#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ০২
#Mitu-মিতু
এক বিঘার ওপর নির্মিত রসুলপুরের চেয়ারম্যান বাড়ি সৌন্দর্যতায় ভরা।ছাদসহ একতলা বাড়িটির ভেতরে বিশাল বৈঠকখানা।বৈঠকখানার একপাশে খাওয়া দাওয়ার জন্য চেয়ার টেবিল পাতানো আছে। সেখানেই বাবা-মায়ের সাথে বসে খাবার খাচ্ছে তাশরিফ আর তানিয়া।
সাহেরার বিষয়ে কি ভাবলেন…মেয়েটা এমন চুপচাপ থাকলে তো গুমরে মরে যাবে…
মুর্শিদা কথাটা বলে মতিন সাহেবের দিকে তাকালেন। মেয়ে থেকে আলাদা হওয়া বেশকিছু দিন হয়ে গেছে সাহেরার।মেয়ে শোকে তাকে দেখলে মনে হয় সে জীবন্ত লাশ।প্রথম কতদিন পাগলামি করলেও সে বুঝে গেছে পাগলামি করে আর লাভ হবে না।মেয়ে পাগল মজিদ মেয়ে ছাড়বেন না।সাহেরার সকল খেয়াল বর্তমানে মুর্শিদা ই রাখেন।সাহেরা ঘরের ভেতরেই থাকেন চুপচাপ সবসময়।কথা বার্তা নেই বললেই চলে। বোনের চিন্তায় মতিন সাহেব ও ভালো নেই। স্ত্রীর প্রশ্নে বললেন
আর কিছুদিন দেখি। তোমরা ওকে একা রেখো না।যতক্ষণ পারো ওর পাশেই থেকো আমার বোনটা তার কলিজার টুকরা মেয়েকে না পেয়ে যে কষ্ট পাচ্ছে আমি তা বুঝি। গেছিলাম তো রিশাকে আনতে কিন্তু মজিদ দিতে রাজি না।
তাসরিফ,,তানিয়া চুপচাপ খাবার খাচ্ছিলো আর বাবা-মায়ের কথা শুনছিলো। তাসরিফ এবার ক্লাস সেভেনে আর তানিয়া ক্লাস ফোরে পড়ে।
আব্বু ফুপির ঐ পুতুল মেয়েকে এখানে এনে দেও না। আমরা ওকে খুব আদর করে রাখবো।
বোনের কথায় তাসরিফ ওর দিকে তাকালো।তাসরিফ ছোট থেকেই শান্ত শিষ্ট আর এই বয়সেই একটু গম্ভীর স্বভাবে সাথে রাগ ও আছে প্রচুর। রিশার কথা তাসরিফের ও মনে আছে। তার ফুপি যখন তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো তখন রিশা তানিয়ার সাথে খেলতো।মাঝেমধ্যে তাসরিফ কোলে নিয়ে ঘুরতো বাড়ির চারপাশে।
এখানে আনতে তো চাই রে মা কিন্তু পথ পাচ্ছি না কিভাবে আনবো।বিচার সভায় মেয়ে দুজনের কাছে ভাগাভাগি হলেও মজিদ রিশাকে দিতে রাজি না। বলে উঠে দাড়ালেন।মতিন সাহেব।
খাওয়া দাওয়া শেষে তাসরিফ আর তানিয়া চলে গেলো তাদের স্কুলে।চেয়ারম্যান সাহেব গেলেন ইউনিয়ন পরিষদে। চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ সম্মানিত তিনি রসুলপুর গ্রামে।
মজিদ মিঞার বাড়ির উঠানে রিশা খেলছে মাটির খেলনা নিয়ে। সেদিনের পর দুমাস পার হয়ে গেছে। মজিদ মিঞা সেদিনের পর থেকে যতক্ষণ পারেন মেয়েকে নিজের সাথেই রাখেন। মজিদের ভালোবাসায় আর আদুরে কথায় রিশা এখন তেমন কান্না-কাটি করে না মায়ের জন্য। তবুও মাঝেমধ্যে মনে পরলে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য জিদ ধরে।
মজিদ গরু আনতে মাঠে গেছিলো রিশাকে রেখে।বাবাকে দেখে মন মরা হয়ে রিশা বললো
ও বাবা তুমি কোথায় গেছিলো আমাকে রেখে আমার একা একা ভালো লাগে না।
আম্মা আমি গরু আনতে গেছিলাম।
আমার ক্ষুধা লেগেছে বাবা।আমি ভাত খাবো।
সেলিনা ঐ সেলিনা
মজিদ মিঞার ডাকে সেলিনা বেগম ঘর থেকে বাইরে আসলেন।এতক্ষণ তিনি শুয়ে থেকে বাবা-মেয়ের কথা শুনছিলেন আর ভাবছিলেন কিভাবে বাবা-মেয়েকে আলাদা করা যায়। সেদিনের মজিদের মাইরের কথা এখনো মনে রেখেছে।ভয় পেলেও মজিদ না থাকলে ঠিকই ছোট রিশাকে কষ্ট দেয় এখনো।এই যেমন ঠিকমতো খেতে দেয় না রিশাকে।মজিদ থাকলে তখন ভেজা বিড়াল হয়ে থাকে ভয়ে
এমনভাবে চিল্লাচ্ছেন কেনো ভর দুপুরে।
তোকে আমি বলে গেছিলাম আমার আম্মাকে ভাত খাওয়ানোর কথা। ভাত না দিয়ে তুই কি করলি ঘরের মধ্যে। সেলিনার কথায় উত্তর দিলেন মজিদ।
আপনের মেয়ে আমার হাতে খাবেনা বলেছে।
তুই আমার আম্মারে খাওয়ার কথা বলিসনি।আর যেনো এমন না হয়।আমার আম্মাকে ভুলেও আবার কোনো সময় কষ্ট দিলে আমি কিন্তু আর সহ্য করবো না।তোকে তালাক দিতেও আমার ভয় নাই বলে রাখলাম।
কথাটা বলে মজিদ রিশাকে নিয়ে গোসলখানায় গেলেন। গোসল শেষে বাবা-মেয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ভাত ঘুম দেওয়ার জন্য শোয়ার ঘরে গেলেন।
মজিদের কথায় রান্নাঘরের চৌকাঠে বসে সেলিনা বেগম রাগে ফুঁসছেন। ভর দুপুরে পাশের বাড়ির কালামের মা মজিদের বাড়ি আসে খাওয়ার পানি নিতে। মহিলা কুবুদ্ধিতে পারদর্শী। সেলিনা বেগমকে ঘরের চৌকাঠে বসে থাকতে দেখে বললো
কি গো মাইয়া মুখখানা ওমন পাতিলের কালির মতো কইরা রাখছো ক্যান..?
আমার পোড়া কপাল গো বুবু। কোথায় শান্তিতে সংসার করবো সেখানে আপনের ভাই আমায় তালাক দেওয়ার কথা বলে। ঐ মেয়ের জন্য আমায় সংসার থেকে তাড়ানোর ভয় দেখায়। আমিও দেখবো মেয়ে কতদিন থাকে এখানে। মুখ শক্ত করে কথাটা বললেো সেলিনা
হুনো বইন একখান বুদ্ধি দেই। মজিদ রে যেভাবে পারো তুমি তুমার বশ কইরা ফালাও। তুমি একখান বাচ্চা লও। অন্যের মেয়েরে নিয়ে আদিখ্যেতা ভালো না। এখন তুমার সংসার তুমি শক্ত করো।
উনি তো আমার কথাই শোনে না।বশ করবো কিভাবে। সেদিন বাচ্চার কথা বলার পর উনি রেগে গেছিলেন।
সেলিনার উত্তরে কালামের মা বললেন
এই আনন্দপুরেই এক কবিরাজ আছে আমার পরিচিত । মানুষ বশ করার ওষুধ দেয় তুমি যদি যাইবার চাও তয় আমি লইয়া যামুনে।
কালামের মায়ের ফিসফিসানি কথায় সেলিনার চোখ মুখ চকচক করে উঠলো।
সত্যি বুবু..! বশ করা যায় কি..? আমি এই সংসার ছেড়ে যাবো না বিনিময়ে যা করতে হয় করবো।
সেলিনার খুশি হওয়া দেখে কালামের মা হাসলেন। বললেন
যদি যাও তয় কাইল সক্কাল সক্কাল ডুব দিবা। দিয়ে নতুন জামাকাপড় পরবা। কবিরাজ পরিষ্কার সবকিছু পছন্দ করে।
আচ্ছা বুবু।
কালামের মা পানি নিয়ে চলে গেলেন বাড়িতে। সেলিনা বেগম মনে মনে ভাবছেন এবার আমার সংসারে আমি কোনো আপদ রাখবো না। সতিনের মেয়ে আমার সংসারে থেকে অন্ন ধ্বংস করবে তা আমি মানবো না। সেলিনা বেগম খুশী মনে বাকি সময় টুকু পার করলেন।
পরের দিন সকাল,,,
সকালে ঘুম থেকে উঠে সেলিনা গোসল করে নতুন একটা শাড়ি পড়লেন। কাল রাতের বেচে যাওয়া ভাত রেখে দিয়েছিলেন আজকে সকালের জন্য। সকালে রান্না না করে কবিরাজ বাড়ি যাবেন দুপুরে এসে রান্না করবেন বলে ভেবে রেখেছেন।
ও বুবু উঠছো..?
কালামের মায়ের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলো সেলিনা।
থাম রো ছেড়ি।আমি আইতাছি…..ঘরের দরজা খুলে বের হয়ে আসলো কালামের মা।
এখন চলো যাই।তোমার ভাই এখানো ঘুমিয়ে আছে। উনি উঠার আগেই বাড়ি থেকে বের হওয়া লাগবি…..বলে উঠলো সেলিনা বেগম।
থাম আমি হাত মুখখানা ধুইয়া আসি।
কালামের মা আর সেলিনা বেগম কবিরাজের বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে লাগলেন। কিছু সময় পরই তারা পৌছে গেলো কবিরাজ বাড়ি।
আসসালামু আলাইকুম কবিরাজ ভাই।
ওয়ালাইকুম আসসালাম। কালামের মা কি খবর তোমার…?
আমার খবর ভালোই ভাই তয় একখান কাজে আইছি আপনের কাছে
কি কাজ কও শুনি
আমার পাশের বাড়ির মজিদের বউ আইছে আমার সাথে। মজিদ বউরে তালাক দেওয়ার কথা কয় বউ কিছু কইলে রাগ দেহায়।আগের পক্ষের মাইয়ারে লইয়া থাকে। নতুন বউরে বাচ্চা লিবার দিতে চায় না।যদি আপনে কিছু কইরা দিতেন….কালামের মা মন খারাপ করে কথাটা বললেন।
আমার একটা ব্যবস্থা করে দেন কবিরাজ ভাই। আমি শান্তিতে সংসার করতে চাই… উনি মেয়ে নিয়ে থাকলে আমার সংসার হবে না।আপনি কিছু করেন যাতে উনি আমার সব কথা শুনে
সেলিনা বেগমের কথায় কবিরাজ বললেন
আচ্ছা থামো একটা গাছালি ওষুধ দিই তোমায়।এটা তুমি পাটায় পিসে খাবারের সাথে মিশায় মজিদ রে খাওয়াবে তিনবার। আশা করি কাজ হয়ে যাবে।আর তুমি একটু বুদ্ধি করে মজিদের সাথে আজকে মিলিত হও।একটা বাচ্চা হলে সমাধান হয়ে যাবি।
খুশি মনে ওষুধ নিয়ে সেলিনা আর কালামের মা বাড়ি আসলেন।