তুই যে শুধুই আমার পর্ব ১৭+১৮

পর্ব ১৭+১৮
#তুই_যে_শুধুই_আমার [ ❤You are only mine❤ ]
#সিজন_2
#Part_17
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

এক বিশাল রুমের মধ্যে গাল ফুলিয়ে বসে আছে সায়রা। আরুশ গিয়েছে কিছু খাবার আনতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরুশ খাবার নিয়ে হাজির। কিন্তু সায়রা খেতে নারাজ। আরুশ জোর করে ওকে কিছুটা খায়িয়ে দে। খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে আরুশ সায়রার কাছে এসে বসে। তা দেখে সায়রা আরও সরে বসে। তাই আরুশও আরেকটু চেপে বসে। সায়রা আবার সরে বসে প্লাস আরুশও ওর সাথে আরেকটু চেপে বসে। এমন করতে করতে সায়রা একদম বিছানার কিনারে এসে পড়ে আর তা দেখে আরুশ একটা ক্লোস আপ স্মাইল থুক্কু ডেভিল স্মাইল দেয়। যা দেখে সায়রা প্রচন্ড রেগে যায়।

সায়রাঃ আপনারে এইখানে বসে ক্লোস আপ স্মাইল দিতে বলেছে নাকি কেউ। বাদুরের মত ক্লোস আপ স্মাইল দিয়ে দাঁত কেল্লাচ্ছেন কেন!!

আরুশঃ তুমি কি শপথ করেছ যে সব সময় আমার রোমেন্টিক মুডের ১৩ টা বাজাবে??

সায়রাঃ পারলে তহ আমি ৯৩ টা বাজাই।

আরুশঃ ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল।

সায়রাঃ হ্যাঁ জানি নতুন কিছু বলেন।

আরুশঃ 😒😒

হঠাৎ এই সায়রা গম্ভীর হয়ে গেল। চোখে মুখে গম্ভীরতার ছাঁপ স্পষ্ট।

সায়রাঃ এমনটা না করলে কি হতো না?? আজ শুধু আপনার জন্য আমি আমার বাবা-মাকে না জানিয়ে কোন কাজ করলাম!! কেন করলেন এমন আমার সাথে?? কেন!!

আরুশঃ আমি যা করেছি আমাদের ভালোর জন্যই করেছি।

সায়রাঃ কি ভালো হয়েছে এতে আমার?? হ্যাঁ কি ভালো হয়েছে?? আপনার জন্য আমার লাইফ পুড়ো এলোমেলো হয়ে গেল। কেন এমন করলেন?

আরুশঃ ভালবাসি বলে। তোমায় আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি #You_are_only_mine. আমি বাদে তুমি কাউরো না। তোমাকে নিজের করতেই আমি এত কিছু করেছি কেন না তুমি সোজা কথার মেয়ে না। তোমাকে নিজের করতে হলে একটু বাঁকা পথের সাহায্য তহ নিতেই হতো। আর এমনেও যে পথে কোন কিছু সহজেই পাওয়া যায় সেটা পেতে কোন মজা নেই বরং যেকোন জিনিসকে যদি ছিনিয়ে বা বাঁকা পথে অর্জন করা যায় সেই পথেই আসল মজা।

সায়রাঃ আপনার কি মনে হয় আমাকে বিয়ে করেই পেয়ে যাবেন!! নো নেভার!! আপনি আমায় কোন দিন পাবেন না। আপনাকে আমি কোন দিনও মেনে নিব না।

আরুশঃ তুমি মানো আর নাই মানো তুমি আমার। আর আমারই থাকবে। আর এই সত্য কেউ বদলাতে পারবে না। বাট হ্যাঁ নিজের অজান্তে অনেকটাই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায় তার জন্য সরি। সেদিন আমি ইচ্ছে করে ওইসব করেনি। রাগের মাথায় কিনা কি বলেছি করেছি আই ডোন্ট নো।

সায়রাঃ হাহ সরি!! কত সহজেই বলে দিলেন সরি। সরি বললেই সব শেষ তাই না।

আরুশঃ যা হয়েছে তা অনিচ্ছাকৃত। আমি মোটেও তোমায় ইচ্ছাকৃত ভাবে কষ্ট দিতে পারি না। খুব ভালবাসি যে তোমায়।

সায়রাঃ এইটাকে ভালবাসা না জেদ বলে।ভালবাসলে এমন করতে পারতেন না। ভালবাসা মানুষকে সততা শিখায় কোন ছলনা না।

আরুশঃ তুমি এইটা জিদ বলো আর যাই বলো এতে সত্যিটা বদলাবে না। আর আমি যা করেছি তা শুধু তোমায় পেতে। কেন না আমি তোমাকে হারাতে চাই নি। সব হারিয়ে যখন জীবন থেকে মোহ উঠে গিয়েছিল তখন আমি তোমায় পেয়েছি। তোমায় পেয়ে বাঁচতে শিখেছিলাম নতুন করে।
তাই আমার বেঁচে থাকতে তোমাকে আমার প্রয়োজন। তুমি আমার আর আজীবন আমারই থাকবে।

সায়রাঃ এইসব আপনার পাগলামো আর কিছুই না।

আরুশঃ যদি বলি এইটাই আমার পাগলামো ভালবাসা!!

সায়রাঃ এমন হয় না। আমি আপনার জিদ আর মোহ। যা একবার কেটে গেলে আমিও নাই হয়ে যাব।

আরুশঃ এইটা আমার ভালোবাসা নাকি মোহ তা একটু পরই বুঝতে পারবে। কাম উইথ মি।

এই বলে আরুশ সায়রাকে নিয়ে পাশের একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটা বেশ ছিপছাপ। ঘন অন্ধকার আবরণে ঘেরা। আরুশ সায়রাকে রুমের মাঝে দাড় করিয়ে দেয়। তারপর গিয়ে লাইট জ্বালায়। চারদিকে ছড়িয়ে যায় কৃত্রিম আলোর রশ্মি।
সায়রা এইবার চারদিক ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলো। আর যা দেখলো তাতে তার মুখ হা হয়ে গেল।
রুমের ডান দিকের দুইটা দেয়ালে ওর ছবি দিয়ে ভরা। তার মাঝে সায়রার অনেক বড় একটা ছবি টাংগানো।
সায়রা সামনে গিয়ে হাত বুলিয়ে ছবি গুলো দেখছে।সব ছবিতেই সায়রা একেক ভংগিতে দাড়িয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এইগুলা সব ওর অজান্তে তুলা। কিন্তু তাও ছবি গুলো দেখতে দারুন।
সায়রা সবচেয়ে অবাক হয় দেয়ালের মাঝে থাকা ওর বড় ছবিটা দেখে। একটি পার্কে বৃষ্টির মধ্যে কিছু ছেলেমেয়েদের সাথে সায়রা খেলছিল তখনই এই ছবিটা তুলা। মুখে লেগে আছে এক মনোমুগ্ধকর হাসি। এই ছবিটা আরও ১ বছর আগের। সায়রা অবাক হয়ে দেখছে এইসব। তারই অগোচরে এতটি ছবি তুলা হয়েছে আর সে বলতেই পারে না। সায়রা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকালে বলে।

আরুশঃ তোমায় প্রথম আমি এই পার্কেই দেখেছিলাম।
সেইদিন একটা মিটিং এর জন্য এই পার্কের বিপরীত পাশেই গিয়েছিলাম। মিটিং শেষে যখন বের হয় তখন বৃষ্টির জন্য আটকে যাই। ড্রাইভারও তখন আসে নি। আমি বাইরে বেশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একতো ও গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলান তার উপর এই বৃষ্টি রাগ যেন সপ্তম আসমানে উঠে যাচ্ছিল আমার।
হঠাৎই কোথ থেকে যেন চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসে। মনের মধ্যে এক কৌতহল জাগা শুরু করে।
শব্দের সন্ধানে নেমে পরি বৃষ্টিতে। হঠাৎ হার্ট টাও অদ্ভুত রকম ভাবে বিট করতে শুরু করেছে। যত পার্কের কাছে যাচ্ছিলাম তত আমার হার্ট বিট বাড়ছিল।
কিছুদূর যেতেই অনেক গুলো বাচ্চা দেখতে পেলাম। সবাই লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছে। তাদের মাঝে একজনকে দেখে হৃদয়ের গতি থেমে গিয়েছিল আমার। চোখের পলক পরছি না আমার।
বাচ্চাদের মাঝে একটি ওদের সাথেই তাল মিলিয়ে নাচছে, দুষ্টুমি করছে আর খিল খিল করে হাসছে। সাদা কামিজে মেয়েটাকে একদম স্নো হোয়াইট লাগছিল আমার কাছে। মেয়েটি আর কেউ না তুমি।
সেই প্রথম আমি কোন মেয়েকে এত নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। কেন জানি তোমার প্রতি আলাদা টান অনুভব করছিলাম। কখন যে ফোন বের করে তোমার ছবি তুলা শুরু করে দেই তা বুঝতে পারি না। ছবি গুলো তুলা শেষে যখন ছবি গুলো দেখছিলাম তখনই তুমি আমায় ফাঁকি দিয়ে কোথাও যেন চলে গেলে।
সেইদিনের পর থেকে তুমি আমার মন ও মস্তিষ্ককে এক আলাদা জায়গায়ই তৈরি করে নিয়েছিলে। চেয়েও আমি তোমায় ভুলতে পারছিলাম না।
দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে যায়।
আর তোমার প্রতি আমার আকুলতাও। নিজের অজান্তেই দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম তোমার উপর। এক আলাদা অনূভুতিই নাড়া দিচ্ছি আমার মধ্যে কিন্তু এই অনুভূতির নাম আমার জানা ছিল না।

সেইদিন তোমাদের ভারসিটিতেই আমার একটা কাজ ছিল। তাই সেখানে গিয়েছিলাম। কাজ শেষে যখন বের হচ্ছিলাম তখন কাউরো হাসির আওয়াজে পিছে তাকিয়ে তোমায় দেখে থমকে যাই৷ তুমি সারামাঠ জান্নাতের পিছনের দৌড়াচ্ছিলে আর হাসছিলে। সেই তোমায় দেখে আরেক দফা ভালো লাগা কাজ করে আমার মধ্যে। আমি বুঝতে পারি তোমাকে আমি ভালবাসতে শুরু করেছি।
সেই থেকেই তোমার সম্পর্কে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করা শুরু করি আর তোমায় ফলো করা শুরু করি। যত তোমার সম্পর্কে জানতাম ততই আমার তোমায় আপন করে নেওয়ার আকুলতা বৃদ্ধি পেত। এরই মধ্যে আমায় একটি কোর্সের জন্য ফোরেন যেতে হয়। কিন্তু তোমায় একা ছাড়তে মন চাইছিল না। তাই তোমার পিছে দুইজন বডিগার্ড লাগিয়ে দেই যাতে তুমি সেফ থাক। ফোরেনে গিয়েও তোমার সকল খোঁজ খবর রাখতাম। কোন ছেলেকে তোমার কাছে ঘেষতে দিতাম না। কিন্তু দিন যত যাচ্ছিল তোমার প্রতি আমার ভালবাসা বৃদ্ধিই পাচ্ছিল। সাথে তোমাকে হারানোর ভয় ও তাই আমি এইটা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে দেশে ফিরেই আমি তোমায় নিজের করে নিব।
যখন জানতে পারি তোমার ড্রিম একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়া তখনই আমি তোমায় আমার ফ্যাশন হাউস থেকে অফার করি। আর তুমি রাজি ও হয়ে যাও। তখনই তোমায় নিজের মাঝে বন্ধি করার জন্য সেই কয়েকটা কাগজে সাইন করিয়ে নেই। যাতে দেশে এসে তোমায় নিজের করতে কোন বাঁধা না থাকে। এত দিন তোমাকে একটু জ্বালানোর জন্য ওইসব করতাম। কিন্তু শেষের দিকে যা হয়েছে তা আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে করি নি।
অনেক বেশি ভালবাসি তোমায় অনেক বেশি৷ যা করেছি শুধু তোমায় নিজের করার জন্য। এখনোকি এইটা বলবে এইটা আমার ভালবাসা না অন্য কিছু?? ছল ছল চোখে।


সায়রা বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। তার অগচরেই এত কিছু হয়ে আর সে বলতেও পারলো না। তাকে যে কেউ এতটা ভালবাসতে তা সায়রার ধারণার বাইরে। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না।

আরুশঃ একটা আবদার করি রাখবে??

আরুশের এমন করুন কন্ঠে সায়রা অবাক হয়ে আরুশের দিকে তাকায়। আরুশকে সে কখনো এত করুন কন্ঠে কথা বলতে দেখে নেই। সে কিছু না ভেবে মাথা হেলায় যার মানে হ্যাঁ সে করবে।

আরুশঃ তোমার কোলে একটু ঘুম পারিয়ে দিবে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। বলেই আরুশ পাশে থাকা বেডে বসে পড়ে
সায়রা কিছু না বলে চুপচাপ ওর পাশে গিয়ে বসে। সায়রা বসতেই আরুশ ওর কোমড় জরিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে৷ প্রথম দিকে সায়রার একটু আনইজি ফিল করলেও পরে নিজেকে সামলিয়ে নেয়। আরুশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

আরুশঃ জানো আমার মাও না আমায় এইভাবেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়াতো।

সায়রাঃ তা এখন আপনার মা কই??

আরুশঃ ৫ বছর আগেই মা বাবা একটা প্লেন বিস্ফোরণে মারা যায়।

সায়রাঃ আব আ’ম সরি। আমি জানতাম না।

আরুশঃ জানো মা না আমায় অনেক ভালবাসতো। চোখের মনি ছিলাম আমি। অনেক হাসি খুশি মানুষ ছিল সে। ওই দেখ আমার মা কে।
বলে অন্যপাশের দেয়ালে ইশারা করলো। সায়রা সেখানে তাকাতেই সেই পুরো এক দেয়াল জুড়ে একজন মহিলা আর পুরুষের ছবি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এইটা আরুশের বাবা মা৷ কয়েকটা ছবিতে আরুশও আছে।

আরুশঃ দেখ হাসিটা একদম তোমার মত না। জানো তোমার এই হাসিটাতে আমি সবচেয়ে বেশি দূর্বল। কেন না তোমার হাসিটা অবিকল্প আমার মায়ের হাসির মত। তোমার হাসিটা যখন দেখি তখন আমার মায়ের কথা মনে পরে।
আচ্ছা একটা কথা দিবে আমায়। কখনো এই হাসিকে হারিয়ে যেতে দিও প্লিজ।

সায়রা কি বলবে বুঝতে পারছে। কিন্তু এতটুকু ঠিকই বুঝেছে যে, আরুশ অনেক কষ্টে আছে কিন্তু তা কাউরো সামনে প্রকাশ করে না। ওর যে কাউকে বড্ড প্রয়োজন তা সায়রা হারে হারে বুঝতে পারছে।



🍂

দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে যায়। এই ১ মাসে অনেক কিছু বদলে গেছে। সায়রা এখন আরুশকে মেনে নিয়েছে সাথে তাদের সম্পর্কও। সায়রা আস্তে আস্তে আরুশকে ভালবাসতে শুরু করেছে। করেছে বলতে ভুল হবে ভালবেসে ফেলেছে।
সায়রার প্রতি আরুশের পাগলামো, পজিসেভনেস, কেয়ারনেস, ভালবাসা সবই সায়রাকে বাধ্য করেছে আরুশকে ভালবাসতে। সায়রা নিজের বাসাতেই থাকে কেন না সায়রার বাবা মা এখনো এই সম্পর্কে কিছু জানে না বলে। সায়রার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ হলেই সায়রা আরুশ আর তার সম্পর্কে তাদের জানাবে। ভালোই যাচ্ছে তাদের দিন। কিন্তু তা আর বেশি দিন টিকলো না।

সেইদিন🍂

সায়রা আর জান্নাত কথা বলতে বলতে সায়রাদের বাসায় ঢুকছিল।

সায়রাঃ কিরে তুই তহ দেখি এখন বেশির ভাগ সময়ই ওই আয়ান ভাইয়ার সাথে কাটাস। তলে তলে কিসব চলছে শুনি!! দুষ্টুমি সুরে।

জান্নাতঃ কি চলবে হুহ!!

সায়রাঃ বুঝি বুঝি।।

জান্নাতঃ চকলেট বুঝোস।
এই বলে হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকে পড়লো তখন ইমা বেগম পিছন থেকে বলে উঠে।

ইমা বেগমঃ সায়রা শুন।

সায়রাঃ হ্যাঁ মা বলো।

ইমা বেগমঃ কাল কোথাও বের হোস না ঠিক আছে।

সায়রাঃ কেন??

ইমা বেগমঃ কাল আমরা এয়ারপোর্টে যাচ্ছি একজনকে পিক করতে তাই।

সায়রাঃ কেউ কি আসছে??

ইমা বেগমঃ হ্যাঁ।

সায়রাঃ কে??

ইমা বেগমঃ রিসাব।।

#Part_18
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

সেইদিন🍂
সায়রা আর জান্নাত কথা বলতে বলতে সায়রাদের বাসায় ঢুকছিল।

সায়রাঃ কিরে তুই তহ দেখি এখন বেশির ভাগ সময়ই ওই আয়ান ভাইয়ার সাথে কাটাস। তলে তলে কিসব চলছে শুনি!! দুষ্টুমি সুরে।

জান্নাতঃ কি চলবে হুহ!!

সায়রাঃ বুঝি বুঝি।।

জান্নাতঃ চকলেট বুঝোস।
এই বলে হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকে পড়লো তখন ইমা বেগম পিছন থেকে বলে উঠে।

ইমা বেগমঃ সায়রা শুন।

সায়রাঃ হ্যাঁ মা বলো।

ইমা বেগমঃ কাল কোথাও বের হোস না ঠিক আছে।

সায়রাঃ কেন??

ইমা বেগমঃ কাল আমরা এয়ারপোর্টে যাচ্ছি একজনকে পিক করতে তাই।

সায়রাঃ কেউ কি আসছে??

ইমা বেগমঃ হ্যাঁ।

সায়রাঃ কে??

ইমা বেগমঃ রিসাব। রিসাব আসছে কাল। ওকেই রিসিভ করতে যাব আমরা। হাসি মুখে।

সায়রাঃ মা আমি যাব না।

ইমা বেগমঃ আমি তোমার কোন কথা শুনছি না ব্যাস। তুমি যাবে মানে যাবে।
এই বলে ইমা বেগম হনহনিয়ে চলে গেলেন। আর সায়রা রাগে ফুসতে ফুসতে রুমে চলে যায়। পিছে পিছে জান্নাতও। সায়রা খাটের উপর নিজের ব্যাগ আর মোবাইল ছুড়ে মারে। কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।

জান্নাতঃ তুই এমন করছিস কেন?? আর এই রিসাবই বা কে??

সায়রা এইবার চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে।

সায়রাঃ রিসাবই সেই ছেলে যার সাথে মা আমার বিয়ে ঠিক করেছিল।

জান্নাতঃ হোয়াট!!!

সায়রাঃ হুম

জান্নাতঃ ওই গুই সাপ থুক্কু পিসাব থুক্কু রিসাব কেন দেশে আসছে??

সায়রাঃ আমায় বিয়ে করতে আর কি! আমায় তহ বিয়ে করার জন্য একদম বেকুল হয়ে আছে। কিন্তু আমিই কখনো পাত্তা দেয় নি। বলেছিলাম আমার টাইম দরকার। সে দিয়েও ছিল আর বলেছিল ৫ মাস পর ও দেশে আসবে তখন সব একদম পাকা করে যাবে। কিন্তু ওর যে এই মাসেই আসার কথা ছিল তা আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।

জান্নাতঃ এখন!! তুই তহ বিবাহিত। আঙ্কেল আন্টিকে কিভাবে বলবি তোর আর ভাইয়ার বিয়ের কথা??

সায়রাঃ ওইটা বাদ দে। আরুশকে কিভাবে বলবো তা ভাব! আরুশ যদি একবার জানে যে ওই পিসাব থুক্কু রিসাব দেশে আসছে আর ওকে রিসিভ করতে আমি যাচ্ছি তাহলে তহ কেলেঙ্কারি লেগে যাবে। তুই তহ জানোসই ওই আমার জন্য কতটা পজেসিভ তার উপর যে রাগী😰। আমারে তহ জিন্দা কবর দিয়া দিব। কি করুম বল এখন।

জান্নাতঃ ওই পিসাব থুক্কু কি বলি😑। ওই রিসাবের কথা বাদ দে। ওই গেলে বস্তিতে যাক তাতে আমাদের কি?? তুই শুধু এখন এইটা ভাব আঙ্কেল আন্টি রে কিভাবে বলবি??

সায়রাঃ চকলেট আছে তোর কাছে??

জান্নাতঃ হ্যাঁ কেন?

সায়রাঃ তাইলে এখন দে। আপাতত আমার চকলেট খাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।

এই বলে গালে হাত দিয়ে ধাপ করে সোফায় বসে পড়ে।

🍁
পরেরদিন,,

এয়ারপোর্টের সামনে সায়রা মুখ বাংলা পেঁচার মত করে দাড়িয়ে আছে আর চকলেট খাচ্ছে। সায়রা তহ ভিতরে ভিতরে টেনশনে মরে যাচ্ছে। আরুশ যদি একবার জানতে পারে যে ওই এই পিসাব থুক্কু(বার বার ভুল বলি কেন বুঝি না😑) রিসাবকে পিক করতে আসছে ওর খবর আছে।
সায়রা যখন এইসব চিন্তা করছিল তখন সায়রার পাশে থাকা ইমা বেগম চেঁচিয়ে উঠে।

ইমা বেগমঃ এই সায়রা দেখ দেখ রিসাব এসে গেছে।

ইমা বেগমের কথায় সায়রার ধ্যান ভাঙে এবং সে সামনে তাকিয়ে দেখে খানিকটা উঁচা লম্বা ছেলে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। গাঁয়ের রং শ্যামলা। দেখতে আছে ঠিকঠাক। কিন্তু তাতে সায়রার কি??

[[ রিসাবের সম্পর্কে সবাইকে কিছুটা জানিয়ে রাখি। রিসাব ও তার বাবা মা দুবাইতেই থাকে। রিসাবের বয়স যখন ১০ বছর তখন ওরা দুবাইতে শিফট হয়ে যায়।
রিসাবের বাবা মা কিছু কাজের জন্য আসতে পারে নি। তাই রিসাব একাই এসেছে আর ওই সব কথা পাঁকা করবে। পরবর্তীতে সকল ফাংশনের ডেট ফিক্সড হলে রিসাবের বাবা মাও এসে পড়বে। এমন কথা হয়েছে দুই পরিবাবের মধ্যে। যেহেতু রিসাব একা এসেছে তাই ওর থাকা খাওয়ার চিন্তা করে ইমা বেগম ওকে নিজের বাসায় থাকতে বলেছে। যেহেতু রিসাবের সাথে সায়রার বিয়ে হচ্ছে তাই রিসাবকে তাদের সাথে রাখতে কাউরো কোন আপত্তি নেই। ]]

এইদিকে।
সায়রা আপন মনে চকলেট খেয়েই চলেছে। রিসাব সামনে এসে আমিনুল সাহেব আর ইমা বেগমের সাথে কুশল বিনিময় করে সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে।

রিসাবঃ হায় সায়রু!!

সায়রাঃ মায় নেমটা হচ্ছে সায়রা। নোট সায়রু পায়রু😕।

রিসাবঃ ওকে। তা সায়রা কেমন আছো??

সায়রাঃ দেখতে পারছেন না কেমন আছি নাকি লুলা আপনি?? অসুস্থ থাকলে কি আর এইখানে আরামসে দাড়িয়ে চকলেট খেতাম!!

রিসাবঃ আব তা না।।😅

ইমা বেগমঃ আহা কি শুরু করেছিস। ভদ্রতা সভ্যতা সব ভুলে গেছিস নাকি??

সায়রাঃ 😕😕

রিসাবঃ ইটস ওকে আন্টি। বাচ্চা মানুষ দুই একটু এমন করেই।

সায়রাঃ তাইলে কোলে নেন👶!!

সায়রার এমন কথায় রিসাব বিষম খেল। কোন মত নিজেকে সামলিয়ে অবাক চোখে বলে।

রিসাবঃ মানে!!

সায়রাঃ আমি যখন বাচ্চা তাইলে আমায় কোলে নেন!! বাচ্চা মানুষদের তহ কোলে নিতে হয়🐸

রিসাবঃ হাহা ভেরি ফানি।😅 জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে।

আমিনুল সাহেবঃ সায়রা!! একটু বেশি করছো। রিসাব বাবা তুমি কিছু মনে করো না ঠিক আছে ও একটু এমন এই। আসো গাড়িতে আসো।

সায়রাঃ হুহ!!

🍁

দুপুরের কড়া রোদের পরে বিকেলের হাল্কা মিষ্টি রোদ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। পরন্ত বিকেলে এক হাল্কা হাওয়া বয়ে চলেছে। পাখির কিচিরমিচিরের মধুর ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। একদম মন ভালো করার মত পরিবেশ। কিন্তু এইসব যেন একজনের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। সে বরং আর কেউ নও আমাদের চকলেট পাগলি সায়রার।
ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে আছে সায়রা আর রিসাব। সায়রা বেশ বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়েই দাড়িয়ে আছে। আজ যেন সায়রা সব কিছুতেই বিরক্তিবোধ করছে। আর তার সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ হচ্ছে তার পাশে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি।
রিসাব সেই কখন থেকে বকবক করেই চলেছে। মাথাটা একদম ধরিয়ে দিয়েছে। মানুষ এত বাঁচাল কেমনে হয় বুঝে না!! অবশ্য সায়রার কথা আলাদা। ও বাঁচাল না তবে অনেক বেশি কথা বলে।
( এক কথায় একে বাঁচালই বলে😒😑 কিন্তু নায়কাকে তহ আর এইসব বলা যায় না তাই না। নাইলে তহ ওর মান সম্মান সব শেষ😓)

রিসাবঃ আচ্ছা তুমি এত চুপচাপ কেন??

সায়রাঃ আমি যে পিপড়া তাই🐜।।

রিসাবঃ হাহা ফানি!!

সায়রাঃ আমাকে কি হিরো আলম লাগছে নাকি যে ফানি বলছেন??

রিসাবঃ হিরো আলমকে??

সায়রাঃ ও ভাই মারো মুজে মারো। ( ওই সবাই কিন্তু সত্যি মারতে আসবেন না😒। ৩ হাত দূরে যান সবাই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সু সু কাছে আসবেন না🚯🚯)

রিসাবঃ আব কি!!

সায়রাঃ না পিসাব থুক্কু রিসাব ভাই কিছু না।

রিসাবঃ আমি তোমার ভাই কেমনে হই হ্যাঁ?? নিজের হবু বরকে কেউ ভাই বলে??

সায়রাঃ তোরে যদি ভাই না বলি আরুশ আমায় চকলেটের মত কাঁচা চিবিয়ে গিলে ফেলব। আরুশ যদি এইসবের কিছুই জানতে পারে তাহলে তোকে ডিটারজেন্ট পাউডার ছাড়া
শিলপাটায় পিশবো। বিরবির করে।

রিসাবঃ কিছু বললে??

সায়রাঃ আল্লাহ!! আপনি দেখি কানে বেশি শুনেন দেখছি। তা তহ হওয়ারই কথা। আপনার যা বয়স। কিছুদিনের মধ্যেই সিনিয়র সিটিজেনের নামের তালিকায় নাম লিখাবেন।

রিসাবঃ হোয়াট!! লাইক সিরিয়াসলি!!

সায়রাঃ হ্যাঁ হ্যাঁ। মিথ্যা বলছি নাকি। আপনারাই তহ এই দেশের অতীত এর আদিবাসী। আপনারাই তহ কিছুদিনের মধ্যে দেশকে বিদায় দিয়ে চলে যাবেন।

রিসাবঃ আমি বয়স মাত্র ২৯ বছর। আর তুমি আমায় এই বয়সেই সিনিয়র সিটিজেন বানাচ্ছো??

সায়রাঃ আচ্ছা তাহলে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করি। তার জবাব গুলো শুধু হ্যাঁ বা না তে দিবেন ওকে।

রিসাবঃ ওকে।

সায়রাঃ দেখেন আমার বয়স ২১ বছর। আর আপনার ২৯ মানে আপনি আমার থেকে প্রায় ৮ বছর আগে এই পৃথিবীতে আসছেন। রাইট।

রিসাবঃ হ্যাঁ

সায়রাঃ তার মানে আমার হওয়ার ৮ বছর আগে থেকেই এই দুনিয়া দেখছেন। আমার না টেস্ট করা চকলেট গুলিও আপনি খেয়েছেন রাইট।

রিসাবঃ হ্যাঁ।

সায়রাঃ তাহলে এইটাও জানেন যে কেডবেরির বহুত আগে লজেন্স এসেছিল। আর আপনারা তখন কেডবেরি খেতেনই না। বেশির ভাগ লজেন্সই খেতেন। আপনার পারদাদাও লজেন্সই খেত। তার পারদাদারও পারদাদার মামাতো ভাইয়ের চাচাতো ভাইয়ের দূর সম্পর্কের ফুপাতো ভাইয়ের পোলাপানও এই লজেন্সই খেত। তাই না।

রিসাবঃ আব,,হ্যাঁ। কিছুটা কানফিউসড হয়ে।

সায়রাঃ লজেন্স তাহলে পারদাদার আর কেডবেরি তার নাতিপুতি। তার মানে লজেন্স সিনিয়র সিটিজেন আর কেডবেরি হলো জুনিয়র সিটিজেন।
তাইলে ওই হিসাবে আপনি আপনার পারদাদার জমানার মানে সিনিয়র সিটিজেন আর আমি এই জমানার মানে জুনিয়র সিটিজেন। তাহলে হলেন না আপনি সিনিয়র সিটিজেন।

রিসাবঃ আব,, আম,, হ্যাঁ।😵 পুরা কানফিউসড হয়ে।

সায়রাঃ তহ ব্যাস প্রমাণ হয়ে গেল আপনি সিনিয়র সিটিজেন। তাই এখন থেকে নিজেকে সিনিয়র সিটিজেনই বলবেন। বুঝলেন!! ইউ সুড বি প্রাউড আপনি একজন দেশে অকেজো সিনিয়র সিটিজেন।

রিসাবঃ আম,, আব,,

সায়রাঃ থাক থাক আর বলতে হবে না। আম,,,

সায়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠে। সায়রা বেশ বিরক্তির সহকারে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে আরুশের ফোন। সায়রা তহ রীতিমতো কাপাকাপি শুরু করে দেয়। সায়রা কাপা কাপা হাতে ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই এক হুংকার ওর কানে ভেসে আসে।

— এখনই তোমায় আমি আমার বাসায় ২০ মিনিটের মধ্যে দেখতে চাই। কাম হিয়ার রাইট নাও।। এন্ড নো মোর ওয়ার্ডস।

এই বলে টুট করে ফোনটি রেখে দেয়। সায়রা এইবার তারাহুরো করে ছাদ থেকে নেমে আসে আর রওনা দেয় আরুশের বাসার দিকে।
আর এইদিকে রিসাব হাবলার মত দাড়িয়ে থাকে।


🍁

আরুশের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে সায়রা। সকল টাইপের দোয়া দুরুদ পড়ে তারপর আল্লাহ এর নাম নিয়ে আরুশের বাসার ভিতর ঢুকে। বাসায় ঢুকে চারদিক নিস্তব্ধ। সায়রা তহ এইবার ভয়ে শেষ।

সায়রাঃ এতনা সান্নাটা কিউ হে ভাই থুক্কু পাঠকগন।
সায়রা আরুশকে সারা বাড়ি খুঁজে না পেয়ে ওর রুমে যায়। যেই না রুমে যেতে নিবে কেউ ওকে হেচকা টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে আসে আর সোফায় ফেলে ওর হাত দুটো চেপে ধরে। সায়রা সামনে তাকিয়ে ভয়ে একদম জমে যায়। আর পিন পিন করে বলে।

সায়রাঃ আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া থুক্কু সায়ুপাখি। আবতো তু গেয়া।



#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here