তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ৪৯+৫০

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব49
#Suraiya_Aayat

আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল আরাফাত সাহেব হসপিটালে রয়েছেন আজকে তিনি রিলিজ পাবেন৷ এই কদিনে অনেকজন হসপিটালে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন৷ নূরের মা তিনি সবসময় ওনার খেয়াল রাখতেন, উনি হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন তাই ডক্টর বলেছেন যেন তার ঠিকমতো খেয়াল রাখা হয় এবং সময়মতো ওষুধ নিতে এবং দুশ্চিন্তা না করতে৷
অতীতে আরাফাত সাহেবের সমস্ত কর্মকাণ্ড তাছাড়া আয়াশের মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে আসল কারন এই সবকিছুই নূরের কাছে অজানা কারন আয়াশ নূরকে কিছু বলেনি আর কখনো বলতেও চায়না তার কারণ আয়াশ চায়না যে নূরের চোখে তার বাবা নিচে নেমে যায় তাহলে নুর তার বাবাকে কাছে পেয়েও তার থেকে অনেকটা দূরে সরে যাবে৷
মায়া আর রেদোয়ান ও এসেছেন ওদের মাঝে আপতত সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে৷
নূর আজকে আর হসপিটালে আসেনি,আয়াশ ওকে আসতে দেইনি কারন এতোটা রাস্তা জার্নি করলে নূর অসুস্থ হয়ে পড়বে৷
আরাফাত সাহেব কথা বলছেন না, ডক্টর ওনাকে বেশি কথা বলতে বারন করেছেন৷
বিছানায় বসে নূর ছটফট করছে,মনের মাঝে অসস্তি কাজ করছে না পেরে আয়াশকে কল করলো৷
“হ্যালো বাবার ছুটি হয়েছে?”

আয়াশ মৃদু কন্ঠে বলল
” হমম ছুটি হয়েছে”

“এখন কেমন আছে?”

“আপাদত সুস্থ আছে কিন্তু কথা বলছেন না ডক্টর বারন করেছে ওনাকে বেশি কথা না বলতে৷”

“সাবধানে ফিরবেন৷”

“হমম৷”

কথাটা বলে নূর কলটা কাটতেই যাবে তখন আয়াশ বলে উঠলো
“আফু সোনা৷”

নূর মুচকি হেসে বলল
“হমম বলুন৷”

আয়াশ বেশ কিছুখন থেমে বলল
“কিছু খাবে?”

নূর ফিক করে হেসে বলল
“আপনি কি করে বুঝলেন৷”

“বুঝতে হয়৷ কি খাবে বলো৷”

“আসার সময় একটু আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে আসবেন৷”

আয়াশ কিছু না বলে মুচকি হেসে কলটা কেটে দিলো৷

নূর বালিশে মাথা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, সময় পরিবর্তেনর সাথে সাথে আয়াশের স্বভাব আর ব্যাবহার গুলোও যেন ভীষনভাবে পাল্টে গেছে৷ আয়াশ এখন অর আগের মতো ডেভিলগিরি করে না আর না নূরের ওপর কোন জুলুম করে বরং নূরের প্রতি কেয়ারনেসটা দ্বিগুন হয়েছে এই কদিনে৷
কতো কিছু ভাবতে ভাবতে নূর ঘুমিয়ে পড়লো কখন খেয়াল ই নেই৷

……..

ইফার মা ওরফে আয়াশের খালমনি খানিকটা চাপা স্বরে প্রশ্ন করে উঠলেন
“আয়াশ বাবা নূর কি সব কিছু জানে?”

আয়াশ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল
” ঠিক কোন কথাটা খালামনি?”

“এই যে কি কারনে এত সব কিছু হয়েছে আর তাতে ওর বাবার ভূমিকা ঠিক কতোটা এই সব বিষয় ৷”

আয়াশ ফোনটা পকেটে রেখে বলল
“নাহ আমি ওকে এসব কিছুই জানায়নি কারন এসব ওকে জানালে ও কষ্ট পাবে তাছাড়া আমি মনে করি মানুষকে শোধরানোর একটা সুযোগ দেওয়া উচিত তাই আরাফাত আঙ্কেলের ও একটা সুযোগ পাওয়া উচিত আর আমার যতদূর মনে হয় যে উনি শিক্ষা পেয়েছেন আর শুধরেও গেছেন৷”

উনি একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
“হ্যাঁ রে নূরকে তোর ল্যাবের কথা বলেছিস এখনো?”

আয়াশ হো হো করে হাসতে হাসতে বলল
” আমকে কিছু বলতে হয়নি সে নিজেই ঠিক খুঁজে নিয়েছে৷”

উনিও বেশ কৌতুহল নিয়ে বললেন
“কিভাবে?”

আয়াশ বলতে শুরু করলো
” সেদিন কোনভাবে আয়াশ ওয়াশরুমের ট্যাপ কলটা ও টানতেই খুলে পড়ে গিয়েছিলো আর ওখানেই তো আমি চাবি রাখার জায়গা করেছিলাম তা তুমি জানো৷ আফুসোনা ঠিক কোনভাবে সেটা দিয়ে লক খুলে আমার ল্যাব অবধি চলে আসে‌৷ আমি তখন ল্যাবেই ছিলাম আর নূরের মা মানে আমার খালামনি তিনিও সেখানেই ছিলেন কারন আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছিলাম আর তাতে তিনি আমাকে সহায্য করছিলেন৷”

উনি আগ্রহ নিয়ে বললেন
” আপু তোকে আবার কি সাহায্য করছিলো?”

“তুমি তো জানো যে একবার ইফা আর নূর পার্কে গিয়েছিলো আমার সাথে তখন কেও ওকে দোলনা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করে তাকেই চেনার চেষ্টা করছিলাম৷”

উনি অবাক হয়ে বললেন
“কে সে? কে এতো বড়ো ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো?”

আয়াশ বেশ গম্ভীর স্বরে বলল
“মামা,মামা ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো আর তার জন্য উনি একজনকে পাঠিয়েছিলেন যিনি জমিদার বাড়ির ই একজন তবে বেশ দূর সম্পর্কের৷ওনাকে আমি ধরতে পেরেছিলাম আর উনি অমাকে মারতে চেষ্টা করেছিলেন তাও আমার ল্যাবেই তাই আমিই তার আগে ওনাকে মারি তারপর ওনার বডি থেকে কিছু নমুনা কালেক্ট করি আর সেটা পরে খালামনির বডির ডি এন এর সাথে মেলানোর চেষ্টা করি,আর সৌভাগ্য বশত মিলেও যাও যার থেকে প্রমানিত হয় তারা একই বংশের৷”

“কে সে? আর তার ই বা স্বার্থ কি?”

“আমি এই কথাটা এখনো খালামনিকে বলিনি,কথাটা নিজের মাঝেই রেখেছি, মামার প্রতিবেশি জেলার এই সুন্দরী মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো আর তার দরুন সেই সন্তান তবে যে সন্তানের মর্জাদা পাইনি কারন মামা তাকে সেই মর্জাদা দেইনি আর ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তিনি তাদের মা আর ছেলেকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন৷”

“তুই এসব কি করে জানলি আয়াশ?”

আয়াশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল
“যেদিন আমি নাটোর যাই সেদিন সন্ধ্যায় মামা আমাকে ডাকেন সবকিছুর ভাগিদারী নেওয়ার জন্য ,আমি তাকে খুব স্পষ্ট জানিয়েছিলাম যে আমার কিছুর প্রয়োজন নেই৷ কথাটা বলে আমি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম তারপর জমিদার বাড়ির বাইরে এসেছিলাম কারন মামা ওপর রাগ হচ্ছিলো ভীষন,অন্ধকারের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখনই এক মহিলা কন্ঠের কান্নার আওয়াজ পেতেই প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম,তারপর একটু ভড়কে গেলেই কান্ঠটার উৎস খোঁজার চেষ্টা করতেই ফিসফিসিয়ে গলার আওয়াজ পেলাম৷”

“উনি আমাকে সেই প্রথম থেকেই ধোকা দিয়ে আসছেন আমি বুঝতে পারিনি,প্রথমে তো আমার সন্তান আর আমার কোন পরিচয় দেইনি তার ওপর এই কয়েকমাস হলো সব যোগাযোগ একেবারের জন্য বাচ্ছিন্ন করেছেন৷ কাকে যেন খুন করার জন্য আমার ছেলেটাকে পাঠিয়েছিলো এখন আমার ছেলেও ফেরেনি,ছেলেটা বেঁচে আছে কি মরে গেছে তাও জানিনা৷ আমার ছেলের কিছু হলে আমি ওনাকে ছাড়বো না এটা ওনাকে বলে দেবেন৷”

“আঁচলে মুখ টিপে উনি কাঁদছিলেন,কাকে কথা গুলো বলছিলেন প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝলাম যে বাড়ির দারোয়ানের সাথে কথা বলছেন,দারোয়ান ও তাকে বেশ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দিতেই আমি ওনার পিছু নিলাম আর ওনার থেকে সব কথা জানলাম৷”

ইফার মা অবাক হয়ে বললেন
“উনি এতো সহজে রাজি হয়ে গেলেন বলতে?”

“নাহ,এতো সহজে বলেননি,সব জানার জন্য যে বললাম যে ওনার ছেলেকে মামু মেরে ফেলেছে সে নাকি মামুর পথের কাটা,যদিও ছেলেটাকে আমিই মেরেছিলাম কারন ও আমার আফুসোনার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলাম,আর মামু ওদেরকে পথের কাটায় মনে রতো,সব কুকির্তি ফাস হওয়ার ভয়ে এতোদিন যোগাযোগ রেখেছিলেন৷”

কথাটা শেষ হতেই ইফার মা বলে উঠলেন
“ছিহ! একটা মানুষ এতোটা যঘন্য কীভাবে হয়! উনি আসলেই কি মানুষ ?”

আয়াশ মুচকি হাসলো আর কিছু বললো না৷ কিছুখন পর আয়াশ আবার বলতে শুরু করলো
“এই ভাবেই জানলাম৷ আর কি হয়েছিলো শোনো তারপর৷”

“হমম বল৷”

“আফুসোনা লিফট থেকে নামলো,আমি আর খালমনি দেখতে বুঝতে পেরেছিলাম যে কেউ আসছে আর তা আফুসোনা ছাড়া আর কেও হবে না তাও জানতাম,আমি তো ঠিক রেখেছিলাম সেদিনই নূরকে সব সত্যি বলে দেবো কিন্তু খালামনি সামান্য নূরের নাম ধরে ডাকতেই ও অঞ্জান হয়ে পড়ে গেল,এত অল্পতেই যে ভয়ে ঞ্জান হারায় আমার মনে হয়না সে সবটুকু শোনার অবস্থায় থাকবে৷”

“তাও ঠিক, বলার দরকার নেই ওকে ৷ এমনিতেই মেয়েটার শরীর ভালো যাই না তার ওপর এসব বললে‌৷”

আয়াশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বলল
” আচ্ছা খালা মনি আমি আসি,আফু সোনা একা আছে‌৷ আর তোমরা কালকে শপিং এ যাচ্ছো তো?”

” আমি তো যাবো না,ইফা-আহান,রেদোয়ান আর মায়া যাবে বোধহয়৷ তুই আর নূর যাবি?”

“নাহ,আফুসোনার এই সময় কোথাও যাওয়াটা ঠিক হবে না, ওরা যাক৷”

আয়াশ বেরিয়ে গেল, রুমে গিয়ে দেখলো নূর গাল ফুলিয়ে রাগ করে বসে আছে আর তা দেখে আয়াশ নূরের কাছে গিয়ে বসে নূরের গালটা টেনে দিয়ে বলল
” কি হয়েছে আফু সোনা, মন খারাপ?”
নূর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো৷ আয়াশ নূরকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বলল
” রগ করে আফু সোনা, খালমনির সাথে কথা বলছিলাম তাই দেরি হয়ে গেল৷”

নূর আয়াশের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বলল
” আপনার বেবিও যে আপনার জন্য অপেক্ষা করে তার খেয়াল কি আপনার থাকে?”

আয়াশ হো হো করে হেসে বলল
” শুধু কি বাবু নাকি বাবুর আম্মুও অপেক্ষা করে কোনটা?”

” সবকিছু কি মুখে বলতে হয়?কিছু কথা বুঝে নিতে হয়৷”

আয়াশ নূরকে জড়িয়ে হেসে ফেলল৷
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:হাফ সেঞ্চুরি (সমাপ্ত)
#Suraiya_Aayat

দেখতে দেখতে ইফা-আহান আর রেদোয়ান-মায়ার বিয়ের দিন চলে এলো, কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েটা হবে কারন দুটো আলাদা আলাদা পরিবারের বিয়ে আর একসাথে যেহেতু হওয়ার কথা তাই আলাদা আলাদা সম্ভব না সেহেতু কমিউনিটি সেন্টারে একসাথেই বিয়ের ব্যাবস্থা করা হয়েছে৷ দুই ব্রাইডের সাজ প্রায় কমপ্লিট,নূর মায়া আর ইফার সাথেই বসে ছিলো এতখন কারন ইফা বড্ড নারভাস৷ আয়াশের জন্য বাধ্য হয়ে নূরকে উঠে চলে আসতে হয়েছে৷

কিছুখন আগের কথা,,,
নূর রেডি হয়ে ইফা আর মায়ার কাছে যেতে গেলেই পিছন থেকে আয়াশ ডেকে উঠলো
“আফুসোনা৷”
নূর ঠোঁট চেপে মুচকি হেসে আয়াশের দিকে স্বাভাবিক ভাবে ফিরে বলল
“হমম বলুন৷”

আয়াশ নূরের মাথা থেকে পা অবধি ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করে বলল
“সুন্দর লাগছে৷”

নূর ভ্রু কুঁচকে বলল
“শুধু সুন্দর? আরও কিছু যে বলা যায় তা কি আপনার জানা আছে?আসলে পৃথিবীর সায়েন্টিস্ট প্রজাতির মানুষদের থেকে এসব আশা করায় বৃথা৷”

কথাটা বলে মুখ ঘুরিয়ে চলে আসতে গেলেই আয়াশ খানিকটা ছুটে এসে নূরকে আটকে বলল
” আফুসোনা শোনো,রাগ করোনা৷”

নূর মুখ টিপে হাসছে৷ তবুও আয়াশের সামনে রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলল
“কি হয়েছে কি? এখন কি সরি বলবেন? বললেও কিন্তু আপনার সরি গ্র্যান্টেড হবেনা বলে রখলাম৷”

আয়াশ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল
” টানা 2 ঘন্টা ধরে নাকানি চুবানি খেয়ে আমিই তো তোমাকে সাজিয়ে দিলাম, আর আমি যদি বড়ো মুখ অরে কবি সাহিত্যিক দের মতো করে ইহা বড়ো একটা কমপ্লিমেন্ট দিতাম তাহলে তুমি বলতে যে আমি তোমাকে সাজিয়ে দিয়েছি বলে নিজে ক্রেডিট পেতে চাইছি তাই হালকার ওপর দিয়ে একটু বলে দিলাম, কিন্তু তাতেও তুমি আমাকে অতো কিছু শুনিয়ে দিলে, তাহলে বলো আমি কি অরি এখন!”

নূর ভ্রু কুঁচকে বলল
” এই যে এক নাগাড়ে এতোকিছু বলে দিলেন এর পরিবর্তে যদি ঝরঝর করে কমপ্লিমেন্ট দিতেন তাহলে আমি আমার অভিযোগ উইথড্র করে নিতাম৷”

আয়াশ বেশ মিনমিন অরে বলল
” আরে আমাকে কিছু বলতে তো দেবে তারপর তো বলবো৷”

নূর চলে যেতে নিয়ে বলল
“হোয়াটএভার৷”

একপা এগিয়ে যেতেই আবার আয়াশের দিকে ফিরে বলল
” ওয়েট ওয়েট ওয়েট, আপনি এতখন ধরে হাতটা পিছনে লুকিয়ে রেখেছেন কেন? কি আছে আপনার হাতে?”

আয়াশ এবার ফিচেল হাসি হেসে বলল
” পিছন ঘোরো তাহলেই বুঝতে পারবে৷”

নূর আর বেশি তর্কাতর্কি তে গেল না এমনিতেই সুযোগের সদব্যাবহার করে ছেলেটাকে বেশ ভালোই অনেক কথা শুনিয়ে ফেলেছে ও৷

নূর পিছন ঘুরতেই আয়াশ নূরের খোঁপায় একটা বেলিফুলের মালা গুঁজে দিতেই নূর শিউরে উঠলো, আয়াশের মতো মানুষের থেকে ও এমন কিছু কখনোই আশা করেনি, যদিও আশা করেনি কথাটা বললেও ভুল হবে কারন আয়াশ বড্ড একগুঁয়ে আর অত্যন্ত চাপা স্বভাবের একজন মানুষ, ঠিকভাবে কোন অনুভূতি এক্সপ্রেস করতে পারে না৷
নূর কিছুখনের জন্য নির্বাক হয়ে গেল কিছু বলছে না, এদিকে অনেকখন যাবৎ আয়াশ বেলিফুলের মালাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে কিন্তু এতোখনে তো মালাটা পরিয়ে ফেলার কথা, নূর এবার একটু নড়েচড়ে উঠলো, আয়াশকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঝট করে আয়াশের দিকে ঘুরতেই আয়াশের দিকে তাকালো, আয়াশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম আর ঠোঁট চেপে মুখের এক করুন অবস্থা বানিয়ে রেখেছে, নূর বেশ কিছুখন আয়াশের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলল, আয়াশ এবার বেশ ঘাবড়ে গেল আর নড়েচড়ে উঠলো, পাঞ্জাবীর কলারটা ঠিক করে নুরকে একটু কড়া কন্ঠে প্রশ্ন করে উঠলো
” কি হলো হাসছো কেন এভাবে?”

নূর হাসতে হাসতেই বলল
” হাসবো না তো কি করবো, আপনি মুখের যা করুন অবস্থা করে রেখেছেন তাতে তো হাসি আটকানো অসম্ভব৷”

আয়াশ এবার রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলল
” তাই বলে তুমি হাসবে আফু সোনা? এটা কি ঠিক? কোথায় তুমি আমাকে হেল্প করবে তা না৷ কতো কষ্ট করে গুলশান 1 থেকে ফুলটা নিয়ে এলাম কতো ফাস্ট ড্রাইভ করে আর তুমি৷ ধ্যাত!”

কথাটা বলে আয়াশ বিরক্ত হয়ে চলে যেতে নিলেই নূর আয়াশের হাত ধরে থামিয়ে নিলো৷
আয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল
” হাত ছাড় আফু সোনা ৷”

নূর এবার আয়াশের সামনে গিয়ে মুচকি হেসে বলল
” এতো সহজে হার মানলে হবে জানাব! সরে তো একসাথে পথ চলা শুরু, একে অপরের পরিপূরক হতে হবে তবেই না জীবনটা আর সম্পর্ক টা সুন্দর আর রঙিন হবে৷”

আয়াশের মুখের বিরক্তি ভাবটা কেটে গেল৷
বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
” কি করতে হবে বলো?”

“হমম৷”

নুর এবার পিছন ঘুরে বলল
“কিছুখন আগে মাথায় যে অগোছালো খোঁপাটা করে দিলেন তার ওপর মালাটা সোজা করে রাখুন৷”

আয়াশ নূরের কথা শুনে খানিকটা মুচকি হাসলো,
“তারপর৷”

“তারপর মালাটা খোঁপার সাথে ভালভাবে জড়াবেন ফিতেটা বাদে কারন ফিতে দিয়ে বাঁধতে হবে ৷”

নূরের কথা মতো আয়াশ তাই করলো,
“তারপর৷”

“ফুলটা জড়ানো কমপ্লিট?”

“হুমমম৷”

“এবার আর কি,ফিঁতেটা বেধে দিন ভালো করে যাতে না খুলে যায়৷”

আয়াশ এবার ইচ্ছা করে ফিতেটা বাধলো না বরং খোঁপাটা আরও ঢিলে করে দিলো যাতে খুলে যায় আর তাই হলো৷

” হয়েছে এবার?”

নূর কথাটা বলার সাথে সাথে মালটা খুলে পড়লো আয়াশের হাতে, নূর আয়াশের দিকে হতাশ হয়ে তাকিয়ে বলল
” এতো সহজ ভাবে বলেও হয়নি?”

আয়াশ বেশ কাঁচুমচু মুখ করে বলল
“নাহ৷”

নূর এবার বিরক্তিভরা কন্ঠে বলল
“আপনি সায়েনটিস্ট হলেন কি করে তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷ দিন আমার কাছে দিন,আম্মুর কাছ থেকে পরে নেবো আমি৷”

কথাটা বলে মালাটা আয়াশের হাত থেকে নিতে গেলেই আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” আই উইল ডু ইট৷”

নূর ভ্রু কুঁচকে বলল
“আপনি পারবেন না ছাড়ুন৷”

আয়াশ এবার নূরের একেবারে কাছে গিয়ে বলল
“আমি অনেক কিছুই পারি আফু সোনা, আই থিংক তুমি তা জানো৷ যদি প্রামান চাও তো….”

নুর বেশ ঘাবড়ে গেল কথাটা শুনে,শুকনো ঢোক গিলে বলল
“হমম বুঝেছি বুঝেছি আপনি পারেন,এবার এটা তড়াতাড়ি পরান,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে৷”

আয়াশ মুচকি হেসে মালাটা পরিয়ে দালো,এবং খানিকখন ফুলের ঘ্রান নিয়ে নূরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল
“মাঝে মাঝে কিছু অগোছালো জিনিসকেও ছোট ছোট সৌন্দর্যতার সাথে পরিপূর্ণতা দেওয়া যায় এই যেমন তোমার খোঁপা, অগোছালো হলেও সুন্দর আর মোহিত৷ কপালের টিপটার অবস্থান ও খানিকটা এলোমেলো তবুও মায়াবতী লাগছে আর ঠোঁটের মিষ্টি হাসিতে তুমি রাঙাবউ আর এই লাল শাড়িতে আমার রঙ্গবতী৷”

কথাটা বলে আয়াশ মুচকি হেসে চলে যেতে নিলেই নূর বলল
“কতো সুন্দর করে আমার সৌন্দর্যের বর্ননা করলেন তাও বলছেন আপনি বলতে পারেন না?”

আয়াশ মুচকি হেসে ঘুরে বলল
“আমি আবেগপ্রবন কম তাই অনুভূতি ব্যাক্ত করতে পারি না তবুও যতটুকু বলি তাতে যদি তুমি প্রাপ্তি অনুভব করো তাহলে আমি খুশি৷”

আয়াশ নিজের বুকের বাম দিকে হাত রেখে কথাগুলো বলল৷

আয়াশ চলে গেল আর নূর অদ্ভুত ভাবে চেয়ে রইলো আয়াশের পানে৷ আরও বেশ কিছুখন কল্পনা জল্পনা করে নূর খোঁপায় হাত দিয়ে মুচকি হাসলো, এখনো খোঁপাটা হালকা ঢিলা তবে খুলবে না সহজে তা নূরের বিশ্বাস৷
ইফা আর মায়ার সাথে বসে আছে নূর, ইফা নূরের হাত ধরে বসে আছে আর মাঝে মাঝে ভাবী ভাবী বলে ডাকছে, বেচারী আবার কাজকর্মে নূরের বেশ হাসি পাচ্ছে তবুও ও হেসে দিলে মেয়েটা বোধহয় কেৢদেই ফেলবে তাই নিজেকে সংযত করে রেখেছে নূর৷ হঠাৎ নূরের ফোনে ফোন এলো৷
“আফু সোনা বাইরে এসো তোমার ওখানে থাকতে হবে না৷”

নূর ফিসফাসিয়ে বলল
“কেন?”

“সব কেন র উত্তরহয় না,তাড়াতাড়ি বাইরে এসো৷”

নূর হালকা ধমকের সুরে বলল
“কেন বলবেন তো নাহলে যাবো না ৷”

আয়াশ আর কোন কথা না বাড়িয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল,ফোনটাএখনো কাটেনি৷ কানে ফোনটা ধরে বলল
” আসবে নাকি আমি গিয়ে টেনে তুলে আনবো কোনটা?”

নূর দাঁতে দাঁত চেপে বলল
“ভারী অদ্ভুত মানুষ আপনা৷”

” আর কোন কথা না, উঠে এসো৷”

নূর বিরক্ত হয়ূ উঠতে গেলে ইফাবলল
“ভাবী কোথায় যাচ্ছো?”

নূর একটু বমি করার অভিনয় করে বলল
“ইফা আমার বমি পাচ্ছে আমি আসছি হ্যাঁ?”

ইফা আর কিছু বলতে পারলো না,নূর বেরিয়ে এসে আয়াশকে ইচ্ছা মতো ঝাড়ি মারতে শুরু করে দিলো৷ আয়াশ শুধু শুনে যাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে৷

…….

ভালো ভাবে বিয়েটা হয়ে গেল ওদের চার জনের,সম্পর্কগুলো অতো সুন্দরভাবে পাল্টে গিয়ে মানুষগুলো আরও কাছের হয়ে গেল৷ পরিবারের সকলেই খুব খুশি,দূর হয়েছে সকলের মনোমালিন্য৷ মায়া আর ইফাকে বাসর ঘরে বসিয়ে নূর বেরিয়ে এলো, ক্লান্ত লাগছে বেশ তাই ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে গেলেই দেখলো আয়াশ আগে থেকেই ঘরে বসে আছে৷ নূর গিয়ে প্রশ্ন করলো
“আপনি এখনো ঘুমাননি?”

“নাহ,তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম৷”

নূর একটু বাঁকা চোখে তাকিয়ে জল খেতে খেতে বলল
” কি কারনে?”

“আমাদের বাসর রাত হয়েছিলো আফু সোনা?”

কথাটা শোনা মাত্রই নূর বিষম খেলো,আয়াশ হেসে ফেলল৷ নূর আদো আদো কন্ঠে বলল
“কেন?”

“নাহ আজকে সবার বাসর রাত তো তাই আমরাই বা কি দোষ করলাম বলো৷”

নূর গ্লাসটা ধপ করে রেখে বলল
” থামুন আপনি আর ঘুমান, আমি ক্লান্ত৷”

আয়াশ হঠাৎই নূরকে কোলে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে মেঝেতে বসালো৷

আয়াশ বলতে শুরু করলো
“আমি আবেগপ্রবন কম, তোমার ভাষাতে সায়েন্টিস্ট মানুষরা নিরাষিম, মানলাম৷ কি করবো বলোতো আমি যে এমনই৷ আমি অতো সবার মতো সব কিছু এক্সপ্রেস করতে পারি না, ভালবেসে দু চারটে কবিতার লাইন বাঁধতে পারি না আর না পারি আবেগপ্রবন হয়ে নিজের ভালোবাসার অনুভূতিকে ব্যাক্ত করতে৷ তাতে তোমার অভিযোগ থাকলেও আমি মেনে নেবো৷ তবে আমার কাছে সবকিছুর হিসাব যেন বড্ড সোজা লাগে,কোনকিছুই আমি জটিল ভাবে ভাবতে পারি না যে কারনে তোমার কাছে আমি মানুষটা ছিলাম এতোদিন ডেভিল৷ জানো আমি তোমার সামনে নিজেকে ডেভিল হিসাবে কেন উপস্থাপন করেছিলাম?”

নূর খানিকটা অবাক করা চাহনিতে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো৷

“জানার কথাও না আফু সোনা৷”

” আমি তোমাকে চিনতাম অনেক বছর ধরে কিন্তু তুমি আমাকে চিনছে না,গোপনে তোমাকে লক্ষ করতাম তবে তা ভালোবাসা নাকি অন্য কিছু তা জানার চেষ্টা করিনি কখনও, না ছিলো তোমার প্রতি কোন অধিকার বোধ আর না ছিলো কোন অকাঙ্খা৷ আমি মনে করি ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করলেই বুঝি ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়, জানি না তার সত্যতা ঠিক কতোখানি তবুও আমি মানি৷ কিন্তু আমি যখন থেকে তোমাকে আমার নিজের করে নিলাম তখন ভয় হতো এই যদি তুমি হারিয়ে যাও, তখন একটা অধিকারবোধ জন্মালো, আমি ভাবি যে ভালোবেসে কাওকে ছেড়ে চলে যাওয়াটা সহজ কিন্তু ঘৃনার খাতিরে ছেড়ে চলে যাওয়াটা কঠিন, ঘৃনার দরুন মানুষ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জাগ্রত হয় তাই আমিও ভাবতাম তুমিও আমাকে ঘৃনা করে আমাকে বদলানোর জন্য আমার কাছেই থেকে যাবে দূরে সরে যাবে না আর তার একমাত্র উপায় হলো আমার ডেভিলনেস, তবে তুমি যে এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভালোবেসে ফেলবে আমি ভাবিনি৷”

নূর ছলছল চোখে আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে, আয়াশ সামনের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে, নূরের মাথাটা ও হাত দিয়ে টেনে নিজের কাধে রেখে বললো
” ভালোবাসি কি জানিনা তবে #তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা যে নেশাতে আমি আচ্ছন্ন৷”

নূর চোখ বন্ধ করলো, দক্ষিনা বাতাস বইছে, বেলি ফুলের হালকা মাদকতায় পরিবেশটা আরও নম্র হয়ে উঠেছে আর পরিবেশ থেকে একটাই ডাক ভেসে আসছে “ভালোবাসি৷”

5 বছর পর,,,,,

“বাবা তুমি এটা কি করছো?”
আদো আদো কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠলো আয়াশ আর নূরের মেয়ে মেহু৷
আয়াশ মেহুকে কোলে বসিয়ে বলল
“এটা একটা মডেল মাম্মাম৷”

“কিসের মডেল?”

“কোয়ান্টাম মডেল৷”

দূর থেকে নূর আর ইফা কিচেন থেকে দেখছে৷ দুজনেই মুচকি হাসছে‌৷ পাশ থেকে ইফার ছেলে বলে উঠলো
“মেহু আমার চাচ্চুর কোল থেকে নাম৷”

মেহু মুখ ভাঙচিয়ে বলল
“এটা আমর পাপা হু৷”

আয়াশ ইফার ছেলে মিছিলকে কোলে তুলে নিলো,দুজনে দুই দিকে বসে আছে আর দুজনেই আঙুল উচিয়ে ঝগড়া করছে, মিছিল মেহুর থেকে 5 মাসের ছোট, ইফার সাথে ঝগড়া করে ঠিকই কিন্তু ইফাকে অন্য ছেলের সাথে খেলতে দেখলে সহ্য হয় না ওর, ইফার ব্যাপারে এখন থেকেই বড্ড কেয়ারিং৷”

আয়াশ দুজনকে থামিয়ে বলল
” স্টপ স্টপ ,তোমাদের দুজনের ঝগড়ার টপিকটা কি বলতে পারবে?”

মেহু কিছু বলতে যাবে তার আগে মিছাল বললো
“আমি কি ঝগড়া করতে চাই চাচ্চু? আমি চাই না কিন্তু মেহুর জন্য করতে হয় ,ও কেন সবসময় আমার ছেলে ফ্রেন্ডগুলোর সাথে কথা বলবে বলো?”

আয়াশ অবাক হয়ে বলল
“তাহলে কি বলবে না?”

মেহু বলে উঠলো
“বেশ করবো বলবো!”

মেহু অন্য দিকে মুখ করে আছে, আয়াশ মিছিলের দিকে তাকিয়ে ফিসবিসিয়ে বলল
“ওকে ওকে…৷”

হঠাৎ মিছালের কি মনে হলো ও আয়াশের কোল থেকে নেমে গিয়ে মেহুর একগালে চুমু দিয়ে বলল
“তোকে না আমার হেব্বি লাগে ৷”

কথাটা বলে মিছিল দৌড়ে পালালো,মেহু রেগে গিয়ে ওউ মিছালকে তাড়া করলো ৷

আয়াশ সহ সবাই হাসতে লাগলো৷

#সমাপ্ত,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here