#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:37
#Suraiya_Aayat
আয়াশ রুমে ঢুকতেই নুর আয়াশের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ৷ নূর কিছু বলছে না দেখে আয়াশ নূরের পাশে বসে বলল
” খালামনিকে ফোন করে খবর দিয়েছো আফু সোনা?”
নূর কিছু বলছে না এখনো আগের মতোই আয়াশের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছে, আজ আর ঠিক করে কথা বলার মন মানসিকতা নেই , ওদের জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলো নূর জানে না আজ ওর সবটা জানার প্রয়োজন ৷ আয়াশ এবার খানিকটা গাঢ় কন্ঠে বলল
” কি হয়েছে কিছু বলছো না যে !”
নূর আর চুপ করে থাকতে পারলো না ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল
” কিসের খালামনি আপনার উনি ? উনি তো আপনার নিজের খালামনি নন তাহলে কিসের এতো অভিনয় আপনাদের ? আমি একটা বাইরের মেয়ে আর আমার সামনে কিসের এতো আত্মগোপনের প্রয়োজনীয়তা আপনাদের বলুন! ”
আয়াশ নূরের মুখের দিকে বেশ কিছুখন তাকিয়ে রইলো তারপর মুচকি হেসে ফেলল, নূর কোঁচকানো চোখে আয়াশের দিকে তাকিয়ে রইলো, আয়াশ বলল
” এই না হলে আমার বউ !”
নূর আগের তুলনায় আরও রেগে গিয়ে বলল
” অযথা ছলনা করা কথা বাত্রা বলে আজ আপনি আমাকে ভোলাতে পারবেন না, হয় আপনি আজ সব বলবেন নাহলে আমি…”
কথাটুকু শোনার পর আয়াশ বলল
” নাহলে তুমি, কি? কি করবে আফু সোনা ?”
নূর এবার চোয়াল শক্ত করে বলল
” নাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো, আর যাই হোক কখনো এভাবে একটা সংসার হয় না ৷”
আয়াশ নুরের গালে স্লাইড করতে করতে বলল
” এত সাহস তোমার আছে আফু সোনা?”
নূর এবার আয়াশের হাতটা ঝাড়ি মেরে বলল
” সাহস তৈরি করে নিতে আর কতক্ষন ৷ ”
নূর আবারো বলে উঠলো
“শেষ বারের মতো বলছি, আপনি কি বলবেন নাকি না ?”
আয়াশ চুপ করে রইলো আর মুচকি মুচকি হাসলো দেখে নূর রাগে তিরতির করে উঠলো, বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই আয়াশ নূরের হাতটা ধরে ফেলল, নূর হাত ছাড়াতে গিয়েও পারলো না ৷ এবার রেগে গিয়ে বলল
” হাত ছাড়ুন নাহলে খারাপ হবে, আপনাকে এতদিন মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু আজ থেকে তা হয়তো আর সম্ভব না কারন পুরো মিথ্যার জগতে থেকে নিজেকে ঢেকে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না আর আমি পারবোও না ৷”
আয়াশ নূরের হাতটা ছেড়ে বলল
” আজকে আমরা সেই রাজকুমারীকে খুজবো আফু সোনা তারপর সবটা জানাবো তোমাকে ৷”
নূর চমকে গেল, অবাক হয়ে বলল
” মানে টা কি! মজা করছেন আমার সাথে? রাজকুমারী যে কল্পনাতে তা কি এখন ভুল প্রমানিত করতে চাইছেন?”
আয়াশ এবার উচ্চস্বরে হেসে বলল
” চলো তাহলে কল্পনাটাকেই না হয় বাস্তব করার চেষ্টা করি তাতে ক্ষতি কি? এতে যদি রজকুমারী ফিরে আসে !”
নূর কিছু বুঝলো না তবুও আয়াশ কথাটা যখন বলেছে এমনি এমনি নিশ্চয় বলেনি সেটা ভেবে নূর আয়াশের কথাটা বিশ্বাস করে বলল
” কোথায় আছে সেই রজকুমারী, আর সে ই বা আপনার কি হয়,আর তাকে কোথায় পাবো?”
আয়াশ পাঞ্জাবী র হাতাটা ভাজ করে বলল
” এই জমিদার বাড়ির কোন গোপন কক্ষেই আছে সে আর তাকে খুঁজতে আমাকে সাহায্য করবে তুমি ৷ কখন কীভাবে কি করতে হবে আমি সব তোমাকে জানাবো ৷”
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল, নূর থ হয়ে রইলো ৷ তাহলে কি ওর স্বপ্নটাও সত্যি , এই রাজকুমারী, সেই রাজকুমারীর স্বামীর পরকীয়া , সেই অন্ধ মানবী,,,সবই কি সত্যি ? কথাটা ভাবতেই নূর কেঁপে উঠলো তবে ওর কাছে সবচেয়ে যে বড়ো প্রশ্নটা থেকে যায় তা হলো
” আয়াশের সাথে তার সম্পর্ক কি? কে সে?আর নূর ই বা তাকে সাহায্য করবে কীভাবে?”
কথাগুলো একত্রে মাথার ভিতর অদ্ভুত রকম একটা চাপ সৃষ্টি করছে, পাগল পাগল লাগছে নূরের নিজেকে ৷
চারিদিকে কান্নার রেশ কেটে ওঠেনি এখনো ,সবাই কেঁদেই চলেছে ৷ নূর দূর থেকে সেই বউটাকে দেখছে কিভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সে ,তাকে দেখে নূরের চোখে জল চলে এলো, মেয়েটাও হয়তো শেষ পর্যন্ত ওনাকে বাঁচানোর অপ্রান চেষ্টা করেছে ৷ নূরের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইফার মা, আর তেহেরাত সাহেব দূরের একটা চেয়ারে একা একা বসে আছেন ,মুখ দেখে তার মনের অবস্থা বোঝার উপায় নেই, নূর একবার ওনার দিক থেকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো ৷ নূর এবার পাশ ফিরে তাকাতেই ইফার মায়ের সাথে চোখাচোখি হলো উনি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন , ওনাকে দেখে নূরের মাঝে সুপ্ত রাগ জেগে উঠলো , উনিও এতদিন ধরে মিথ্যা বলে এসেছেন ওকে, এমনকি ইফাও ৷ সবার প্রতি ভীষনভাবে বিরক্ত নূর ৷
নূর ওখান থেকে চলে আসতে গেলেই ইফার মা বললেন
” কোথায় যাচ্ছো?”
নূর বেশ কিছুখন থেমে বলল
” একটু রূমে যাচ্ছি শরীরটা অসুস্থ লাগছে ভীষন, অসস্তি হচ্ছে ৷ বমিও লাগছে খুব ৷”
উনি ব্যাস্ত হয়ে বললেন
” আমি যাই তোমার সাথে ?”
নূর একটু রাগী কন্ঠে বলল
“নাহ তার দরকার হবে না, আমি একাই পারবো ৷”
কথাটা বলে নূর খানিকটা দ্রুত পায়ে হাটলো ৷ হ্যাঁ সত্যিই বমি পাচ্ছে ওর, এতখন তো ও ঠিকই ছিলো হঠাৎ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল ৷ কল ঘরে যেতে না যেতেই বমি করে ফেলল, শরীরটা ভীষন রকম ক্লান্ত ৷ সারা বাড়ি জুড়ে মানুষজন ভর্তি , দমবন্ধ করা পরিবেশ ৷ নূর চোখ মুখ ধুঁয়ে ঘরে যেতেই আয়াশ হাত ধরে টানতেই নূরের ক্লান্ত শরীর আর টাল সামাল দিতে পারলো না, এটু হুমড়ি খেয়েই পড়লো আয়াশের ওপর ৷ আয়াশ হয়তো ব্যাস্ততার মাঝে ছিলো তাই খেয়াল করতে পারেনি যে নূর অসুস্থ ৷ আয়াশ নূরকে ধরে ফেলল তারপর অনেক ব্যাস্তাতর সাথে বলল
” শোনো আফু সোনা সামনে একটা বিরাট সুযোগ আসছে, হাতছাড়া করলে আর হয়তো সেই সুযোগ পাবো না, কাজটা তোমাকেই করতে হবে ৷”
নূর দূর্বল অনুভব করলেও আয়াশের মুখ দেখে খানিকটা শক্তি পেলো তার ওপর আয়াশ ওকে একটা কাজ দিয়েছে সেটাও ঠিকঠাক করে হবে, ও উ জানতে চায় কে সেই রাজকুমারী আর কে হয় সে আয়াশের….তারপর রাজকুমারীর বোনের কাহিনী সে জানতে চায় ৷ নূর একটু তাজা কন্ঠে বলল
“বলুন কি করতে হবে !”
আয়াশ এদিক এদিক তাকিয়ে হঠাৎই নূরকে বুকে টেনে নিলো,,নূর তো অবাক তবুও কিছু বললো না, আয়াশের বুকে এক প্রকার প্রাশান্তি অনুভব করছে ও ৷
আয়াশ এবার নূরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল
“শোনো আফু সোনা আর কিছুখন পর বড়ো মামির দাফনের কাজ শুরু হবে তখন তুমি সেই বউটার কাছে যাবে যে ওনার খেয়াল রাখতো তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করবে যে প্রিয়ন্তি মোস্তফা কোথায় ?
কথাটা শুনে নূর অবাক হলো না কারন নূর আয়াশের মায়ের নাম এখনো জানে না ৷
নূর অবাক হয়ে বলল
” আমি জিজ্ঞাসা করলেই কি উনি এতো সহজে বলে দিবেন?”
আয়াশ অনেক ভরসা নিয়ে বলল
” হ্যাঁ বলবে কারন একমাত্র সে ই জানে যে রাজকুমারী কোথায় ৷”
নূর এবার আয়াশে ছেড়ে বলল
” আপনি কি রে শিউর হচ্ছেন যে উনি এতো সহজে সব বলবেন?”
আয়াশ নূরের গালে হাত রেখে বলল
” সে বলবে , বলতে বাধ্য ৷ তুমি শুধু তাকে বলবে যে বড়ো মামীকে কে মেরেছে সেটা তুমি জানো আর সে যদি বলে তাহলে তুমি প্রমান সহ জানাবে যে কে তাকে মেরেছে ৷”
নূরের সারা শরীর শিউরে উঠলো, কেঁপে উঠে বললেন
” কি বলছেন এসব ! উনাকে খুন করা হয়েছে? কে করেছে? কেন করেছে?”
আয়াশ নূরের কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল
” এখন এতো কিছু জানতে চেয়ো না আফু সোনা ,এখন আমি বলতে পারবো না পরে সবটুকু বলবো তোমাকে ৷”
নূর বললো
” কিন্তু আমি তো জানি না যে কে খুন করেছে , তাহলে ওনাকে কি বলবো ৷”
আয়শ মুচকি হেসে বলল
” তুমি না জানলেও বলবে যে জানো আর তাকে রিতিমতো তুমি বাধ্য করবে বলতে যে প্রিয়ন্তী মুস্তফা কোথায় সেটা বলতে ৷ বুঝলে?”
নূর মাথা নাড়ালো , সব কেমন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে ৷ নূর আবার বললো
” কিন্তু আমি তো সত্যিই কিছু জানি না ৷”
আয়াশ বেরিয়ে যেতে যেতে বলল
” আফু সোনা ৷”
নুর তাকিয়ে বলল
” বলুন ৷”
আয়াশ ওর বুকে হাত রেখে বলল
” না বললেও কিন্তু ভালোবাসি ৷”
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল ৷ নূর স্তব্ধ হয়ে গেল ৷ ও কি ঠিক শুনেছে ? আয়াশ ওকে ভালোবাসি বলেছে ৷
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:38
#Suraiya_Aayat
বড় মামীর দাফনের কাজ শেষ হয়েছে, ওনাকে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ বাড়ির মহিলারা বলতে গেলে সব একই জায়গায় ৷ নূরের শরীরটা ক্লান্ত লাগছে তবুও নূর গেল ওই বউটাকে খুজতে লাগলো ,এত ভিড়ের মানুষের মধ্যে বউটাকে কোথায় খুঁজে পাবে ও বুঝতে পারছে না ৷যেখানে এতখন সেই বউটা বসে ছিলো ওখানেও এ নেই ৷ এতো বড়ো বাড়িতে ঠিক কোথায় খুজবে ওনাকে বুঝতে পারছে না নূর ,তারপর হঠাৎ মাথায় এলো যে এখনো তো ওই ঘরটাতেই খোঁজা হলো না যেখানে বড়ো মামীকে রাখা হতো ,নূর একটু তাড়াতাড়ি সেদিকে গেলো যদি ওখানে থাকে ৷ রাত পেরোলেই সম্পত্তির ভাগ বাটোরা হওয়ার কথা,কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও এই কার্য পদ্ধতি চলবে কি নূর জানে না তবুও এই বাড়ির লোকেরা বড়ো মমীকে নিয়ে যতোটা উদাসীন ছিলো তাতে মনে হয় না যে এতে তাদের কোন যায় আসে,,বরং তারা হয়তো ভাববে যে তাদের ঘাড় থেকে একটা আপদ বিদায় হলো ৷ একমাত্র ছোট মামীকে ছাড়া আর ছোট মামীর বড়ো বউকে ছাড়া নূর কাউকে কাঁদতে দেখেনি ৷ নূর খানিকটা দৌড়েই সেখানে গেলো ৷ শরীরের আপাতত অবস্থা কি তার কোন খেয়াল করছে না এখন ৷ রাত এখন 9টা মতো বাজে ৷ নূর দৌড়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো সেই ঘরে ৷ আচমকায় দরজাটা খুলে ঘরে ঢোকায় ঘরের মধ্যে থাকা মেয়েটা চমকে উঠলো ৷ নূর সেখানে মেয়েটা কে দেখে আকাশের চাঁদ খুজে পেলো যেন ৷ মেয়েটা একপ্রকার চমকে উঠলো, মেয়েটা কিছু এটা করছিলো আর তখনই নূর এলো কিন্তু সে কি করছিলো তা নূর বুঝতে পারেনি ৷ নূরকে দেখে মেয়েটি বলল
” তুমি এখানে ! কি করছো তুমি এখানে ? যাও এখান থেকে ৷”
মেয়েটার গলর আওয়াজ আর চোখ মুখের অবস্থা দেখে নূর ভয় পেলো কিন্তু ভয় পেলে যে চলবেনা তাই সাহস নিয়ে বলল
” আমি জানি বড়ো মামী কি রে মারা গেছেন আর কিভাবে খুন হয়েছেন তাও জানি ৷”
মেয়েটা এবার পাগলের মতো করে বলল
” তুমি কি করে জানলে? আর হঠাৎ এই কথা বলছো, তোমার উদ্দেশ্য কি?”
নূর অন্য দিনের মতো ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গেল না, বেশ সাহসের সাথেই বলল
” হ্যাঁ অবশ্যই আমার উদ্দেশ্য আছে, কিন্তু আমি বলবো একটা শর্তে ৷”
উনি অবাক হয়ে বললেন
” আমার জানতাম তোমার কোন স্বার্থ আছে ৷”
নূর ঢোক গিলে বললো
” হমম ৷”
কতটা শোনা মাত্রই মেয়েটা হো হো করে হেসে উঠলো তারপর বলল
” কি প্রিয়ন্তি মুস্তফাকে খুঁজতে এসেছো বুঝি ?”
নূর কথাটা শুনে চমকে গেল ,ভয়ে আর তার কথা বলার ধরনে খানিকটা পিছিয়ে গেল, মেয়েটার চাহনিটা অদ্ভুত লাগছে নূরের কাছে তবুও সাহস নিয়ে বলল
” হমম, ঠিক ধরেছো তুমি, আমি ওনাকেই খুজতে এসেছি ৷ কোথায় উনি ?”
উনি তখন ঘর কাঁপানো একটা হাসি দিয়ে বললেন
” তুমি জানো আমি কে?”
ওনার বলার ধরন দেখে নূর একটু ভয় পেয়ে গেল তারপর বলল
” কে আপনি?”
” আমি এই বাড়ির বড়ো বউ, যে মারা গেছেন তার বড়ো ছেলের বড়ো বউ, কিন্তু এই বাড়িতে আমার কোন পরিচিতিই নেই, কেন জানো ?”
নূর চমকে গেল ওনার কথা শুনে তারপর বলল
” কেন?”
উনি এবার বলতে শুরু করলেন
” শুধু মাত্র আমার শাশুড়ি মায়ের জন্য ৷”
নূর বুঝতে পারছে না কিছুই তাই অবুঝের মতো বলল
” মানে কি বলছেন বুঝতে পারছি না ৷”
উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন
” কথা বলার ভাব দেখে তো মনে হচ্ছে না যে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারোনা ৷ প্রিয়ন্তি মুস্তাফাকে খুঁজতে এসেছো আর এটা প্রমান করছো যে কিছু জানো না,হস্যকর না বিষয়টা ?”
নূর অবাক হয়ে বলল
” আমি সত্যিই কিছু জানি না, কাইনডলি যদি বুঝিয়ে বলেন ৷”
উনি এবার নূরের মুখের দিকে বেশ কিছুখন চাওয়া চাইয়ি করে বলল
” তুমি সত্যিই কিছু জানো না?”
নূর মাথা নাড়ালো ৷
উনি এবার বলতে শুরু করলেন
” আমার শশুড়ি তিনি বেশ কয়েক বছর আগে তোমার শ্বশুর তেহেরাতের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয় ,তা একদিন জানা জানি হয় যে দিন এই বাড়ির ছোট মেয়ে পালিয়ে যায় সেদিন,তারপর থেকে অনেক মানসিক অত্যাচার করা হতো আমার শাশুড়িকে, আমার শ্বসুর তার প্রতি বিমুখ হলেন,দূরে সরিয়ে দিলেন তাকে, এরপর অনেকগুলো বিয়ে করেন যেটা উনি সহ্য করতে না পেরে দিনদিন মনসিক চাপে পড়েন তারপর হঠাৎ একদিন ভীষন রকম অসুস্থ হয়ে যান তিনি, বেশ পাগলের মতো আচরন করেন ,যখন
এই বাড়ির নতুন বউরা কথাটা জানতে পারলে তার দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি এই বাড়ির বউ হয়ে আসি তারপর, আমার সাথে ওরা কাজের লোকের মতো ব্যাবহার করতো , এদিকে আসল কারনটা আমি জানতাম না তারপর একদিন আমার স্বামী সবটা আমাকে বলেন আর তারপর আমি ওনার দেখাশোনা করি ৷”
কথাটা বলে থেমে যেতেই নূর থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,,এগুলো কি শুনছে ও ৷ এখন সবটা ওর কাছে জলের মতো পরিষ্কার , তারমানে আয়াশের বলা কথাগুলো ঠিক,,রাজকুমারী আর কেউ না ওর শাশুড়ি মানে আয়াশের মা , নূর শিউরে উঠলো ৷ নিজের শ্বশুরের প্রতি রাগ টা ও হলো তীব্র ৷তবুও নিজেকে সামলে বলল
” তাহলে আপনি প্রিয়ন্তি মুস্তফার খোঁজ পেলেন কিভাবে ?”
কথাটা শুনে উনি বললেন
” বাহ রে আমি জানবো না ? আমার স্বামীই তো এতকাল ওনার দেখাশোনা করে আসছে, তাকে অন্ধ অবধি করে দেওয়া হয়েছে ৷ প্রায় কয়েক বছর হয়ে গেল তার হিসাব নেই যে ওনার সাথে আমার কথা পাশাপাশি বসে কথা হয়না, চোখে চোখ রেখে বলতে পারিনা ভালোবাসি ৷ প্রথমে তো বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু এখন আর পারবো না, শুধু মাত্র এই বাড়িতে অধিকার পাওয়ার লোভ দেখিয়ে ওরা আমাদেরকে দিয়ে এতো কিছু করিয়েছে, এতদিন সহ্য করেছি কিন্তু এখন আর না, ওরা আমাকেও বাঁচতে দেবে না, একে একে আমাদের সবাইকে শেষ করে দেবে আর আমি তা হতে দেবো না , তাই আমি তোমাকে প্রিয়ন্তি মুস্তফার কাছে পৌছে দেবো , কারন এরপর ওরা ওনাকে আর আমার স্বামীকে শেষ করে দেবে ,,আমি সব হারিয়েছি আর নিজের স্বামীকে হারাতে পারবো না ৷ তাই তাড়াতাড়ি চলো আর বেশিখন সময় নেই আমাদের হাতে ৷”
নূর এতকিছু শুনে অবাক হলো, হচ্ছে কি এগুলো,,কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে আসছে, এই বাড়ির প্রতিটা মানুষ মুখোশধারী ৷ নূর কাঁপা কন্ঠে বলল
” কোথায় পাবো ওনাকে ?”
বউটা বললো আমার সাথে এসো ৷ নূর চুপ করে রইলো ৷ হঠাৎ করে বউটা মাটিতে বসে পড়ে বিছানা পেতে রাখা মাদুড় আর তোষকটা সরিয়ে দিলো, সরিয়ে দিতেই সেই জায়গাটা জুড়ে কাঠের একটা ঢাকনা মতো দেখতে পেলো,তারপর মেয়েটা তার কোমর থেকে একটা চাবি খুলে সেই ঢাকনাটা খুলতেই দেখতে পেলো সেখান থেকে আলোর ছটা বেরিয়ে আসছে ৷ নূর দু কদম পিছিয়ে গেল, এতো কিছু ?
তারপর ওই মেয়েটা নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” আসো আমার সাথে…”
কথাটা বলে উনি নামতে লাগলো ,নূর সেই সূড়ঙ্গের দিকে তাকালো,কতো সিঁড়ি সেখানে, আর মাঝে মাঝে আগুন জ্বালানো আছে ৷ মেয়েটা কি তাড়াতাড়ি নামছে আর নূর ভয়ে ভয়ে ধীরে ধীরে নামছে ৷ হঠাৎ সিঁড়িটা একটা জায়গায় এসে শেষ হতেই দেখলো একটা বিরাট জায়গা আর তার মাঝে জেলের মতো লোহা দিয়ে ঘেরা অঞ্চল,সেখানে বসে আছেন সেই রাজকুমারী যার গল্প নূর এতদিন শুনেছে আর আজ তাকে প্রথম দেখছে ৷চেহারার সেই জৌলুস আর নেই, মুখে বলিরেখা,,চোখের নীচে কালি বিধ্বস্ত অবস্থা ৷তার পাশে একটা লোক বসে আছে তার হাত ধরে সেই বউ টা কাঁদছে ৷ নূরের গলা ধরে এলো , সবকিছু মিলে মিশে একটা আবেগঘন মুহূর্ত ৷নুর প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আছে, উনিও নূরের দিকে তাকিয়ে আছে, মুখে আছে ক্ষীন হাসি ৷ নূর ধীর পায়ে এগোলো তার দিকে ,নূরকে এগোতে দেখে উনিও উঠে দাঁড়ালেন, লোহার বেডি গুলো ধরে আছেন,গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না ৷ হঠাৎ বউটা তার স্বামীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলল
” ফুপি এটা আপনার বৌমা,,আয়াশের বউ ৷”
ওনার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে, হাত দিয়ে মুছে নিলেন,,কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না ৷ নূরের চোখ দিয়েও আবেগে জল গড়ালো ৷ হঠাৎই কারোর পায়ের খটখট আওয়াজ শুনে ওরা সবাই ভয় পেয়ে গেল ৷ বউটা ভয় পেয়ে বলল
” খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে, আসার আগে দরজাটা দিয়ে আসা হয়নি ,তাহলে আমরা কি ধরা খেয়ে গেলাম ?”
ওরা সবাই অনেক ভয় পেয়ে গেল, হঠাৎ সিঁড়ি বেয়ে গটগট করে নেমে এলো আয়াশ ৷ আয়াশকে দেখে ওরা চমকে গেল ৷ বহু বছর পর নিজের ছেলেকে দেখে উনি স্তব্ধ হয়ে গেলেন অপর দিকে আয়াশের চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে ৷ এই প্রথম নূর আয়াশকে কাঁদতে দেখলো ৷
#চলবে,,,
#চলবে,,,,
রিচেক দিইনি,তাই একটু আধটু বানান ভুল থাকতে পারে ৷