তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব -৩১-শেষ

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩১

❌কপি করা নিষেধ। ❌

ঘরোয়া ভাবেই আদিয়াত আর কণার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে। আদিয়াত চায় না তাদের বিয়ের ব্যাপারটা কেউ জানুক। আদিয়াত জানে মানুষ জন বিয়েতে আসলেই কণাকে কন্ঠাক্ষ করে কথা শোনাবে। পাঁচ জনে পাঁচ কথা বলবে। আদিয়াত চায় না কণা কোনো ভাবে আপসেট হয়ে পড়ুক। চলে আসে সেই মহেন্দ্র ক্ষণ।

মেয়ের বিদায় বেলা। এই সময়টা প্রত্যেকটা মেয়ের জন্যই ভীষণ কষ্টের। নিজের আপনজন, প্রিয়জনকে ছেড়ে অপরিচিত কতোগুলো মানুষকে আপন করে নিতে হবে। মন যুগিয়ে চলতে হবে তাদের। নিজের শৈশব কৈশর যেখানে কেটেছে সেই বাড়ি ছেড়ে পাড়ি জমাতে হবে অন্য কোনো ঠিকানায়।

বিয়ের পর প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনই পাল্টে যায়। ধরা বাধা কতগুলো নিয়ম মেনে চলতে হয়। বাবার আদরের ঘরের দুলালি হয়ে আর থাকা চলে না। যে মেয়েটা সকাল ৮-৯ টার আগে ঘুম থেকে ওঠতো না। তাকে ঘুম থেকে ওঠতে হয় সবার আগে। যেই মেয়েটা ঘুম থেকে ওঠেই মুখের সামনে খাবার পেয়ে যেতো। সেই মেয়েটাই বিয়ের পর নিজে না খেয়ে সবার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে। মেয়েরা বোধ হয় সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এক ক্ষমতা নিয়েই জন্মায়।

আদিয়াতের বাড়ির লোকজন তোড়জোড় শুরু করে দেয় বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য। আদিয়াতের সাথে এসেছে হাতে গোনা কয়েকজন। অাদিয়াতের দুই তিনটে ক্লোজ ফ্রেন্ড আর কয়েকজন নিকট আত্নীয়। এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে এটা ভেবেই কণার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। আজকে থেকে সে শুধু এই বাড়ির অতিথি। কণা ভাবে মেয়েদের জীবন এমন অদ্ভুত কেনো? বিয়ের আগে বাবার বাড়ি বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি। নিজের কোনো বাড়ি হয় না। আবার দুই বাড়িই মেয়েদের ছাড়া অন্ধকার, অপূর্ণ । তবুও মানুষ মেয়েদের পরগাছা বলে। অদ্ভুত সমাজ অদ্ভুত তার নিয়ম।

এবার কণার যাওয়ার পালা। কণা গিয়ে তিশান আহম্মেদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তিশান আহম্মেদের চোখ দুটো ছলছল করছে। তিশান আহম্মেদ কণার মাথায় হাত রাখে। কণা তিশান আহম্মদকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। তিশান আহম্মেদও কণাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরেন।

তিশান আহম্মেদের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। যে মেয়েকে ছাড়া তিনি এক মিনিটও থাকতে পারতেন নাহ। আর আজকে থেকেই সেই মেয়েকে ছাড়ায় উনার দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, বছরের পর বছর থাকতে হবে। চাইলেও মেয়েকে দেখতে পারবে না। তবু শান্তি মেয়েকে একটা ভালো ছেলের কাছে তুলে দিতে পেরেছেন।

তিশান আহম্মেদ কণার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মেয়েটা কতো বড় হয়ে গেছে। উনার মনে হচ্ছে এই তো সেদিন এই মেয়েটা চকলেট খাওয়ার জন্য বায়না করছিল। কোলে ওঠার জন্য আবদার করছিল। আজকে সেই মেয়েটার বিয়ে। উনার মেয়েটা কতো বড় হয়ে গেছে। মেয়েরা চোখের পলকে বড় হয়ে যায়।
তিশান আহম্মেদ কণাকে নিয়ে আদিয়াতের সামনে দাঁড়ায়। কণাকে আদিয়াতের হাতে তুলে দিয়ে বলে,

বাবা আমার একটা মাত্র মেয়ে। আমাদের চোখের মনি। জীবনে কোনোদিন কষ্ট পেতে দেয়নি। সব সময় চেষ্টা করেছে হাসি খুশি রাখার। সেই চোখের মনিটা আজকে আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম। আশা করি তুমি ওকে সুখেই রাখবে। জানি আমার মেয়ে…..

আদিয়াত তিশান আহম্মেদকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

আংকেল আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ওকে সুখে রাখার। কথা দিচ্ছি আমার কারণে ওকে কোনোদিন কাঁদতে হবে না। কণা আমার জীবন ও ভালো না থাকলে তো আমিও ভালো থাকবো না।

আদিয়াতের বাবা এগিয়ে এসে বলেন, আপনি কোনো চিন্তা করবেন নাহ। কণা আমাদের বাড়িতে বউমা নয় মেয়ে হয়ে থাকবে।

কণা চোখ ঘুরিয়ে সাফাতকে খুঁজছে। সাফাত ড্রয়িংরুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। কণা গিয়ে সাফাতের সামনে দাঁড়ায়। সাফাত নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো চোখের পানি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

ভাইয়া।

কণার ডাক শুনে সাফাত চমকে কণার দিকে তাকায়। কণা সাফাতকে জড়িয়ে ধরে।

ভাইয়া তুমি বলতে না বিয়ে দিয়ে আমাকে শ্বশুড় বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। দেখো আজকে আমি সত্যি সত্যি শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছি। এখন থেকে কেউ তোমার পিছু লাগবে না। তোমাকে জ্বালানোর জন্য কেউ থাকবে না। তোমার সাথে ঝগড়া করার জন্য কেউ থাকবে না। তুমি না খেলে আমিও খাবো না এটা বলার জন্যও কেউ থাকবে না। তোমার কাছে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য আর কেউ বায়না করবে না।

তাড়াতাড়ি বিদায় হ। তুই চলে গেলে আমি সারা বাড়ি জুড়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবো। প্রথমেই তোর রুমটা দখল করবো।

একদম আমার রুম দখল করবে না। আমার কোনো কিছুতেই হাত দিবা না। আমি যেভাবে রেখে গেছি জিনিসগুলো যেনো ঠিক তেমনি পায়। ভাইয়া তোমার কষ্ট হচ্ছে না যে আমি চলে যাচ্ছি।

কষ্ট কেনো হবে? বাসা থেকে একটা শাকচুন্নি বিদায় হচ্ছে। এবার তো আমার শান্তির পালা। কেঁদে কেটে মুখটা একদম পেত্নীর মতো বানিয়ে ফেলেছিস। পরে আদিয়াত কিন্তু তোকে রেখেই চলে যাবে।

কণা সাফাতকে জড়িয়ে ধরে জুড়ে জুড়ে কেঁদে দেয়। সাফাত গিয়ে কণাকে গাড়িতে তুলে দেয়। আদিয়াত এসে একবার সাফাতকে জড়িয়ে ধরে সেও গাড়িতে ওঠে পড়ে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই অন্ধকারে হারিয়ে গেলো গাড়িটা। সাফাতের চোখের আড়াল হয়ে গেলো।

সাফাত আর তিশান আহম্মেদ নিজেদের ফ্ল্যাটে ফিরে আসে। দুজনের থেকে একজনেরও মন ঠিকছে না। সবকিছু খালি খালি লাগছে। সারা বাড়ি খাঁ খাঁ করছে।

৬৩

কণা দাঁড়িয়ে আছে নিজের শ্বশুরবাড়ির দরজার সামনে। আদিয়াতের মা এসে কণাকে বরণ করে ঘরে তুলে। কিন্তু আদিয়াতের মায়ের মুখে হাসির কোনো ছাপ। মুখটা কেমন কালো আর গম্ভীর করে রেখেছে। যেনো তিনি কণাকে দেখে খুশি হননি। কণার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আদিয়াতের মায়ের কী তাকে পছন্দ হয়নি? আদিয়াতের মায়ের অমতে কী তাদের বিয়ে হলো? কণা আর ভাবতে পারছে না। এমনিতে কান্না করার ফলে মাথা ব্যথা করছিল। এখন আবার মনের মাঝে এতো এতো প্রশ্ন।

আরুহি কণাকে আদিয়াতের রুমে নিয়ে গেলো। আর আদিয়াতকে তার ফ্রেন্ডরা নিয়ে গেলো। কণা আদিয়াতের রুমে এসেই অবাক হয়ে গেলো। সারা রুম ফুলের গন্ধে মো মো করছে। রুম জুড়ে ফুলের ছড়াছড়ি। সবগুলো ফুলই কণার প্রিয় ফুল। বেডের সামনে যেতেই কণা আরো বেশি চমকে গেলো। বেডের সাথে দেয়াল জুড়ে কণার এক বিশাল ছবি। ছবিটা আজ থেকে চার বছর আগের। বন্ধুদের সাথে একটা গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিল। এটা তখনকার ছবি। কণা ভাবছে কিন্তু এই ছবিটা আদিয়াতের কাছে আসলো কীভাবে?

আরুহি কণাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। কণা প্রহর গুণতে থাকে আদিয়াতের অপেক্ষায়। দরজায় খট করে আওয়াজ হতেই কণা চোখ তুলে তাকায়। আদিয়াত একটা মুচকি হাসি দিয়ে কণার দিকে এগিয়ে আসে।

মহারানী বসে না থেকে ফ্রেশ হয়ে আসুন। সারাদিন তো কম দখল যায়নি। এতো ভারী পোশাক পড়ে বসে থাকতে হবে না।

কথাগুলো বলেই আদিয়াত কাবার্ডের দিকে চলে গেলো। কাবার্ড থেকে একটা শাড়ি বের করে কণার হাতে দেয়। কণা কিছু বলতে গেলে আদিয়াত কণার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দেয়। কণার চুল থেকে ক্লিপগুলো খুলে চুলটা খুলে দেয়। আস্তে আস্তে শরীর থেকে সব গহনা খুলে দেয়। তারপর ঠেলে কণাকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়।

কণা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আদিয়াত নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই আদিয়াত ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। কণা আদিয়াতের অপেক্ষাতেই বসে ছিল।

কণা আদিয়াতের দিকে এগিয়ে আসে কিছু বলার জন্য। কিন্তু তার আগেই আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। কোলে করে নিয়ে এসে কণাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

আদিয়াত আপনার সাথে আমার কথা আছে।

হুশশশ। কোনো কথা নয়। কথা বলার জন্য অনেক সময় পাবে। চুপচাপ ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে।

আদিয়াত কণাকে কিছু বলতে না দিয়েই কণাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। কণা বেশ বুঝতে পারছে আদিয়াত তার কথাগুলো এড়িয়ে চলতে চাইছে। তাই কণাও আর কোনো কথা বললো না।

৬৪

সকাল থেকে এমনিই সাফাতের মন মেজাজ ঠিক ছিল না। তার মাঝে অহির প্রোপোজ করাটা যেনো সাফাতের মেজাজটা বিগড়ে দিল। সাফাতের রাগটা তীর তীর করে বাড়তে লাগলো। আশেপাশের সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে সাফাতের মাথা ফেটে যাচ্ছে।
#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩২

❌কপি করা নিষেধ। ❌

সকাল ঘুম থেকে ওঠেই সাফাত কণার রুমের সামনে যেতেই দাঁড়িয়ে যায়। সে তো ভুলেই গেছে কণা এখানে নেই। ব্রেকফাস্ট টেবিলে কণাকে ডাকতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়। অতঃপর না খেয়েই ড্রাইনিং টেবিল ছেড়ে ওঠে পড়ে সাফাত। সবকিছুই নিরবে অবলোকন করছেন তিশান আহম্মেদ। তিনি জানেন সাফাত কখনো কণাকে ছাড়া খায় না। দুই ভাই বোন এরকম একজন না খেলে আরেকজন খায় না।

তিশান আহম্মেদও না খেয়ে ওঠে পড়ে। খাবার খাবারের মতোই পড়ে আছে। কেউ ছুঁয়েও দেখেনি। সাফাত না খেয়েই ভার্সিটি চলে যায়। সাফাত গাড়ি ড্রাইভ করছিল ঠিক তখনি গাড়ির সামনে একটা মেয়ে চলে আসে। সাফাত দ্রুত ব্রেক কষে। নাহলে নির্ঘাত মেয়েটা এখানেই নিজের প্রাণ হারাতো। সাফাত ভীষণ বিরক্ত হয়। কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটা কোনো দিকে না তাকিয়ে উল্টো দৌড় দেয়। সাফাতের মাথা গরম হয়ে যায়। একে তো হুট করেই গাড়ির সামনে চলে এসেছে তার উপর মেনার্সলেসের মতো সরি বা ধন্যবাদ না বলেই চলে গেছে।

সাফাত গাড়িতে একটা ঘুষি দিয়ে বলে, রিডিকিউলাস।

গাড়িতে ওঠে আবার ড্রাইভ করা শুরু করে। কিছক্ষণের মাঝেই ভার্সিটি চলে আসে। গাড়ি পার্ক করে ভার্সিটিতে ঢুকতেই অহি গোলাপ ফুল নিয়ে সাফাতের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে প্রোপোজ করে।

সকাল থেকে এমনিই সাফাতের মন মেজাজ ঠিক ছিল না। তার মাঝে অহির প্রোপোজ করাটা যেনো সাফাতের মেজাজটা বিগড়ে দিল। সাফাতের রাগটা তীর তীর করে বাড়তে লাগলো। আশেপাশের সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে সাফাতের মাথা ফেটে যাচ্ছে। সাফাত নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে নিজের রাগ কনট্রোল করতে পারছে না। সকাল থেকে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা সাফাতকে রাগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। তার মাঝে অহির প্রোপোজ করাটা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো।

সাফাত রেগে চিৎকার করে বলে, হেই স্টুপিড মেয়ে তোমার সাহস হয় কী করে আমাকে প্রোপোজ করার? আমি তোমার টিচার হই সেটা কী তুমি ভুলে গেছো? তুমি ফাজলামো পাইছো? প্রথম দিন থেকে বেহেয়ার মতো তুমি আমার পিছনে পড়ে আছো? একের পর এক ভুল করেই যাচ্ছো? আজকে তুমি সবকিছুর লিমিট ক্রস করে ফেলেছো? থাপড়ায়া তোমার গাল লাল করে দিতে ইচ্ছে করছে। তুমি আমাকে প্রোপোজ করলে আর আমি উত্তরে বলবো, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। নেভার এভার। কখনোই আমি এটা বলবো না। কজ আই যাস্ট ডোন্ট লাইক ইউ।নিজেকে তুমি কী ভাবো? হুম? বিশ্ব সুন্দরী? নাঁচতে নাঁচতে প্রোপোজ করতে চলে আসলে। শুনো নেক্সট টাইম তোমাকে যেনো আমার আশেপাশে না দেখি। নেক্সট টাইম এমন কোনো ভুল করলে আমি ভুলে যাব যে এটা ভার্সিটি।

সাফাত রাগে হনহন করে চলে যায়। অহি ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। অহির চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু ঝড়ছে। হাতে গোনা কয়েকজন অহির দিকে তাকিয়ে হাসছে। এদিকটায় যাস্ট কয়েক জন মানুষ ছিল আর অহির বান্ধবীরা। অহির বান্ধবীরা এসে অহিকে টেনে তুলে।

৬৫

খাবার টেবিলে বসে কণা ঘুমে ঢুলছে। আদিয়াতের জন্য এক ফোটাও সে ঘুমুতে পারেনি। সারা রাত আদিয়াত তাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ছিল। সারা রাত শুধু হাসফাস করেছে একটুও ঘুমাতে পারেনি। কেউ এভাবে ধরে রাখলে কী ঘুমানো যায়? আদিয়াতকে ছাড়ার কথা বলতেই আদিয়াত শুধু বলেছিল, অভ্যাস করে নাও এখন থেকে এভাবেই ঘুমাতে হবে। আদিয়াত ঘুমের দেশ তলিয়ে যায়। রাহেলা বেগম কণার পাশে এসে বসে। কণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

কী হয়েছে মা? শরীর খারাপ লাগছে? নতুন জায়গা রাতে থাকতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? দেখতে তো পারছো এতো মানুষ সব আমাকে একা দেখতে হয়, একা করতে হয়। আমার একটা মেয়েও নেই যে আমাকে সাহায্য করবে।

আরুহি পাশ থেকে বলে, এখন আমাকে আর তোমার চোখে পড়ে না। তোমার কতো কাজে হেল্প করে দিলাম।

বয়স তো আর কম হলো না। এখন মনে হয় চোখেও কম দেখি। তুই আমাকে এতো গল্প করলি আর আমার চোখ দেখলো তুই ফোন নিয়ে ফুসুর ফুসুর করছিলি। চোখের ডক্টর দেখাতে হবে মনে হয়।

রাহেলা বেগমের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। আরুহি গাল ফুলিয়ে বসে। রাহেলা বেগম কণার দিকে তাকিয়ে বলে,

নিয়ম অনুযায়ী আজকে তো তোমাকে আর আদিয়াতকে তোমাদের বাড়ি যেতে হবে। খাওয়া দাওয়া করে একটু রেস্ট নিয়ে নিয়ো। বিকালে দিকে ও বাড়ি চলে যেয়ো। এই তোমরা তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো।

এটা বলে রাহেলা বেগম চলে যায়। কণা আদিয়াতের জন্য শান্তিতে খেতেও পারছে না। আদিয়াত নিজের পা দিয়ে কণার পায়ের ওপর স্লাইড করছে। কণা আদিয়াতের দিকে তাকালেই আদিয়াত মিটিমিটি হাসে। কণা আদিয়াতে পায়ে জুড়ে গুতা মারে। কিন্তু আদিয়াতের পরিবর্তে আদিয়াতের বন্ধু রবিন লাফিয়ে ওঠে পা ধরে। রবিন চিল্লায় বলে,

আমার পায়ে কে এতো জুড়ে লাথি মারলো?

কণার কাঁশি ওঠে যায়। কণা বেশ বুঝতে পারছে আদিয়াতের পরিবর্তে সে রবিনকে লাথি মেরেছে। কণা তাকিয়ে দেখে আদিয়াত মিটিমিটি হাসছে। কণার আর বুঝতে বাকি রইল না সবটাই আদিয়াতে কারসাজি। কণা ভয়ে ভয়ে আছে সবার সামনে আবার এটা ফাস না হয়ে যায় যে, সে লাথি মেরেছে। যদি সবাই জেনে যায় কেমন বিশ্রী একটা ব্যাপার হবে। নতুন বউ লাথি মারছে। সবাই কী ভাববে? রবিন আরুহির দিকে তাকিয়ে বলে,

আপনিই আমাকে লাথি মারছেন তাই না? আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন নাহ জানতাম। তাই বলে এতো জুড়ে লাথি মারবেন। গাড়িতে আপনাকে আদিয়াতের সাথে বসতে দেয়নি বলে আপনি এভাবে প্রতিশোধ নিলেন।

আরুহি রবিন দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে, হোয়াট ননসেন্স। আপনি এসব কী আবল তাবল বলছেন? আমি কখন আপনাকে লাথি মারলাম? আমার আর কোনো কাজ নেই যে আপনাকে লাথি মারতে যাব।

আপনিই আমাকে লাথি মেরেছেন। এটাই কোনো সন্দেহ নেই। আপনি আমার সোজাসুজি বসেছেন আর আপনার সাথেই আমার শত্রুতা। এখানে উপস্থিত আর কারো সাথেই আমার শত্রুতা নেই। এটাতেই প্রমাণিত হচ্ছে আপনিই আমাকে লাথি মেরেছেন? আপনি তো আমাকে খুন করার প্লেন করেছিলেন।

মানে? কী আজেবাজে কথা বলছেন?

খাওয়ার সময় আপনি আমাকে লাথি মেরেছেন। যদি আমার গলায় খাবার আটকে যেতো আর আমি মারা যেতাম। তখন আপনি কী করতেন?

আজব। আমি আপনাকে লাথি মারিনি।

আপনি লাথি না দিলে কে দিয়েছে?

আদিয়াত কণার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলে, টেবলের নিচে এটু হুলু বিড়াল আছে। ঐ বিড়াল তোকে লাথি মেরেছে।

আদিয়াত কণাকে বিড়াল বলায় কণা ভীষণ রেগে যায়। কণা আদিয়াতের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে টেবিল ছেড়ে ওঠে চলে যায়। কণার পিছু পিছু আদিয়াতও চলে যায় আর বাকিরা টেবিলের নিচে বিড়াল খোঁজতে ব্যস্ত। আদিয়াত গুণ গুণ করে গান গাইতে গাইতে কণার পিছু পিছু যাচ্ছে। আদিয়াত গুন গুন সুরের গান যেনো কণার রাগে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে।

কণা আদিয়াতের দিকে আরেকবার অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুমে ঢুকে যায়। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে যাবে তার আগেই কণাকে ঠেলে আদিয়াত রুমে ঢুকে পড়ে। আদিয়াত রুমে ঢুকেই ঠাস করে দরজা বন্ধ করে ফেলে। কণা রাগে ফুসফুস করছে। আদিয়াত কণার কোমড় জড়িয়ে ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে নেয়।

ধূলিকণা বুঝি আমার ওপর রাগ করেছে?

কণা মুখ ফিরিয়ে নেয়।

পিচ্চি একটা মেয়ে আর এতো রাগ। এতো রাগ কই থাকে? হুম?

আদিয়াত কণার কোমড়ে একটা চিমটি কাটে।
কণা আদিয়াতের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,

একদম আমাকে পিচ্চি বলবেন নাহ।

পিচ্চিকে পিচ্চি বলবো না তো কী বলবো? তুমি জানো তুমি আমার থেকে ৭ বছরের ছোট।

কণা কাঠ কাঠ গলায় বলে, আমি যখন এতোই পিচ্চি। তাহলে পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করলেন কেনো?

আদিয়াত কণাকে আরেকটু কাছে টেনে এনে বলে, ভালোবাসি তাই।

আদিয়াতের মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনে কণার রাগ কর্পূরের মতো উদাও হয়ে গেলো। কণা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের দিকে। আদিয়াতের ফোন বেঁজে ওঠায়। আদিয়াত কণাকে ছেড়ে দেয়। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে আদিয়াত দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়।
#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩৩

❌কপি করা নিষেধ। ❌

আদিয়াতের মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনে কণার রাগ কর্পূরের মতো উদাও হয়ে গেলো। কণা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের দিকে। আদিয়াতও কণার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিয়াত হাত বাড়িয়ে কণার কপালের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। কণার মুখের ওপর ফুঁ দেয়। কণা চোখ বন্ধ করে ফেলে। হুট করেই আদিয়াতের ফোন বেঁজে ওঠে।

আদিয়াত কণাকে ছেড়ে দেয়। পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোনের স্কিনে তাকায়। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে আদিয়াত কণাকে কিছু না বলেই দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়। কণা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের যাওয়ার দিকে। কণা বুঝতে পারছে না আদিয়াত হঠাৎ করে এভাবে চলে গেলো কেনো? আর তার সামনে ফোনটা রিসিভ করলো না কেনো?

কণার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে অসংখ্য প্রশ্ন। কে ফোন করেছিল? আর কেনোই বা এতো গোপনীয়তা?

৬৬

কণা থমথমে মুখে বসে আছে সাফাতের সামনে। কিছুক্ষণ আগেই এখানে এসেছে। কণা বাড়িতে এসেই সাফাত হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে রুমে। প্রায় পাঁচ মিনিট হলো কণা এভাবে সোফায় বসে আছে। আর সাফাত বিছানায় বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে কণার দিকে। সে বুঝতে পারছে না কণার কী হয়েছে? কিন্তু এই টুকু ঠিকই বুঝতে পারছে যে কণা ভীষণ রেগে আছে।

আদিয়াত চলে যাওয়ার পর পরই কণা অহিকে কল দেয়। কিন্তু অহির ফোন বন্ধ দেখায়। অহিকে ফোনে না পেয়ে কণা অহির বান্ধবীকে কল দেয়। অহির বান্ধবী অহির সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। সাফাত কীভাবে অহিকে অপমান করেছে সব। সবকিছু শোনে কণা স্তব্ধ হয়ে যায়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না সাফাত অহিকে এভাবে অপমান করেছে। সাফাত মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করে। আজ একটা মেয়েকে জন সম্মুখে এভাবে অপমান করলো আর অহিকে তো সাফাত ছোটবেলা থেকে চিনে। কণা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।

সাফাত ভীতু কন্ঠে বলে, কী হয়েছে কণা তুই এভাবে বসে আছিস কেনো? আর আমাকে এভাবে টেনে আনলি কেনো?

কণা রাগে ফুসছে।

সাফাত এবার মজার ছলে বলে, আদিয়াত তোকে মারছে? মারারই কথা তোর মতো অর্কমারে প্রতিদিন নিয়ম করে তিন বেলা পিঠানোর দরকার।

ভাইয়া আমি একদম মজা করার মুডে নেই।

আমি তো মজা করছি না। আমিও অনেক সিরিয়াস। তুই কেনো বিশ্বাস করতে চাইছিস না। কী করলে বিশ্বাস করবি?

তুমি আমার বান্ধবীকে অপমান করেছ কেনো?

আমি অপমান করবো তাও আবার তোর বান্ধবীকে? আল্লাহ আমার কী আমার জীবনের প্রতি মায়া নেই। তোর মতো একটা পেত্নীর বান্ধবীকে আমি অপমান করবো।

তাহলে অহিকে কে অপমান করেছে?

অহির নামটা শুনেই সাফাতের মুখটা কালো হয়ে যায়। অহির সাথে অমন ব্যবহার করার জন্য সে নিজেও অনুতপ্ত। রাগের মাথায় অপমান করলেও রাগ পড়ে গেলে তার ভীষণ খারাপ লাগে। তারপর থেকেই তার ভিতরে ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করছে। সে সারাদিন ভেবেছে কীভাবে অহির কাছ থেকে ক্ষমা চাইবে? কিন্তু সরি বলা আর হয়ে ওঠেনি। সরি বললেও তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। সে সরি বললেও তো অহি যেভাবে অপমানিত হয়েছে সেটা ভুলে যাবে না।

আমি ইচ্ছে করে অপমান করেনি। রাগের মাথায় অপমান করে দিয়েছি। আমি নিজে কী বলছিলাম সেটা আমিই নিজেই বুঝতে পারিনি।

তুমি এতো রেগে গেলে কেনো? ভালোবাসা কী অপরাধ? নাকি কাউকে ভালোবাসা অন্যায়। কারো তোমাকে কারো ভালো লাগতেই পারে। তোমাকে কেউ ভালোবাসতেই পারে। তাই বলে কী তুমি তাকে অপমান করবা? তাকে অপমান করার কোনো রাইট তোমার নেই। তার ভালোবাসাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য তুমি করতে পারো না।

ভালোবাসা কোনো অন্যায় না বা কাউকে ভালোবাসাও কোনো অপরাধ না। সবারই অধিকার আছে ভালোবাসার। ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার। আমি অহির সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য সত্যিই অনুতপ্ত। অহি আমাকে ভালোবেসে এটা শুনে আমি রেগে যায়নি। আমি তো আগে থেকেই রেগে ছিলাম। ( সাফাত কণাকে সবটা খুলে বলে) ঐ মেয়েটার ওপর রাগ দেখাতে পারিনি বিধায় সবটা রাগ অহির ওপর এসে পড়ে। আমি সত্যিই অনেক অনুতপ্ত। আমি অহিকে সরি বলতে চাই। কিন্তু কীভাবে সরি বলবো বুঝতে পারছি না।

তুমি সরি বললেই কী সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? সবাই যে অহির দিকে বাঁকা চোখে তাকাবে। নানা জন নানান কথা বলবে তাদের মুখ কী বন্ধ হয়ে যাবে? তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী চেইন্জ হয়ে যাবে?

সরি বললে এসব কিছুই হয়তো হবে না। কিন্তু আমার মনের শান্তি মিলবে।

কণা,,,, কণা,,, কণা।

আদিয়াতের ডাক শুনে কণা লাফিয়ে ওঠে। সে তো এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিল তার সাথে আদিয়াতও এসেছে। আদিয়াতকে দরজার কাছে রেখে কণা যে সাফাতের রুমে এসেছিল আর বের হয়নি। সে এই বাড়িতে এসেছে প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে এর মাঝে কণা আদিয়াতের কোনো খোঁজ নেইনি এমনকি দেখাও করেনি। এখন তার কী হবে? আদিয়াত তাকে এখন একবার হাতের কাছে পেলে আল্লাহ মাবুদ জানে কী করবে? যদি এখন না যায় হয়তো শাস্তির মাত্রা ডাবল হয় যাবে।

সাফাত কণার ভীতু মুখটা দেখে ফিক করে হেসে দেয়ে। কণা সাফাতের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সাফাতের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তবুও সে মিটিমিটি হাসছে। সাফাতের হাসি দেখে কণা দমক দিয়ে বলে,

এই তুমি হাসছো কেনো?

কোথায় আমি হাসছি?

তোমার কী আমাকে কানা মনে হয়? আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুমি হাসছো।

আমার মুখ আমি হাসবো না কী করবো সেটা আমার ব্যাপার। আমার ইচ্ছে হলে আমার মুখ দিয়ে আমি ক্লোজ আপ এ্যাড দিব।

কারণ ছাড়া যারা হাসে তাদের বোকা বলা হয়।

তোকে কে বলেছে আমি কারণ ছাড়া হাসছি? জানিস তো বাপের বাপ থাকে। এতক্ষণ তোকে দেখে আমি ভয় পাচ্ছিলাম আর তুই আদিয়াতের ডাক শুনেই ভয়ে কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিয়েছিস।

আরেকবার আদিয়াতের ডাক পড়ায় কণা সাফাতের দিকে চোখ পাকিয়ে চলে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো আমি তোমাকে পরে দেখে নিবো।

৬৭

কণা নিজের রুমের সামনেই পায়চারী করছে। রুমের ভিতর যাবে নাকি যাবে না তা নিয়ে দ্বিধা দন্ডে ভুগছে। হুট করে রুমের দরজা খুলে একটা হাত কণাকে ভিতরে টেনে নেয়। কণা চমকে ওঠে। আদিয়াত কণাকে দরজার সাথে চেপে ধরে। আদিয়াত হিসহিসিয়ে বলে,

নিজের বাড়িতে এসেই এই অদমটাকে ভুলে গেলেন মিসেস কণা? কেউ একজন যে চাতকপাখির মতো আপনার অপেক্ষায় বসে থাকে সেই কথা কী আপনার মনে থাকে না?

সরি। এমন আর হবে না। আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

আপনি তো সব ভুলেই যান? কিন্তু সব ভুলতো ক্ষমা করা যায় না। আপনাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।

ককককী শা……

কণা আর কিছু বলতে পারলো না। কথাগুলো গলায় আটকে গেলো। আদিয়াদ কণার গলায় পর পর দুইবার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েছে। আদিয়াত এতো কাছে আসায় যেনো কণার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কণা জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। আদিয়াত মুচকি হেসে কণার কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। লজ্জায় কণা চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।

৬৮

কণা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল। অসময়ে কলিংবেল বেঁজে ওঠায় কণা একটু বিরক্ত হয়। পরক্ষণেই আদিয়াত এসেছে এটা ভেবেই কণার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কণা হাসি মুখে দরজা খুলে দেয়। কিন্তু দরজাটা খুলে অপর প্রান্তের দুই ব্যক্তিকে দেখে নিমিষেই কণার মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। মুখ অন্ধকার মেঘে ঢেকে যায়। কণার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদিয়াত আর ছোঁয়া। আদিয়াত ছোঁয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। #তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩৪

❌কপি করা নিষেধ। ❌

কণা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল। সময়টা এখন সন্ধ্যা ৭ টা। আজকে একদিন হলো তাদের বাসায় এসেছে। আদিয়াদ কোনো একটা বিশেষ কাজে বাইরে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।

অসময়ে কলিংবেল বেঁজে ওঠায় কণা একটু বিরক্ত হয়। পরক্ষণেই আদিয়াত এসেছে এটা ভেবেই কণার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। কণা হাসি মুখে দরজা খুলে দেয়। কিন্তু দরজাটা খুলে অপর প্রান্তের দুই ব্যক্তিকে দেখে নিমিষেই কণার মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। মুখ অন্ধকার মেঘে ঢেকে যায়। কণার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদিয়াত আর ছোঁয়া। আদিয়াত ছোঁয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

এটা দেখেই কণার মাথা ঘুরে আসে। কণা দরজা থেকে দু পা পিছিয়ে আসে। কণা বুঝতে পারছে না ছোঁয়া এখানে কী করছে? আর ছোঁয়ার সাথে আদিয়াতই বা কেনো? আদিয়াত কণাকে পাশ কাটিয়ে ছোঁয়াকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে। তারপর ধাক্কা মেরে ছোঁয়াকে ফেলে দেয়। ছোঁয়া টাল সামলাতে না পেরে সোফার ওপর পড়ে যায়।

আদিয়াতের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। আদিয়াতের চোখে মুখে হিংস্রতা ফুটে ওঠেছে। কণা কিছুই বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে? সাফাত আর তিশান আহম্মেদও রুম থেকে বের হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পরে পর পর আভিয়ান, ঐশি, অহি, আর আরুহি। সাফাত তাকিয়ে আছে অহির দিকে। একদিনেই মেয়েটার মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। অহির মলিন মুখেও ফুটে ওঠছে রাগ।

সবাইকে এক সাথে দেখে কণা একটু বেশিই অবাক হলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান আর ফাহিমও এলো। আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে আছে একবারের জন্য ও মাথা উঁচু করে তাকায় নি। আদিয়াত ছোঁয়ার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাঠ কাঠ গলায় বলে,

কণার সামনে সবটা স্বীকার কর আর ক্ষমা চা।

কিন্তু ছোঁয়া মুখ খুলতে নারাজ। আর কণার কাছে ক্ষমা চাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। কণার মতো একটা মেয়ের কাছে সে ক্ষমা চাইবে। এটা কল্পনাতেই সম্ভব। অহি এগিয়ে আসে। ছোঁয়ার চুলের মুঠি ধরে ঠাস ঠাস করে চারটা চর বসিয়ে ছোঁয়ার গালে। ছোঁয়ার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। অহি ছোঁয়ার চুলটা জুড়ে টেনে ধরে। ছোঁয়া ব্যথায় কুঁকিয়ে ওঠে। অহি আরো দুই তিনটে থাপ্পড় মারে। ছোঁয়া কিছু বলতে পারছে না। কারণ এর আগেও তার কয়েক বার মার খাওয়া হয়ে গেছে।

তুই সত্যিটা বলবি নাকি আমার হাতে খুন হবি।

কীসের সত্যি বলবো? আমি কোনো সত্যি টত্যি জানি না।

বুঝতে পেরেছি তুই এভাবে সব স্বীকার করবি না। আদিয়াত ভাইয়া আপনি পুলিশকে খবর দিন। একে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো আমি। রিমান্ডে গেলে এমনিই সব স্বীকার করবে। তুই বলবি নাকি আমি তোকে মেরে ফেলবো।

আমি কিছু বলবো না।

আদিয়াত এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজের মাথা ঠান্ডা। নিজের রাগটা কনট্রোল করছিল। এখন আর নিজের রাগটা কনট্রোল করতে পারলো না। ছোঁয়ার গালে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

কণার ওপর এ্যাটাক কে করিয়েছিল। কণার মুখে এসিড নিক্ষেপের নির্দেশ তুই দিয়েছিলি না?

ছোঁয়া অহির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,

হ্যাঁ হ্যাঁ সব আমি করেছি। আমি কণার ওপর এ্যাটাক করাই। কণার সুন্দর চেহেরাটা এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার অর্ডার আমিই দিয়েছিলাম। কারণ আমি কণাকে সহ্য করতে পারতাম না। ও সবকিছুতেই ফাস্ট ছিল যেটা আমি সহ্য হতো না। আমি ছোটবেলা থেকেই ক্লাসে কখনো ফাস্ট থেকে সেকেন্ড হয়নি। শুধু মাত্র ওর জন্য ভার্সিটিতে সেকেন্ড হয়েছি। সব স্যারদের কাছে ও প্রিয় ছিল। যেটা আমি একদমি সহ্য করতে পারতাম না। তবু এটা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু কণা আমার কাছ থেকে আমার আদ্রিয়ানকে ও কেঁড়ে নিলো। আদ্রিয়ানের ওপর আমার প্রথম থেকেই নজর ছিল। ওকে আমার ভালো লাগতো। ওর কথা বার্তা চলাফেরা সবকিছুই আমার ভালো লাগতো। ওকে আমি সব সময়ই ফলো করতাম। ওর প্রত্যেকটা মুভমেন্ট আমি ফলো করতাম। দিনকে দিন ওর প্রতি আমার অনুভূতি গাড় হতে লাগলো। আস্তে আস্তে ভালো লাগাটা ভালোবাসায় পরিণত হলো। নিজের অজান্তেই আদ্রিয়ানকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু আদ্রিয়ান আমাকে পাত্তাও দিতো না। আদ্রিয়ান আমার দিকে ফিরেও তাকাতো না। আমাকে সব সময় এড়িয়ে চলতো। আমি নিজে থেকে কথা বলতে গেলে ইগনোর করতো। তবুও নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম আদ্রিয়ান আমার না হোক অন্য কারো তো হয়নি। আদ্রিয়ানকে নিয়ে কল্পনা জল্পনা করতে করতে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যেতে থাকি। একদিন হুট করেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। হসপিটালে ভর্তি ছিলাম ৬ দিন। সুস্থ হয়েই ছুটে যায় ভার্সিটিতে আদ্রিয়ানকে এক নজর দেখার জন্য। ভার্সিটিতে গিয়ে কানা ঘুষা শুনতে পাই আদ্রিয়ান আর কণা রিলেশনে গেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু রাতের মাঝেই আমার বিশ্বাস ভেঙে যায় আদ্রিয়ান আর কণার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেখে। নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎই আমার চোখের সামনে আদ্রিয়ান আর কণার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস চলে আসে। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসটা ছিল ৬ দিন আগের। আমি মেনে নিতে পারছিলাম নাহ কণা আর আদ্রিয়ানের রিলেশনের ব্যাপারটা।

এই টুকু বলে থামে ছোঁয়া। এদিকে কণা কেমন জানি করছে। আদিয়াত গিয়ে কণাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াত জড়িয়ে ধরতেই কণা আদিয়াতের বুকের সাথে লেপ্টে যায়।
অহি ছোঁয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,

থামলি কেনো? সবটা বল। পরে তুই কী করলি?

ছোঁয়া দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে, সেদিন রাতে আমি আর ঘুমাতে পারিনি। সারা রাত কাটিয়েছি কেঁদে কেঁদে। এক মিনিটের জন্য দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি। সময় গড়াতে থাকে আমার ভিতরে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। কণার এই হাসি খুশি মুখটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম নাহ। আমার চোখের সামনে আদ্রিয়ান আর কণা হাত ধরে ঘুরাঘুরি করতো, ফুচকা খেতো। তাদের এসব ন্যাকামো মার্কা প্রেম আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। মনে মনে প্লেন করে নেই কণার এই রূপ আমি এসিড দিয়ে ঝলসে দিব। আদ্রিয়ান তখন আর কণার দিকে ফিরেও তাকাবে না। তখন কণা দুইটা টিউশনি করাতো আর একটা টিউশনি ছিল আমার বাসার পাশের বাসায়। টিউশনি শেষ আদ্রিয়ানই সব সময়ই কণাকে নিতে আসতো। কিন্তু সেদিন আদ্রিয়ান আর তার ফ্রেন্ডদের সাথে ট্রুরে গিয়েছিল আর আমি সেই সুযোগটাই কাজে লাগাই। সেদিন আমি কণার কাছে পড়া বুঝতে যাই। পড়া বোঝার বাহানায় আমি কণার অনেকটা দেরি করে ফেলি। কণা পড়া বুঝাতে এতোই মগ্ন ছিল যে কখন ঘড়ির কাটা ৭ টার ঘর পেরিয়ে ৮ টার ঘরে চলে গেছে খেয়ালই করেনি। কণা ৮ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়। বাসা থেকে বের হয়ে কণা কোনো গাড়ি পায় না। তাই হাঁটতে শুরু করে। কণা যখন একা নিঝুম নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তখনি আমার লোকেরা কণাকে ঘিরে ধরে। সুযোগ বুঝে কণার মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে। তাদেরও কণার ওপর আগে থেকেই রাগ ছিল। কারণ কণার জন্যই আদ্রিয়ান একদিন ওদের বেদারম মার মেরেছিল। ৭ দিন হসপিটালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। তারপর থেকে ওরাও মরিয়া হয়ে ওঠে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। আমি ওদের আরো উস্কে দেই আর আমার প্লেনের কথা বলি। ওরাও রাজি হয়ে যায়। কণা যখন মাটিতে পড়ে ছটফট করছিল তখনি আমার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছিল। আমার অন্তর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।

কণা আর সহ্য করতে পারলো না ছোঁয়াকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করলো। আদিয়াত কণাকে টেনে সরিয়ে ফেলে। ছোঁয়ার কোনো রিয়েকশন নেই। ছোঁয়া আবার বলতে শুরু করলো।

সুযোগ বুঝে আদ্রিয়ানকে প্রোপোজ করে ফেলি। আদ্রিয়ানও রাজি হয়ে যায়। তখন কী আর জানতাম আদ্রিয়ান সুন্দরের পুজারি। নতুন কাউকে পেলে আগের জনকে ভুলে যায়। আমাকে পেয়ে কণাকে ভুলে গিয়েছিল। আরুহিকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিতেও দুই বার ভাবেনি। এই আরুহির জন্যই আমি আদ্রিয়ানকে পায়নি। এই আরুহিকে আমি ছাড়বো না। ওকে আমি নিজের হাতে শেষ করবো। খুন করে ফেলবো ওকে। এমনিতেও জেলে যেতে হবে। আমি ওকে খুন করেই জেলে যাব। #তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩৫

সুযোগ বুঝে আদ্রিয়ানকে প্রোপোজ করে ফেলি। আদ্রিয়ানও রাজি হয়ে যায়। তখন কী আর জানতাম আদ্রিয়ান সুন্দরের পুজারি। নতুন কাউকে পেলে আগের জনকে ভুলে যায়। আমাকে পেয়ে কণাকে ভুলে গিয়েছিল। আরুহিকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিতেও দুই বার ভাবেনি। এই আরুহির জন্যই আমি আদ্রিয়ানকে পায়নি। এই আরুহিকে আমি ছাড়বো না। ওকে আমি নিজের হাতে শেষ করবো। খুন করে ফেলবো ওকে। এমনিতেও জেলে যেতে হবে। আমি ওকে খুন করেই তবে জেলে যাব।

ছোঁয়া সেন্টার টেবিলের ওপর রাখা ছুড়িটা নিয়ে আরুহির গলায় জুড়ে চেপে ধরে। ছোঁয়া আরুহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

জানিস তোকে আমি মারতাম না। কিন্তু তোকে না মারলে তুই আদ্রিয়ানের সাথে সুখে সংসার করবি সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না। আমি আদ্রিয়ানকেই মারতাম কিন্তু আদ্রিয়ানকে আমি মারতে পারবো না। কারণ আমি আদ্রিয়ানকে ভালোবাসি। কিন্তু তোকে মারতে আমার একটুও হাত কাঁপবে না। আমি যখন আদ্রিয়ানকে পাইনি তখন আমি আদ্রিয়ানকে কাউকে পেতে দিবো না।

কথাগুলো বলেই ছোঁয়া পাগলের মতো হাসতে থাকে। আরুহির গলায় আরেকটু জুড়ে ছুড়িটা চেপে ধরে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। সবাই বুঝতে পারছে এখন ছোঁয়ার মাথার ঠিক নেই। যে কোনো সময় যে কোনো কিছু করে দিতে পারে। আরুহিকে মারতেও ছোঁয়া দুই বার ভাববে না।

তখনি পিছন থেকে একটা মহিলা কনস্টেবল এসে ছোঁয়ার হাত থেকে ছুড়িটা কেড়ে নেয় আর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছোঁয়ার গালে থাপ্পড় মারে। টাল সামলাতে না পেরে ছোঁয়া নিচে পড়ে যায়। মহিলা কনস্টেবল ছোঁয়াকে টেনে নিচে থেকে তুলে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। পুলিশ অফিসার আদিয়াতের সাথে কথা বলে চলে যায়। হঠাৎ সাফাত নিজের শরীরে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করে। কিন্তু তার আশেপাশে ব্যথা পাওয়ার মতো কিছু দেখতে পায় না।

৬৯

আদিয়াত তাকিয়ে আছে কণার মলিন মুখটার দিকে। কণাকে কেমন প্রাণহীন লাগছে। আদিয়াত গিয়ে কণার গা ঘেষে বসে। কণার গালে হাত রাখে। কণা নিজের গাল থেকে আদিয়াতের হাতটা সরিয়ে দিয়ে আদিয়াতকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে হু হু হু করে কেঁদে দেয়।
হঠাৎ করে কণার এভাবে কান্না করায় আদিয়াত একটু থতমত খেয়ে যায়। আদিয়াত কণার কান্নার কারণ বুঝতে পারছে না। কণা ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,

আদিয়াত আপনি আরো আগে কেনো আমার জীবনে এলেন নাহ? বলুন নাহ? কেনো এলেন নাহ? আপনি যদি আরো আগে আমার জীবনে আসতেন তবে আমার জীবন এভাবে এলোমেলো হয়ে যেতো না। নিজের মুখ লুকিয়ে রাখতে হতো না। আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলা হতো না। আপনি আরো আগে আমার জীবনে আসলে আমি আদ্রিয়ানের সাথে রিলেশনে যাওয়ার মতো ভুলটা করতাম নাহ। আপনি হতেন আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।

আদিয়াত কণার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে বলে,

হুশশশ। কোনো কথা নয়।

কণার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে। প্রেম জীবনে একবার আসে না। প্রেম জীবনে বহুবার বহু রুপে আসে। আমি তোমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা হতে পারিনি তো কী হয়েছে? আমি তোমার জীবনের শেষ ভালোবাসা হবো। আমি তোমার জন্য কোনোদিনও অস্বস্তিতে পড়িনি। তুমি আমার ভালোবাসা। তোমাকে আমি যেকোনো সময় যেকোনো রুপে গ্রহণ করে নিতে রাজি।

আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন কেনো?

ভালোবাসার জন্য কোনো কারণ লাগে না। ভালোবাসাটা এমনি এমনি হয়ে যায়। আমি তোমাকে কেনো ভালোবাসি? সেই কারণটা আমার অজানা। শুধু এতটুকু বলতে পারি তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। তুমি আমার অন্ধকার জীবনের আলো। তুমি আমার বেঁচে থাকার একটা কারণ। তোমাকে ছাড়া এই আদিয়াত কিছুই না।

আপনি কতো পারফেক্ট একজন মানুষ। আপনি আমার থেকে হাজার গুণ ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করেন।

আমার তো তোমার চেয়ে হাজার গুণ ভালো মেয়ে চাই না। আমার তো শুধু তোমাকেই লাগবে। বেঁচে থাকার জন্য লাগবে। প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার জন্য তোমাকে লাগবে। আমি সব ঠিক করে দিব। তোমাকে আবার তোমার আগের চেহেরা ফিরিয়ে দিব। এখন তো শুধু সময়ের অপেক্ষা।

সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবতী। তাই তো আপনার মতো একজন মানুষকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।

অনেক হয়েছে এসব গুরু গম্ভীর কথাবার্তা। এখন এসব বাদ দাও। কাছে এসে বসো তো একটু মন ভরে আদর করি। তিন দিন হলো বিয়ে করেছি। কিন্তু এখনো নিজের বউকে একটু ছুঁয়ে দেখলাম নাহ। সত্যিই আমি অনেক ভদ্র একটা ছেলে।

আদিয়াতের কথায় কণা লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে যায়। আদিয়াত যে লাগামহীন কথাবার্তা বলা শুরু করবে সেটা কণার কল্পনারও বাইরে ছিল। কণা মুখ বাঁকিয়ে বলে,

ভদ্র না ছাই। অসভ্য একটা।

কণার কথা বলার স্টাইল দেখে আদিয়াত হেসে ফেলে।

৭০

প্রায় সবাই চলে গেছে শুধু রয়ে গেছে অহি। আদ্রিয়ানও থেকে যেতে চেয়েছিল কণার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য। কিন্তু তিশান আহম্মেদ না করে দিয়েছে। তিনি চান নাহ কণার নতুন জীবনে অতীতের কোনো ছায়া পড়ুক। অহি মুলত কণার সাথে দেখা করার জন্যই থেকে গেছে।

কণার রুমে যেতে হলে সাফাতের রুমের সামনে দিয়ে যেতে হয়। অহি কণার সাথে দেখা করার জন্য যখন কণার রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনি সাফাত অহির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে আসে। আচমকা এমন হওয়াতেই অহি ভয়ে পেয়ে যায়। কিন্তু সামনে সাফাতকে দেখে অহির দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়। অহিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফাত একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তবু নিজেকে সামলে নেয়। অহির দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,

অহি আমি কী বলবো সত্যিই বুঝতে পারছি না। সেদিনের ব্যবহার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে তোমার সাথে সেদিন খারাপ ব্যবহার করতে চাইনি। নিজের অজান্তেই তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। আই’ম সরি। আই’ম রিয়েলি সরি। প্লিজ ফর গিভ মি।

সব সময় কী সরি বললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিলে কী আপনি আপনার করা অপমান ফিরিয়ে নিতে পারবেন?

তার মানে তুমি আমাকে ক্ষমা করবা না?

সাফাত আর কিছু বলতে পারলো না। সাফাতের ধরে রাখা অহির হাতটা ডিলে হয়ে আসে। আচমকা সাফাত নিচে ঢলে পড়ে। সাফাতের এভাবে পড়ে যাওয়ার মানে অহি বুঝতে পারছে না। সাফাতকে কয়েক বার ডেকেও যখন অহি সাড়া পেলো না। তখন অহি ভয় পেয়ে যায়। মনের মাঝে অজানা ভয় হানা দেয়।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here