#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২১
আভিয়ানের চোখ যায় ঐশিদের বাসার গেইটের দিকে। ঐশি একটা ছেলের বাইক থেকে নামছে। ছেলেটি ঐশির গালে ধরে টান দেয়। ঐশি ছেলেটির পিঠে একটা থাপ্পড় মারে। হেলমেট পড়ে থাকায় ছেলেটিকে চিনতে পারছে না। বাই বলে ছেলেটি চলে যায়। ঐশিও বাই বলে ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আভিয়ানের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন।
ছেলেটা কে? ঐশির সাথে ছেলেটা কী করছে? এতো রাতে ঐশি ঐ ছেলেটার সাথে কোথায় গিয়েছিল? তাহলে কী তার সপ্ন সত্যি হয়ে যাবে? না না এ হতে পারে না। ঐশি তো শুধু তার আর কারোর নাহ।
ঐশি যখনি গেইট দিয়ে ঢুকতে যাবে তখনি আভিয়ান গিয়ে ঐশিকে জড়িয়ে ধরে। হুট করে এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরায় ঐশি ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু পরমুহূর্তেই আভিয়ানকে দেখে ভয়ের রেশটা কেটে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড রকম অবাক হয়ে যায়। সে এই মুহূর্তে এখানে আভিয়ানকে একদমি আশা করেনি।
আভিয়ান তুমি এখানে?
আভিয়ান ঐশিকে ছেড়ে দিয়ে বলে, কেনো আমি আসাতে কী খুব অসুবিধা হয়ে গেলো? নাকি আমার সাথে তোমাকে দেখলে তোমার নিউ বয়ফ্রেন্ড রাগ করবে?
এসব তুমি কী বলছো? আমি তোমার কোনো কথা বুঝতে পারছি না।
ওহ এখন আমার কথাও বুঝতে পারছো না? তোমার সাথে ঐ ছেলেটা কে ছিল? যে তোমাকে একটু আগে বাইকে করে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো।
আভিয়ান তুমি পাগল হয়ে গেছো? কাকে নিয়ে তুমি আমাকে সন্দেহ করছো তুমি জানো? ঐটা আমার ভাইয়া ছিল। অনেকদিন পর ভাইয়া সিলেট থেকে এসেছে। তাই আজকে ভাইয়া আমাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল। আর এখন ভাইয়া তার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে গেছে। আর আভিয়ান তোমার তো আমাকে সন্দেহ করা মানায় না। তুমি যখন দিনের পর দিন আমাকে ইগ্নোর করেছ। তখন তো আমি তোমাকে সন্দেহ করিনি। তুমি যখন আমাকে ব্যস্ততার দোহায় দেখিয়ে ফোন কেটে দিতে। তখন তো আমি তোমাকে প্রশ্ন করিনি তোমার এতো কীসের ব্যস্ততা? তাহলে আমার বেলা অন্য নিয়ম কেনো? আমাকে কেনো তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?
আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি ঐশি। আমি দিশেহারা হয়ে গেছি। আমার সামনে কোনো পথ নেই। যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু অন্ধকার দেখতে পাই। বাবা অসুস্থ, বাবার বিজন্যাস আমাকে সামলাতে হয়। বিজন্যাস এ প্রচুর লস হয়েছে। চারদিকে প্রচুর ধার দেনা। বাবার অসুস্থতা নিয়ে হসপিটালে ছুটতে হয়। সব সময় তো একটা চিন্তা মাথায় ঘুরেই নিজের পায়ে না দাঁড়াতে পারলে তোমাকে পাব না। দেখো বেকার ছেলেদের ভালোবাসার মূল্য কেউ দেয় না। সাফাত স্যার এতো ভালোবাসার পরও নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পেলেন নাহ। অহিও দিন দিন যেনো কেমন হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু নিয়ে প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ছিলাম। না চাইতেও বার বার তোমাকে ইগ্নোর করতাম। আমি চাইতাম না আমার জন্য তুমি খারাপ থাকো। তোমার ওপর কোনো চাপ পড়ুক। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি বুঝতে পারি নাই আমার ইগনোরেন্স তোমাকে এতোটা হার্ট করবে। আমি সত্যিই সরি। আমি কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। ডিপ্রেশনে সবার সাথেই খারাপ ব্যবহার করছিলাম। আমি চাইনি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে। প্লিজ ফর গিভ মি। প্লিজ।
কথাগুলো বলতে বলতে আভিয়ান মাটিতে বসে পড়ে। ঐশি কাঁদছে। কিন্তু খুশিতে। তার ভালোবাসা রং বদলায় নি। আভিয়ান তাকে সেই আগের মতোই ভালোবাসে। ঐশি আভিয়ানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
তুমি না আমাকে ভালোবাসো। এই তোমার ভালোবাসার নমুনা। শুধু নিজের সুখের ভাগী করলেই হবে আমাকে দুঃখের ভাগী করবে না।
আভিয়ান হয়তো ঐশির কথাগুলো কানেই নেয়নি। সে আবার নিজের মতো করে বলতে শুরু করে,
ঐশি তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো। আচ্ছা আমাদেরও কী আলাদা হয়ে যেতে হবে? তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে না? করবে না অপেক্ষা আমার প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত?
আমি তোমাকে কোনোদিন ছেড়ে যাব না। আমাদের আলাদা হতে হবে না। আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো। তোমার প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।
আভিয়ান ঐশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ঐশিও আভিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
৪৭
সাফাত ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কণা এসে সাফাতের গাড়ে হাত রাখে। সাফাত একটুও চমকায় না। সে জানে এটা কণা। কণা ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না। এই মেয়েটা সব সময় তার পাশে থেকেছে। ছোটবেলা থেকেই এই মেয়েটা তার দুঃখগুলো ভাগ করে নিয়েছে। আজকে তার ব্যতিক্রম হবে এটা ভাবাটাই ভুল।
ভাইয়া তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই না?
হওয়াটা কী স্বাভাবিক নয়? তিন তিনটা বছরের সম্পর্ক আমাদের। একসাথে কতো সুখময় স্মৃতি আছে। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন সেই স্মৃতিগুলো আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে।
তুমি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারতে।
হয়তো পারতাম। কিন্তু মানুষের সব চাওয়াই তো আর পুরণ হয় না। আমার চাওয়াটা না হয় অপূর্ণই থেকে গেলো। সবার ভালোবাসা তো আর পূর্ণতা পায় না। আমার ভালোবাসাটা ও না হয় অপূর্ণই রয়ে গেলো। ভালোবাসলেই যে তাকে কাছে পেতে হবে তা কিন্তু নয়। আমি বন্যাকে দুর থেকেই ভালোবেসে যাব।
তোমরা দুজন দুজনকে এতোটা ভালোবাসার পরও এক হতে পারলে না।
সাফাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, জানিস কণা, ভালোবাসাটা আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য না। মধ্যবিত্তদের কাউকে ভালোবাসার অধিকার নেই। কারণ তাদের বাবার টাকা নেই যে, টাকা দিয়ে ভালোবাসা কিনে নিবে।
ভাইয়া।
কণা তুই নিচে যা। অনেক রাত হয়েছে।
কিন্তু ভা…..
সাফাত ধমক দিয়ে বলে, তুই যাবি এখান থেকে? সাফাতের ধমক খেয়ে কণা সুরসুর করে চলে যায়। সাফাত আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
আমরা একই শহর থাকবো, আমাদের দেখা হবে অথচ কথা হবে না। তোমার কথা ভাবাও যে আমার জন্য পাপ। তুমি তো এখন অন্য কারো। কিন্তু মন তো সেটা মানতে নারাজ।
রেলিংয়ের ওপর রাখা সাফাতের ফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বাঁজছিল। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। তাই ফোনটা রিসিভ করেনি। কিন্তু এখন একমতন বিরক্ত হয়েই সাফাত ফোনটা হাতে তুলে নেয়। ফোনের স্কিনে বন্যার নামটা দেখেই কলটা কেটে ফোনটা বন্ধ করে ফেলে। সাফাত জানে বন্যা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু সে নিরুপায়। আরেক বার আকাশের দিকে তাকিয়ে সাফাত ছাদ থেকে নিচে নেমে যায়। সাফাত জানে আজকে আর তার ঘুম আসবে না। তাই তো দুইটা স্লিপিং পিল খেয়ে শুয়ে পড়ে। আগে সে বন্যার সাথে ফোনে কথা বলে কত শত রাত পার করে দিত আর আজকে স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। নিয়তি বড়ই অদ্ভুত। কখন কার সাথে কার মিল করিয়ে দেয়। তা কেউ বলতে পারে না।
৪৮
কণা রুমে এসে পায়চারী করছে আর ভাবছে তাদের পরিণতি কী হবে? সে এই কয়েক মাসে সেই চিঠি প্রেরককে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে। এটা স্বীকার করতে তার দ্বিধা নেই। কিন্তু তাদের ভালোবাসা কী পূর্ণতা পাবে। কণার বাবা বা সাফাত কোনোদিন আপত্তি করবে না। কিন্তু তার ফেমিলি? সেই চিঠি প্রেরকের ফ্যামিলি কী তাকে মেনে নিবে? না নেওয়াটাই স্বাভাবিক। কে চাইবে তার মতো একটা মেয়েকে নিজেদের ছেলের বউ করতে।
কণা নিজের ফোনটা নিয়ে সেই চিঠি প্রেরককে কল দেয়। একবার রিং হতেই ঐপাশ থেকে ফোন রিসিভ হয়।
কী ব্যাপার মেডাম? আজকাল একটু বেশি মিস করছেন মনে হচ্ছে? প্রেমে টেমে পড়ে গেলেন নাকি?
আপনাকে কোনো মিস টিস করছি না আমি। আর আমি প্রেমে পড়ব আপনার? জোকস অফ দ্যা ইয়ার। আপনার মতো রামছাগলের প্রেমে এই মিহিকা তাহসিন কণা পড়বে না। হুহ।
আমাকে দেখলে কখন? আমাকে রামছাগল বলছো যে? হুম?
দেখি নাই বলেই তো দেখতে চাইছি।
মানে?
আমি আজকে এখনি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
তোমার মাথা ঠিক আছে? এখন কয়টা বাজে তুমি দেখছো?
আমার মাথা একদম ঠিক আছে। এখন মাত্র ৯ টা বাজে। আপনি এখনি আমাদের বাসার নিচে আসবেন।
তোমাদের বাসার নিচে যেতে আমার মিনিমাম দুই ঘন্টা লাগবে। যেতে যেতে ১১টা বেজে যাবে। দেখা করাটা কী খুব দরকার?
চলবে…..