#তুমি_আমার
#পর্ব_২১
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
স্তব্ধ বাকরুদ্ধ চমকিত সিরাত।মন্ত্রমুগ্ধকর এই কণ্ঠধ্বনি।ঠান্ডা গলার কথাটা উড়ন্ত হৃদয়টাকে হিম শীতল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।ওপাশের ব্যাক্তিটি কে বুঝতে বাকী রইলো না তার।স্থির হয়ে বসে রইলো।ওপাশ থেকে আর কিছু শোনা গেলো না।কিন্তু কল কাটে নি এখনও লাইনে আছে।সিরাত ধপাধপ পা ফেলে রুমে ফিরে এলো।এখানে আর এক মুহূর্ত থাকা যাবে না।হাতে থাকা ফোনটাকে বুকে জড়িয়ে থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইলো সে।আবারও বেজে উঠলে ফোনটি সিরাত ভ্রু কুঁচকে তাকালো ফোনের স্কিনে।আবারও সেই আননোন নাম্বার।দেখেই হা পা ঠান্ডা হওয়ার উপক্রম তার।একটু আগের কথা ভাবতেই মৃদু হাসলো সে।তখনকার কথা শুনে ফোন তোলার সাহস হলো না আর।সিরাত বুঝে উঠতে পারছে না এই লোকটার হঠাৎ হলোটা কি!ইনিও এতটা ঠোঁটকাটা হতে পারেন ভাবলেই অবাক হয়ে যায় সে।তার ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে ফোনটা পুনরায় বেজে উঠলো এবার ফোন হাতে তুলে এক বুক সাহস নিয়ে হ্যালো বলবে তার আগেই আদেশসূচক বাণী কানে এলো।যেই বাণী উপেক্ষা করার শক্তি নেই তার।
“পাঁচ মিনিটের ভিতর তোমাদের বাসার বা পাশের ছোট্র পাহাড়টায় চলে এসো।হ্যারি আপ!যদি লেইট হয় বা না আসো তাহলে আমি আসছি তোমার কাছে।নাউ ইউর চয়েজ”সিরাতকে কথা বলার না দিয়ে কলটা কেটে দিলো।সিরাত একবার ভাবলো যাবে না পরক্ষণে বাসায় আসার কথাটা মনে হতেই ঝটপট বাইরে বের হলো।এখন রাত প্রায় দশটা।বেরুনোও টাফ তবুও লুকিয়ে চুড়িয়ে সকলের নজর উপেক্ষা করে বেরুতে সক্ষম হলো সে।
❤️❤️❤️
বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে আরু।আজ সব বিশ্বাস ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো তার।ছেলে মানেই চরিএহীন লম্পট হয়।এরা কখনও এক নারীতে আসক্ত থাকতে পারে না।ক্ষণে ক্ষণে মন পাল্টায় এদের।আবার নিজের বাবা ভাইয়ের কথা মনে হতেই মতামত পাল্টালো সে।ওর চিন্তা শক্তি বললো সবাই এক নয়।কিছু কিছু পুরুষ এমন হয়।আবার কেউ কেউ একজনেই মও থেকে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়।ওর বাবাও তো মাকে নিয়েই কাটিয়ে দিলো।আজও ভালোবাসা কমেনি এতটুকুও।রাদিফ ওকে ঠকিয়েছে কিন্তু ও পারবে না।ও নিজের সবটুকু দিয়ে রাদিফকে ভালোবেসেছে।আজীবন সেভাবেই বাসবে।ওর ভালোবাসা এতটা ঠুনকো নয় যে অল্পতে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায় আরু।
❤️❤️❤️
রিয়া বসে বসে ভাবছে কীভাবে সিয়ামকে মনের কথা জানাবে সে।কিন্তু কিছুতেই কোনো ওয়ে খুঁজে পাচ্ছে না।সিয়ামকে প্রথমে টলারেট করতে না পারলেও কীভাবে যেন এখন ভালোবেসে ফেলেছে।লোকটা অন্যরকম একেবারে অন্যরকম।তার সাথে কারো তুলনা হয় না।জীবনে প্রথমবার কাউকে ভালো লাগার পরও কীভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছে সে।কাউকে বুঝতে দেয় নি মনের ক্ষত।রিয়া সেই ক্ষত জায়গায় মলম লাগাতে গেলেও পারেনি।লোকটার ক্ষমতা অসীম।এখনকার যুগে যেখানে ছেলেরা নিজের পছন্দের মানুষটি না পেলে জোরপূর্বক হাসিল করার চেষ্টা করে নইলে মেয়েটার জীবনকে নরকে পরিণত করতে চায় সেখানে ও কিছুই করলো না।এই দিকটা আরো বেশি টানছে তাকে।
❤️❤️❤️
পাঁচ মিনিট হলো পাহাড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে সিরাত।কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটির দেখা সাক্ষাৎ মিলেনি এখনও।অন্যদিকে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।চারিদিকে অন্ধকার শুধু চাঁদের আলোয় কিছুটা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ পেটে কারো উষ্ণ পরশ পেয়ে কেঁপে উঠলো সে।বুঝতে বাকী রইলো না ব্যাক্তিটি কে।পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গাড়ে মুখ গুজলো আবেশ।সিরাত যেন জমে গেছে।লোকটার অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম হয় তার।শ্বাস আটকে যায়।সিরাত চোখ বন্ধ করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।আবেশ কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“অফ হোয়াইট সেলোয়ার কামিজে দারুন লাগছে তোমায়।ইচ্ছে করছে কামড়ে খেয়ে ফেলি।ডুব দিই তোমার মাঝে”।কথাটি বলতে বলতে গলায় হালকা দাঁত বসালো আবেশ।সিরাত কেঁপে উঠলো।সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো তড়িৎ গতিতে।হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো সে।জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁটদ্বয় ভিজিয়ে নিলো।ওর বেহাল অবস্থা দেখে মনে মনে হাসলো আবেশ।এতদিন ধরে ভালোবাসে অথচ ভালোবাসার মানুষের স্পর্শে এত ভয় এত লজ্জা।ওর লজ্জাটাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে ওর দিকে ঘুরিয়ে ছেড়ে দিয়ে আবেশ বললো,
“ওইদিন কাঁজলের ঠোঁটে একটি চুমো খেয়েছিলাম ভেবে তুমি টানা ছয়দিন আমার সাথে দেখা করোনি।এখন তোমার কি উচিৎ নয় তোমার বরকে গুনে গুনে ছয় দু গুণে বারোটি চুমো খাওয়ার”এবার লজ্জায় নাজেহাল অবস্থা সিরাতের।এখন নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে তার।কেন সেদিন ভুল বুঝেছিল সে।এখন তার মাশুল এভাবে দিতে হবে ভাবেনি কখনও।মাথানিচু করে থরথর করে কাঁপছে।আবেশ একটু কাছে এসে বললো,
“কাজঁল কে এতটুকু ছুঁয়েছি ভেবে সহ্য হয়নি আবার আমার ছোঁয়াও তোমার সহ্য হয়না।কাঁপাকাঁপি করে অবস্থা নাজেহাল।এখন এই অধম কি করবে মহারাণী।একটু কাছে আসলে বউয়ের শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম আবার পরনারীও ছোঁয়া বারণ তাহলে কি করা উচিৎ আমার”।আবেশের দিকে স্থির চাহনী নিক্ষেপ করলো সিরাত মুখে তার দুষ্টু হাসি।এখানে থাকলে এই লোকের বেফাঁস কথাবার্তায় হার্ট ফেল করে নয়তো শ্বাস কষ্ট হয়ে মারা যাবে এটা সুনিশ্চিত।আবেশের কথাগুলোর পাওা না দিয়ে নতজানু হয়ে বললো,
“আমি বাড়ি যাবো আমাকে পৌঁছে দিন”।এতে একটুও অবাক হলোনা আবেশ।যেন এটা জানাই ছিলো তার।একটু এগিয়ে এসে কপালে ভালোবাসার পরশ একে বললো,
“যা তোমার তা তোমারই।যে কোনো পরিস্থিতে বিশ্বাস হারিও না তাহলে ঠকে যাবে”!
❤️❤️❤️
কলেজে বসে গল্প করছে চার বান্ধবী।আয়ান আর মিনার অনুপস্থিত এখানে।সিরাত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে মূলত আবেশ আর কাঁজলকে খুঁজছে সে।সেদিন ভুলবশত কি ব্যবহারটাই না করেছে ভাবলেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে ওর।যেভাবেই হোক উনার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে তাকে আর সেটা আবেশের উপস্থিতিতেই।আরুর মনটা আজ বিষণ্ণ।কোনো দিকে কোনো নজর নেই তার।আবিদের বিয়ের দিনের সীনটা মনে পরলেই হুহু করে কাঁদতে ইচ্ছে করে তার।প্রথম প্রথম যতটা খারাপ লেগেছিলো এখন তারচেয়ে বেশি খারাপ লাগে।ঘৃণায় রিরি করে উঠে সারা শরীর।ওকে বিষণ্ণ দেখে কান থেকে ব্লুটুথ খুলতে খুলতে আয়েশা বললো,
“কিরে আরু তুই এই ছ্যাঁকা মার্কা ফেইস নিয়ে বসে আছিস কেন”?
“ছ্যাঁকা খেয়েছি তাই”আনমনে বলে উঠলো আরু।ওর কথাটি শেষ হতে না হতেই বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো তিনজনে।সিরাত অবাকত্ব নিয়ে বললো,
“সিরিয়াসলি?”সকলের দৃষ্টি এখন আরুর মুখশ্রী তে নিবদ্ধ।আরু অসহায় ফেস নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”হুম!” ব্যাস প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসে পরলো তিনজনে।ছেলেটা কে?কি করে?কোথায় থাকে?কতদিন ধরে এসব চলছে?এত সব প্রশ্ন শুনে চক্ষু কুঠর হতে বেড়িয়ে আসার উপক্রম আরুর।এদের দিকে কাঁদোকাঁদো ফেইস নিয়ে তাকিয়ে বললো,
“আস্তে!একটু ধীরে সুস্থে প্রশ্ন কর।এভাবে উওর দেওয়া যায় নাকি”।সকলে চুপ হয়ে গেলো এরপর আরু সবটা খুলে বললো।সবকিছু শুনে মনে মনে রিয়া বিরবির করলো,
“দোস্ত রে তোর কপাল আর আমার কপাল সেইম।দুজনেই প্রেমে না মজে একা একা কষ্ট পেয়ে মরছি।অন্যদিকের মানুষটার সেদিকে কোনো নজরই নেই”।আয়েশা কপাল কুঁচকে বললো,
“শেষে তুইও সিরাতের দলে নাম লিখালি।আমার বাবা এসব আসে না।কেন জানিনা পারি না।কত ছেলের সাথে ফ্লাটিং করি কিন্তু কাউকে মন থেকে চাই না জাস্ট টাইম পাস”।আয়েশার কার্যকলাপ নিয়ে অনেকবার বন্ধু মহল বকেছে ওকে কিন্তু তাতে কখনও কোনো পাওা দেয় নি সে।তাই সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছে।আজ আবার সিরাতের ইচ্ছে হলো তাই বললো,
“আয়েশা কি করিস এসব তুই এবার বাদ দে সুধরে যা।আমার ভয় হয় তোর ক্ষণিকের খুশির জন্য কেউ না সত্যি সত্যি কষ্ট পায়”।আয়েশা বীরের মতো মাথা উঁচু করে বললো,
“ওসব কিছুই হবে না কারণ তারাও সেইম জাস্ট টাইম পাস করে নো টেনশন ডার্লিং”।আরু মৃদু হেসে বলে,
“আজ এসব বলছিস একদিন ঠিক কারোর সাথে জড়িয়ে যাবি।তখন তাকে ছাড়া বাঁচা প্রায় অসম্ভব মনে হবে তোর কাছে”।এবার আরুর দিকে নজর গেলো সিরাতের।মেয়েটাও তার মতোই কষ্ট পাচ্ছে সেও তো আবেশকে কষ্ট পেত।কিন্তু এখন তার সুখের দিন আগত।আরুর সামনে পরে রয়েছে অপার সুখ যা সে নিজেও জানে না।আরুকে সকলে মিলে সাও্বনা জানিয়ে রাদিফ ভুলতে বললো।কিন্তু চাইলেই কি ভুলা যায়।মন কি শোনে কারো বারণ।
নীরব কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পুরো ক্লাস রুম।সেখানে দাঁড়িয়ে আছে দুজন মানব মানবী।এক জন মোহিত চোখে তাকিয়ে আছে আর অন্যজন ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে।ছেলেটি দু হাত দ্বারা দেয়ালের সাথে আটকে রেখেছে তাকে।মেয়েটি নিজেকে না চাইছে সেই মানবে আবদ্ধ করতে আর না চাইছে বন্ধন মুক্ত হতে।সে স্থির দাঁড়িয়ে আছে।
আজকে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না তবুও আপনাদের কথা বিবেচনা করে দিলাম।আমি অসুস্থ আগামীকাল নাও দিতে পারি।
#চলবে#তুমি_আমার
#পর্ব_২২
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
কাঁজল ম্যামের সামনে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিরাত।আবেশ চেয়ারে বসে বসে হাসছে।সে যে সিরাতকে নিয়ে হাসছে সেটা বুঝতে বাকী নেই তার।চোখ গরম করে আবেশের দিকে তাকালো সে।কিন্তু সেদিকে তার কোনো হেলদোলই নেই।সে দিব্যি হেসে চলেছে।কাঁজল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনার দিকে।মৌনতা ভেঙ্গে একগাল হেসে কাঁজল বললো,
‘সিরাত বসো নো প্রবলেম।তুমি আমাদের স্টুডেন্ট হলেও আবেশের বউ সেই হিসেবে আমার ভাবী লাগো।তাই এতটা আনইজি ফিল করার কিছু নেই’।বউ কথাটা শ্রবণপথে ধাবিত হতেই একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরলো সিরাতকে।আগের চেয়ে মাথাটা আরেকটু নুইয়ে মিনমিন গলায় বললো,
‘সরি ম্যাম সেদিন আমি হয়তো না জেনে কোনোভাবে আপনাকে হার্ট করে ফেলেছি।আপনি আমার গুরু ওইভাবে কথা বলা উচিৎ হয়নি আমার’।কাঁজল ঠোঁটের হাসিটা প্রশ্বস্ত করে বললো,
‘এজন্য সরি বলতে হবে না।এটা হতেই পারে তুমি নিজ চোখে দেখে রিয়্যাক্ট করেছো।তোমার জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এর থেকে বেশি কিছু হতো।বাই দ্যা আবেশ ঝামেলা শেষ’।আবেশ মুখের হাসি বজায় রেখে বললো,
‘শেষ না হয়ে যাবে কোথায়?তুই জানিস ওইদিনের একটি মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্য ও আমাকে বারোটা ইয়ে করেছে।তুই ভাব এতটুকু মেয়ে কতটা এগিয়ে’।আবেশের কথা শোনে চক্ষুদ্বয় কোটর হতে বেড়িয়ে আসার উপক্রম সিরাতের।কি বলে এসব এই আধ পাগল লোকটা।রাগী মুখ নিয়ে তাকালো আবেশের পানে।কাঁজল কথাটা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।হেসে হেসে বললো,
‘ভাই তুই বললি আর আমি বিশ্বাস করলাম।আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়।আচ্ছা যাইহোক এসব কথা তোর বেডরুমেই সীমাবদ্ধ থাক আমাদের কাছে উগড়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই’।আবেশ চেয়ার থেকে উঠে সিরাতের কানের সামনে ফিসফিস করে বললো,
‘আর বেডরুম!বিয়ে করেও শান্তি নেই বউ এখনও বাপের বাড়ী পরে আছে।তার বরের যে কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝার সময় কোথায় তাঁর’।
❤️❤️❤️
অচেনা মানুষ টি ক্রমেই এগিয়ে আসছে আরুর দিকে।আরু স্ট্যাচুর মত অনুভূতিশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।আজ লোকটাকে বাধা দেবে না।তার যা ইচ্ছে তাই করুক।আজই মুখোশ উন্মোচন করার দিন।আরুর ললাটে গভীরভাবে চুমু দিয়ে সরে যেতে নিলে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে শার্ট আঁকড়ে ধরে আরু।আচমকা এমন হওয়ায় অপ্রস্তুত হয়ে পরে সে।আরু দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘এত তাড়াতাড়ি মনের খায়েশ মিটে গেলো।সেদিনের মতো তো কিছুই করলেন না।করুন আজ নিজেকে বিলিয়ে দিলাম শেষ পর্যায়ের নোংরামিও করতে পারেন।বাধা দেবো না’।লোকটা বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরু এসব কি বলছে।কেনই বা বলছে।এবার রাগ হচ্ছে তার।তবুও নিজেকে ছাড়াতে চাইল সে।আরু ছেড়ে দিলে যেতে পা বাড়ালেই আরু বললো,
‘মিঃ রাদিফ চলে যাচ্ছেন যে?পালাচ্ছেন পালিয়ে কি হবে আপনাকে চিনতে অসুবিধা হবে আমার।কখনই না’।আরুর মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো রাদিফ।পেছন ঘুরে মাথা চুলকে তুতলিয়ে বললো,
‘ককি বলছো তুমি’?তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আরু।স্থির হয়ে দু হাত ভাঁজ করে বললো,’অবাক হচ্ছেন’?রাদিফ মুখ থেকে মাস্কটা খুলে ফেলল আর লুকিয়ে কি হবে।যে চেনার সে তো চিনেই নিয়েছে।একদিক থেকে ভালোই হয়েছে।এতদিন অনেকবার সামনে গিয়ে বলবে বলবে বলেও বলতে পারে নি।এই জন্য সিরাত পর্যন্ত পৌঁছে ছিলো কিন্তু তাকেও বলতে পারেনি।রাদিফ মৃদু হেসে বললো,
‘অবাক খানিকটা হয়েছি না করবো না।তবে আমি সেদিনই বুঝে নিয়েছিলাম তুমি সন্দেহ করছো।আমি পরিচয় না দেওয়া স্বও্বেও তুনি চিনে নিয়েছো এটা আমার কাছে লাকি পয়েন্ট’।কথাগুলো শুনে খুব ঘৃণা হলো আরুর।এসব কুকর্ম করেও লোকটার বিন্দু পরিামণ অনুশোচনা নেই ছি অমানুষ একটা।
‘তা থেমে গেলেন কেন?নিজের গার্লফ্রেন্ড রেখে অন্য একটা মেয়েকে রাতের অন্ধকারে বাজেভাবে স্পর্শ করতে লজ্জা করে না।আজ আবার দিনের বেলায় কলেজে ।তা এতই যখন ক্ষিধে তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?আসুন আমাকে ভোগ করুন।সেদিন না জেনে অনেক জোরাজুরি করেছিলাম নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আজ আর কষ্ট করতে হবে না।আপনি যেমন চাইবেন তেমনি হবে সবকিছু’।রাদিফ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।রাগে ললাটের রগ ফুলে উঠেছে তার।কিন্তু কথাগুলো মিথ্যে বলছে না আরু সবটাই সত্যি।দেশে ফিরে ওই দিন আরুকে প্রথম দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি।মূহুর্তেই কি থেকে কি হয়ে গিয়েছিলো নিজেই বুঝতে পারে নি।ওকে নীরব থাকতে দেখে আরু আবারও বললো,
‘কি হলো আসছেন না কেন?ওহ আজকে তো মুখ দেখা যাচ্ছে অন্যদিন তো দেখা যায় না।তখন ভালো মানুষ সেজে দিব্যি ঘুরে বেড়ান কিন্তু আজ তো এসব করে পারবেন না।মুখ লুকাতে হবে আমার কাছ থেকে।নাকি নতুন একটাকে সদ্য ছেড়ে এসেছেন তাই মুড নেই’।কথাটা শেষ হতেই আরুর গালে থাপ্পড় পরলো।তবুও আরু স্থির দাঁড়িয়ে রইলো।আরুর কাছাকাছি এসে ওর গাল দুটো চেপে ধরে বললো,
‘আমার মুখ লুকানোর কোনো প্রয়োজনই নেই।কারণ আমি যার সাথে এসব করেছি তার উপর একমাএ আমার অধিকার।আর আমার জিনিস আমি যা ইচ্ছা তাই করবো’।আরুর দুগাল যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে এতক্ষণ শক্ত থাকলেও এখন আর পারছে না।শত বারণ থাকা স্বও্বেও অবাধ্য চোখের জল গুলো গড়িয়ে পরছে।রাদিফ সেদিকে নজর দিয়েই গাল ছেড়ে দিলো।চোখ মুছিয়ে দু চোখে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।আরুর কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।একটু আগের রাদিফের বলা কথাগুলোর মাথা মুন্ড খুঁজে পেলো না সে।আর না পেলো ওর এসব করার কোনো উপযুক্ত কারণ।রাদিফকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,
‘কিসের অধিকার?আমার উপর আপনার কোনো অধিকার নেই।আপনি চলে যান এখান থেকে।আপনাকে দেখলেও এখন ঘৃণায় বমি চলে আসে আমার’।রাদিফ নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে বললো,
‘প্লিজ আরোহী আমার কথাটা শোন।তুমি আমাকে যা ভাবছো আমি তেমন নই ট্রাস্ট মি’।
‘কিসের বিশ্বাস?আপনাকে একফোঁটাও বিশ্বাস করিনা আমি।যে দিনের বেলায় আমাকে সাথে নিয়ে গার্লফ্রেন্ডের জন্য গিফট কিনে আবার রাতের আধাঁরে আমার সাথেই অসভ্যতামি করে তাকে বিশ্বাস করিনা আমি।একটুও বিশ্বাস করিনা’।
‘প্লিজ আমাকে একটাবার এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দাও প্লিজ।সবটা ক্লিয়ার করে দিচ্ছি’।
‘কিচ্ছু শুনতে চাই না।চলে যান বলছি যে কেউ আমাদের এখানে দেখে ফেলতে পারে এতে আপনার কিছু না কিন্তু আমার মান যাবে।এখানে আমাaকে ঠকাচ্ছেন ওখানে গার্লফ্রেন্ডকে ওর ভালোবাসার জন্যই তো দেশে ফিরেছেন।এখন দুদিনে ভালোবাসা শেষ মন উঠে গেছে’।এবার রেগে গেলো রাদিফ।এই মেয়ে ওকে বলার সুযোগই দিচ্ছে না।নিজের মনগড়া কাহিনী বানিয়ে ওকে দোষারোপ করছে।রাগে ওর মুখ একহাতে চেপে ধরে বললো,
‘চুপ একদম চুপ!ওর উপর থেকে মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত আমার মন উঠবে না।ও আমার মায়াবীনি।আমার মায়াবীনিকে আমি কখনও ঠকানোর কথা চিন্তাও করতে পারিনা।ওকে ঠকানো মানে নিজেকে ঠকানো।আরে বোকা মেয়ে এতদিনেও বুঝলি না সেই মেয়েটা কে হতে পারে।মেয়েরা তো দশহাত দূর থেকে বুঝতে পারে কোন ছেলে তার দিকে কোন নজরে তাকাচ্ছে।আর আমি কিনা তোর সামনে থেকেও তুই বুঝতে পারলি না’। থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করলো রাদিফ।এবার একজনের চোখ আরেকজনের চোখে পরছে।ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা গলায় বললো,
‘তুই তুই হলি আমার সেই মায়াবীনি!যে একটা বছর আমাকে শান্তিতে ঘুমুতে দেয়নি।শান্তিতে বাঁচতে দেয়নি।ইউ এস এ তে এক দিনও স্বস্তি পাই নি।শুধু চোখের সামনে তোর মুখ দেখতে পেয়েছি।এসব সহ্য করতে না পেরে সব ছেড়ে ছুঁড়ে দেশে ফিরে আসি শুধুমাএ তোকে দেখার জন্য।তোকে খুঁজে বার করার জন্য।দেশে যেদিন ফিরি সেদিন রাতেই সিরাতকে দেখে তোকে খুঁজে পাওয়ার আশা পাই।কারণ প্রথমদিন ফুটপাতে তুই আইসক্রিম খাচ্ছিলিস।সেই বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে সেদিনই প্রেমে পরে যাই।অনেক্ষণ পর্যন্ত তাকে দেখতে থাকি।তারপর একটি মেয়ে আসে ওর সামনে।দুজনে মিলে আইসক্রিম খেতে খেতে কি এসব বলছিল আর খিলখিল করে হাসছিল ব্যস ওই পলক দেখাই আমার ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো।তখন তো নাম দাম জানতাম না।তবুও তোর জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর সিরাতের এক্সিডেন্টের পর ওকে হসপিটাল নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া কালীন ওকে ভালোভাবে দেখে তোর কথা মনে পড়ে।তারপর একটা আশার আলো খুঁজে পাই।কিন্তু তারপরও তোর দেখা পাই নি।চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় ছিলাম কখন দেখব তোকে কিন্তু সিরাতের সব বন্ধু আসলেও তুই আসিস নি।পরে সিসি টিভি চেক করে তোর দেখা পাই।ওখান থেকে তোর সম্পর্কে সব ডিটেলস নিয়ে জানতে পারি তুই আমারই বোনের উডবি ননদ।এরপরও তোকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার।অপেক্ষায় থাকি কখন আসবে সেই মাহিন্দ্রক্ষণ’।
রাদিফ কিছুটা থেমে আরোহীর দিকে তাকায়।মেয়েটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হয়তো এমনটা হবে এটা কখনও ভাবতেও পারে নি সে।কারণ সে তো ভেবেছিলো অন্যকিছু।মৃদু হেসে আবার বলতে লাগলো রাদিফ।
‘লোকে বলে অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় সেই আশায় আমিও বসে রইলাম।তিন্নির বিয়ের দিন হঠাৎ দু তলায় তোকে দেখে কন্ট্রোল লেস হয়ে পড়ি।আমি চাইনি কখনও চাইনি এমন কিছু হোক।আমি তো নরমালভাবে মিশতে চেয়েছিলাম।কিন্তু হয়ে গেলো অন্যরকম।ওই দিনের ব্যবহারে আমি নিজেই লজ্জিত।নিজের চক্ষু তৃষ্ণা মিটাতে গিয়ে ঘটে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু।তাই সাহস করে সামনাসামনি আর কিছু বলতে পারিনি।এরপর প্রায়ই দেখার ইচ্ছা জাগতো কিন্তু সেই ইচ্ছাকে দমন করতাম।আবার মাঝেমাঝে ব্যর্থ হতাম তাই ছুটে যেতাম তোর কাছে।তোকে দেখে শান্তি পেতাম ওই রাতে শান্তির ঘুম ভর করতো আমার দৃষ্টি জুড়ে।এই ব্যাপারে সিরাতকেও বলতে গিয়েছি যাতে ও তোকে কনভেন্স করে কিন্তু সেটাও পারিনি কারণ সিরাতের সাথে কেউ না থাকতো।তোর কাছেও বলতে চেয়েছি নিজের মনের কথা কিন্তু ব্যর্থ।শুধু তোকে হারিয়ে ফেলবো এই ভয়ে ভয়ে থাকতাম।তুই যদি একসেপ্ট না করিস আর যদি দেখতে না পাই এসবের জন্য আটকে ছিলাম।সেদিন তোকে সাথে করে তোর জন্যই সবকিছু কিনেছি আর মাএ কদিন মনের কথাও বলতাম।কারণ সেদিন তুই বলেছিলিস তুই যাকে ভালোবাসিস তাকে আর বাসিস না।খবরটা শুনে খুশি হয়েছি কারণ তখন বুঝে গেছি এবার তুই শুধু আমার।শুধু শুধু আমার।আর কারোর নস।সেদিন আমি তোকে ভালোবাসি তার কিছু ক্লু দিতে চেয়েছি তাই তোর ফিঙ্গারের মাপের আংটি,তোর হাতের চুড়ি,তোর পছন্দের শাড়ি কিনেছি কিন্তু তাও তোকে কিছু বুঝাতে পারলাম না।বিপরীতে আমি অসভ্য অভদ্র উপাধি পেলাম।যাইহোক আর ভুল বুঝিস না আরোহী আমি তোকে ভালোবাসি পাগলের মত ভালোবাসি।তুই আমার ভেবে এসব করেছি তাও ভুল করেছি প্লিজ ক্ষমা করে দিস’।
আরু মন দিয়ে কথাগুলো শুনলো একবার মন বলছে বিশ্বাস করতে আরেকবার বলছে না আরু লোকটা মিথ্যা বলছে।তাই যদি হবে তাহলে এতদিন এসব বলেনি কেন?আর সে তো জানে না আরু তাকে ভালোবাসে।তাহলে কেন না জেনে এসব অসভ্যতামি করলো।না না এর একটা কথাও সত্যি না।সবটাই ধরা পড়ে নাটক করছে।ওর নাটকে আরু ভুলবে না।আরু বললো,
‘নাটক করছেন ধরা পরে মনগড়া কাল্পনিক কাহিনী বানাচ্ছেন।অবশ্য পারাই কথা কারণ ডাক্তারি তো মেধা ছাড়া পাস করেন নি।প্রচণ্ড মেধাবী যে এটাই তার প্রমাণ।তবে কি বলুন তো আরু এত সস্তা ড্রামায় ভুলবে না।নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলেন তবে আজ।’তুই’ এটা কোন ধরণের ভাষা ছিহ’।রাদিফ মৃদু হাসলো আরুর থেকে নিজেকে সরিয়ে শান্ত চাহনী নিক্ষেপ করে বললো,
‘এসবের জন্য ক্ষমা চেয়েছি তোমার খারাপ লেগেছে আবারও সরি।তোমার কাছে আমার অনুভূতিগুলো যদি ড্রামা মনে হয় তো হতেই পারে কিন্তু আমি জানি আমি সত্যি বলছি’।
‘সত্যি না ছাঁই।যদি সত্যিই হতো তাহলে দিনের পর দিন আমাকে বাজেভাবে স্পর্শ করতেন না।ভালোবাসা মানেই কি দৈহিক চাহিদা।এই ভালোবাসা আমি বিশ্বাস করিনা’।নিজের একটা ভুলের কারণে আরু ভুল বুঝলো তাকে।এতদিনের সাজানো অনুভূতিগুলোকে আঘাত করলো।হয়তো ওর কাছে আসতে চায় না তাই।কারণ প্রথম প্রেম।ভুলা সহজ নয়।রাদিফ শক্ত কন্ঠে বললো,
‘আমি ভাগ্যকে মেনে নিলাম।আমি জানি ভাগ্য কোনোকালেই সহায় ছিলো না আমার।আজও থাকলো না।ভাগ্য বাবা মাকে কেড়ে নিয়েছে এবার তুমি অপ্রাপ্তির পাতায় জায়গা করে নিলে।নো প্রবলেম তুমি ভালো থেকো আর একটা কথা আমার মত সেইম অনুভূতি আমার প্রতি তোমার হবে সেটা বলছি না আমি। তবে আমার অনুভূতিগুলোকে সম্মান করো অসম্মান করো না প্লিজ।রাদিফ কোনোদিন তোমার সামনে ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়াবে না ইভেন তোমার দৃষ্টির আড়ালেও থাকার চেষ্টা করবে।ভালো থেকো তোমার ভালোবাসার সৌভাগ্যবান সেই ব্যাক্তিটির সাথে।আমি নাহয় অভাগাদের দলে পরে রইলাম।আবারও সরি সবকিছুর জন্য।দুঃস্বপ্ন ভেবে রাদিফ নামক অধ্যায় টা ভুলে যেও’।
শেষের কথাগুলো বলার সময় রাদিফের গলা কাঁপছিলো।কথা শেষ হতেই বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো রাদিফ।আরু ওখানেই হাঁটু গেরে বসে পরলো।আজ যদি সত্যি রাদিফ ওকে ভালোবেসে এসব বলতো তাহলে নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যেত কারণ সেও তো ওকেই ভালোবাসে।প্রথম দেখায় মন দিয়ে বসে আছে।কিন্তু রাদিফের ব্যবহার ওসব তো ভুলতে পারছে না সে।একজন ডক্টর কীভাবে একজনের সাথে এমন করতে পারে।ভিতরটায় ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।রাদিফ নামক যুবকটি ভেঙ্গে দিয়ে গেছে তাকে।আর কখনও কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না।এরা মুখোশের আড়ালে আবৃত একেকটা অমানুষ।
আজ সিরাত আবেশের গায়ে হলুদ।ইতিমধ্যে সকল বন্ধু বান্ধব উপস্থিত হয়েছে ওর বাসায়।আরু এখানে আসবে না কারণ সেখানে ওর ভাইয়ের গায়ে হলুদে থাকতে হবে ওকে।সিরাতের মনে খুশির অন্ত নেই।যে মানুষটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে এসেছিলো এখন সেই মানুষটাকে পুরোপুরি ভাবে পেতে চলেছে সে।এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবনের শুরু হলেও এখন পরিপূর্ণ ওর জীবন।আবেশ মুখে না বললেও সিরাত জানে ওকে কতটা ভালোবাসে সে।যুগ যুগ এই ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়।ওর ভাবনার মাঝে ফোনট। বেজে উঠলো।ও উৎফুল্ল হয়ে ফোনটা তুলে কা দিতেই শুনতে পেল।
‘সেদিন হলুদ দেওয়ায় এত তাড়াতাড়ি কাজ হবে ভাবতে পারিনি।তবে যাই বলো আগের বারের হলুদের মজাই আলাদা ছিলো কারণ তখন সবার আগে তোমার বর তোমায় হলুদ ছুঁইয়ে ছিলো।এবার আর সেই সোভাগ্য হবে না তোমার।কারণ আমার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু ফেসে গেছি আসতে পারছি না’।কথাটা শুনেই লজ্জায় মাথা নুয়ালো সিরাত।সেদিনের কথা মনে হতেই লজ্জা চারগুণ বৃদ্ধি পেলো।লাজুকলতার ন্যায় বললো,
‘সেদিন আপনার জন্যই পরেরদিন এসব ঘটলো।আপনি খুব খারাপ’।আবেশ আহ্লাদী গলায় বললো,’এই খারাপ লোকটাই তোমার স্বামী।আচ্ছা তুমি কি ওসবে বিশ্বাস করো নাকি।ওসবে বিশ্বাস করো না সব আল্লাহর ইচ্ছা’।
‘না না আমিও বিশ্বাস করছি না জাস্ট বললাম।আপনি আমার ভাগ্যে ছিলেন তাই পেয়েছি’।ওদের কথার মাঝেই একটা মেয়েলি কণ্ঠস্বর শুনে চুপ হয়ে গেলো সিরাত।মেয়েটা আবেশকে কিছু বলছে।আবেশ সাথে সাথে ‘রাখছি’ বলে কেটে দিলো।
হলুদ অনুষ্ঠান শেষে আবেশকে কল দেয় সিরাত বারবার ওয়েটিংয়ে দেখাচ্ছে।সিরাত ফোনটা রেখে দেয় হয়তো কারো সাথে কথা বলছে।পরে ব্যাক করবে।কিন্তু দু ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও কল ব্যাক করে নি সে।ফোন চেক করে অভিমানের পাহাড় জমে সিরাতের মনে।আজকের মত একটা স্পেশাল দিনে আবেশ কল করলো না তাকে।কাঁদতে ইচ্ছে হলো তার তবুও কাঁদলো না।নিজেকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবারও কল দিলো।কিন্তু এইবার কান্নাগুলো আটকে রাখার পরিস্থিতিতে রইলো না সে।চক্ষুদ্বয় হতে বৃষ্টি নামলো।ফোন কান থেকে সরিয়ে সঠিক নাম্বারে কল দিয়েছিলো কিনা সেটাও পরখ করে নিলো না ঠিক আছে।তাহলে কে এই মেয়েটা।আর কি বললো এসব।ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো,
‘কে রে এই অসময়ে।ম্যানার্স জানো না এখন পার্সোনাল সময় কাটানোর সময় ফোন রিসিভ করার সময় নয় যত্তসব’।
#চলবে