তুমি আমার পর্ব -২৫ ও শেষ

#তুমি_আমার
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
#২৫_পর্ব

শান্ত নীরব পরিবেশ বিদ্যমান গম্ভীর মুখে আছে সিরাত।আবেশের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে হাসি।সিরাত এবার অশনি কে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘এবার বলো তোমার সাথে ঠিক কি হয়েছে।পাশাপাশি শুয়ে থাকলেই যে খারাপ কিছু ঘটবে তেমন তো কোনো কারণ নেই।হতে পারে এমনিতেই শুয়ে ছিলে এটা খুব একটা বড় ইস্যু নয়’।

বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো অশনি।ওর মা দ্বিগুণ তেজ দেখিয়ে বললেন,’এসব কি বলছো তুমি।শোন সবাই দেখেছে ওদের অবস্থা তাই এটাকে মিথ্যা প্রমাণ করার বৃথা চেষ্টা করো না’।সিরাত হাসলো।হেসে হেসে বললো,

‘এর আগেরবারও তো সেইম কাহিনী হয়েছিলো।কিন্তু আমি তো জানি আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি।ইভেন উনি আমি একই রুমে সেটাও টের পাইনি’।

‘ সিরাত তুমি একটা মেয়ে।মেয়ে হয়ে মেয়েকে এভাবে দেষারোপ করতে পারো না’।

‘অবশ্যই পারি।না পারার কি আছে।আচ্ছা আমার কয়েকটা প্রশ্নের উওর দাও তো’।ঘাবড়ে যায় অশনি।তবুও স্বাভাবিক ভাবে বলে,

‘কি প্রশ্ন বলো’?

‘তোমার সাথে ঠিক কি হয়েছে?তুমি আবেশের রুমে গিয়েছিলে কেন?ওখানে তো উনার একার থাকার কথা তাহলে সেখানে তুমি কেন? যদি তোমার সাথে আমার স্বামী বাজে কিছু করে তাতে তুমি সম্মতি দিলে কেন যেখানে তুমি জানো সে বিবাহিত।এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার।ইভেন এটাও জানো আমার প্রতি তার ফিলিংস কি?আরেকটা কথা তোমার সাথে অসভ্যতামি করেছে তার প্রুফ কি’?শুকনো কয়েকটা ঢোক গিললো অশনি।ওর মাও ঘাবড়ে গেছেন বুঝা যাচ্ছে বেশ।আবেশের বাবাও সিরাতের সাথে একমত।বাধ্য হয়ে মুখ খুলতে হলো তাকে।ন্যাকা কান্না করে বললো,

‘যদিও সকলের সামনে এসব বলতে আমার লজ্জা লাগছে তবুও বলবো বলতে হবে আমায় কারণ সিরাত আমায় অবিশ্বাস করছে।এই অবিশ্বাস দূর করতে আমাকে বলতে হবে।।আমি যখন রুমে যাচ্ছিলাম তখন রাত আনুমানিক একটা হবে।তখন হঠাৎ আমার হাত ধরে আমাকে একটানে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দেয় আবেশ।আচমকা এমন হওয়ায় আমি বিস্মিত হই।এরপর আমাকে নানা ভাবে বুঝায়।আমি বারণ করলে শোনে না ততক্ষণে জোর করতে শুরু করে।তারপর বলে তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে তোমাকে ঝামেলায় পরে বিয়ে করেছে।সবাইকে বুঝিয়ে তোমায় ছেড়ে দেবে।আমায় ঘরে তুলবে।বলতে দ্বিধা নেই আমিও ওর প্রতি উইক তাই মানাও করতে পারি নাই।আর যেখানে ও তোমাকে ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেখানে তো অবিশ্বাসের প্রশ্নই উঠে না।সারারাত আমার উপর টর্চার করেছে।একটুও ঘুমাতে পারিনি।ভোরে আমাকে ছেড়ে শুয়ে পরে তখন আমিও ঘুমিয়ে পড়ি।তাই সকালের এত কাহিনী শুনেও কানে যায় নি।তাছাড়া এসবের অসংখ্য চিন্হ পাবে আমার শরীরে।গলার দিকটা বের করে দেখিয়ে বলে ওখানে কামড়ের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।এরপর ফুঁপিয়ে বললো,

‘এবারও বলবে এসব মিথ্যা।একটা মেয়ের এই পরিস্থিতিতেও তাকে বিশ্বাস করছো না’।ওর মা উওেজিত কন্ঠে বলেন,’আর এক মূহুর্ত নয় এবার পুলিশ ষ্টেশন যাব আমরা।এখানে দাঁড়িয়ে সার্কাস দেখতে পারব না’।

‘কুল একটু পর যাবেন জাস্ট ওয়েট’।সিরাত নতুন কাজের মেয়ে মর্জিনাকে ডেকে পাঠায়।বিয়ে উপলক্ষ্যে তাকে এখানে আনা হয়েছে।তাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে চায় সে।মর্জিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আচ্ছা খালা কালকে আবেশ কখন ঘুমিয়েছে?লাস্ট তোমাকে আমি দুটোর দিকে উনার ঘরে পাঠিয়েছিলাম কারণ তিনি কল ধরছিলেন না জরুরি প্রয়োজনে তোমাকে পাঠিয়ে ছিলাম উনার রুমে তখন কোথায় ছিলো সে’?

‘ছোট ভাই ঘুমাইতাছিলেন তাই আমি উনার ঘুম ভাঙাই নাই।দুইবার ডাকছি উঠেন নাই দেইক্কা চইলা যাই।কই তহন তো তারে একাই দেখলাম।এরপর ভোরে উনার রুম পরিষ্কার করতে গিয়াও একইভাবে ঘুমাতে দেখছি।আমি কাজ করে আসার সময়ও দেইখা আইলাম উনি একলা ঘুমাইতাছেন।যা হওয়ার পরে হইছে’।

সবাই থমকে গেলো।অপরাধীর ন্যায় আবেশের দিকে তাকালেন মিঃ খান।উনি নিজের ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারেন নি।অশনির মা চিৎকার করে বললেন,

‘এই দুই পয়সার চাকরানি বল কত টাকায় বিক্রি হয়ে এসব মিথ্যা আজগুবি কথা বলছিস।আজ তোকে আমি ওকে মারতে উদ্যত হলেই আবেশ সামনে আসে দাঁড়ায় উনার।চুপ রাঙ্গাতেই পিছিয়ে যান তিনি।এবার আবেশ বলে,

‘আজ যদি সিরাত আমায় বিশ্বাস না করতো তাহলে কখনও আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইতাম না।কারণ যেখানে আমার বাবা মা ভাই আমাকে বিশ্বাস করেনি সেখানে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর কিছু ছিলো না।কিন্তু ভাবছি এখন প্রয়োজন।দুই টাকার চাকরানি না হয় বিক্রি হয়ে গেছে।কিন্তু এখন যেটা দেখাবো সেটা ত মিথ্যা নয়’।

সবাই হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে।আবেশ কি দেখাবে সেটা দেখতে উৎসুক সবাই।আবেশ সিসি টিভির ফুটেজ দেখায় যেটা দেখে সকলের চোখ ছানাবড়া।একটা মেয়ে নিজের ইজ্জত নিয়ে এতটা নোংরামু করতে পারে ভাবতেও পারে নি কেউ।ফুটেজে দেখা যায় আবেশ ঘুমিয়ে আছে তখন অশনি আর ওর মা তার রুমে প্রবেশ করে।অশনির পরনে একটি বড় টাওয়াল পেঁচানো।ওর মা একটি রুমাল আবেশের নাকে চেপে ধরে কিছুক্ষণেই নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় তার।এরপর নিজেই ওর কাথার নিচে ঢুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।ওর কয়েক মিনিটের পরই চিৎকার চেঁচামিচি করে সবাইকে জড়ো করেন অশনির মা।আবেশ ফুটেজটি বন্ধ করে বললো,

‘সবাই ভাবছো তো আমার ঘরে সিসি টিভি কেন?আসলে সিরাত আর আমাকে কেন্দ্র করে কদিন আগে যেই ঘটনা ঘটেছিল সেখানে আমার আর সিরাতের অবস্থা দেখে আমার সন্দেহ হয়।কারণ একই বিছানায় ঘুমুনো অস্বাভাবিক ছিল না অস্বাভাবিক ছিল আমার আর সিরাতের মুখভঙ্গি।যা দেখে সবাই ভেবে নিয়েছিলো আমাদের মধ্যে অনৈতিক কিছু ঘটেছে।কিন্তু আমরা তো জানি আমরা সৎ।তখনই বুঝে গেছি কেউ ইচ্ছে করে এসব করেছে তাই সকলের অগোচরে ক্যামেরা ফিট করি’।

সকলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অশনি আর তার মায়ের দিকে।মুখে কোনোকথা নেই দুজনের।মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।মিঃ খান প্রথমে অশনি এবং পরে ওর মাকে ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন।ধরা গলায় বললেন,

‘তোদের মা মেয়ের নোংরামিকে বিশ্বাস করে আমি আমার সোনার টুকরো ছেলেকে কিছু সময়ের জন্য অবিশ্বাস করে ফেলেছিলাম।ছিহ!তুই এত নিচ জঘন্য’।সকলে যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।আবিদ ভাইকে জড়িয়ে ধরে নিজের ভুল স্বীকার করলো।আবেশের মা ছেলের কপালে চুমো খেয়ে বললেন,

‘ভুল বুঝিস না আমাদের।রাগও করিস না।দেখ পরিস্থিতি টাই এমন ছিলো।এসব দেখার পর মনে হয়েছিলো হয়তো তুই খারাপ হয়ে গেছিস।আবার কোথাও একটা আশা ছিলো আমার ছেলে এমন নয়’।আবেশ মাকে জড়িয়ে বললো,’রাগ করিনি মা।এই পরিস্থিতি তে বিশ্বাস রাখা টাফ।আমি জানিনা সিরাত কি করে বিশ্বাস রাখতে পারলো মনে মনে’।

সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান।অনেকে অনেক কথা বলছে অশনি অশনির মাকে।মিসেস খান বললেন,

‘এই অশনি তোমাকে ত নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসেছি তাহলে আমাদের সাথে এমন কেন করলে।আর যদি এটাই ইচ্ছা ছিলো তাহলে সিরাত আবেশকে ফাঁসালে কেন’?চিৎকার করে উঠলো অশনির মা,

‘তোমাদের মান সম্মান ধুলোয় মেশানোর জন্য এসব করেছি।কারণ এক সময় আমি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে প্রেগন্যান্ট হয়েছিলাম বলে তোমরা আমাদের মেনে নাও নি।কোনোমতে অশনির বাবার সাথে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো।তখন বলেছো আমি তোমাদের মান সম্মান ধুলোয় মিশাচ্ছি। তোমার বাসায় পর্যন্ত আসতে দাও নি। অনেক চেষ্টা করেছি সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে কিন্তু পারিনি।অতপর সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করিনি।প্রথমবার সিরাতকে ইউজ করি কারণ সিরাত আরু বেষ্টফ্রেন্ড।অন্যদিকে সিয়াম আর আবেশ।তাই এখানে ভুল বুঝাবুঝি হলে চারটি সম্পর্ক নষ্ট হবে।কথাগুলো বাইরে লিক হবেই হবে।তখন তোমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। তার উপর তোমার ছেলে টিচার এই ট্যাগটার জন্য আরও সহজ হচ্ছিলো সব।এতে লাভ আমারই।কিন্তু বুঝতে পারিনি তোমরা ওদের বিয়ে দিয়ে দেবে।আমি চেয়েছি মুখ লুকাতে তোমরা হন্যে হয়ে কনে খুঁজবে যদি তখন অবস্থা বেগতিক হয় অশনিকে দেখিয়ে দেবো। বিয়ে হয়ে যাবে আর তোমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবে আমার কাছে।আর আজকের করার কারণও সেইম।যদি ওদের না মানতে তাহলে নিজে বাইরে জানাতাম।তোমার ছেলের ক্যারিয়ার তোমার সম্মান সব নষ্ট করে দিতাম কিন্তু এই মেয়েটার জন্য সব ভেস্তে গেলো।

এক দমে কথাগুলে বলে বললেন তিনি।সকলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মানুষ কতটা নোংরা হলে এসব ভাবতে পারে ভেবেই গা গুলাচ্ছে সিরাতের।আবেশের বাবা শুধু নিজের বোনের দিকে স্থির চাহনী নিক্ষেপ করে আছে।এটা তার বোন।হ্যাঁ যখন ওর ঘটনাটা ঘটে তখন সবাই রেগে ছিলো এটাই স্বাভাবিক কিন্ত এত বছর পর নিজের ভুল নয় বুঝে প্রতিশোধের নেশায় এমনটা করতে পারলো।মানুষ ঠিকই বলে,কয়লা ধুলে কখনও ময়লা যায় না।

আরো বড় করে দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু লিখতে গিয়ে সেই ইচ্ছা মরে গেছে।আগামীকাল চেষ্টা করব বড় করে দেওয়ার।সরি দুদিন গল্প না দেওয়ার জন্য।হ্যাপি রিডিং
#তুমি_আমার
#লেখনীতে_নাজিফা_সিরাত
#অন্তিম_পর্ব

সিয়ামের সামনে থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া।মূলত সিয়াম এসেছে বোনের রিসেপশনে।এতকিছুর পরও রিসেপশন হচ্ছে।অশনি আর ওর মাকে চুড়ান্ত অপমান করে বাসা থেকে বের হতে বাধ্য করেছে।অশনি নিজের ভালোবাসার কথা আবেশকে জানালে সে আরও ক্ষেপে যায়।কষিসে থাপ্পড় মারে তার ধবধবে ফর্সা গালে।কয়েকটি কথা শুনিয়ে সিরাতকে ভালোবাসে জানিয়ে তাড়িয়ে দেয়।আর কখনও যেন খান বাড়িতে পা না রাখে সেই ওয়ার্নিং দিয়ে দেন মিঃ খান।মা মেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গেছে।সিয়ামকে আজ মনের কথা জানাবে রিয়া তাই সে বাগানে সিয়ামকে নিয়ে এসেছে।কিন্তু কীভাবে শুরু করবে বুঝতে অক্ষম।তবুও নিজের সকল জড়তা কাটিয়ে সরাসরি বলল,

‘আমি জানি আপনার ভগ্ন মন অশান্ত হৃদয় এলোমেলো জীবন।এই এলোমেলোে জীবনকে গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে চাই।দেবেন সেই অধিকার আমায়’।

সিয়াম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রিয়ার পানে।জীবনে দ্বিতীয় কাউকে লাগবে তার।একা একা তো আর জীবন পার করা যায় না।মন না চাইলেও ফ্যামিলির চাপেও সেটা করতে হবে।তবে সেটা রিয়া হলে খারাপ নয় আবার ভালও নয়।কারণ বোনের বন্ধুকে জীবন সাথী হিসেবে সিলেক্ট করলে পাঁচজন পাঁচটা কথা বলবে।হালকা কেশে সিয়াম বলল,

‘দেখ রিয়া তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী।মিষ্টি আর ঝগড়ুটে একটা মেয়ে।।সবদিক বিচার করার ক্ষমতা তোমার মধ্যে আছে।আমি জানি কারোর জন্য জীবন থেমে থাকে না।আমার জীবনও থেমে থাকবে না ইভেন আমিও সেটা চাই না।তবে সবদিক ভাব আমাদের সম্পর্কে জানলে লোকে কি বলবে একবারও ভেবেছো সেটা’।

‘অনেক ভেবেছি।কিন্তু কিছু যায় আসে না আমার।কারণ লোকের কথার মূল্যের চেয়ে আমার অনুভূতি গুলোর মূল্য আমার কাছে বেশি’।সিয়াম যেন থম মেরে গেলো।মানে রিয়া নামক ঝগড়াটে মেয়েটা ভালোবাসে তাঁকে।ফিচেল হেসে বললো,

‘আমি তো তেমাকে ভালোবাসি না।তাহলে সব জেনে পারবে আমার সাথে থাকতে।আর যদি কখনও ভালোবাসাও ন। জন্মায় তখন আক্ষেপ হবে না’?

‘ হুম এটা মানতে কষ্ট হলেও সত্যি আপনি আমাকে চান না।কিন্তু আমি চাই আপনাকে।আমাকে আপনার ভালোবাসতে হবে না।আমার ভালোবাসা দিয়ে যদি পারি আপনার মনে সামান্য জায়গা করে নিতে পারি তাতেই ধন্য।আর যদি না পারি তাহলে ভাববে আমার ভালোবাসা ভুল।শুধু আমার পাশে থাকবেন এটাই চাওয়া’।সিয়াম আর কিছু বলার মতত খুঁজে পেলো না।রিয়াকে অপছন্দ এটাও নয় তার।হয়তো কোথাও ভালো লাগাও আছে।কারণ মেয়েটার সাথে ঝগড়া করতে বেশ লাগে তার।রিয়া অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে হ্যাঁ শোনার অপেক্ষায়।সিয়াম কি করবে সংশয় সংকোচে ভুগছে।কাছে টানবে কি করে আর দূরেই বা ঠেলে দিবে কি করে।রিয়া যা বুঝার বুঝে গেছে তাই মুখ কালো চলে যাচ্ছে।ও যেতে নিলে সিয়াম বলল,

‘এত ধৈর্য ধরে আমার সাথে থাকতে পারবে অথচ আমার উওর শুনার ধৈর্য টুকু নেই স্ট্রেঞ্জ’।অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো রিয়া।সিয়াম দু কদম এগিয়ে একদম মুখোমুখি দাঁড়ালো তার।দু হাতে চোখ মুখে জড়তা কাটিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো তাকে।আজকে রিয়ার খুব খুশি।আবেগ আপ্লুত হয়ে সেও শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো তাকে।লোকটা মেনে নিয়েছি এতেই সুখী সে।সিয়াম বলল,

‘হয়তো তোমাকে তোমার মত করে ভালোবাসতে পারব না।তবে সব সময় তোমার পাশে থাকব কথা দিলাম।সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবো।তোমাকে তোমার যোগ্য সম্মান দিব’।
❤️❤️❤️

নিজের রুমে সাজতে এসেছে আরু।আজ ওর ভাইয়ের রিসেপশন।সেটায় সাজতে হবে না।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই একটি বক্স দেখে ভ্রু কুচকালো সে।সকালে রাদিফের দেওয়া জিনিসটার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো ।অবশ্য না ভুলেও উপায় নেই যা যা হলো আজ।জিনিসটা দেখা মাএই খুলার আগ্রহ জাগলো মনে।তাড়াতাড়ি করে রঙিন কাগজ ছাড়িয়ে নিলো সে।ভিতরে একটি কাগজের বক্স সেটার ঢাকনা তুলে তার চোখ ছানাবড়া।ভিতরে রয়েছে জলপাই রঙের একটি শাড়ি।সাথে কিছু অর্নামেন্টস তার পাশে একটি হীরের আংটি।একটি বেলি ফুলের গাজরা।তার পাশে ভাঁজ করা একটি কাগজ।চিরকুট জাতীয় কিছু বুঝাই যাচ্ছে।আরু হতভম্ব রাদিফ এগুলো তাকে দিলো কেন এগুলো তো সে তার গার্লফেন্ডের জন্য কিনেছিলো তাহলে এখানে কেন?ওর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে চিরকুটটি হাতে নিলো সে।দেরি না করে চট করে পড়তে লাগলো।

মায়াবিনী আমার মায়াবিনী।তোমাকে প্রিয় বলে সম্বোধন করার অধিকার হয়তো আমার নেই তাই সম্বোধন ছাড়াই লিখলাম।কিন্তু তুমি মানো আর নাই বা মানো তুমিই আমার মায়াবীনী।জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের প্রতি নেশাক্ত হয়েছিলাম আকৃষ্ট হয়েছি নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছি।কিন্তু আগলে রাখতে পারিনি নিজের বাসভূমি ছেড়ে তার জন্য দেশে সেটেল্ডও হতে চেয়েছি কিন্তু তোমাকে পাই নি।তুমি ডায়রির একটা পৃষ্ঠা দেখেই সবকিছু বিচার করে নিয়েছো অথচ ভালোবাসায় ভরপুর অপর পৃষ্ঠাটি দেখেও দেখ নি বিশ্বাস করো নি।কি করেই বা করবে কারণ তুমি তো আমাকে নও অন্য একজনকে ভালোবাসো।যদি আমায় ভালো বাসতে আমাতে আবদ্ধ হতো তাহলে দেখতে এই চোখে তোমার জন্য কতটা ভালোবাসা লুকায়িত। তোমাকে পাওয়ার জন্য কত কাতরতা।যাইহোক এই জিনিসগুলো তোমার জন্য কিনেছিলাম তোমার পছন্দে।চেয়েছিলাম যেদিন তোমায় ভালোবাসি বলবো তারপরে তোমায় এই সাজে সাজিয়ে দেখবো আমি।দুচোখ ভরে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটাব।কিন্তু আপসোস সেই ভাগ্য নিয়ে আমি জন্মাই নি।আমার ভালোবাসার মানুষগুলো কখনই আমার কাছে বেশিদিন স্থায়ী হয় না।তুমিও স্থায়ী হলে না চলে গেলে এতে আমার কোনো দুঃখ নেই কারণ এটাই আমার নিয়তি।এতে তোমার উপর আমার কোনো রাগ ক্ষোভ অভিযোগ নেই।একটাই অনুরোধ পারলে কখনও এগুলো একবার পরে দেখো হ্যাঁ এই রূপে তোমায় দেখতে পারব না।তবুও একবার পরও প্লিজ!ভালো থেকো নতুন জীবনের জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে শুভ কামনা।আর কোনোদিন সরাসরি দেখা হবে না।তাই তোমার অগোচরে কয়েকটা পিক তুলে নিয়েছি।আর সকালে তোমার অনুমতি ব্যাতীত তোমাকে ছুঁয়েছি তার জন্য ক্ষমা করো।ওই পিক গুলো কখনও আমি ডিলিট দিতে পারব না।তুমি রাগ করলেও না।কারণ এই পিকচার গুলোই আমার বাচাঁর আগামী দিনের ভরসা।ভালো থেকো।

মুখে মাস্ক কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সিটে ঝুঁকে বসে দু হাতে মুখে দিয়ে এয়্যারপোর্টে বসে আছে রাদিফ।পরনে ফরমাল ড্রেস হাতে মোটা কালো হাত ঘড়ি।সামনেই রয়েছে একটি ট্রলি ব্যাগ।চোখে মুখে বিষন্নতার চাপ।আজ নিজের দেশ ছাড়বে সে সারাজীবনের মত।আপাদত এই দেশে পা রাখার বিন্দুমাএ ইচ্ছাটুকু নেই তার।কেন ফিরবে কার জন্য ফিরবে সে।ফিরে আসার মতো কেউ নেই তার।যে আছে সে একমাএ খালামনি।মানুষ টা মায়ের মতনই তার কাছে।কিন্তু আজ সে স্বার্থপর হয়েছে তার স্নেহ মমতাকে পায়ে ঠেলে একটা মেয়ের জন্য সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছে।যার কোনো ক্ষমা নেই,হয় না।আজ আবারও প্রমাণ হলো,পরের সন্তান কখনও নিজের হয় না।যতই মায়ের মত আদর ভালোবাসা দিক না কেনো দিন শেষে নিজের সন্তান নিজেরই আর পরের সন্তান পরেরই।তাই তো রাদিফও ওই অর্ধ বয়স্ক মহিলার সকল ভালোবাসা চোখের জলকে উপেক্ষা করে ভীন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে।রাদিফ হাসছে তাচ্ছিল্যের হাসি।সত্যিই কারো ভালোবাসার দাম দিতে পারলো না সে।কাউকে প্রিয় করে আগলে রাখতে পারল না আজ বড়ই ব্যর্থ সে।আজ আরোহীকে যদি সঠিকভাবে আগলে রাখতে পারতো তাহলে ওকে ভালো থাকার তাগিদে দেশ ছাড়তে হতো না।হঠাৎ একজোড়া পা দেখে থমকে তাকালো রাদিফ।হাঁটুর নিচ অবধি দেখা যাচ্ছে তার।অবয়ব দেখে স্পষ্ট এটি একটি মেয়ে পরনে শাড়ি তার কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।মেয়েটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।রাদিফ চোখ তুলে তাকালো তাঁর দিকে।আরোহী কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ও তো জানে না আমি কোথায় যাচ্ছি।এটা নিশ্চয় তার হ্যালুশুলোশন।তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো সে।আরোহীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালো।ওর দেওয়া শাড়িটা জড়ানো গায়ে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক।হাতে ম্যাচিং চুড়ি।খোপায় বেলি ফুলের গাজরা।ওর দেওয়া সবগুলো জিনিসই পরে আছে সে।রাদিফ তৃপ্তির হাসি হাসলো।সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,

‘এই রূপটা দেখার বড় আফসোস ছিল আমার সেই আফসোস টাও আজ পূর্ণ করে দেশ ছাড়ছি।আর কোনো দুঃখ নেই আমার।হোক না আমার ভ্রম তবুও তোমায় দেখতে পারছি এটাই অনেক’।এরইমধ্যে একটি সুরেলা কন্ঠ ভেসে উঠলো এয়্যারপোর্টে।রাদিফ চোখ খুলে ট্রলি হাতে ধরে আবারও তাকে দেখলো মেয়েটা গেলো না।এভাবে স্বপ্নে এসে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।তাই আবার বললো,

‘এক দেখায় এক বছর স্বস্তি দাওনি।ঘুম হারাম করে দিয়েছিলে এবার বুঝি সারাজীবন নির্ঘুম রাখার প্ল্যান করছো।যাওয়ার সময় এতটা কষ্ট দিও না সহ্য করতে পারব না তোমার কাছে থাকার বড্ড লোভ হয়’।আর এক মূহুর্তও দাঁড়ালো না রাদিফ।চোখের পানিটুকু মুছে সামনে পা বাড়ালো।পেছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল,

‘তাহলে থাকছেন না কেন?এভাবে আমাকে একা ফেলে কোথায় যাচ্ছেন’?রাদিফ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।এই মেয়েলি কন্ঠস্বর।আরোহী তবে কি ও সত্যি এসেছে নাকি শুধু তার ভ্রম।ওকে ছাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালো রাদিফ।আরু মিটিমিটি হাসছে।রাদিফ বুঝতে পারলো এটা তার ভ্রম নয় সত্যি।রাদিফ নিজেকে ধাতস্থ করে মাথা চুলকে ফিচেল হেসে বলল,

‘বিদায় বেলা অহেতুক ইমোশন বাড়িয়ে দিও না।অসংখ্য ধন্যবাদ এই সাজে আমার সামনে আসার জন্য।আসছি লেইট হচ্ছে’।রাদিফের আর এক মূহুর্তও দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই।এই মেয়েটাকে দেখলে আর ঠিক থাকতে পারে না সে।পাগল হয়ে যায়।শুধু তাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ঘিরে ধরে তাকে।নিজের ইমোশন বুকের চাপা কান্না আর্তনাদ কে পাওা না দিয়ে সামনে এগুচ্ছে সে।পেছনে তার সেই প্রিয়তমা আর সামনে আছে ইমিগ্রেশন এটা হয়ে গেলেই বিদায় তার।আরোহী দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ওর বুকে হামলে পরলো।কান্নাভেজা গলায় বলল,

‘এভাবে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ আমি মরে যাব’।আরুর কথা শুনে স্তব্ধ রাদিফ। মেয়েটা এভাবে কথা বলে কি মায়ার জালে ফাসিয়ে কোনোভাবে ওকে আটকাতে চাইছে।রাদিফ বলল,

‘প্লিজ আরোহী ছাড়।আমার লেইট হচ্ছে এসব কথা বলে আমার সময় নষ্ট করো না।তাছাড়া তুমি তো জানো আমি তোমায় চাই তাই রিকুয়েস্ট এসব করে আমাকে দুর্বল কর না’।

‘আপনি কি জানেন আমি আপনাকে কতটা চাই।এগুলো বলে দুর্বল করার আমার কোনো মনও বাসনা নেই।আমি থাকতে চাই রাদিফ আপনার সাথে থাকতে চাই।আপনাকে নিয়ে বাঁচতে চাই’।

রাদিফ ওর মুখটি দুহাতে আঁচলা করে ধরে উপরে তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কিন্তু তোমার বয়ফ্রেন্ড?সে কি এসব মেনে নিবে?তাছাড়া আমি কারোর দয়া নিতে রাজি নই আরোহী’।

‘আমি আপনাকে দয়া করছি না রাদিফ।আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি।আপনিই আমার বয়ফ্রেন্ড।আমার জীবনে আর কেউ নেই।হসপিটালে প্রথম দেখায় আপনাকে ভালো লেগেছিল।সেদিন আমি আপনার কথা বলেছিলাম এবং আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন শুনে মন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল তাই পরে আপনার কথাগুলো বিশ্বাস করিনি।আপনাকে ফিরিয়ে দিয়ে যতটা কষ্ট দিয়েছি তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি কষ্ট আমি ভোগ করেছি।আজ সন্ধ্যায় তিন্নি ভাবি সবটা জানায় আমায় তখন জানতে পারি আপনি আমায় ভালোবাসেন।শুরু থেকে সবটা।এখন আমার উপর রাগ করে দেশ ছাড়ছেন।বিশ্বাস করুন তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল ভেবেছিলাম একটা ভুলে সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি তাই ছুটে চলে এসেছি।রাদিফ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না প্লিজ’।দুজনের চোখে জলে টুইটুম্বুর।মুখে খুশির এক চিলতে হাসি।রাদিফ কপালে চুমো এঁকে শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিলো।আজ ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।দুটি অবুঝ মন এক হয়ে নীড়ে ফিরবে।এতদিনের অপেক্ষার প্রহর এবার শেষ হলো।এই মেয়েটাকে ছেড়ে যাওয়ার সাধ্য নেই তার।যখন জানে মেয়েটাও ভালোবাসে তাকে।

🥀🥀🥀

ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে আছে সিরাত।পরনে তার আবেশের দেওয়া জর্জেট শাড়ি।যেটা সে আবিদের বিয়ের সময় কিনেছিলো।কিন্তু তখন সময় অন্যরকম হওয়ায় তাকে দিতে পারে নি।পুরো রুম খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।চারিদিকে গোলাপ আর রজনীগন্ধা দ্বারা আবৃত হয়েছে।গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বিছানা এবং মেঝেতে বড় দুটি লাভশেপ আঁকা।আজ সবচেয়ে সুন্দরতম দিন দুজনার।সিরাতকে রিসেপশনের পোশাক পাল্টে ওর হাতে শাড়ি ধরিয়ে একটা কাজে গেছে।খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে বলে জানিয়ে গেছে সে।কিন্তু এখনও ফিরার নাম গন্ধ নেই।এবার রাগ লাগছে সিরাতের।এতদিন দূরে থেকেছে বলে বিরহের শেষ ছিল না তার।আর এখন যখন একদম কাছাকাছি থাকতে পারবে তখনই সে দূরে।বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে গেলো তার।কিন্তু আকাশের চাঁদটাকে দেখে আবার খুশিও হয়ে গেলো।একধ্যানে তাকিয়ে রইলো আকাশ পানে।হঠাৎ কাধে কারো উষ্ণ নিঃশ্বাস পেয়ে কেঁপে উঠলো। বুঝতে বাকী নেই পেছনের মানুষটা কে হতে পারে।চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সে।আবেশ দুহাতে পেট জড়িয়ে শক্ত করে ধরলো ওকে।সিরাতের হাত পা যেন অচল হয়ে যাচ্ছে।হাত ছাড়াতে চাইছে কিন্তু আবেশ নাছোড়বান্দা এক তিল পরিমাণও ছাড়বে না।ফিসফিস করে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,

‘এত মোচড়া মোচড়ি করে কোনো লাভ নেই।আজ নো ছাড়াছাড়ি।আজকের রাত শুধু আমাদের’।সিরাত জানে আজ ওর নিস্তার নেই।সেটা ভেবেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার।আবেশ ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ললাটে চুমো একে পকেট থেকে একটি ব্রেসলেট বের করে পরিয়ে দিলো তার হাতে।সেখানে অঙ্কিত আবেশ সিরাতের নামের অক্ষর।এটা আনতেই গিয়েছিলো সে।সিরাত আবেশের দিকে তাকিয়ে রইলো খানিক্ষণ।শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে।আবেশ প্রশ্ন করলো,

‘সবাই আমাকে অবিশ্বাস করলো কিন্তু তুমি করলে না কেন সিরাত?যেই তুমি।কাঁজলের সাথে এতটুকু দেখে আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলে সেই তুমি আজ কীভাবে বিশ্বাস রাখলে’?সিরাত ওকে ছেড়ে চোখে চোখ রেখে বলল,

‘তখন আপনার আমার সম্পর্কটাও আজকের মত ছিল না।তখন কেউ কারো মনের কথা জানতাম না।তাই নিজের মনগড়া কাহিনী বানিয়ে নিয়েছি কিন্তু এখন জানি আমি ছাড়া আপনার জীবনে কেউ নেই।কাউকে ছুঁতে পারেন না আপনি।এটা আমার বিশ্বাস।পবিএ সম্পর্ক গুলোর হয়তো এটা জোর।তাছাড়া বিশ্বাস ছাড়া সম্পর্ক টিকে না।যেকোনো সম্পর্কের মূল ভিওি হলো বিশ্বাস।আর আমি জানতাম আপনি কখনও বিশ্বাস ভাঙ্গবেন না আমার’।

সিরাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আবেশ।সিরাতও জড়িয়ে ধরলো তাকে।অনেক্ষণ এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর আবেশ আর সিরাত মিলে নামায পড়ে নিল।আবারও ব্যালকোনিতে দাঁড়ালো সিরাত।আজ ভীষণ লজ্জা লাগছে ওর।শাড়ির আচলটা সামনে টেনে দাঁড়ালো।আবেশ একদম ওর সামনাসামনি দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখের পলকই ফেলছে না।এবার সিরাতের অস্বস্তি হচ্ছে।পালানোর ফন্দি আঁটছে মনে মনে।যেই পালাতে যাবে অমনি হাত ধরে নিলো আবেশ।রিনরিনিয়ে বলল,

‘আমাকে পাগল বানিয়ে এখন কোথায় পালাচ্ছ।একদম পালানোর রাস্তা পাবে না।আমার পাগলামিতে তোমাকেও পাগল করে তুলব’।আবেশ দুষ্ট হেসে কথাগুলো বলতেই লজ্জায় লাল হয়ে ওর বুকে মুখ লুকালো সিরাত।আবেশ চুলের ভাঁজে বিলি কাটতে কাটতে বলল,

‘অনেক চড়াই উওরাই পার করে অবশেষে #তুমি_আমার।পরিপূর্ণ আমার’।দুটি প্রাণ হাসছে আজ প্রাণ খোলা হাসি।সুখ দুঃখের সময় অতিবাহিত করে আজ এক হয়েছে তাঁরা।সুখ আর স্বপ্ন কোনোকিছুরই খামতি নেই।আছে শুধু পরিপূর্ণতা।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here