তুমি অতঃপর তুমিই পর্ব ৪+৫

তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব -০৪
Writer Taniya Sheikh

ইমা কুলসুমকে নিয়ে হাজির হয় বাবুমিয়ার হোটেলের পাশে। এই হোটেলেই কাজ করে কুলসুমের ভালোবাসার মানুষটা। ইমার মেজাজ বেজায় চড়া। চেয়েছিল দু’ঘা বসিয়ে হিড়হিড় করে টেনে আনতে কুলসুমের তথাকথিত প্রেমিক রাসেলকে৷ বেচারী কুলসুম তা শুনেই নাক টেনে কাঁদতে লাগল। বললো,

” আফা, এমন করিয়েন না। তাকে বুঝিয়ে বললে ঠিক বিয়ে করবে আমাকে। মারিয়েন না গো আফা। মন থেকে তো তারে আমি স্বামী মানছিই। চোখের সামনে স্বামীকে বেইজ্জত হতে দেখতে পারুম না।”

” স্বামী মানলেই স্বামী হয়ে গেল হারামীটা তোর? বেক্কল মেয়ে, কতোবড় চালবাজ ঐটা বুঝোস তো নাই। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে সর্বনাশ করেছে তোর। স্বামী মানছি! বেকুব।” রাগে গলা চড়িয়ে বলে ইমা।চোখদুটো রৌদ্রের খরতাপ সাথে রাগের তাপে মিলিমিশে তীব্র তেজে জ্বলছে।

” আফা, আপনে বকেন যা খুশি বলেন। দরকার পড়লে চড়ও দিতে পারেন আমারে। আমি কিচ্ছু কমু না। তবুও তারে কিছু কইয়েন না গো আফা। আপনে মনে হয় কুনোদিন ভালোবাসেন নাই কাউরে। ভালোবাসলে বুঝতেন আমার জ্বালা গো আফা,ভালোবাসলে বুঝতেন।” কুলসুম ওড়না দিয়ে নাক মুছে আবার কাঁদছে। ইমা রেগে ধমক দিতে উদ্যত হলে নুসরাত ইমার হাত ধরে ইশারায় থামতে বলে। নুসরাত স্বাভাবিক স্বরে কুলসুমকে বললো,

” ঠিক আছে তোমার তাকে কিছুই বলবে না ও। যাও ডেকে নিয়ে আসো এখানে। যাও।”

বৃষ্টির মধ্যেই হঠাৎ রোদ উঠলে হলে যেমন লাগে, ঠিক তেমনিই লাগল কুলসুমের অশ্রুসিক্ত হাস্যোজ্জ্বল মুখটা। ইমার গম্ভীরমুখে এক নজর তাকাতেই খানিকটা মলিন হলো সেই উজ্জ্বলতা। পাশে দাঁড়ান নুসরাতের হাসিতে কুলসুম পুনরায় হাসল। হাসিমুখে এগিয়ে গেল হোটেলের মুখে। ইমা সেদিক তাকিয়ে দাত খেঁচিয়ে বললো,

” এসব লাভ সাভ সেন্টিমেন্ট দেখলে আগুন ধরে যায় গায়ে। জাস্ট আগুন ধরে যায়। বুদ্ধি ঘাস খেতে গেছে ভালোবাসার মোহে পরে ওর। দেখিস এক্ষুনি আসবে উস্টা খেয়ে। ভালোবাসা! বুঝিয়ে দেব তখন ভালোবাসা কাকে বলে? কত প্রকার? ”

” জাস্ট রিলাক্স ইমা। তুই যা ভাবছিস তা নাও তো হতে পারে। ভালোবাসার পাওয়ার কিন্তু খুব হয় জানিস তো?” নুসরাত এক চোখ টিপে মুচকি হাসতেই ইমা চোখ পাকায়। নুসরাত সে নজর উপেক্ষা করে ফের বলে,

” একটু প্রেম করে দেখবি নাকি?”

” নুসরাতের বাচ্চা! গলা টিপে মেরে ফেলব যদি আবার এসব ফালতু জোকস মারছোস অটাইমে? চুপ থাক। একদম চুপ!” ইমার তিরিক্ষি মেজাজে নুসরাত চুপসে গেল। এর বেশি মজা করলে ঠিকই গলা চেপে ধরবে। এই ইমাকে বিশ্বাস নাই। নুসরাত গুনগুন করে হোটেলে দিকে তাকিয়ে আছে। আড়চোখে একবার ইমার অস্থিরতাও দেখল। ঠোঁট কামড়ে হাসছে নুসরাত৷ ইমার ধারণা যেন ভুল হয়, মনে মনে ব্যাকুল প্রার্থনা করলো রবের কাছে। বেশখানিক সময় অতিবাহিত হতেই হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এলো কুলসুম। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। বোধহয় খুব কেঁদেছে মেয়েটা। ওর পেছন পেছন বিশ বাইশ বছরের কালো গাত্রবর্ণের মধ্যমদেহি একটা ছেলেও আসছে৷ নুসরাত একবার সামনে আবার পেছনে তাকাতে তাকাতে এগিয়ে এলো ওদের দুজনের সামনে। ইমা মুখটা নুসরাতের কানের কাছে এনে চাপা স্বরে বললো,

” যাওয়ার সময় মুখের উপর চারশ চল্লিশ ভোল্টেজের আলো নিয়ে গেছিল, আর ফেরার সময় মুখের উপর অমাবস্যা। ভালোবাসা দারুন শিক্ষা দিছে আজ ওরে। ঐ শালারে তো খাইছি আজ।”

ইমা কটমট দৃষ্টিতে সোজা হয়ে দাঁড়াল। নুসরাত কপাল কুঞ্চিত করে নিচু গলায় বললো,

” আগে সব ক্লিয়ার হোক তারপর লাফাইস। মেজাজ কন্ট্রোলে রাখ ইমা।”

নুসরাতের কথার ধরণ ইমার পছন্দ হলো না। এই মেয়ে সবসময়ই জ্ঞান দেয়। আরে ইমা কী কম বোঝে? এই কুলসুম ছ্যাঁকা খাবে ইমা সিওরের উপর সিওর। তবুও নুসরাত ভ্রান্তি মনে বেঁধেছে।

” বাঁধো সখি বাঁধো ভ্রান্তি। তোমারে একটু পরেই ভুল প্রমাণিত করে তবেই আমার শান্তি।” ইমা মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
কুলসুম মুখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ঠিক পাশে হাত পেছনে নিয়ে দাঁড়ানো রাসেল। ইমা ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে রাসেলকেই দেখছে। হাতটা নিশপিশ করছে খুব। ইমা কুলসুমকে লক্ষ্য করে কিছুটা গম্ভীর গলায় বললো,

” মেনে নিয়েছে তোরে ও?”

কুলসুম কথা বলে না। মাথা দুলে দুলে উঠছে কান্নায়। ইমা নুসরাতের দিকে ঠোঁট বাকিয়ে আচমকা সামনে দাঁড়ানো রাসেলের গলা চেপে ধরে।

” শালার ব্যাটা, মাইয়্যা মানুষরে দেখলে চোখ টাটায়? শুইতে মন চায় খালি? কথা ক শালা?” ইমা চড় দিতে হাত উঠাতেই কুলসুম হাত ধরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। ইমা হাত ছাড়াতে চেয়েও পারছে না। মেয়েটার শরীরে জোর আছে বলা যায়। ইমা ধমক দিয়ে বলে,

” হাত ছাড়। বেক্কল ছেরি এখনও তোর হুশ ফেরে নাই। এখনও বলবি আফা সে আমার ভালোবাসা। তারে আমি মনে মনে সোয়ামী মানছি।”

” হ বলমু।” কুলসুম ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দেয়। ইমা হাত ছাড়িয়ে ভ্রুকুটি করে বলে,

” হ্যাঁ রে নুসরাত, এই মেয়ে কী আসলেই বেকুব? ঐ মেয়ে মাথা ঠিক আছে তোর?”

” আফা, আপনে আগে পুরা কথা তো শুনবেন।”

” পুরা কথা!”

” হ! আপনে তো সব না শুইনাই তারে মারতাছেন। হেই ভালা পুরুষ।”

” হেই ভালা পুরুষ! ভালা পুরুষ কারে কয় জানিস তুই? ভালা পুরুষরা বিয়ার আগেই,, ”
রাসেল চোখে চোখ পড়তেই দাঁত খিঁচে থেমে যায় ইমা। রাগে শরীরের শিরায় শিরায় টান ধরেছে। কপালের পাশটা ধরে নুসরাতকে ইশারা করে সব জিজ্ঞেস করতে। নুসরাত কুলসুমের কাঁধে হাত রেখে বলে,

” কী হয়েছে খুলে বলো।”

” ঐ আফা এতো রাগে ক্যান? ও আফা,আপনে রাইগেন না গো। সে সত্যই ভালা। যা হইছে তার আমার সম্মতিতেই হইছে। সে আমারে কথা দিছে আজই বিয়া করব।”

” কী?” ইমা চমকিত হয়। রাসেল,কুলসুমের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুঞ্চন করে বলে,

” বিয়া করব মানে কী? আজ কেন করব? আগে কেন করে নাই? তোমার হেই ভালা, বড়োই ভালা। আবে হালা কস না ক্যান? এই মাইয়্যারে লইয়া খেলছোস ক্যান এতোদিন?”
রাসেলের কলার পুনরায় চেপে ধরে দু’চড় লাগিয়ে দেয় ইমা। নুসরাত রেগে যায়। ইমার হাত ধরে টেনে সরিয়ে আনে। কুলসুম ফুঁপিয়ে কাঁদে রাসেলের গালে হাত বুলিয়ে। ইমা চেঁচিয়ে ওঠতেই মুখ চেপে ধরে নুসরাত। চাপা ধমকে বলে,

” বেশি হচ্ছে কিন্তু এবার। আগে শোন কী বলে ওরা। সবসময়ই গুন্ডাগিরি না দেখালেই হচ্ছে না উনার।”

ইমা ক্রুর দৃষ্টিতে নুসরাতকে দেখে ঝটকা মেরে সরে আসে। রাসেলের দিকে তাকাতেই রাসেল বিনম্র স্বরে বলে,

” আপনি যা বলতে চাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি আপা। তবে আপা সবসময়ই সবাই খারাপ ইচ্ছা করে হয় না। পরিস্থিতিতে পরেও হতে হয়। কুলসুমের এই অবস্থার জন্য আমি দায়ি। অপরাধ আমি মানছি। আবেগের কারনে হয়তো ভুলটা হয়ে গেছে। আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম ওরে। দুজনে প্লানও করেছিলাম পালানোর। কিন্তু তার আগেই এতিম খানার কেয়ারটেকার সব জেনে যায়। আমারে খুব মারে কেয়ারটেকার। ভয় দেখায়। কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারি নাই ওর সাথে। পরে শুনলাম ওর বিয়ে হয়ে গেছে। এই খবর শোনার পর থেকে আমার ঘুম হয় না আপা, আমি খাইতে পারি না,কোনো কাজে মন বসে না। খালি কান্দা আহে। আমি তো ওর শরীরের সাথে ওরেও ভালোবাসছিলাম আপা। অনেক ভালোবাস ছিলাম।” রাসেল চোখ মোছে। ইমার রাগ গলে বিস্ময় ভেসে উঠল। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না রাসেলের কথা। নুসরাত ইমার মুখের ভাব বুঝে মৃদু হাসল। এগিয়ে গেল কুলসুম এবং রাসেলের দিকে। কুলসুমের মাথায় হাত রেখে পরম স্নেহে বললো,

” চলো কাজী অফিসে যাই।” কুলসুম হাসতে গিয়েও হাসল না ইমার মুখের দিকে তাকিয়ে। এগিয়ে এল ইমার সামনে। ইমার হাতদুটো মুঠোবন্দি করে বললো,

” আফা আপনের জন্যে আমি তারে পাইছি। যার সাথে আমার বিয়ে ঐদিন হইতাছিল সে নাকি খুব ধনী। আমার ধন সম্পদ চাইনা আফা। খালি ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকলেই খুশি আমি। তারে না পাইলে বাইচ্যা থেইকা কী করুম? তাই তো মরতে গেছিলাম। অভিমানে ঐদিন তারে কতো গালমন্দ করছি। আমার মাথা ঠিক আছিল না। আপনে তার উপর ক্যান রাগ করতাছেন আমি বুঝছি আফা। বিশ্বাস করেন সে যা কইছে সব সত্য। তারে ক্ষমা কইরা দেন আফা। আপনেরে আমি সম্মান করি। আপনে ক্ষমা না করলে আমি শান্তি পামু না। আপনে বড়ো ভালা। পরের জন্যে এতো কেউ করে না। আপনার কাছে আমি ঋণী। আপনে আজ থেইক্যা আমার ধর্ম বইন।” কুলসুম ইমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদছে। ইমা স্থির দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগেও ভেবেছিল রাসেলকে মেরে শান্তি মিলবে এখন আর তা মনে হচ্ছে না। ঘৃণা, ক্রোধ কোনোটাই কাজ করছে না রাসেলের প্রতি। ইমা নুসরাতের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। আনন্দিত দেখাল নুসরাতকে । আরও দু’তিনজন বন্ধু বান্ধবকে ডেকে আনন্দের সাথে বিয়ে দিল রাসেল,কুলসুমের। সবাই চাঁদা তুলে ইমাদের এলাকাতে একটা ছোট বাসা ভাড়া করল। ঘর গৃহস্থালির টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনে দিল ইমা। তিনহাজার টাকা কুলসুমের হাতে গুঁজে দিয়ে বললো,

” সুখী হ। অনেক সুখী।”

” তুমি আর আসবা না আফা?”

” আসব না মানে? অবশ্যই আসব। বোন বলেছিস এখন তো আসা লাগবেই।” ইমা কুলসুমের মাথায় হাত রেখে হাসল। লাল জামদানি শাড়ি পড়েছে কুলসুম। নুসরাত খুব সুন্দর করে বউ সাজিয়েছে। ইমার মনের কোনে সূক্ষ্ম টান অনুভব করল।কীসের টান বুঝতে পারল না সে। বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খেয়ে দেয়ে, কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল ওরা। ইমা রাসেলকে গম্ভীর গলায় বললো,

” আমার বোনকে যদি কষ্ট দিয়েছ তো খবর আছে তোমার। এটা আমার এলাকা। এখানে আমার উপর কথা বলার সাহস কারো নেই। আর হ্যাঁ ঐ দোকানে তোমার কাজ করার প্রয়োজন নেই। কাল আমার সাথে দেখা করবে। তোমাকে একটা বড় দোকানে কাজ দেব৷ মোবাইল নাম্বার দিয়েছি সকালে কল দেবে।”

” জি আপা!” রাসেল বিনয়ের সহিত মাথা নাড়ায়। সবাই বিদায় নিয়ে চলে আসে। ইমার বাকি বন্ধুরা যার যার বাসায় ফিরে যায়। ইমা ওদের গলির আবছায়াতে ধীর পায়ে হাঁটছে। অন্যমনস্ক ভাব এসে ভর করেছে ওর উপর।

” কী ভাবছিস?”

ইমা চমকে পেছন ফিরতেই নুসরাতকে দেখে বিস্মিত হয়।

” তুই যাস নি বাসায়?”

” না! আজ তোর সাথে থাকব বলে ফিরে এলাম।” নুসরাত ইমার বাহু পেঁচিয়ে বললো।

” হঠাৎ? ”

” ইচ্ছা হলো। কেন তোর সমস্যা আছে?”

” আরে নাহ!” দু’জনে চুপচাপ হাঁটছে। কিছুদূর এসে নুসরাত বললো,

” ছেলেটার খোঁজ নিলে কেমন হয়?”

” কোন ছেলে?” ইমা ভ্রুকুটি করে।

” আমাদের দুলাভাই।” নুসরাত মৃদু হাসল।

” নুসরাত!” ইমা দাঁড়িয়ে যায়। বুকের ভেতরটা ধ্বক করে ওঠে হঠাৎই। নুসরাত বললো,

” আজব! চোখ পাকাচ্ছিস কেন? দুনিয়ার সবাইকে ন্যায় পাইয়ে দিতে তুই মরিয়া,শুধু দুলাভাইয়ের বেলায় অন্যায় কেন?”

” তুই হাত ছাড়! ছাড়! বেয়াদব ছেরি। দুলাভাই, দুলাভাই কারে কস তুই? তোরে ঐদিন কী বলছিলাম? বল কী বলছিলাম?” ইমা মুখ চেপে ধরতেই নুসরাত ইমার পেটে সুরসুরি দিয়ে সরে দাঁড়ায়। দুই গাল হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বলে,

” এতো আগুন কেন তোর ভিতরে? দুলাভাইরে দুলাভাই কমুনা তো কী কমু?”

” যা খুশি বল।শুধু ঐ টা বলবি না।” আঙুল তুলে শাসায় ইমা। ভারী হয়ে আসছে নিঃশ্বাস। নুসরাত ঠোঁট টিপে হেঁসে শুধায়,

” কোনটা?”

” যেইটা মাত্র বললি।”

” কোনটা মাত্র বলছি?”

” নুসরাতের বাচ্চা। ” ইমা নুসরাতকে ধরতে গেলেই ছুটে দৌড়ায় নুসরাত। হাসতে হাসতে গানের সুরে বলে,

” দুলাভাই! দুলাভাই। ও আমার দুলাভাই। আপনাকে আপনার বউ দুলাভাই না বলিতে কয়। এটাকি ঠিক বলেন? এটাকী ঠিক?”

” নুসরাতের বাচ্চা আজ তুই গেলি?”

” দুলাভাই আপ কাহাপে হো? মুঝে বাঁচালো আপকি গুন্ডি বিবিছে।” নুসরাত একদৌড়ে চলে আসে ইমার মায়ের রুমে। ভাগ্য বলে বিভা তখন রুমেই ছিল। নুসরাতকে হাঁপাতে দেখে ধরে বিছানায় বসায়। ইতোমধ্যে ইমাও রুমে ঢুকে পড়েছে। মা’কে দেখে থমকে যায় ইমা। নুসরাতের মুচকি হাসি দেখে দাঁতে দাত পিষে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় সশব্দে। বিভা ভ্রু নাড়িয়ে কী হয়েছে জানতে চাইলে নুসরাত “কিছু না” বলে হাসে। বিভা গম্ভীরমুখে বলে,

” তোরা আর বড় হলি না। আমারটা তো ভাব ধরে সে কতোইনা বড় হয়েছে। কাজের বুদ্ধি তো একচুল নাই ওর মাথায়। যা আছে সবই অকাজের বুদ্ধি। ভয় হয় আমার ওরে নিয়ে৷ মেয়ে হয়েও মেয়েলি ভাব নাই। এলাকা দাপিয়ে বেরায় বেটাছেলের মতো। একটু তো বুঝাইতে পারিস নাকি?”
দৌড়ের কারনে গলা শুকিয়ে গেছে নুসরাতের। টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলে,

” বুঝাইতে গেছিলাম বলেই তো দাবড়ানি দিছে। এখন কী আছে কপালে আল্লাহ জানে। ঐ পেটে থাকতে কী ব্রুসলির মুভি দেখছিলা আন্টি? কিছু হইলেই মারতে আসে।”

বিভা নুসরাতের কথা শুনেও শোনে না। বিমর্ষ মুখে বলে,

” বড় জ্বালায় আছি মেয়েটারে নিয়ে। বিয়া শাদী দিতে পারলেও বাঁচতাম। ” নুসরাত সবেমাত্র পানি মুখে দিয়েছিল। বিভার মুখে ইমার বিয়ের কথা শুনে পানি নাকে মুখে উঠে যায় ওর। বিভা এগিয়ে এসে নুসরাতের পিঠ ডলতে ডলতে বলে,

” হুশ করে পানি খা। তুইও ইমার সাথে থাকতে থাকতে হুশছাড়া হয়ে যাচ্ছিস দেখি। হয় ওরে পথে আন, নয়ত তুই ওর সঙ্গ ছাড়। আল্লাহ আমার মেয়েটারে একটু সুমতি দাও।সভ্য, শান্ত বানায় দাও গো মাবুদ।” বিভা হাপিত্যেশ করতে করতে রুমে ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। নুসরাত কাশতে কাশতেই এক চুমুক পানি পান করে বলে,

” আমিন! আমিন! ইমা এক সের। আল্লাহ এবার সোয়া সেরের কাউকে পাঠাও৷ বেচারী আমার আন্টি আর আমি!” ঠোঁট উল্টে খিক করে হেঁসে ওঠে নুসরাত।

শান মাগুর মাছের খামারের দেয়ালের উপর বসে আছে। কালো কুচকুচে দানব আকৃতির মাছগুলো মাঝে মাঝে মাথা তুলে আবার ডুবছে পানির তলে। এরা কতোশত মানুষ ভক্ষণ করেছে তার হিসেব শান নিজেও জানে না। কোনোভাবে যদি নিচে একবার পড়ে যায় ছিঁড়ে খাবে মুহূর্তের মধ্যে তাকে। হাতে রাখা মাছের খাবারের কিছুটা ছিটিয়ে দিতেই পানি কাঁপিয়ে তান্ডব শুরু করে মাছগুলো। শানের মোবাইল ভাইব্রেট হচ্ছে। হাতে রাখা বাকি খাবারগুলো খামারে ফেলতেই মাছের তান্ডবলীলা শুরু হয়। শান উঠে দাঁড়ায়। মোবাইল রিসিভ করে লাইডস্পিকারে রাখে। সামনের পানির কলে হাত ধৌত করতে করতে জবাব দিল,

” বল।”

” তুই কী খামারে?”

” হুমম!”

” আজকে কাকে ভক্ষণ করালো?”

শান ইমরোজের কথার জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করল,
” খোঁজ পেলি কোনো?”

ইমরোজ বলল,
” আগে তুই বল।”

শান বললো,
” মেয়েটা ইচ্ছে করে পালিয়েছে। তোর ধারণা ভুল ছিল।”

” মাই গড! তুই আসলেই বস। কীভাবে জানলি?”

” সামনাসামনি দেখা হলে বলব।” শান টিস্যু পেপারে হাত মুছে মোবাইল হাতে নেয়। এগিয়ে যায় বাইরে রাখা গাড়ির দিকে। ইমরোজ বলে,

” ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিস?”

” হুম!”

” বাহ! তাহলে তো হয়েই গেল। তা কবে দিলওয়ালে দুলহানিয়া নিয়ে আসবে?” ইমরোজের হাস্যরস বিফলে গেল। শান রুক্ষ, কঠিন স্বরে জবাব দিল,

” কোনোদিন না।”

ইমরোজ ব্যগ্রস্বরে বললো
” মানে কী? বউকে এভাবে ছেড়ে দিবি তাই বলে?”

শান গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে মোবাইল সামনে রাখে। চোখ ছোট করে সামনে তাকিয়ে বলে,

” ছেড়ে দেব কে বলেছে? আমাকে কেন অপমান করলো তার জবাব দিতে হবে না তাকে? দোয়া কর যেন জবাব আমার পছন্দ হয়। আর,,?”

” আর কী?” ইমরোজ শানকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করে।

” তুই ভালো করেই জানিস আমার মুখে আর কথাটার পরে কী হয়? আল্লাহ হাফেজ। শীঘ্রই দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। ”

” শান! শান! শান কল কাটবি না। শান,,,,” শান চোয়াল ফুলিয়ে মোবাইল একবারে বন্ধ করে সামনে ফেলে রাখে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ছুটে যায় নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব-০৫
Writer Taniya Sheikh

শানের নির্ধারিত গন্তব্য তার নীড়। আপন না হোক! আপনের মতোই। এই যে বেঁচে আছি এখানে আপন বলতে সত্যি কী কিছু আছে? এক সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কিছুই আপন নয়৷ তবুও আমাদের আপন ভাবতে হয়। ভাবনাতেই যে বড়ো সুখ আর স্বস্তি থাকে। থাকে বাঁচার সূক্ষ্ম আশা। শান সদর দরজায় পা ফেলতেই একজন যুবক মেড এসে অবনত মস্তকে দাঁড়ায়। এ বাড়ির মেড অন্যান্য বাড়ির মেডদের মতো না। এদের বেশভূষা রাজকীয় মেডদের অনুরূপ কিছুটা৷ মেডটি বিনম্র স্বরে বললো,

” ছোট সাহেব, সাহেব আপনাকে ডেকেছেন।”

” বড় বাবা কোথায়?” গম্ভীরমুখে শুধায় শান

” নিজ রুমেই আছেন।”
শান সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে আসে। উপরে চারটে রুম। ডানদিকের প্রথমটা মঈন খানের, পরেরটা তার ছোট ভাইয়ের। বামপাশের প্রথম রুমটা মাহিব এবং পরেরটা মঈন খানের প্রাণাধিক প্রিয় ভাতিজি সামিরার। সামিরা পড়াশোনার কারণে বর্তমানে ইউএসে আছে। চারবছর ধরে ঐ রুমটা তাই খালি। শান বড় বাবার রুমের দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে অনুমতি দেওয়া হয় প্রবেশের। বিশ্রদ্ধ ভঙ্গিতে সালাম দিয়ে দাঁড়ায় মঈন খানের সামনে শান। ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে সিগার টানছিল মঈন খান। শানের উন্নত মুখখানি দেখে মুচকি হাসলেন তিনি। সিগার দু’আঙুলে ঠোঁট থেকে নামিয়ে ধোঁয়া ছাড়লেন। শানের দিকে তাকিয়ে মঈন খান বললেন,

” আমার সিংহ! আয় কাছে আয়।”

শান এগিয়ে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসল মঈন খানে পায়ের কাছে। মঈন খান সিগার অ্যাশট্রেতে রেখে শানের কাঁধে হাত রাখলেন। সগর্বে বললেন,

” আমি তোমাকে সিংহ বানিয়েছি মাই সান। সিংহ যেমন সদর্পে চলে, ফেরে ঠিক তেমনই চলা শিখিয়েছি তোমাকে। সবাই বলে আমি তোমাকে এতিম ভেবে তোমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছি। তোমার কী তাই মনে হয়?”

” জি না।”

মঈন খান অ্যাশট্রে থেকে সিগারটা উঠালেন। টেনে ধোঁয়া ছেড়ে বললেন,

” শুনে খুশি হলাম। শান তুমি আমার রক্ত সম্পর্কীয় নয়, আমার আত্মার সম্পর্কীয়। রক্তের আত্মীয় আমার অনেক আছে। আত্মার আত্মীয় কেবল তুমি। আমি জানি তুমিও তাই ভাবো। আমার এক ইশারায় যেমন ধ্বংস করতে পারো তেমনি ধ্বংস হতেও পারো। ঠিক বলেছি কী?”

” জি!” নিরুত্তাপ জবাব শানের

” আমার মাহিবকে সঠিক পথে নিয়ে আসো শান। ওর মা এবং আমি ওকে নিয়ে চিন্তায় থাকি। আমার জীবনটা আমি জেল আর খুনখারাবি করে নষ্ট করেছি। ওর জীবনটাও এমন হোক আমি চাই না। ওকে একমাত্র সঠিক পথ তুমিই দেখাতে পারো। আমি জানি ও তোমাকে অপছন্দ করে। তবুও তুমি ওর দায়িত্ব নেও। বয়সে বড় হলেই সে বড় নয় মাই সান। বুদ্ধি, কৌশলে দক্ষ হলেই সে বড়। তুমি বয়স দেখবে না। মাহিবকে আমি হারাতে চাই না সান। আমাদের ভালোবাসার একমাত্র চিহ্ন মাহিব। স্বভাবতই ওর প্রতি আমি দূর্বল। পুরো পৃথিবীর কাছে নিষ্ঠুর, কঠোর হতে পারলেও নিজ সন্তানের কাছে হতে পারছি না। যেভাবে পারো ওকে তোমার মতো করো। আমাকে চিন্তা মুক্ত করো।”

” আমি চেষ্টা করব বড় বাবা। নিজ জীবনের বিনিময়ে হলেও চেষ্টা করব।”

শান অবিচলিত জবাব দিল। শান জানে না এ চেষ্টা তার আদৌ সফল হবে কী না। পৃথিবীর সব মানুষকে পরিবর্তন করা যায় না। জোর করে কিংবা ভালোবাসে! কোনোভাবেই নয়। মাহিব কঠিন হৃদয়ের, নিষ্ঠুর মানসিকতার। তাকে সঠিক পথ, হেদায়েত কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং তার নিজ ইচ্ছা ব্যতীত সম্ভব নয়। তবুও শান বড় বাবাকে কথা দিল। এই মানুষটাকে সে সম্মান করে,ভালোবাসে। মানুষটার কোনো কষ্ট হোক শান চায় না। মঈন খান শানের মাথায় এক হাত রেখে বললেন,

” আমি জানি তুমি পারবে। অবশ্যই পারবে।”

শান মঈন খানের হাতটা মাথার উপর থেকে এনে মুঠোবন্দি করল। বলল,

” আপনার আশির্বাদ থাকলে অবশ্যই পারব আমি।”

মঈন খানের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। উঠে দাঁড়িয়ে জানালার পাশে গেলেন। বাইরে তাকিয়ে বললেন,

” মোবারক বলল, বউমার খোঁজ পেয়েছ নাকি?”

” পুরোপুরি নয় আংশিক। তার এলাকা খুঁজে পেয়েছি মাত্র। কাল পরশুর মধ্যে তাকেও পেয়ে যাব।” শান উঠে দাঁড়ায়। মঈন খান শানের দিকে ঘুরে সিগার টানে। নাক দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলল,

” মেয়েদের প্রতি বেশি কঠোর হইয়ো না মাই সান।নমনীয় হইয়ো। তাদের মন পেতে যা করা লাগে তাই করো। জোর করে সব পাওয়া গেলেও নারীর মন পাওয়া যায় না। মনে রেখো আমার কথাটা। দোয়া করি শীঘ্রই তাকে নিয়ে আসবে তুমি।”

শান এবার জবাব দেয় না। শানের নিরবতা মঈন খান লক্ষ্য করে মুচকি হাসেন। ছেলেটাকে তিনি সেই ছোট্ট বেলা থেকে চেনেন,জানেন৷ অন্য সবার মতোই প্রাণোচ্ছল নয় শান। হাস্যরস অথবা এমন ধরনের মনোভাব তেমন একটা পরিলক্ষিত হয় না তার মধ্যে। নিরবতা,গম্ভীরতা যেন সর্বক্ষণ বিরাজ করে। রুমে মঈন খানের স্ত্রী শায়লা খান ঢুকতেই শান সালাম দিল। শায়লা জবাব না দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বিছানার পাশে গিয়ে বসে। শান ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে রইল। সে অভ্যস্ত বড় মায়ের দূর্ব্যবহারে। মঈন খান স্ত্রীর এহেন আচরণে ব্যথিত হন। তিনি জানেন শান মনে মনে কষ্ট পেলেও কখনো টু শব্দ করবে না শায়লার বিরুদ্ধে। মঈন খান শানকে রুমে যেতে বললে শান বের হয়ে আসে। সোজা রুমে ঢুকে কাপড় ছেড়ে ওয়াশরুমের শাওয়ারের নিচে দাঁড়ায়। মন মস্তিষ্ক বার বারই পলাতক স্ত্রীর স্মরণে উত্তাল। শান তাকে স্ত্রী মেনেছিল। চেয়েছিল আপন করতে তবে কেন পালাল? সেকি শানকে চাইনা? হ্যাঁ সে চাইনা বলেই তো পালিয়েছে। চাইনা যখন তবে এতোগুলো মানুষের সামনে অপমানিত করার কী কারণ ছিল? এই কারন শান জানতে চাই। যেকোনো ভাবে সে জানবেই এর কারণ।

আজ ইমার খালাত ভাই বাশারের গায়ে হলুদ৷ গতকাল ইমার রাগ ভাঙাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল নুসরাতের। রাতে দু’বান্ধবী এক সাথেই ছিল। সকালেও দুজন রেডি হয়ে সোজা চলে আসে বড় খালার বাড়িতে৷ ইমাদের দু’বাড়ি পরেই ওর খালার বাড়ি। বড় ছেলের বিয়ে উপলক্ষে জমজমাট আয়োজন করেছেন বীণা এবং আসাদ দম্পতি। গেট পেরিয়ে ইমা,নুসরাত চলে আসে তিনতলায়৷ বীণা বোনঝিকে দেখে খুশিতে জরিয়ে ধরলেন৷ ইমাকে সবার চেয়ে বেশিই আদর করেন বীণা। কারনটা ইমা কিছুটা তার মায়ের ধাঁচের। তার মা নিহার বেগম ছিলেন চটপটে এবং মজার মানুষ। ইমার চেহারাতেও কিছুটা মায়ের ছাপ খুঁজে পায় বীণারা ক’ভাইবোন। ঠিক একারনেই ইমার সকল আহ্লাদ আবদার তাঁরা মেনে নেয়। ইমার বাহু ধরে আপাদমস্তক দেখে নেন বীণা। একটু পিছিয়ে ভ্রুকুটি করে ঝাঁঝ গলায় বলেন,

” হলুদ শাড়ি পড়োস নাই ক্যান?”

” শাড়ি আর ইমা? ও মাই গুডনেস! আন্টি আপনি ইমাকে চেনেন না? সি ইজ নট দ্যাট টাইপ।”

নুসরাতের ব্যঙ্গাত্মক কথাতে ইমা কঠিন নজরে তাকায়। নুসরাত নখ কামড়ে মৃদু হেঁসে বীণার দিকে তাকাতেই বীণা নুসরাতকে দেখল। হলুদ শাড়িতে দারুন লাগছে মেয়েটাকে বীণার। তার ছেলের বউ মোহনাও কম সুন্দরী নয়। এক বাপের এক মেয়ে সাথে অঢেল সম্পদের ওয়ারিশ। আজকাল সবার উপরে পুত্রবধূকে ভেবে মজা পায় বীণা। বীণা কিছুটা তাচ্ছিল্যে নুসরাতের দিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ইমাকে বলেন,

” তুই কী সত্যই শাড়ি পড়তি না?”

” আরে খালা হুদাই পার্ট নিতাছ ক্যান? জানোই তো শাড়ি টারি পড়ি না আমি। ওসব স্যুট করে না ইমার। ইমা তো এই কুর্তি,শার্ট আর জিন্সে মাস্ত থাকে। মাস্ত! মাস্ত!” দু’হাত মাথার পেছনে ভাঁজ করে পুরুষালি স্টাইলে দাঁড়াল ইমা। বীণা বিরক্তি ঝেড়ে বললো,

” তোরে নিয়া পারি না বাপু৷ ছেরি হইয়্যাও ছেরা সাইজ্জা কী মজা পাস কে জানে? আমার মায়ের কইলাম এই গুন আছিল না। এইটা তুই কইত্তে টুকাইছোস আল্লাহ মালুম।”

” খালা এক প্যাঁচাল শুনতে আর ভাল্লাগে না। নয়া কথা থাকলে কও নয়ত রাস্তা ছাড়ো। আমি এমনই। পছন্দ হইলে ওকে নয়ত ইটস ওকে।”

বীণা বুঝল কোনোভাবেই একে শাড়ি পড়ানো সম্ভব নয়। অগত্যা গলা নামিয়ে বললো,

” তুই পড়বিই না শাড়ি? আচ্ছা যা পড়িস না৷ অন্তত হলুদ শার্ট তো পড়। তোর ভাইয়ের হলুদ বইলা কথা। সোনা মা আমার। পড়বি না বল?”

” ওরে আল্লাহ! আচ্ছা যাও পড়ুমনে হলুদ শার্ট। ওহন সরো ভাইয়ের কাছে যামু।”

বীণা ইমার থুতনী ধরে আঙুলে চুমু খেয়ে বলে,

” আমার সোনা মা। যা বাশার ঘরেই আছে।”

ইমা আহ্লাদিত হয়ে বলে,

” ও খালা! তোমরা হুদাই টাইম নষ্ট করো আমার। কত্ত কাজ বাকি। রাতে ডিজে পার্টির ব্যবস্থা করতে হবে, বাশার ভাইয়ের ফ্রেন্ডসের থাকার ব্যবস্থা আরও কতো কী? খালি আজাইরা সময় নষ্ট করো আমার। নুসরাত জলদি আয়।” ইমা বকবক করতে করতে সামনের রুমে ঢুকে গেল। বীণা মাথা নাড়িয়ে মুচকি হেঁসে ব্যস্ত হলো বাকি কাজের তদারকিতে। খালার কথা রাখতে হলুদ কুর্তি সাথে হলুদ ওড়না গলায় ঝুলিয়ে পনিটেল করেছে চুল। বাশারকে হলুদ দেওয়া হচ্ছে। ইমার খরগোশ পার্টি নেচে গেয়ে অস্থির করে তুলেছে পরিবেশ। পড়নে সাদা কালো চেকের লুঙ্গি, সাদা সেন্টু গেঞ্জি গায়ে টুলের উপর বাবু মেরে হাতে, পায়ে, মুখে হলুদ মেখে বসে আছে বাশার। একটু পর পরই তার দৃষ্টি গিয়ে থামছে হলুদ শাড়ি পড়া হাসিমুখে নাচতে থাকা নুসরাতের দিকে। বুকের পাশে যন্ত্রণা হচ্ছে খুব৷ অব্যক্ত ভালোবাসারা যন্ত্রণায় ফালাফালা করছে হৃদয়। চোখের কোনে জল চিকচিক করছে নুসরাতকে সামনে দেখে৷ ইচ্ছা করছে ছুটে গিয়ে বলতে,” আমি তোমাকে ভালোবাসি নুসরাত। বিশ্বাস করো অনেক ভালোবাসি। সংকোচে এতোটা কাল বলতে পারি নি। এখন যখন বলতে চাইলাম আমার পরিবার বাঁধা দিল। বললো হয় তুমি নয় তারা। আমি কী করতাম বলো? তুমি কী কভু বুঝবে আমাকে নুসরাত? না থাক! এখন বুঝতে গেলেই যতো সমস্যা শুরু হবে।” বাশার মুখ কালো করে বসে রইল। তার কাছে এই আনন্দ আনন্দ নয় মৃত্যু যন্ত্রণা। এর চেয়ে যে মৃত্যুও ভালো ছিল। তবে কী মরে যাওয়া উচিত তার? বেঁচে থেকেই বা করবে কী? ভালোবাসা ছাড়া জীবন যে অর্থহীন এখন। এভাবে গুমরে গুমরে মরার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়ায় ভালো। স্থির দৃষ্টিতে নুসরাতের হাস্যোজ্জ্বল মুখখানি দেখছে বাশার। নুসরাত সাজ্জাদ, ইরাসহ বাকিদের সাথে রং মাখামাখি খেলায় মেতেছিল। পাশের সাউন্ড বক্সে হাই ভলিউমে বাজা হিন্দি গানের তালে মাঝে মাঝে হাত তুলে নাচাচ্ছে সে। ইমাকে অনেক্ষণ ধরে দেখতে না পেয়ে দৃষ্টি এদিক সেদিক ঘুরাতেই চোখ পড়ল বাশারের চোখে৷ নুসরাত শুকনো ঢোক গিললো সেদিকে চেয়ে৷ এমন করে বাশার ভাই কেন দেখছে তাকে? আজ বাদে কাল তার বিয়ে তবুও কেন নুসরাতকে এমন করে দেখে? কীসের অধিকারে দেখে? ভীতু,কাপুরুষ একটা! ভেবেছিল কী? নুসরাত গলে ঢলে এসে গলা জড়িয়ে কেঁদে তার পায়ে লুটাবে৷ বলবে আমাকে ভালোবাসুন? এতো ফ্যালনা নয় নুসরাত। সে যদি পুরুষ হয়ে প্রকাশ না করে, অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে তবে তাই করুক। নুসরাতের তাতে কোনো কষ্ট হবে না৷ সত্যি কী কষ্ট হবে না? এই তো হচ্ছে। বুক জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে তার নজরের বিষে৷ নুসরাত চোখ নামিয়ে ছাঁদ থেকে সোজা নিচে নেমে আসে। নিচে নামতেই মুখোমুখি হয় বাশারের মা বীণার। বীণা খেয়াল করতেই নুসরাত জলভরা চোখ নামিয়ে পাশ কেটেয়ে চলে গেল বাড়ির বাইরে। ভ্রু কুঁচকে সেদিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ বীণা। তার কেন যেন সন্দেহ হয় এই নুসরাতই সেই মেয়ে। পরক্ষনেই মনে হয় না তার ভাবনা ভুল হয়ত বা। বাশারের প্রেমে পড়ার কথাটা শোনার পর থেকেই যাকে তাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন তিনি। কিন্তু কাঁদছিল কেন মেয়েটা? স্বামীর হাঁক ডাকে বীণার চিন্তার ঘোর কাটে। কাজের ব্যস্ততায় ভুলে যান এসব কথা।

সন্ধ্যার পর বাড়ির সামনের খালি জায়গাতে ডিজে পার্টির আয়োজন হয়েছে ইমার উদ্যোগে। এখানকার সচ্ছল পরিবারের ট্রেডিশন এটা। গায়ে হলুদ,বিয়ে এবং বউভাত এই তিনদিন চলবে ডিজে পার্টি। কিছু উঠতি গায়ক আর নৃত্য শিল্পীকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে বউভাতের দিন। ফ্যামিলির এসব ওকেশনের এই টাইপ আউট অনুষ্ঠানের দায় দায়িত্ব বরাবরই ইমার হাতে থাকে৷ আজ যেহেতু গায়ে হলুদের রাত সুতরাং আজ বাইরের কেউ তেমন আসবে না। বেশিরভাগই আত্মীয় স্বজন থাকবে। বউ ভাতের দিন পুরো এলাকার মানুষ জড়ো হয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে। স্টেজে এই মুহূর্তে গান চলছে। গান গাচ্ছে ইরা। গানের গলা ভালো মেয়েটার।

ইমার পড়নে বরাবরের মতোই জিন্স, কুর্তি এবং গলায় ঝুলানো ওড়না। ইরা সহ বাকিরা আজ ইমাকে জোর করে ঠোঁটে পিংক কালার লিপিস্টিক দিয়ে দিয়েছে। খুবই লাইট সে কালার। ইমা আড়ালে এসে মুছে কালারটা সামান্য করেছে। এসব মেয়েলী জিনিসে খুব বেশি আকর্ষণ ইমার কোনোদিন ছিল না এখনও নেই। বাশারের বন্ধুদের আসার কথা। বউভাত পর্যন্ত তাদের থাকার ব্যবস্থা এ’বাড়িতেই করা হয়েছে। তিনচার জন এসেছে ইতোমধ্যে। বাকি দু’জন বাসার পথ চিনতে পারছে না বিধায় ইমাকে কল করছে একটু পর পরই। ইমা মোবাইলে বাশারের ফ্রেন্ডকে এ’টুকু পথ কী করে আসবে বলে দিচ্ছিল। কথা বলতে বলতে স্টেজ থেকে একটু দূরে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ায় ইমা। কথা শেষ করে ঘুরতেই চমকে ওঠে সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে। বয়স সম্ভবত ইমার বয়সই হবে। মধ্যম গড়নের, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, একপেশে করে চুল আঁচড়ানো ছেলেটার। ভদ্র তবে কিছুটা বোকা বোকা ভাব আছে চেহারায়। ইমা বুকে হাত রেখে জোরে শ্বাস ছেড়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

” কী সমস্যা? ”

” আপু আপনার নাম কী?”

ইমা আরেকবার ছেলেটার আপাদমস্তক দেখে বললো,

” নাম জেনে কাম কী?”

” না মানে এমনি।”

” না মানে আমিও এমনি নিজের নাম কাওকে বলি না। ফুট!” তুড়ি বাজিয়ে রাস্তার দিকে আঙ্গুল ঘুরাতেই ছেলেটা হাসল। বললো,

” আপু রাগ করেছেন? রাগ করবেন না। আসলে,,,!”

” মোবারক! ” পেছনে ভেসে আসা শানের ভারী গলার স্বরে মোবারক চুপ হয়ে যায়। ইমা মাথা কাত করে পেছনে তাকাতেই দেখল আটাশোর্ধ্ব শানকে। দীর্ঘদেহী, উন্নত নাসিক্য, ছোট টানা টানা চোখ, মুখ ভর্তি মানানসই স্টাইলের দাড়ি মোচ। কালো লেদারের ব্লেজার ফর্সা গায়ের উপর বেশ মানিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে যখন আঙুল চুলে চালাচ্ছে তন্ময় হওয়ার উপক্রম ইমার। এতোটা পর্যবেক্ষণ করে আজকের আগে কাওকে ইমা দেখেনি। দেখার মতো ছিলও না হয়তো তারা।
জানে না কেউ কখন লাগে কারে ভালো।
কোন ক্ষণে, কী ভেবে মন দিয়েছিল।
ইমা অবশ্য মন দেয় নি। কাছাকাছি আসতেই ইমা চোখ নামিয়ে নেয়। হঠাৎ করেই বিব্রত বোধ করে কেন যেন। হয়ত এভাবে তাকিয়ে ছিল তাই। শান মোবারককে ধমকের সুরে বললো,

” তোকে যাকে তাকে প্রশ্ন করতে বলেছি? গাধা কোথাকার।”

শানের রুক্ষ, গম্ভীর গলার স্বরে ইমা মুখ কুঁচকে বলে,

” সমস্যা কী আপনাদের? ”

” হু আর ইউ?” ইমার দিকে ফিরে অবজ্ঞাচ্ছলে তাকায় শান।

” হালায় দেখতে সুন্দর মাগার কাইষ্টা। মেয়েদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় শেখে নাই। এতোসুন্দর একটা মেয়ে সামনে দাঁড়ানো আর তিনি বেরসিকের মতো বলছেন, হু আর ইউ। ” ইমা কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বলে,

” আমাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে আবার আমাকেই বলছেন হু আর ইউ। বাহ! উগান্ডা ফেরত বুঝি?”

” জাস্ট শাট আপ এন্ড লিভ।” শান মোবারকের দিকে ফিরতেই ইমা রেগে বলে,

” আবে হালায় কয় কী? আমি লিভ হমু ক্যালা? ইউ লিভ, ইউ সেটাপ।” মুখের উপর উড়ে আসা চুলগুলোকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় ইমা।

শান চোয়াল ফুলিয়ে ফের তাকায় ইমার দিকে। বলে,
” হোয়াট ডিড ইউ সে? হালা! ইউ মিন শালা রাইট?”

” আবে হ! হালা, শালা একই।” ইমা কোমরে হাত রেখে নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দেয়।

শান ইমার এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে বিরক্ত হয়। তবুও শান্ত স্বরেই বলে,
” বিহেভ ইওরসেল্ফ।”

” আপনার জন্ম কী আমেরিকায়?”

” হোয়াট!”

” তো কথায় কথায় ইংলিশে ফটরফটর করেন ক্যান? বাংলা বলতে শরম করে?”

” লিসেন,,!” শান তর্জনী তুলতেই ইমা ধমকের সুরে বলে,

” আবার ইংলিশ বলে?”

” মোবারক!” শান দাঁত চেপে ডাকতেই মোবারক চাপা গলায় বলে,

” স্যার রাগ কন্ট্রোল করেন প্লিজ। সবাই তো এক হবে এমন না, তাই না স্যার। ম্যাডামকে খুঁজে পেতে গেলে এইটুকু সহ্য করতেই হবে আপনাকে।”

” আই কান্ট মোবারক। আই কান্ট।” শান ইমার দিকে অগ্নদৃষ্টিতে তাকিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে মেয়েটা৷ ইমা শানের দিকে ফিরে বাকা হেঁসে মোবারককে বলে,

” মালডাই চেতে ক্যালা? হেই কী ভাবছে ইমা তারে ভয় পাইছে? হা!”

মোবারক মৃদু হেঁসে বলে,

” সে মাল না আপু। তার নাম শান নিহান খান।”

” শাহরুখ খান,সালমান খান শুনছি মাগার এই খান কবে আইলো? আচ্ছা যাউক গা! হেই কবে আইল আর গেল তাতে আমার কী? এসব ফাউ প্যাঁচাল শোনার টাইম ইমার নাই।” মোবারককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শানের দিকে ভেংচি কেটে ঘুরে দাঁড়ায় ইমা। মোবারক বোকার মতো চেয়ে রয় ইমার যাওয়ার পথে । তার কেন যেন মনে হয় এই মেয়ে ঘুর্ণিঝড়, টর্নেডোর সমার্থক রূপ।

স্টেজে সাজ্জাদ হানি সিংএর গাওয়া লুকা লুকা গানে উুড়াধুরা নাচছে। নাচটা জুম্বা,হিপহপ মিশানো। গানের প্রথম লাইন
শোনামাত্রই চিৎকার করে উহু বলে ইমা৷ ইমার খরগোশ পার্টির প্রতিটি সদস্য উঠে আসে স্টেজে। ইমা ওদের উৎসাহ দিয়ে হাত নাড়িয়ে উচু গলায় ঠোঁট মেলায়,,

ম্যা হু পিতা,শুনলো সেনোরিটা
আপনি মারজিসে, জিন্দেগি জিতা।

অদূরে দাঁড়ানো শান ইমাকে দেখছে। এমন মেয়ে সে এর আগে কোনোদিন দেখেনি। শানের দেখা চরম লেভেলের বেয়াদব এবং অসভ্য এই মেয়ে। মোবারক এদিক ওদিক তাকিয়ে অবশেষে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলাকে দেখে এগিয়ে যায়। সালাম দিয়ে বলে,

” আন্টি এই বাড়িতে ইসরাত জাহান নামে কেউ থাকে?”

মহিলা কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

” ইসরাত জাহান নামে কেউ তো থাকে না। তবে নুসরাত নামের এক মেয়ে এ বাড়ির মেয়ের বান্ধবী।”

মোবারক কী যেন ভেবে বলল,

” একটু দেখিয়ে দেবেন তাকে? না মানে আমার প্রয়োজন ছিল।”

” হ্যাঁ! হ্যাঁ! ঐ যে হলুদ শাড়ি পড়া ফর্সা মেয়েটা হাসছে ঐটায়। আরে! ঐ যে মেয়েটা গলা ফাটাচ্ছে তার পাশে দাঁড়ানো, ঐটাই নুসরাত।”

মহিলাকে ধন্যবাদ দেয় মোবারক। ভালোকরে দেখে নেয় একটু আগে কথা বলা মেয়েটার পাশে দাঁড়ানো নুসরাতকে। মোবারকের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। দ্রুত পায়ে ছুটে আসে শানের দিকে। শান একরাশ বিরক্ত মুখে মোবাইলে স্ক্রল করছিল। মোবারক সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বললো,

” স্যার ম্যাডামকে পেয়েছি।”

শান চকিতে তাকায় মোবারকের দিকে। মোবাইল পকেটে পুরে বলে,

” কোথায় সে?”

” ঐ তো?”

মোবারকের আঙুল বরাবর তাকাতেই ভ্রুকুটি করে বলে,

” হোয়াট!”

” স্যার ওটা নয়। তার পাশের জন।ঐ তো হলুদ শাড়ি পড়া।” শান সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে নুসরাতকে দেখছে। পাশে দাঁড়ানো ইমাকে উপেক্ষা করতে চেয়েও পারল না। ইমার দিকে তাকানো মাত্রই মেজাজ চিরচিরে হয়ে গেল ফের। শান নুসরাতের হাসিমাখা মুখ দেখে ভাবছে, এই কী সেই! দু’কদম এগিয়ে থেমে গেল শান। মোবারক বললো,

” থামলেন কেন স্যার?”

” মোবারক আমি জোর করতে চাইনা। আমি চাই সে আগে আমাকে জানুক,বুঝুক। তুমি যে করেই পারো কথা বলার ব্যবস্থা করো আমাদের।”

” বুঝলাম না স্যার!”

” তাকে বলবে তাকে আমি প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই তাকে আমি।”

” বুঝেছি স্যার!” মোবারক মুচকি হাসল। শান আরেকবার নুসরাতকে দেখে চলে গেল গাড়ির দিকে। স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল মোবারক। নুসরাতের হাসির আড়ালে বুকফাটা আর্তনাদ হচ্ছে। যার খবর উপস্থিত কারো জানা নেই। চোখ দু’টো বার বারই খুঁজছে বাশারকে। হঠাৎ মুখ তুলতেই সে দেখল ছাঁদের এককোনে দাঁড়িয়ে আছে বাশার। নুসরাত সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে গেল সেদিক। ইমা ততক্ষনে উঠে গেছে স্টেজে। সাজ্জাদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে আর চিৎকার করে ধেড়ে গলায় গাচ্ছে লুকা, লুকা, লুকা,,,,

চলবে,,,
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here