তুমি আমার প্রেমবতী পর্ব -১৩+১৪

#তুমি_আমার_প্রেমবতী
১৩+১৪
#পর্বঃ১৩
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা

২৯.
ঘন কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারপাশ।হুট করেই মাঝ দুপুরে এই রকম ভাবে আকাশ কালো হয়ে ঝড় ওঠবার মুহুর্ত। ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে দূত প্রেমা বাহিরের কাজটুকু গুছিয়ে ঘরে দরজা আঁটে।মাঝ দুপুরে এই ঝড়ের সময় শুয়ে একটা শান্তির ঘুম দেওয়া যায়।এখন আদিলটাকে বুঝিয়ে ঘুমানোর জন্য রাজি করাতে পারলেই হলো।ছেলেটা যদি একটু ঘুমাতে পারে শরীর মন দুটোই ভালো লাগবে। মায়ের মৃত্যুর পর ছেলেটা একদম শান্ত হয়ে গেছে।নিজে মায়ের শোকে আহত হয়ে ভাইটার কথা ভুলে গেলে চলবে না।এখন না ঘুমালে কখন যেন আবার বৃষ্টিতে ভিজে অসুখ বাঁধাবে তার ঠিক নেই।

‘এই আদিল,ভাই আমার এখন একটু ঘুমাও তো ভাই। ‘

‘আচ্ছা আপু।’

অন্য সময় হলে কত বায়না ধরতো বৃষ্টিতে ভেজার।আজকে কোনো তাড়া নেই।কথা মেনে কি সহজে ঘুমানোর জন্য রাজি হয়ে গেল।এই ভেবেই চোখ বন্ধ করে প্রেমা।মুহুর্তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মায়ের মুখ। বৃষ্টিতে ভিজতে গেলে মায়ের সেই ধমকানো বারণ।সেলিনা পারভীনের কথা মনে হতেই দুমড়েমুচড়ে যায় হৃদয়খানা। চোখের কোণে এসে অশ্রুরা হানা দেয়।এ পাশ ও পাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই প্রেমার।

যখন ঘুম ভাঙে তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে।ঘর অন্ধকারে ভরপুর।কোনো রকমে হাতের কাছ থেকে একটা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে আদিলের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো আদিল ঘুমের দেশে।কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় মহা বিপাকে পরে প্রেমা।এই অবস্থায় ঘরে মোমবাতি জ্বালানো দরকার। অন্ধকারে এই সময় থাকতে তাদের ভীষণ ভয় হয়।মা কিছুদিন আগে মারা গেছে এখন ঘর অন্ধকার রাখতে পারে না দুজনের কেউ।বিদ্যুৎ থাকলে সারারাত লাইট জ্বালিয়ে রাখে। কিন্তু এখন ঘর অন্ধকার রাখা সমীচীন নয়। প্রেমা আদিলকে ডেকে বলে, ‘ভাই দোকান থেকে দুইটা মোমবাতি নিয়ে আয়।ঘরে একটুও আলো নেই।আজকে বোধ হয় বিদ্যুৎ আসবে না।মোমবাতি নিয়ে আয়।’

আদিল ঘুম থেকে জেগে খানিকক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকে তারপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায় মোমবাতি আনার উদ্দ্যেশ্যে।

৩০.

প্রেমা কিছু একটা ভয় পেয়ে আবার দোর এঁটে দেয়।বেশ খানিকক্ষণ পিনপতন নীরবতা। এই নিঝুম বর্ষণের দিনে দরজায় খটখটে আওয়াজে দ্রুত চলে প্রেমার হৃদয়ের হৃদপিণ্ড। হাত পা’ কেমন যেন কেঁপে কেঁপে ওঠে।হৃদয়ে সাহস সঞ্চার করে দরজায় কান পেতে বিপরীতে থাকা মানুষটার চরিত্র অনুমান করে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘কে?কে এসেছেন?’

হুট করেই প্রেমার হৃদয়ে সাহস সঞ্চার হয়।যত দ্রুত সম্ভব দরজা খুলে দেয়।অন্ধকারে দরজায় দাঁড়ানো অভর চেহেরা সম্পুর্ণ দেখতে পায় না।এমন সময় ঝকঝক আওয়াজ তুলে ছুটে যায় একটা রেলগাড়ি।দূর থেকে রেলগাড়ির কিছু আলো এসে ছিঁটকে পরে অভির মুখে।গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকে প্রেমার দিকে।

‘এখানেই কি দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি ভেতরে আসবেন?’

‘হ্যাঁ,আসব।কিন্তু আদিলকে দেখছি না যে?’

‘আসলে বিদ্যুৎ নেই তো তার জন্য সে একটু বাহিরে গেছে।মোমবাতি আনতে।’

অভি ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ঘরে ডুকতে ডুকতে বলে, ‘তা কেমন আছো?’

‘এই তো আছি।মা ছাড়া যেমন ভালো থাকার যায়। সেটার সর্বোচ্চ চেষ্টায়।রোজ তো আসেন দেখেন।তাহলে আজ স্পেশাল ভাবে জিজ্ঞেস কেন করছেন?’

‘না,এমনি।আদিল কখন আসবে।’

‘এতোক্ষনে তো চলে আসার কথা এখনো আসছে না কেন কে জানে?’

‘ওহহ,হয়তো আসতেছে।চিন্তা করো না।’

আদিল দোকান থেকে মোমবাতি নিয়ে বের হবে এমন সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো।মেঘের গর্জনে চারপাশ কাঁপতে শুরু করলো।বাতাসে সব উড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগল।দোকানের ভেতরে এক কোণায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে আদিল। এখন বাহিরে গেলে ঝড়ের তান্ডবে যা নয় তাই হয়ে যেতে পারে। তার চেয়ে দোকানির সাথে একটু ভাব জমিয়ে সেখানেই বসে থাকে আদিল।ঝড় কমলে বাসায় যাবে এই চিন্তায় বাহিরে তাকিয়ে থাকে সে। এই ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুম কন্যা তার চোখে হানা দিয়েছে সেটা সে বুঝতে পারেনি।ছেলেটার এই ঘুম দেখে দোকানি আলতো করে সাধ্য মতো ভালো ঘুমের ব্যাবস্থা করে দেয় আদিলকে।

এদিকে প্রেমা আদিলের চিন্তায় অস্থির। তার ওপরে বৃষ্টি দেখে আরও ঘাবড়ে ওঠেছে সে।অভি নিজেও চিন্তিত।আর এই আবহাওয়ায় তার পক্ষে বাড়ি যাওয়াও সম্ভব নয়।রাত ঘভীর হয় বৃষ্টির সাথে সাথে প্রেমার অস্থিরতা বাড়ে।এদিকে অভি নিজেও মহা বিপদে পরেছে প্রেমা কয়েকবার বের হত্র চেয়েছে।কিন্তু এই বৃষ্টি বাদলের দিনে বের হওয়া মানেই যেকোনো বিপদের মুখোমুখি হওয়া। আদিল হয়তো ঠিক আছে এটা বুঝিয়েই অভি প্রেমাকে দমিয়ে রেখেছে।অভি আজ এসেছিল প্রেমাকে এটা জানাতে আগামী দুই তিন দিন সে আসতে পারবে না।তার ভাইয়ের বিয়ে সেখানেই থাকতে হবে । প্রেমা আর আদিলের কথা ভাবতে গিয়ে অভি সাক্ষরের বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে একদম চিন্তিত নয়।যা হবে দেখা যাবে।কিন্তু বাড়ি ভর্তি মেহমান রেখে এই ভাবে বিয়ে ছেড়ে বস্তিতে আসা উচিত হবে না।তাই জানাতে এসে মহা বিপদে পরে গেল সে।এখন বাড়ি যাবে কিভাবে?

প্রেমা কিছু একটা বলতে অভির দিকে তাকিয়ে দেখে অভি ঘুমিয়ে গেছে।

‘এ যাহ!এই লাটসাহেব ঘুমিয়ে গেলো!কিন্তু উনি বাসায় যাবেন না?এই শুনুন…’

ডাকতে গিয়ে থমকে যায় প্রেমা।অভির ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখটি দেখে মায়া হয় তার।কি একটা ভেবে মন হত, ‘থাকুক ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।আমাদের জন্য উনি কত কিছু করেছেন এখন ঘুম থেকে জাগিয়ে কিছু বললে কি না কি মনে করেন।উনার বাড়ির এতো দামি খাট পালঙ্ক রেখে আমাদের এই ছোট সাধারণ ঘরে ঘুমিয়েছে।উনাকে ডেকে তুললে অপমান করা হবে ।’

অভির গায়ে একটা গোটানো কাঁথা টেনে দেয় প্রেমা।ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ হয়ে।পরে নিজে আদিলের চৌকিতে বসে ভাবতে থাকে ভাইয়ের কথা।ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে সে খেয়াল নেই প্রেমার।

চলবে, ইনশাআল্লাহ ✨

#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ১৪
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা

৩১.
সারাক্ষণ চিন্তায় চিন্তায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে পড়শী।সৌখিন মেয়েটি কেমন করে নিজের সমস্তটা ভুলে এক সাক্ষরের ভাবনায় মত্ত হয়ে আছে।সেদিনের পর থেকে একদম থমকে গেছে পড়শী।এখনো সাক্ষরের কোনো খোঁজ পায়নি সে।তাওহিদের সাথেও যোগাযোগ নেই।সবার থেকে সে নিজেকে একা করে নিয়েছে। সাক্ষর যেমন করে হারিয়ে একা হয়ে গেছে সে ও নিজেকে একা করে নিয়েছে। কিচ্ছু ভালো লাগে না তার।সাক্ষরের কথা ভাবতেই চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে।

‘পড়শী।এই পড়শী।’

পরিচিত কন্ঠের আওয়াজে দরজা খুলে পড়শী।কিন্তু দরজায় কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দেখা না পেয়ে আশ্চর্য হয়ে বলে,

‘মা তুমি?কিন্তু আমাকে যে ডেকেছে সে কোথায়?’

‘এই যে আমি?’

‘তাওহিদ তুই এই সময়ে এখানে!এই ঝড় বাদলের মাঝে?”

‘কেন তোর বাসায় আমি আসতে পারি না?আর এই সব ঝড় আমার কাছে কিছুই না।’

‘কেন আসতে পারবে না বাবা,অবশ্যই পারো।এই পড়শী তুই তাকে ঘরে নিয়ে যা।আমি কিছু খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করি।’

এই বলে পড়শীর মা চলে যায়।পড়শীর বাবা অনেক আগেই মারা গেছে।অর্থ বিত্তের অভাব নেই।এক মেয়ের সমস্ত আবদার মেটাতে যথেষ্ট সামর্থ আছে।

‘কিরে তাওহিদ, এতো রাতে আমাদের বাড়িতে কেন এলি?’

‘কেন রাত হয়েছে বলে কি হয়েছে?রাতের বেলা বুঝি তুই মানুষ থাকিস না?রাক্ষসরাণী হয়ে মানুষের ঘাড় মটকে দিস!রাতে এসেছি তাই সমস্যা হচ্ছে?চিন্তা করিস না,আজকে আমার ঘাড় মটকে দে।’

‘একটা কানের নিচে দিব।শয়তান।বাদরামি করার জায়গা পাও না।এতো রাতে কেন এসেছিস তাই বল?’

‘তার আগে তুই বল,কয়েকদিন থেকে তোর ফোন বন্ধ কেন?ভার্সিটিতেও যাচ্ছিস না কেন?’

‘ভালো লাগে না তাই যাচ্ছি না।’

‘কেন ভালো লাগে না?সব কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিলেই কি সমাধান হবে?’

‘জানিনা।কিন্তু আমি মুক্তি চাই। এই ভাবে আর থাকতে পারছি না।সাক্ষরকে আমি আঘাত করেছিলাম। মানিছি সে কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু সে কি এটা বুঝে না আমারও কষ্ট হচ্ছে।আমার নিজেরও যন্ত্রণা হচ্ছে।বুকের ভেতর অনুতাঅএর পাহার জমা হয়েছে। সাক্ষর শুধু নিজের দিকটা বুঝে হারিয়ে গেছে। আমার দিকটা কেন বুঝলো না?একটু যোগাযোগ ও করেনি এই এতোদিনের ভিতরে।’

‘আমি সব জানি।কিন্তু এই ভাবে তো জীবন চলে না সাক্ষরের সাথে কথা বলা উচিত । তোদের নিজের সমস্যা নিজেদের মিটিয়ে নেওয়া উচিত। এই ভাবে না তুই ভালো আছিস। না সাক্ষর ভালো আছে।’

‘কিন্তু এখন আমি কি করবো?সাক্ষর কোথায় আছে কিছুই জানিনা।তার সাথে কিভাবে দেখা করবো? কিভাবে কথা বলব?’

‘আমার মনে হয় সে বাড়িতে চলে গেছে।কিন্তু ওর বাড়ির কারো নাম্বার বা কিছুই আমার কাছে নেই যার সাহায্যে ওর সাথে যোগাযোগ করবো।আমাদের উচিত একবার ঢাকা যাওয়া।ওর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া সে ওখানেই আছে কি না?’

‘দেখ এতোদিন হয়ে গেলো।যদি সাক্ষর বাড়িতে না থাকতো বা অন্য কোথাও থাকলেও বাড়ির সাথে যোগাযোগ না রাখতো তাহলে বাটি থেকে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই খোঁজ করতো।কিন্তু এমন কিছু ও হয়নি।মনে হচ্ছে সাক্ষর বাড়িতেই চলে গেছে। ‘

‘তাহলে তো আমার আর তোর ভাবনা মিলেই গেছে।আমরা তাহলে সাক্ষরের বাড়িতে গিয়েই খোঁজ নেবো। ‘

‘যেখানে সাক্ষর নিজে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি।স্বার্থপরের মতো একা রেখে চলে গেছে সেখানে ওর বাড়িতে যাওয়া কি আমার আত্নসম্মানে বাঁধে না?’

‘কি সব আত্নসম্মান টম্মান নিয়ে পরে আছিস?জানিস তো সাক্ষর কেমন?ওর অভিমান হয়েছে।আমাদের দেখলে এমনিতেই অভিমান ভেঙে যাবে।এই সব জেদ না করে ভালোর জন্য বলতেছি চল সাক্ষরের বাড়িতে যাই।’

‘ঠিক আছে।তাহলে আমরা ঢাকা কবে যাচ্ছি?’

‘পড়শী আমি বলি কি কাল সকালেই যাবো।অনেক দিন হলো সাক্ষরকে দেখি না।যত দ্রুত যাওয়া যায়।’

‘ঠিক আছে। তুই যখন কাল বলতেছিস তাহলে কালকেই যাবো।’

‘তাহলে, এখন আমি যাই পেত্নী।রাত হয়েছে অনেক।তোর তো আবার রাক্ষসী রূপ নিতে হতে।’

‘তবে রে,দাঁড়া তুই।আমি রাক্ষসী তাই না?’

‘সরি, রাক্ষসী না।পেত্নী।আচ্ছা পেত্নী যাই।’

৩২.
বিয়ের আয়োজন বেশ ঘটা করেই হচ্ছে।বাড়ি ভর্তি মেহমান।বৃষ্টি নেই তবে খুব জোরে হাওয়া দিচ্ছে এরই মাঝে কয়েক বার অভির খোঁজ অনেকে।আবার কেউ ঠাট্টা করে বলছে,’নিজে বিয়ে করবে না। তার জন্য বাবা মা ছোট ভাইকে বিয়ে করানোর সিন্ধান্ত নিয়েছে আর সেই অপমান হয়তো মানতে পারছে না। তাই কোথায় গিয়ে গা’ ঢাকা দিয়েছে দেখো।বড় ছেলেকে রেখে ছোট ছেলের বিয়ে দিচ্ছে।কি আজব রে বাবা।বুঝি না এই মোজাম্মেল সাহেবের বড় ছেলের বিয়ে করতে কিসের সমস্যা।’

‘আমার ভাইয়ার কোনো সমস্যা নেই।আমার ভাইয়া কোনো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবে না এটাই সমস্যা।আর আব্বু আম্মু সেটাই মানতে পারছে না বলেই ছোট ভাইয়ার বিয়ে দিচ্ছে।সুন্দরী মেয়ে না হলে আব্বু আম্মু বিয়ে দিবে না।আর ভাইয়া কোনো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবে না।আর কার বিয়ে কেন হচ্ছে?কার সাথে হচ্ছে? বড় ভাইয়ার বিয়ে হবে নাকি ছোট ভাইয়ার সেটা জেনে আপনাদের কাজ নেই। আপনারা এসেছেন অতিথি হয়ে।সে রকম অতিথি হয়েই থাকুন।দাওয়াত দিয়েছে। খাবেন আনন্দ করবেন চলে যাবেন।পারিবারিক বিষয়ে এতো নাক গলাতে কেউ ডাকেনি আপনাদের।’

স্মৃতির মুখে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনে মহিলাগুলো থতমত খায়।একজন ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,’শোনো মেয়ের কথা। বলি বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই সহবোধ শিক্ষাটা বুঝি তোমার নেই?’

‘আমার সহবোধ শিক্ষা আছে কিন্তু আপনাদের এতোটুকুও বোধ বুদ্ধি নেই।বিয়েতে অতিথি হয়ে এসে ঘরের খবর নিয়ে না পরলেই হতো। এতো কথা আপনারাই তুলেছেন। ‘

‘কথা বাড়াচ্ছো কেন মেয়ে?আমরা তোমার গুরুজন।বড় হয়েছো।অথচ বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখোনি।’

স্মৃতি জবাব দিতে যাবে এমন সময় সাথী এসে ডেকে নিয়ে যায় তাকে।কিছু মহিলা এবার স্মৃতিকে নিয়ে পরেছে।’এই মেয়ের যা ব্যাবহার। বিয়ে হবে না।মোজাম্মেল সাহবের স্ত্রী এই মেয়েকে মানুষ করতে পারেন নি। ছেলে দুটোর আর যাই হোক এতোটা উচ্ছনে যায় নি মেয়েটার কথায় কি তেজ।’

‘রাখো তো। যার যা ইচ্ছে।আমরা তাদের ব্যাপার নিয়ে কেন এতো মাতামাতি করতেছি।উনাদের ব্যাপার উনারা বুঝে নিবে।’

সাথী স্মৃতিকে সাইডে এনে বলে,’স্নিগ্ধা আপুদের বাড়ি থেকে একটা ছেলে এসেছে।কি একটা দরকার।উনার সাথে একটু কথা বলো।সবাই তো ব্যাস্ত। উনাকে একা বসিয়ে রাখলে কেমন দেখায়?’

‘তা তুই আমাকে ঐ ছেলের সাথে কথা বলতে বলতেছিস কেন?তুই নিজে গিয়ে কথা বল।ভদ্রলোকের সাথে আমার কথা বলার টাইম নেই।তুই উনাকে একটু চা, কফি, শরবত যা লাগে দে। আমি পারব না।আমি যাচ্ছি কাজ আছে।’

‘আপু শোনো।এই যাহহ চলে গেলো।আমি ঐ ছেকেটার সামনে একা একা যাবো?সে কি করে হয়?’

স্মৃতি আবার ফিরে এসে তাড়া দিয়ে বলে,’কিরে কি ভাবছিস যা।’

সাথী কথা বাড়ায় না।রান্না ঘর থেকে শরবত সহ লোকটির সামনে এসে দাঁড়ায়। শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,’এই নিন।শরবত খান।’

লোকটা মজা করে বলে,’আরে আমি শরবত খান নই।আমি শুভ খান।’

সাথী শুভর কথায় হেসে ওঠে।সাথীর ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দেখে মুগ্ধ হয় শুভ।১ম দেখাতেই অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে তার মনে।সাথী হাসতে হাসতে বলে,’এই নিন শুভ খান শরবত খেয়ে মাথার বুদ্ধির দরজা খুলুন।’

‘এক মিনিট।তুমি কি কোনো ভাবে আমাকে বোকা প্রমান করতে চাইলে?’

‘আশ্চর্য আমি আপনাকে কেন বোকা প্রমান করতে চাইব?’

‘বুদ্ধির দরজা খুলতে বললে কেন?আমার বুদ্ধির দরজা খোলাই আছে।তুমি বুঝতে পারছো না।’

‘দেখুন আমার এতো বুঝে কাজ নেই।এই নিন শরবত আপনার ইচ্ছে হকে খাবেন ইচ্ছে হলে খাবেন না।আমি যাই।’

‘তোমাদের বাড়িতে লোকজন এলে এভাবেই বুঝি কথা বলো?একটু আদর ভালোবাসা দিয়ে কথা বলতে পারো না?’

‘আদর ভালোবাসা দিয়ে মানে?’

‘মানে,একটু ভালোভাবে।একটু ভালোবেসে।মিষ্টি করে দেখতে তো খুব মিষ্টি তা কথা এতো তেতো কেন তোমার?’

‘আমি এতো মিষ্টি করে কথা বলতে পারি না সরি।আমি তেতো কথাই বলি।’

এই বলেই সাথী বলে যায়।শুভ তাকিয়ে থাকে সাথীর যাওয়ার পানে।

চলবে, ইনশাআল্লাহ ✨

(আসসালামু আলাইকুম।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন।হ্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here