তুমি আমার অধিকার পর্ব -০৮ ও শেষ

#তুমি_আমার_অধিকার(পর্ব:৮)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম

,,
রুহি আর রোহান কে আসতে দেখে সাহেদা বেগম বলে ওঠে ওখানেই দাড়া রোহান।

মায়ের কথায় রোহান কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।

তুই আমাদের এই চিনলি রোহান, তোর টাকার প্রোয়োজন ছিলো তুই আমাদেরকে বলতে পারতিস। রুহির অপারেশনের টাকা লাগবে শুনলে কি আমরা টাকা দিতাম না নাকি। জানি ছোটো(তৌকির) চলে যাওয়ার পর থেকে রুহির বাবার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না কিন্তু আমাদের কাছে টাকা ছিলো সেটা তুই খুব ভালো করেই জানতি।তবুও কেনো নিজের বাইক বিক্রির কথা মাথায় আনলি।

রোহান কি বলবে বুঝতে পারছে না, আসোলেই তো সে ভুল করেছে। বাবা মা সবাই তাকে আর রুহিকে কতোটা ভালোবাসে আর সে‌ শুধু শুধু ভুল ভেবেছিলো।

সাহেদা বেগম এবার রুহির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, রুহি মা তুই তো‌ ওকে নিষেধ করতে পারতিস। যাই হোক সেসব বাদ, তুই ঠিক আছিস এটাই অনেক।

রুহি এসেছে শুনে জেসমিন বেগম দৌড়ে এসে মেয়েকে জরিয়ে ধরলেন,আমার রুহি ঠিক আছে,আমার সোনা মা আবার আগের মতো দুষ্টুমি করবে, আবার সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াবে,, রুহির বাবা দেখো আমাদের রুহি একদম ভালো হয়ে গেছে।

চারিদিকে এতো কিছু হচ্ছে অথচ রুহির মুখে কোনো কথা নেই। ও যেনো এসব নতুন কিছু দেখছে। কিন্তু হঠাৎ জেসমিন বেগমের কান্না দেখে রুহি ঘামতে শুরু করে, অস্থির লাগতে থাকে সবকিছু,,

রোহান রুহির দিকে তাকিয়ে দেখে রুহি কেমন যেনো করছে, তাই আর কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে রুহিকে ওপরে নিয়ে যায়।

কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না রোহান এমন কেনো করলো, আর রুহিই বা কারো সাথে কথা কেনো বললো না।

,,,
বিকেলে,, রোহান‌সহ বাকিরা বসার ঘরে বসে আছে। সবার চোখে পানি, ওরা এটা কিছুতেই মানতে পারছে না যে রুহির সৃতি চলে গেছে,,, কারোর কথাই মনে নেই ওর।

রুহি কি আমাকে আর চিনতে পারবে না রোহান, আমি যে ওর মা সেটা কি ও বুঝতে পারবে না। আমার মেয়েটা কতোদিন আমার কাছে বায়না করে না, আমি আর নিতে‌ পারছি না এসব।(জেসমিন)

নিজেকে সামলা জেসু, তুই এভাবে ভেঙে পরলে চলবে না,,তখন দেখলি না তোর কান্না দেখে মেয়েটা কেমন অস্থির হয়ে পড়েছিলো, তোকে সবসময় হাসিখুশি থাকতে হবে।(সাহেদা)

মা একদম ঠিক বলেছে চাচি, শুধু তুমি না আমাদের সবাইকে হাঁসি খুশি থেকে রুহিকে সব পুরনো সৃতি মনে করাতে হবে। আমার বিশ্বাস ওর সব মনে পরবে। ও চেষ্টা করলে সব পারবে।ও তো প্রথমদিন আমার সাথে কথা বলেছিলো,,,এই কথাটা মনে হতেই রোহানের মনে পরলো আচ্ছা প্রথমদিন তো আমাকে‌ চিনতে না পেরে কথা বলছিলো,কারন ওর মনে হয়েছিলো আমি ওকে বিরক্ত করছি,, তার মানে ওর সামনে এমন কিছু করতে হবে যাতে ও খুব বিরক্ত হয়,,

পরেরদিন সকালে,,
রোহান রুহির ঘরে এসে দেখে রুহি বিছানার মাঝখানে বসে একটা কাগজ বিভিন্ন ভাবে ভাঁজ করছে, রুহির দেখাদেখি রোহান ও আর একটা কাগজ নিয়ে রুহির মতোই করছে, তারপর রুহি একবার বেলকোনিতে যাচ্ছে তো একবার টেবিলে বসছে, কখনো মেঝেতে শুয়ে বিছানায় পা দিচ্ছে আবার কখনো বালিশ ছুড়ে ফেলছে, রুহির সাথে সাথে রোহান ও ঠিক সেম কাজটাই করছে কিন্তু রুহি সেসব কিচ্ছু দেখছে না। ও নিজের মতো সব করে যাচ্ছে।‌ রোহান হাঁপিয়ে উঠেছে রুহির কান্ডে। অথচ রুহির সেদিকে কোনো খেয়ালি নেই।

নাহ্ এসব করে কিছুই হবে না,, অন্য উপায় বের করতে হবে,
রুহিকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে, ওর তো খুব ভালো লাগতো ঘুরতে। তাহলে এখন‌ও নিশ্চই ভালো লাগবে,,
যেই ভাবা সেই কাজ, রোহান রুহিকে নিয়ে গাইবান্ধার সমস্ত জায়গা ঘুরবে, প্রথমে রিকশা নিয়ে এটি আই, তারপর এস কে এস, গাইবান্ধা পৌর পার্ক সমস্ত জায়গা ঘোরা শেষে যখন সন্ধার সময় বাড়ি ফিরছিলো তখন হঠাৎ রুহি বলে ওঠে শাপলা।
রুহির কথা শুনে রোহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে রাস্তার পাশেই একটা পুকুরে অনেকগুলো শাপলা ফুটে আছে। রুহি এখনো ঐ ফুলগুলোর দিকেই তাকিয়ে আছে দেখে রোহান‌ শাপলা তুলতে যায় কিন্তু হুট করে পা পিছলে একদম পুকুরে পরে যায় আর রুহি রোহান ভাইয়া বলে চিৎকার দেয়।

রুহির মুখ থেকে ডাক শুনে রোহান তারাতাড়ি উঠে আসে আর তখনি রুহি রোহানকে জরিয়ে ধরে। সেদিনের মত ঐটুকুই,, তারপর আরো বেশ কিছুদিন কেটে যায় রুহির কিছুই মনে পরে না।

একদিন দুপুরবেলা রোহান ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু ওর মনে হচ্ছে ওকে কেউ জরিয়ে ধরে আছে, ও আসতে আসতে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রুহি ওর গলা জরিয়ে শুয়ে আছে। রোহান যেনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে, রুহির কি সব মনে পরেছে। কিন্তু রুহি চোখ মেলে তাকিয়ে যখন দেখলো সে রোহানের গলা জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে তখন ও‌ এক ঝাটকায় দূরে সরে গেলো। কিন্তু রোহান আবারো‌ রুহিকে কাছে এনে, ওদের পুরনো সব ছবিগুলো দেখাতে লাগলো। রুহি খুব মনোযোগ দিয়ে একটার পর একটা ছবি দেখতে থাকে।

রোহান ফোনটা রুহির কাছে দিয়ে ওয়াশরুমে যায় কিন্তু ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে রুহি ঘরে নেই।‌ আশেপাশে কোনো রুমেই নেই। সবাই খুঁজতে শুরু করে রুহিকে। রোহান তো অস্থির হয়ে পড়েছে,, হটাৎ দেখে রুহি তৌকিরের কবরের পাশে গিয়ে কান্না করছে রোহান দৌড়ে গিয়ে রুহিকে জরিয়ে ধরে বলে,, এই পাগলি কাঁদছিস কেনো,,

রোহান ভাই তৌকির কেনো চলে গেলো, ওর তো সারাজীবনটাই পরে ছিলো। ওর তো জীবন সবে শুরু হয়েছিলো।

কে কখন চলে যাবে কেউ বলতে পারে না রে, ছোট হোক কিংবা বড়, কারো জীবনের মূল্য নেই,, আমাদের ভবিষ্যৎ আছে বলেই যে আমরা বেঁচে থাকবো এমনটা নয়।
এতো সব কথা বলার পর রোহান রুহির মুখের দিকে তাকালো,,‌এ যেনো আগের রুহি। সেই চাহনি, সেই কান্নামাখা মুখ রোহান আশেপাশে কে আছে সব ভুলে রুহিকে জড়িয়ে ধরলো, রোহানের এমন কান্ডে রুহি লজ্জা পেয়ে লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।

রিপা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো ইয়েএএ রুহির সব মনে পরে গেছে, রিপার চিৎকারে রোহানের ধ্যান ভাঙ্গলো, ও রুহিকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।

রুহি এগিয়ে গিয়ে নিজের মা বাবাকে কে জড়িয়ে ধরলো, বাড়িতে আবার যেনো একটু একটু করে শান্তি ফিরে আসছে। তবে সবার যেমন সব চাওয়া পুরন হয় না তেমনি তৌকিরের অভাবটা এ বাড়িতে কখনোই পুরন হবে না।

,,,,,

পাঁচ বছর পর,,
রিপা এখন সাদিয়ার ভাবি। সাদিয়ার বাবা বিদেশে থেকে এসে তিন বছর আগে রিপা আর সোহান(সাদিয়ার ভাই)এর বিয়ে দিয়েছে।রিপা এখন প্রেগন্যান্ট। রিপা সোহানকে প্রথম থেকেই একটু একটু পছন্দ করেছিলো। কিন্তু কখনো বলা হয় নি।
সাদিয়া আর নয়ন দুজন দুজনকে ভালোবাসাতো, রোহান যেদিন সাদিয়াকে ওর আর রুহির ভালোবাসার কথা বলে নয়নের গাড়িতে তুলে দিয়েছিলো সেদিন থেকেই নয়ন সাদিয়াকে সঙ্গ দেয়।বর্তমানে নয়ন একটা বড় কম্পানিতে চাকরি করে। ওরা পালিয়ে বিয়ে করেছে, সাদিয়ার বাবা প্রথমে না মানলেও সাদিয়ার ছেলে হওয়ার পর মেনে নিয়েছে।

ঈদের দিন ওয়াজিহা একটা নীল রঙের লেহেঙ্গা পরে দাদু,দিদা, নানু আর নানির কাছে গিয়ে দেখিয়ে আসছে আর খিলখিল করে হাসছে। ফর্সা শরীরে নিল রং যেনো অপরুপ লাগছে। হ্যা ঠিক ধরেছেন, রোহান আর রুহির মেয়ে ওয়াজিহা,, নাম টা রোহানের বাবা রেখেছে। ওয়াজিহার বয়স তিন বছর। ছোট ছোট করে কথা বলে আর একটুতেই হেঁসে ওঠে। একদম মায়ের মতো।

রুহি আর আগের রুহি নেই, এখন অনেক দায়িত্বশীল মা হয়ে গেছে। মেয়ের কখন কি লাগবে, কখন কি খাবে যেনো সব সময়ের মধ্যেই করে ফেলে।
রোহানের বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে। রোহান‌ এখন ঐ কলেজের শিক্ষক।

সেদিন রুহির সৃতি আসার পর রোহান চলে গেছেলো ওদের বিয়ের আয়োজন করতে। খুব ধুমধাম করে সাতদিন পর ওদের বিয়ে হয়। আর ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। ওয়াজিহা এখন মায়ের মতো সারাবাড়ি ঘুরে বেড়ায়। রুহি এজন্য একটু ব*কা ও দিতে পারে না, বকা দিলেই, রুহির মা রোহানের মা দুজনে বলে ওঠে তুই কি কারো কথা শুনছিলি। না তো, তাহলে আমার দিদিভাই কেও বকা দিতে পারবি না। ওয়াজিহা সারাক্ষণ ওনাদের কাছেই থাকে।

,,
আজ বাড়ি ফিরতে ফিরতে রোহানের একটু দেরি হয়ে যায়। এসে দেখে রুহি মন খারাপ করে জালানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

কি কো বউ‍, তোমার মন খারাপ কেনো,,

রুহি চোখ মুছে বলে কোথায়, কিছু হয় নি তো,,তুমি আসো আমি খাবার দিচ্ছি।

নাহ, আমি বন্ধুদের সাথে খেয়ে এসেছি, কথাটা বলতে দেরি কিন্তু রুহির রোহানের শরীরে পানি দিতে দেরি হয় নি,,,

এএএইইইই এটা কি হলো,,

আমি রাত জেগে তোর জন্য খাবার নিয়ে বসে আছি, আর তুই খেয়ে আসছিস,,আজ তোর একদিন কি আমার যতোদিন লাগে,,

বউ ও বউ,,

একদম নেকামো করবি না তুই,,,

আর হবে না গো এমন,,

কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি, তুই আর আমাকে ভালোবাসিস না, আমি পুরানো হয়ে গেছি তো,,

রোহান‌ রুহিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে,, আরে পাগলি আমার‌ কাছে তুই এখনো ঠিক আগের মতোই আছিস। তোকে আমি ছোট্ট থেকে দেখে আসছি, তোর ঘুমন্ত চেহারা‌ বল, তোর কোনো ক্রিম ছাড়া চেহারা, তোর ব্রন ওঠা মুখ সবটাই আমি দেখেছি। তোকে কি এতো সহজে ভুলতে পারি বল।

উহুমমম, আই লাভ ইউ

আই লাভ ইউ টু আমার বাবুর আম্মু,,

বাবু কেনো, আমাদের তো মেয়ে হয়েছে,

এবার একটা ছেলে হবে গো বউ,

ধ্যাততত।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here