তুমি আসবে বলে পর্ব -১৩+১৪

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ১৩

সকালের রোদ চোখে পরতেই চোখ মুখ কুচকে এলো, সকালের নরম রোদের ছড়াছড়ি সারা মুখ জুড়ে, ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই চোখে পরে সুবিশাল আকাশে বিস্তীর্ণ সফেদ পেজা তুলোর মতো মেঘেদের পাশাপাশি পাখিদের উড়াউড়ির খেলা। গ্রীষ্মের শেষের দিকে মিষ্টি হাওয়া মাখতে খারাপ লাগছে নাহ।

-আফু,উঠেছিস মা

মামনীর ডাকে শোয়া ছেড়ে উঠে বসলাম। আমার পাশে এসে বসে বললেন

-রাতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? ঘুম হয়েছে ভালো?

মামনীর কথায় রাতের মনে পরে গেলো। ঘুম কি করে হবে,ঘরের মধ্যে আস্ত গু’ন্ডা রেখেছো গো। রাত বিরেতে এসে আমার ঠ্যা’ঙ ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়,বস্তা যে পাশের ঘরেই আছে,তা মনে করিয়ে দেয় তাহলে ঘুম কি করে হবে।
এতোগুলা কথা মনের মধ্যেই রেখে মুখে হালকা হেসে উত্তর দিলাম

-না মামনী কোনো অসুবিধা হয়নি,আমার ঘুম বেশ হয়েছে

-তবে চল ফ্রেশ হবি, ৯ টা বাজতে চললো। সময়মতো ওষুধ গুলোও খেতে হবে তো

বলেই আমায় ধরে নিয়ে ওয়াশরুমে দিয়ে আসলো,কিছুক্ষণ বাদে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতেই,আবার আমাকে ধরে নিচে ডাইনিং এ নিয়ে আসলো। কাল পরে যাওয়ার কারণে পায়ের ব্যাথা টা বেরেছে। আমায় ধরে রাখলেও সোজা হতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, কিন্ত মামনী কে বললে উনি আবারও অস্থির হয়ে যাবেন তাই চুপচাপ দাত এটে এসে বসলাম।

আংকেল আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়েছে, রুচি আপুর বাবার সাথে কোন বন্ধুর বাড়ি গিয়েছে উত্তরাই।
আমি বসে আছি টেবিলে,মামনী এক এক করে নাস্তা এনে রাখছে। এর মাঝে চোখ গেলো সিড়ির দিকে

কফি কালার শার্টের সাথে ডিপ অফ হোয়াইট রঙের প্যান্ট পরনে, আর ব্লেজার টা বরাবরের মতোই হাতে ঝুলানো।পায়ে স্টাইলিশ জুতো, কালো রঙের ঘড়িটা হাতের লাগাতে লাগাতে নিচে নামছেন মেঘালয় চৌধুরী। স্পাইক করা চুল গুলো একটু বেশিই সিল্কি। হাটার তালে বাতাসে উড়ে এলোমেলো হওয়ার দৃশ্য টা মন্দ লাগছে নাহ।
কিন্তু এ দৃশ্য অবলোকন বেশিক্ষন স্থায়ী হলো নাহ। হুট করে কাল রাতের কথা মনে পরে গেলো
এই লোকের সামনে কিছুতেই থাকা যাবে নাহ,কিছুতেই নাহ।
আর এক টেবিলে বসে খাওয়া তো অসম্ভব।

মামনী এবার আসতেই মিনমিন করে বললাম

-আমি খাবোনা মামনী, ক্ষুধা নেই।

আমার কথা শুনে মামনী বললো

-খাবোনা বললে তো হবে নাহ,কতোগুলো ওষুধ খেতে হচ্ছে, অবশ্যই খেতে হবে নাহলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে।

-আমার কিছুই হবে না,পরে খাই না প্লিজ

-চুপ,কোনো কথা নয়।চুপচাপ খেতে শুরু করো

বলেই টোস্ট, জুস, জ্যাম আর কতো গুলো ফল এনে আমার সামনে রাখলো।
ততক্ষণে মেঘালয় এসে বসে পরেছেন। কফিতে এক চুমুক দিয়ে পাউরুটিতে জ্যাম লাগাচ্ছেন। যেনো উনি একাই,উনার আশে পাশে কেও নেই।
মামনী আমায় খাবার দিয়ে আবারও রান্নাঘরের দিকে যেতেই চোখ তুলে তাকালেন। পাউরুটিতে এক কামড় বসিয়ে বললেন

-চুপচাপ দু মিনিটের মধ্যে খাবার শেষ করবে নাহ তো এই ছুড়ি দিয়ে পি’স পি’স করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসবো

হ্যাহ! আমার ডায়লগ আমাকেই দিলো?, রাতে তো কিছু ছিলো না এখন তো ছু’ড়ি হাতে বসে আছে। জ’ল্লাদ টা সত্যিই যদি আমায় বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসে। এইরকম দা’নব টার সাথে তো আমি শক্তিতে কিছুতেই পেরে উঠবো নাহ
ফটাফট ফল গুলো মুখে দিয়ে পাউরুটি তে কামড় বসালাম। ঝটপট খেয়ে এখান থেকে কেটে পরলেই বাচি,এখানে আর এক মুহূর্ত ও থাকা যাবে নাহ

-এখান থেকে পালানোর কথা মাথায় ও এনো নাহ,আমি কিন্তু নিচতলা উপরতলা সব জাগায় ই যেতে পারবো। আমার পা একদম ফিট এ্যন্ড ফাইন

উনার এরূপ কথা শুনেই হিচকি উঠে গেলো। খুক খুক করে হিচকি উঠেই যাচ্ছে,ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি সাবার করে দিলাম। তাও থামার নাম নেই।
আর এদিক ব’জ্জাত লোকটা চুপচাপ এক হাত মুখের কাছে ধরে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে আছে। ওই নীলাভ চোখের দৃষ্টিতেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়, তার উপর যদি এমন প্রাণ’ঘাতি কথা যদি বলে এ লোক, তাহলে কি করা উচিত।
চেয়ার সরিয়ে উঠে দাড়ালো, মামনী এখনো রান্নাঘরে, ধীরে ধীরে আমার কাছে এসে এক হাত চেয়ারের উপর ভর করে আরেক হাতে আমার মুখে ছড়িয়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে বললো

-মনে মনে আমায় গালি দেওয়া বন্ধ করে ভালো মেয়ের মতো খাবার শেষ করো, কেমন?

বলেই ল্যাপটপের ব্যাগ টা হাতে ধরেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
আর আমার হিচকি মাত্রা ছাড়িয়ে কাশিতে পরিনত হলো, ক্রমাগত কেশেই যাচ্ছি যার ফলে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে

-কি হলো আফু? গলায় আটকে গেছে খাবার?

কাশির চোটে কথায় বলতে পারছি নাহ মামনী এক গ্লাস পানি খাইয়ে দিয়ে মাথায় আর পিঠে ঘসে দেওয়ার একটু পর স্বাভাবিক হলাম।

-কি যে করিস না,একটু সাবধানে খাবি তো

মনে মনে বললাম আর সাবধান, চোখের সামনে জলজ্যান্ত রা’ক্ষস বসে থাকলে আর কি ভালো হবে। ছেলে তো না পুরো চলতা ফেরতা সাইক্লোন।

_________________

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে দুদিন। এর মাঝে আমি প্রায় সুস্থ। পায়ের ব্যাথা টা নেই বললেই চলে। শুধু মাথার ক্ষত টা পুরোপুরি যায়নি,এখনো ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ রাখা লাগে। তবুও সেই আগের মতোই বাধা ধরা নিয়ম করে আমায় থাকতে হয়, মামনীর কড়া নির্দেশ।
শিমু এখনো আসেনি,ওর আম্মুর শরীর টা একটু বেশিই খারাপ করেছে,ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ হলে ওর ফিরতে এখনো দিন তিন চারেক লাগবে।

আজকে ক্লাস টেস্ট এক্সাম৷ তাও মাহফুজ স্যারের। মামনী রুচি আপু কেও ই আমায় বাড়ি থেকে বেরোতে দিতে নারাজ, তাদের কথা হলো আমি এখনো সুস্থ হয়নি। এর মাঝে বেরোনো একদম ঠিক হবে নাহ।
কিন্ত আমি পুরোপুরি সুস্থ এখন। হাটাচলা বা কোনো কাজ করতে কোনো প্রকার অসুবিধে হয়নাহ,তাই এক প্রকার জোর করেই এসেছি।
মাহফুজ স্যার যেই পরিমাণ খ’বিশ, পরে আমায় প্র‍্যাকটিকাল এ মার্ক ই দিবে নাহ। ওই লোক আস্ত পা’ষান কোনো অসুস্থতা অসুবিধা মানবে নাহ।
শিমু তো কাল থেকে ফোন করে হায়হুতাশ করে পাগল, যে সে এক্সাম দিতে পারছে নাহ। স্যার ওকে ফেইল করিয়ে দেবে এক ইয়ার গ্যাপ হয়ে যাবে ওর, আরও নানান আজাইরা পেচাল। এ নতুন কিছু নাহ,সবকিছু তে এক্সট্রা প্যানপ্যানানি ওর স্বভাব।

যাই হোক রফাতের সাথেই এসেছি ভার্সিটিতে। একটু আকটু দুষ্টামি যাই করি। লেখাপড়াতে খুব বেশি ফাকি দেয়না,তাই ভার্সিটির ক্লাস গুলোও নিয়মিত করি। হঠাৎ করে এতো গুলো দিন না আসার কারনে আর মাথায় টেপ লাগানো দেখে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করছে, সকলের সাথে টুকটাক কথা বলে বসলাম। আমি আর নিবিড় এক বেঞ্চে তার সামনে বসেছে আরশি রাফাত আর আদিশ পেছনের টায়

পরীক্ষা শুরু হতেই মাহফুইজ্জা শুরু করলো জ’ল্লাদিপানা। একদম শকুনের মতো তাকিয়ে আছে,এদিক ওদিক কোনো দিক তাকানো যায়না। এক চোখ দু’টো যেনো এদিকেই ফিক্সড করে রেখেছে,এক সেকেন্ডের জন্যেও ঘুরাচ্ছে নাহ।
এই কয়দিন মামনীর বাড়িতে বসে কোনো কাজ না পেয়ে বই ই ছিলো নিত্যসঙ্গী, তাই মোটামুটি পেরেছি,খারাপ নয় আবার খুব ভালোও নয়।

এক ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে,সাথে আরও তিনটা ক্লাস করে বেরোতে দুপুর গড়িয়ে গেলো। ক্লাস থেকে বেরোতেই হাফ ছেড়ে বাচলাম।ক্যন্টিতে বসেই শুরু হলো আলাপচারিতা

-এই সা’লার মাহফুইজ্জা রে যে কোন বো’ম মেরে উড়াই দেবো জানি নাহ। সা’লার চার চোখ দিয়ে এই যে তাকাইছে আর ঘুরার নাম নেই। বলি তার ঘরে কি বউ নাই যে আমাদের দিকে তাকাই থাকতে হইবো।

ফোসফাস করে কথা গুলো বলে পানির বোতল খুলে ঢকঢক করে গিললো। নিবিড় বললো

-আসলেই বেটা বিদ্রোহী, সবি সময় সব কাজেই বিদ্রোহ। মন’ডা চায় হা’লারে খাতা ছুইরা দিয়ে বেরোই আসি৷ কিন্তু তাইলে তো ফেইল করাই দিবো।।

-তোরা এ কথা নিয়েই পরে আছিস,এখন যে আবার বাশ খুটি গাড়তে হবে সে খেয়াল আছে

আদ্রিশের কথায় রাফাত গা এলিয়ে বললো

-ভাই এমন খাটা তো জীবনেও বাসায় ও খাটি নাই। কিসের বা*** ডেকোরেশন, আমাগো দিয়া কা*মলা খাটানি দিতাছে।

-আরও দুইদিন এমন কা*মলা খাটানি দিতে হইবো ভাই।

ওদের কথার মাঝেই থার্ড ইয়ার ব্যাচের একটা ছেলে এসে বলে গেলো ‘তোমাদের ফাহিম ভাইয়েরা ডাকছে’

-ব্যাস হয়ে গেলো। চলো আবারও বাশ খুটি ঠেলতে।

বলেই ঢুলতে ঢুলতে এক একটা হাটা ধরলো। পেছন থেকে আরশি ও ব্যাগ হাতে নিয়ে দৌড় দিলো, আরাব ভাই আছে বলে কথা।
আজকে বুধবার, নবীন বরনের অনুষ্ঠান হবে সামনে রবিবার, প্রতিবার আমাদের ক্যাম্পাসে ভীষণ জাক যমকপূর্ণ ভাবে এ অনুষ্ঠান করা হয়,আমাদের বেলায় ও হয়েছিলো। প্রাণের বন্ধুরা সব একই ভার্সিটিতে পড়ার আনন্দ আর নবীন বরণের উৎসবের আমেগে গতবছর এসময় আমরাও ভীষণ এক্সাইটেড ছিলাম।
আনন্দের সময় কতো দ্রুতই পার হয়ে যায় তাইনাহ।

-হ্যালো.. মিস পালক

-পুরুষালি কণ্ঠে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি হালকা সবুজ রঙের টি-শার্ট আর কালো প্যান্ট পরিহিত ছেলেটি।
আমি তাকিয়ে থাকতেই আবারও প্রশ্ন করলো

-মে আই সিট?

-হ্যাঁ সিউর।

চেয়ার সরিয়ে সামনে বরাবর বসলেন আরাব ভাই।

-কেমন আছো পালক।

-আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি ভাইয়া

-অ্যাকক্সিডেন্ট হয়েছিলো নাকি।

-হ্যাঁ এই মানে তেমন বড়ো কিছু নাহ

-মাথায় ব্যান্ডেজ এখনও সরেনি আবার বলছো বড়ো কিছু নাহ।

উনার কথায় মৃদু হাসলাম শুধু। প্রয়োজনের বাইরে ওই চারজন ব্যাতিত কোনো ছেলের সাথে কথা হয়না,আর আরাব ভাই তো সিনিয়র, তাই আমার বেশ ইতস্তত লাগে,উনার সামনে

-পালক?

-জ্বী ভাইয়া

-উড ইউ মাইন্ড ইফ আই আস্ক ইউর নাম্বার?

এহেন কথায় বেশ অপ্রস্তুত হলাম।উনি আমার নাম্বার কেনো চাচ্ছেন. কিছু বুঝছি নাহ। না বলাটাও খারাপ দেখায় আর হ্যাঁ বলতেও
আমার ভাবনার মাঝে উনি আবারও বললেন

-ডোন্ট ও’রি আমি তোমাকে অন্যান্য ছেলেদের মতো ফোন দিয়ে বিরক্ত করবো নাহ, আর তাও সমস্যা থাকলে ইটস ওকে আমি আর চাইবো নাহ।

-না নাহ,আমার কোনো সমস্যা নেই

বলেই নিজের ফোন নাম্বার টা দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই উনার ফোন বেজে উঠলো।কানে ধরে কিছু সময় চুপ থেকে বললো “আসছি”

-আচ্ছা পালক,তাইলে আমি আসি,সরি ফর টেকিং ইউর টাইম

প্রতিউত্তরে শুধু স্মিত হাসলাম। উনি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আরশি আসলো ওর সাথে আড্ডা দিয়ে, একসাথেই দুজন বেরোলাম।
আসার পথে আবার বায়না ধরলো ওর নাকি কিসব কেনাকাটা করার আছে, সামনে ক্লাস দুদিন বন্ধ আমারও বাড়ি থেকে বের হওয়া হবে নাহ,আর আমায় ছাড়া ও কিচ্ছুটি কিনবে নাহ,তাই ঠেলে ঠুলে সপিং মলে নিয়ে গেলো।

ওর কেনাকাটা শেষ করে বেরোতে প্রায় সন্ধ্যা লেগে গেছে, তার উপর ঢাকা শহরের রাস্তার জ্যাম। জ্যামে আটকেই ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে, আমার সাথেই আসছিলো ও। হঠাৎ আন্টির ফোন করে কোনো জরুরী কাজে ওকে এক্ষুনি বাড়ি ফিরতে বলে ।
যদিও আমায় একা রেখে যেতে চাইনি,আমিই পাঠিয়েছি জোর করে। আর বেশি দূর নাহ তো রিকশা করে একাই চলে যেতে পারবো।

রাস্তায় অনেক যানযট থাকায় রিকশা টা গলির ভেতর ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আশপাশ টা অন্ধকার হয়েই আসছে।
এই এলাকা টা পার করে দু’মিনিট পথ গেলেই আমার গন্তব্য। কিন্তু এইখানটায় আমি কখনো আসিনা, আসা যাওয়া আসা রাফাত শিমু সবসময়ই থাকে, আজ একে তো একা আবার সন্ধ্যা হওয়ার বেশ ভয় ভয় করছে।

-ভাই ওইদিক তাকান,ওইটা পালক না?

-এই সা’লা মাদা***দ পালক কস কারে ভাবি ক

-সরি ভাই,ভাই ওই রিকশাতে ওইটা ভাবি নাহ

ঢুলু ঢুলু চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠলো আদনানের। এ তো মেঘ না চাইতেই জল। বেশ অনেক দিন দেখেনি ভার্সিটিতে পালককে,আজ এভাবে সুনসান রাস্তায় একা পেয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি,বসা ছেড়ে উঠে দাড়ালো, এক হাত উঠিয়ে রিকশা ওয়ালা কে বললো

-এই ব্যাটা থামা,না তো রিকশার সাথে তোর ঠ্যা’ঙ ও ভা’ঙ্গুম

নির্জন রাস্তার মাঝে দুটো ছেলেকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেই আমার গায়ে কাটা দিলো, রিকশা টা কাছে আসতেই যেনো শরীরের বাকি সাহস টুকুও মিইয়ে গেলো। আদনান! ভার্সিটিতে না হয় ওকে যা তা বলে দমিয়ে রাখি, এই ফাকা রাস্তায় কেও নেই। আল্লাহ নাহ করুন ওরা যদি…আর কিছু ভাবতে পারলাম নাহ,তার আগেই রিকশা টা থামিয়ে দিলো।
ভেতরে ভীষণ ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ নাহ করে কঠিন গলায় বললাম

-কি সমস্যা, এভাবে রাস্তা আটকাচ্ছেন কেনো,পথ ছাড়ুন

-আরে জানেমান,এতো পারা কিসের কতোদিন পর দেখা হলো বলো তোহ,একটু আলাপচারিতা তো করতে দাও

মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়ায় আশ পাশ ভরে যাচ্ছে,আর তার সাথে কথার সাথে কেমন উৎকট বিশ্রী গন্ধ লাগছে নাকে। চোখ মুখ বেজায় লাল। নে”শা পানি করে আছে তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হলো নাহ
ভয় বেড়ে যাচ্ছে আমার,কোনো রকম বললাম

-মামা, থামালেন কেনো চলুন

-আরে বেবি যাবে তো,এতো পারা কিসের বলতো।
পাবেল, মামার একটু খাতির যত্ন কর তোহ

আদনানের কথা শুনে পাবেল নামক ছেলেটা দাত বের করে হেসেই রিকশা ওয়ালার কলার ধরে নামালো। বয়স্ক জীর্ণ শীর্ণ লোকটার আগেই ভয়ে কাপাকাপি শুরু করেছে। আমার শরীর রিতীমত ঘামতে শুরু করেছে

-সমস্যা কি আপনার, এটা কোন ধরনের অসভ্যতা

আমার কথায় আরও কাছে এসে দাড়ালো, বিশ্রী গন্ধে আমার গা গুলিয়ে আসছে, কাছে এসেই আমার হাত ধরে এক ঝটকায় রিকশা থেকে নামিয়ে নিয়ে বললো

-অসভ্যতার দেখেছো কি, তোমায় তো এখন আদর সোহাগ দিয়ে ভরিয়ে দেবো

বলে আমার হাত ধরে টানতে লাগলো। রাগে আর ঘৃণায় এক ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে কসিয়ে এক থা’প্পড় লাগালাম।
গালে হাত দিয়ে হিংস্রাত্মক চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই তেড়ে এসে চুলের মুঠি টেনে ধরে বললো

-সা’লার মা**। তোর বেশি সাহস তাই নাহ, ভালো করে বললাম তোর মনে ধরলো নাহ,এবার দেখ আদনান কি করতে পারে৷

বলেই আমার চুলের মুঠি আরও জোরে চেপে ধরলো৷ যন্ত্রণায় মাথা ফেটে যাচ্ছে,কিন্তু দূর্বল হলে চলবে নাহ, পা তুলে একদম আদনানের দু পায়ের মাঝ বরাবর সজোরে লা’ত্থি লাগালাম।
বেশ জোরে দেওয়ার ও ছিটকে পরলো এক হাত দূরে, আমি দিকবিদিকশুন্য হয়ে দৌড় লাগালাম।
আশ পাশ কিচ্ছু চিনতে পারছি নাহ, কিন্তু দৌড় থামানো যাবে নাহ, শরীরের জোর দিয়ে দৌড়াচ্ছি। পেছন থেকে আদনানের গলাও আসছে বাজে কথা আর গালি দিয়ে যাচ্ছে, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম আমার বেশ পেছনেই ওউ ছুটছে।

দৌড়ের গতি আরও বাড়িয়ে দিলাম, গলির এ মাথা ও মাথা দৌড়ে কোন রাস্তায় এসে পৌঁছেছি জানি নাহ, আশপাশ টা এখানেও সুনসান, দূর হতে একটা গাড়ি থামানো দেখা যাচ্ছে।

শরীরের শক্তি ফুরিয়ে আসছে, পায়ের যন্ত্রণায় টনটন করছে, নাহ থামা যাবে নাহ, আদনান এখনো পিছু থামায় নি। আমি আরও জোরে ছুটছি শরীরেস সমস্ত শক্তি লাগিয়ে, গাড়িটার কাছাকাছি আসতেই দেখা গেলো একটা পুরুষ অবয়ব, গাড়ির ইঞ্জিনের কভার উঠিয়ে কিছু করছে। পেছনে কারো ছুটার শব্দ পেয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।

সুনসান রাস্তায় দাড়ানো আরেকটি পুরুষ অবয়ব দেখে বিচলিত না হয়ে যেনো সারা শরীরে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গেলো। যেনো অন্ধকারে আলোর দিশা পেলাম, ঘাম আর চোখের পানিতে জবজবে বেজা মুখেও যেনো হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটে গিয়ে পরলাম লোকটার প্রসস্ত বুকে, দু হাতে জড়িয়ে নিলো আমায়,সারা শরীরে কম্পন ধরেছে, মুখ থেকে একটা শব্দ বেরোচ্ছে নাহ, পায়ের যন্ত্রণায় গোড়ালি থেকে হাটু পর্যন্ত জ্বালাপোড়ায় সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে,মাথাটা কেমন ভনভন করছে,নূন্যতম শক্তিটুকুও বিদায় নিলো, দুহাত ছেড়ে দিলাম। লুটিয়ে পরলাম লোকটার বুকেই
.
.#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্বঃ ১৪

-পালক? পালক ওঠো পালক কি হয়েছে তোমার

গালে হাত দিয়ে অনবরত ডেকে যাচ্ছে,পালকের কোনো সাড়া নেই,ঘামে চোখের পানিতে একাকার সারা মুখ। কপালের টেপ টাও সরে গেছে, সারা শরীর ছেড়ে দিয়েছে যেনো নূন্যতম শক্তি টুকুও নেই।
চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো মাতাল ছেলেটা দৌড়ে এদিকেই আসছে, মেঘালয় কে দেখে থমকে গেলো, এবার পালকের দিকে দিকে তাকিয়ে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো, মাথার রগ দপদপ করে ফুলে গেলো। রাগে সারা শরীর কাপছে হাত মুষ্টি করে এক পা বাড়াবে তার আগেই ছেলেটা দৌড়ে উল্টো দিকে পালালো।
পালক কে তৎক্ষনাৎ কোলে তুলে নিলো মেঘ।
কিন্তু এখন কি করবে,তার গাড়িটাও তো মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়েছে, এই অবস্থায় পালক কে নিয়ে কোথায় যাবে, এদিক ওদিক তাকাতে কোনো উপায় না পেয়ে,পালক কে কোলে নিয়েই হাটা শুরু করলো মেঘালয়।

তার ভেতরে প্রচন্ড অস্থিরতা শুরু হয়েছে, ভেতরটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, মাত্র দুদিন আগেই সুস্থ হলো মেয়েটা, এতো ঝড় ঝাপটা কেনো মেয়েটাকেই গ্রাস করে।
পালকের এই বিধ্বংসী চেহারায় মেঘের ভেতরের চিনচিনে ব্যাথা ক্রমশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। শক্ত করে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো পালকের মুখ খানা।

কিছুদূর এগোতেই অদূরে থেকে দুটো হেডলাইটের আলো ভেসে আসছে, মেঘ দাড়িয়ে পরলো।
আলোটা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে একদম কাছাকাছি আসতেই একাই থেমে গেলো গাড়িটা।
মাঝ রাস্তায় এমন সুনসান জাগায় একটা মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই গাড়ি থামিয়েছে আগন্তুক। মেয়েটার চোখ মুখে চুল গুলো এলোমেলো লেপ্টে থাকায় চেহারা অস্পষ্ট হলেও তার জীর্ণ অবস্থা সে গাড়ির ভেতর থেকে স্পষ্ট দেখেছে। গাড়িটা থামিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো এক সুপুরুষ।

-হ্যালো, এক্সকিউজ মি? এ্যানি প্রবলেম ব্রো?

মেঘ অস্থির হয়ে উত্তর দিলো

-ইয়েস, আ’ম মেঘালয়, মেঘালয় চৌধুরী। আমার গাড়িটার ইঞ্জিনে প্রবলেম হয়েছে, আমাকে এক্ষুনি হাসপাতালে যেতে হবে, প্লিজ হেল্প। সি নিড ট্রীটমেন্ট ইমিডিয়েটলি।

-সিউর, প্লিজ গাড়ির ভেতরে এসে বসুন
বলে গাড়ির পেছনের দরজা টা খুলে দিলো
মেঘ পালক কে নিয়ে পেছনে বসতে গেলেই ছেলেটি বলে ওঠে

-পালক? এটা পালক নাহ? কি হয়েছে ওর,এ অবস্থা কি করে হলো।

মেঘ তাকিয়ে বললো

-ইউ নো হার?

-ইয়েস, ইভেন অনেক ভালো করেই চিনি, আমাদের ভার্সিটি সেইম, আমি আরাব এহসান। ওর সিনিয়র। আজকে দুপুরেও কথা হয়েছে ওর সাথে কি করে হলো এসব

-আসলে..

মেঘ কে সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই বললো, আপনি প্লিজ বসুন ওকে আগে হসপিটালাইজড করতে হবে, এসব পরে শোনা যাবে।

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। মেঘ পালক কে নিয়ে বসতেই দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করলো টয়োটা গাড়িটা।
পালকের এখনো হুস ফেরনি,থেকে থেকে কেপে কেপে উঠছে। মেঘ দু হাতে ঝাপটে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে পালকের ছোট্ট শরীরটাকে,পারেনা বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে
এই মেয়েটার সামান্য তম কষ্ট তার সহ্য হয়না
পালকের ও বিধ্বংসী অবস্থায় তার ভেতরে যে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে তাকে কোনো ভাবেই শান্তি পাচ্ছে নাহ
পালকের মুখ টা এক হাতে আগলে বললো

-কিচ্ছু হবে নাহ পালক। আরেকটু,আরেকটু সহ্য করো। সব কষ্ট শেষ হয়ে যাবে

লুকিং গ্লাসে খানিকে বাদে বাদেই আরাব তাকিয়ে দেখছে পালককে মেঘের বুকের ভেতর মিশে থাকা অবস্থায়।
এগারো মিনিটের মাথায় গাড়িটা এসে থামলো সেন্ট্রাল হসপিটালের সামনে।
স্টেয়ারিং টা চেপে ধরে প্যাডেল থেকে পা সরিয়ে গাড়িটা থামালো। এক মুহূর্তের মধ্যে নেমে পেছনের দরজা টা খুলে দিলেই মেঘ পালক কে নিয়ে ছুটলো

~
পালককে ইমারজেন্সি রুমে নেওয়া হয়েছে মিনিট দশেক, এখনো ডাক্তার বের হয়নি। মেঘ ক্রমাগত পায়চারি করে যাচ্ছে, আরাব এসে মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে কাধে হাত রেখে বললো

-ব্রো ডোন্ট প্যানিক, সি উইল বি অলরাইট। ও খুব তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে যাবে।

বলে বিরতি না নিয়ে আবারও প্রশ্ন করলো

-আচ্ছা? পালকের এ অবস্থা হলো কি করে

এবার মেঘের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো,ভীষণ রাগ হচ্ছে ভীষণ, ছেলেটা কে পেলে শরীরের একটা হা’ড় আস্ত রাখবে নাহ মেঘ, দাত কিড়মিড়িয়ে বললো

-একটা স্ক্রাউ’ন্ডেল! ওর পিছে একটা ছেলে দৌড়ে আসছিলো, আ’ম সিউর ওর জন্যেই পালকের ওই অবস্থা, ওকে আমি ছাড়বো নাহ, আ’ম নট গ’না স্পেয়ার হিম,নেভার!

বলেই দুম করে একটা ঘু’ষি বসিয়ে দিলো দেওয়ালে।

মেঘের কথায় ভ্রু কুচকে এলো আরাবের, পালককে হ্যা’রাস করার মতো একটা ছেলের নামই আপাতত ওর মাথায় আসছে.. আদনান!
ভার্সিটির সিনিয়র হওয়ার সুবাদে কোনো ঘটনায় তার অগোচর নয়।পালক কে উ’ত্তক্ত করার ব্যাপার টা আরাব ও জানতো। ও বাদে এতো বড়ো দুঃসাহস আর কারো হবে নাহ
বৃদ্ধা আঙ্গুলের সাহায্যে কপাল ঘষে আবারও জিগাসা করলো

-পালক নাম বা এ ব্যাপারে কিছু বলেছে?

-নাহ, ওকে ধরা মাত্রই সেন্স হারিয়েছে। কথা বলার মতো অবস্থায় ই ছিলো নাহ ও। ওই ছেলেকে আমি কিছুতেই ছাড়বো নাহ, কিছুতেই নাহ। ও জানে নাহ ও কিসে হাত বাড়িয়েছে, ওই হাত আমি আ’লাদা করে দেবো

আরাব শান্তভাবে মেঘের ক্রোধান্বিত চেহারা টা দেখছে।এর মাঝেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ডাক্তার বেরিয়ে আসলো।
ডাক্তার কে দেখা মাত্রই মেঘ ছুটে গেলো।

-ডক্টর ইজ সি অলরাইট? ওর কোনো ক্ষতি হয়নি তোহ?

-ইয়েস মি.চৌধুরী নাও সি ইজ বেটার। পায়ের ক্ষত টা প্রোপারলি রিকভার হওয়ার আগেই অনেক বেশি প্রেসার পরায় ব্যাথার দরুন জ্ঞান হারিয়েছে, তার সাথে অনেক বেশি প্যানিকড হওয়ায় নার্ভাস স্টিমুলেশন করার কারণে প্রেসার অতিরিক্ত বেড়ে গেছিলো,মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে হয়েছে।

পাশ থেকে আরাব বলে
-ডক্টর ক্যান আই সি হার?

-সিউর

ডাক্তারের অনুমতি পেয়েই আরাব ভেতরে গেলো।
মেঘালয় ওর যাওয়ার পানে চেয়ে ডাক্তার কে প্রশ্ন করলো

-ডক্টর ও এখন ঠিক আছে তোহ?

-ইয়েস মি.চৌধুরী। আপনি এতো চিন্তিত হবেন নাহ। তবে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে কয়েকবার অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ায় উনার মেন্টালি উইক হওয়াটা স্বাভাবিক টেইক কেওয়ার অফ হার,বলেই কাধে হাত রেখে চলে গেলো ডাক্তার।

~

হসপিটালের সব ফর্মালিটিস পূরণ করেই মেঘ পালক কে নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলো। ড্রাইভার কে বলে আরেকটা গাড়ি আনিয়েছে।
পালক জ্ঞান ফিরে থেকে চুপটি করে আছে, একটা শব্দ উচ্চারণ করেনি। মেঘ ও পালক কে কিছু জিগাসা করেনি। ডাক্তারের সাথে আবারও কথা শেষ করে নব টা মুচড়ে কেবিনে ঢুকলো মেঘ

আরাব দু হাতে ধরে পালক কে উঠে বসাতে সাহায্য করছে, এ দৃশ্য দেখে মেঘের বেশ রাগ হলো। পালক কে ও কেনো ধরবে। কিন্ত সেটা প্রকাশ না করে দ্রুত ওর কাছে গিয়ে বললো

-থ্যাংকস আরাব,আমি ওকে সামলে নিতে পারবো।

বলেই দুহাতে কোলে তুলে নিলো পালককে, আজ পালক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় নি,চুপচাপ বুকের সাথে লেপ্টে পরে রইলো। মেঘ হনহন করে হাটা ধরে বাহিরে এসে গাড়ির কাছে দাড়ালো। ড্রাইভার রামিজ আলী দরজা খুলেই দাড়িয়ে আছে।
মেঘের সাথে আরাব ও আসলো। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মেঘ স্মিত হেসে আরাব কে ধন্যবাদ জানালো

-থ্যাংকিউ সো মাচ আরাব,আজ তুমি নাহ থাকলে ওকে সময় মতো হসপিটালে আনতে পারতাম নাহ,

-ইটস মাই প্লেজার ব্রো

-কখনো কোনো প্রয়োজনে মনে করতে ভুলবে নাহ যেনো।

-সিউর

আরাব কে বিদায় জানিয়ে পালককে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিট টাতে বসলো মেঘ,মেয়েটা টু শব্দ পর্যন্ত করছে নাহ। ওর ওই অবস্থা মেঘ কে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে ভীষণ

___________

দরজায় কড়াঘাতের শব্দে টিভি টা বন্ধ করে দরজার দিকে এগোলেন নিলাশা চৌধুরী। দরজা খুলতেই মুখ জুড়ে কালো আধার নামলো।
পালককে এভাবে বিধ্বস্ত চেহারায় মেঘের কোলে দেখে বিচলিত হয়ে জিগাসা করলেন

-মেঘ আফুর কি হয়েছে? ওর এ অবস্থা কেনো,পায়ে ব্যান্ডেজ কেনো করা। কি হয়েছে ওর

-সব পরে বলছি আম্মু, ওকে ঘরে নিতে হবে আগে।

বলেই পালক কে নিয়ে উপরে উঠে গেলো
উপায়ন্তর না পেয়ে নিলাশা ও ছুটলো পেছন পেছন,নিঃশব্দে কান্না করছে সে,মেয়েটার আবার কি হলো, একটার পরে একটা বিপদ লেগেই আছে

____________

-ভাই আমি সিউর,ও আদনান ছিলো, আমি কিছুতেই ছাড়বো না সা”লা রাস”কেল টাকে।
আমি আরও আগেই ওর ঠ্যা’ঙ ভে”ঙে হাতে ধরিয়ে দিতাম,শুধু চুপ ছিলাম আফুর জন্য, ও চাইনি কোনো ঝামেলা হোক। কিন্ত আজ সব লিমিট ছাড়াই গেছে কু***চা
ওকে তো কিছুতেই আমি আ’স্ত রাখবো নাহ

-কাম ডাউন রাফাত। পালকের সামনে এসব ট্রপিক নাহ তোলায় বেটার,ডক্টর ওকে স্ট্রেস নিতে একদম নিষেধ করেছে

-আমি যদি ওকে বাড়ি রেখে যেতাম তাহলে এতো কিছুই কোনো ভাবেই হতো নাহ,ওর এরূপ চেহারা টা আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি নাহ ভাই

-সব ঠিক হয়ে যাবে, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে, যাতে এসব মাথায় ও না আনে,এমনিতেই অনেক বাজে একটা ইফেক্ট পরেছে ওর উপর

-ঠিক আছে ভাই।

মেঘের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে, রাফাত চলে গেলো, সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে যখন শোনে পালক এখনো ফেরেনি তখন আরশি কি ফোন দিলে বলে ওউ অনেক আগে চলে গেছে,তখন থেকেই চিন্তায় ওর জান যায় অবস্থা, রাতে যখন পালক কে ওমন অবস্থায় নিয়ে মেঘ বাড়ি ফিরলো তখন থেকে তার ভীষণ খারাপ লাগা কাজ করছে, আফুর কোনো প্রকার ক্ষতি সে একটুও সইতে পারবে নাহ,ও তো পারছে নাহ আদনান কে পু’তে রাখতে

ঘড়ির কাটা ১২ টা পার হয়েছে, চুপচাপ আধশোয়া হয়ে বসে আছি খাটের উপর। মামনী মিনিট পাচেক আগেই নিজের ঘরে গেলো, উনি যেতে চাননি।আজকে রাত টা এখানেই থাকতে চেয়েছিলো আমার সাথে আমিই থাকতে দেয়নি। কম তো হয়রানি হচ্ছে নাহ আমার জন্যে, এখানে থাকলে সারারাত আমার দেখাশোনা করে নিজের ঘুম টাই উজাড় করবে।

আর আমিতো ঠিক আছি,ঠিক আছি আমি।
কারণ আমি জানি আমি মেয়ে,মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছি, তখন রাস্তার কু’কুরের হিং’স্র থাবা আমার দিকে আসবেই, মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছি কতোগুলো অ।মানুষ এর প্রভাব আসবেই জীবনে। তা বলে তো আমি দমে যাবো নাহ,থেমেও যাবো নাহ।
আমি প্রতিবাদ করবো,আমার দিকে বাড়ানো প্রতিটি হাত আমি ভে’ঙে ফেলতে নাহ পারলেও অক্ষত রাখবো নাহ। আমিতো মেয়ে রাস্তায় চলাফেরা করতে,স্কুল কলেজ, ভার্সিটি সব জাগায় থাকবে আমার জন্য বিপত্তি। কারণ আমি মেয়ে,আর মেয়েদের দূর্বল ভেবেই কতোগুলো নর’পশু তাদের পশু’ত্ব ফলাতে আসবে। তা বলে তো আমি ভয় পাবো নাহ, আমি আমার সবটা দিয়েই রক্ষা করবো নিজেকে, আমার সম্মান,আমার আত্মা কে। কারণ আমি নারী, আমিই মা,আমিই বোন। আমি দূর্বল নই, আর নইবা দূষিত। আমি নারী.. আমার সম্মান,আমার আত্মমর্যাদাই আমার শক্তি আমার পবিত্রতা

নিজেকে হাজারো বুঝ দিচ্ছি। বাস্তবতা জানি আর মানিও। তবুও কেনো জানি মনটা ভীষণ ই খারাপ।কেমন অজানা কষ্ট হচ্ছে নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি, পরিবার, লেখাপড়া আর কয়েকটি ভালোবাসার মানুষকে ঘিরেই আমার দুনিয়ায় টা, এখানে আমি কোনো কষ্ট চাইনা,বাধা চাইনা, কোনো অ’মানুষের ছায়াও চাইনাহ।
চোখ দু’টো বন্ধ করতেই দু ফোটা নোনাজলে ভিজে গেলো কপোল। তবুও খুললাম নাহ চোখ।কেনো জানি নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে।

নিজের পাশে কারো উপস্তিতি অনুভব করে অশ্রু ভেজা চোখ খুলে তাকালাম।

ভীষণ শান্ত স্নিগ্ধ চেহারা টা আমার খুব কাছেই। অপলক চেয়ে আছি, কেনো জানিনা। লোকটার চেহারা টায় আজ ভীষণ মায়া জুড়ে আছে,
আদনান ও তো ছেলে ওকে দেখলেই আমার গা ঘিনঘিন করে,ওর ছায়াই সইতে পারিনা আমিহ।
আর মেঘালয় ও তো ছেলে তবে তাকে কেনো এমন লাগে নাহ,কেনো তার স্পর্শে আমার ঘিনঘিন লাগে নাহ। কেনো খুব কাছে তাকে পেয়েও ভয় কাজ করে নাহ, ঘৃণা লাগে নাহ
তার দিকে চেয়ে থাকতেই আবারও দু ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে।

দু আঙুলের সাহায্যে সযত্নে মুছে দিলো আমার অশ্রুকণা। হাতের উপর হাত রেখে আলতো ভাবে চোখ মেলে ইশারা করলেন। যেনো তার নীলাভ চোখ দু’টো বললো “আমি আছি”
হুট করেই ভীষণ দূর্বল হয়ে পরলাম,নিজেকে আর সামলাতে পারলাম নাহ ঝাপটে পরলাম প্রসস্থ বুক খানার মাঝে। দু চোখ উজাড় করে পানিতে ভেসে গেলো। কান্নারা যেনো বাধ মানছে নাহ। একটু খানি সহানুভূতি পেয়েই সমস্ত বাধ ভেঙে দিলো।
আমায় দুহাতের আলিঙ্গনে মিশিয়ে নিলেন বক্ষমাঝে,আজ আমার কোনো অসস্থি বা ভয় হচ্ছে নাহ, শুধু ভালো লাগছে,নিজেকে নিরাপদ লাগছে বুক টাতে, এই বুকের মাঝেই ভীষণ শান্তি পাচ্ছি আমি ভীষণ
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ধীরে বললেন

-হুসস,আর কাদে নাহ। নূরের চাঁদ মুখ খানার জন্য এক ফালি হাসিই মানায়, অশ্রুপাত নয়

উনার ছোট্ট আদর পেয়ে যেনো মনটা আরও পাগলামি করলো,ঠোঁট ভেঙে কেদে দিলাম আরও জোরে, দু’হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরলাম শুভ্র রঙের টি-শার্ট টা। চোখের জলে ভিজে একাকার হলো উনার বুকের অংশ। তবুও আমার থামার ইচ্ছে নেই, উনার পরম যত্নে আগলে নেওয়ায় আমিও মিশে রইলাম বুকটার মাঝে
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

[ লোকটা কে হতে পারে, আন্দাজ করতে পারছেন তো? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here