তুই শুধু আমার ভালোবাসা পর্ব -২৭+২৮

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_২৭

রমা বেগম নিচে এসে টেবিলে খাবার দেয়।
বর্ষা আর বর্ষণ দুজনেই খাবার টেবিলে বসেছে।
নাস্তা করে বর্ষণ বর্ষাকে নিয়ে বেরিয়ে পরে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। বর্ষাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ চলে
যায়। কিন্তু বর্ষাকে গতকালের ঘটনা সম্পর্কে কিছু
জিজ্ঞেস করেনি সে।আসলে বর্ষণ চায়নি এই
মুহূর্তে বর্ষাকে এসব বলতে।

বর্ষা ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে
তখন পেছন থেকে কেউ ডেকে ওঠে এই বর্ষু
দাঁড়া। বর্ষা ঘুরে দাঁড়ায়। দেখে শাফিন ডাকছে এভাবে পেছন থেকে। শাফিন এসে বর্ষার পাশে দাঁড়াতেই
বর্ষা বলে ভাইয়া আপনি এভাবে ডাকলেন আমায়?

শাফিনঃ হুম কেনো বর্ষু বলে ডাকলে তোর খারাপ
লাগবে বুঝি?

বর্ষাঃ আরে না না ভাইয়া তা কেনো? আসলে আমাকে এই নামে কেউ কখনও ডাকেনি তো তাই। আপনি বর্ষু বলেই ডাকতে পারেন আমায়, আমি কিছু মনে করবোনা।

শাফিনঃ কিন্তু আমি মনে করবো।

বর্ষাঃ মানে! কি বলতে চাইছেন ভাইয়া?

শাফিনঃ হুম তুই এখনও আমাকে তোর পরিবারের কেউ বলে মেনে নিতে পারিসনি তাইনা? আমি জানি, তুই যদি মানতে পারতিস তাহলে আমায় এখনো আপনি আপনি করে বলতিস না। হয় তুই বলে সম্বোধন করতিস না হলে তুমি। এই
দেখ না আমি কিন্তু ঠিকই তোকে তুই বলেই সম্বোধন করছি।

বর্ষাঃ তেমনটা নয় ভাইয়া।এর আগে কখনো এভাবে কথা হয়নি তাই আপনি করে বলেছি, তবে ভাইয়া আমি তুই করে বলতে পারবোনা তুমি করে বলবো তোমায়।

শাফিনঃ ঠিক আছে তাই বলিস।তবুও আপনি থেকে রক্ষা কর আমায়।
এবার চল যেতে যেতে কথা বলি।

বর্ষাঃ কোথায় যাবো?

শাফিনঃ কেথায় আবার! ক্লাসে যাবি তো নাকি!

বর্ষাঃ ওহ্, হ্যা হ্যা যাবো তো। বলেই সামনের দিকে হাঁটা ধরে।

বর্ষা আর শাফিন হাঁটতে হাঁটতে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে আর দুজন কথা বলছে।বর্ষার ক্লাসরুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। শাফিন বর্ষাকে বলে যাহ্ ক্লাসে যা। পরে কথা বলবো।
বর্ষা মাথা ঝাকিয়ে হ্যা সায় দিয়ে ক্লাসে চলে যায়।

দুটো ক্লাস করে বসে আছে নদী আর বর্ষা। বসে আছে বললে ভুল হবে দুজন তো গল্পে মেতে আছে। বাকিরা কেউ ক্লাস রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে আবার কেউ বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আবার কেউ কেউ বাসায় চলে যাচ্ছে কারণ আজ আর কোন ক্লাস হবেনা। স্যার আসেনি ছুটিতে আছে। দ্বিতীয় ক্লাসে সেই নোটিশ দিয়ে গেছে।

শাফিন গিয়ে বর্ষার সামনে বসে। বর্ষা আর নদী শাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষা বলে ভাইয়া তুমি এখানে!বর্ষার কথা শুনে শাফিন বলে হুম চল ক্যান্টিনে যাবো।

নদী শাফিনকে দেখে যতোটা না শকড, বর্ষা আর শাফিনের কথা শুনে তার চেয়ে বেশি শকড। নদী ভাবছে যে মেয়ে দুদিন আগেও যে ছেলেটিকে সহ্য করতে পারতোনা আজ সেই মেয়েটিই ওই ছেলেকে নাকি তুমি সম্বোধন করছে!
আর শাফিন ভাইয়া বর্ষণ ভাইয়ার হাতে থাপ্পড় খাওয়ার পরেও কি করে বর্ষার সাথে এভাবে মিশছে! আর তুমি থেকে এক্কেবারে তুই!
এসব কিছু যেনো নদীর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।

বর্ষাঃ শাফিনকে বললো ক্যান্টিনে যাবে তোমার ক্লাস নেই ভাইয়া?

শাফিনঃ হ্যা আমার ক্লাস আছে কিন্তু তোর তো ক্লাস নেই। বসে বসে বোর হবি তার থেকে চল ক্যান্টিনে গিয়ে বসি আড্ডা দেওয়াও হবে খাওয়া দাওয়া ও হবে সাথে সময়টাও কেটে যাবে।

বর্ষাঃ হুম তা যাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু তা বলে তুমি ক্লাস ফাঁকি দেবে?

শাফিনঃ আরে এ পর্যন্ত ক্লাস ফাঁকি না দিয়ে ভালোর খাতায় নাম উঠে গিয়েছে, তাই দু চারদিন ক্লাস না করলে কিছু হবেনা, তুই আয় আমার সাথে বলে শাফিন আগে আগে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ।

শাফিন বেরিয়ে যাওয়ার পরে নদী বর্ষাকে বললো তোরা কি শুরু করেছিস বলতো?

বর্ষা একটু মিষ্টি করে হেসে বলে, কি আবার করলাম! এখনোও তো কিছু শুরু করিনি।

নদীঃ তারমানে! কিছু শুরু করতে চাচ্ছিস নাকি?
আর তোরা কি করছিস না করছিস আমি কিছু বুঝতে পারছি না। একটু বলবি প্লিজ! আমার না বিষয়টা ঠিক হজম হচ্ছে না।

বর্ষাঃ তো হজমের মেডিসিন খা। না হলে টেস্টি হজমি খা।তাহলেই হজম হয়ে যাবে।

নদী বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে, বর্ষা হেয়ালি করিসনা প্লিজ! আমায় বল।

বর্ষাঃ আগে ক্যান্টিনে চল, শাফিন ভাইয়া ওয়েট করছে। পরে তোকে সবটা বলবো।

বর্ষা আর নদী ক্যান্টিনে চলে যায়।

শাফিন বসে আছে বর্ষা আর নদী গিয়ে শাফিনের পাশে বসে। অনেক গল্প আড্ডা খাওয়া দাওয়া শেষে বর্ষা শাফিনকে বলে ভাইয়া এবার আমায় উঠতে হবে।

বর্ষার কথা শুনে শাফিন বললো চল তোকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।তোকে পৌঁছে দিয়ে আমি বাসায় চলে যাবো।

এই সময়টুকু কথা বলে নদী অন্তত এটুকু বুঝতে পেরেছে শাফিন বর্ষার কোন রিলেটিভ। শাফিনের কথা শুনে নদী মনে মনে বলে সেদিন একটা থাপ্পড় খেয়ে বুঝি মন ভরেনি। আজ আবার যেচে মার খেতে চাইছে।

বর্ষাঃ শাফিনের কথায় চমকে উঠে বলে, না ভাইয়া তার কোন প্রয়োজন নেই। আমার গাড়ি চলে আসবে এক্ষুনি, শুধু শুধু তোমায় কষ্ট করতে হবে না।

শাফিনঃ ঠিক আছে তাহলে সাবধানে যাবি। আর এই নে এটা আমার কন্টাক্ট নম্বর। কখনো প্রয়োজন হলে কল করিস।

বর্ষা ঠিক আছে বলে কন্টাক্ট নম্বর টা নিয়ে নদীর সাথে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে হাঁটছে।

তখন নদী বর্ষাকে বললো শাফিন ভাইয়া কি তোর রিলেটিভ হয়?

বর্ষাঃ হুম আমার কাজিন। আমার বড় চাচ্চুর একমাত্র ছেলে।

নদীঃ তাহলে এতোদিন তো বলিসনি! ইনফ্যাক্ট দুদিন আগেও তাকে চিনতিসনা বলে আমার মনে হয়।

বর্ষাঃ হুম ঠিক ই বলেছিস। তারপর গতকালের সব কথা নদী কে বলে বর্ষা।

নদী সব কিছু শুনে বললো হুম, এবার বুঝলাম। তা এসব কিছু কি বর্ষণ ভাইয়া জানে!

বর্ষাঃ তোর মাথায় কি একটুও বুদ্ধি নেই? বর্ষণ ভাইয়ার বাসায় গিয়ে বর্ষণ ভাইয়ার মমের সাথে কথা বলেছে। তোর কি মনে হয় এতো ইম্পর্ট্যান্ট কথা তার মম তাকে বলেনি?
আর না বললেই বা আমার কি? আমি গিয়ে এখন সবাইকে বলে বেরাবো নাকি!

নদীঃ আচ্ছা ঠিক আছে রেগে যাচ্ছিস কেনো বলতো! ঐ দেখ তোর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে।

নদীর কথা শুনে বর্ষা আরও ক্ষেপে গেল।নদীকে ধমক দিয়ে বললো কি যা তা কথা বলছিস! আমার সাথে ঝামেলা না করলে বুঝি তোর শান্তি লাগেনা তাইনা পেত্নী কোথাকার?

বর্ষণ এসে গাড়ি ব্রেক করতেই বর্ষা গাড়িতে উঠে বসে। বর্ষণ যেতে যেতে বললো ক্লাস কেমন হলো।

বর্ষাঃ ভালো।

বর্ষার এমন জবাবে বর্ষণ আবার জিজ্ঞেস করলো শরীর মন ঠিক আছে?

বর্ষা এবারো বললো হুম ঠিক আছে।

বর্ষণ আবারও জিজ্ঞেস করলো মুড অফ কেনো?

বর্ষা বললো আর বলোনা ভাইয়া। নদীর মতো পেতনী যার লাইফে আছে তার মুড অফ হওয়ার জন্য এক্সট্রা কারণ প্রয়োজন পরেনা।

বর্ষণঃ মনে মনে, ওহ আচ্ছা এবার বুঝলাম আমার পরীটার মন খারাপের কারণ। আমি আরও ভাবলাম হয়তো পরী তার পরিবার নিয়ে চিন্তিত।

বর্ষাঃ ভাইয়া! তোমার পরী কেমন আছে?

বর্ষণ একটু মুচকি হেসে বললো আজ কয়দিন কাজের চাপে সময় দিতে পারিনি বলে হয়তো একটু মন খারাপ। তাছাড়া এমনিতে ভালো আছে।
তারপর বর্ষণ বললো শোন বর্ষা কাল তো শুক্রবার আমি একটু বিজি থাকবো, আর পুরোটা সপ্তাহ অফিসের কাজের ঝানেলায় থাকবো তাই ফ্রী হতে পারবো না। আগামী শুক্রবার তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

বর্ষাঃ আগামী কাল কি পরীর সাথে দেখা করতে যাবে ভাইয়া?

বর্ষণঃ তোর কি মনে হয়, আমি পরীর সাথে এক্সট্রা সময় নিয়ে মিট করি? যদি তোর এমনটা মনে হয় তাহলে বলবো এটা তোর ভুল ধারণা। কারণ পরী সবসময় আমার এইখানে থাকে ( বুকের বাম পাশে হাত রেখে) তাকে আমি সবসময় দেখি।

বর্ষণের মুখে এসব শুনে বর্ষা তো শুধু জ্বলছে। মনে মনে অবশ্য কষ্ট ও পাচ্ছে খুব।
বাসার সামনে গাড়ি গাড়ি থামাতেই বর্ষা নেমে দৌঁড়ে রুমে চলে যায় নিজের চোখের জল আড়াল করতে। কারণ বর্ষণের সামনে সে নিজের দুর্বলতা টা প্রকাশ করতে চায়না। বর্ষা চায়না তার চোখের জল দেখে কেউ তাকে করুণা করুক।

রুমে গিয়ে হিজাব খুলে বই খাতা রেখে বিছানায় বসে চোখের জল ফেলছে বর্ষা। তখনই ফোন বেজে ওঠে। বর্ষা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোন নম্বর।

ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে…
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৮

ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠে বলে ওঠে, কি রে কি করিস? কখন পৌছেছিস?

বর্ষাঃ ভাইয়া তুমি! এইতো বসে আছি। আর ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছে গেছি টেনশন করোনা। কিন্তু তুমি আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলে ভাইয়া?

শাফিনঃ এটা কি কোন ব্যাপার হলো? তুই নিজেই তো দিয়েছিস কন্টাক্ট নম্বর।

বর্ষা কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বলে ওহ্ এতোদিন পরে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছো! ফোন নম্বর দিয়েছি নবীনবরণে ভলেন্টিয়ার হওয়ার সময়। এতোদিনে মনে থাকে বুঝি!

শাফিনঃ এসব বাদ দে এখন বল তোর কন্ঠ এমন ভার ভার শোনাচ্ছে কেন? কান্না করেছিস?

বর্ষাঃ আরে না ভাইয়া তেমন কিছু না, আমি ঠিক আছি।

শাফিনঃ ওকে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে। এখন রাখছি বলে ফোন রেখে দেয়।

বর্ষা রেখে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে আসে।আজ ক্যান্টিনে খেয়েছে বলে আর দুপুরের খাবার খায়নি বর্ষা।

অনেকটা রাত হয়ে গেছে বর্ষণের ফিরতে। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেছে তখন ফোনে কল আসে বর্ষণের, সবুজ কল করেছে। বর্ষণ কিছু সময় কথা বলে ফোন রেখে একটু চিন্তিত হয়ে পরে। তারপর নিচে গিয়ে বর্ষণের মমের সাথে কথা বলে। বর্ষণ না ফেরা পর্যন্ত তার মম জেগে থাকে।

………..

তিন চারদিন পার হয়ে গেছে। শাফিন আর বর্ষার ও ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। শাফিন বর্ষাকে নিয়ে বাইরে যেতে চেয়েছিলো ঘুরতে, যেমনটা বর্ষণ নিয়ে যায়। কিন্তু বর্ষা যায়নি, বলেছে যেতে দেবেনা বাসা থেকে। শাফিন চেয়েছিলো বর্ষাকে পরিবারের সবার সাথে দেখা করাতে কিন্তু বর্ষা যায়নি।শাফিনকে বলেছিল তার একটু সময় চাই। এভাবে হুট করে তাদের সামনে যেতে কেমন একটা লাগছে।

বর্ষার কথা শুনে শাফিনও আর কিছু বলেনি। শুধু বলেছিল, ঠিক আছে তোর যখন ইচ্ছে হবে, যখন মন চাইবে সবার সাথে মিট করতে তখনই করবি।

আজ ক্যান্টিনে বসে আছে নদী, বর্ষা আর শাফিন। অনেক গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে তারা । এ কয়দিনে নদীও অনেক ফ্রী হয়ে গেছে শাফিনের সাথে।

শাফিন বর্ষাকে জিজ্ঞেস করে কাউকে পছন্দ করিস! ভালোবাসিস কাউকে?

বর্ষা একটু চুপ থেকে বলে, ভালোবাসাটা কখনো একতরফা হয়না ভাইয়া। একতরফা ভালোবাসা খুব পোড়ায়,বড্ড কষ্ট দেয়। চোখের জল প্রতিনিয়ত জানান দেয় যে, কারও জন্য বুকের মাঝে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চোখের জল নাই বা ঝরুক বুকের ভেতর চাপা কষ্টটা কিন্তু রয়েই যায়,যেটা আরও বেশি করে পোড়ায়, বেশি যন্ত্রণা দেয়। জানিনা সে যন্ত্রণা থেকে আদৌ কখনো মুক্তি পাওয়া সম্ভব কি না! তবে ভালোবাসা টা যখন একতরফা তখন সেটা প্রকাশ না করাই ভালো।

নদী বর্ষাকে বলে বর্ষণ ভাইয়াকে ভালোবাসিস? যদি ভালোইবাসিস তাহলে একা একা কেন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিস তাকে ও একটু জ্বালা,বলে তাকে।

বর্ষাঃ সে অন্য কারও তাই তাকে ভালোবাসার কথা বলার প্রশ্নই উঠে না। তবে হ্যা, তাকে ভালোবাসার কথা বলতে না পারি জ্বালাতে তো ঠিকই পারি বলেই একটা রহস্যজনক হাসি দিলো।

শাফিনঃ এসব শুনে একদম চুপ হয়ে যায়। আর কোন কথা বলেনা। অনেকটা সময় পরে জিজ্ঞেস করে তবে কি তুই বর্ষণের বাগদত্তা!

শাফিনের কথা শুনে বর্ষা আর নদী দুজনেই অবাক হয়ে যায়।

নদী বলে শোন বর্ষা অনেক লুকোচুরি হয়েছে আর নয় এবার এমন একটা কিছু কর যেন তোদের দুজনের মনের কথাই তোরা দুজন জানতে পারিস।

শাফিনঃ নদীর কথা শুনে বলে আমার মনে হয় বর্ষণ ভাইয়া যেহেতু অন্য কাউকে ভালোবাসে সেহেতু বর্ষার ওদের মাঝে থার্ড পারসন হয়ে থাকার চেয়ে নিজের কষ্ট হলেও অন্য কাউকে জীবন সঙ্গী করে ওদের থেকে দুরে সরে যাওয়াটাই বেটার হবে। আর আমি মনে করি বর্ষা নিজের ভালোবাসার জন্য এটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই পারে।

বর্ষা তখন শাফিবের কথা শুনে বললো হুম এটা তুমি ঠিকই বলেছো ভাইয়া। আমি এটা ভেবে দেখবো।

চলো এবার উঠি বলেই বর্ষা ক্যান্টিন থেকে বাইরে চলে আসে সাথে নদী আর শাফিন ও বেরিয়ে আসে। শাফিনকে বিদায় দিয়ে নদী আর বর্ষা গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

নদী তখন বর্ষাকে বললো দেখ বর্ষা শাফিন ভাইয়া যেটা বলেছে সেটা আমি পুরোপুরি সাপোর্ট করিনা। আমি বলবো তুই নিজে একবার ভালোভাবে ভেবে চিন্তে তারপর ডিসিশন নিস।
কারণ লাইফটা তোর, তুই ই ভালো বুঝবি তোর জন্য কে পারফেক্ট আর তোর প্রতি কে কতোটা কেয়ারিং। তোর লাইফের যে পারসনটা নিজের নয় তোর ভালো থাকাটা আগে মাথায় রেখে চলে তার বিষয় টা যাচাই বাছাই না করে হাল ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক বলে আমি মনে করিনা। আমার মনে হয় তোর কাছে কে ইম্পর্ট্যান্ট সেটা না ভেবে তুই কার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট সেটা ভাবা উচিৎ।

বর্ষা কিছু বলবে তার আগেই বর্ষণ গাড়ি নিয়ে হাজির।তাই বর্ষা আর কথা বাড়ায়নি, গাড়িতে উঠে বসে। ভার্সিটি থেকে বাসা অব্দি সারাটাক্ষণ একটা কথাও বলেনি বর্ষণের সাথে। আনমনে কিছু একটা ভেবেই চলেছে বর্ষা।গাড়ি ব্রেক করায় বাইরে তাকিয়ে দেখে বাসায় পৌঁছে গেছে।বর্ষা সোজা নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে রুমেই শুয়ে আছে।

নিপু খাবার খেতে ডেকেছে বর্ষা যায়নি। বলেছিল খেয়ে এসেছে।

এদিকে বর্ষণের মেঘুপাখির মন খারাপ দেখে বর্ষণ বড্ড অস্থির হয়ে গেছে। সে বর্ষাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে কাউকে ফোন দিয়ে কথা বলে। তারপর আবার কাউকে ফোন দিয়ে কিছু কাজ করতে বলে ফোন রেখে দেয়।

বর্ষণ আজ আগেই অফিস থেকে ফিরেছে। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বর্ষার রুমে চলে যায়।বর্ষার রুমে গিয়ে দেখে বর্ষা বেডে বসে আছে। বর্ষণ বলে কি করছিস বর্ষা?

বর্ষণকে দেখে বর্ষা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে তুমি এখানে !

বর্ষণ বললো কেন আসতে পারিনা বুঝি?

বর্ষাঃ সেটা তো বলিনি। আমি চাইনা আমার জন্য তোমাদের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট হোক।

বর্ষণঃ আমাদের মাঝে সম্পর্ক মান!

বর্ষাঃ হুম তোমার আর পরীর মাঝে।

বর্ষণঃ ওহ্ তাই বল। শোনা, আমার পরীকে নিয়ে তোকে এতো ভাবতে হবেনা। আমার পরী এতো হিংসুটে নয়।

বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা অবাক হয়ে বলে তার মানে কি তুমি বলতে চাইছো আমি হিংসুটে!

বর্ষণঃ সেটা তুই ভালো জানিস।আর হ্যা শোন যেটা বলতে এসেছি। তুই নাকি শাফিনের সাথে আড্ডা দিস, কথা বলিস? আমি তো তোকে বারণ করেছিলাম তারপরও অবাধ্য কেন হোস বলতো?

বর্ষাঃ শাফিন ভাইয়া আমার কাজিন। আমার পরিবারের একজন তাহলে কেনো মিশবোনা? কেনো কথা বলবোনা তার সাথে? কেনো শুনবো আমি তোমার কথা বলো?

এসব বলে বর্ষা বর্ষণের পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই বর্ষণ শক্ত করে বর্ষার হাত ধরে টেনে কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে বেশি বুঝতে শিখে গেছিস তাইনা? এতো বেশি বুঝতে যাসনা মেঘু, এর ফল কিন্তু ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি। বলেই হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় বর্ষণ।

বর্ষণের এমন কান্ড দেখে তো বর্ষা পুরোই হা হয়ে যায়। শুধু ভাবছে বর্ষণ ভাইয়া এমন কেন করছে আমাকে আমার পরিবারের ধারেকাছেও কেনো যেতে দিচ্ছে না। আবার তাদেরও আমার সাথে মিশতে দিচ্ছে না। কেনো দুরে দুরে রেখেছে আমাকে? কেন? আমাকে তো সেটা জানতেই হবে।

পরদিন ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ অফিসে গিয়ে বেশি দেরি না করে সব কাজ সাগরকে বুঝিয়ে দিদিয়ে ফাইল পত্র সব বর্ষণের পাপাকে বুঝিয়ে দিয়ে দুই ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসে ভার্সিটিতে।

এসেই তো বর্ষণের মাথায় রক্তচেপে যায় বর্ষা আর শাফিনকে একসাথে দেখে। ক্যাম্পাসের একপাশে গাছতলায় দাঁড়িয়ে আছে নদী, বর্ষা আর শাফিন। বর্ষা আর শাফিন কিছু একটা বলে হাসাহাসি করছে। সেটা দেখেই বর্ষণের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। রেগে গিয়ে বর্ষাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে ওঠায়।

বাসায় এসে বর্ষাকে রেখে বর্ষণ ওর মমের রুমে চলে যায়। বর্ষণ ওর মমের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

বর্ষা ওয়াশরুমে গিয়ে সাওয়ার ছেড়ে নিচে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে বর্ষণ ভাইয়া তো দেখছি শাফিন ভাইয়া কে সহ্যই করতে পারছে না কিন্তু তার কারণটা কি সেটাও তো জানি না। সবটাই জানতে হবে আমায়

সাওয়ার নিয়ে এসে চুল চিরুনি করতে গিয়ে হাতের দিকে নজর পরে বর্ষার। বর্ষণের দেওয়া রিং যেটা খুলতে নিষেধ করেছে বর্ষণ।

বর্ষা রিংটা খুলে টেবিলের উপর রেখে দেয়। দুপুরের খাবার খেয়ে বর্ষা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। আজকাল কোন কিছু ভাললাগেনা তার, সবকিছুই কেমন যেন অসহ্য লাগে

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে বসেছে বর্ষা। রমা বেগমও নিচে বসে চা খাচ্ছে। রমা বেগমের ফোন বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠ ভেসে এলো।

রমা বেগম চিনতে না পারায় সে পরিচয় দিয়ে বললো আমি বর্ষার চাচী, শাফিনের আম্মা।

পরিচয় শুনে রমা বেগম নিশ্চুপ হয়ে যায়। তারপর বলে কেন ফোন করেছেন আপনি?

শাফিনের আম্মা রমা বেগমকে বলে একটা খুশির খবর দিতে ফোন করেছি।

রমা বেগম ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো কিসের খুশির খবর।

শাফিনের আম্মা হাসি হাসি মুখ করে বললো আমাদের বাড়ির মেয়েকে আমরা আবার আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চাই।আমার ছেলে শাফিনের সাথে ওকে বিয়ে দিয়ে আমার ঘরের লক্ষি করে ওকে আমার ঘরে আনতে চাই।
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#বোনাস_পার্ট

শাফিনের আম্মা যখন পরিচয় দিয়েছে তখনই রমা বেগম ফোনের স্পিকার অন করে দেয়। এতে পাশে বসে বর্ষা সবটাই শুনতে পায় । বর্ষণের মম যখন ফোনে কথা বলছিল বর্ষণ তখন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো। শাফিনের আম্মার কথা শুনে বর্ষণ আবার ফিরে রুমে চলে যায়।কিন্তু বর্ষার বিয়ের ব্যাপারটা বর্ষণন জানে না।

বর্ষণের মমঃ শুনুন আমাদের মতামত এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্ষার চাওয়া, আর ওর মতামত।

শাফিনের আম্মাঃ আপনি বর্ষা মায়ের কাছে ফোন টা দেন আমি একটু কথা বলতে চাই।

বর্ষণের মমঃ আগে আমি বর্ষার সাথে কথা বলবো তারপর আপনার সাথে ও নিজে থেকেই কথা বলবে। কথাটা বলে ফোন হোল্ড করে বর্ষার দিকে তাকায়।

বর্ষা মাথা নিচু করে কিছু একটা ভেবে বর্ষণের রুমের দিকে তাকায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টলমল চোখ নিয়ে বলে।মামনী, তুমি ওদের বলে দাও আমি বিয়েতে রাজি। শাফিন ভাইয়াকে বিয়ে করতে আমার কোন আপত্তি নেই। কথাটা বলেই বর্ষা চোখের জল আড়াল করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলতে থাকে। আজ তার মাকে খুব মনে পরছে। হয়তো মা বাবা থাকলে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতোনা বর্ষা।আর যাই হোক নিজের ভালোবাসাটাকে এভাবে বিসর্জন দিতে হতোনা তাকে।

বর্ষা সোফা থেকে উঠে যেতেই বর্ষণের মম শাফিনের মায়ের সাথে আবার কথা বলা শুরু করে। কথা শেষ করে ফোন রেখে বর্ষণের মম ভাবতে থাকে যে মেয়ে বর্ষণ বলতে অজ্ঞান, সে মেয়ের হঠাৎ কি এমন হলো যে এতোটা পরিবর্তন! নিশ্চয়ই দুজনের মধ্যে আবার একটা ঝামেলা হয়েছে তা না হলে এমনটা কখনো হওয়ার কথা নয়।

রমা বেগমঃ বর্ষণের রুমে গিয়ে বর্ষণকে বলে বর্ষার সাথে কি তোর কোন ঝামেলা চলছে? যদি কোন ঝামেলা বা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে তাহলে মিটিয়ে নে কারণ আমি জানি তোরা দুজন দুজনকে ছাড়া একটা সেকেন্ড ও থাকতে পারবিনা। আর যদি দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারিস, সারাজীবন কাটাতে পারিস তাহলে ভুল বোঝাবুঝিটা এভাবেই থেকে যাক।

বর্ষণঃ এসব তুমি কি বলছো মম! দুজন দুজনকে ছাড়া থাকবো মানে! তুমি খুব ভালো করে জানো শ্রাবণ আহমেদ তার মেঘুকে ছাড়া কখনো একটা সেকেন্ড ও কল্পনা করে না। আর তুমি কি না বলছো সারাটা জীবন কাটাতে!
কি এমন হয়েছে যে আমার মেঘু পাখিটাকে ছাড়া আমায় সারাজীবন কাটাতে হবে?

রমা বেগম তখন শাফিনের মায়ের বলা কথা আর বর্ষার বলা কথাগুলো বর্ষণকে বলে।

বর্ষণ কথাগুলো শুনে তো অগ্নিমূর্তির রুপ ধারণ করে। চোখদুটি লাল হয়ে আছে যেন এই মুহূর্তে সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে।
আর কোন কথা না বলে বর্ষার রুমের দিকে ছুটে যায় বর্ষণ।

রমা বেগম ও নিজের রুমে গিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে।

বর্ষা চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে রুমে এসে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।জানালার থাই গ্লাস ভেদ করে দেখা যাচ্ছে ব্যস্ত শহরের রাস্তা ঘাটের ব্যস্ত মানুষগুলো। সবাই আপন মনে আপন কাজে ব্যস্ত।

বর্ষণ গিয়ে বর্ষার পাশে দাঁড়িয়ে বলে আমায় ছেড়ে যাচ্ছিস?

কথা শুনে বর্ষা ঘুরে দাঁড়ায়। দেখে বর্ষণ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে।
বর্ষা মাথা নিচু করে জবাব দিলো কখনো না কখনো তো যাওয়ার ই ছিলো।
এতোদিন তো করুণা করলে আর কতোদিন তোমাদের করুণা নিয়ে বাঁচবো বলোতো! কথাটা বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো বর্ষার। তাই বর্ষণকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই বর্ষণ এক টানে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বর্ষাকে।বর্ষা ভয়ে আর ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখে। বর্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে বলে তোকে কতোবার বলেছি এই কথাটা কখনো মুখে আনবি না। তুই কারও করুণার পাত্রী নস। কেউ করুণা করেনি তোকে। নিজের অধিকারে আছিস তুই এখানে বুঝেছিস! নিজের অধিকারে।

বর্ষাণের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য বর্ষা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে তবুও ব্যর্থ হচ্ছে।

বর্ষণ বর্ষার হাত আরও শক্ত করে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো আমি না চাইলে আমার হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারবিনা মেঘুপাখি! তাই শুধু শুধু কষ্ট করে বৃথা চেষ্টা করিস না।

বর্ষা টলমল চোখ নিয়ে বর্ষণের দিকে তাকায়। বর্ষণ বর্ষার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তাই বর্ষা বেশিক্ষণ তাকিয়ে না থেকে বলে আমার হাতটা ছাড়ো ভাইয়া লাগছে।

বর্ষার কথা শুনে বর্ষণ ওর হাতের দিকে তাকাতেই দেখে বর্ষার আঙুলে রিং নেই। এটা দেখে তো বর্ষণের মাথায় যেন বাজ পরে। রেগে গিয়ে এক হাতে বর্ষার গাল চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলে এতো বড় সাহস তোর হয় কি করে হ্যা.. আমি যে রিং পরিয়েছি সেটা আমার অনুমতি ছাড়া কেন খুলেছিস বল?
ঐ আঙুলে অন্য কারো রিং পরবি তাই? ওহ্ তুই তো শাফিনকে বিয়ে করবি। ঐ আঙুলে শাফিনের দেওয়া রিং পরবি তাইনা? পরাচ্ছি তোকে আঙুল ভেঙে রেখে দিবো। কেনো খুলেছিস বল?

বর্ষা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে যেখানে কোন সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি সেখানে বন্ধন রেখে লাভ কি বলো!
আর বিয়ের কথা বলছো! তুমি তো অন্য কারো, তো আমি কেন তোমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে থাকবো।ভালো থাকো তুমি সুখে থাকো তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে।

বর্ষণ বর্ষাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। বর্ষণের এমন কান্ড দেখে বর্ষা তো অবাক। এর আগে কখনো বর্ষণকে এভাবে কাঁদতে দেখেনি বর্ষা।
বর্ষা বর্ষণের পিঠে আলতো করে হাত রেখে বলে তুমি কান্না করছো ভাইয়া!

বর্ষণঃ কান্না মিশ্রিত কন্ঠে আস্তে করে বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে কারও কলিজা কেটে নিলে সে বেঁচে থাকবে কি করে আমায় বলতে পারিস? কারও ভালোবাসার মানুষটাকে যদি তার থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে বলা হয় তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে সুখে থাকো ভালো থাকো তাহলে আদৌ কি সে ভালো থাকতে পারবে?

বর্ষা বললো এসব কি বলছো ভাইয়া!

বর্ষণ বর্ষাকে জড়িয়ে ধরেই বলে হুম ঠিক ই বলছি তুই হলো আমার সেই কলিজা যাকে কেটে ফেলে কিংবা যাকে বাদ দিয়ে আমার বেঁচে থাকাটা ইম্পসিবল।
তুই হলো আমার সেই ভালোবাসা যাকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবো না।
তুই হলো আমার সেই পরী যাকে একটু সময় না দেখলে আমার কষ্ট হয়।তুই হলো আমার সেই পরী যাকে অন্য কারও সাথে দেখলে আমি সহ্য করতে পারিনা।

বর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাত বর্ষার দুই গালে রেখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে আমায় ছেড়ে থাকতে পারবি! কষ্ট হবেনা তোর? ভালো থাকবি কি আমায় ছাড়া! বর্ষণ আর বর্ষা দুজনেরই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।
বর্ষণ বর্ষাকে বলে বলনা ভালোবাসিস কি আমায়? আমার মতো রাগী বদমেজাজি খারাপ একটা ছেলেকে করবি কি তোর জীবন সঙ্গী! কথা দিচ্ছি সারাজীবন এই বুকে আগলে রাখবো।

বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা যেনো কথা বলতেই ভুলে গেছে। এতোটা পাবে বর্ষা হয়তো কল্পনা ও করতে পারেনি।
বর্ষা কিছু না বলে বর্ষণকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। বর্ষণ ও শক্ত করে ধরে রাখে বুকের সাথে।

বর্ষণঃ ভেবেছিলাম তুই নিজে থেকে বুঝবি আমাকে। বুঝতে পারবি আমার ভালোবাসাটা। কিন্তু না আমি একটা ব্যর্থ প্রেমিক যে কিনা তার ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের ভালোবাসাটা বোঝাতে অক্ষম। বলেই বর্ষণ বর্ষার চোখের পানি মুছে দেয় আর বলে, এই চোখে যেন কখনো জল না আসে। আমি সবসময় এই মুখটাকে হাসিখুশি দেখতে চাই কথাটা যেন মাথায় থাকে। আর রিংটা কোথায় রেখেছিস নিয়ে আয়।বর্ষা রিংটা বের করে দিলে বর্ষণ দেরি না করে বর্ষার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলে আজ থেকে তুই আমার আর এটাই হলো তার সাক্ষী।

চলবে…….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here