#তুমি_আমার_অধিকার(পর্ব:৫)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
রোহান রুহিকে নিয়ে একটা ছোট্ট নৌকায় ওঠে যেটা পুরোটাই ফুল দিয়ে সাজানো।
রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,রোহান ভাই কি তাহলে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য উইশ করে নি। উফফ কি যে খুশি লাগছে।
কি রে এতোক্ষণ তো খুব বকবক করছিলি এখন চুপ কেনো,,
তুই আমাকে রাতে উইশ করিস নি কেনো ,,
সে তো ব্যাস্ত ছিলাম জন্য,
কেনো ব্যস্ত ছিলি, সাদিয়া আপুর সাথে কথা বলার জন্য,
হোয়াট,,,,
আমি জানি তুই অনেক রাত পর্যন্ত সাদিয়া আপুর সাথে কথা বলেছিস। আমি ফোন দিয়েছিলাম তোকে।
আরে আমি কখন সাদিয়ার সাথে কথা বললাম, আমি আজকে তোর জন্মদিনে উপস্থিত থাকবো বলেই তো সারারাত জেগে ফোন এ সব কাজ শেষ করলাম যাতে আজকের দিনটা তোর সাথে কাটাতে পারি। আর যাই হোক শশুরের মেয়েকে তো জন্মদিনের দিন মন খারাপ করা দেখতে পারি না।
কে তোর শশুরের মেয়ে কে,
আশপাশে কি আর কেউ আছে,
রুহি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো, তার মানে কি রোহান ভাই আমাকে ভালোবাসে ইয়েএএ
নদীর মাঝখানে একটা চর ভেষে উঠেছে,রিপা রা আগেই পৌঁছে গেছে রুহি আর রোহান ও চলে আসলো ওরা আসতেই রিপা এসে বললো Congratulations 🎉 রুহি ভাবি।
সবার সামনে ভাবি ডাক শুনে লজ্জায় নুয়ে পড়ছে রুহি। রোহান একটু হেঁসে সামনে এগিয়ে গেলো।
এই রিপা তুই সবার সামনে আমাকে ভাবি বললি কেনো রে,(রুহি)
সবাই আর কোথায়, তৌকির তো এখানে নেই শুধু নয়ন ভাইয়া আর সাদিয়া আপু। আর এখানে সবাই জানে তুই রোহানদাকে ভালোবাসিস(রিপা)
তুই সবাইকে বলে দিয়েছিস, (রুহি)
না রে রুহি, কেউ বলে দেয় নি আমাদের,রোহান ভাই তো নিজেও তোকে ভালোবাসে(সাদিয়া)
কিহ, সত্যি রোহান ভাই আমাকে ভালোবাসে আর সেটা এদের বলেছে। ইশ আমি আজ খুব খুশি। আমার সবথেকে বড় চাওয়া পূর্ন হয়ে গেছে।
হটাৎ রুহি নিজের মাথার ওপর গোলাপের পাপড়ি ঝড়তে দেখলো। ওপরের দিকে তাকাতেই রোহান সবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে একগুচ্ছ গোলাপ দিয়ে রুহিকে প্রপজ করলো,,
আমার একাকীত্বের সঙ্গি হবি রুহি, যখন আমার পাশে আমি কাউকে পাবো না ঠিক তখন কি তুই আমার পাশে থাকবি, যখন দায়িত্বের বেড়াজালে বন্দী হয়ে একবেলা খাওয়ার কথা ভুলে যাবো, সে সময় তুই কি আমাকে খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিবি। সারাজীবন আমার পাশে থাকবি তো রুহি,,
চারিদিকটা কেমন যেনো অপূর্ব লাগছে, মনে হচ্ছে রুহির খুশিতে সবাই খুশি। রুহি রোহানের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে বলে উঠলো, আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন তোর পাশে থাকবো, যখন তোর পাশে কেউ থাকবে না তখন আমি দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে তোর পাশে নিয়ে আসবো। যখন একবেলা খাবার খেতে ভুলে যাবি তখন আমি তোর মুখে খাবার তুলে দেবো।
রোহান দাঁড়িয়ে রুহির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বললো , হলো তো আমার মহারানির স্বপ্ন পুরন।
রুহি একটু ভেবে হেঁসে উঠলো, আসলে রুহি একটা ডায়েরিতে লিখেছিলো চারপাশে পানি থাকবে মাঝখানে থাকবো সে আর আমি, একগুচ্ছ গোলাপ দিয়ে সে আমাকে তার করে চাইবে আমি হাসলে যেনো পানিগুলোও ঝলমল করে উঠবে। আর ছোট্ট এক ডিঙ্গি নৌকায় বসে আমরা পানিতে সুর্য ডোবা দেখবো। হয়তো এবার রোহান সেটাই করবে।
রোহান ওদেরকে আবারো অন্য নৌকায় উঠিয়ে দিয়ে রুহিকে নিয়ে ছোট্ট নৌকাটাতে উঠলো।আর রুহির এ ইচ্ছেটাও পুরন হয়ে গেলো।দু হাত মেলে দিয়ে সন্ধ্যার সৌন্দর্য উপভোগ করছে ও। হটাৎ বলে উঠলো,
রোহান ভাই,
হুমমমমম
সাদিয়া আপু তোকে ভালোবাসতো,,
উহুমম, সাদিয়ার ওটা ভালোবাসা ছিলো না। ভালো লাগা ছিলো। আর সেটা ও বুঝে গেছে।তুই আমাকে ভালোবাসিস সেটা ও বুঝতো কিন্তু আমার মনে কি আছে সেটা জানতো না। জানার পর সরে গিয়েছে।
ওও
,,,
কয়েকদিন পরের কথা, তৌকিরের স্কুল থেকে পিকনিকে যাবে,,
সকালে উঠে তৌকির রুহির রুমে এসে রুহিকে ডাকছে,
আপু এ আপু ,,
কি রে সকাল সকাল কি হলো তোর,
আজকে আমার স্কুল থেকে পিকনিকে যাবো একটু ড্রেস চুজ করে দিবি( আসলে আমার ছোটো ভাই এমন , কোথাও গেলে আমাকে বলবে আপু বল না কোনটা পরবো)
হুমমম চল দিচ্ছি ,, মা কত টাকা দিয়েছেরে তোকে।
আমাকে তো পনেরোশো দিয়েছিলো, পাঁচশো পিকনিকের জন্য দিয়েছি আর আমার কাছে একহাজার আছে,,
আমার জন্য কি নিয়ে আসবি,,
তোর জন্য গিফ্ট আছে, কিন্তু এখন বলবো না
রুহি তৌকিরকে নেভিব্লু টি শার্ট এর সাথে ম্যাচিং করে কোর্ট আর কালো প্যান্ট দেয়। তারপর জুতা মোজা বের করে দিয়ে নিচে যায়।
একটু পর তৌকির রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে, জেসমিন বেগম বলে ওঠে মাশাআল্লাহ আমার বাবাকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।
তৌকির বলে, লাগবেই তো মা সব যে আপুর পছন্দ করা ড্রেস
রুহি তৌকিরের কথা শুনে বলে আমার ভাই যে হিরোর মতো মা সব ড্রেস এ ওকে মানায়।
সাহিদা বেগম বলে ওঠে আমাদের তৌকিরটা যে এতো তারাতাড়ি বড় হবে ভাবি নি। এই তো সেদিনে আমার কোলে পটি করে দিলো।
সাহিদা বেগমের কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে আর তৌকির লজ্জা পেয়ে যায়।
এর মাঝে রুহি আর তৌকির কয়েকটা সেলফি উঠে নেয় রিপাও এসে ওদের সাথে যুক্ত হয়।
আসলে তৌকির সবার ছোট হওয়ায় সবাই ওকে একটু বেশিই আদর করে। তবে সবার থেকে বেশি রুহি ওকে আদর করে আর তৌকিরো বোন বলতে পাগল।
তৌকির বাড়ি থেকে বের হতে যাবে এমন সময় রুহি বলে ওঠে,
তৌকির তোকে কি পিকনিকে যেতেই হবে
রুহির কথা শুনে তৌকির বলে, আপু এসব কি বলছিস আমরা বন্ধুরা মিলে কত প্লান করেছি এই পিকনিক নিয়ে।
মেয়ের কথা শুনে জেসমিন বেগম এগিয়ে এসে বলে, কি হয়েছে মা হঠাৎ এ কথা বললি ,
না মা আমি তো তৌকিরের রিয়াকশন দেখার জন্য এমনি বললাম।
ওও তাই বল,, তৌকিরকে বিদায় দিয়ে সবাই মিলে নাস্তা করতে বসে। রুহির কেনো জানিনা ভালো লাগছে না,ও নাস্তা না খেয়েই ওপরে চলে যায়।
রোহানের রুমের পাশে গিয়ে দেখে রোহান এখনো ঘুমাচ্ছে, ঘুমন্ত মুখটা দেখে কতটা ক্লান্ত লাগছে যেনো। সারারাত কি রোহান ভাই ঘুমায় নি নাকি এখনো উঠছে না কেনো।
রুহি নিজের ঘরে গিয়ে পরতে বসে, কিন্তু পরাতেও মন বসছে না আজকের এই সময়টা কেনো জানি না খুব খারাপ লাগছে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো, রুহি নিজের মায়ের কাছেই বসে ছিলো হটাৎ রোহান হতদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলো,
রোহান বাবা কোথায় যাচ্ছিস খেয়ে যা(জেসমিন বেগম)
রোহান কিছু না বলেই চলে গেলো।
প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর রুহি বাড়ির সামনে ভীড় দেখতে পেলো। বুঝলো না কি হয়েছে তাই দেখার জন্য নিচে নামলো আর তখনি রোহান তৌকিরকে কোল থেকে নামিয়ে মাটিতে রাখলো,,,
হ্যা তৌকির এ*ক্সি*ডে*ন্ট করেছে আর সেই খবর পেয়েই রোহান গিয়েছিলো। তৌকিরের রক্তাক্ত মৃ*ত*দেহ দেখে রুহি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে, এই একটু আগেই তো ভাই আমার পাশে ছিলো। এটা কিছুতেই হতে পারে না,
রোহান এসে রুহিকে ধরে বলে,রুহি সামলা নিজেকে,
রোহান ভাই তৌকির ঠিক আছে তো বল, ওকে উঠতে বল রোহান ভাই, আমি ওকে দেখতে পাচ্ছি না এভাবে।
আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না রুহি,মাথা ধরে পরে গেলো রোহানের ওপর।
রোহান জরিয়ে নিলো রুহিকে।
আসলে বাবা মায়ের পরে যদি কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে তাহলে সেটা ভাই/বোন। হাজারো ঝগরা হলেও ভাই বোনের ভালোবাসার তুলনা হয় না। একজন বোনের পাশে কেউ না থাকলেও ভাই বলবে বোন চিন্তা করিস না আমি আছি।
বাড়িতে কান্নার রোল পরে গেলো। রুহির বাবা,মাকে সাহেদা আর রাসেদ চৌধুরী বুঝিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আশেপাশের অনেকেই এসেছে।
সকাল থেকে হাসিখুশি বাড়িটা যেনো এক নিমিষেই অন্ধকার আর দুঃখে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।
,,
এর মাঝে কেটে গেছে আরো অনেকগুলো দিন, রুহির পরীক্ষা শেষ হয়েছে রেজাল্ট বেরিয়েছে এখন রুহি আর রিপা কলেজে ভর্তি হবে। তৌকির চলে যাওয়ার পর রুহি একদম ভেঙে পরে ছিলো কিন্তু তবুও সবার কথাতে শুধু পরীক্ষাটা দিয়েছে।
রুহি এখন আর আগের মতো দুস্টুমি করে না। সবসময় একা একা থাকে। রুহির মা আগে বলতো যে, রুহি কেনো এতো দুস্টুমি করিস,কেনো চুপচাপ থাকতে পারিস না,, কিন্তু এখন উনি নিজেই বলে প্লিজ রুহি মা আগের মতো হয়ে যা। তোকে এই অবস্থায় দেখতে একদম ভালো লাগে না। রুহি কারো কথা শোনে না।
তবে মাঝে মাঝে রুহির প্রচুর মাথা ব্যথা করে মনে হয় আর বুঝি বাঁচবে না, ইদানিং ব্যাথাটা বেশি হয়েছে। ডাক্তারের কাছে গেছিলো রোহানের সাথে কিন্তু কি হয়েছে রোহান কিছুই বলে না। রুহির মা শুধু মুখ লুকিয়ে কাঁদে।
কেটে যায় আরো কিছুদিন,,
রুহি এখন খেতে পারে না, ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না, চোঁখের নিচে কালি পড়ে গেছে। দিন দিন কেনো এমন হচ্ছে কেউ বলে না ওকে। তিনবেলা নিয়ম করে ঔসধ খেতে দেয় শুধু।যতো দিন যাচ্ছে শরীর ভালো হওয়ার বদলে আরো খারাপ হচ্ছে।
একদিন বিকেলে সবাইকে বসার ঘরে ডেকে আনে রোহান,,,,
চলবে,,
আসলে ভালো খারাপ, হাঁসি, কান্না, জন্ম মৃত্যু সব মিলিয়েই জীবন। গল্পের থিমটা সেসব নিয়েই সাজানো। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌