড়ো হয়েছে নাহলেও হাতে গোনা শ দুয়েক মানুষ। তারা সকলেই একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত।স্টেজে ভাইয়া আর নীলা আপু কে বসানো হয়েছে।আপু হলুদের জন্য একটা ইয়েলো গোল্ডেন কাজের লেহেঙ্গা পড়েছে আর ভাইয়া হালকা লাল সুতোর কাজের মধ্যে হলুদ পাঞ্জাবি।দুজনের হলুদের জামা কাপড় আমার নিজের ডিজাইন করা।আমি জাহাঙ্গীর নগরে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়ছি বিধায় একটু আধটু ডিজাইনিং আমি করি আর সেই ডিজাইনই একদিন নীলা আপুর চোখে পড়ে আর আমার উপর দায়িত্ব এসে পরে তাদের দুজনের বিয়ের অনুষ্ঠানের সব ড্রেস আমি রেডী করবো।

এতজন মানুষের মাঝে হুট করে আমি হাজির হওয়াতে ছাদের প্রায় অর্ধেক মানুষই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ভাব যেন কোনো ভুত দেখেছে।ওদের এরকম চাহনি দেখে আমি ভয়ার্ত চোখে নিজের দিকে একবার তাকালাম।কই নাহ ঠিকই তো আছে তাহলে আমার দিকে এভাবে তাকানোর মানে কি।আমি সবার দিকে চোখ গরম করে তাকালাম।সাথে সাথে সকলে নিজের কাজে মন দিল।

আমি শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে আগাচ্ছি তখনই আমার শাড়ির কুচিতে একটা ছেলের পা পড়লো।আমি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালাম তারপর বললাম,
নিদ্রা: আমার শাড়ীর কূচিতে পারা দেওয়া তোর অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে তাইনা নিরব?

নিরব আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে বললো,
নিরব: তোর মত এত সুন্দরীর শাড়ি যদি আমার পদতলে পরে তাহলে আমি ধন্য।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,
নিদ্রা: ফ্লার্ট করছিস?
আমার কথা শুনে নীরব চোখ দুটো বড় বড় করে ভয় পাওয়ার নাটক করে নিজের দুই গালে হাত ছুঁইয়ে বললো,
নিরব: তওবা তওবা কি বলছিস এসব? আমি আর ফ্লার্ট? ফ্লার্ট কি সেটা তো জানিই না।
নিদ্রা: নাটক করিস না। সর সামনে থেকে। অভ্র আর তন্দ্রা কই রে? দুটোতে আবার প্রেমালাপ করছে তাইনা?
নিরব: আর বলিস না এই দুজনের গুটারগু শেষই হয়না।দুটোতে মিলে সারাদিন যে কি এমন কথা বলে আল্লাহ জানে।দুজনে আবার গেছে ছাদের কোনায়।ওখানে বসে দুটো গুটারগু করছে।

নীরবের কথায় আমি রেগে বোম।এইদিকে আমি নিভ্র ভাইয়ের পেরা খেতে খেতে বাঁচি না আর এরা প্রেম করে।এদের প্রেম ছুটাইতেছি।আমি সাথে সাথে ছাদের কোনায় এগিয়ে গেলাম।আমার পিছন পিছন নিরবও এলো।আমি গিয়ে তন্দ্রা আর অভ্র দুটোর কান টেনে ধরলাম।দুই প্রেমিক প্রেমিকা একসঙ্গে আঃ করে উঠলো।আমি দাত মুখ খিঁচিয়ে বললাম,
নিদ্রা: আমি এইদিকে ক্ষণে ক্ষণে নিভ্র ভাইয়ের দৌড়ানি খাই আর তোরা প্রেম করিস। দাড়া প্রেম করার অপরাধে তোদের জেলে দিবো। শালা আমার বোন কি করে এত লুচ্চা হলো আল্লাহ জানে।এই অভ্রর সঙ্গে থেকে থেকেই লুচ্চা হয়েছে।

অভ্র নিজের কান ছাড়াতে বলে,
অভ্র: আমারে লুইচ্ছা না বইলা আমার ভাইরে ধর।ওই দেখ আমার ভাই ছাদের আরেক কোনায় দাড়ায় ওই নিজের খালাতো বোন নিরার লগে ইটিশ পিটিস করতেছে।আমি তো আমার প্রেমিকার লগে করতেছিলাম কিন্তু নিরা তো ওর প্রেমিকা না।তাহলে ও কেন কথা বলবে নিরার সাথে?

অভ্রর কথা শুনে আমার চোখ যায় ছাদের আরেক কোনায়।দেখলাম নিভ্র ভাই নিরা আপুর সঙ্গে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে। এমনিতে নিরা আপু কে আমার বেশ পছন্দ হলেও নিভ্র ভাইয়ের সঙ্গে আপুর এত মেলামেশা আমার ভালো লাগেনা।দুজন কে একসঙ্গে দেখলেই আমার রাগ উঠে।আর সেই রাগ বাড়িয়ে দিয়ে আমার রাগের আগুনে আরো ঘৃতাহুতি দিল অভ্র,
অভ্র: কি হলো? এখন কিছু বলোস না কেন? তখন তো বেশ বলছিলি যে আমরা সারাদিন জোড়া শালিকের মত প্রেম করি।এখন তোর পেয়ারের নিভ্র ভাই কে দেখে কি বলতি বন্ধ?

অভ্রর কথায় কোনো উত্তর দিলাম না। নিভ্র ভাই যদি নিরা আপুর সঙ্গে এভাবে নিরবে নিভৃতে কথা বলে খুশি হন তাহলে তাই সই।আমি আর তার কাজে বাঁধা দিবো না কারণ উনাকে কোনকিছুতে বাঁধা দেওয়ার অধিকার আমার নেই।আমি অভ্রর কথায় কিছু না বলে শাড়ির কুচি উচু করে ধীর পায়ে হেটে স্টেজের কাছে চলে এলাম।স্টেজের সামনে থাকা চেয়ারে বসে পড়লাম।আমি একেবারে ভাইয়ার মুখোমুখি বসলাম।ভাইয়া আর আমার হবু ভাবীকে একসঙ্গে এত খুশি দেখে মন আপনিতেই ভালো হয়ে গেলো।

দশ মিনিট করতে করতে অনুষ্ঠান শুরু হলো আধা ঘণ্টা পরে।সবার আগে মাই হলুদ লাগালো ভাইয়া আর নীলা আপুকে।তারপর আমি আর নিরব এগিয়ে গেলাম হলুদ লাগাতে।নিদ্রা কে নীরবের সঙ্গে হলুদ লাগাতে দেখে নিভ্র রাগে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।নিদ্রা কে নীরবের কাছাকাছি তার সহ্য হয়না সেখানে নিদ্রা নীরবের সঙ্গে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে।

হলুদ লাগানো শেষে আমি আর নীরব নিচে নেমে এলাম।একে একে সকলে হলুদ লাগালো ভাইয়াকে এমন কি নিভ্র ভাইয়াও নিরা আপু কে নিয়ে হলুদ লাগালো।হলুদ লাগিয়ে নিভ্র ভাইয়া আবার নিরা আপু কে নিয়ে সেই পূর্বের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন।আমি আর এবার উনার দিকে চোখ দিলাম না।

আমি তখন চেয়ারে বসে ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। হঠাৎ আমার গালে কেউ একটু হলুদ লাগিয়ে দিল।আমি চোখ তুলতেই দেখলাম নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি হাসছে।আমি লাফিয়ে উঠে ওর পিছনে দৌড় দিলাম ফোনটা রেখেই।এত বড় সাহস আমার গালে হলুদ লাগিয়েছে।আমি তো একে হলুদ স্নান করিয়েই ছাড়বো নাহলে আমিও জান্নাতুল তিরানা নিদ্রা নই।

আমি নীরবের পিছনে দৌড়তে একসময় ওকে হাতের নাগালে পেয়েও যাই কিন্তু যেই না ওকে ধরতে যাবো ওমনিই চেয়ারে হোচট খেয়ে পড়ে যেতে নেই।আমি ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলেছি।ভয়ের কারণে এখনো চোখ খুলতে পারছিনা।কিছুক্ষণ পরও যখন মনে হলো আমার হাড্ডি এখনো আস্ত আছে তখন আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।না আমি বেচেঁ আছি আর আমাকে নিরব ধরে ফেলেছে কিন্তু আমাদের এভাবে রোমান্টিক পোজে থাকতে দেখে অনুষ্ঠানের সকলে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।

সাথে সাথে নিজের আর নীরবের দিকে তাকালাম।আমরা একেবারেই বেকায়দায় পড়েছি।নিরব আমাকে জাপটে ধরে আছে।ওর দুই হাত আমার পিঠে আর আমার দুই হাত ওর কাঁধে।আমি অপ্রস্তুত হয়ে ওকে ছেড়ে দাড়ালাম।আমার শাড়ি ঠিক করতে গিয়ে দেখলাম আমার পিঠে ভিজা ভিজা কিছু লাগছে।আমি তন্দ্রা কে ইসারা করলাম দেখতে।তন্দ্রা ইসারায় বললো আমার পিঠে নাকি হলুদ লেগেছে।

উফফ হলুদ লেগে গেলো।এখন আবার হলুদ পরিষ্কার করতে বাথরুমে যেতে হবে।কি আর করার আমি শাড়ি ধরে আস্তে আস্তে বাথরুমের দিকে পা চালালাম।বাথরুমে এসে শাড়ির কুচি ঠিক করে নিলাম তারপর কোনমতে হাত পিছনে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।কিন্তু নাহ হাত পিছনে যাচ্ছেই না।

ব্যর্থ হয়ে চেষ্টা ছেরে দিলাম।কিছুক্ষণ পর আবারো চেষ্টা করার জন্য সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকালাম কিন্তু পিছনে নিভ্র ভাইয়া কে দেখতেই আমার শরীরে হিম শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।আমি বরফের মত জমে আছি কারণ নিভ্র ভাইয়ার ঠোঁটে এক অদ্ভুত ভয়ংকর হাসি যা দেখে আমার মনে হচ্ছে এই হাসি আমার ধ্বংস ডেকে আনবে। নিভ্র ভাইয়া আমার ব্লাউজের ফিতা খুলতে খুলতে হাসিমুখে বললেন,
নিভ্র: তোর মনে অনেক আনন্দ লেগেছে তাইনা?

আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।ভাইয়া আমার ব্লাউজের ফিতা খুলে পানি দিয়ে ভালো করে জায়গাটা পরিষ্কার করে দিলো।আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।তাহলে বেচেঁ গেছি ভাইয়ার হাত থেকে।আমি সস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই আমার হাতে জ্বালা অনুভব করলাম।মনে হচ্ছে হাত যেন ভেঙে যাচ্ছে।আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি নিভ্র ভাই আমার হাত মুরে ধরেছেন।আমি তবুও চুপ করে রইলাম।আমি শুধু আমার ধৈর্যের প্রহর গুনছি।যখন ধৈর্য্য শেষ হয়ে যাবে তখন সব ধ্বংস হবে।চুপ থাকার মেয়ে আমি নই।সময় বুঝে বাঁশ দিবো।

ব্যাথায় আমার চোখ দিয়ে অশ্রু বের হচ্ছে।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কুটিল হাসি দিয়ে বললো,
নিভ্র: এই শেষবারের মত ওয়ারনিং দিচ্ছি।আর যেন তোকে নীরবের আশেপাশেও না দেখি।নাহলে আজ যেই কষ্ট দিয়েছি তৃতীয় বারে তা মরণ ফাঁদে পরিণত হবে বলে আমার ঘার ধরে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিলেন।অতঃপর মুখ নামিয়ে আমার ঘাড়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলেন।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here