তুমি আমার পর্ব -২৩+২৪

#তুমি_আমার
#পর্ব_২৩
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত

মেহেদী রাঙ্গা হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিরাত।মেহেদী গাঢ় রং বসেছে এ নিয়ে সবাই কত রং তামাশা করেছে।স্যার তার বউকে খুব ভালোবাসবে এইসব আজগুবি হাবিজাবি কথা।তখন কথাগুলো সুখের ছোঁয়া দিয়ে গিয়েছিল মনে কিন্তু এখন দুঃখ গ্রাশ করেছে।
চোখের কার্নিশ বেয়ে পরছে ফোঁটা ফোঁটা জল।এতদিনের সাজানো বাগানে এতদিন ছিল প্রজাপতির বাস আজ এক নিমিষে সেখানে অন্ধকার বিরাজমান।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে সিরাতের।স্বপ্ন গুলো কেমন বিদঘুটে হয়ে গেলো।এতরাতে একটা মেয়ের এইসব কথার মানে কি হতে পারে সেটা বুঝতে বাকী নেই তার।কিন্তু মেয়েটা আবেশের রুমে কি করছে।ফোনই বা তার কাছে কেন?

অন্ধকার রাত কারো কারো জীবনে বয়ে আনে অনাবিল সুখ আবার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।সকল অনুষ্ঠান শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে আরু।কিন্তু চোখে তার এক ফোঁটাও ঘুম নেই।সেদিনের পর থেকে একটা রাতও শান্তিতে ঘুমাতে পারে নি সে।রাদিফ বলেছিল আর ওর সামনে আসবে না সত্যি আসে নি।আজকে তিন্নি ভাবি শত অনুরোধ করার পরও আসেন নি কাজের অজুহাত দেখিয়েছেন।।হয়তো আগামীকাল আসবেন কারণ প্রমিজ করিয়েছেন ভাবি।তার কথাটা সে রেখেছে ভেবেও শান্তি পাচ্ছে আরু।কিন্তু আরু যে তাকে মিস করছে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তার কি হবে।এই প্রথম মন থেকে কাউকে চেয়েছিলো সে।কিন্তু সে তাকে ঠকালো।খুব বাজেভাবে ঠকালো।তার রঙিন অনুভূতিগুলোকে রংহীন করে দিয়ে চলে গেলো।

রাত পেরিয়ে ভোর হলো।আজ স্বপ্ন গুলো সত্যি হওয়ার দিন।দুটি মনের আবেগ অনুভূতি মিলে একাকার হওয়ার দিন।আজকের দিনটার জন্য কত অপেক্ষা সিরাতের।কিন্তু আজ আর সেই আনন্দ টুকুর রেশ নেই।বিষাদে ছেয়ে গেছো পুরো মন প্রাণ।রাতটা নির্ঘুম কাটিয়ে সকালের হাতছানি দিচ্ছে।ফজরের নামায শেষে জানালার গ্রিল ধরে ছোট্র পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে আছে সিরাত।এই সেই পাহাড় যেখানে সেদিনকার স্মৃতি মিশে আছে। তার ছোঁয়া কথাগুলো জীবন্ত হয়ে উঠলো চোখের সামনে।মন থেকে একট। কথাই বেড়িয়ে এলো,

‘আমার আবেশ আমারই।হয়তো ফোন অন্য কারো হাতে ছিল আত্মীয়দের কেউ রিসিভ করে এসব বলেছে।তার প্রাইভেট টাইমে বিরক্ত করেছি বলে। হ্যাঁ এটাই সত্যি’।মুখে এল চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।ওর ভাবনার মাঝেই ওর ফোনটা বেজে উঠলো।স্কিনে তাকিয়ে অবাক আবেশ কল দিয়েছে তাও এত সকালে ভ্রু কুচকালো তার।কল রিসিভ করে সালাম দিলো।সালামের প্রতিওোর দিয়ে আহ্লাদী গলায় বললো,

‘আজকাল সময় যেন যেতেই চায় না।প্রতিনিয়ত কেমন মাদকাময় নেশা গ্রাস করছে আমায়।শুধু তোমায় কাছে পেতে মন চাইছে খুব।দিন যত যাচ্ছে ততই যেন নেশাক্ত হয়ে যাচ্ছি আমি।এই নেশাময়ী এমন কেন হচ্ছে বলতে পারো গো’।সিরাত বরফের মতো জমে গেলো।কথাগুলো শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো পুরো মুখখানি।এতক্ষণে প্রশান্তির হাওয়া লাগলো মনে।না ও যা ভেবেছিলো তাই সত্যি।লাজুকতার মতো নেতিয়ে গিয়ে বললো,

‘সবমসময় আপনার ফালতু কথা।আমি রাখছি’।আবেশ খিলখিল করে হাসলো।সিরাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।কি সুন্দর হাসি।আচ্ছা এই লোকটার সবকিছু এত সুন্দর এত মোহনীয় লাগে কেন?হয়তো ভালোবাসে তাই।আবেশ বললো,

‘তৈরী থাকো লাজুকলতা লজ্জাবতী।আজকে একেবারে নিয়ে আসছি তখন দেখবো কথায় কথায় পালাও কি করে’।পরের কথাগুলো না শুনেই ফোন কেটে দিলো সিরাত।এখন আরো ডজন খানেক কথা বলে লজ্জার সাগরে ডুবিয়ে মারবে তাকে তার চেয়ে চুপই শ্রেয়।

সিয়ামের পাশে বসে আছে সিরাত।নিজের রুমে চুপটি করে বসে আছে সে।আজ তার কলিজার টুকরো বাড়ি থেকে চলে যাবে ভেবেই কান্না পাচ্ছে খুব।একটা মাএ বোন আর বাবা মা এরাই তার ধরনী।দিন শেষে বাড়ি ফিরে বোনের মুখের এক চিলতে হাসি তার প্রশান্তির অন্যতম কারণ।কিন্তু আজকের পর থেকে সেটাও থাকবে না।পুরো বাড়ি খাঁ খাঁ করবে।কি করে থাকবে তারা।কিন্তু আবেশের হাতে তুলে দিয়ে এক বিন্দু পরিমাণ আফসোস নেই তার।কারণ সে জানে একমাএ আবেশই তার বোনটাকে ভালো রাখতে পারবে।ওর ভাবনার মাঝেই সিরাত এসে কাঁধে হাত রাখলো।সিরাত কে দেখে মলিন হাসলো সে।ব্যঙ্গাত্মক করে বললো,

‘যাক বাবা এট লাস্ট তুই বিদায় হচ্ছিস?সেই কবে বিদায় দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু খরচ করাতে পারবি না গেলি না এবার সব হচ্ছে এবার যা।এরপর শান্তি আর শান্তি’।সিরাত মলিন হাসলো।ভাইয়ের মনের ভিতরে কি চলছে সবটাই জানে সিরাত।শুধু শুধু কথাগুলো বলে নিজেকে শক্ত রাখার প্রয়াস।সিরাত ব্যাথাতুর কন্ঠে ভাইকে জরিয়ে কেঁদে কেঁদে বললো,

‘কিন্তু আমি তো শান্তিতে থাকবো না।তোমার সাথে ঝগড়া ঝাটি রাগ অভিমান আম্মুর কাছে বকা খাওয়ানো প্রায়শই নিজেও বকা খাওয়া,আব্বুর চোখ রাঙ্গানো এসব ছাড়া আমি যে ভালো থাকবো না।আমার শান্তির জন্য এগুলো খুব দরকার কিন্তু আজকের পর কোথায় পাব এগুলো আমি’।সিয়াম নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।নিজেও কেঁদে ফেললো।চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো নোনাজল।ওর মা ওদের ডাকতে এসে সেও স্তব্ধ।আপনাআপনি চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো তার।সিয়ামের মা’কে এভাবে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে রিয়া কৌতূহলবশত এগিয়ে এলো তার সামনে।ভাই বোনের কান্না দেখে তারও চোখ ভিজে গেলো।আহা!ভাইগুলো বুঝি এমনই হয়।মুখ ফুটে কখনও ভালোবাসি না বললেও জীবন দিয়ে বোনদের ভালোবাসে আগলে রাখে।

বরযাএী এসেছে কিছুক্ষণ হলো।আরু দৌড়ে সিরাতের রুমে চলে গেলো।কিন্তু ওকে কেউ রুমে ঢুকতে দিচ্ছে না।সবকয়টা বান্ধবী দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে।সাথে আয়ানও আছে।মিনার তিহানা এখনও এসে পৌছায় নি।এদের কান্ড দেখে আরু রীতিমত শকড।চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বললো,

‘তোরা আমার বন্ধু হয়ে আমার সাথে এমন করছিস। ছি ভিতরে ঢুকতে দে’।ভাবলেশহীন ভাবে আয়ান জবাব দিলো,

‘বন্ধু কোথায় বন্ধু তুই এখন বরের বাড়ির লোক।আর বরের বাড়ির কাউকে আমরা সিরাতকে দেখতে দেবো না।একেবারে সবাই দেখবে’।ওদের কথায় তাজ্জব বনে গেলো আরু কি বলে এই হতচ্ছাড়া।চিল্লিয়ে আয়ানকে মারতে মারতে বললো,

‘থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফালাই দিব অসভ্য।ভেতরে ঢুকতে দে’।রিয়া বললো,’দিব না।তুই বরযাএী যা ফুট।এখানে বন্ধু ফন্ধু কোনোকিছুতে কাজ হবে না হুহ’।তুমুল ঝগড়া লেগে গেলো সবার মাঝে।সিরাত রুমে বসে বসে মজা নিচ্ছে আবার খারাপও লাগছে।যতই হোক বান্ধবী তো কিন্তু কাউকে কিছু বলতেও পারবে না বললে সব কয়টা আস্ত রাখবে না তাকে।আরু ঝগড়ায় ব্যস্ত আর অন্য একজন লুকিয়ে সেই কখন থেকে আরুকে দেখতে ব্যস্ত।সেদিকে কোনো হুশই নেই আরুর।সে এক মনে ঝগড়া করছে।রাদিফ পেছনে সিঁড়ির পাশ থেকে দেখছে এটাই হয়তো তার মায়াবীনিকে শেষ দেখা তার।আর সময় হবে না বা সময় বের করতে চাইবে না।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনে এগিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো,

‘আমাকে একটু ভিতরে যাওয়ার পারমিশন দেবেন প্লিজ না করবেন না।আমিও বরযাএী কিন্তু তবুও প্লিজ’।পেছনের কণ্ঠস্বর শুনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো আরু।রাদিফ এসেছে একবার তাকাবে ওর দিকে না থাক।নিজের অবুঝ মনকে বুঝিয়ে সাইডে দাঁড়ালো সে।এরইমধ্যে দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো আয়েশার মাথায়।বাকীদের ফিসফিস করে কি যেন বললো।রাদিফ আরু দুজনেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।দুজনকেই এবার পারমিশন দিলো তারা।আরুর পাশ কেটে যাওয়ার সময় আয়ান ইচ্ছে করে ধাক্কা লাগায় রাদিফের সাথে আচমকা এমন হওয়ায় পরতে পরতে বেঁচে যায় রাদিফ।একদম আরুর গায়ের সামনে ঝুকে ওকে না স্পর্শ করেও পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়।ওর এহেন কান্ডে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।রাদিফ মুচকি হাসে কিন্তু আরুর দিকে ফিরেও তাকায় না।আরু এই এটিটিউড দেখে রাগে জ্বলে উঠে।চুপচাপ ভিতরে ঢুকে যায় রাদিফ।

‘এটা তোমার জন্য।এইবার বাংলাদেশে আসার পর তুমি আমার লাইফের লাকী পার্সন।তোমার জন্য অনেক কিছু পেয়েছি আমি।তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।তাই তোমার বিয়েতে আমার ছোট্র উপহার’।মিষ্টি হেসে কথাগুলো বলে রাদিফ।সিরাত অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছালো তার কথায়।সকলের দিকে তাকালো সে।সবই উৎসুক চোখে তাকিয়ে রয়েছে।শুধু আরুই হয়তো কথাটা বুঝতে পেরেছে। গিফট হাতে নিতে নিতে অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

‘আমি লাকী পার্সন কীভাবে?আমার জন্য কি পেয়েছেন আপনি?কই আমি তো কিছু জানি না’।

‘তুমি না জানলেও আমি তো জানি এতেই হবে।আবেশ ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসে।তোমাকে হসপিটালে এডমিট করে সে অসুস্থ থাকার পরও তোমার প্রতি তার কেয়ারিংয়ের কমতি ছিলো না।তোমার জন্য তার উদ্ভিগ্নতা তখনই বুঝে ছিলাম তোমাদের মধ্যে কিছু আছে।নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে তোমায়।তাকে আগলে রেখ কখনও কষ্ট দিও না।সব সহ্য হয় কিন্তু ভালোবাসার মানুষের আঘাত সহ্য হয় না।মনে হয় তার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।দোয়া করি সুখে থাকো ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ভালো থাকো’।কথাগুলো শুনে ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠলো আরুর।লোকটা তাকে মিন করে কিছু বললো না তো।নাকি গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়েছে কে জানে।সিরাত আরুর দিকে তাকালো।আরু মাথা নিচু করে আছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিরাত বললো,

‘ভাইয়া আপনি যার খোঁজে এখানে এসেছিলেন তাঁকে পেয়েছেন’?

‘হুম পেয়েছিলাম।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাকে হারিয়েও ফেলেছি।হয়তো ঠিকঠাক আগলে রাখতে পারিনি তাই আমাদের এত দূরুত্ব।বাই দ্যা ওয়ে আসছি’।

আর এক মূহুর্তও দাঁড়ানোর ইচ্ছা নেই রাদিফের।কিন্তু ওর ইচ্ছাতে বাধা হয়ে দাঁড়ালো আয়েশা।আচমকা আরুকে ধাক্কা দিয়ে রাদিফের উপরে ফেলে দিলো।আচমকা এমন হওয়ায় আরু রাদিফ কেউ নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারলো না।দুজনে পরে গেলো মেঝেতে।কিন্তু সুতো পরিমাণ ব্যাথাও টের পেলো না আরু।শক্তপোক্ত প্রশ্বস্ত বুক আগলে নিলো তাকে।ওদেরকে একা রেখে রুম ফাঁকা লাপাওা সবাই।সিরাতকে নিয়ে স্টেজের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।রাদিফের যখন মন ভেঙ্গে গেছে তখন না হয় আরুই সেই ক্ষতস্থানে মলম লাগাগ।মেঝেতে হাতের ভর রেখে মাথা তুললো আরু।রাদিফ এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আরুর দিকে।আরুও এই চোখের গভীরে হারিয়ে গেলো।সব ভুলে পরে রইলো তাঁরা।বেশ কিছুক্ষণ পর ঘোর কাটলো রাদিফের।আরুকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে উঠতে বলায় ঘোর কাটলো তার।লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেলো আপনাআপনি।এভাবে বলবে ভাবতেও পারেনি।

‘এটা আপনার রেজিস্ট্রিকৃত বসত ভূমি নয় যে সারাজীবন এখানে শুয়ে কাটিয়ে দেবেন।এবার উঠুন’।

রাদিফের সাহায্যে অতি দ্রুত উঠে দাঁড়ালো আরু।আমতা আমতা করে বললো,

‘সরি!আমি বুঝতে পারিনি কীভাবে যেন হয়ে গেছে।মাইন্ড করবেন না।আমি জানি এটা আমার রেজিস্ট্রিকৃত নয় এটা একান্ত আপনার ফিউচারের।তাতে কোনো অধিকার নেই আমার ‘।কথাগুলো বলতে কষ্ট হলেও বলতে হলো তাকে।লোকটার উপর তার হক হোক সবকিছুতে তার অধিকার থাকুক এটাই চাইত।কিন্তু এখন রাদিফ মুচকি হাসলো।শার্ট থেকে ধুলো ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,

‘আপনাকে এই পুরো মানুষটাকে দিতে চেয়েছিলাম মিস আরোহী।কিন্তু আপনি আমাকে নয় আরও ভালো কাউকে ডিজার্ব করেন।দোয়া করি তার সাথে ভালো থাকেন।এই পুরোটা দেহ মন সবকিছুই আজীবন আমার মায়াবিনীর থাকবে। এই অধিকার কেউ কাড়তে পারবে না’।

চলে গেলো রাদিফ ডুকরে কেঁদে উঠলো আরু।লোকটার কথা খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে তাঁর।কিন্তু ওই সমস্ত স্মৃতি আগাতে দেয় না তাঁকে।

আবেশ আর সিরাতকে বসানো হয়েছে কাছাকাছি।চকলেট আর গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশনের লেহেঙ্গায় দারুন মানিয়েছে।আবেশও পরেছে চকলেট কালারের শেরওয়ানি।ভারী মিষ্টি লাগছে তাদের।আবেশ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।সিরাত আড়চোখে বেশ কয়েকবার দেখে নিয়েছে তার স্বপ্ন পুরুষকে।সিয়ামের আজ কাজের অন্ত নেই।এক দন্ড দাঁড়াতে পারছে না।বেষ্টফ্রেন্ড আর বোনের বিয়ে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।কলেজের স্টুডেন্টদের মধ্যে কয়েকজন এসেছে এদের মধ্যে এলিনাও আছে।কাজঁল সহ আবেশের সহকারী সবাই এসেছে।সকলে দুজনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

শ্বশুর বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সিরাত আবেশ।কেঁদে কেটে বন্যা ভাসিয়ে এই বাড়তে পা রেখেছে সে।ভাই বোন দুজন দুজনকে জড়িয়ে কাঁদছিলো তাঁদের কান্না থামছিলই না অতপর আবেশ সিয়ামকে বুঝিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে সিরাতকে।আসার সময় কথা দিয়ে এসেছে,

‘ভাবিস না সিয়াম তোর কলিজার কোনো অমর্যাদা হবে না।সকল দুঃখ কষ্ট থেকে আগলে রাখবো তাকে।তোর কাছে যেমন ছিলো আমার কাছেও তেমন রাখার চেষ্টা করবো।ভরসা রাখিস’।কথাগুলোর বিপরীতে ঝাপটে ধরে নিরবে কাঁদছিলো অতপর ভাঙ্গা গলায় বললো,

‘আমি জানি তোর কাছে সিরাত ভালো থাকবে।বিশ্বাস আছে সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখিস’।

আবেশের মা হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়ালেন সদর দরজায়।মিষ্টি পানি খাইয়ে কপালে চুমো এঁকে বরণ করলেন নববধূ কে।ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে সিরাত।ওর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে অশনি আর নাক সিটকাচ্ছে।সিরাত সেটা বুঝেও না বুঝার ভান ধরে আছে।আবেশ ফ্রেশ হতে উপরে গেছে।সিরাতের বন্ধু বান্ধব ঘিরে রেখেছে ওকে।আরু একহাতে ধরে রেখেছে সিরাতকে।অশনি বললো,

‘এ তাহলে আবেশের বউ।ইমপর্ট্যান্ট কাজ থাকায় ওখানে যেতে পারিনি।তা সিরাত কি দেখিয়ে ফাঁসিয়েছিলে আবেশকে’।ঘর ভর্তি মানুষের সামনে এমন কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পরলো সিরাত।চোখের কোণে ছলছল করে উঠলো।আরু অগ্নিচোখে তাকিয়ে অশনিকে কিছু বলার আগেই আবেশ নিচে নামতে নামতে বললো,

‘ও কি ফাঁসাবে সেই ক্ষমতা আছে নাকি ওর।এসব ওর দ্বারা হয় না।ও এমন একজন মানুষ যে কেউ ওকে ভালোবাসতে বাধ্য।আমিই ফাঁসিয়েছি ওকে আমার প্রেমের জালে।আরু ওকে ঘরে নিয়ে যা অনেক স্ট্রেস গেছে রেস্ট প্রয়োজন।আমি আবার আমার বউয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারি না।তাছাড়া এখানে থাকলে অনেক ফালতু লোকের ফালতু কথা শুনতে হবে’।

ফ্রেশ হয়ে আরুর রুমে আছে সিরাত।অশনি মেয়েটা কেমন যেন।শুধু এটে থাকে আবেশের সাথে।তার সিরাতকে পছন্দ নয় সেটাও বুঝে গেছে।তবে আবেশের কথাগুলো শুনে প্রশান্তি তে ভরে উঠেছে মন।লোকটা সবদিকে নজর রাখে।এজন্যই এত ভালোবাসে লোকটাকে।ফ্রেশ হয়ে একটা হালকা জর্জেট শাড়ি পরিয়ে দিয়ে গেছে আরু।কিছুক্ষণ ঘুমানোর কথা বলে বেড়িয়ে গেছে।ঘড়ির কাটায় দশটা ছুঁইছুঁই।সিরাত ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলেছে নিজেকে।আজ ওকে খুব সুন্দর লাগছে।নিজেই নিজের প্রশংসায় ব্যস্ত সে।হঠাৎ পেটে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে।গাড়ে মুখ গুঁজে দাঁড়ালো।সিরাতের বুঝতে বাকী নেই এই স্পর্শের মানুষটি কে।চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইেলো।আবেশ ফিসফিস করে বললো,

‘আরও একটা দিনের অপেক্ষা তারপর তুমি আমার।আগামীকাল থেকে দুজনের নতুন জীবনের নতুন শুরু।যদিও চেয়েছিলাম আজ থেকে তোমার সাথে থাকবো কিন্তু তা আর হলো না।নিয়ম তো মানতেই হবে।তাই মেনে নিলাম’।সিরাত চোখ খুললো।আয়নায় নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখে লজ্জায় মাথা নুয়ালো।নরম কন্ঠে বললো,

‘এই সময়ে আপনি এখানে কেন? চলে যান এক্ষুণি আরু চলে আসবে’।

‘আসবে না।আরুই তোমার কাছে আমায় পাঠিয়েছে।ধুর ভাল্লাগেনা আরও একদিন বউ ছাড়া থাকতে হবে।আমার বিয়ে করেও শান্তি নাই সেই বউ ছাড়া কোল বালিশ নিয়ে পরে থাকতে হয়’।ঠোঁট উল্টে অভিমানি সুরে কথাটা বলে সিরাতকে ছেড়ে দাঁড়ালো।ওর কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠে সিরাত।লোকটা পাগল হয়ে গেছে।এই গম্ভীর রগচটা লোকও যে কাউকে ভালোবাসতে পারে ধারণাতীত ছিলো সিরাতের কাছে।এদিক দিয়ে সে খুব ভাগ্যবতী।সিরাতকে খিল খিল করে হাসতে দেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর কাছে এসে বললো,

‘এভাবে হেসো না।পাগল হয়ে যাই। আজই বাসর করার ইচ্ছা জাগে মনে ‘।

সকালের সূর্য কারো জন্য বয়ে আনে অনাবিল সুখ কারো কারো জীবনে ডেকে আনে ঘোর অন্ধকার।সিরাতের জীবনও যেখানে রঙিন আলোয় আলোকিত হওয়ার ছিলো আজ সে মনে কোনো রং নেই আছে শুধু বিষাদের ছোঁয়া।আবিদের বিয়ের পরেরদিন সিরাত আবেশকে পড়তে হয়েছিল অস্বস্তি আর অপমানদায়ক পরিস্থিতিতে।আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।তবে মানুষগুলো ভিন্ন।আবেশ আর অশনি একে অপরকে সুন্দর করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।গলা অবধি কাথা মুড়ি দেওয়া থাকলেও অশনিকে দেখে বুঝা যাচ্ছে বিবস্ত্র অবস্থায় আছে সে।সকলের চেঁচামিচি শুনে আবেশের রুমে পা বাড়ায় সিরাত।আবেশকে এই অবস্থায় দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।চোখ থেকে গড়াচ্ছে ফোঁটা ফোঁটা জল।অশনির মা মরা কান্না জুড়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যে।উনার চেঁচামিচিতে ঘুম ভাঙ্গে আবেশের।নিজের উপর অশনিকে দেখে লাফিয়ে উঠে সে।ঘুমের মধ্যে ধাক্কা খাওয়ায় পাশে ছিটকে পরে অশনি।ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

‘উফ বেবি!তুমি রোমান্টিক এটা জানতাম কিন্তু এত রোমান্টিক জানতাম না।সারারাত দুষ্টুমি করে মন ভরে নি।এখন আবার শুরু করে দিয়েছে’।কথাগুলো বলে দুষ্টু হাসে।আবেশ অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় অশনির দিকে।সে আবার ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে।সিরাত যা বুঝার বুঝে নিয়েছে।উপস্থিত সকলে হতভম্ব।তাদের বাসার ছেলে এতটা নোংরা ভাবতেই অবাক লাগছে সবার।আবেশের মা সিরাতের মাথায় হাত রেখে আবেশের কি তাকালেন।আবেশ অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে সিরাতের দিকে কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ সিরাতের নেই।সে কি যেন ভেবে চলেছে।সিরাতের এই চাহনী এই নীরবতা সহ্য হচ্ছে না আবেশের।সে চায় সিরাত কিছু বলুক।বিশ্বাস অবিশ্বাস যাচ্ছে তাই।তবুও কথা বলুক।#তুমি_আমার
#পর্ব_২৪
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত

এতসব কাহিনীর মাঝে হঠাৎ আরুর ফোনে একটা কল আসে।আননোন নাম্বার সে ফোনের দিকে তাকিয়েও কল রিসিভ করে না।রুমের মধ্যে পায়চারী করতে ব্যস্ত।সিরাত আবেশকে নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই তার।কি থেকে কি হয়ে গেলো।এবার কি আলাদা হয়ে যাবে সিরাত আবেশ।ওর ভাবনার মাঝেই ম্যাসেজ আসে।বিরক্তি নিয়ে ফোনের কাছে যায় ম্যাসেজ চেক করে চোখ বড় বড় করে তাকায় সে।ম্যাসেজটি ছিলো,

‘প্লিজ আরোহী একটা বার তোমাদের বাসার পেছনে আসবে।ভেবে নাও এটাই তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া।আমার কাছে সময় নেই প্লিজ তাড়াতাড়ি।রাদিফ’।এই সময়ে এমন ম্যাসেজ দেখে আরুর মেজাজ চরমে উঠলো।আবার সময় নেই কথাটি ভেবেই ধক করে উঠলো।তাড়াহুড়া করে ছুটলো সে।

রাদিফ আরু দাঁড়িয়ে আছে মুখোমুখি।রাদিফ কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে আরুর উদ্দেশ্যে বললো,

‘সরি আরোহী তোমাকে বিরক্ত করার জন্য।আসলে এ ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিলো না।তবে বিলিভ মি আর কখনও ডিস্টার্ব করবো না’।আরু রাদিফের দিকে ভালোভাবে তাকালো।ছেলেটার আগের সৌন্দর্য বিলীন হয়ে গেছে মনে হয়।পূর্বের ন্যায় ড্যাশিং লাগছে না।হালকা শুকিয়েছে হয়তো।মনে হয় ডায়েট করে ডাক্তার মানুষ।চোখ সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

‘কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।আমার তাড়া আছে’।রাদিফ ফিচেল হাসলো।মেয়েটার তার সামনে আসলেই সবসময় তাড়া থাকে।হয়তো এসবের জন্য নিজেই দায়ী।তাই সময় নষ্ট না করে একটি গিফট বক্স এগিয়ে বললো,

‘এটা দিতেই ছুটে আসা আমার।আর কখনও তোমার সাথে দেখা হবে না। কারণ আমি হতে দেবো না।ইতিমধ্যে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায় পারলে ক্ষমা করে দিও।আর তোমার কাছে আমার অনুরোধ প্লিজ এটা গ্রহণ করো।তোমার যখন যেদিন ইচ্ছে হয় সেদিন খুলে দেখো।তাড়াহুড়োর কিছু নেই’।

‘আপনার দেওয়া জিনিস আমি নিব কেন’?কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে একরোখা জবাব দিলো আরু।রাদিফ অনুনয়ের সুরে বললো,’প্লিজ আরোহী দেখে যদি ইচ্ছে হয় তাহলে ফেলে দিও সেটা একান্ত তোমার ইচ্ছা’।

আরু কথা বাড়ালো না।হাতে তুলে নিলো সেটি।রাদিফ এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আরুর দিকে।আজই শেষ দেখা ওকে।আর কখনও সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হবে কিনা আদৌও জানে না সে।মায়াবিনীর বিরহে আজকেই দেশ ছাড়বে।এখনও কাউকে জানায় নি।যাওয়ার ঘন্টাখানেক আগে জানাবে।নইলে কেউ কিছুতেই ওকে যেতে দেবে না।কিন্তু এখানেও থাকতে পারবে না সে।চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষ অন্য কারোর সাথে কিছুতেই সহ্য হবে না।এর চেয়ে দূরে যাওয়া টাই উওম।জীবনটা হয়তো আট দশটা মানুষের মত সহজ সরল ভাবে চলতে পারতো কিন্তু উপরওয়ালা বুঝি এটা চান না।সকল না পাওয়া গুলো হয়তো তার নামেই বরাদ্দ। মায়াবিনীকে নিয়ে জীবন পার করা হলো না তার।তবে আফসোস নেই কারণ সে ভালো থাকুক তার ভালোবাসাকে নিয়ে।নিজে না হয় না পাওয়াটাকে সুখ ভেবে নিয়ে গেলো।আজ আবারও খুব অবাধ্য হতে ইচ্ছে করছে রাদিফের।শেষ বারের মত ছুতে মন চাইছে।তাই করুন সুরে বললো,

‘আরোহী একটা বার হাগ করবে আমায়।প্লিজ’।রাদিফের কাজকর্ম কেমন সন্দেহজনক লাগছে আরুর কাছে।লোকটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।চোখ দুটো ছলছল করছে।এমন করুণ কণ্ঠস্বর শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।রাদিফ অপেক্ষা না করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে।আরু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।যতই হোক ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ খারাপ লাগছে না ওর।আরুও হাত রাখলো ওর পিঠে।কিছুক্ষণ পর নিজে থেকেই ছেড়ে দিলো।সরি বলে কপালে একটা চুমো একে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে প্রস্থান করলো।আরু স্তব্ধ লোকটার হলোটা কি..?যাওয়ার সময় স্পষ্ট চোখে জল দেখেছে সে।যেগুলো লুকানোর জন্যই তাড়াহুড়ো করে পালালো।

থমথমে পরিবেশ নিস্তব্ধতা বিরাজমান পুরো বাড়িময়।ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে সবাই।আজ মিঃ খানের মনে হচ্ছে নিজ ছেলেকে গলা টিপে মেরে ফেলতে।এরকম ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই উওম।আগেরবার বিশ্বাস করেও করেন নি কিন্তু এবার অবিশ্বাসের কোনো জায়গাই নেই।অশনি শর্ট টপস আর জিন্স পরে মায়ের বুকে মাথা রেখে ন্যাকা কান্নায় বুক ভাসাচ্ছে।আবেশের দৃষ্টি সিরাতের উপর আর সিরাতের দৃষ্টি মাটিতে নিবদ্ধ।পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে সে।আরু ওর কাছে বসে আছে।আজ তারও কিছু বলার নেই।বারবার ভাইয়ের এই রূপ অবিশ্বাস করতেও পারছে না।সিরাতের সাথে না হয় মিসআন্ডাসটেন্ডিং কিন্তু এবার।এবার কি হলো।বারবার তো চোখের দেখা ভুল হতে পারে না।আবিদ আর তিন্নি এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে।আবিদের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাইয়ের ব্যবহারে কতটা কষ্ট পেয়েছে সে।আরুর মা নীরবে চোখের জল ফেলছেন।বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে এমন লম্পট ছেলে জন্ম দিয়েছেন তিনি।অশনির মা নীরবতা ভেঙ্গে বললেন,

‘ভাইজান এবার কি হবে।আমার মেয়েটা কোথায় যাবে।সমাজে মুখ দেখাবে কি করে।কে বিয়ে করবে ওকে।আবেশ না তোমার গর্ব ছিলো সেই ছেলে আজ তোমার মাথা মাটির সাথে মিশিয়ে দিলো।আগেরবার একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করার কারণে বিয়ে পর্যন্ত দিলে।বউ ঘরে তুলতে না তুলতে আরেক মেয়েকে নিয়ে বিছানায় ছি ছি।আমার বলতেও মুখে আটকাচ্ছে।এই ছেলের জন্ম দিয়েছো।আজকাল আবেশ নামক পশুটাকে তোমার ছেলে ভাবতেও ঘেন্না হয়’।

আবেশের বাবা নীরবে চোখের পানি ফেলছেন।আজ এত বড় অপমান শুধুমাএ ওই ছেলেটার জন্য হলো।আবেশ চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে।আবিদ নিচু সুরে বললো,

‘পি মনি তুমি এইভাবে বাবাকে অপমান করতে পারো না।মুখ সামলে কথা বলো।মানলাম আমার ভাই দোষী কিন্তু তোমার মেয়ে তো কচি খুকি নয়।সে কেন একজন বিবাহিত ছেলের সাথে বেড শেয়ার করলো।নোংরা যদি হয়ে থাকে সেটা তোমার মেয়ে।জেনেশুনে একটা মেয়ের ঘরে আগুন দিয়েছে’।অশনির মা থমকের সুরে বললেন,

‘এসব বলে ভাইয়ের কুকর্ম লুকাতে পারবি না।তোর ভাইয়ের বিয়ের আগে থেকে আমার মেয়ের প্রতি কুনজর ছিলো।ও ফুসলিয়ে ফাঁসলিয়ে আমার মেয়ের জীবন ধ্বংস করে দিলো।মেয়েটা ছোট তাই এতসব বুঝে নি কিন্তু তোর ভাই তো অবুঝ নয়’।প্যাঁচ প্যাঁচ করে কাঁদছে অশনি।ওর কান্নার শব্দ আবেশের কানে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে।নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে।তবুও চুপচাপ।ও দেখতে চায় জল কতদূর এগোয়।আবেশের বাবা বললেন,

‘দেখ বোন অশনি আমার ভাগ্নি হলেও আমার মেয়ের মত।আমার ঘরে গতকালই আমি লক্ষ্মী তুলেছি।তাই এই ভাবনা বাদ দে।আমার ঘরের লক্ষ্মী আমি তাড়াতে পারব না।এখন তুই কয়েকদিনের মধ্যে পাএ জোগাড় কর আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে ওর বিয়ে দেবো’।

‘কেন ভাইজান তোমার কি আমাদের ভিখারি মনে হয়।আমার মেয়ের বিয়ে দিতে অক্ষম আমি।এসব আমি মানিনা’।পাশ থেকে অশনি বললো,

‘তাড়াতে হবে না মামু।আমরা দুজন না হয় মিলেমিশে থাকবো।তবুও আবেশকে ছাড়বো না আমি।যে আমার এতবড় সর্বনাশ করেছে তার সাথেই ঘর করবো’।

মিঃ খান সহ সকলের মাথায় যেন বাজ পরলো।কি বলে এই মেয়ে।আবেশ মেঝের দিকে তাকিয়ে দিব্যি হাসছে।সিরাত এখনও চুপ সকলের কথোপকথন মনযোগ সহকারে শুনে যাচ্ছে। এমুহূর্তে সে একজন শ্রোতা মাএ।আরু উওেজিত কন্ঠে বললো,

‘না না এটা হতে পারে না।অশনি তুমি কি পাগল হয়ে গেছো’।মিঃ খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে অশনিকে আবারও সুধালেন,

‘যা বলছো ভেবে বলছো তো’?সাথে সাথে জবাব এলো,’অবশ্যই মামু’।মিঃ খান আর আবেশ করুন চোখে তাকালো সিরাতের দিকে।আবেশ নিজ আসন ছেড়ে সিরাতের সামনে হাঁটু গেরে বসে হাতে হাত রাখলো।সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

‘সিরাত আমি জানি তোমার সাথে আমার বিয়েটা কীভাবে হয়েছিল কিছুই ভুলিনি।তুমিও ভুলনি নিশ্চয়।আজকে সবাই আমাকে অবিশ্বাস করছে আমার পুরো ফ্যামিলি কেউ বিশ্বাস রাখতে পারেনি।এসবে আমি তোয়াক্কা করি না।তুমি বলো তুমি কি চাও।আমাকে বিশ্বাস করো নাকি তুমিও সবার মতো আমাকে দুশ্চরিএ ভাবছো।বলো সতীন নিয়ে সংসার করতে চাও’?আবেশের ছলছল চোখ দুটি সিরাতকে অনেক কিছু বুঝাতে চাইছে।কিন্তু সিরাত বুঝবে কিনা সেটা আবেশের অজানা।তখন অশনি বললো,

‘সমস্যা হবে কেন।কই সতীন নিয়ে সংসার করতে আমার তো কেনো আপওি নেই’।এতক্ষণে মুখ খুললো সিরাত।আবেশের হাত ধরে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘কিন্তু আমার আপওি আছে’।এটাই যেন স্বাভাবিক ছিলো সকলের মুখ দেখে বোধগম্য হলো সিরাতের।অশনি আর অশনির মায়ের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।সকলের অগোচরে হাসছে দুজনে।অশনি কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে সিরাতের সামনে দাঁড়িয়ে হাত ধরে বললো,

‘বিশ্বাস করো সিরাত আমি এমনটা চাই নি।সংসার জুড়তে না জুড়তে ভেঙ্গে যাচ্ছে এসব সত্যি চাই নি।কিন্তু কোথা থেকে যে কি হয়ে গেলো।প্লিজ এখান থেকে গিয়ে ভেঙ্গে পরো না।তুমি।খুব ভালো মেয়ে আবেশের থেকে বেটার কাউকে ডিজার্ব করো’

সকলে অবাক চোখে তাকালো অশনির দিকে।ভিতরে ভিতরে এক কথা বললেও বাইরে কেউ প্রকাশে সাহস জুগাতে পারছিল না অথচ অশনি সেই অসাধ্য কাজটুকুও আদায় করে ফেললো।সত্যি কি সিরাত চলে যাবে।সিরাত মৃদু হেসে ওর হাত থেকে হাত সরিয়ে বললো,

‘তোমাকে কে বললো আমি সংসার ছেড়ে চলে যাবো।আমার সংসার ফেলে আমি কোথায় যাব।অশনি তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে’।

সকলের চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠলো।আবেশ এক চিলতে হাসলো।আরু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো এতক্ষণে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সে।অশনি অবাক চাহনী নিক্ষেপ করে বললো,

‘তাহলে কি বলছো তুমি।সতীন নিয়ে সংসার করবে না আবার সংসার ফেলেও যাবে না এসবের মানে কি।দেখ আমার সাথে এই নোংরামি করার পর আমি তো আবেশ কে ছেড়ে দেবো না।দরকার হলে ওর নামে কেস ফাইল করবো।তবুও ছাড়বো না’।

‘ছেড়ো না কোলে নিয়ে বসে থাকো।বাই দ্যা ওয়ে বাবা মা ভাইয়া প্রথমেই তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।আমি চাইনি এসব ব্যাপারে আপনাদের সামনে খোলাখুলি আলোচনা করতে।কিন্তু আজ যখন আমার স্বামীর বিরুদ্ধে এতবড় ইলিগেশন এসেছে তখন এসব কথা না বলে পারছি না।।সরি’।

সকলের উৎসুক হয়ে সিরাতের কথা শুনছে।মাথা নাড়িয়ে কথা বলার জন্য সবাই সম্মতি জানালো।সিরাত আবেশের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘আমি নিজের থেকে বেশি আপনাকে বিশ্বাস করি।তার কারণ কি জানেন কারণ এর আগে দুইবার আপনার সাথে রাত কাটিয়েছি আমি।প্রথমত আমি হারিয়ে যাওয়ার পর আর দ্বিতীয় বার আমাদের বিয়ের পূর্বের দিন।কিন্তু কখনো আপনি আমায় বাজেভাবে স্পর্শ করেন নি।পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েও আপনি আমার সাথে কিছু করেন নি।অথচ যেদিন আমায় এই বাড়িতে আমাকে নিয়ে আসলেন সেদিন আপনি অন্য একটা মেয়ের সাথে….থাক আর বলছি না।এসব আমি বিশ্বাস করি না।আমি জানি আপনি নির্দোষ ইচ্ছে করে কেউ আপনাকে ফাঁসাচ্ছে।যেভাবে আমাকে আপনাকে আগের বার ফাঁসানো হয়েছিলো।অথচ সবাই কতকিছু ভেবেছিলো আমাদের ফেইস দেখে।আমি সিওর এবারও কিছু হয়নি শুধু লোক দেখানো।কেউ উনার রিপুটেশন খারাপ করার জন্য এসব করেছে।আপনার মাথা বাবার মাথা নিচু করার জন্য।’

বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো অশনি।এবার কি তবে তীরে এসে তরী ডুবে যাবে।না না এটা হতে দেওয়া যাবে না।এভাবে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে পারে না।তার আগেই এর ইতি টানতে হবে।

#চলবে


#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here