তুমি আমার প্রেমবতী পর্ব -০১

১.
‘আপনার এই সৌন্দর্য দিয়ে আমাকে ভুলিয়ে বিয়ে করবেন ভবেছেন?কিন্তু আপনার এই আশায় গুড়ে বালি। আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।’

ঘর ভর্তি লোকের সামনে এই কথা বলে স্নিগ্ধাকে অপমান করলো অভি।পাত্রী দেখতে এসে এইভাবে ছেলে তাদের মান সম্মান ডুবিয়ে দিবে এটা ভাবতেই পারেনি অভির মা বাবা।অভির মা শাহানাজ বেগম ও অভির বাবা মোজাম্মেল সাহেব একে অপরের দিকে হতাশ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন।অভি যে এই ভাবে তাদের সম্মান ডুবিয়ে দিলো এটা এখনো মানতে পারছেনা দুজনের কেউ।

অভির ছোট বোন স্মৃতি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে অভির কানে কানে বলল,’কি বলছিস কি ভাইয়া?তোর মাথা কি পুরো খারাপ হয়ে গেল নাকি?এক্ষুনি সরি বল স্নিগ্ধা আপুকে।’
অভি এইবার আরও ক্ষানিকটা জোরে চেঁচিয়ে বলল,’আমি ভুল কি বললাম?আমি উনাকে বিয়ে করবো না।উনাদের মতো মেয়েদের আমি খুব ভালো করেই চিনি।সুন্দরী হওয়ার সুবাদে উনাদের প্রেমিকের অভাব হয় না।বিয়ের আগেই প্রেমিকের সাথে কত ফষ্টিনষ্টি করেছে তার হিসেব নেই।’

এই পর্যায়ে চরম রেখে উঠলো স্নিগ্ধা।বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বেশ উগ্রভাবে জবাব দিলো,’ব্যাস, অনেক বলেছেন আপনি! নিজেকে কি মনে করেন? অনেক বড় কেউ আপনি?আপনাকে বিয়ে করার জন্য পা*গ*ল হয়েছে দেশের সব মেয়ে?অন্যকে দোষারোপ করার আগে একবার ভাবুন আপনি এখন এখানে যা করলেন,এটা কোনো ভদ্র মানুষ করে কিনা?

অভি নিজের বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,’যাই হয়ে যাক, আম্মু–আব্বু তোমরা শুনে রাখো আমি এই মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে করব না।’

শাহানাজ বেগম আর মোজাম্মেল সাহেব কিছু বলার আগেই স্নিগ্ধা সাবলীলভাবে জবাব দিল,’আপনি আমাকে কি বিয়ে করবেন!এর পর তো আমি নিজেই আপনাকে বিয়ে করবো না।আপনার মতো ছোট মনের মানুষের সাথে জীবন জড়ানোর কোনো মানেই হয় না।যার মানসিকতা এতো নিচু তাকে বিয়ে করার মতো দুর্দিন এখনো স্নিগ্ধার আসে নি।

২.

স্নিগ্ধার বাবা মা এতোক্ষন দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখলো।স্নিগ্ধার বাবা তায়েব হাসান আর অভির বাবা মোজাম্মেল সাহেব দুজন খুব পরিচিত।খুব ভালো বন্ধুসুলভ সম্পর্ক দুজনের।একসাথে ব্যাবসা করেন দুজন।সে সুত্রেই নিজের মেয়ের সাথে মোজাম্মেল সাহেবের ছেলের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।ঘরে এখন নিরবতা বিরাজ করছে।নিরবতা ভেঙে গলা খাঁকারি দিয়ে স্নিগ্ধার বাবা মোজাম্মেল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ভাইজান আপনার ছেলে যদি এই বিয়েতে রাজিই ছিল না তাহলে এখানে এসে আমার মেয়েকে অপমানের খুব কি দরকার ছিল?তাছাড়া এমন তো ছিল না যে বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে।আপনার ছেলে চাইলে বাড়িতে গিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলে ‘না’ বলতে পারতো।কিন্তু তা না করে এখানে এই ভাবে আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার তো আপনার ছেলের নেই।’

কথাটা শেষ অবধি কর্নগুহরে পৌছানোর আগেই ঘটঘট করে বের হয়ে গেল অভি।মোজাম্মেল সাহেব লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।হাত জোর করে বললো,’আমাকে ক্ষমা করবেন ভাইজান।আমার বড় ছেলের জন্য আজকে স্নিগ্ধা মামুনীর এতোটা অসম্মান হলো।আজকে সিগ্ধা মামুনীর জায়গায় আমার মেয়ে হলে আমি কিভাবে মেনে নিতাম?তাই আমি চাই,আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে ! স্নিগ্ধা মামুনীকে আমার ছোট ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে সসম্মানে আমার বাড়ির বঊ করে নিয়ে যেতে।’

তায়েব হাসান এক পলক নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন।স্নিগ্ধা জলন্ত অগ্নির মতো জ্বলে উঠলো।বললো,’বাবা, আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি?এক ভাই প্রত্যাখ্যান করার পরে আরেকজনের ঘাড়ে আমাকে চাপাতে চাইছো?এই রকম বাড়িতে আমি কিছুতেই বউ হয়ে যাবো না।’

‘দেখো মা,তুমি যেমন ভাবছো,আমাদের পরিবার তেমন নয়।আমার ছেলে অভির একটু মাথা গরম।সে একটু অশান্ত প্রকৃতির।কিন্তু আমার বড় ছেলের থেকে আমার ছোট ছেলে যথেষ্ট ভদ্র এবং মার্জিত।আজকে অভি যা করেছে অন্যায়, কিন্তু আমার ছোট ছেলে সাক্ষর তেমন নয়।’

মোজাম্মেল সাহেবের এই কথা শুনে স্নিগ্ধা গভীর ভাবে কি একটা ভেবে বাবার দিকে তাকালো।আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,’তোমাদের কি ইচ্ছে?তোমরা কি চাও?’স্নিগ্ধার মা একবার তায়েব হাসানের দিকে তাকাচ্ছেন একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকাচ্ছেন।তিনি মুখে কোনো কথা বলছেন না।স্বামীর সিদ্ধান্তই উনার কাছে শেষ সিদ্ধান্ত।তায়েব হাসান স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললেন,’এখন তোর কি ইচ্ছে মা?তোর যা ইচ্ছে আমাদেরও তাই ইচ্ছে।’

স্নিগ্ধা মোজাম্মেল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,’আমি আপনার ছোট ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি।আপনারা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করুন।’বলে নিজের ঘরের দিকে পা’ বাড়ালো স্নিগ্ধা।

অপরদিকে,স্বামীর এই সিদ্ধান্তে আঁতকে ওঠেন শাহানাজ বেগম।স্মৃতির বাহুতে শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।স্মৃতি নিজেও অনেক অবাক হয়েছে মোজাম্মেল সাহেবের এই কান্ডে।চাপা কন্ঠে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’আম্মু,,,আব্বু এই সব কি করছে?ছোট ভাইয়ার সাথে এখন স্নিগ্ধা আপুর বিয়ে দিবেন! মানে কি?শাহানাজ বেগম মেয়ের কথার উত্তর না দিয়ে দ্রুত পদে নিজের স্বামীর দিকে এগিয়ে গেলেন।হাত ধরে টেনে একটু সাইডে নিয়ে গেলেন।ফিসফিসে বললেন,

‘আপনার মাথা কি পা*গ*ল হয়ে গেছে?কি করছেন কি?সাক্ষরের সাথে স্নিগ্ধার বিয়ে ঠিক করছেন!ছেলেটা এখনো পড়াশোনা শেষ করে নি এর আগেই বিয়ে দিবেন?তাছাড়া ভুলে যাচ্ছেন কেন? সাক্ষরের জীবনের এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমরা ছাড়াও তার আরও অভিভাবক আছে।তার…’

কথা শেষ হবার আগেই মোজাম্মেল সাহেব মুখ চেপে ধরেন। বলেন, ‘কি করছো কি?সাক্ষর আমাদের ছেলে এটাই সত্যি।আমাদের ৩ সন্তান।অভি,সাক্ষর,স্মৃতি। আর কোনো কথা নয়।এতো দিন ধরে আমরা তাকে বড় করেছি।এখানে কোন অতীত নেই।তাই নিজের মুখ বন্ধ রাখো।যা করছি আমি ভেবে চিন্তেই করছি।স্নিগ্ধা মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতী। ওর সাথে বিয়ে হলে আমাদের সাক্ষর ভালো থাকবে।তোমার ছেলে অভি নিজের ভালো বুঝলো না।কিন্তু আমি আমার সাক্ষরের ভালোর কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’

শাহনাজ বেগম চুপসে গেলেন।নিজের স্বামীর এই সিদ্ধান্ত তিনি বদলাতে পারবেন না। এটা তিনি জানেন।তাই চুপচাপ স্মৃতির পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন।স্মৃতি কানে কানে বলল,’আব্বু কি বললো তোমাকে?’তুমি সেটা জেনে কি করবে?তুমি ছোট মানুষ ছোটদের মতোই থাকো।বড়দের ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না।’
মায়ের এই কথায় স্মৃতির বেশ রাগ হলো। সে কি এখনো ছোট আছে নাকি?ক’ দিন পরেই এসএসসি দিবে।এখনো কি সে ছোট নাকি!বাবা মা তাকে কোনোদিন বড় হতেই দিবে না।

চলবে,ইনশাআল্লাহ ✨

(আসসালামু আলাইকুম। বেশ রহস্যে ঘেরা এই গল্পটা।গল্পের নায়ক আর নায়িকা ‘কে’ কি রহস্য আছে। বুঝতে হলে পাশে থাকতে হবে।ভালোবাসা সবাইকে।হ্যাপি রিডিং)

#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ১
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here