তুমি আমার প্রাণ পর্ব -২১

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ২১
#Mitu-মিতু

সব সম্পর্কই ভালোবাসা নয়।ভালোবাসা একটু উচ্চস্তরের জিনিস। ভালোবাসা কখনোই উপস্থিতি -অনুপস্থিতি,,চাওয়া -পাওয়ার ওপর নির্ভর করে না।হৃদয়ের এক শুদ্ধ অনুভূতি হলো ভালোবাসা। ভালোবাসা এক ছোঁয়াচে রোগের মতো,,কেউ ভালোবেসে কাউকে ছুয়ে দিলে সেটা ঐ ব্যক্তির হৃদয় নাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাসরিফের এতো এতো আবেগময় কথা রিশার হৃদয় ছুয়ে যায়।সে তাসরিফের প্রেমময় বাক্যে সুখ খুজে পায় এখন। ভাবনায় যখন তাসরিফের দেখা মেলে তখন সে লাজে রাঙা ফুল হয়ে ওঠে। রিশার বুক ধুকপুক করছে। সামনাসামনি তাসরিফের চোখে সে চোখ রাখতে পারবে তো।

______________

রাত ১২ঃ৪৫

তাসরিফ রসুলপুর গ্রামের পাশে যে বাসস্ট্যান্ডে আছে সেখানে এসে পৌছালো।সারাদিন ডিউটির পর বিশ্রাম না নিয়ে আবার একটানা তিনঘণ্টা জার্নিতে তার শরীর ম্যাজম্যাজ করছে তবুও তার হৃদয় ব্যাকুল। কতদিন পর মনোহারিণীকে দেখবে। তাও হলদিয়া পাখির সাজে। ভিডিও কলে প্রেয়সীর হাতে চুড়ি না দেখে তাসরিফের মনে হয়েছিলো হাতে চুড়ি বেশ মানাবে। কোয়ার্টার থেকে বাসস্ট্যান্ডে আসার আগে তাসরিফ কসমেটিকস এর দোকানে যায়। সাজিয়ে রাখা চুড়ি দেখে মন বলে কোনটা রেখে কোনটা নেবে। হলুদ,, লাল সহ অন্যান্য কালার মিলিয়ে মোট বারো ডজন চুড়ি সে নেয়। দোকানের সেলস গার্ল চুড়ি নেওয়া দেখে তাসরিফ কে বললো

“স্যার ম্যামের জন্য চুড়ির সাথে আলতা নিতে পারেন।”

“ধন্যবাদ! আপনি তাহলে আলতাও দেন”

খুশিমনে জিনিসগুলো নিয়ে তাসরিফ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিজ গন্তব্যের কাছাকাছি পৌছেছে। স্ট্যান্ড থেকে রসুলপুর চেয়ারম্যান বাড়ি কাছে হলেও হাটতে গেলে অনেকটা পথ।সেখান থেকে একটা ভ্যানগাড়ি ভাড়া করে সে লাইটিং দিয়ে আলোকিত করা চেয়ারম্যান বাড়ির দোরগোড়ায় এসে পৌঁছে। ভাড়া চুকিয়ে সে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলো না। বিয়ে বাড়ি মানেই আত্নীয়ের সমাগম। প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে “আমার প্রাণ” দিয়ে সেভ করা নাম্বারটায় ডায়াল করলো।

______________

অপেক্ষা বড় অদ্ভুদ এক শব্দ। অপেক্ষার সময় যেনো কাটতেই চায় না। রিশা তাসরিফের কথা অনুযায়ী শাড়ি খোলেনি। বিছানায় শুয়ে পরলে শাড়ির ভাজ নষ্ট হবে সেই আশঙ্কায় আর বিছানার পাশে গেলো না। পড়ার টেবিলের সামনে রাখা চেয়ার টেনে তাতে বসে ফোনে গেম খেলছিলো। গায়ে হলুদের জন্য সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত সে ছাদে ছিলো বিধায় তাসরিফের সাথে এতক্ষণ কথা হয়নি। তাসরিফ জানে সে বিষয় তাই আর জোর করেনি।সে ব্যাকুলতা চেপে রেখেছে নিজের মাঝে। প্রেয়সীকে সামনে থেকে দেখার আগে এটুকু ধৈর্যের পরিক্ষা সব প্রেমিকের জন্য অনিবার্য। “তাসরিফ ভাই” দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে আসা কল দেখে রিশা শিহরিত হলো। মন বললো

“সে এসে গেছে। পৌছে গেছে। এখন আমি তার সামনে দাঁড়াবো কি করে? ”

অস্থিরতায় কাঁপা-কাঁপি এক স্বাভাবিক বিষয়। সেই স্বাভাবিক বিষয় রিশার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে। কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো রিশা

“পুতুল আমি এখন বাড়িতে ঢুকবো না। তুই চুপিচুপি বাইরে আয়।সাবধানে আসবি।ভয় পাস না,,আমি গেটের সামনেই আছি। ”

“বাইরে কেনো ভাইয়া? আর তুমি বাড়ি আসবে না মানে? এসো ভেতরে,,মামা-মামী এখনো জেগে আছে। ”

“তোকে যেটা বললাম সেটা কর আগে। তাড়াতাড়ি বের হ। কেউ যেনো না দেখে।”

রিশা বোকার মতো ফোন ধরে বসে আছে। বাড়িতে না এসে তাকে বাইরে ডাকছে কেনো? রিশার আসতে দেরি হওয়ায় তাসরিফ আবার ফোন দিলে রিশা বসা থেকে দাড়িয়ে যায়।ফোন কেটে দিয়ে ঘর থেকে বের হয়।কেউ না ঘুমালেও তাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে সবাই অবস্থান করছে এখন। ধীর পায়ে দোতলা থেকে নেমে বাড়ি থেকে বের হওয়ার দরজায় দাড়ালো রিশা। পেছন ফিরে দেখলো তাকে কেউ দেখেছে নাকি? কাউকে না দেখতে পেয়ে দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো। বাউন্ডারির গেটের সামনে তাসরিফ কে দাড়ানো দেখে ওর হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো।তাসরিফ বাড়ির দিক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। হালকা আলোয় শাড়ি পরিহিত রমনীকে এগিয়ে আসতে দেখে তার হৃৎপিণ্ডর গতি বেড়ে গেলো। এ কেমন অনুভূতি?

“দাঁড়িয়ে না থেকে গেট খুলে বাইরে আয় পুতুল। ”

“আসছি ”

রিশা গেট খুলে বের হলে তাসরিফের সামনে দাড়ালো।সে হাসফাস করছে।শাড়ির আচল কচলাচ্ছে হাতের মুঠোয়।তাসরিফ সবকিছু অবলোকন করছে।বাড়ির ঝিকিমিকি আলো রিশার মুখে প্রতিফলিত হচ্ছে। ক্ষীণ আলোয় প্রেয়সীর মুখটা দেখে তাসরিফের মনে প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেলো।

“চল আজ তোমাকে আমি চাদনী রাতের সৌন্দর্য দেখাবো। আমার সাথে চলো।”

তাসরিফ বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো।রিশা সেই বিষয়ে কিছু না বলে তাসরিফের পিঠে ব্যাগ দেখে বললো

“ভাইয়া! তুমি অনেকখানি পথ জার্নি করে আসলে। বাড়ি যাই চলো।তোমার বিশ্রাম নিতে হবে।”

“এখন ভাইয়া ভইয়া না করে এই চাদের আলোয় আলোকিত প্রকৃতি দেখো পুতুল। ”

ইশশ আবার সেই দমবন্ধকর ডাক।রিশা আর কিছু না বলে হাটতে থাকলো আর চারপাশ দেখতে লাগলো। আজকে পূর্নিমা না হলেও চাদের আলো প্রস্ফুটিত। তাদের থেকে একটু দূরে জোনাকি দলের আলোর মেলা।ফুরফুরে বাতাস মন ছুয়ে যাচ্ছে। তাসরিফ চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে একটু দূরে এসে রাস্তার পাশে বসে পরলো। রিশাকে পাশে বসতে ইশারা করলো। রিশা একটু দূরত্ব রেখে বসে পরলো।

“বেলি গাছের ওপর অধিকার তো ঠিক প্রকাশ করলে। ঘরের আলমারি খুললেও পারতে”

“আলমারি খুলবো কেনো?”

“বাদ থাকুক ওটা এখন। হাতটা দেও।”

রিশা কোলের ওপর হাত কচলাচ্ছে। তাসরিফ তার ব্যাগ থেকে চুড়ি,, আলতার বক্সটা বের করলো।রিশার হাত না বাড়ানো দেখে তাসরিফ আবার বললো

“হাতটা দাও। ”

তাসরিফ নিজ দায়িত্বে রিশার হাত নিজের হাতে ধরলো। শাড়ির সাথে মিল রেখে হলুদ আর লাল চুড়ি পরিয়ে দিলো। আলতার কৌটো হাতে নিয়ে বললো

“পা টা এগিয়ে দাও।আজ আমি আমার অনেক দিনের শখ নিজ হাতে পূরন করবো। আলতা পরবে তো আমার হাতে।?”

“ভাইয়া! আমাকে দাও আমি পরে নিচ্ছি। ”

“কি ভাইয়া ভাইয়া করছিস।তোর বাচ্চার বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখি আমি রোজ।ভাইয়া না বলে একটাবার তো জান বলে ডাকতে পারিস।”

রিশা ভাবাক হয়ে বললো

“জান?”

“আহ শান্তি! কান দুটো আমার ধন্য হলো।সবসময় এটা বলেই ডাকবে আচ্ছা। ”

“কি বলছো ভাইয়া! আমার মাথায় তালগোল পেকে গেলো।”

“আবার ভাই! পা দিবি নাকি হাতের মতো পা টাও নিজ হাতে আনবো।”

রিশার নড়চড় না দেখে তাসরিফ রিশার সামনে মুখোমুখি হয়ে বসলো। ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে রিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো

“আমার হাতের ওপর ধরে রাখবে।”

ব্যাগের পকেট থেকে একটা কটন হাতে নিলো তাসরিফ। কটনবারে আলতা নিয়ে রিশার পায়ে হাত দিতে গেলে রিশা বাধা দেয়।ইতস্তত করে বললো

“পায়ে হাত দেওয়া লাগবে না ভাইয়া।”

“চুপ থাকো একটু আর আমাকে আমার কাজ দাও।”

রিশা চুপ করে গেলো।তাসরিফ ফোনের আলোয় প্রেয়সীর পা আলতায় রাঙ্গাতে লাগলো

“বুজলে প্রাণ! প্রেমে পরলে বাঘ বিড়াল হয় এটা একদম সত্য কথা। দেখো না আমি ছিলাম কেমন আর হয়ে গেলাম কেমন? তোমার কাছে থাকলে আমার গাম্ভীর্যতা হারিয়ে যায়। ”

“মিঃ গুরুগম্ভীর। ”

কথাটা বলে রিশা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তার হাসির মাখা মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো তাসরিফ।

“এত সুন্দর হাসি উপহার দিয়ে আমায় বাধিত করলেন মনোহারিণী । ”

তাসরিফ তার কাজ শেষ করে উঠে দাড়িয়ে রিশার দিকে হাত বাড়ালো।

“চলো! এখন ফেরা যাক বাড়িতে। ”

রিশা লাজুক হেসে বাড়িয়ে দেওয়া হাত ধরে দাঁড়ালো। দুজন হাত ধরে পাশাপাশি হেটে চললো। তাসরিফ নিজের মতো করে বললো

“এই হাত আমি সবসময় ধরে রাখতে চাই। এ হাত যেনো কখনো ছুটে না যায়।”

___________

গভীর রাতে পানি তৃষ্ণায় জাগা পেলো রায়হান। ওর পাশে রিফাত,, অয়ন বাকি সবাই নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। খাটের পাশে টেবিলে রাখা জগ পানিশূন্য দেখে রায়হান উঠে বসলো।

“এখন আবার নিচে যেতে হবে।ধুর। ”

বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে জগ হাতে নিচে আসলো রায়হান। রান্নাঘর থেকে পানি নিয়ে দোতলায় উঠার সময় দরজা খোলার শব্দে রায়হান ঘুরে দাড়ালো। একটা ছেলের সাথে রিশাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে রায়হান অবাক। যখন দেখলো রিশার হাত অন্য এক হাতের মাঝে তখন তার গলা শুকিয়ে আসলো।

চলবে……

[ আমার গল্পের সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ 🥰🥰। গল্প সম্পর্কে অবশ্যই সবাই নিজ নিজ মতামত জানাবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here