তুমি আসবে বলে পর্ব -৪৫+৪৬ ও শেষ

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৪৫

সময়ের স্রোতে কেটে গেছে কয়েক মাস,,পালটেছে সময়,কাল,ঋতু। পালটেছে মানুষে মানুষে সম্পর্ক। পালকের চৌধুরী বাড়িতে বউ হয়ে আসার পূর্ণ হয়েছে ছয়টা মাস। আরাব আর আরশির সম্পর্কের ধাপ প্রেমিক-প্রেমিকার গন্ডি পেরিয়ে বাগদত্তার ধাপে গেছে। মেঘপালকের বিয়ের মাস খানেকের মাথায় ই আরাব নিজে আরশির বাবা মায়ের কাছে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে বলে। পরিবার পরিজন, সময় আর ছেলেমেয়েদের ভালো থাকার দিক বিবেচনা করে তারাও অমত করেনি। আরশি আর আরাবের আংটি বদল করে রেখেছে, আরাবের বাবা মা দেশে ফিরলেই বিয়ে হবে। বাকি রইলো রাফাত নিবিড় আদ্রিশ সহ সকলে,তাদের ও পড়াশোনার মেয়াদ ও অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পার হয়ে তৃতীয়তে উত্তীর্ণ হয়েছে।

-আফু,কোথায় যাচ্ছিস মা?

-একটু নিচে যাচ্ছি মামনী। শিমু হঠাৎ ফোন দিয়ে বললো এক্ষুনি যেতে

-এক্ষুণি? এই সাত সকালে আবার কি হলো?

-আমিও যানি নাহ,দেখি গিয়ে কি হয়েছে

বলেই সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো, আগের ঘরটাই যেখানে শিমু আর পালক থাকতো একসময়, এখন শিমু একা থাকলেও পালক মাঝে মধ্যেই এসে থাকে ওর সাথে।
কলিং বেল টা বাজানোর সাথে সাথেই দরজাটা খুলে গেলো, যেনো খোলার অপেক্ষাতেই ছিলো। দরজা খুলতেই শিমুর মুখ খানা সামনে আসলো।
চোখে মুখে দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতার ছাপ,দরজাটা খুলেই করুন দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

-কি হয়েছে বল তো,সাত সকালে এমন জরুরি তলবের কারণ কি,আর মুখটা এমন বাংলার পঁচিশ কেনো করে রেখেছিস আজব?

তবুও কোনো হেলদোল নেই, সটান দরজায় দাঁড়িয়ে ক্রমাগত আঙুলের সাথে ওড়না পেচিয়ে যাচ্ছে, আর বারবার বাম পাশের দিকে তাকাচ্ছে।

-আরে হইছে টা কি, এভাবে সং এর মতো টান হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। দেখি সর তোহ

বলেই শিমুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ঘরে ঢুকে বা দিকে তাকাতেই শিমুকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।

-ধ্রুব ভাই আপনি?

সোফার উপর দুই পা তুলে আরামে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর টিভি দেখছে ধ্রুব ভাই। আমার ডাকেই পাশ ফিরে গাল প্রসারিত করে হেসে বললো

-পালক,,এসো এসো। বসো। ভালোই হয়েছে তুমি এসেছো অনেকদিন গল্প হয়না তোমার সাথে।

হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে বসলাম ধ্রুব ভাইয়ের পাশে।

-পালকের জন্যেও এক কাপ কফি আনো যাও

ধ্রুবের কথায় শিমু চোখ মুখ আধার করে গটগট করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। আমি এখনো বোকা দৃষ্টিতে চেয়ে আছি, সবটা মাথার উপর দিয়েই যাচ্ছে। সাত সকালে ধ্রুব ভাই এখানে কি করছে, আর শিমুই বা মুখটা বোম মারা অবস্থায় কেনো করে রেখেছে। বেশ কিছুক্ষণ ভেবেও কোনো সুরাহা মিলাতে না পেরে ধ্রুব ভাইয়ের দিকে ফিরে বললাম

-কাহিনি টা কি ভাই, আপনিই বা এতো সকালে এখানে কি করছেন আর হেতিই বা মুখটা আমাবস্যা কেনো করে রেখেছে?

ধ্রুব ভাই আনমনেই টিভিতে খেলা দেখে যাচ্ছিলো। আমার কথা শুনে রিমোট দিয়ে টিভি বন্ধ করে কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বেশ আটসাট বেধে বসলেন,উনার এমন প্রস্তুতি নেওয়া দেখে আমি তিন চার দফায় অবাক হয়ে রইলাম।ধ্রুব ভাইয়ের মতো শান্ত স্বভাবের মানুষের মধ্যে এমন অস্থিরতা বেশ সুবিধার ঠেকছে নাহ

-কি ব্যপার বলুন তোহ ভাই, আপনাদের ভাব সাব আমার একদম ভালো লাগছে না, ঝেরে কাশুন তো একেবারে

-আর কি ঝেরে কাশবো বোন, তোমার এই বান্ধবীর পাল্লায় পরে আমার এজীবনে আর বিয়ে করা হবে নাহ মনে হয়।

ভাইয়ের কথা শুনে কিছুক্ষণ থ হয়ে রইলাম। ধ্রুব আর শিমুর সম্পর্ক টা সরাসরি প্রকাশিত না হলেও ওদের হাবভাব দেখে আমাদের আর আলাদা করে বলতে হয়নি কিছু,, তা বলে এমন লাগামহীন কথা বার্তার দলে যে ধ্রুব ভাই ও নাম লিখিয়েছেন তা আমার জানা ছিলো নাহ।

-মানেহ,কি বলছেন? বিয়ে কেনো হবে নাহ

-কি করে হবে বলো তোহ। মেঘ আমার বন্ধু হয়ে বিয়ে করে ছয়মাস পার করে দিলো, আরাব আমার ছোট ভাই হয়ে আংটি বদল করে ফেললো। আর আমি কি না সিনিয়র সিটিজেনের খাতায় নাম লিখাতে যাচ্ছি তবুও তোমার বান্ধবীর কোনো হেলদোল নেই।

তারপর এক মুহূর্ত দম নিয়ে বেশ অসহায় মুখ করে বললেন

-তোমার বান্ধবীই তো এখনো ঝেরে কাশলো নাহ।
এই যে দিন দিন বয়স বাড়ছে৷শেষে বুড়ো হয়ে গেলে ছেলেমেয়েদের সাথে ভা’ঙা হাড় নিয়ে ফুটবল খেলবো কি করে বলতো

পেছন থেকে খকখক কাশির শব্দে ঘুরে তাকিয়ে দেখি শিমু কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে, আমি মুখ টিপে হাসছি। আমি জানি, বেশ জানি এসবের নাটের গুরু হলো ওই চৌধুরীর বাচ্চা। এই ধরনের হিটলারি বুদ্ধি সব ওই ব্যবসায়ীর মাথা থেকেই বেরোই। এই কারণেই আজ ধ্রুব ভাই আটঘাট বেঁধে নেমেছেন

-শিমু,এদিক আই

শিমু আগের মতোই মুখটা পাঁচের মতো করে রেখে এগিয়ে এলো। আমার পাশে বসতেই বললাম

-কি হয়েছে বল তোহ, ধ্রুব ভাই কি বলছে এসব

বেশ বিরক্তি নিয়ে নাক মুখ কুচকে শিমু বললো

-এই লোক পাগল হয়ে গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে বিয়ে বিয়ে করে মাথা টা খারাপ করে দিয়েছে আমার, কাল রাতে ফোন বন্ধ করে রেখেছি বলে আজ সাত সকালে এসে হাজির হয়েছে, বিয়ে না করা অবদি নাকি এখান থেকে যাবে নাহ। এসে থেকে এটা দাও ওটা দাও বলে আমাকে জ্বা’লিয়ে মা’রছে তুই একটা কিছু কর না তোহ আমি পাগল হয়ে যাবো

-তুমি একদম চুপ থাকো, পালক তুমি কিছু করো বোন নাহ তো এই যে বসলাম আমি,এক চুল নড়ছি না বউ ছাড়া

-খাল কে’টে কুমির ডাকছিস তুই? ও দেবে তোকে সলিউশন, ও তো নিজেও স্বামী ছেড়ে বান্ধবীর কাছে এসে শুয়ে থাকে

চিরচেনা ভরাট কণ্ঠস্বর শুনে ঘাড় না ঘুরিয়েই বুঝতে পেরেছি কথাটি কে বলেছে।
ধ্রুব ভাই মেঘালয়কে দেখে উৎফুল্ল হয়ে বললো

-মেঘ, এতক্ষণে তোর ঘুম ভাঙলো, নিজে তো বিয়ে করে দিব্যি আছিস, আমি কি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো?

-তাহলে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাক

বরাবরের মতোই দায়সারা উত্তর দিয়ে এসে বসলো আমার সামনে। ধ্রুব ভাই মেঘের এমন অযাচিত কথায় কপট রাগ দেখিয়ে বললেন

-আমি এদিক চিন্তায় মরছি আর তুই ইয়ারকি করছিস, সবসময় তোর এমন গাছারা ভাব দেখানো লাগে

-তো আর কি করবো। তুই যে বিয়ে করার জন্য এতো পাগল হয়ে যাবি আমি তো ভাবতেও পারিনি

-আচ্ছা? এমন পাগল ছয়মাস আগে তুই ও হয়েছিলি, আমি নিজে আংকেল কে তোর বিয়ের কথা বলেছিলাম। আর এবার আমার বেলায় তুই সাহায্যের প্রতিদান না দিয়ে উলটো গা বাচিয়ে বেরাচ্ছিস

-হেল্প? তুই? তুই আরও আমারে ফাঁ’সিয়ে দিয়েছিলি আব্বুর সামনে।

-আমি কখন ফাঁ’সিয়ে দিলাম

-অফ কোর্স, তুই ই তো…

-চুপপ! দুইজন ই চুপ। কই একটা সিদ্ধান্তে আসবে তা না দুজন মেয়েদের মতো ঝগড়া শুরু করেছে।
ধ’মক দিয়ে উনাদের থামিয়ে মেঘালয়ের দিকে ফিরে আবারও বললাম

-আর আপনি এখানে কেনো এসেছেন হ্যাঁ? ঝগড়া করতে? দিন দিন আল্ট্রা লেভেলের ঝগড়ুটে হচ্ছেন আপনি। সারাদিন তো আমার সাথে ঝগড়া করবেন ই এখানেও শুরু করেছেন

-নূর, তুমি আমায় এভাবে বলছো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বউকে চোখের সামনে না দেখলে আমার একদম ভাল্লাগে নাহ, তা জেনেও তুমি চলে আসলে, আবার এখন আমাকেই বকছো!

-এহহ,ন্যাকা! বিয়ে করেও সাধ মেটেনি বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াস আবার আমাকে বলছিস আমি বিয়ের জন্য পাগল হয়েছি

-অবশ্যই তাই। আর দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ আমার, তার আঁচল ধরবো না তো কি তোর প্যান্ট ধরে ঘুরবো!

-এই তুই যা তো,তুই আরও ঝামেলা বাড়াচ্ছিস বের হ

-বউ ছাড়া এক চুল নড়ছি না আমি

বলেই পায়ের উপর পা তুলে আরও আরাম করে বসলো মেঘ। আমি আর শিমু টু শব্দ করার ও সুযোগ পাচ্ছি নাহ দুজনের ঝগড়ার মাঝে। এই লোকটা আমায় কোনদিন পাগল করে দেবে, যতক্ষণ বাড়ি থাকে আমায় এক চুল নড়তে দেবে নাহ। উনার এই নাক কা’টা স্বভাবের জন্য আমায় সবাই খোঁ’চা দেয়,তাও বেহায়া লোকটার কোনো গা নেই।
এবার আমি বেশ গম্ভীর মুখ করে বললাম

-শিমু, তুই কি বাড়িতে ধ্রুব ভাইয়ের ব্যাপার টা জানাতে চাস না?

শিমু বেশ অপ্রস্তুত হয়ে বললো

-ব্যপার টা তেমন নাহ। আমি মানে আমি কি করে বাড়িতে..

-কি করে মানে, যে করে হয় সেভাবে

ধ্রুব ভাইয়ের এমন অস্থিরতা দেখে মেঘালয় ভ্রুকুটি করে বললো

-তোর যখন এতোই পারা তুই ওকে নিয়ে পালিয়ে যেয়ে বিয়ে কর

-আইডিয়া টা খারাপ না,আমি এটাও ভেবেছিলাম। কিন্তু পালিয়ে সেই এখানেই তো আসতে হবে তাই আমি নিজেই চলে এসেছি।

ব্যস আবারও শুরু হলো মেঘ আর ধ্রুবের তর্ক। এ দুইজন দিন দিন বড় হচ্ছে নাকি ছোট আমি আদও বুঝতে পারিনাহ। আরও বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম চার জনে। সব শেষে ঠিক হলো কাল মেঘালয় নিজে ধ্রুবের সাথে যাবেন শিমুর মায়ের কাছে।
শিমুর জন্মের কয়েক মাস পরেই ওর বাবা মারা যায়, তারপর থেকেই ও নিজের নানাবাড়িতে মানুষ, ওর নানাবাড়ি আর আমার বাড়ি এক ই শহরে। পরিবার বলতে নিজের মা মামা মামি আর বয়স্ক নানা। তারা ধ্রুব ভাইকে অপছন্দ করবে বলে মনে হয়না। অপছন্দের কারণ ই নেই। গত কয়েক মাস ধরেই শিমুর আম্মু বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো,এক এক সময় এক এক ছেলের সিভি পাঠিয়ে। এই জন্যেই ধ্রুব ভাইয়ের উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে, মোট কথা সে আর দেরি করতে চাইনাহ।

ধ্রুব ভাইকে কোনো মতে বুঝিয়ে তার ভার্সিটির উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে আমি আর মেঘ ও উপরে চলে আসলাম। বেলা আটটা বেজে গেছে। ঘরে ঢুকেই আলমারি থেকে তোয়ালে টা বের করে উনার হাতে দিয়ে বললাম

-আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি।

বলেই দরজার দিকে আসতে নিলে উনি পেছন থেকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন

-কি করছেন কি। দেরি হয়ে যাবে তো আপনার

-উহু,তোমায় আদর না করলে দেরি হয়ে যাবে

বলেই বা গালের সাথে গাল লাগিয়ে দাড়ির ঘষা দিয়ে দিলেন

-উফ ছাড়ুন তো কেও দেখলে কি ভাববে

-কেও দেখবে নাহ,আর দেখলে দেখুক আমার বউকে আমি আদর করবো তাতে লোকের কি

উনার সাথে কথায় আমি পারবো না আমি জানি। তাই চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। মেঘালয় আগের মতোই ঘাড়ে মুখ গুজে দাঁড়িয়ে আছে। গলার মাঝে বেশ সময় নিয়ে গভীর ভাবে একটা চুমু দিয়ে ভারি হওয়া গলায় বললেন

-নূর!

কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে অস্ফুটস্বরে জবাব দিয়ে বললাম

-হু

-মনে আছে? এইতো সেদিন তোমায় লাল টূকটুকে বউ করে আনলাম। রুচিতা আপু হাত ধরে তোমায় আমার ঘরে রেখে গেলো। আর আজ ঘরটাতে তাকিয়ে দেখো আশে পাশে সারা ঘর জুড়েই তুমি, তোমার অস্তিত্ব, তোমার ঘ্রাণে ভরা। মনে আছে? এইতো সেদিন জোৎস্না ভরা রাতটাই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলাম বলে লজ্জায় মুখ লুকিয়েছিলে এই বুকটাতে,আর আজ দেখো এই বুকে শুধু তুমি,তোমার নাম,তোমার ঘ্রাণ রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে।
এইতো সেদিন তাইনাহ?

সত্যিই তো,এইতো সেদিন মেঘালয় নামক মানুষটা আমার জীবনে ঝড়ের মতো আসলো। আর আজ আমার সারা জীবন জুড়ে শুধু এই একটা মানুষের ই বসবাস। আনমনেই দু ফোটা অশ্রুবিন্দু ঝরে পরলো। নাহ, এ কান্না দুঃখের নয়। বরং সুখের! চরম সুখ আর প্রাপ্তির। এতো সুখ! এতো ভালোবাসা রেখেছিলো সৃষ্টিকর্তা আমার ভাগ্যে। এই নীলাভ চোখের লোকটার মুখের দিকে তাকালে তাতে আমার সারা দুনিয়াটা এস জড়ো হয়।
পেছন ঘরে দু’হাতে ঝাপটে ধরে বুকের মাঝে মিশে গেলাম। আমার সুখের অশ্রুবিন্দুতে সিক্ত হলো মেঘের প্রসস্থ বুকটা। আমায় পরম আবেশে আগলে নিয়ে বললো

-বারবার চাই, হাজার বার চাই, সারাজীবন চাই তোমায়। এই বুকটাই তোমায় আমৃত্যু জড়িয়ে রাখতে চাই নূর। তোমার নূরে সারাজীবন জ্ব’লতে চাই।
ভালোবাসি!

বুকের মাঝে অধরযুগল ছুয়ে বললাম
-ভালোবাসি

||

সেদিন আর ভার্সিটি যায়নি, ইদানিং শরীর টা খুব দুর্বল লাগে, একটুতেই হাফিয়ে যায়। খাওয়া দাওয়াতেও রুচি আসে নাহ। আজও দুপুরে খেতে বসে কেমন গা গুলিয়ে আসলো। আমি খেতে পারছিনা দেখে মামনী কত কি রান্না করলেন আমার পছন্দের তবুও তা গলা দিয়ে নামলো নাহ। দুপুরের দিক থেকেই শরীর টা বেশি খারাপ। আমার অসুস্থতার কথা শুনে আরশি, নিবিড় আর আদ্রিশ এসেছে। রাফাত তো সকাল থেকে আমার সাথেই। বিকেলের দিকটাই ছয়জন ঘরেই বসে আড্ডা দিচ্ছি

-আফু, কি অবস্থা করেছিস নিজের, খাওয়া দাওয়া তো সব লাটে তুলেছিস। এভাবে চললে তো কিছুদিন পর বাতাসের ধা’ক্কায় উড়ে যাবি

আদ্রিশের কথা শুনে রাফাত বললো

-একটুও খেয়াল রাখিস নাহ ইদানীং নিজের। তুই অসুস্থ হলে ভাল্লাগে না ভাই। গত এক সপ্তাহে আমায় নুডুলস ও রান্না করে খাওয়াস নি

-এটা কিন্তু রাফাইত্তা ভুল বলেনি,এমন ম’রা ম’রা চেহারায় মোটেও ভাল্লাগেনাহ তোকে।

আরশির কথা শেষ হতেই নিবিড় বললো
-তার চেয়ে বরং চল তোদের গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি সবাই৷ ঘুরাঘুরি করলে তোর শরীর টাও ভালো লাগবে আর মন ও চাঙ্গা হয়ে যাবে

-আফুর মন চাঙ্গা হবে নাকি তোর নিবিড়

আরশির খোঁচা দেওয়া কথায় শিমু ফিক করে হেসে দিলো। পাশ থেকে আদ্রিশ সুর টেনে বললো

-হ্যাঁ নিবিড়ের তো আবার ইদানীং সারা সারা মেহেকতা হে,বেহেকতা হে। ওপস থুক্কু..যারা যারা মেহেকতা হে,বেহেকতা হে

পুরোটা শেষ করার আগেই নিবিড় ঠা’স করে বসিয়ে দিলো একটা

-বেশি পকপক করিস তোরা সবগুলো। আর এই যে আরাবখোর, তোর ফটরফটর কমা নাহ তো তোকে চাঙ্গে তুইল্লা আ’ছাড় দিয়া বিয়ার শখ মিটাই দিম

আরশি মুখ কালো করতেই পাশ থেকে রাফাত বললো
-বিয়ে শুনে মনে পরলো আমাগো বলদ রাণীও নাকি বিয়াইবো। ক্যা রে বলদি? কিছু কস না ক্যা? নাকি বর পাওয়ার পি’নিকে আগেই লাটে উঠছোস।

বলেই এক খোঁচা মেরে দিলো শিমুকে।

-আউচ্চ,,উফ এভাবে খোঁচা’খুঁচি করিস ক্যান তোরা, আর এসব কি ভাষা। আমি কি বলবো,কিসের বিয়ে

-ওহ আচ্ছা? কিসের বিয়ে? ভালোই, তোগোই তো দিন রে, ছুটিয়ে পিরিতি করতাছোস এক একটা আবার জিগাইলেই কস ‘কিসের কি’
ভালোই, আজ সিঙ্গেল বলে

-দ্যাখ রাফাইত্তা, তুই যে আদ্রিইশার বইনের সাথে ইদানীং বেশি ভাই গিরি দেখাই বেরাইতাসোস তা যে আমরা দেখছি না তা ভুলেও ভাবিস নাহ

-কিসের ভাই গিরি, তোর বি’শ্রি মুখ দিয়ে বি’শ্রি কথা বলা বন্ধ কর ছেমড়ি

-ওহ আচ্ছা আমি বললেই বি’শ্রি? আর তুই যে আমিশার কলেজের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস,ওরে ফুসকা খাওয়াইতে নিয়ে যাস তার বেলায়। আমাগো তো কানাকড়ি ও খাওয়াইস নাহ, একদিন বাইকে তুললে তারও ভাড়া নিস

আরশির কথার পৃষ্ঠে আদ্রিশ রাফাতের পিঠে দুম করে একটা বসিয়ে বললো

-হ্যাঁ রে রাফাইত্তা, তোর কাছে আমি তিনশো টাকা পাই, তুই সেইডা না দিয়া আমারই বইন রে খাওয়াই বেরাইতাসোস, তোর কলিজা ডায় কতো বড়।

-আব্বে থাম৷ আমারে কিছু কওয়ার আগে নিজের টা ভাব। আমারে দিয়া যে রুচিতা আপুর ননদের নাম্বার টা কাটিং করলি সে বেলায়

ওরা নিজেদের ভেতরই গ্যাঞ্জাম করে যাচ্ছে, আমি কোনো রকম কথা ছাড়া চুপ করে আছি, শরীর টা আবারও খারাপ করছে। গা গুলিয়ে আসছে৷ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতেই বিছানা ছেড়ে দৌড়ে গেলাম ওয়াসরুমে।

ঝিঁঝি পোকার ডাকে কানের ভেতরটা ধুম ধরে আসছে, মাথা ঘুরা টা কমলেও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। বিকেলে ওদের গল্পের মাঝেই হঠাৎ শরীর খারাপ করতেই দৌড়ে ওয়াসরুমে গিয়ে বমি করে ভাসিয়েছি। মামনী অস্থির হয়ে উঠেছিলো আমার ওই অবস্থা দেখে, আমায় জোর করেই সকলে ডাক্তারের কাছে নিতে চেয়েছিলো, আমিই দেয়নি। আমার জিদের কাছে হার মেনেই সবগুলো বাধ্য হয়েছে আমায় বাড়ি রাখতে। আমার মাথায় তেল দিয়ে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছেন মামনী। শিমু আর আরশি মিলে পায়ে মালিশ করে দিয়েছে, পা টাও কেমন টনটনে হয়ে আছে।

সারা সন্ধ্যা থেকে রাতের দশটার পরে সবাই ফিরেছে আমার শরীরের অবস্থা ভালো দেখে। মামনী এতক্ষণ ছিলো, বাবা আসতেই উনিও নিচে গেলো। টিমটিমে আলোয় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় এগারোটা। লোকটা এখানো ফিরলো নাহ? অন্য দিন তো নয়টার পরেই চলে আসে। এদিক ওদিক হাতরে ফোনটাও হাতের কাছে পেলাম নাহ। শরীরের দূর্বলতার কাছে হার মেনে বিছানায় ই পরে রইলাম
বেশ অনেকক্ষণ পর পেছন থেকে দুটো হাত পেটের মধ্যে দিয়ে জড়িয়ে ধরে কানের পেছনে মুখ এনে গাঢ় চুম্বন একে দিলো। ধীর কণ্ঠে জিগাসা করলাম

-এতো দেরি হলো কেনো আপনার?

উত্তরে লোকটা আরও জোরে ঝাপটে ধরলো। অসুস্থ শরীরে এভাবে চেপে ধরায় দম বন্ধ হয়ে আসছে,তবুও চুপ করেই রইলাম। মেঘ ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে, কিছুক্ষণ পর বললেন

-তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার এতটুকুও ইচ্ছে করছে নাহ নূর।

এবার নিজেকে ছাড়িয়ে পেছনে ঘুরলাম। সারা মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। মৃদু সবুজ আলোতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা দেখা যাচ্ছে। ওড়নার আঁচল টা তুলে পরম যত্নে মুছে দিলাম আমার স্বামী নামক অত্যাধিক ভালোবাসার মানুষটার কপালের ঘাম। মলিন হওয়া মুখটাতে একহাত গালে রেখে জিজ্ঞাসা করলাম

-কি হয়েছে বলুন তো আমায়।

ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মাথার স্থান পরিবর্তন করে আমার বুকের মাঝে রাখলেন। ছোট বাচ্চাদের মতো দুহাতে জড়িয়ে বুকের মাঝে মুখ গুঁজে বললেন

-কানাডা যেতে হবে নূর। বিজনেস টেন্ডারের অনেক বড় একটা প্রজেক্ট, আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম যাতে দেশের বাইরে থাকা এমপ্লয়ি দের মাধ্যমেই কাজটা হয়ে যায়, কিন্তু অপোনেন্ট টিমের সিইও নিজে কাজটা হ্যান্ডেল করবেন। নাহ চাইতেও যেতে হবে আমায়।

আমি এক হাত উনার পিঠে রেখে আরেক হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম

-কবে যেতে হবে

-কালই, কাল সকাল ৮:১০ এ ফ্লাইট।

ভেতরটাতে উষ্ণ বাতাস বয়ে গেলো। নিজের অস্থিরতাকে দমিয়ে আবারও জিজ্ঞাসা করলাম

-কতদিন থাকতে হবে।

-জানিনা নূর, আদও কতদিন লাগবে আমার জানা নেই
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

Humu_♥#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্ব- ৪৬ (শেষ)

-সমস্যা কি আপনার, শুধু শুধু কেনো ডেকে আনলেন

-চুপচাপ এখানে বসে থাকো

-পারবো নাহ, আমি গেলাম

বলে পা আগাতে নিলেই হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে ডিভানে বসিয়ে দিলো থপ করে, আজব লোক নিচে সবার সাথে বসে গল্প করছিলাম,এই লোকটা গিয়ে চোখ রা’ঙানি দিয়ে ডেকে এনে এখন সামনে বসিয়ে রেখে ল্যাপটপ টিপছে। আজব লোক,এর ভাবসাব আমি বুঝি নাহ।

-বললাম তো এক পা নড়বা না এখান থেকে

-কিন্ত এখানে বসে আমি কি করবো

-আমায় দেখো,স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকলেও নেকি হবে, কি সারাদিন পকপক করে বেরাও এর ওর সাথে বলো তোহ

ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রেখেই কথা টা বললেন মেঘালয়। আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম

-তাতে আপনার সমস্যা কি, বেশ করি পকপক করি।

ল্যাপটপ টা কোল থেকে নামিয়ে পাশের টেবিলে রেখে হাত ছড়িয়ে ডিভানে হেলান দিয়ে বসলেন। আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে আছে। উনার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে এদিক ওদিক মুখি ফিরিয়ে রইলাম তবুও তাকিয়ে আছে লোকটা বেহা’য়ার মতো।

-এভাবে হা করে তাকিয়ে আছেন কেনো? কি চাই

ঠোঁট এলিয়ে মৃদু হাসলেন। তারপরে সারা মুখে দুষ্টামির হাসি মাখিয়ে বললেন

-তোমাকে চাই।
বলেই এক হাতে টেনে জড়িয়ে ধরলেন। আমি দুহাতে উনাকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম

-কিন্ত আমার অন্য কিছু চাই।

-কি চাই তোমার

-ওই যে
বলেই আমার চারতালার বারান্দা টা দেখিয়ে আবারও বললাম

-ওই যে দেখুন ওখানে দোলনা

বারান্দায় না তাকিয়ে আমার দিকে চেয়েই বললেন

-হ্যাঁ দেখছি তো

-নাহ আপনি দেখছেন নাহ আমাকে না ওই যে দেখুন আমার ওই বারান্দায় দোলনা রাখা

-আমিতো দেখেছি সেটা

-দেখেছেন তো এখানে নাই কেনো? আমার দোলনা চাই। যেই বারান্দাতে দোলনা নাই আমি সেখানে থাকবো নাহ

-তোমার দোলনা চাই তো? আচ্ছা,আমি কালই এনে দিবো

উনার কথার তীব্র বিরোধিতা করে বললাম

-নাহ আমার এখনই চাই,আমায় এক্ষুণি দোলনা এনে দিন

-কিন্ত এতো রাতে দোলনা কোথাও পাবো রে বাবা

-তাইলে আপনি থাকুন,আমি যাচ্ছি।

বলেই পা বাড়িয়ে যেতে নিলে এক হাত টেনে ধরে বললেন

-তোমার দোলনা চাই?

-হু

-দোল খেতে চাও?

-হু

-ওকে
বলেই এক টানে আমায় উনার হাটুর উপর বসিয়ে দিলেন। এমন আকস্মিকভাবে টেনে নেওয়ায় ভয়ে দু’হাতে শার্ট খামচে ধরেছি। নিজের অবস্থান টা বুঝতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো। মেঘালয় আমায় উনার উরুর উপর বসিরে এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে আছে।

-কি করছেন টা কি ছাড়ুন

-কেনো তুমিই তো বললে দোল খেতে চাও।

-হ্যাঁ তো আমি দোল খেতে চেয়েছি,আপনার কোলে উঠতে নাহ,ছাড়ুন আমায়।

-দোল ই তো দিচ্ছি জান

বলেই আমায় বসিয়ে রাখা পা টা আস্তে আস্তে দুলাতে লাগলো। আমি ভয়ে উনাকে দু’হাতে আরও জোরে চেপে ধরে বললাম

-এই,এই আমায় নামিয়ে দিন, ছাড়ুন আমি পরে যাবো তো।

-হুস,পরবে কেনো ,, দেখছো নাহ কি সুন্দর ঝাপটে ধরেছি তোমায়।
বলেই হাতের বন্ধন আরও নিবিড় করে,মুখটা কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বললো

-তা নিজের স্বামীর কোলে বসে দুলতে কেমন লাগছে মিসেস চৌধুরী
লজ্জায় নাকের পাটা লাল হয়ে আসছে,সব দোষ আমার, এই বেহায়া লোকটাকে কিছু বলাই তো ভুল। কেনো যে দোলনার কথা টা বললাম।

“আফু, রাফাত ডাকছে দেরি হয়ে যাচ্ছে তো”

মামনীর ডাকে ধ্যান ভাংলো। নিজের স্মৃতিচারণ থেকে বেরিয়ে বাস্তবে এলাম। সকালের ফুরফুরে হাওয়া গায়ে লাগাতেই বারান্দায় এসে বসেছিলাম। মেঘালয় কানাডা গিয়েছে আজ একুশ দিন হয়েছে, বারান্দায় ডিভানে বসতেই উনার করা হাজারো পাগলামির কিছু কথা মনে পরে গেছিলো।

ইদানীং কিছুই ভালো লাগে নাহ, নাম না জানা রোগে শরীরের চেয়েও মনটা বেশি মুর্ছে গেছে, সময়ে অসময়ে মন খারাপের বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয় ভেতরটা। দূরত্বের আ’গুনে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হয় সারাদিন। ঘরটা ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগে, এখন আর কেও কথায় কথায় কোলে নেওয়ার ধ’মকি দেয়নাহ, বাড়ি ফিরেই ডাকাডাকি করে মাথা খারাপ করে দেয়না,কাজের মাঝে বিরক্ত করতে টুপ করে গালের উপর চুমু দিয়ে চলে যায় নাহ। “নূর তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না” বলে কেও গাল ফুলিয়ে বসে থাকে নাহ।
লোকটার বেহায়াপনাও খুব মনে পরে। এই একুশ দিনে যেনো একুশ বছর সমান দূরত্ব লাগছে। মেঘের উষ্ণ আলিঙ্গনে তপ্ত হওয়া শ্বাসটা ভীষণ মনে পরছে। নীলাভ চোখ জোড়ায় আমার জন্য সীমাহীন আকুলতাটা ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে, ভীষণ।
বেহায়া লোকটা আমাকেও বেহায়া করে দিয়েছে, পারছি না তাকে ছাড়া থাকতে, পারছি নাহ..

আনমনেই ভাবতে ভাবতে ব্যাগ টা হাতে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নেমে আসলাম। মামনী কে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে আসলাম। অসুস্থতার দরুন গত কয়েক দিন ভার্সিটি যাওয়া হয়নি। আজকে তাই বেরিয়েছি ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। গেইটের কাছে রাফাত আগেই দাঁড়িয়ে ছিলো বাইক নিয়ে,আমি গিয়ে উঠে বসতেই রওয়ানা হলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। দশ মিনিট পরেই বাইকটা থামলো ক্যাম্পাস গেইটের সামনে, রাফাত বাইকটা পার্ক করে আমার সাথে হাঁটা ধরলো ক্লাসের দিকে। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে ক্লাসের দিকে যেতে নিলেই সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে থেমে দাঁড়ালাম

-আরে পালক, কি অবস্থা?

-এইতোহ, আপনার কি অবস্থা আজ ভার্সিটিতে যে?

আরাব ভাইকে হেসে প্রশ্ন করলাম। আরাব ভাইয়ের মাস্টার্স কমপ্লিট হয়েছে কয়েক মাস আগেই, এখন আর খুব প্রয়োজন ছাড়া ভার্সিটিতে আসে নাহ।

-এইতো এসেছিলাম, কিছু পেপারস রিলেটেড ইস্যু ছিলো তাই, তুমি কি ক্লাসের দিকেই যাচ্ছো নাকি?

-হ্যাঁ ভাই, কয়েকদিন অসুস্থ থাকায় ক্লাস করা হয়নি তাই আরকি।

তখন পাশ থেকে রাফাত আরাব ভাইয়ের সাথে কাপ সেরে বললো

-আমরা তাহলে আসি ভাই, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।

-হ্যাঁ সিউর

আরাব ভাইয়ের সাথে কথা শেষ করেই দুজন ক্লাসে ঢুকে গেলাম। বাকি চারজন আগে থেকেই অপেক্ষা করছে ক্লাসে।
ক্লাস শেষ করে বেরোতে প্রায় বারোটা বেজে গেলো। ক্লাস থেকে বেরিয়ে মাঠের আমগাছের নিচে পাতা দুটো বেঞ্চিতে বসলাম ছয় জনে।

-ইয়ারর, এতো প্যারা ভাল্লাগেনা একটার পর একটা ক্লাস টেস্ট নিতেই আছে,এই স্যারেরা। একবার বিয়া টা কইরা লই আর পড়াশোনাই করুম না ধুরর

-তা করবি ক্যান,তোরে তো রাস্তায় দেওয়া উচিত ঝাড়ু দিতে। তোরে সেইখানেই মানাইবো

-ক্যান রে,সবাই কি রিপনা নাকি যে রাস্তা ঝাড়ু দিবো

আরশির কথা শেষ হওয়ার আগেই থপ করে একটা কি’ল বসিয়ে দিলো রাফাত। গজগজ করে বললো

-তোর কি ওই রিপনার নাম না নিলে ভাল্লাগে নাহ? তুই রিপনা তোর চৌদ্দ গু’ষ্টি রিপনা
শা’লার আপদ মেজাজ টাই বিগড়াই দেয়

-আরে কুল, এতো চেইতা যাস ক্যান ভাই

-আরে চেতুম না তো কি। কি একটা রাস্তার পাগলি তারে উই বানাইছে আমার প্রেমিকা

আরাশি পিঠ ডলতে ডলতে বললো

-বেশ করেছি বলেছি। আরও বলবো। ঠিক ই তো রিপনাই তো তোর প্রেমিকা। তোরে দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকে, আর কি লজ্জা। রাফাতের মুখ দেইখা তো রিপনা লাল নীল হয়ে যায়।

-দেখ ছেমড়ি বহুত চিল মুডে আছি,ঘাটিস নাহ। চুপ যা।

এবার আদ্রিশ পাশ থেকে শিমুর দিকে তাকিয়ে বললো

-কিরে ছেমরি,তুই মুখটা বান্দরের মতো কইরা আছোস ক্যান। ধ্রুব ভাই তো গেছিলো শুনলাম তোর বাইত্তে, তাও তোর হয়নাই? এতো পিনিক তোর বিয়াইবার?

-চুপ থাক। শয়’তান গুলা,মুখে খালি আজাইরা গল্প আর বিয়া।

নিবিড় আবার ফোড়ন কেটে বললো

-তোমরা বিয়াইবা তাতে দোষ নাই আমরা বলবো তাও দোষ। ভালোই।

-বিয়াবিয়ে বাদ দেহ, ডিপার্টমেন্ট হেড কি বলে গেলো মাথায় নেই? তিনদিন বাদেই ক্লাস টেস্ট হবে, আমারতো একটা ট্রপিক ও ঠিকঠাক কমপ্লিট নেই।

-আবে চুপ যা ছেমরি, কোন হেড ফেড কি কইলো ওইসব নিয়ে ভাবার টাইম নাই। আজকে তো চিল হবে চিল, আফু সুস্থ হয়েছে এখন পার্টি হবে ব্রো, আফু আজকে কিন্তু নুডলস চাইই

রাফাতের কথায় মুখ কুচকে বললাম

-রাফাইত্তা তোরে যে আজকে রুচিতা আপুরে আনতে যেতে বলেছে সে খেয়াল আছে? তুই খাই খাই করছিস।

রাফাত মুখে বেজায় বিরক্তির ছাপ এনে বললো

-ওই ঝগড়া’ইট্টা মহিলা রে আমি আনুম নাহ। ও আসলে ও তো ঝ’গড়া করতে করতে আমার মাথা খারাপ করবে আর ওর মেয়ে তাফাত তাফাত করে।

-কেনো তাফাত, তোমায় কি সুন্দর করে ডাকে মিষ্টি, তাফাত!!

বলেই আমি সহ সবগুলো হাহা করে হাসা শুরু করলাম।রাফাত উঠে দাঁড়িয়ে বললো

-তোরা এখানে বসে হাহা হিহি করবি নাকি যাবি বাড়ি, আমার পেটের মধ্যে ইন্দুরের রেস শুরু হইছে আমি গেলাম।

বলেই হাঁটা ধরলো, রাফাতের পিছনে আমিও দৌড়ালাম। সাথে বাকি গুলোও। সবগুলো মিলে বাড়িতে আসতে মাঝ দুপুর হয়ে গেলো।
বাইকটা পার্ক করে রাফাত আসতেই সবাই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলো।
আমি পেছন পেছন উঠছি,হুট করেই শরীর টা কেমন গুলিয়ে আসছে, সারা শরীরের ভর ছেড়ে যাচ্ছে, মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠলো, মুহুর্তেই আশপাশ অন্ধকারে ভরে গেলো, আশেপাশে কিছুই দেখতে পাচ্ছি নাহ। পা আর নড়ছে নাহ, সামনে ওদের ডাকার নূন্যতম শক্তিও পেলাম নাহ।

পেছন আসা থেকে ধপ করে শব্দে সবাই হাটা থামিয়ে ফিরে তাকাতেই আরশি চিৎকার করে উঠলো।

-আফু!!
বলেই ছুটে এলো নিবিড়। এসে পালকের জ্ঞানহীন শরীর টাকে ধরে তুলে বললো

-আফু? আফু কি হয়েছে তোর,আফু চোখ খোল

রাফাত এসে পালকের মুখে হাত দিয়ে বললো

-আফু চোখ খোল,কি হয়েছে তোর।

-ওকে ঘরে নিয়ে যেতে এক্ষুনি, শিমু ডক্টর কে ফোন দে
বলেই আদ্রিশ কোলে তুলে নিলো পালককে, অস্থিরতা নিয়েই ছুটে উঠে গেলো উপরের ঘরে

টপটপ করে চোখ বেয়ে পানি পরছে, দূর্বল শরীর টা নিয়েই বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দাঁড়ালাম দেওয়ালে টানানো বিশাল ফ্রেমের সুদর্শন চেহারার দিকে, এক হাত মুখের সামনে রেখে বরাবরের মতোই গম্ভীর ভঙ্গিতে বসে আছে। এক হাত ফ্রেমটাই বুলিয়ে আরেক হাত পেটের উপর রাখলাম। হাসছি আমি! মুখ ভরা হাসি আমার,কিন্তু চোখের পানি বাধ মানছে নাহ, নিঃস্তব্ধ রাতে আমার কান্নার হিচকি দেওয়ালে দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে আমার কানেই বিধছে

-আর কত অপেক্ষা করাবেন আপনি। আর কত? কতগুলো দিন পার হয়ে গেলো, তবুও ফিরলেন নাহ। আমায় ছেড়ে নাহয় দূরে রয়েছেন, কিন্তু ও। ওকেও কি এভাবে একা রাখবেন। ও তো আপনাকে চাই।।

বলেই পেটে রাখা হাতটা আরও দৃঢ় করে বললাম

-জানেন, জানেন মেঘ আমার মাঝে ছোট্ট একটা প্রাণ তিলে তিলে বেড়ে উঠছে। আমার আর আপনার অংশ। আমাদের ভালোবাসার ফল। আধো আধো বুলিতে আপনায় বাবা বলে ডাকার মানুষটা আসছে, ছোট ছোট পা ফেলে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখা মানুষটা আসছে। আপনি খুশি তো মেঘ? বলুন নাহ কতখানি খুশি আপনি?

বলেই হাউমাউ করে কেদে দিলাম। মেঘের অনুপস্থিতি আজ আমায় একটু বেশিই কষ্ট দিচ্ছে আমায়,, খুব বেশি। এই অবস্থায় মেঘকে আমার ভীষণ প্রয়োজন ভীষণ। দুপুরে সিড়িতেই জ্ঞান হারিয়ে পরে গেলে, রাফাত নিবিড় আদ্রিশ সবাই মিলে উপরে আনে।
মামনী আমার এ অবস্থা দেখেই অস্থির হয়ে ডাক্তার ডেকেছে, ডাক্তার চেকআপ করে জানিয়ে আমি সন্তান সম্ভবা, মানে আমি মা হতে চলেছি? মা!!
মেঘালয়ের অস্তিত্বের অংশটা আমার মাঝেই বেরে উঠছে! আমার এ খবর শুনে মামনী, রাফাত নিবিড় আদ্রিশ শিমু আরশি খুশিতে আত্মহারা, বাবা এই খবর শুনেই অফিস থেকে ফিরে এসেছে, সাথে গাড়ি ভরে মিষ্টি এনেছে। সকলের আমেজ আনন্দ দেখে আমি আর মন খারাপ করে থাকার সাহস পাইনি।
যেই খবরে বাড়ির সবাই খুশিতে মাতোয়ারা হয়েছে, সেই খবরটা যার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই জানে নাহ। আমিই জানাতে দেয়নি। অভিমানের পাহাড় জমেছে আমার, এক আকাশ সমান অভিমান হয়েছে। মাস ছুতে গেলো পারি দিয়েছে অন্য দেশে তবুও ফেরার নাম নেই৷ কাল থেকে আমার ফোনটাও ধরছে নাহ। এতো কিসের কাজ,আমার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তার কাজ? দুদিন ধরে প্রাণপ্রিয় কণ্ঠস্বর টাও শুনি নাহ, এতই কাজ উনার যে আমায় ভুলে গেলো। আবারও চোখ ভরে গেলো বারিধারায়। ফোনটা হাতে নিতেই নীলাভ চোখ জোড়ার হাসি হাসি চেহারা স্ক্রিনে ভেসে উঠলো।
সময় রাত তিনটা, আমার দুচোখে ঘুম নেই। আনন্দ চিন্তা দুটিতেই জেঁকে ধরেছে। দুদিন ধরে লোকটার খোঁজ নেই কেনো? কোনো বিপদ হলো নাহ তো?
আবার কেঁদে উঠলাম সশব্দে। ভালো লাগছে না কিছু। অজানা আশঙ্কায় ভেতরটায় টাইফুন শুরু হয়েছে, আবারও মাথা টা ঝিমিয়ে আসছে। শরীরের অসুস্থতা ছাড়িয়ে মন খারাপের অসুস্থতা আমায় গ্রা’স করছে। এসময় টায় আমার উনাকে চাই, খুব চাই। পেটের উপর হাত রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বললাম

-তোর বাবা খুব খারাপ খুব, একটুও ভালোবাসে না আমাদের, নি’ষ্ঠুর লোকটা, একটা বারও মায়ের খোঁজ নিলো না দেখলি,এমনকি তোর খবরটাও জানে নাহ ৷ বাবা খুব পঁচা। একদম কথা বলবো না আমরা, একবার আসুক আমরাও কথা বলবো নাহ।

আমার কথা শেষ হবার আগেই ফোনের স্ক্রিন টা জ্বলে উঠলো, ফোনটা হাতে নিতেই হাতের কম্পনে পরে গেলো থপ করে। আমি কি ভুল দেখছি? হ্যালুসিনেশন? ফোনে মেঘালয়ের নাম্বার টা জ্বলজ্বল করছে। এত রাতে? এত রাতে কেনো ফোন দিবে? বার কয়েক চোখ কচলে দেখলাম। নাহ চোখের ভুল নাহ। আমার ভাবনার মাঝেই কেটে গেলো ফোনটা, নিচ থেকে ফোনটা হাতে তুলতেই আবারও বেজে উঠলো। রিসিভ করে কানে ধরলাম

দুপাশের নৈকষ নিস্তব্ধতায় ও মেঘালয়ের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে, মুখে হাত রেখে আটকে আছি। ওপাশ থেকে ভীষণ ক্লান্ত স্বরে বললো

-নূর!

ব্যস, দলা পাকানো কান্না গুলো স্ফূলিঙ্গের মতো বেরিয়ে এলো। সশব্দে কেঁদে উঠলাম, কান্নার সাথে হেঁচকির দাপটে কথা অবদি বলতে পারছি নাহ।
ওপাশ থেকে বেশ শান্ত কণ্ঠের বাক্য আসলো

-খুব বেশি অপেক্ষা করিয়ে ফেলেছি তাই না?

তাও কোনো উত্তর করলাম নাহ এক হাতে মুখ চেপে ধরে আছি। মেঘালয় আবারও বললেন

-খুব রাগ করেছো কি? একবার ভাঙা’নোর সুযোগ দেবে নাহ?
খানিক থেমে আবারও বললো

-একবার বারান্দায় আসো

তৎক্ষনাৎ কান্না থেমে গেলো, কি বললো মেঘ? বারান্দায়? মানে?

-বারান্দায় যাবো মানে?

-বাইশ ঘন্টা জার্নি করে এসেছি নূর, ভীষণ ক্লান্ত। তার চেয়েও বেশি পরিশ্রান্ত তোমার বিরহে, একবার আসো। চাঁদ মুখ খানা দেখিয়ে একটু শান্তি দাও আমায়, এই দূরত্ব আমায় আধ’মরা করে ফেলেছে

হাতের ফোনটা ছিটকে ফেলে ফেলে দৌড়ে গেলাম বারান্দায়, জোৎস্না রাতের আলোয় দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে গেইটের বাইরে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো মানুষটার প্রতিচ্ছবি। আমায় দেখেই দু হাত বাড়িয়ে ইশারা করলেন।
এক ছুটে গিয়ে দরজা খুলে ফেললাম। সিড়ি বেয়ে নেমে ঝড়ের বেগে ছুটে গেলাম নিচে। কেচি গেটের তালা খুলেই চাবিটা ছুড়ে ফেলে আবারও দৌড় লাগালাম, এক লহমায় মুছে গেছে সব অভিমান, ভে’ঙে গেছে অভিযোগের পাহাড়। প্রাণপ্রিয় মুখটা দেখার লোভ আর ওই বুকটাতে ঝাপটে পরার ব্যকুলতায় ছুটে গেলাম।

আমায় ছুটে আসতে দেখে হেলান দেওয়া থেকে উঠে দাড়ালো মেঘ। সটান দাঁড়িয়ে দু হাত বাড়িয়ে দিলো। এক মুহূর্তেই আমার শরীরের সমস্ত অসুস্থতা দূর্বলতা মুছে,, গেছে হারিয়ে গেছে।
বিদ্যুতের গতিতে ছুটে গিয়ে হাম’লে পরলাম প্রসস্থ বুকটার মাঝে, দু’হাতে পিঠ খামচে ধরে গলা ছেড়ে কেঁদে দিলাম। এতদিনের সব ধৈর্য, অপেক্ষা, অভিযোগ সব যেনো বাধ ভেঙে কান্নায় আপতিত হচ্ছে। অদ্ভুত প্রাপ্তির যন্ত্রনায় ভেতরের প্রশান্তিও আমায় কষ্ট দিচ্ছে। এ কেমন উন্মাদনা, এ কেমন তা’ড়না। যার টানে আমিই হেরেছি আমার মাঝে, ভালোবাসার টানে নিজের দ্বৈত স্বত্তার কাছে হেরে আমি চূর্ণবি’চূর্ণ হয়ে মিশে গেলাম মেঘালয় নামক লোকটার মাঝে।

দুহাটে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে মেঘ, পারছে বুকের মাঝে পি’ষে ফেলতে, এতদিন কিভাবে ছিলো, কতটা অস্থিরতা যন্ত্র’ণা সহ্য করেছে মেঘ তা কি করে বোঝাবে তার নূর কে! প্রতিটি দিনে প্রতিটি ক্ষণে কতটা ভালোবেসেছে তা কি করে বোঝাবে তার নূর কে!
বেহিসেবী সময়ের কতটা সময় দুটো বুক একত্রে মিশে ছিলো তা তাদেরও গণনার বাহিরে, দুটো উষ্ণ শ্বাস, ডানা ঝাপটানো অস্থিরতা একসাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে কতক্ষণ প্রণয়াসরে মেতেছিলো কেও জানে নাহ।।
নিস্তব্ধ রাতের অস্থিরতা কমিয়ে মেঘ পালকের মুখ খানা বুক থেকে তুলে দু’হাতের আঁজলে তুলে একটা দুইটা তিনটা করে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো পালকের অশ্রুঘামে ভেজা মুখ।
সময় নিয়ে নিজেকে সামলেই দূরে সরে গেলো পালক। মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। মেঘ স্মিত হাসলো পালকের এমন বাচ্চামি দেখে।

এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো

-এখনো রেগে আছো বউ? আমি সরি তো? কি করতাম বলো কাজ শেষ না করে তো আসতে পারছিলাম নাহ, কাজ শেষ হতেই একদিন ও দেরি করিনি কাল সন্ধ্যার ফ্লাইটেই উঠে পরেছিলাম। তাই তো কাল থেকে তোমার ফোন ধরতে পারিনি জান। আমি অনেক অনেক অনেক সরি।

পালক হাত সরিয়ে দূরে সরে বললো
-তাহলে আবারও ফিরে যান নিজের কাজে, কেনো এসেছেন, লাগবে না আপনাকে, আমরা একাই থাকতে পারবো।

-আরে বাবা বলছি তো আর কোথাও যাবো…

পুরোটা না বলেই থেমে গেলো মেঘ,ভ্রু কুচকে বললো
-কি বললে? আমরা একাই থাকতে পারবো মানে? আবার বলো

পালক এবার মুখ ফিরিয়ে আবার অন্যদিকে ঘুরে গেলো। মেঘ পালকের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো
-নূর! তুমি কি লুকাচ্ছো বলো তো?

পালক মেঘের হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো।
-কিভাবে লুকাবো বলুন তো দুদিন পর তো এমনেই ফুলে ট্যাপা হয়ে যাবো তখন ঠিকই বুঝে যাবেন।

মেঘ এখনো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কি বলছে এই মেয়ে! মেঘের এমন অবাক হওয়া চেহারা দেখে পালকের বেশ হাসি পেলো। আরেকটু কাছে গিয়ে মেঘের হাতটা নিজের পেটের উপর রেখে বললো

-একজনকে নিয়েই তো পারি নাহ,দুজনকে কি করে সামলাবো বলুন তোহ

পালকের কথা শুনে মেঘ ছি’টকে সরে গেলো। অতিমাত্রায় স্ত’ম্ভিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললো
-নূর, নূর তুমি?

-বাবা হবেন মেঘ, ছোট ছোট হাতের আঙুলে আপনার হাতের ভাজে কেও হাত গুঁজে দিবে, আধো আধো বুলিতে আপনায় বাবা বলে ডাকার মানুষটা আসছে মেঘ। আমাদের ভালোবাসার..

পুরোটা শেষ করার আগেই, মেঘ ঝা’পটে ধরলো পালককে, অজান্তেই দু ফোটা জল গড়িয়ে পরলো মেঘের চোখ থেকে,জীবনের এই মুহূর্তে এসে তার নিজেকে বড্ড অচেনা লাগছে? এমন অনুভূতি গুলোয় কি করতে হয় কোনো দিশা পাচ্ছে নাহ মেঘ? অস্থির নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সাথে ঝাপটে ধরে রাখলো পালককে, মিনিট খানেক পর পালক মাথা উচিয়ে মেঘের মুখ দু’হাতে ধরে বললো

-আপনি খুশি তো চৌধুরী সাহেব?

মেঘ পালকের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো

-কি করে বলবো নূর, কি করে বলবো তুমি আমায় কি দিলে। কি চাও বলো। এই অধম টা কি করলে এ ঋণ শোধ হবে বলো তোহ। এতো খুশি আমি কোথায় রাখবো। কোন ভাষায় বললে বুঝাতে পারবো তোমায় আমি কতটা খুশি,

খানিক দম নিয়ে আবারও বললো

-আমি বাবা হবো? বাবা হবো আমি নূর? আমাদের ঘরে একটা ছোট্ট পুতুল আসবে? আমি দু’হাতে কোলে নেবো? আমায় বাবা বলবে নূর,তোমায় মা বলবে?

বলেই আবারও জড়িয়ে ধরলো আমায়। মেঘের পাগলামি দেখে খুশিতে অঝোরে জল গড়িয়ে পরলো, এতটা সুখ হয় ভালোবাসায়! এতটা সুখ পরিপূর্ণতায়! এ যেনো কোনো সুখের স্বপ্ন! কখনো শেষ না হোক, এ বুকটা আজীবন আমার আলিঙ্গনে ভরে থাক। আমার ছোট্ট বাচ্চা আর তার বাবাকে নিয়ে আমৃত্যু থাকতে চাই, এই পরম প্রশান্তির বুকটাই শেষ অবদি মিশে থাকতে চাই।

-নূর, এখন থেকে সবসময় কোলে করে রাখবো কিন্তু!

~~সমাপ্ত🌼

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here