তুই শুধু আমার ভালোবাসা পর্ব -২৫+২৬

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৫

রাতে সাবাই বসে আছে ঈশিতার কাছে। কথা হচ্ছে আগামিকাল ঘুরতে যাবে সেটা নিয়ে। কোথায় যাবে কি করবে সেটা নিয়ে মতবিরোধ চলছে সবার মধ্যে।

এক কোণে চুপটি করে ঘাপটি মেরে বসে আছ বর্ষা।সেটা দেখে বর্ষণ রোহিতকে বললো তা দুলাভাই তোমার ইউনিক বুদ্ধিমতি চুপ করে বসে আছে কেনো? তাকে বলো কোন ইউনিক বুদ্ধি দিতে।

বর্ষণের কথা শুনে রোহিত বললো আহা! শালাবাবু তুমি আবার ছোট গিন্নির পেছনে পরলে কেন? সে তো চুপচাপ ই বসে আছে।

বর্ষণঃ হুম তো আমি ও সেটাই বলছি চুপ কেনো আছে! ইউনিক বুদ্ধি দিতে বলো।

বর্ষাঃ আরে দুলাভাই বুঝোনা কেনো আমার প্রশংসা তো তার সহ্য হয়না। তুমি কেনো শুধু শুধু আমার প্রশংসা করতে গেলে বলোতো! তুমি যদি তার পরীর নামে দুচারটা ভালো ভালো কথা বলতে তাহলে তো বেচারা মনে একটু শান্তি পেতো।

বর্ষণঃ হুম সহ্য হয়না তো। তোর নামে কেউ প্রশংসা করলে আমার সহ্য হয়না। কেনো করবে প্রশংসা!
আর আমার পরীর নামেও কিছু বলতে হবেনা। তার থেকে ভালো তুই এটা বল, সবাই মিলে কোথায় ঘুরতে যাবে?

বর্ষাঃ আমি আমার ডিসিশন জানাতে পারি তবে সবাইকে মনোযোগ দিয়ে সেটা শুনতে হবে। এবং আমার সাথে একমত হলে সেটা জানাতে হবে আর যার উপর যে দায়িত্ব পরবে তাকে সেটা মেনে নিতে হবে।

সবাই একসাথে বললো হুম হুম তাই হবে বলো বলো।

বর্ষাঃ আমরা লাঞ্চ করে বের হবো। প্রথমে শপিং করবো তার পরে নদীর পারে ঘুরবো ঘুরেফিরে ক্ষুধা লেগে গেলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে পরবো আর বিল মেটাবে দুলাভাই।

রোহিতঃ আরে ছোট গিন্নি আমায় নিয়ে পরলে কেনো আবার!

নিপুঃ কেন দুলাভাই! আপনি তো বলেছিলেন রাফসান ভাইয়া পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে রেস্টুরেন্টের বিল আপনি দিবেন।

রোহিতঃ সে বলেছিলাম কিন্তু তখন তো ছোট গিন্নি ছিলোনা। তাহলে ছোট গিন্নিকে এ খবরটা দিলো কে?

ঋতুঃ আরে আরে এতো ভাবছো কেন ম্যায় হু না? আমি বলেছি বর্ষাকে।যাই হোক আমার বোনেদের ও তো হক আছে দুলাভাইয়ের টাকায় রেস্টুরেন্টে খাওয়ার।

রোহিতঃ হয়ে গেলো! একেই বলে ঘরের শত্রু বিভীষণ।

ঋতুঃ যাই বলো বর্ষার প্ল্যানটা কিন্তু সত্যি ইউনিক।তাহলে আমরা আজ ডিনার টা রেস্টুরেন্টে করছি আর বিল মেটাচ্ছো তুমি তাইতো!

রোহিতঃ অগত্যা।

বর্ষণ হাসতে হাসতে বললো, দুলাভাই আপনার ছোট গিন্নি তো ইউনিক প্ল্যানে আপনাকে মেরে দিয়েছে।

রোহিতঃকি আর করবো বলো!
আড্ডা শেষে সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।

পরদিন..

দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই বেরিয়ে পরে।
আজ সবাই মিলে একটা গাড়ি করে বেরিয়েছে। বর্ষণ অবশ্য দুটো গাড়ির কথা বলেছিলো রাফসানদের জন্য কিন্তু ঈশিতা রাজি হয়নি। সে বলেছে আজ সবাই একসাথে ঘুরবো।তাই একটা গাড়ি করেই ঘুরবো।

শপিংমলে গিয়ে সবাই পছন্দমতো জিনিস কিনে চলে যায় জুয়েলার্সে। সেখানে একটার পর একটা রিং দেখে যাচ্ছে কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না কারও।
কারও পছন্দ হচ্ছে না বললে ভুল হবে আমাদের বর্ষার ই পছন্দ হচ্ছে না।
অবশেষে একটা রিং পছন্দ হলো বর্ষার, যেটা এখনো বর্ষা আঙুলে পরে আছে। কিন্তু বর্ষণ বললো ভালো লাগছে না অন্য একটা দেখো।
আবার বাছাই শুরু হলো খুঁজতে খুঁজতে একটা রিং পেয়েও গেলো। ঈশিতার হাতে পরিয়ে দিয়ে বর্ষা বললো এটা তোমার জন্য নতুন ভাবি। তোমার রায়বাঘিনী ননদিনীদের পক্ষ থেকে আর তোমার কিউট দেবরদের পক্ষ থেকে তোমার উপহার ।

ঈশিতা তো গিফট পেয়ে মহা খুশি সাথে অবাক ও হয়েছে খুব। এজন্যই তাহলে তোমরা আমায় যেতে দাওনি বলে বর্ষাকে জরিয়ে ধরে ঈশিতা।
সবাই তাকিয়ে ঈশিতা আর বর্ষাকে দেখছে অন্য দিকে বর্ষণ ঐ রিংটার বিল পে করে রিংটা পকেটে রেখে দেয় সবার নজর এড়িয়ে।

তারপর সবাই নদীর পারে হাঁটতে চলে যায়।প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবাই নদীর পারে হাঁটছে শুধু বর্ষা বসে আছে।

বর্ষণ এসে বললো কিরে বসে আছিস যে,শরীর খারাপ? নাকি মন খারাপ?
বর্ষা বললো নাহ্ এমনি ভালো লাগছে না তুমি যাও ওদের সাথে হাঁটতে।

বর্ষণঃ ওদের দিকে তাকিয়ে দেখ সবাই দুজন দুজন হাঁটছে আর আমি ওদের মধ্যে যাবো হাঁটতে!

বর্ষাঃ তোমার পরীকে ডেকে নাও। আমি যাবো ন…..

বাকিটা বলার আগেই বর্ষণ বর্ষাকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করে।
বর্ষা তো হাত পা ছুড়াছুড়ি শুরু করে আর বলে নামাও ভাইয়া কি করছো কি! সবাই আছে তো দেখলে কি বলবে বলোতে?
আমায় নামিয়ে দাও আমি হেঁটে যাবো।

কিছুদুর গিয়ে বর্ষাকে নামিয়ে দিলো বর্ষণ। তারপর বর্ষার হাতটা টেনে নিয়ে আঙুলে ডায়মন্ডের রিং টা পরিয়ে দিয়ে বলে আমার অনুমতি ছাড়া কখনো এই রিংটা খুলবি না।

বর্ষা তো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা। শুধু বললো এটা তো ঐ রিং টা

বর্ষণ বললো হুম এটা শুধু তোর জন্যই তৈরি করা হয়েছে তাই এটা তোর। আজ পর্যন্ত তোর কোন পছন্দ তোর কোনো সখ আমি অপূর্ণ রাখিনি তাই এটাও রাখলাম না।

বর্ষা তখন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো আমার সব পছন্দের গুরুত্বই বোঝো কিন্তু যেটা আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ সেটা কি আমায় দিতে পারবে?

বর্ষণঃ শুধু একবার বলে তো দেখ এনে দিতে পারি কিনা!

বর্ষঃ থাক সময় হলে চেয়ে নিবো।

নদীর পার থেকে চলে যায় রেস্টুরেন্টে। ডিনার করে ফিরে আসে বাসায়। ঈশিতা আজ মহা খুশি অনেক আনন্দ করেছে।

……

সকালের নাস্তা করে সবাই কথা বলছে। আজ যে যার বাসায় ফিরে যাবে। সারাদিন আড্ডা দিয়ে বিকেলে বর্ষারাও বেরিয়ে পরেছে বাড়ির উদ্দেশ্যে।সবুজও তার মা কে নিয়ে আজ বাড়ি ফিরে গিয়েছে। এ সপ্তাহ থাকবে বাড়িতে তারপর আবার ফিরে যাবে মালয়েশিয়াতে।

বর্ষণরাও বাড়ি ফিরে এসেছে। আগামীকাল থেকে আবার বর্ষার ভার্সিটি যুদ্ধ শুরু। কিন্তু বর্ষার চিন্তা সেটা নিয়ে নয় তার চিন্তা হলো বর্ষণের পরীকে খুঁজে বের করা।
বর্ষা মনে মনে বলে আজ রাতে আর খুঁজবো না আগামীকাল থেকে মিশন শুরু হবে।

পরদিন ক্লাস থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বসে আছে বর্ষা ভাবছে বর্ষণের রুমে যাবে চিরুনি তল্লাশি করবে। কিন্তু তার আগেই বর্ষণ বাসায় ফিরে আসে।

বর্ষণকে বাসায় আসতে দেখে বর্ষার মুখটা শুকিয়ে যায়।
বর্ষা বর্ষণকে বলে এতো জলদি ফিরে এলে আজ?

বর্ষণঃ হুম ফিরে এলাম। রেস্ট করতে হবে। কয়েকদিন ঘুম হয়নি তাই ভালো লাগছে না। কেন কিছু বলবি নাকি।

বর্ষা আর কিছু না বলে বললো, না ভাইয়া কিছু না।

ঐ দিকে সবুজ আর নিপু তো কথা বলায় ব্যাস্ত৷ দুজন।

বর্ষণ রুমে ঘুমিয়ে আছে। বর্ষা কফি নিয়ে বর্ষণের রুমে যায়। কফির মগ রেখে। বর্ষা এদিকে ওদিকে কিছু একটা খুঁজতে থাকে।এমন সময় বর্ষণ নড়েচড়ে ওঠে। বর্ষা দ্রুত সরে এসে বর্ষণের পাশে দাঁড়ায়। বর্ষণ বর্ষাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো কি হলো চাঁদ আজ কোন দিকে উঠেছে।

বর্ষাঃ কি যা তা বলছো মাথা ঠিক আছে তোমার? নাকি রেস্ট করতে না পেরে পাগল হয়ে গেছো!
ওটা চাঁদ নয় সূর্য হবে।

বর্ষণঃ একটা হলেই হলো। তা তুই হঠাৎ আমার রুমে?

বর্ষাঃ বা রে এমন ভাবে বলছো যেনো আমি আসিইনা তোমার রুমে! আমি তো কফি নিয়ে এসেছিলাম।

বর্ষণঃ ওহ্! তাই বল।

বর্ষা কফি দিয়ে চলে যায়। আর মনে মনে বলতে থাকে, ধুর! আজই ফিরে আসতে হলো অফিস থেকে!

রাতেও শুয়ে শুয়ে বর্ষা ভেবেছে কি করে খুঁজে বের করবে পরীকে।
সকালে বর্ষাকে ভার্সিটির গেটে নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ অফিসে চলে যায়। এ দুদিন বর্ষা ভালো করে বর্ষণের সাথে কথা বলেনি কারণ বর্ষার মাথায় এখন পরীকে নিয়ে চিন্তা। পরীকে খুঁজে পাবে কি করে সে সেই উপায় খুঁজতে থাকে সবসময়।

ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বর্ষা সোজা বর্ষণের রুমে চলে যায়। পুরোটা রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজে ও কিছু পেলোনা। ক্লান্ত হয়ে বর্ষণের বিছানায় বসে পরে বর্ষা।

কিছু একটা ভেবে নিয়ে বর্ষণের বিছানা থেকে বালিশ তুলতেই একটা ডায়েরি চোখে পরে বর্ষার। ডায়েরি টা হাতে নিয়েই অবাক হয়ে যায়। ডায়েরির উপরে লেখা আছে ডোন্ট টাচ্, আর প্রথম পাতায় লেখা ছিলো…
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৬

ডায়েরির প্রথম পাতায় লেখা ছিলো তুই কবে বুঝবি আমায়! আর কতোটা সময় চাই তোর বলতে পারিস!

এটা দেখার পরে কিছুটা সময় বর্ষা চুপ করে থাকে তার পর পাতা উল্টাতে যাবে তখনই মনে পরে এটা তো বর্ষণের রুম।এখানে ডায়েরি টা পরা ঠিক হবেনা কখন কে চলে আসবে তার ঠিক নেই।

বর্ষা ডায়েরি টা লুকিয়ে নিয়ে নিজের রুমে যায়। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বেডের উপর বসে পরে।ডায়েরি টা খুলবে তখন নিপু এসে দরজা নক করে।
নিপু বলে বর্ষা আপু কি করছো এতোক্ষণ। নিচে এসো আম্মা তোমায় ডাকছে, খাবে চলো।

বর্ষা নিপুকে বলে হুম আসছি তুই যা।
নিপু যেতে যেতে বললো জলদি এসো আপু আমি গেলাম।

বর্ষাঃ তারাহুরো করে উঠে ডায়েরিটা নিয়ে পড়ার টেবিলে বইপত্রের নিচে রেখে দেয়। তারপর আবার ভাবে যদি অন্য কেউ এসে দেখে ফেলে! এখানে রাখা যাবে না। বইয়ের নিচে থেকে ডায়েরি টা বের করে ওয়ার্ড্রপের ড্রয়ারে রেখে দেয়। এবার বর্ষা নিশ্চিন্ত কারণ এটা লক করা থাকে সবসময়। কেউ চাইলেও খুঁজে পাবেনা।

বর্ষা,আর রমা বেগম খাবার টেবিলে বসে আছে নিপু ও এসে বসবে তখন কলিং বেল বেজে ওঠে। নিপু খাবার টেবিলে না বসে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। একটা সুন্দর স্মার্ট ছেলে দাঁড়িয়ে আছে নিপুর সামনে কিন্তু নিপু তাকে চিনে না। এর আগে কখনো দেখেওনি। নিপু বললো কাকে চাই?

ছেলেটিঃ রায়হান আঙ্কেল আছেন? কিংবা উনার স্ত্রী? আমি একটু তাদের সাথে কথা বলতে চাই।

নিপু বললো বাবাই নেই তবে আম্মা আছে। আপনি ভেতরে আসুন।

ছেলেটা ভেতরে গিয়ে রমা বেগমকে সালাম দিয়ে দাঁড়াতেই বর্ষা চমকে উঠে বলে আপনি!

ছেলেটাও ভিষণ অবাক হয়ে বলে বর্ষা তুমি এখানে ! এটা কি তোমার বাসা?

বর্ষা বলে ন..

তার আগেই রমা বেগম বললো হুম এটা ওর ই বাসা। কিন্তু তুমি কে? তোমাকে তো চিনতে পারলাম না! আর তুমি বর্ষাকেই বা চিনো কিভাবে! আর সরি তোমায় দেখে তো আমার ছেলের বয়সী মনে হলো তাই তুমি করে বললাম।

ছেলেটিঃ নো প্রবলেম আন্টি। আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন। আর আমি শাফিন, শাফিন রহমান। আমি আর বর্ষা একি ভার্সিটিতে পড়াশোনা করি।সেখান থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয়।

রমাঃ ওহ্ আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন বসো একসাথে লাঞ্চ করে তারপর বসে বসে গল্প করা যাবে।

শাফিন লাঞ্চ করতে না চাইলেও রমা বেগমের জোরাজোরিতে বসে পরে।লাঞ্চ শেষে সবাই বসে আছে সোফায়। শাফিন রমা বেগমের সাথে কথা বলছে হাসাহাসি করছে অনেটা ফ্রী হয়ে গেছে দুজন।

বর্ষা তো শাফিনকে দেখে কথা বলতে ভুলে গেছে।তার মনে এখন শুধু বর্ষণের ভয়। বর্ষণ জানলে তো নির্ঘাত পুরো দোষ চাপিয়ে দেবে বর্ষার উপর। আর রেগে গিয়ে কি করবে তা একমাত্র আল্লাহ ই ভালো জানে।

শাফিনঃ কি ব্যাপার বর্ষা! তুমি আমায় দেখে কি কোন কারণে অখুশি? কোন কথা বলছোনা যে!তোমাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।

বর্ষাঃ আরে না না ভাইয়া তেমন কিছু না আসলে আপনি হঠাৎ করে চলে এলেন তাও আবার কাউকে না চিনেই!
হ্যা আমাকে চিনেন বাট আপনি তো জানেন না এটা আমার বাসা। ইনফ্যাক্ট আপনি তো আমায় দেখে খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

শাফিনঃ হুম তা একটু অবাক হয়েছিলাম বটে কারণ আমি জানতাম না এটা তোমার বাসা।

রমাঃ চা খেতে খেতে রমা বেগম বললো, হ্যা বাবা তুমি কেনো এসেছো সেটা তো এখনো বললেনা?

শাফিনঃ হুম আন্টি বলছি, আসলে আমি সিরাজ রহমানের ছেলে শাফিন রহমান।

শাফিনের কথাটা শোনা মাত্রই রমা বেগমের হাত থেকে চায়ের কাপটা পরে যায়। কেঁপে ওঠে রমা বেগমের বুক। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পরছে।

রমা বেগমের এমন অবস্থা দেখে বর্ষা রমা বেগমকে জরিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে মামনী তুমি এমন করছো কেনো? কি হয়েছে তোমার?

শাফিনঃ হুম আন্টি কি হলো আপনার? শরীর খারাপ করছে নাকি? ডক্টর ডাকবো?

রমাঃ না না আমি একদম ঠিক আছি। ডক্টরের প্রয়োজন নেই। তা হঠাৎ তুমি এখানে কেনো এসেছো? কে পাঠিয়েছে তোমাকে?

শাফিনঃ আন্টি আসলে আমি এতোদিন কিছু জানতাম না। ইনফ্যান্ট আমার ফ্যামেলি থেকে কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু আজ দুদিন হলো আমি সবটা জানতে পেরেছি। তাই এখানে ছুটে এসেছি।আমার মা আমায় বলেছে।

রমা বেগম শাফিনকে জিজ্ঞেস করলো কি বলেছে তোমার মা?

শাফিনঃ আমার বাবা একা নয় তার আরও একটা ভাই ছিল।সে নাকি নিজের পছন্দে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলো। আমার চাচা চাচি নাকি মারা গিয়েছে কিন্তু তাদের একটা মেয়ে রেখে গিয়েছে। যে কিনা আপনাদের সাথে থাকে।

রমাঃ এতোদিন পরে তোমার মা এটা কেনো বলতে গেলো! এটা বলা কি খুব প্রয়োজন ছিল?তা এতো কিছু বলেছে আর এটা বলেনি, কেন তোমার চাচা চাচি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিল? মেয়েটার কি নাম সেটা জানো?

শাফিনঃ না আন্টি সেটা তো বলেনি কেন বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল।আর চাচার যে মেয়ে তার নামটাও বলেনি। আমি তো শুনেই ছুটে এসেছি তাকে দেখার জন্য তার সাথে কথা বলার জন্য।

রমাঃতাহলে নামটা আমিই বলি তুমি শুনো।সে মেয়ের নাম হলো বলেই চুপ হয়ে যায়।

শাফিনঃ হ্যা বলুন আন্টি কি নাম তার? কে সে? বলুন?

রমাঃ সে মেয়ের নাম মেঘলা ইসলাম বর্ষা।

রমা বেগমের কথা শুনে বর্ষা চমকে উঠে বলে কি বলছো মামনী!

রমা বেগমঃ হ্যা আমি ঠিকি বলেছি তুই হলি সেই মেয়ে। আর তোর বাবা আর শাফিনের বাবা দুই ভাই। শাফিনের বাবা বড় আর তোর বাবা ছিল ছোট।

বর্ষাঃ এসব কথা আমায় আগে কেন বলোনি মামনী?

রমা বেগমঃ বলার মতো তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আর আমি কি বা বলতাম বল, যেখানে তোর মা বাবার সাথে তোর দাদুবাড়ির তেমন কোন সম্পর্কই ছিল না। সেখানে তুই তাদের পরিচয় জেনেই বা কি করতি।

শাফিনঃ তারমানে, আপনি বলছেন বর্ষাই আমার কাজিন?

রমা বেগমঃ হ্যা বর্ষাই তোমার সেই চাচার মেয়ে।

বর্ষা তো শাফিনের দিকে তাকিয়ে কান্না শুরু করে দেয় শাফিন ও বর্ষার কান্না দেখে কান্না করে দেয়।

শাফিনঃ বর্ষার চোখের জল মুছিয়ে বলে এই পাগলি কাঁদছিস কেন।আমি তো এসে গেছি এখন আর তুই একা নয়। আমরাও তো আছি তোর সাথে। আর কখনো যেনো তোর মন খারাপ না দেখি, আর কান্না তো নয়ই।এখন আমি তোর হাঁসি মুখটা দেখে তবেই যেতে চাই।

শাফিনের কথা শুনে বর্ষার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। শাফিন বর্ষার গাল টেনে দিদিয়ে বলে এই তো গুড গার্ল।এ মুখে হাসিটাই মানায়। সবসময় হাসিখুশি থাকবি।

শাফিনঃ আচ্ছা আন্টি আমি এখন আসি।বাসায় যেতে হবে। বর্ষা থাক আসি, কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে।

এদিকে বর্ষণ অফিসের কাজের চাপে তো এতোটাই বিজি যে খাবার সময়টা পর্যন্ত পাচ্ছেনা।অনেকটা রাত করে বাসায় ফেরে বর্ষণ। তাই রাতে আর বর্ষণকে কিছু বলেনি রমা বেগম।

সকালে বর্ষণকে কফি দিতে গিয়ে রমা বেগম গতকালের ঘটনাটা বলে। কিন্তু এটা বলতে ভুলে যায় যে,ছেলেটা শাফিন ছিল।

বর্ষণ সবটা শুনে চুপ করে আছে। হয়তো বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত সে। কিছু একটা ভাবছে বসে।তারপর নিজের মমকে বলে, মম এসব নিয়ে টেনশন করোনা। আমি সবটা সামলে নিবো। কয়েকটা দিন কাজের খুব প্রেশার এটা আগে সামলাতে দাও তারপর বর্ষার পরিবারের বিষয়টিও আমি সামলে নিবো।

বর্ষণের কথায় রমা বেগম একটুৃ শান্তি পেলো।কারণ রমা বেগম জানে বর্ষণ সবটা সামলে নিতে পারবে। রমা বেগম একটু হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো তুই ফেশ হয়ে নিচে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here