তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব -২২

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২২

আমার মাথা একদম ঠিক আছে। এখন মাত্র ৯ টা বাজে। আপনি এখনি আমাদের বাসার নিচে আসবেন।

তোমাদের বাসার নিচে যেতে আমার মিনিমাম দুই ঘন্টা লাগবে। যেতে যেতে ১১টা বেজে যাবে।

বাজলে বাজুক আপনি আসবেন। এটাই ফাইনাল ডিসিশান।

দেখা করাটা কী খুব দরকার?

হুম ভীষণ দরকার। আপনি আসবেন কী না বলুন?

যদি না আসি।

আপনার সাথে আমি আর কথা বলবো না। আপনি আমাকে আর ফোন দিবেন নাহ। আল্লাহ হাফেজ।

আরে আরে ফোন রেখে দিচ্ছো কেনো? আমি কী বলছি যে আসবো না? তোমাদের মেয়েদের এক দোষ সম্পূর্ণ কথা না শুনে লাফাতে শুরু করো। আমি বলছি যদি না আসি। এটা তো বলিনি যে আমি আসবো না।

তার মানে আপনি আসছেন।

দেখি।

দেখি টেখি বললে চলবে না। আপনাকে আসতেই হবে।

যদি কোনো প্রবলেম হয়। তোমার ভাইয়া বা বাবা দেখে। আর আমিও এখন দেখা করতে চাইছিলাম না। সময় হ………

আমি ঠিক ১১ টায় আমাদের বাসার নিচে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।

কণা কথাটা বলেই ঠাস করে কলটা কেটে দেয়। সে জানে তার প্রেমিক পুরুষ আসবেই। ফোনটা আবার বাঁজছে। নাম্বারটা দেখে কণা ফোনটা রেখে দেয়। কিন্তু ফোন থামার নাম নেই ননস্টপ বেঁজে চলেছে। কিছুক্ষণ পরে মেসেজের টুং টাং শব্দ হতে থাকে। কণা মেসেজ ওপেন করে।

আমি তোমাদের বাসার নিচে এসে তোমাকে কল দিব। আমি কল দিলে তারপর বাসা থেকে বের হবা।

একদম পাকামি করবে না কিন্তু। আমার কথার বাইরে গেলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।

আমি নিচে এসেই তোমাকে কল দিব। প্লিজ তুমি আগে এসো না। এতো রাতে একা বাইরে আসা তোমার ঠিক হবে না।

কণা মেসেজগুলো পড়ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আর ভাবছে, এই লোকটা সত্যিই পাগল। তাকে নিয়ে এতো পজেসিভ।

কণা অপেক্ষা করছে তার প্রেমিক পুরুষের একটা কলের।

২ ঘন্টা পর

দেখতে দেখতে দুই ঘন্টা কেটে গেলো। কিন্তু কণার তার কোনো খবর নেই। কণা অস্থির হয়ে ঘরময় পায়চারী করছে। তার আর তর সইছে না। তার এতোদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। ফোনের মেসেজ টোন বেঁজে ওঠা। কণা তড়িৎ গতিতে ফোনটা হাতে নেয়। তাড়াতাড়ি মেসেজ ওপেন করে।মেসেজটা দেখেই কণার মন খারাপ হয়ে যায়।

আমি আজকে আসতে পারবো না। প্লিজ লহ্মিটি রাগ করো না। সময় হলেই আমি তোমার সাথে দেখা করবো। এতোদিন যখন অপেক্ষা করেছে। প্লিজ আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। জানো তো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়।

কণা মেসেজটা দেখে রাগে দুঃখে ফোনটা ছুঁড়ে মারে। সে মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞা করে আর কোনো দিন সে এই বজ্জাত লোকের সাথে কথা বলবে না। তাকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে এখন বলে আসতে পারবে না। বলবে না সে কথা আর কোনো দিন। সরি বলেও আর লাভ হবে না।

৫০

দুই দিন পর

সাফাত বেলকনিতে বসে সিহারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। যে ছেলেটা সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারতো না সেই ছেলের হাতে সিগারেট। নিজেই সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে।সত্যিই ভাগ্য জিনিসটা বড্ড অদ্ভুত। ভাগ্য কখন কাকে কোথায় এনে দাঁড় করায় কেউ বলতে পারে না। হাতের দুই আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট নিয়ে ফোনের গ্যালারীতে ঢুকে। সাফাতের গ্যালারি বন্যার ছবিময়। সিগারেটে টান দিতে দিতে ছবিগুলোতে চোখ বুলাচ্ছে। সাফাতের চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু ফোনের স্কিনে পড়ে।

সব কিছু ভাঙলে শব্দ হয় কিন্তু, মন
ভাঙলে শব্দ হয়না। তাইতো যার মন
ভাঙে সেই একমাত্র বুঝে ব্যাথা কত।

সাফাত একে একে বন্যার সব ছবি ডিলেট করে দেয়। লাস্ট একটা ছবি ডিলেট করতে গিয়ে সাফাতের হাত আটকে যায়। এটা তো সেই ছবি যেদিন সে বন্যাকে প্রোপোজ করেছিল। হাতে হাত রেখে কত শত গল্প করেছিল। কথা দিয়েছিল সারাজীবন বন্যার পাশে থাকবে। কিন্তু সে তার কথাটা রাখতে পারেনি। সারাজীবন পাশে থাকার কথা দিয়ে মাঝ পথেই হাত ছেড়ে দিতে হলো এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিষ্ঠুর নিয়মের জন্য।

সাফাত ফোনের ব্যাক কভারটা খুলতে গিয়েও খুলতে পারে না। এটা যে বন্যা পছন্দ করে তাকে কিনে দিয়েছিল। বন্যার কত শত স্মৃতি রয়ে গেছে তার রুম জুড়ে। ফোনের কভারটা রেখে দেয়। থাক না কিছু স্মৃতি। সে না হয় স্মৃতি নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে।

সাফাত সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ বেলকনি দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায় টলমল পায়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করে। বিছানায় শুয়ে সাফাত একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। আরেকটা নিদ্রাহীন রাত কাটবে তার। এই দুইদিন তো বন্যার ছবিগুলো দেখে দিন পার করে দিয়েছিল। আজকে সে কী করবে? বন্যার একটা ছবিও তার ফোনে অবশিষ্ট রাখেনি।

দরজার আড়াল থেকে সরে যায় তাহসিন আহম্মেদ। বিষণ্ণ মন নিয়ে পা বাড়ান় নিজের রুমের দিকে। তিনি জানেন তার ছেলের ভালো নেই। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে তাই তো তার কাছে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না। ছোটবেলার মতো কষ্ট পেলে উনার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে কেটে বুক ভাসায় না। কিন্তু তিনি তো বাবা তিনি ছেলে মেয়েদের মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। তিনি বুঝতে পারছেন নাহ আল্লাহ উনার কোন পাপের শাস্তি উনার ছেলে মেয়েদের দিচ্ছে।

৫১

নোমান সোফায় বসে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর ঘুমন্ত মুখশ্রীর দেখে। ঘুমন্ত অবস্থায় কতো নিষ্পাপ লাগছে। সে ভাবে এই মুখ জুড়ে এতো মায়া কেনো? আল্লাহ জেনো পৃথিবীর সমস্ত মায়া এই মুখশ্রীতে ঢেলে দিয়েছে। এই মায়াবী রাজকন্যাটা যদি শুধু তার হতো। তাহলে কী খুব বেশি অন্যায় হয়ে যেতো?

বন্যা কাত হয়ে শুতেই নোমানের চোখ আটকে যায় এক নিষিদ্ধ জায়গায়। নোমান দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। এই রমণীকে দেখার অধিকার যে তার নেই। এই রমণীর মনের অধিকারী যে অন্য কেউ। শরীর দিয়ে কী হবে যদি মনটায় না পায়। বন্যা বাসর রাতেই সব বলে দিয়েছিল। তাদের মাঝে কোনো কিছু গোপন রাখেনি।

দোষটা তো তারই। তার উচিত ছিল বিয়ের আগে বন্যার সাথে কথা বলার। বন্যার বিয়েতে মত আছে কী না সেটা জিঙ্গেস করা। কিন্তু সে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দে এতোটা বিভোর ছিল যে বন্যার বিয়েতে মত আছে নাকি নেই সেই কথাটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। ভালোবাসার মানুষকে সে তো পেয়েছে ঠিকই কিন্তু…..।

নোমান ভাবছে তার কী করা উচিত সে বুঝতে পারছে না? তার কী বন্যাকে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নাকি জোর় করে নিজের কাছে আটকে রাখা উচিত। জোর করে আটকে রেখে কী লাভ? জোর করে তো ভালোবাসা পাওয়া যায় না। বন্যা তো তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে। বন্ধু হয়ে তো তার উচিত বন্ধুর কাছে বন্ধুর ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দেওয়া।

আর সে তো বন্যাকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষ খুশি থাকলেই তো সে খুশি থাকবে। নোমান তার ডিসিশান নিয়ে নিয়েছে। সে সাফাতের সাথে কথা বলবে। বন্যার কাছে তার ভালোবাসার মানুষ সাফাতকে ফিরিয়ে দিবে।

এটা ভেবেই সে বন্যার ফোনটা হাতে নেয়। ওয়ালপেপারে সাফাতের ছবি দেখে তার বুকটা ধক করে ওঠে। আচ্ছা এখানে যদি তার ছবি থাকতো। তাহলে কী খুব বেশি ভুল হয়ে যেতো। নিজের বোকা বোকা ভাবনায় নিজেই হাসে। সে সাফাতের ফোনে কল দেয়। একবার রিং হতেই সাফাত ফোন রিসিভ করে। সাফাত ফোন রিসিভ করেই বলে,

আসসালামু আলাইকুম।

নোমান কথা বলতে গিয়েও আমতা আমতা করছে। কী বলবো ভেবে পাচ্ছে না? নিজের স্ত্রীর প্রাক্তনের সাথে কিভাবে কথা বলবে তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে।

যা বলার বলে ফেলুন মিস্টার নোমান।

সাফাতের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে ওঠে নোমান। সে বুঝতে পারছে না সাফাত কী করে বুঝতে পারলো যে সে ফোন করেছে? নোমান আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাফাত বলে,

আপনি হয়তো অবাক হচ্ছেন আমি কী করে বুঝলাম আপনি ফোন করেছেন? যেখানে আপনি কল দিয়ে একটা কথাও বলেনি। সাধারণত বন্যা এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠে না। আমার একটা ধারণা ছিল আপনি আমাকে কল করতে পারেন।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here