তুমিময় ভালোবাসা পর্ব -১৮+১৯

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ১৮
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

শান সোহার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে
” এখন থেকে তোমার গায়ে আমি কোনো আচ লাগতে দেবো না। বিপদে-আপদে তোমার ঢাল হয়ে দাঁড়াবো।” শান মুচকি হাসি দিয়ে বেড়িয়ে গেলো তার উদ্দেশ্যে।
রাতে বাড়ি ফিরতেই শাহানাজ বেগম শানকে বকাবকি করা শুরু করেছে টিভি ভাঙার জন্য।শান অসহায় চেহারায় বসে বসে বকা খেয়ে যাচ্ছে আর সোহা, নাইসা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শাহানাজ বেগম বকাবকি শেষ করে রুমে চলে যায়। শান সোহার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” আমাকে দেখে এতো হাসি পাচ্ছে কেনো ??” সোহা মুখ চেপে ধরে হাসি বন্ধ করার চেষ্টা করে মাথা নেড়ে বলে
” না তো হাসছি না। আপনার জন্য খারাপ লাগছে আমার।” বলে আবার হেসে দেয়। শান নাইসার পাশে বসে বলে
” নাইসা বাবা তোমার আম্মু কোথায় ??” নাইসা খিলখিল করে হেসে বলে
” আম্মু তো আব্বুর সাথে বারান্দায় বসে আছে। আমি টমিকে নিয়ে খেলতে এসে পরেছি।” শান তার শার্টের পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে দিয়ে বলে
” নাও তোমার চকলেট। তুমি তোমার দাদিমনির কাছে গিয়ে চকলেট খাও আর গল্প করো। তোমার মিষ্টি এখন পড়তে বসবে।” নাইসা মাথা নেড়ে বলে
” আচ্ছা। কিন্তু টমিকে নিয়ে যাচ্ছি আমি।” শান মাথা হেলিয়ে ঠিকাছে বোঝায়। নাইসা চলে যেতেই শান সোহার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সোহা ভ্রু কুচকে বলে
” কি হয়েছে এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো ?? আয়ায়া !!!” সোহা চিৎকার দিয়ে শক্ত করে শানের গলা জড়িয়ে ধরে। সোহার কথার মাঝেই শান সোহাকে কোলে তুলে নিয়েছে। হঠাৎ এমন কাজে সোহা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে। শান সোহার দিকে তাকিয়ে একটা টেডি স্মাইল দিয়ে সোহাকে নিয়ে উপরে যাওয়া শুরু করে। সোহা ভয়ে ভয়ে বলে
” আমি কি বাচ্চা নাকি ?? আমাকে কোলে নিয়েছেন কেনো ??” শান সিরি দিয়ে উঠতে উঠতে ভ্রু কুচকে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” আচ্ছা একটা কথা বলো তো তুমি নিজেকে বাচ্চা মনে করো নাকি করো না ?? সকালেই বললে তুমি বাচ্চা মানুষ তাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো এখন আবার বলছো তুমি বাচ্চা না।” সোহা থতমত খেয়ে বলে
” ইয়ে মানে আমি তো দুইটাই। আমার বিয়ে হয়েছে আবার ভার্সিটিতে পড়ি তাই আমি বড় আর…জানি না কেনো সবাই আমাকে বাচ্চা বলে।” সোহার ঠোঁট উল্টানো দেখে শান হেসে দেয়। রুমে এসে সোহাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দেয়। সোহার সামনে বসে শান শান্ত গলায় বলে
” তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো তুমি উত্তর দেবে তো ??” সোহা চোখ ছোট ছোট করে বলে
” কি প্রশ্ন করবেন ??”
” করবো কিছু প্রশ্ন তবে তুমি উত্তেজিত হবে না ঠিকাছে !!” সোহা ভ্রু কুচকে তাকায়। শান শুকনো অধর জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” ভাইয়া-ভাবির বিয়ের দিন স্টোর রুমে যা হয়েছে আমি সব জানি। তুমি কি হৃদয়কে আগে থেকে চিনতে ??”

শানের প্রশ্ন শুনে সোহার শরীর কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়। শান সোহার হাতের উপর হাত রেখে বলে
” দেখো ভয় পেয়ো না। শান্ত হও তুমি।” আস্তে আস্তে সোহা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকে। শান ভয় পেয়ে সোহার হাত ঘষতে থাকে অস্থির হয়ে বলে
” সোহা শান্ত হও। তোমার প্রবলেম হচ্ছে।” সোহা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে বলে
” ইন…হে..লার !!” শান হাত ঘষতে ঘষতে বলে
” কোথায় ইনহেলার ??” সোহা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বলতে থাকে
” টে…বিলের ড্র..য়ারেহ।” শান দ্রুত পেয়ে টেবিলের কাছে যায়। টেনে টেনে দুইটা বক্স দেখার পর তৃতীয় বক্সেটাতে পায়। ইনহেলার এনে সোহাকে দেয়। সোহা ইনহেলার নিয়ে কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় শান হাত ঘষতে ঘষতে চিন্তিত হয়ে বলে
” ঠিকাছো তুমি ??” সোহা চোখ বন্ধ করেই বলে
” হুম।” শান সোহার মুখের সামনে থাকা চুল গুলো কানের পেছনে দিয়ে ধীর গলায় বলে
” আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে ??” সোহা চোখ খুলে শানের দিকে তাকায়। ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” আপনি এসব কি করে জেনেছেন ??” শান নিশ্বাস ফেলে বলে
” জেনেছি কোনো একভাবে। প্লিজ আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।” সোহা সোজা হয়ে বসে মাথা নিচু করে বলে
” কথাটা আমার বাড়িরও কেউ জানে না। লোকলজ্জার কারণে আমি কাউকে এসব কথা বলিনি। আপনি যখন জানতে পেরেছেন তাহলে বলছি।” শান আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সোহা ঢোক গিলে বলতে শুরু করে
” ওই ছেলেটাকে আমি চিনতাম না। বিয়ে বাড়িতে কিভাবে গিয়েছে সেটাও জানতাম না। তবে বিয়ের পরে জানতে পেরেছি আমার মামা শালির আত্মীয় হয় রিমি। পড়াশোনার সুবাদে ওদের সাথেই থাকতো তো বিয়েতে ইনভাইট করায় রিমি তার বয়ফ্রেন্ড মানে হৃদয়কেও নিয়ে এসেছিলো আমি ওদের কাউকেই চিনি না। হৃদয় সেইদিন নেশাগ্রস্থ অবস্থায় থাকায় আমার সাথে জোর..” বলতে বলতে সোহা কেঁদে দেয়। শান সোহার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ধীর গলায় বলে
” কান্না করো না প্লিজ !! যা হয়েছে ভুলে যাও সব।” সোহা কাঁদতে কাঁদতে বলে
” ভুলতে পারি না আমি। বারবার হৃদয় নামের ব্যক্তিটা আমার সামনে আসলেই সেইদিনের ঘটনা গুলো আমার মাথায় ঘোরে। সেইদিন হৃদয় নেশা করায় আমাকে চিনতে পারিনি এখনও কিন্তু আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ছিলাম। আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না সেসব।” সোহা ঢুকড়ে কাঁদতে থাকে শান পানি ভরা টলমল চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে সোহাকে দুইহাতে সোহাকে জড়িয়ে ধরে। সোহা শানের শার্ট খামছে ধরে একমনে কেঁদে যাচ্ছে। শানের মাথায় হৃদয়ের প্রতি রাগ জেকে বসে। শানের মাথায় হৃদয়কে কিভাবে শাস্তি দেওয়া যায় সেই কথা ঘুরতে থাকে। সোহাকে নিয়ে সেইভাবে থাকতে থাকতে একসময় শান খেয়াল করে সোহা চুপ হয়ে গিয়েছে। শান মাথাটা নিচু করে দেখে সোহা শানের শার্ট খামছে ধরে ঘুমিয়ে গিয়েছে। শান ঝুকে সোহাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে সোহার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ফোন হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়। গম্ভীর গলায় কারোর সাথে কথা বলে। কথা শেষ করে রুমে ফিরে আসে। নিলার রুমে গিয়ে জানিয়ে দেয় সোহা ঘুমিয়ে গিয়েছে তাই আজকে দুজন খাবে না। রুমে ফিরে এসে লাইট অফ করে সোহার পাশে শুয়ে পরে তবে প্রতিদিনের মতো আজকে মাঝের কোলবালিশটা নেই। শান সোহা আর নিজের মধ্যে যেই দূরত্ব তৈরি করেছে সেটা ধীরেধীরে প্রতিনিয়ত কমিয়ে নিতে চায়। শান সোহার হাতটা টেনে নিজের হাতের মাঝে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।

ঘুম ভাঙতেই সোহা ঘুম ঘুম চোখে একবার পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। নিজের দিকে তাকাতেই চোখ ছড়গাছ হয়ে গিয়েছে। শান সোহার হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। সোহা অবাক হয়ে যায় এটা দেখে। সোহা হাতটা একটু টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে শান শক্ত করে ধরে। সোহা কোনোরকমে হাত ছাড়িয়ে উঠে যায়। কালকে থেকে শানের সব কাজকর্ম স্বাভাবিক লাগলেও এখনের কাজ দেখে অবাক লাগছে।
ভার্সিটি আসতেই সোহা, ইতি একটাই কথা শুনতে পেলো। হৃদয় হসপিটাল ভর্তি রয়েছে কথাটা নিয়ে পুরো ভার্সিটির মানুষ আলোচনা করছে। হৃদয়কে নাকি কালকে রাতে ক্লাব থেকে কয়েকটা ছেলে উঠিয়ে এনে মেরে আধমরা করে নিজেরাই হসপিটালে ভর্তি করে দিয়েছে। কারা আর কেনো
মেরেছিলো সেটা কেউই জানে না। সোহা, ইতি দুজন অবাক হয়ে সব শুনছে। শান এসে এসব কথা শুনলেও পাত্তা দেয়নি। ইতি হেসে বলে
” একদম ঠিক হয়েছে ওর সাথে। এতোদিন আমাদের সহ আরো কতো কারোর সাথে কতোকিছুই না করেছে !! এবার নিজের সাথে এমন হয়েছে। এখন কিছুটা হলেও বুঝবে আমাদের কেমন লাগতো।” সোহা চুপ করে শুনছে কি বলবে বুঝতে পারছে না। হৃদয়ের কাজ থেকে দেখতে গেলে যা হয়েছে সবই ভালো হয়েছে।
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ১৯
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

ইতি হেসে বলে
” একদম ঠিক হয়েছে ওর সাথে। এতোদিন আমাদের সহ আরো কতো কারোর সাথে কতোকিছুই না করেছে !! এবার নিজের সাথে এমন হয়েছে। এখন কিছুটা হলেও বুঝবে আমাদের কেমন লাগতো।” সোহা চুপ করে শুনছে কি বলবে বুঝতে পারছে না। হৃদয়ের কাজ থেকে দেখতে গেলে যা হয়েছে সবই ভালো হয়েছে। সোহা নিশ্বাস ফেলে ইতিকে নিয়ে
ক্লাসে চলে যায়।
দুপুরে ক্লাস শেষ হতেই সোহা আর ইতি কথা বলতে বলতে ভার্সিটির বাইরে বেরিয়ে আসে। সোহা কথা বলতে বলতে সামনে তাকিয়ে দেখে শান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপে যাচ্ছে। শানকে এইসময় দেখে সোহা অনেকটা অবাক হলো কারণ শান এই সময় অফিসে থাকে। কালকেও সোহা একাই গিয়েছিলো বাড়িতে শান আসেনি। ইতি শানকে দেকে ঠোঁট চেপে হেসে সোহার হাতে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে
” যাও !! ভাইয়া চলে এসেছে।” সোহা ইতির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে
” তুমিও চলো !! তোমাকে ড্রপ করে দেবো।” ইতি হেসে বলে
” না বাবা আমার আবার কাবাব মে হাড্ডি হতে ভালো লাগে না। তুমিই যাও। Have a good day, bye.” ইতি চলে যেতেই সোহা শানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শান মাথা উঠিয়ে সোহাকে দেখে বলে উঠে
” তুমি এসে পরেছো !! চলো তাহলে ??” সোহা ভ্রু কুচকে বলে
” আপনি তো আমাকে নিতে আসেন না আজকে আসলেন যে !!” শান মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বলে
” আসলে আজকে কাজ নাই বেশি তাই ভাবলাম তোমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে যাই।”
” ওহ !!” সোহা কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে বসে পরে। শান গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
সোহাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে শান ড্রাইভ করতে করতে হালকা হেসে বলে
” কি ম্যাডাম ?? আজকে এতো চুপ করে আছেন যে ?? কিছু হয়েছে নাকি ??” সোহা শানের দিকে মাথা ঘুড়িয়ে আস্তে করে বলে
” হৃদয়কে নাকি কালকে কারা মেরেছে এখন হসপিটালে ভর্তি। আচ্ছা কোন হসপিটালে আসে সেটা কি জানতে পারবেন আপনি?? ” সোহার কথা শুনে শান গাড়ি থামিয়ে দেয় সাথে সাথে। সোহার দিকে দাঁতেদাঁত চেপে রাগি গলায় বলে
“তোমার কি এখন হৃদয়ের জন্য খারাপ লাগছে নাকি ?? তুমি আবার ওকে দেখতে যাওয়ার প্ল্যান করছো না তো ?? এসব চিন্তা মাথায় এনে থাকলেও বের করে দাও কারণা আমি থাকতে কখনও তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবো না। তোমার সাথে এতোকিছু করার পরও তুমি ওর কথা ভাবছো ?? সোহা তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো !!”
সোহা মন খারাপ করে বলে
” আমি কি করবো ?? আমার একটু খারাপ লাগছে। শুধুশুধু মার খেয়ে হসপিটালে পরে আছে।” শান রেগে বলে
” সোহা তোমার মন পরিষ্কার তাই এসব ভাবছো কিন্তু এটা নিয়ে একদম বাড়াবাড়ি করবে না। হৃদয় তোমার সাথে যা করেছে সেটার জন্য এটা তো আমার কাছে খুবই কম শাস্তি মনে হচ্ছে। আমি যদি হৃদয়কে পেতাম তাহলে ওকে বাঁচাতে পারতো না কেউ।” সোহা মাথা নিচু করে নেয় শানের কথা শুনে। শান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” আমরা এখন মা,বাবাকে দেখতে যাবো। মুখটা কে পেচার মতো করে রাখবে না আর।” শানের কথা শুনে সোহা তাৎক্ষণিক মুচকি একটক হাসি দিয়ে খুশি হয়ে বলে
“নাতো আমি তো অনেক খুশি। তাড়াতাড়ি নিয়ে চলুন প্লিজ !!” শান হালকা হেসে ড্রাইভে মনোযোগ দেয়।

রাতে সোহা খুশি মুডে ফিরে আসে শানের সাথে। শাহানাজ বেগম বসে বসে নাইসাকে পড়াচ্ছিলো সোহাকে দেখে পড়া রেখে ছুটে আসে নাইসা । সোহা নাইসাকে কোলে তুলে এগিয়ে আসে। শাহানাজ বেগম মুখ শুকিয়ে বলে
” এতো তাড়াতাড়ি এসেছিস চলে এলি যে ?? আমি তো ভেবেছিলাম কালকে আসবি।” সোহা ঠোঁট উল্টে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
” সরি মামনি !! আর দেড়ি হবে না। অনেকদিন পর বাড়িতে গিয়েছি তো তাই দেড়ি হয়ে গিয়েছে।” শান মায়ের মন খারাপ দেখে এগিয়ে এসে শাহানাজ বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে
” তোমাকে ছাড়া তো আমরা একটু সময় বাইরে থাকতে পারি না আর একরাত কি করে থাকবো বলো !!” শাহানাজ বেগম চোখ বড়বড় করে বলে
” এতো মিথ্যা কথা কিভাবে বলতে পারিস তুই ?? আমাকে ছেড়ে তো মাসের পর মাস পড়ালেখা, অফিসের জন্য বাইরে থেকেছিস। আজকে এতো আদরের মিথ্যা কথা বলছিস কেনো ??” মায়ের কথা শুনে শান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকায় সোহা ফিকফিক করে হেসে দেয়। শান মাথা চুলকে বোকাসুলভ গলায় বলে
” মা তুমি কি আমাকে অপমান করছো??” শাহানাজ বেগম অবাক স্বরে বলে
” ওমা !! আমি অপমান করতে যাবো কেনো আমি তো সত্যি মথা বলছি। দেখেছিস সোহা !! সত্যি কথাকেও আজকে অপমান বলে দাবি করছে আমার ছেলে। কি উন্নতি হয়েছে আমার ছেলের !!” সোহা আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে। শান মুখ লটকিয়ে উপরে চলে যায়। সোহার হাসির শব্দ শুনে নিলা আর সালমা রুম থেকে বেরিয়ে আসে। নিলা হেসে বলে
” সোহা এসে পরেছো ?? যাও ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমাদের জন্য কফি বানিয়ে আনছি।”
সোহা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। নিলা সালমাকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। সোহা টমিকে কোলে তুলে বলে
” কতোদিন হলো তোর সাথে সময় কাটাই না চল আমার সাথে।” সোহা টমিকে নিয়ে উপরে চলে যায়। শাহানাজ বেগম আবার নাইসাকে নিয়ে পড়তে বসায়।
সোহা রুমে এসে দেখে শান ইতিমধ্যে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসেছে। সোহা টমিকে রেখে ড্রেস নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে যায়। শান চুল মুছে হাতের টাওয়ালটা রেখে টমির পাশে এসে বসে। টমিকে উঠিয়ে বিছানার উপর রাখে। টমি বড়বড় চোখে তাকিয়ে থাকে শানের কাজে। শান টমির মুখের সামনে মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলে
” তোর বোনকে আমি এখন নিজের করে নেবো আস্তে আস্তে। তুই আমাদের একটু একা একা সময় কাটাতে দিস। নাহলে কিছুই করতে পারবো না তোর সামনে।” টমি আগের মতো পলক না ফেলে শানের দিকে তাকিয়েই থাকে। শান ভ্রু কুচকে টমির সামনে চুটকি বাজাতেই টমি লাফ দিয়ে উঠে দৌড়ে ব্যালকনিতে চলে যায়। শান হেসে দেয় টমিকে দেখে। সোহাকে না দেখে শান ল্যাপটপ নিয়ে বসে। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ শুনে শান ওয়াসরুমের দিকে তাকায়। সোহা কাপঁতে কাপঁতে বেড়িয়ে আসে ওয়াসরুম থেকে। শান অবাক হয়ে বলে
” কি হলো কাঁপছো কেনো তুমি ?? গোসল করেছো নাকি ??” সোহা কাপঁতে কাপঁতে মাথা বলে
” হ্যা। ভিজে গিয়েছিলাম তাই গোসল করে নিয়েছি কিন্তু এখন শীত লাগছে।” শান বিরক্তিমুখ করে বলে
” অদ্ভুত তো !! এতো রাতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছো তো ঠান্ডা লাগবে না?? এমনিতেই এখন শীতকাল পরে যাচ্ছে। আচ্ছা তুমি বসো আমি চা বা কফি নিয়ে আসছি।” সোহাকে বিছানায় বসিয়ে শান বাইরে চলে যায়। দুইমিনিট পর দুই হাতে দুইটা মগ নিয়ে ফিরে আসে। মগ থেকে কফির ধোয়া উড়ছে সাথে কফির ঘ্রাণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। শানের পেছন পেছন নিলাও আসে। সোহাকে দেখে নিলা চিন্তিত হয়ে বলে
” সোহা তাড়াতাড়ি গরম কফিটা খাও। তোমাকে নিয়েই সবার চিন্তা। এতো কেয়ারলেস হলে কি করে চলবে বলো তো ?? এখন গোসল করার কি দরকার ছিলো ?? এখন ঠান্ডায় যদি আবার তোমার Asphyxia হয় তাহলে ??” সোহা শানের হাত থেকে কফির মগ নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলে
” ভাবিমনি কিছু হবে না চিন্তা করো না তুমি।” নিলা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।

রাতে সোহা শুয়ে মোবাইল টিপছে আর পাশে শান শুয়ে আছে। শান বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে সোহাকে কিছু বলার জন্য কিন্তু কিভাবে শুরু করবে বুঝতেই পারছে না। সোহারও কোনো দিকে খেয়াল নেই। শেষ পর্যন্ত শান কথা শুরু করে ধীর গলায় সোহার নাম ধরে ডাক দেয়। সোহা মোবাইল থেকে চোখ সড়িয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে।
” ডেকেছেন নাকি ??”
” হুম, একটা কথা বলবো।” সোহা ভ্রু কুচকে বলে
” কি ??” শান উঠে বসে আমতা আমতা করে বলে
” আ-আমরা কি বন্ধু হতে পারি ?? মানে তুমি আমার বন্ধু হবে ??” সোহা কিছুক্ষণ ভেবে বলে
” কিন্তু আমরা তো হাসবেন্ড-ওয়াইফ। আমরা বন্ধু কি করে হবো ??” শান বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে।
” স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কটা বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হয়। বন্ধুত্ব থেকে আস্তে আস্তে সেটা গভীর পর্যায়ে যায়। তখন একে অপরকে বোঝা, বিশ্বাস, ভরসা করে। তারপর তাদের সম্পর্কটা সুন্দর একটা দম্পতিতে পরিণত হয়। এসব কেউ বিশ্বাস না করলেও আমি করি তাই আমি আমার মতো করে আমাদের সম্পর্কে গভীরতা আনতে চাই। হবে আমার বন্ধু !!” সোহা কিছুক্ষণ একমনে শানের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলে
” হুম হবো।” শান বড় একটা হাসি দেয়।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

[ আজকে আমাদের বাসায় মেহমান আসছিলো তাই ছোট করে দিলাম। ]
চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here