তুমিময় পর্ব ৭

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ৭
বেশকিছু ক্ষণ দরজা ধাক্কালাম কেউ খুলোনা।আদনান ভাইয়ের রুমের সামনে বাড়ির সবার গলার স্বর শুনতে পেলাম তবে স্পষ্ট কিছুই শুনতে পেলাম না। চেষ্টা করেও না। প্রথমে চিন্তা হলেও পরে ভাবলাম উনার রাগ সর্বদাই উঠে থাকে! তাই সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমি ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নেই! সারারাত না ঘুমানোর ফলে ঘুমঘুম ভাব আর চোখ জ্বালা করছে। আমি ক্লান্ত শরীরে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরলাম।

এক রাত্রী জেগে থাকার দরুন শুতেই রাজ্যের ঘুম চোখে নেমে এলো! কিন্তু ঘুম ভাঙার আগেই দরজা তীব্র শব্দে খুলে যাওয়ার আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙলো! আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। আদনান ভাই ততক্ষণে আমার হাত টেনে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি শুধু ওড়নাটা ঠিকঠাক করলাম। উনাকে কিছু বলার সাহস টুকু করলাম না। কেননা উনাকে দেখতে নরমাল লাগছেনা। রুম থেকে বেরুতেই নানু আদনান ভাই এবং আমার সামনে এসে দাঁলালেন। তাকে এভাবে দাঁড়াতে দেখে আমি আদনান ভাইয়ের দিকে একবার, একবার বাকি সবার দিকে তাকালাম। আদৃতা আপু কাঁদছে তাকে তার মা ধরে রেখেছে। উনার বাবা মাহাদ আঙ্কেল এর মুখে দাম্ভিকতার ছাপ। বাসায় সবার মুখ থমথমে! আমার বুকে অজানা ভয়ে মোচড় দিয়ে উঠলো।

আমাদের সামনেই নানু দাঁড়িয়ে। নানুকে পাশ কাটিয়ে আদনান ভাই আমাকে নিয়ে নিচে দিকে যেতে গেলেই। নানু বৃদ্ধা ভাঙা ফ্যাকাসে গলায় চেঁচিয়ে বললেন,

‘ আদনান তুই এই মেয়েকে বিয়ে করলে আমি এখুনি মরে যাবো! ‘

ঘুম থেকে উঠেই এমন পরিবেশ তার উপর নানুর কথাটা আমার কানে বার বার বেজে ওঠে। কয়েক মূহুর্ত সময় লাগে এই কথার মানে কী? আমি অবাক চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাতেই আদনান ভাই নানুর থেকে দ্বিগুন চেঁচিয়ে বললেন,

‘ দাদু আমি ওকে আমার চাই! আমি আর কিছু শুনতে চাইনা। ‘

আদনান ভাই থামলেন বড় বড় শ্বাস ফেলেও রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,

‘ আমি বিয়ে করলে এক মাত্র ওকেই বিয়ে করবো! কারোর প্রবলেম থাকলে আমাকে জানিয়ে দেবে। আমি আর আপনাদের বাড়ি যাবোনা! ব্যাস এটাই আমার লাস্ট কথা!’

কথাটা বলে আমার হাত ছেলে বড় মামীর সামনে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে ভাঙা গলায় বলল,

‘ মা আমি অনেক চেষ্টা করেছি! পারিনি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও! ‘

বড় মামী ছেলের এহেন অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললেন। আদনান ভাইয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন,

‘ আমার বাবা যেটাতে খুশি আমিও তাতেই খুশি। তোর ইচ্ছে গুলো মেনে নিতে আমার কখনওই দ্বিমত ছিলোনা থাকবেওনা! ‘

আদনান ভাই ফ্যাকাসে মুখে স্মিথ হাসলেন। মার কপালে চুমু খেয়ে আমার কাছে এসে শক্ত হাতে হাত ধরলেন আবারও। সত্যি বলতেই নানু এই মেয়ে বলতে কি বুঝিয়েছেন আমি বুঝার চেষ্টা করছি। নানুর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে যেন ভস্ম করে দিবে আমাকে এখুনি! আদনান ভাই আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন নিচে। কিন্তু আমি এখনও পিছনেই তাকিয়ে নানু দৃষ্টির অগোচর হতেই সবগুলো কাজিনকে দেখতে পেলাম। তাদের মুখে বিশ্বজয় করা হাসি। হায়াদের মুখ সেই হাসির রেশ মাত্রাধিক বেশি! সেদিকে বেশি তাকাতে পারলাম না সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আদনান ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে নামতে কষ্ট হচ্ছিলো। তাই উনার থেকে হাত ছাড়াবার জন্য চেষ্টা করছিলাম ছাড়লেন না। দ্বিগুণ জোরে হাত চেপে নেমে একেবারে তার কালো গাড়িটার সামনে থামলেন। গাড়ির দরজা খুলে একবার তাকালো আমার দিকে। এত ধারালো দৃষ্টি ছিলো দেখে ভয়ে চুপচাপ বসে গেলাম। আদনান ভাই নিজেও ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।

টু শব্দ করতে পারলাম না কিন্তু মনে হাজারো প্রশ্ন রয়ে গেলো কি হচ্ছিলো উপরে? আদনান ভাইয়ের কথা নানুর কথা মামীর কথা সব মিলিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে আমার কাছে৷ মাথায় প্রেশার তৈরি হচ্ছে আর তাতে আমি হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে অস্ফুট স্বরে বললাম,

‘ আদনান ভাই নানু কী বললো এগুলো? আমাকে বলেছে না আদৃতা আপুকে? ‘

আদনান ভাই কিছুই বললেন না। উনি ফ্যাকাসে শুকনো মুখে ড্রাইভ করে যাচ্ছেন! হঠাৎ উনার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালাম অনেকটা দিন পর আজ! উনাকে দেখে মনে হলো উনি অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। চোখের নিচে লাল আভা জ্বলজ্বল করছে যা উনার নির্ঘুম থাকার প্রমান দিচ্ছে। কিছু দিনে পর দেখেই মনে হচ্ছে আদনান ভাই শুকিয়ে গেছেন৷ সিল্কি চুল গুলো নির্জিব আর এলোমেলো লাগছে আজ যা সব সময় পরিপাটি দেখে এসেছি আমি! তবুও কালো টি শার্টে ব্ল্যাক জিন্সে চমৎকার লাগছে তাকে। শুধু সুন্দর মুখশ্রীটা আজ বড্ড বিষন্ন উনাকে এভাবে দেখে মাথা নিচু করে কেঁদে ফেললাম আমি। আমার কান্নার আওয়াজ তার কানে যেতেই গাড়ি কষে ব্রেক করলেন উনি! কঠোর স্বরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ আজ আমার মন গলবে না অয়ত্রী! সব তোর জন্য হয়েছে। কি জাদু করেছিস আমাকে? দাদু ঠিকি বলে তুই একটা…..! ‘

তার মানে আদৃতা আপুকে নয় নানু ঐ কথা আমাকেই বলেছেন? আদনান ভাই আমাকে বিয়ে করতে চাইলে নানু…. উনাকে থেমে যেতে দেখে দ্রুত বললাম,

‘ আমি একটা কী আদনান ভাই। নানু কখনওই আমাকে বাজে কথা বলতে পারেনা! আজ উনি এসব কথা আমাকেই বলেছেন? কিন্তু কেন? ‘

আদনান ভাইয়ের চোখের কোণা বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রুকণা গরিয়ে পরলো। উনি ভাঙা গলায় চেঁচিয়ে বললেন,

‘ শুধু আমার শাসন আমার চেঁচামেচি আমার অসত্যতা, নির্দয়তা আমি খারাপ এগুলোই তোর চোখে পরে? আর কারো কুটিলতা চোখে কেন পরেনা তোর? ‘

তার গাড়ি কাঁপিয়ে চিৎকারে ভয়ে সীটে আরও এঁটে বসলাম। চোখ ফেটে জল গলাচ্ছে। নানু? নানু কী কিছু করেছে আমাকে? আমি আবার প্রশ্ন করলাম,

‘ নানু কী কিছু করেছে নানু ঐ কথা কেন বললেন? ‘

আদনান ভাই রক্তিম চোখে আমার দিকে ভয়ংকর চাহুনি ছুঁড়ে মারলেন। দাম্ভিক কণ্ঠে বললেন,

‘ তোর নানু কী করেছেন সেটা আর তোর না জানলেও হবে! আগে নিজের জান বাঁচা! সব তোর জন্য হয়েছে। আমি মানা করেছিলাম হায়াদের সাথে তোকে কথা না বলতে! বাট ইউ? ‘

তার কথায় কিছু একটা ছিলো। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ভয়ে ভেতরটা কেঁপে উঠলো। আজ যা যা হলো শুধু মাত্র আমি হায়াদের সাথে কথা বলেছি দেখে। সেটা বুঝতে বাকি নেই আমার। কিন্তু আদনান ভাই তো বললেন আমাকে ভালোবাসেন না তাহলে এসব ড্রামা কেন। আর আমাকে বিয়ের কথা উঠলোইবা কেন আজ। মাথাটা ফেটে যাচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না? আমার কি হলো এসব আর নিতে না পেরে রেগে চেঁচিয়ে বললাম,

‘ আমি বাসায় যাবো! না আপনাদের বাসায় না আমি আমার বাবার কাছেই চলে যাবো! ‘

আদনান ভাই সীটে হেলাম দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলেন আমার কথায় আমার দিকে শীতল চোখে চাইলেন। আমার রাগ চলে গেলো নড়েচড়ে বসলাম। উনি ঠান্ডা কণ্ঠে বললেন,

‘ আমার রাগটা বাড়াস না অয়ত্রী! তোর জন্য আমার রাগটা ভালো হবেনা! ‘

আমি চুপ মেরে গেলাম গাড়ির সীটে মাথা হেলিয়ে চুপ করে বসে কাঁদতে লাগলাম। আদনান গাড়ি স্টার্ট দিলেন আবারও। কই যাচ্ছি যানার ইচ্ছে নেই। আমি শুধু ভাবছি নানুর কথাটা! মাথায় গেঁথে গেছে একদম। কি মানে সেটার। মামীর কথাগুলো আন্দাজ করতে পারছি কিন্তু আদনান ভাইয়ের তো শিওর নেই তাই সেটা নিয়ে ভাবছিনা। শুধু নানুর কথা গুলো পিরা দিচ্ছে! নিরবতা গাড়িতে আছড়ে পড়লো আদনান ভাই সেই নিরবতা ভেঙে বলল,

‘ আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। এবার তুমিও পাবে ভালোতো আমি একা বাসিনি! কষ্ট কেন একা পাবো? তোমাকেও পেতে হবে! সাথে নিজের করা ভুল গুলোর শাস্তি গুলোও পেতে হবে.. গেট রেডি! ‘

চলবে!

‘ শুধু বড় করে দেন বড় করে দেন। নেক্সট নেক্সট বলে চিল্লান। কিন্তু একজনও উৎসাহ মূলক একটা কমেন্ট করেন না। যে গল্পটা ভালো লাগছে কি খারাপ লাগছে? আমি কোনও উৎসাহ বা ভালো সাইন পাইনা আপনাদের থেকে তাই পার্ট ছোট হয়ে যায়। কেননা ডাইরিতে লিখার মতো মনে হচ্ছে আমার যেখানে লিখলে ভালো খারাপ বলার মতো কেউ নেই। কিন্তু আপনাদের নেক্সট নেক্সট কমেন্টের মানে বুঝিনা আমি। কারণ প্রতিদিন দিচ্ছি আমি কারণ ছাড়া গ্যাপ রাখছিনা তবুও ভালো খারাপ কিছু না লিখে আপনারা নেক্সট নেক্সট করছেন। গল্পে রেসপন্স ও কমে আসছে সেই অনুযায়ী আমি দ্রুত শেষ করতেই আজকাল দুপার্ট করে দিবো দ্রুত শেষ করেও দিবো৷ আর নেক্সট নেক্সট করবেন না প্লিজ। পারলে উৎসাহ দিয়ে কিছু লিখুন। আমি নতুন তাতে একটু ভরসা পাই। ধন্যবাদ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! ‘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here