তুমিময় ভালোবাসা পর্ব -০৮+৯

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ০৮
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

বাইরে এসেই শান সোহাকে থামিয়ে বলে
” ভেতরে কি বলেছো তুমি এটা ?? আমাদের বাচ্চা হলে মানে ?? তোমার কি মনে হয় আমাদের মধ্যে সেইরকম কোনো সম্পর্ক তৈরি হবে ??” সোহা বিরক্তস্বরে বলে
” উফফ আপনি বড্ড জ্বালাতন করেন। চলুন তো জায়গাটা পুরোটা ঘুরে দেখবো।” সোহা শানকে টেনে নিয়ে গেলো ভার্সিটি ঘুরে দেখার জন্য।
শান খুব বিরক্তি নিয়ে সোহার সাথে হাটতে থাকে।
বাড়িতে ঢুকেই শান ধপ করে সোফায় বসে পেছনে শরীর এলিয়ে দেয়। সোহা নাচতে নাচতে ভেতরে ঢুকে। শাহানাজ বেগম রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে সোহাকে
খুশি দেখে বলে
” সোহা তুই এতো খুশি কেনো ??” সোহা এগিয়ে এসে পেছম থেকে শাহানাজ থেকে শাহানাজ বেগমের গলা জড়িয়ে হেসে বলে
” আমি অনেক খুশি আজকে। আমার নতুন ভার্সিটি খুব সুন্দর। আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা আমি তোমাকে নিয়ে একদিন সেখানে যাবো।” শাহানাজ বেগম হেসে বলে
” আমার যাওয়া লাগবে না আমি অনেক অনেক আগেই গিয়েছি ভার্সিটিতে। সামির, শান তিনজনই সেখানে পড়ালেখা করেছে। ইশানও সেখানেই পরেছে তবে মেডিকেল নিয়ে।” সোহা মন খারাপ করে বলে
” তাহলে কাকে নিয়ে যাবো আর ?? আচ্ছা এমন কেউ কি আছে যে সেখানে যায়নি !! না গেলে আমি তাকে নিয়ে গিয়ে পুরো ভার্সিটি ঘুরে ঘুরে দেখাবো। আমি সব চিনে এসেছি।” শান ক্লান্ত স্বরে বলে
” হ্যা আর আমার পুরপ ২৪টা বাজিয়ে দিয়েছো।” সোহা বিরক্ত স্বরে শানের কাছে এগিয়ে এসে বলে
” আপনার কথা আর কি বলবো আমি ?? আপনি সিক্স পেক ওয়ালা একজন মানুষ হয়েও একটা ভার্সিটি ঘুরে এত হাপিয়ে গিয়েছেন, আর আমাকে দেখুন। আমি এতো চিকন হয়েও একটুও হাপাইনি। প্রতিদিন অফিসের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে আপনি অলস হয়ে যাচ্ছেন। কয়েকদিন পর দেখবেন আমার আঁকা সেই ছবির মতো বাস্তবেও আপ্পনার ভুরি বেড়িয়ে গিয়েছে।”
কিচেন থেকে সোহার কথা শুনতে পেয়ে নিলা, সিমি আর সালমা জোড়ে জোড়ে হেসে দেয়। শাহানাজ বেগমও নিজের হাসি আটকানোর চেষ্টা করে না, হা হা করে হেসে দেয় আর সোহা তো কথা শেষ করেই দৌড়ে রুমে চলে গিয়েছে। শান বসে বসে রাগে ফুলছে।
শান রুমে আসতেই দেখতে পায় সোহা শুয়ে শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। সোহাকে মনোযোগ দিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শান এক ভ্রু উঁচু করে তাকায়। সোহার পাশেই টমি বসে আছে। সেও সোহার মতো গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে। শান এগিয়ে এসে সোহার হাত থেকে টান দিয়ে মোবাইল নিয়ে নেয়। সোহা চমকে লাফিয়ে উঠে বসে। শানকে দেখে বলে
” এটা কোন ধরনের অভদ্রতা ?? এভাবে অন্যজনের জিনিস কেও ছিনিয়ে নেয় নাকি ??”
শান নিষ্প্রাণ গলায় বলে
” আমি তো ছিনিয়ে নিতে জানি না। আমি ছেড়ে দিতে জানি। কেউ যদি আমাকে আঘাত করে আমি তাকেও ছেড়ে দেই।” সোহা ভ্রু কুচকে বলে
” কে আপনাকে আঘাত করেছে ??” শান খাপছাড়া ভাবে বলে
” দিয়েছে কেউ একজন তবে সে নিজেও জানে না। সে তার মতো মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায় আর তার মগ্নে অন্যকে বিভোর করে তুলে কিন্তু সে নিজে একবারও ফিরে তাকায় না। সে নিজেকে তার খারাপ মায়াজালে আটকে রাখে স্বার্থপরের মতো।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” কি সব অদ্ভুত কথা বলছেন বুঝতে পারছি না আমি। যাই হোক আমার মোবাইল ফেরত দিন দয়া করে।” শান সোহার মোবাইলটা তার পকেটে রেখে শার্টের হাতা গুটিয়ে বলে
” কালকে যে তোমার ভার্সিটি আছে সেই খেয়াল আছে তোমার ?? কালকেই প্রথম যাবে তুমি। so, সেইটার প্রিপারেশন না নিয়ে তুমি মোবাইলে এতো মনোযোগ দিচ্ছো কেনো ??” সোহা এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে
” কি ব্যাপার বলুন তো !! এতোদিন আমাকে শুধু স্বার্থপর, চরিত্রহীন ব্লা ব্লা বলে কথা শুনাতেন এখন হঠাৎ এতো ভালো বিহেভিয়ার করছেন কেনো ??”
শান গম্ভীর গলায় বলে
” তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই বুঝেছো ?? আমি শুধু স্টাডির ব্যাপারটা ক্যারি করতে চাইছি। নাহলে মা, ভাইয়া, ভাবি সবাই এসে আমার মাথা খাবে। এখন দয়া করে জলদি আসুন।” সোহা মুখ বাকিয়ে গিয়ে টেবিলে বসে পরে।
সোহা সোফায় পা গুটিয়ে ব্ল্যাংকেট জড়িয়ে গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। শান অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে। সোহার সারাদিনের ব্যাবহার, বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়ার দেখে শানের মনে এখন কিছু প্রশ্নের দানা বইছে। সোহার কোনো বিহেভিয়ার দেখেই শানের মনে হচ্ছে না সোহা সেইদিনের মতো এমন একটা কাজ করতে পারে। ভাবতে ভাবতে শান আবার সাতমাস আগের সেই তিক্ত স্মৃতিকে মনে করতে থাকে।

আটমাস আগে…..
আজকে সামির আর সিমির বিয়ে। সবাই খুবই ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছে। অফিসে কয়েকমাস আগে জয়েন করলেও বাবার অফিস হওয়ায় নতুন একটা ডিলের জন্য শান এতোদিন চট্টগ্রামে ছিলো। কালকে রাতে মাত্র ঢাকায় এসেছে যার কারণে শান সামিরের শশুড় বাড়ির সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাই ভাওয়ের শশুড়বাড়ির মানুষরা কেমন হবে সেটা জানার জন্য আজকে বিয়েতে শান খুবই এক্সাইটেড সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। শান সকাল বেলা উঠেই তৈরি হয়ে বসে আছে। শানকে এতো এক্সাইটেড দেখে সামির বলে
” তোকে দেখে মনে হচ্ছে আজকে আমার শশুড় বাড়িতে গিয়ে তুই নিজের শশুড় বাড়ি পাতিয়ে আসবি। আচ্ছা তোর বউ কি তুই গিয়ে দেখবি নাকি সেটাও তৈরি করে এসেছিস !!” শান ক্ষেপে বলে
” ভাই একদম ভালো হচ্ছে না। তুমি এসব কথা বলে আমার পুরো এক্সাইটেড এর মুডটাই নষ্ট করে দিচ্ছো।” সামির হেসে বলে
” আর কি করবো বল তোকে দেখে আমার তাই মনে হচ্ছে।” শান ভ্রু কুচকে বলে
” এতো কিছু মনে করা লাগবে না। নিজের বিয়ের কথা ভাব আগে।” বলে শান মুখ বাকিয়ে সামিরের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
সিমিদের বাড়িতে আসতেই সব মেয়েরা একজোট হয়ে যায়। সবাই টাকার জন্য ছেলে পক্ষকে আটকে রেখেছে। ছেলেদের মধ্যে কেউ টাকা দিতে রাজি নয় তখন মেয়েদের ভেতর থেকে একটা লাল লেহেঙ্গা পরা মেয়ে এগিয়ে আসে। শানের চোখ সেই ডাগর ডাগর আঁখি জোড়াতেই নিবন্ধ হয়ে যায়। মেয়েটা কোমড়ে হাত দিয়ে মুখ ফুলিয়ে সামিরের সামনে এসে তার মিষ্টি বাচ্চা স্বরে বলে
” ভাইয়া আপনি কি বিয়ে করতে চান না ??” সামির অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে
” শালিকা আমার প্লিজ এমন কিছু করো না !! এভাবে আমাকে ফকির বানিয়ে দিলে বিয়ে পর আমি আমার বউকে কি খাওয়াবো বলো !!” মেয়েটা ভ্রু কুচকে বলে
” আপনার এতোবড় একটা অফিস থাকতে কি খাওয়াবেন সেটা নিয়ে চিন্তা করছেন আপনি ?? এতো কিপটে হলে আমি আমার বোনকে আপনার কাছে দেবোই না। পরে দেখা যাবে আপনি আমার বোনকে না খাইয়ে রেখে দিবেন। আপনি তো জানেনই আমি বললে এই বিয়ে এখানেই থেমে যাবে।এই সোহার কথায়ই বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো। ” সামির ঢোক গিলে বলে
” কি বলছো এসব ?? না আমি বিয়ে করবো দাঁড়াও এক্ষনই টাকা দিচ্ছি।” বলে সামির শেরওয়ানীর পকেট থেকে তার ক্রেডিট কার্ড বের করে সোহার হাতে দেয়। সোহা চোখ বড় বড় করে বলে
” কার্ড দিয়ে কি করবো আমি ?? আমি তো পিন নাম্বারও জানি না। টাকা না দিলে কিন্তু আজকে বিয়ে হবে না। আমার সব বোনদের আমি চ্যালেঞ্জ করেছি, আমি আপনার থেকে টাকা নিয়েই ছারবো।” সামির হরবরিয়ে বলে
” আ-আরে এখানে ৬০ হাজার টাকা আছে আর নেই আমার কাছে। এটার পিন নাম্বার তোমাকে মেসেজ করে দেবো আমি। এখন আমাকে ভেতরে ঢুকতে দাও প্লিজ !!” সোহা মুচকি হেসে সবাইকে ভেতরে যাওয়ার রাস্তা দিয়ে দেয়। শুধুমাত্র শান এখানে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শানের পলকই পরছে না সোহার দিক থেকে। এতোক্ষণের ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনাতেই শানের হুশ ছিলো না। শানকে মূর্তিরূপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোহা এগিয়ে এসে শানের সামনে দাঁড়ায়। শানকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে সোহা বলে উঠে
” আপনি কি মূর্তি ?? নাকি মানুষ ?? আগে তো আপনাকে দেখিনি আমি। কি নাম আপনার ??” হালকা বাতাস এসে সোহার গুছালো চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিলো। তার সোহার এই রূপ দেখে শানের মন এলোমেলো হয়ে গেলো। শান ঘোরের মধ্যেই অস্পষ্ট ভাবে বলে
” সোহা।” সোহা মাথা উঁচিয়ে আবার শানের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি বলেছেন ??” সোহার কথায় শানের ধ্যান ভাঙে। শান সোহার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে
” কিছু বলছো ??” শানের কথা শুনে সোহার তার কপাল কুচকে ফেললো। সোহা ঝাঁঝালো গলায় বলে
” আপনি আমাকে তুমি বলছেন কেনো ?? আমরা কি পরিচিত নাকি ?” শান থতমত গলায় বলে
” তোমাকে দেখে ছোট মনে হলো তাই তুমি বলেছি। আমি হলাম তোমার বোনের ছোট দেবর।” সোহা মুখে হাত দিয়ে অবাক স্বরে বলে উঠে
” কিহ !! আপনি সেই লোক ?? জানেন আপনি, আপু যখন আমার কাজিন গুলোকে বলেছিলো আপনি দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম তখন থেকে সবাই আপনাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি না একটু সাবধানে থাকবেন নাহলে ওরা আপনার মাথায় উঠে বসবে। আর আপনি যে ভাইয়ার ছোট ভাই সেটা বলারই দরকার নেই। আচ্ছা আমি যাই আমার অনেক কাজ।” বলে সোহা দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো।
সোহা তো জানেই না তার এই এলোমেলো রূপ কারো মনকে এলোমেলো করে দিয়েছে। জানলে সোহা কি করতো সেটা শান বুঝে উঠতে পারলো না। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শানও ভেতরর যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

বিয়ের কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত শান সোহাকে দেখতে পেলো না। সবাই যখন খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত তখন শান তার অর্ধেক খাবার খেয়েই উঠে পরে সোহাকে খোঁজার জন্য। অগোছালো ভাবে আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে একসময় কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে বসে। শান সামনে তাকিয়ে দেখে সোহা কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ, মুখ কুঁচকে নিচে বসে আছে। শান মনে মনে বড় একটা হাসি দেয় সোহাকে খুঁজে পেয়েছে ভেবে। কিন্তু সোহা ব্যাথায় উফফ করে উঠলে হন্তদন্ত হয়ে নিচে বসে বলে
” সরি, সরি আমি আসলে দেখিনি তোমাকে তাই এভাবে ধাক্কা লেগেছে। তুমি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো ??”
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ০৯
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

শান মনে মনে বড় একটা হাসি দেয় সোহাকে খুঁজে পেয়েছে ভেবে। কিন্তু সোহা ব্যাথায় উফফ করে উঠলে হন্তদন্ত হয়ে নিচে বসে বলে
” সরি, সরি আমি আসলে দেখিনি তোমাকে তাই এভাবে ধাক্কা লেগেছে। তুমি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো ??” সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারায় বলে
” আপনি কি চোখে দেখতে পাননা নাকি ?? আমার কোমড়টা ভেঙে দিয়েছেন। উফফ, কি ব্যাথা !! আপনাকে আমি ভালো মনে করেছিলাম কিন্তু আপনিও দেখি সবার মতো। এখন আমি আপুর কাছে গিয়ে কাদঁবো কি করে ?? আমি তো উঠতেই পারবো না।” বলে নাক টানতে থাকে সোহা। শান ফিকফিক করে হেসে দেয় সোহার কথা শুনে। শানকে হাসতে দেখে সোহা রাগ দেখিয়ে বলে
” আপনি আমাকে দেখে হাসছেন ?? আপনি তো মহা বজ্জাত লোক !!” শান হাসি থামিয়ে দেয় সাথে সাথে। সোহার হাত ধরতে নিলেই সোহা পিছিয়ে বলে
” এটা কি ?? আপনি আমাকে ধরছেন কেনো ??”
শান হাত গুটিয়ে নিয়ে বলে
” আমি তো তোমাকে উঠতে সাহায্য করছিলাম। তুমি বললে ধরবো না।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” আরে আপনি দেখি বড্ড জ্বালাতন করেন !! সাহায্য না করলে আমি এই ভাঙা কোমড় নিয়ে উঠবো কি করে ?? তাড়াতাড়ি ধরুন আমাকে। আমি আপুর কাছে যাবো।” সোহার কথা গুলো বারবার শানকে থতমত খাইয়ে দিচ্ছে। সোহার এই কথা শুনেও শানের হাসি পেলো তবে হাসি আটকে প্রথমে সোহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। সোহা শানের হাতে ভর দিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কোমড়ে বেশ জোরেশোরেই ব্যাথা পেয়েছ সোহা। সোহা শানকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলে উঠার আগেই শানের পেছন থেকে এক মেয়ে সোহাকে ডেকে উঠে
” সোহা !!” সোহা, শান দুজনই সেদিকে তাকালো। মেয়েটা সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” সোহা মনি প্লিজ একটু দয়া করে স্টোর রুম রাখা চার পাচঁটা গিফট বক্স আর কিছু জিনিশপত্র রয়েছে সেগুলো নিয়ে আয় প্লিজ!!”
সোহা মুখ গোমড়া করে কোমড় ধরে বলে
” আমি পারবো না আমি কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছি। তুমি গিয়ে নিয়ে এসো।” মেয়েটা তাড়া দেখিয়ে বলে
” সোহু সোনা প্লিজ !! আমাকে যেতে হবে মামি কতোগুলো কাজ দিয়েছে আমাকে। তুই ওই গিফট গুলো নিয়ে আয় আমি তোর কোমড়ে মুভ বাম লাগিয়ে দেবো প্লিজ !!” বলে দ্রুত পায়ে মেয়েটা স্থান ত্যাগ করে। সোহা অসহায় চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকে। শান ইতস্তত বোধ করতে করতে বলে
” তুমি বললে আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি।” শানের কথা শুনে সোহার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে। সোহা বড় একটা হেসে বলে
” সত্যি !! তাহলে তাড়াতাড়ি চলুন।” শান মুচকি হাসি দিয়ে সোহার সাথে যায়। স্টোর রুমের সামনে আসতেই দ্বিতীয় বার পেছন থেকে ইশান ডেকে উঠে। শান পেছন ঘুরে তাকাতেই ইশান বলে
” শান জলদি এদিকে আয়, বাবার প্রেশারফল করেছে। একটু সময়ের জন্য এদিকে আয়।” শান সোহার দিকে তাকাতেই সোহা বলে
” আপনি জান আমি স্টোর রুমে যাচ্ছি আর না পারলে কাউকে ডেকে নেবো।” শান যেতে যেতে বলে
” কাউকে ডাকা লাগবে না তুমি ওয়েট করো আমি আসছি।” বলে ইশানের সাথে চলে যায়। সোহাও স্টোর রুমে ঢুকে পরে।
প্রায় দশ থেকে পনেরো মিনিট পর শান স্টোর রুমের কাছে ফিরে আসে। সোহাকে সেখানে দেখতে না পেয়ে শান স্টোর রুমের দিকে এগিয়ে আসে। এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে শান স্টোর রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু সেখানে দাঁড়াতেই শানের চোখের সামনে এক অশ্লীল দৃশ্য ভেসে উঠে। এক মেয়ে একটা ছেলের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে রয়েছে। শান দ্রুত সেখান থেকে সরে আসে। একটু দূরে এসেই মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়ায়। মেয়েটার পরনে লাল লেহেঙ্গা ছিলো সেটা দেখেই শানের কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। তবে কি সোহা কোনো ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ছিলো ?? ভাবতে ভাবতে শানের বুকের ভেতরটা খা খা করতে থাকে। কোনো মেয়ের প্রতি তার প্রথম ভালোবাসাটা সেটা কি এখানেই সমাপ্তি ঘটবে?? দৃশ্যটার কথা ভাবতে ভাবতে শানের মনে সোহার প্রতি এক প্রকার তিক্ততা এসে পরে। শানের চোখ মুখ ইতিমধ্যে লাল হয়ে গিয়েছে। শান দ্রুত পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। শানের বিয়ে বাড়িতে থাকারও মন বা আগ্রহ কোনোটাই রইলো না। শান শাহানাজ বেগমকে বলে সেই বাড়িও ত্যাগ করে।

শান তার রুমের ব্যালকনিতে বিদ্ধস্ত চেহারায় বসে আছে। রাত সমান সমান তিনটা বাজে এখন। শানকে দেখে মনে হচ্ছে সে তার প্রিয় কোনো জিনিস হারিয়ে ফেলেছে। শানকে পুরোই পাগল পাগল দেখা যাচ্ছে। চোখ, মুখ ফুলে আছে চুল গুলো অগোছালো হয়ে মাথায়, কপালে পরে আছে। শান খুবই কনফিউজড শানের একবার মনে হচ্ছে সেই মেয়েটা সোহা ছিলো আরেকবার মনে হচ্ছে সোহা ছিলো না। সেই দৃশ্যে ছেলে, মেয়ে দুজনের কারোরই চেহারা দেখা যায়নি তাই শান অনেক ভেবে দেখলো শান কালকে সোহার সঙ্গে কথা বলে দেখবে।
সামির সিমির রিসিপশনের সব গেস্টই এসে পরেছে প্রায় এবার শুধু সোহাদের আসার পালা। শান অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে সোহার জন্য। মনে এক মুঠো আশা নিয়ে রেখেছে। শানের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে সোহাদের আগমন ঘটে। একে একে সবাই আসার পর শান সোহাকে দেখতে পেলো। তবে সোহাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। সোহার মাথায় ব্যান্ডেজ করা রয়েছে। শান দূর থেকেই সোহাকে দেখলো। এখানের এতো মানুষ দেখে সোহার সঙ্গে সেসব নিয়ে কথা বলার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। কিছুক্ষণ পর সোহা সহ কিছু মেয়েকে উপরের দিকে যেতে দেখে শানও চুপচাপ পেছনে আসতে থাকে। সোহা সিমির রুমে যাওয়ার আগেই শান সোহাকে পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে আগের রুমে ঢুকে পরে। অন্ধকার রুমে ঢুকে সোহাকে ছেড়ে দিতেই রুমের ভেতরে একটা শব্দের প্রতিধ্বনি বাজতে থাকে। শান গালে হাত দিয়েই রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয়। সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহা ভয়ে কাঁপছে। শানকে দেখে সোহা মাথায় হাত দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। শান জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে চোখ, মুখ শক্ত করে বলে উঠে
” তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে থাপ্পড় মারার ??” সোহা ভিতু চোখে একবার শানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিচু স্বরে বলে
” সরি ভাইয়া। এখাবে নিয়ে এসেছেন তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভয়ে আপনার গালে…থাপ্পড় দিয়ে দিয়েছি।” ভয় পাওয়ার বিষয়টা শান স্বাভাবিক বিষয় ভেবে ধরে নিলো। এভাবে যে কাউকে ধরে আনলেই সে ভয় পাবে। শান শান্ত গলায় বলে উঠে
” তোমার মাথায় ব্যান্ডেজ কেনো ?? কিভাবে ব্যাথা পেয়েছো ??” সোহা শানের দিকে তাকিয়ে তুতলিয়ে বলে
” আ-আমি কালকে স-স্টোর রুমে গিয়ে-ছিলাম না !! সস-সেখানেই ব্যাথা পেয়েছি।
শান সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকালো সোহার দিকে। সোহার শরীর মৃদু কাঁপছে। শান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে
” কালকে স্টোর রুমে কি হয়েছিলো ??” সোহা চমকে শানের দিকে তাকায়। শান অধির আগ্রহে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সোহার উত্তর শোনার জন্য। সোহা ভাঙা গলায় বলে
” ককি…..হবে ??” শান দুইপা এগিয়ে এসে সোহার বাহু হালকা চেপে ধরে বলে
” কি হবে সেটা তো জানি না তাই জিজ্ঞেস করছি। তবে কিছু হয়েছিলো কিনা সেটা বলো। আর সব সত্যি কথা বলবে। মিথ্যা বলার কোনো চেষ্টা করবে না।” সোহা ছলছল চোখে শানের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। ধীর গলায় বলে
” হয়েছিলো কিছু।” বলে সোহা এক মুহূর্ত দেড়ি না করে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। শান সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার এতোক্ষণের এতো আশা ভরসা সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। শান রেগে চিৎকার দিয়ে দরজায় সজোরে লাথি দেয়। দরজা ধাম করে বারি লাগে। শান দরজা লক করে হাটু গেরে বসে পরে। সেই দিনের পর থেকে সোহার নামটাও সেই চরিত্রহীন মেয়েদের তালিকায় উঠিয়ে নেয় শান। সেই বিষয়ে অন্যকিছু জানার ইচ্ছেই মুছে যায়।এরপর থেকে সোহা শানদের বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসলে শান প্রতিনিয়ত সোহাকে এভোয়েড করতো। যদিও সোহা শানের ধারেপাশে তেমন আসতো না তবে হুট করে আসতো তখনও শান সোহাকে এভোয়েড করে নিজেকে সামলে নিতো।
শান তার এই তিক্ত স্মৃতিগুলোর স্মরণের সমাপ্তি ঘটিয়ে সোহার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আজকাল এই মেয়েটাকে দেখে মনেই হয়না সোহা সেই রকম কিছু করতে পারে বলে। সোহাকে দেখে একটা নিষ্পাপ বাচ্চা মনে হয় যার কারণে প্রশ্নগুলো বারবার মাথায় ঘুরপাক খায়।
শান সব ভাবনা বাদ দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।

সারা রাত আরামে ঘুমিয়ে সকালে মিষ্টি স্বরের ডাকের জায়গায় বিচ্ছিরি গান শুনে ঘুম থেকে উঠা কতোটা বিরক্তকর সেটা একমাত্র শানকে দেখে বোঝা যায়। সোহাকে গান গাইতে দেখে শান উঠে বসে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” এই চুপ !!!” সোহা হঠাৎ চিৎকার ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকায়। শানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। শান দাঁতেদাঁত চেপে বলে উঠে
” প্রতিদিন এই বিচ্ছিরি গান না গেলে তোমার শান্তি লাগে না ?? আমার ঘুমের সাথে কি তোমার শত্রুতা আছে নাকি তুমি প্রতিদিন আমার ঘুমের বারোটা বাজাও কেনো ?? যাও এখান থেকে নাহলে একটা কাপড় দিয়ে হাত, পা, মুখ বেধে দিয়ে মুখে বন্ধ করে রাখবো।” সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারা করে বলে
” আপনি আবার আমাকে বকছেন ?? তাও আজকের দিনে ??” শান ভ্রু কুচকে বলে
” কেনো আজকে কি আছে যে তোমাকে বকা যাবে না ?? তোমার বিয়ে নাকি তোমার টমির বিয়ে ??” সোহা মুখ বাকিয়ে বলে
” ছিঃ ছিঃ ছিঃ আপনি কতো খারাপ !! আমার একবার বিয়ে হয়ে গিয়েছে সেটা আপনার সাথেই আপনি ভুলে গিয়েছেন ?? আমি তো আপনাকেই সামলাতে পারি না আর কয়টা বিয়ে করবো ??”
শান রেগে বলে
” যাবে এখান থেকে তুমি ?? আমাকে পাগল করে দেও তুমি। যাও এখান থেকে সকাল সকাল আমাকে পাগল বানাবে না একদম।” সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারায় রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। শান বিরক্তকর চেহারায় একবার তাকিয়ে উঠে গেলো। সোহা নিচে এসেই শাহানাজ বেগমকে দেখে তার সামনে গিয়ে নাক টেনে টেনে বলে
” মামনি তোমার ছেলে আবার আমাকে বকেছে। আজকে আমার ভার্সিটির প্রথমদিন আর আজকেই আমাকে কতোগুলো বকা দিলো। আমি যাবো না আজকে ভার্সিটিতে।” সোহার কান্নাভরা কথাগুলো শুনে সবাই সোহার দিকে তাকায়। শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে সোহাকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” না মা এভাবে বলে না আজকে প্রথমদিন না গেলে কেমন দেখায় বল !! শান আসলে আমি তাকে বকে দিচ্ছি তুই তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নে।” শাহানাজ বেগম সোহাকে বুঝিয়ে টেবিলে বসিয়ে খাবার খেতে দেয়। কিছুক্ষণ পর শান নিচে নেমে আসে। শান আসতেই শাহানাজ বেগম শানের কান চেপে ধরে। শান হতবাক হয়ে তার মায়ের দিকে তাকায়।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here