তুমি আসবে বলে পর্ব -২০+২১+২২+২৩

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-২০

পাখির কিচিরমিচির শব্দ বলে দিচ্ছে সকাল হয়ে গেছে। রোদের আলো ফুটতেই জেগে যায় জনসংগম। সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশ কিছু মানুষ তা উপভোগ করে, কিছু মানুষ নিজের কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে আর কিছু মানুষ বিছানায় অলসে ভঙ্গিতে শুয়ে থাকে। তাদের মধ্যে অন্তু ও একজন আজ তার দেড়িতে ঘুম ভেঙ্গেছে। বেলকনির দরজা দিয়ে হালকা আলো তার চোখে এসে পরতেই সে চোখ বন্ধ করে নেয়, চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে কালকের ঘটনাটা দেখতে পায় অন্তু চোখ খুলে উঠে বসে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের মনকে স্বাভাবিক করে নেয়। ছি ছি এটা আমি কি করলাম এমন নির্লজ্জর মতো তাকিয়ে থাকলাম। রোদ আমাকে কি ভাবলো, আমাকে হ্যাঙ্গলা ভাবলো না তো। কালকের ঘটনার পরে রোদের সামনে কেমন করে যাব ছি। বলে নিজেকে গালি দিতে লাগলো, পরক্ষণে ভাবে রোদকে একটা সরি বলবে কালকের জন্য। অন্তু সব ভাবনা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুম যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অরনি তার বেডে বসে পা ঝুলাছে আর তাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। অন্তু ভ্রু কুচকে বলো…

অন্তুঃ এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন? কি হয়েছে?

অরনিঃ তুই বল কি হয়েছে তোর

অন্তুঃ আমার আবার কি হবে। আমি তো ঠিক আছি। আমার মনে হয় তোর কিছু হয়েছে না হলে সকালে হতেই আমার রুমে এসে এমন খাপছাড়া ভাব করছিস

অরনি উঠে দাড়িয়ে অন্তুর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বলো…আমার কিছু হয় নিই কিন্তু তোর অনেক কিছু হয়েছে। তুই আর আমার আগের দিদিয়া নেই কেমন পাল্টে গেছিস।

অন্তুঃ কি যা তা বলছিস আমি আমি পাল্টে গেছি। তুই কোন দিক দিয়ে দেখলি আমি পাল্টে গেছি বল শুনি

অরনিঃ এই যে তুমি এখন আগের মতো আমারে সাথে কথা শেয়ার করো না, আর্ট ক্লাসে কি শিখছো কিছু বলছো না। এমন কি আর্ট ক্লাসে করে বাড়ি ফেরো অনেক দেড়িতে যেখানে তোমার আর্ট ক্লাস শেষ হয় ৫টায়। আর কাল তো দাদাভাইর সাথে আসলে কেন প্রতিদিন যে দিতে আসে সে কাল আসেনিই না কি। আর আজ কাল ক্যাফি দেখছি বেশিই খাওয়া ধরছো।

অরনি ঠাট্টা করে বলে উঠলো। অন্তু অরনির কথার ধরন শুনে বুঝতে পারছে অরনি তার লেগ পুল করছে, তাকে নিয়ে সে মজা করছে। অরনি কথা মাঝে অন্তুর কেমন যেন অস্থিরতা লাগছে, কেমন আনইজি লাগছে। অন্তু কাপট রাগ দেখিয়ে বলো..

অন্তুঃ আমার সাথে মজা করছি তুই অরু। আমি তোর বড় আর তুই। আমার লেগ পুল করছি দাঁড় তোকে আমি আজ মেরেয় ফেলবো।

বলে তেরে গেলে অরনি এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে ভো কাটা। সে জানে এখানে থাকা মানেই তার পিঠে তাল পরবে তাই সে আগে ভাগেই দৌড়ানোর প্রস্তুতি করেই নিয়েছিলো। অরনিকে পালাতে দেখে অন্তু থেমে যায়। সে ভাবে অরনি তো ভুল বলেনি সে আসলেই বদলে যাচ্ছে। আগের অন্তু আর এখন কার অন্তুর মধ্যে অনেক পার্থক্য। তার মধ্যে এই পরিবর্তন কিসের লক্ষন সে বুঝতে পারে না, কিন্তু তার এই পরিবর্তন অনেক কিছু পাল্টে দেবে। অন্তু চায় না তার এই পরিবর্তন সে তো আগের অন্তু হয়ে থাকতে চায়। তার জীবনে অর্ণব ব্যতিত কনো কিছু চাই না, না সে করবে। অন্তু সব ভাবনা ফেলে নিচে যায় খেতে….
______________________________

অফিসের কিছু কাজে ব্যস্ত আছে আদিবা,, নতুন প্রজেক্ট নিয়ে তাকে রোদের সাথে অনেক খাটতে হয়ে অবশ্য প্রাপ্য সাহায্য করে তার কাজে। রোদ আর প্রাপ্য আদিবাকে তার বোনের মতো ভালোবাসে। আনভি তাকে মিষ্টি খালামনি বলে অনেক ভালোবাসে। আদিবার এখন মনে আছে রোদের সাহায্য তার নতুন করে জীবনে লড়াই করতে শিখিয়েছে। রোদ তাকে কাজ দিয়ে সাহায্য না করতো তাইলে সে কি করতো সে নিজেও জানে না। প্রাপ্য তাকে অনেক হেল্প করে এই অফিসে কাজ করার জন্য এমনকি রোদ তাকে থাকার জন্য বাড়ি ও দিয়েছে। পুরো চৌধুরী পরিবারের কাছে ঋনী হয়ে থাকবে। আদিবা কাজ করছে তখন তার ফোনে ফোন আসে সে ফোন নিয়ে নাম্বার দেখেই বুঝে ফেলেছে কে ফোন করেছে। সে আর কেও নয় আদি, এই ১মাস যাবত অনেক নাম্বার থেকে আদিবাকে ফোন করে সে সব নাম্বার ব্লক করে কিন্তু আবার নতুন সিম থেকে তাকে ফোন করে। অনেক বার দেখা করছে, রাস্তা ঘাটে, বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকে শুধু একটা বার কথা বলবে বলে। কিন্তু আদিবার তার সাথে কথা বলতে নারাজ। আদিবা ফোন তুলে বলো…

আদিবাঃ হ্যালো কে

ওপশ থেকে আদির বজ্র কন্ঠে বলে…কে সেটা তুমি বুঝতে পারছো না তাই না। অনেক পাখনা গজিয়েছে তোমার তাই না এই পাখনা কাটতে আমার ২মিনিট ও লাগবে না জাস্ট ২মিনিট ও না। তারপরও তোমার সাথে ভালো করে কথা বলছি শুধু জানার জন্য কি হয়েছে তোমার না হলে তোমাকে ঠিক করার উপায় আমার জানা আছে বুঝলে..

আদির রাগিত কন্ঠে শুনে আদিবার গলা শুকে কাঠ। ঢোক গিলে জিব্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলো…আপনি এমন পাগলাম করছেন কেন বলুনতো। আমি কতো বার আপনাকে বলবো আমি কিছু বলবো না তারপর ও আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করছেন। কেন এমন করছেন

আদি নিজের রাগ সংযুক্ত করতে না পেরে বলো… কেন এমন পাগলামি করছি তাই তো ওকে ফাইন কাল রেডি থাকিস তোকে উচিৎ শিক্ষা দেবো।

আদির কথা শুনে আদিবা ভয় পেয়ে যায়। আদি কি করতে চাচ্ছে সে জানে না কিন্তু বড় কিছু সে অবশ্যই করবে। আদিবা ভয়ার্ত কন্ঠে বলো… কি কি করতে চাচ্ছে আপনি। আদি বলুন কি করবেন

আদি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলো…..কালকের কাজ কালকে প্রকাশ পাবে তুই শুধু দেখ আমি কি করি।

বলে ফোন কেটে দিলো এদিকে আদিবা ফোন কানের কাছে নিয়ে হ্যালো হ্যালো করতে লাগলো। যখন ওপশ থেকে উত্তর এলো না বুঝতে পারে ফোন কেটে গেছে। ফোন রেখে কপালের ঘাম মুছে ভাবছে আদি তাকে পাবার জন্য সব করতে পারে, আদি এখন নিজের মধ্যে নেয় সে কি করছে সে নিজেও জানে না। না জানি কাল কি হবে। ভেবেই হাত পা কাপছে আদিবার…..
_______________________________

বিকেলে রক্তিম আলোতে উজ্জ্বল মনোর্মপরিবেশ কার না ভালো লাগে। বিকেলে আকাশে তাকালে বিভিন্ন পাখি চলে যায় তার নীরে। বিকেলে আর্ট ক্লাস করে রোদ আনভিকে আর অন্তুকে নিয়ে এসেছে ফুচকা খেতে। অন্তু এখন পর্যন্ত রোদের সাথে কথা বলেনি কেমন জোড়তা কাজ করছে তার মধ্যে কালকের ঘটনাটি কেন্দ্র করে। কিন্তু তেমন কোন ভাব রোদের মধ্যে দেখা দেয় নি অন্তুর সাথে রোদ স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। অন্তু ও আর কথা বাড়ায় নি। অন্তু আনভিকে নিয়ে একটা টেবিলে বসে আছে রোদ অর্ডার দিতে গেছে। অন্তু আর আনভি কথা বলছে আর কি নিয়ে যেন হাসছে, রোদ এসে বসতে বসতে বলো..

রোদঃ কি নিয়ে এতো হাসা হাসি জানতে পারি কি

অন্তু রোদের দিকে তাকায় সাথে সাথে রোদের সাথে চোখাচোখি হতে সে চোখ নামিয়ে নেই। তা দেখে রোদ মুচকি হাসি দেয় কালকের ঘটনার জন্য অন্তু এমন করছে সে জানে। আসার পর থেকে অন্তু তার সাথে কথা বলছে না দেখে সেও আর আগায় নি আর না মেয়েটিকে লজ্জায় ফেলতে চাচ্ছে। আনভি বললো…

আনভিঃ জানো পাপা আজ আমি মিস কেয়ার গায়ে রং ফেলে দিচ্ছি। হি হি হি

রোদঃ আম্মু এমনটা করতে নেয় ব্যাড ম্যানার্স কাল মিস কে সরি বলবে

আনভি মুখ ফুলিয়ে বললো…মিস আমাকে বকে তাই করছি। হুম

রোদ আনভির কথা শুনে হাসলো অন্তু রোদের সেই স্নিগ্ধ হাসি দেখতে লাগলো। ফুচকা আসলে তা খেতে বলে সে একটা ফোন এটেন্ট করতে গেলো। এদিকে অন্তু আনভিকে ফুচকা খেতে নিলো। তারাদের থেকে কিছু দূর একটা টেবিলে তিনটি ছেলে কিছু মেয়েকে টিজ করছে। হঠাৎ তাদের মধ্যে থেকে একজন বলো….

১ম জন বলো.. সামিন দেখ লালা জামা পড়া মেয়েটার হেবি ফিগার।

সামিন সেদিকে তাকিয়ে বলো… হও মন তুই ঠিক বলছিস। কি বলিস হাসিব

হাসিবঃ গুরু হেবি না পুরো সানি লিওনি লাগছে। দেখও দেখও কি সুন্দর করে বাচ্চাটাকে খাওয়াচ্ছে

এরা একেপর এক খারাপ মন্তব্য করছে অন্তুকে নিয়ে। এদিকে অন্তু সব শুনে চপ করে আছে তার চোখের কনে জল জমতে থাকে। আনভি মুখে রাগি ভাব নিয়ে সেই ছেলে গুলোর দিকে তাকা। আনভির তাকানো দেখে সামিন বলে…

সামিনঃ ও খুকুমণি বাচ্চাকে না খাইয়ে আমাদেরও খাইয়ে দাও। আমাদের ও ভালো লাগবে।

বলে বিচ্ছিরি ভাবে হাসতে লাগো। সে হাসির শব্দ শুনে অন্তু গা গুলিয়ে আসলো ছি কতটা নিচু মনের মানুষ। হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে অন্তু চমকে যায় সে সামনে তাকাতেয় ভয় পেয়ে যায়, সে দেখে রোদের রক্ত লাল হওয়া চোখ আর নিচে পড়ে আছে সামিন নামের ছেলেটি যে অন্তুকে বাজে কথা বলছিলো।

আসলে রোদ যখন ফোনে কথা বলে আসতে লাগে তখন অন্তুকে উদেশ্য করে বাজে মন্তব্য সে শুনে ফেলে। তার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়, রাগে গজগজ করতে থাকে, চোখ অসম্ভব লাল হতে লাগো। মনে হচ্ছে সব ভস্ম করে দেবে। নিজে রাগ কন্টল না করতে পেরে সামিন কে সজোরে লাথি মারে সে ছিটকে নিচে পরে যায়। সামিনকে পড়তে দেখে মন বলে..

মনঃ এই শালা তুই কে আর গুরুকে কেন মারলি

রোদঃ আমি কে তা তোদের জানতে হবে না। ওই মেয়েটিকে বাজে কথা বলার সাহস কোথা থেকে পেলি তুই [বলে নাক বরাবর ঘুশি মারে রোদ, মনের নাক মুখ দিয়ে গল গল করে রকতো পরতে লাগলো]

এদিকে রোদকে এতো রাগতে দেখে অন্তু আত্মা কেপে ওঠে। সে রোদকে এতো রেগে কখনো দেখে নিই আজ প্রথম তাকে রাগতে দেখো। অন্তু ভয় পেতে লাগলো, আনভি তার পাপাকে মারা মারি করতে দেখে খুশিতে লাফাতে লাগলো হাত দিয়ে ডিসুম ডিসমু করডে লাগলো। এদিকে হাসিব রোদকে পিছু থেকে আঘাত করাই সে ছিটকে যা কিন্তু পরে না। হাসিব বলতে লাগলো…

হাসিবঃ তুই কে হোস মেয়েটা নাগর নাকি হাসবেন্ড। কে হয় তো এই মেয়ে তোর কেন এতো পরে..

রোদ দৌড়ে এসে হাসিবের পেট বরাবর লাথি মেরে বলে…

রোদঃ ওর হাসবেন্ড হয় আমি বুঝতে পেরেছিস ও আমার স্ত্রী।

বলে তিনজনকে মারতে লাগলো। এদিকে রোদের কথা শুনে অন্তু স্তব্ধ হয়ে যায়, সে কি নিজের কানে ভুল শুনলো না কি ঠিক। রোদ তাকে তার স্ত্রী বলো, তার হাসবেন্ড বলে পরিচয় দিলো কেন সে এই কাজ টা করলো কেন। অন্তু রোদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছু লোক মিলে রোদকে ছেলেগুলো থেকে ছাড়ায়। রোদ রাগে গজগজ করতে করতে অন্তুর কাছে এসে আনভিকে কোলে করে অন্তুর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। অন্তু শুধু দেখেই যাচ্ছে কিছু বলতে পারছে না সে তার হাতে দিকে তাকিয়ে আবার রোদের দিকে তাকায়। রোদের কোন হেলেদুলে নেই সে আগের মতো হাত ধরে অন্তুকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আনভিকে তার কোলে বসিয়ে দরজা বন্ধ করে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। রোদ যে রাগের বসে কি বললো সে নিজেও জানে না, যদি জানতো তাইলে অন্তুর মনের অবস্থা বুঝতে পারতো। রোদ রাগ কন্টোল করার জন্য জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগো।

এদিকে অন্তু রোদকে দেখছে শুধু আর বোঝার চেষ্টা করছে কেন তাকে বাজে মন্তব্য করায় রোদের এতো গায়ে লাগলো যে নিজের রাগ সংযুক্ত করতে পারলো না সে। রাগের বশে কি করলো, বলো কিছু তা আসলো না কেন? কেন? সে তাকে তার হাসবেন্ড বলে সবার সামনে পরিচয় দিলো। রোদের মনে কি আমার জন্য কোন প্রকার ফিলিংস আছে, যদি থাকে তাহলে সে রোদের কাছ থেকে দূরে থাকবে। আমি কিছুতেই অন্যর মায়া জোরাতে পারবো না। আমার মনে শুধু অর্ণবের মায়ার রং আছে তার অস্তিত্বে বিলীন হওয়া সেই অন্তু আছে। সে অন্য কারোর নয়, সে শুধু অর্ণবের। রোদ মির্জা বাড়ির গেটের কাছে গাড়ি ঠেকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলো…

রোদঃ অন্তু বাড়ি এসে গেছে যাও গো

অন্তু বিনা বাক্যে গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে চলে আসে। পিছনে তাকিয়ে একা বার ও দেখলো না সে, যদি একবার পেছেনে ঘুরে দেখতো তাইলে রোদের খাত বিক্ষত হবা হৃদয় দেখতে পেতো, রোদের চোখের কোণে তার নামের জল দেখতে পেতে। তাকে তীব্র ভাবে কিছু বলতে না পারার কষ্ট দেখতে পেতো। রোদ এক মুহূর্ত নষ্ট না করে গাড়ি নিয়ে চলে যায় আর কিছুক্ষণ থাকলে বুঝি তার মনের সব গোপন কথা অন্তুকে বলে দিতো, সে চায় না বলতে মেয়েটা আবার কষ্ট পাবে বলে..

আকাশে আবছা অন্ধকার নেমে এলো চারিদিকে সাথে মেঘের গর্জন। মেঘ আজ কান্না করবে ঠিক করেছে মনে হয়। আস্তে আস্তে বৃষ্টির গতি বারতে লাগলো তার সাথে বাড়তে লাগলো কারো মনে আজানা আশঙ্কা আর কারোর মনে গোপন কথা সব খুলে বলার প্রবলতা। কি হবে সামনে কেও জানে না, কার জন্য কি আছে ভবিষ্যতে তাও জানা নেই। কেও ভালোবেসে কষ্ট পাবে। না কি কারো হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার অপেক্ষা সমাপ্তি ঘটবে…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-২১

বৃষ্টি এখন ঝড়েরবেগে ধরেছে, আকাশে বজ্রগর্জিত হচ্ছে। হালকা আলোতে মেঝেতে বসে আছে অন্তু দু-চোখ দিয়ে অঝোরে পরছে নোনাজল। বাইরে যেমন ঝড় হচ্ছে তেমন তার মনেও ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সারা রুমে নীল ড্রিম লাইট জ্বলছে, রুমের দরজা বন্ধ কিন্তু বেলকনির দরজা খোলা। হালকা বাতাস আছে সেখান থেকে সেই বাতাসে অন্তু অবাধ্য চুল গুলো উড়চ্ছে। তার মনে একটাই প্রশ্ন আসছে সে কি সত্যি অর্ণবকে ভুলে যাচ্ছে, অর্ণবের মায়া সে কাটিয়ে উঠছে। তার অপেক্ষা, ভালোবাসা, মান-অভিমান, রাগ, কষ্ট, অভিযোগ, সব মুছে যাচ্ছে শুধু রোদ আসার কারনে। তার এতো দিনের ভালোবাসা শুধু ১মাসের পরিচয়ে ফিকে হয়ে গেছে। সে একটু আগের কথা ভাবচ্ছে, কেন সে এই কথা গুলো শুনলো, কেন তার সাথেয় এমন হয়, কেন কেন কেন…..

একটু আগে…..

সন্ধ্যায় রোদ অন্তুকে বাড়িতে নামিয়ে দিলে সে বাড়িতে এসে কাওকে কিছু না বলে তার রুমে চলে আসে। রুম লক করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিকেলর আকাম্মসিক ঘটনা গুলো মনে পরতে লাগলো, তার শুধু রোদের কথা গুলো মাথায় বাজতে লাগলো। কেন রোদ তাকে স্ত্রী পরিচয় দিলো, কেন রোদের এত রাগ হলো তার জন্যে। কেন? বৃষ্টি কারনে শীত লাগতে সে গায়ে কাথা নিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে চোখ লেগে যায়। সেই ঘুম ভাঙ্গে রাত-১১টার দিকে অন্তু উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সে ভাবছে সন্ধ্যার পর থেকে তাকে কেও ডাকতে এলো না না রাতের খাবার দিতে এলো স্ট্রেঞ্জ। আগে তো হয় নি এমন অন্তু রাতে আর খাবে না বলে মন স্থির করে কিন্তু রুমে পানি না থাকায় সে নিচে যায় পানি আনতে। পানি নিয়ে যখন রুমে আসে তখন তার দিদুনের রুম থেকে কিছু কথা তার কানে এলে সে থেমে যায়। তার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। রুম থেকে অরনির কথা ভেসে আসছে…

অরনিঃ দিদুন তুমি দিখেছো দিদিয়া আগের থেকে কতোটা চেঞ্জ হয়ে গেছে

অরনির কথার সম্মতি দিয়ে তার দিদুন বলো…হ্যাঁ আমার অন্তু দিদিভাই আগের মতো এখন নেয়। আগে যেমন পাগলামো করতো অর্ণব দাদুভাইর জন্য এখন তা করে না।

অরনিঃ শুধু মাত্র রোদ ভাইয়া আর আনভির জন্য দিদুন। এই ১মাসে তারা দুজনেই দিদিয়ার এতো কাছে এসে গেছে যে দিদিয়া অর্ণব ভাইয়ার কথা মনেও বুঝি করে না। রোদ ভাইয়ার সাথে দিদিয়া থাকলে অনেক হাসি খুশি থাকে আমি দেখেছি আর আনভি পেলে দিদিয়া সব ভুলে যায়, আনভি ও তাই।

দিদুনঃ হুমম আমি ও খেয়াল করেছি অন্তু দিদিভাই আনভি কিছুদিনে মধ্যে অনেকে কাছে চলে এসেছে। আমি শুধু চায় অন্তু দিদিভাই আগের মতো পাগলামি না করে। সে নতুন করে জীবন শুরু করে এটাই আশা করি।

অরনিঃ হবে দিদুন হবে দিদিয়া সব ভুলে আবার আমাদের আগের অন্তু হয়ে যাবে তুমি দেখো।

অন্তু আর শুনতে পেলো না, সে আর শোনার অবস্থাতে নেয়ে। তার সারা শরীর আবস হতে লাগলো, কান্না গুলো গলায় দলাপাকাতে লাগলো। সে দৌড়ে রুমে এসে তখন থেকে একই অবস্থায় রয়েছে।

অন্তু উঠে তার গিটার নিয়ে এসে তাতে সুর তুলতে লাগলো, আর সব তার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। রোদ, আনভি, অরনি, দিদুনের সবার কথা তার কানে বাজতে লাগলো। পরিবেশ টা বিষাক্ত হতে লাগলো তার, নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সে অর্ণবকে ভুলতে যাচ্ছে ভাবতেই ধবধব করে রাগ মাথায় উঠতে লাগো, রাগে সারা দেহ কাপতে লাগলো। রাগ কন্টোল করতে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই অর্ণবের হাসি মুখ দেখতে পেলো, অন্তু ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। সে ভাবতে লাগলো সে দিনের ঘটনা অর্ণব তাকে কিস করতে সে কি করেছে। অন্তু হেসে ফেলে হাতের গিটারে সুর তুলে খালি গলায় গান গাইতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো…

ভ্রমর কইয়ো গিয়া
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে
আমার অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে
ভ্রমর কইয়ো গিয়া(।।)

কইয়ো কয়োই কইয়োরে ভ্রমর
কৃষ্ণ রে বুঝাইয়(।।)
মুই রাধা মইরা যাইমু
কৃষ্ণ হারা হইয়া রে ভ্রমর

ভ্রমর রে…..
আগে যদি জানতাম রে, ভ্রমর যাইবা রে ছাড়িয়া(।।)
মাথার কেশর দুই ভাগ করি রে…
রাখিতাম বাধিয়া রে ভ্রমর কইয়ো গিয়া
ভ্রমর রে…
অঙ্গ যায় জ্বলিয়া…
আমার অঙ্গ যায় জ্বলিয়া ল

অন্তু গান গাওয়া শেষ হতেই সবাই করতালি দিয়ে সম্মোধন করে। অন্তু মৃদু হেসে স্টেজের ব্যাকসাইডে গেলে দেখে আদিবা দাড়িয়ে আছে। আদিবা অন্তুকে দেখে দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে উল্লাসে কন্ঠে বললো…

আদিবাঃ দোস্ত কি গাইলি পুরাই ফাটাইয়া ফেলছিস। তোকে দেখে আমার হিংসে হয়, ছবি আঁকতে পারিস, গান গাইতে পারিসে এমন কি নাচতে ও পারিস আর আমি একটা অকর্মায় ঢেঁকি

অন্তু মলিন হেসে বলো… বেস্টু তুই মন দিয়ে ভালোবাসতে পারিস আর আমি তা পারি না

অন্তু এমন কথা শুনে আদিবা তাকে ছেড়ে দিয়ে, অন্তু মলিন মুখ দেখে বুঝতে পারে না কি হয়েছে। সে বলো..

আদিবাঃ অন্তু তোর কি হয়েছে এমন করে কথা বলছিস কেন? আমাকে বল কি হয়েছে। আমি ১ সপ্তাহ ধরে দেখছি তুই কেমন মন মরা হয়ে থাকিস, আগের মতো হাসি খুশি থাকিস না, কি এত ভাবিস।

অন্তু জোরপূর্বক হেসে বলো..এই দেখ আমি হাসছি হি হি হি। আমার কিছু হয় নাই চিল কর তুই

আদিবাঃ তোর কোন হাসি সত্যি আর কোনটা মিথ্যা আমি বুঝতে পারি। এবার ফটফট করে বলতো কি হয়েছে।

অন্তু কিছু বলতে যাবা তার আগে কোথা থেকে অর্ণব এসে অন্তুর হাত ধরে তার দিকে ঘুড়িয়ে দাড় করায়। আচমকা এমন হওয়ায় তারা দুজনি চমকে যায়, অন্তু রেগে অর্ণব কে কিছু বলতে যাবে তার আগে অর্ণব তার চেয়ে দ্বিগুণ রেগে বললো…

অর্ণবঃ নিজেকে কি ভাব তুমি হুমম কি ভাবো নিজেকে তুমি। কোথাকার রানী তুমি হ্যাঁ কথার জবাব দাও

অর্ণবকে এই প্রথম রাগতে দেখে অন্তু আর আদিবা দু’জনি ভয় পেয়ে যায়। কেন না অর্ণবকে সব সময় শান্ত থাকতে দেখেছে, কারোর সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনি সে। আর আজ এতো রেগে কথা বলছে তাও অন্তুর সাথে যে কিনা অন্তুর সাথে সব সময় নরম থাকে। এটা ভাবতেই আদিবার বিস্মিত হতে লাগলো। এদিকে অন্তু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে অর্ণবের দিকে তার প্রান পাখি একটু খানি হয়ে গেছে অর্ণবের রাগি গলার স্বর আর রক্তিম চোখ দেখে। অন্তু মিনমিন করে বলতে লাগলো…

অন্তুঃ যেখানে রাগ আমার দেখানোর কথা সেখানে রাগ উনি দেখাচ্ছে। দোষ সব উনার ছিলো কেন আমাকে কিস করতে গেলো আর আমি কি ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছি আমার কি করার ছিলো তাকে আটকাইতে তো ধাক্কা দিলাম। ধুর ভাল্লাগে না ধুর ধুর

অন্তুর বিড়বিড় দেখে অর্ণব রেগে গিয়ে বললো…

অর্ণবঃ এই মেয়ে মিনমিন করে কি বলছো, যা বলার জোরে বলো। তোমাকে কি করবো বলো তো? কি করবো? ১ সপ্তাহ ধরে কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু তুমি তো তুমি একটা কথা শুনলে না উল্টে রাগ দেখাচ্ছো তাই না। এই তোমাকে কতো বার সরি বলবো? কতো বার ক্ষমা চাইবো নিজের ভুলের জন্য? হেই কি হলো কথা বলো?

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু মাথা নিচু করে ফেলে। এদিকে আদিবা তাদের কথা আগা মাাথা কিছু বঝতে পারছে না সে। কি এমন হয়েছে তাদের মধ্যে যার জন্য অর্ণব ক্ষমা চাচ্ছে অন্তুর কাছে। সে অর্ণবকে একবার দেখছে আবার অন্তুকে। অন্তুকে মাথা নত করে থাকতে দেখে অর্ণবের মাথায় ধপ করে রাগ উঠে যায়। অর্ণব অন্তুর হাত ধরে কোথাও নিয়ে যেতে লাগলো, অর্ণবের এলাহি কান্ড দেখে অন্তু স্তব্ধ হয়ে গেলো। এদিকে আদিবা কিছু বুঝতেও পারছে না তার কি করা উচিৎ।
_______________________________

ডিপার্টমেন্ট ছাদের মাঝে দাড়িয়ে আছে দুজনে। অন্তু কিছু না বলে মাথা নতো করে আছে দেখে অর্ণবের রাগ বাড়ছে কিন্তু কিছু বলছে না সে। হালকা হালকা বৃষ্টির গুড়ানি পরছে মনে হচ্ছে অনেক বৃষ্টি হবে। আকাশে কালো মেঘের ছড়াছড়ি, মৃদু বাতাসে অন্তুর খোলা চুল গুলো উড়চ্ছে। অর্ণবের চোখ সেদিকে আটকে গেছে, না চাইতেও অবাধ্য মন অন্তুর দিকে চেয়ে আছে। অন্তুর পরনে নীল রঙের শাড়ি তার শরীরে মানিয়েছে, হালকা মেকাপ, কোপালে কালো টিপ, খোলা চুল, হাত ভোরতি নীল চুড়ি, অন্তুকে অর্ণবের কাছে রোমনিও লাগছে, না চাইতেও সে একটা ঘোরের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। অর্ণবকে কিছু না বলতে দেখে অন্তু একবার মাথা উচু করে একবার অর্ণবের দিকে তাকাতে দেখে অর্ণবের ঘোর লাগা দৃষ্টি দেখে লজ্জায় মাথা নতো করে নেয়। অর্ণব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে অন্তুকে নরম কন্ঠে বললো…

অর্ণবঃ অন্তু প্লিজ এমন করো না দেখ মানছি আমি ভুল করেছি কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো আমি তেমনটা করতে চাই নি, কি থেকে কি হলো আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। আমি তোমার সাথে খারাপ আচরণ করতে চাইনি প্লিজ বিলিভ মি…..

অন্তু অর্ণবের দিকে তাকায়, তার চোখে অনুতাপ্ত স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। অন্তুর এখনও মনে আছে সেদিন যখন অর্ণবকে ধাক্কা দিয়ে চলে আসে, তখন অর্ণব তাকে জ্বর নিয়ে থামাতে আসে কিন্তু সে চলে যায় এতোখনে। অন্তু বাড়ি গিয়ে তাকে রুম বন্ধ করে ভাবতে লাগলো তখন অর্ণবের করা ঘটনা। অন্তু হঠাৎ কিছু ভেবে মুচকি হাসি দেয়। পরেরদিন থেকে শুরু হলো অর্ণবকে ইগনোর করা, ক্যাম্পাসে আনাচে কানাচে, কেন্টিনে, ফোনে সব জায়গায় অর্ণবকে ইগনোর করতে লাগলো। অর্ণব তাকে হাজার বার ক্ষমা চেয়েছিলো কিন্তু সে কথা শোনে নি, হাজার বার ফোন করেছিলো ধরেনি এমন কি তার বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছে কিন্তু অন্তু দেখেও না দেখার ভান করেছে। অর্ণবের সাথে কি হয়েছে সেটা আদিবাকে সে বলে নি। ১সপ্তাহ পরে আজ নবীন বরণ এসে অর্নব অন্তুর সাথে কথা বলছে।

এতখন গুড়া বৃষ্টি হচ্ছিল কিন্তু এখন বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো। অন্তু ভেজা চোখে অর্ণবের দিকে তাকায়, অর্ণব অসহায় মুখ তার দিকে চেয়ে আছে। নীল পাঞ্জাবি ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে, অর্ণবের চোখে মুখে আছে অনেক গোপন কথা যা সে বলতে পারছে না। অন্তু হেঁটে অর্ণবের সামনে এসে দাড়িয়ে তার পায়ের ওপর নিজের পা রেখে তার মুখোমুখি দাড়িয়ে কিছু না বলে মুচকি হেঁসে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে অর্ণবের অধরে তার অধর ছোঁয়া। এদিকে ঘটনাটি এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো এতে অর্ণব হতবাক হয়ে গেলো। সে ভাবেই নি অন্তু এমন করবে, অর্ণব বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে অন্তুর দিকে। অন্তু অর্ণবের কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে অর্ণবের ওষ্ঠে কামড় দেয় এতে অর্ণবের হুশ আসে সে অবেশে চোখ বন্ধ করে অন্তুর সাথে তাল মেলায়। কিছু সময় পর অন্তু সরে এসে অর্ণবকে দেখে লজ্জায় অর্ণবের বুকে মুখ লুকিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো, অর্ণব অন্তুর লজ্জায় লাল হওয়া মুখ দেখে অন্তু কোমর জড়িয়ে আরো কাছে নেয় তাকে। অর্ণব তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে…

অর্ণবঃ আই লাভ ইউ অন্তু, আই লাভ ইউ। কখন, কোথায়, কিভাবে তোমার মায়ায় জড়িয়েছি আমি জানি না। আমি শুধু এটা জানি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, তুমি হীনা আমি নিঃশোষ, তোমাকে আমার চাই, আমার অগোছালো জীবনকে গোছাতে তোমার প্রয়োজন ভিষন প্রয়োজন। তুৃমি কি আমার হবে অন্তু

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু অর্ণবকে আরো গাঢ় করে জড়িয়ে ধরে বললো….আই লাভ ইউ অর্ণব আই লাভ ইউ

অর্ণব অন্তুর কথা শুনলে তার ঠোঁটের হাসির রেখা গাঢ় হলো। অন্তুর ঘাড়ে মুখ দিয়ে তার ঘাড়ে চুমু দেয়, অর্নবের স্পর্শ পেলে অন্তু কেঁপে ওঠে…

আজ তাদের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটলো। কালো মেঘের হাতছানিতে আজ পূর্নতা পেলো একজোরা ভালোবাসা। বৃষ্টি বেগ বাড়ার সাথে সাথে তাদের মনের অবাধ্য সব অনুভূতি গুলো বলতে লাগলো। একে ওপরকে ভালোবাসাতে জোর জাড়িত হতে লাগলো তাদের অনুভূতি অনুভব………..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-২২

স্নিগ্ধ পরিবেশ আধার আলোতে মিশে একা কার। আধার কালো রাতে বৃষ্টি ছিটে ফোঁটাও এখন নেয়, বিকেলর সেই তুমুল বৃষ্টি রাত বারার সাথে সাথে নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো। হালকা বাতাস হচ্ছে শুধু শীত শীত পরিবেশ, সাথে রোমান্টিক পরিবেশ। অন্তু বেডে শুয়ে গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে ফোনে কথা বলছে অর্ণবের সাথে।

(বিকেলের যখন অর্ণব তার মনের কথা বলে তখন থেকে সে অন্তুকে কাধ ছাড়া করছে না। তারা বৃষ্টিতে ভিজে ছাদ থেকে নিচে আসলে আদিবা তাদের সামনে পরে। তাদের এভাবে ভিজতে দেখে আদিবা অবাক হয়। সে কিছু বলবে তার আগে অন্তু বলো…বেস্টু কাজ আছে কাল কথা বলবো,,, বলে আদিবার হাত থেকে তার ব্যাগ নিয়ে আদিবাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অর্ণবের হাত ধরে চলে যায়। এদিক আদিবা বেকুপের মতো দাড়িয়ে থাকে, কি হলো বুঝলো না। অর্ণব অন্তুকে বাইকে উঠিয়ে তাকে তার বাড়িতে দিকে যায়, কেননা অন্তুর ভেজার কারনে তার শাড়ি লেপ্টে আছে শরীরের সাথে তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি দিয়ে আসে)

অন্তু নরম সুরে বললো… তুমি বাড়ি গেছো কখন

অর্ণব কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো…এই তো তোমাকে দিয়ে বাইকে তেল ভোরে সন্ধ্যার পরে এসেছি

অন্তু চিন্তাত কন্ঠে বললো…এতো দেড়ি করলে কেন? আমার সাথে তুমিও ভিজেছিলে। এখন যদি আবার জ্বর আসে কিছু দিন আগে জ্বর এসেছে একবার।

অর্ণব মুচকি হেসে…. আসবে না তুমি ঠিক আছো। রাতে খেয়েছো

অন্তু স্মিথ হাসলো ছেলেটা পুরোয় পাগল হয়েগেছে না জানি নিজের কথা ভাবে সেখানে আমাকে নিয়ে পরেছে..সে বললো…হ্যা আমি ঠিক আছে, খেয়েছি তুমি??

অর্ণবঃ হ্যা সামান্য এখন কফি খাচ্ছি পড়তে হবে। তুমি কি করছো

অন্তুঃ ব্ল্যাঙ্কেট টেনে শুয়ে আছি।

অর্ণব দুষ্টু হেসে বলো…আমি আসবো। ঠান্ডা লাগবে না আমি থাকলে।

অর্ণবের লাগাম হীন কথা শুনে অন্তুর কান গরম হতে লাগলো৷ ছেলেটা এতো লাগাম ছাড়া কথা বলে কেন যানে না। অন্তু আমতাআমতা করে বলো…কাল সকালে বাড়ির মোরে বাইক নিয়ে দাড়াবে। এক সাথে ভার্সিটিতে যাব,,, আমি বাড়িতে মেনেজ করে নেবো

অর্ণবঃ ওকে আমি সময় মতো চলে যাব। অন্তু

অর্ণবের আদর মাখা ডাক শুনে অন্তুর ভেতরটা কেঁপে ওঠে,, সে বলে…হুমম

অর্ণব আবেগ মাখা কন্ঠে বলে…আই লাভ ইউ অন্তু প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবে না প্রমিস করো। অন্তু আপন বলতে তুমি ছাড়া আমার কেও নেয়। তোমাকে প্রথম দেখে আমার মনে সুপ্ত অনুভূতি গুলো মাথা চারা দিয়েছে, তারপর তোমার সাথে বন্ধুত্ব তোমার প্রতি আমার মায়া কাজ করছে। তোমারকে আমার ওপর অধিকার খাটানো দেখে সেই ফিলিংস শুলো ভালোবাসাতে রুপান্তর হয়েছে। তোমার কথা বলা, হাসা, রাগ করা, মুখ ফুলানো, অভিমান করা সব আমাকে তোমার প্রতি দূর্বল করেছে প্রতিনিয়ত। নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি তোমার প্রতি দূর্বল হওয়া থেকে, অনেক বার চেষ্টা করেছি তোমার থেকে দূরে যাবার কিন্তু আমি ততই তোমার কাছে চলে গেছি। আমি জানি তোমার পরিবার আমার মতো অনাথকে তার মেয়ে কখনোই দেবে না, তারপরও তোমাকে অনুরোধ করছি আমাকে ছেড়ে যেওনা অন্তু। তুমি হীনা এই অর্ণব বাচতে পারবে না৷ তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি তাই স্বার্থপরের মতো কথা বলছি।

অর্ণবের প্রতিটা কথা অন্তু ভেতরটা নাড়া দিতে লাগলো। ভেতরটা জ্বলতেছে, বুকের বা পাশটা ধক করে উঠলো। একটা ছেলে তার সর্বত্র দিয়ে নিখুঁত ভাবে ভালোবাসতে পারে সে অর্ণবকে না দেখলে বুঝতো না। ছেলেটা নিঃসন্দেহে তাকে তার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। সেকি এই ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে পারবে, সে কি এই ভালোবাসর মানুষকে সুখি করতে পারবে। হ্যাঁ সে পারবে নিজের ভালোবাসা দিয়ে তাকে বেঁধে রাখবে, তার চোখে জল আসার আগে সেই জল তার চোখ থেকে পরবে সেভাবে ভালোবাসবে। নিজের কাছে রাখবে তাকে, নিজের অস্তিত্বে তাকে বিলিন করবে। অন্তু দু’চোখ দিয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো, অন্তু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো…

অন্তুঃ অর্ণব আমি নিজে মরে যাবো তাও তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে যেতে দেবো না কিছুতেই না। আমি যদি আমরা পরিবার ও দাদাভাইয়ের পরে কাওকে ভালোবাসি বেশি তাইলে সে তুমি, আর তোমাকে আমার পক্ষে ছাড়া সম্ভব না। আমি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসেছি তাই ছাড়া প্রশ্নয় আসে না। যদি কখন তোমার আর পরিবারের মধ্যে কাওকে চুজ করতে হয় তাহলে নিঃসন্দেহে আমি তোমাকেই চুজ করবো। কেননা তোমাকে আমি ছাড়তে পারবো না তুমি আমার প্রান যদি প্রান চলে যায় তাইলে সে মারা যায়। তাই আমি আমার প্রান ছাড়া থাকতে পারবো না। বিকজ আই লাভ ইউ মোর দেন ইউ।

অর্ণবের ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি, সে অন্তুর কাছ থেকে এই ভালোবাসটাই চেয়েছিলো। যে ভালোবাসার জন্য সে এতো বছর ছটফট করেছে। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো… অন্তু আমি নিজের সব টুকু দিয়েও তোমাকে আগলে রাগবো। কখনো কষ্ট পেতে দেব না, আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার জীবন রাঙিয়ে দেব। অর্ণব আরো কিছুখন কথা বলে রেখে দেয় তারপর পড়তে লাগলো। এদিকে অন্তু কথা শেষ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে….
_____________________________

সকাল-৮ঃ৩০

অরনি মাথার চুল বিনুনি করে দিচ্ছে অন্তু ড্রাইংরুমে সোফাতে বসে। আর অরনি বই হাতে নিয়ে পড়ছে আর তীক্ষ্ণ নজরে তাদের অপর পাশের সোফাতে বসা আয়ানকে পর্যবেক্ষণ করছে। আয়ান কার সাথে এতো কথা বলে ফোনে সে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ মাথায় ব্যথা পেলে মৃদু চিতকার দেয়, অরনির চিতকার শুনে আয়ান তাকে দেখে ভ্রু কুচকায় কিন্তু কিছু না বলে ফিসফিস করে মিষ্টি মুখে কথা বলছে। অরনি মাথা ঘুরিয়ে অন্তুর দিকে প্রশ্ন বর্ধন চোখে তাকালে অন্তু বলে..

অন্তুঃ এতো পর্যবেক্ষণ করে কি গোয়েন্দা হবি অরু। এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন ভাইয়ুর দিকে

অরনিঃ দিদিয়া কি বলব বলো আজ কাল ভাইয়ু একটু বেশিয় ফোনে ফুসফুস করে কথা বলে না। কারনে আকারনে বাইয়ে বেশি থাকে আমার মনে হয় ভাইয়ু প্রেম করে

অরনির কথা শুনে অন্তু বিষম খাই। বলে কি এই মেয়ে এই বসয়ে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কথা বলছে মানে অনেক পেকে গেছে। কিন্তু অরনির কথা ফেলে দেবার মতো নয় আজ কয়েক বছর যাবদ দেখছে সে এমন। অন্তু বলে..

অন্তুঃ অরু তুই ঠিক বলছিস কিছুতো একটা রহস্যর গন্ধ পাচ্ছি। চল আজ একে জবাই করি

বলে অরনি অন্তুর শয়তানি হাসি দিয়ে আয়ানের সামনে গিয়ে দাড়ায়। আয়ান তাদেরকে দেখে ফোন রেখে বলো…

আয়ানঃ হোয়াট এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন তোরা। খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোদের

অরনি অন্তু দুজন মুখ চাওয়া চাই করে অন্তু মৃদু হেসে বলো…খেয়ে দেয়ে কাজ আছে বলেই তো তোকে দেখছি

আয়ানঃ মানে

অরনিঃ মানে তুই এতো কার সাথে ফুসুরফুসুর করে কথা বলিস রে জিফ নাকি

আয়ান কাঁপা কাঁপা গলায় বলো…মানে

অন্তুঃ মানেটা ভালোই বুঝেছিস তুই এখন ভালোই ভালোই বল মেয়েটা কে। না হলে চাচ্চিকে বলে দেবো

আয়ানঃ বোনু রে সত্যি বলছি কেও নেই। সামনে ইলেকশন তাই ব্যস্ত সত্যি

অন্তু অরনি সন্দেহ চোখে বলো…সত্যি

আয়ানঃ সত্যি

অরনি আর অন্তু কিছু না বলে চলে গেলো সেখান থেকে। তার চলে গেলে আয়ান যেন হাপ ছেড়ে বাচে, একটুর জনে বেঁচে গেছে না হলে দুই গোয়েন্দা তার আম্মুকে বলে দিলে তার ক্লাস চলতো এখন। সে উঠে চলে যায় তার কাজে। অরনি অন্তু খেয়ে বের হয় যাবার জন্য, গাড়িতে উঠে মোর ঘুরতেই অর্ণবকে দেখে বাইকে ব্ল্যাক শার্ট পরে বাইকে বসে আছে। অন্তু গাড়ি থামাতে বলে তার কথায় অরনি বলে..

অরনিঃ দিদিয়া এখানে কেন থামালি ভার্সিটিতে যাবি না।

অন্তুঃ অরু তুই স্কুল যা আমি আদিবার বাসায় যাব।

বলে ড্রাইভার কে বলে সে নেমে পরে। গড়ি চলে যেতেই দৌড়ে অর্ণবের কাছে এসে বলে…জলদি বাইক স্টার্ট দাও আর তোমার ফ্ল্যাটে নাও আজ ক্লাস করবো না আর আদিবা, নাহিদ ভাইয়াকে আসতে বলো সেখানে চলো। বলে বাইকের পেছনে বসে অর্ণবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার পিঠে মাথা এলিয়ে দেয়। অর্ণব অন্তুর কথার প্রতিত্তোরে কিছু না বলে মৃদু হেসে বাইক স্টার্ট দেয়….
_______________________________

প্রায় ৩০মিনিট পর অর্ণবের ফ্ল্যাটে আসে তারা। রুমে ডুকে দরজা লক করে অন্তু তার কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রাখে। অর্ণব পিছন থেকে অন্তুকে জিড়িয়ে ধরে তার ঘারে মুখ ডুবায়। অকাম্মিক এমন হওয়া অন্তু হতবিহ্বল হয়ে যায়, অর্ণবের স্পর্শে সে কেঁপে ওঠে। অর্ণবের হাত অন্তুর পেটের ওপর বিচলিত হয়। অন্তু অর্ণবের হাতের ওপর হাত নিয়ে বলে…

অন্তুঃ কি মশাই। এতো প্রেম কোথা থেকে আসে হুম

অর্ণবঃ তোমাকে দেখলে প্রেম উদয় হয়।

অন্তুঃ আর উদয় করতে হবে না। নাহিদ ভাইয়াকে ফোন করো আর আমি কিচেনে গিয়ে দেখি কি রান্না করা যায়। ছাড়ো

বলে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় অন্তু। অর্ণব মুখ ফুলিয়ে নাহিদকে ফোন করতে গেলো। অর্ণবের ছোট বাচ্চার মতো মুখ ফোলাতে দেখে অন্তু ফিক করে হেসে দেয়, তারপর কিচেনের যায়। ফ্রিজে ইলিশ মাছ দেখে অন্তু মনে মনে ঠিক করলো আজ ইলিশ বিরানি করবে তার সাথে বেগুন ভাজি, যেমন ভাবনা তেমন কাজ ওরনা কোমরে বেধে কাজে লেগে যায়।

অর্ণব নাহিদের সাথে কথা বলে তাদের কে তার ফ্ল্যাটে আসতে বলে। নাহিদ অনেক বার কারন জানতে চায় কিন্তু অর্ণব কিছু বলে না। নাহিদ বলে সে আদিবাকে নিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে আসবে। অর্ণব হাত ঘড়িতে দেখে ১০টা বাজে ওরা আসতে আসতে ১১টা বাজবে। সে অন্তুকে বলতে কিচেনে গিয়ে দেখে, অন্তু কোমরে ওরনা বেধে কাজ করছে, চুল খোপা করা, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম সারা মুখে বিরাজমান করছে, অন্তু বার বার কপালে লেপ্টে থাকা বেবি চুল গুলো সরাচ্ছে আর কাজ করছে। মাঝে মাঝে বিরক্ত হচ্ছে, অর্ণব অন্তুর এরুপ দেখে ছোট্ট খাটো হার্ট অ্যাটাক হলো। অর্ণব এসে অন্তুর কপালে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ঘাম মুছে দেয়, হঠাৎ কপালে স্পর্শ পেয়ে চমকে যায় অন্তু পরক্ষণেই স্পর্শে মালিক কে বুঝতে পেরে চুপ করে যায় সে। অর্ণব কিছু না বলে বেরিয়ে যায় কিচেন থেকে, অন্তু সে দিকে তাকিয়ে অল্প হাসলো তারপর কাজে মন দিলো।

১ঘন্টা সময় অতিক্রম হতে না হতে নাহিদ আদিবা এসে হাজির। অর্ণব দরজা খুলতে না খুলতেই নাহিদ বলতে লাগলো…

নাহিদঃ কি রে মামা আজ বাড়িতে ডাকলি কেন? এক মিনিট এক মিনিট এই স্মেল টা কি হ্যাঁ এই তুই বিরানি খেতে ডেকেছিস আমাদের। আগে তো বলবি তাইলে সকালে না খেয়ে আসতাম

অর্ণবঃ আস্তে আস্তে এক সাথে কতো কথা বলিস তুই। একটু শ্বাস নেয় ভাই, কিচেনে যা বুঝতে পারবি কে ডেকেছে আর কি কি রান্না হচ্ছে

অর্ণবের কথা শুনে নাহিদ ভ্রু কুচকে সরু চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে সে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে হচ্ছে কি এখানে। নাহিদ অর্ণবের থাকে চোখ ফিরিয়ে কিচেনে দিকে যায়। অর্ণব আদিবাকে দেখে বলে…

অর্ণবঃ কেমন আছো আদিবা

আদিবাঃ ভালো ভাইয়া আপনি

অর্ণবঃ ভালো ভেতরে চলো

অর্ণবের কথা সম্মতি দিয়ে ভেতরে যেতেই নাহিদের গনচিতকার শুনে থ হয়ে দাড়ায় দুজনে। নাহিদ দৌড়ে এসে অর্ণবকে বলে…

নাহিদঃ মা মা মামা তোর কি চে নে কিচেনে অন্তুর ভূত

আদিবাঃ মানে অন্তুর ভূত কেমনে হবে

নাহিদঃ হবে না আলবাদ হবে। আমি কি ভুল দেখলাম অন্তু কিচেনে রান্না করছে। অন্তু কেন ঠেকা পরেছে অর্ণবের কিচেনে রান্না করার

এদিকে নাহিদের চিতকার শুনে অন্তু চলে আসে। অর্ণব তাকে দেখে অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে, অন্তু নাহিদকে বলে..

অন্তুঃ নাহিদ ভাইয়ার আমি ভূত না সত্যি আমি

আদিবা নাহিদ অন্তুর দিকে তাকায়। অন্তু হাতে খুন্তি দেখে তারা কিছু বঝতে পারে না। অর্ণব তাদেকে এভাবে দেখে হাসি পেতে লাগলো, সে এসে অন্তুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তা দেখে নাহিদের মাথা ঘুরে যাওয়ার অতিক্রম এদিকে আদিবা বিস্ময় চোখে দেখছে তাদের। যারা কাল পর্যন্ত ঝড়গা করলো আজ তারা একে ওপরের এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে জড়িয়ে আছে। তার থেকে বড় বেপার অন্তু লজ্জা রাঙা মুখ। অর্ণব তাদেরকে একে একে সব বলতে লাগলো। সব শুনে নাহিদ মাথায় হাত দিয়ে বলো..

নাহিদঃ মামা এতো বড় কথা তুই এভাবে বলি ট্রিট কই

অন্তুঃ এই জন্য তো আপনাদের এখানে ডাকা

আদিবাঃ অন্তু এতো কিছু হয়ে গেলো আমাকে একটু ও বলি না তুই। এই তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড.. [কপট রাগ করে বলো]

অন্তুঃ সরি আদু তখন বলার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। আর সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়েছে যে সময় হয়ে ওঠেনি সরি

আদিবাঃ হয়েছে হয়েছে আর সাফাই দিতে হবে না। আমি অনেক হেপ্পি তোদের জন্য

অর্ণবঃ থেঙ্কংইউ আদিবা

নাহিদঃ রাখ তো থেঙ্কংইউ শালা। তোকে কতো বার বলাম তোর মনের কথা অন্তুকে বলে দেয় আর তুই সেই বলাই বলি আমাকে না জানিয়ে। কুত্তা, হারামি, তোর মাথা আমি ভাঙ্গাবো।

অর্ণবঃ ভাই মুখটা কন্ট্রল কর মেয়েরা আছে পরে সব বলবো তখন উসুল করে নিস। এখন চল খেয়ে নিই সকালে খাওয়া হয় নি আমার

অন্তুঃ হ্যা আমি ও ভালো করে খাই নাই। রান্না হয়ে গেছে টেবিলে নিয়ে আসি।

বলে সে খাবার আনতে যায় তার সাথে আদিবাও যায়। সবাই এক সাথে খাবার খাচ্ছে আর নাহিদ সময় পেলে অর্ণবের লেগ পুল করছে। তারা সারাটা দিন অর্ণবের ফ্ল্যাটে থেকে বিকেলে যখন তার চলে যাবে তখন নাহিদ অন্তুকে একান্তই কিছু বলবে বলে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। অন্তু বলো..

অন্তুঃ ভাইয়া কি বলবেন বলুন

নাহিদঃ অন্তু তোমাকে আমি নিজের বোন মনে করি তাই কিছু কথা বলি কিছু মনে করো না। অর্ণবকে আমি ৪বছর ধরে চিনি সে নিজের রাগ, দুঃখ, কষ্ট, ভালোবাসা কিছু প্রকাশ করে না কিন্তু সে তোমাকে ভালোবাসে সেটা সে প্রকাশ করে আমার কাছে। আমি অনেক বার বলেছি তোমাক ওর মনের কথা বলতে কিন্তু ও বলে ওর মতো অনাথকে তোমার বাড়ির কেও মানবে না। কিন্তু হঠাৎ কি হলো জানি না তোমাকে সে তার ভালোবাসার কথা বলেছে। আমি জানি তুমিও অর্ণব কে ভালোবাসা তাই প্লিজ ওকে কষ্ট পেতে দিওনা। অর্ণব ছোট থেকে অনেক কষ্ট পেছে তাই তুমি ওকে কষ্ট দিও না। অর্ণব তোমাকে ছাড়া মরে যাবে, তাই এমন ভাবে ভালেবাসবে যে ওর সব কষ্ট শেষ হয়ে শুধু ভালোবাসায় ভরে যায়। এই ভাইয়ার কথা টা রাখো।

নাহিদের একান্ত অনুরোধ শুনে অন্তু হতবাক। একটা ছেলে তার বন্ধুর জন্য এতটা করতে পারে তার জানা ছিলো না। নাহিদ ভাইয়ার আসলেও অর্ণবকে নিজের ভাই মনে করে তা না হলে সে অর্ণবের কষ্ট, না পাওয়া আকাঙ্খা, ভালোবাসার কথা তাকে বলো তো না। অর্ণবের খুশি তে সে খুশি শুনে অন্তু ছলছল চোখে বলো..

অন্তুঃ ভাইয়া আমি অর্ণবকে কক্ষনও কষ্ট পেতে দেবো না। এর জন্য আমার যা করতে হয় আমি করবো। অর্ণবকে খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতো। আপনি চিন্তা করবেন না

অন্তুর কথা শুনে নাহিদ ভরসা পেলো সে মুচকি হয়ে অন্তুর মাথা হাত দিয়ে বলো..

নাহিদঃ তোমাকে দোয়া করি অনেক সুখি হও

বলে চলে গেলো, অন্তু চোখ মুছে বাইরে আসে। অর্ণব আদিবা কথা বলছে, অর্ণব অন্তুকে দেখে ইশারায় বলে কি হয়েছে অন্তুর কিছু না বলে। অর্ণব নাহিদ আর আদিবাকে এগিয়ে দিয়ে এসে অন্তুকে তার বাড়িতে দিতে যায়। অন্তুর বাড়ি সামনের মোরে নামিয়ে দিয়ে অর্ণব বলে…

অর্ণবঃ আই লাভ ইউ। সাবধানে বাড়ি যাবে রাতে ফোন দিলে তাড়াতাড়ি ধরবে। না হলে টেনশনে হবে

অন্তুঃ আই লাভ ইউ। হুমম

বলে অর্ণবের কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়। অর্ণব হেসে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-২৩

শীতের ঋতু চলে গেছে কয়েক মাস যাবত। এখন ঠাট্টা পরা গরম চলছে, এখন জুলাই মাসের শুরু। সময় স্রোতের মতো চলে যায়। সময় বেধে রাখা যায়না তেমন কিছু সম্পর্কর নাম ও সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে থাকে। কয়েক মাসে আগেও অর্ণব অন্তুকে জানত না এখন সে তার জীবনে পরিণত হয়েছে। আর অন্তুর জীবন অর্ণব এক আসক্তিতে রুপ নিয়েছে। দিনে দিনে অন্তু অর্ণবের পাগলামি, ভালোবাসা, অধিকার খাটানো, রাগ, অভিমানে আসক্ত হতে লাগলো। অর্ণব অন্তুর পাশে কোন ছেলেকে দেখতে পারে না তাই সব সময় তার সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করে কিন্তু নিজের কাজ পড়াশোনা নিয়ে থাকায় তেমন পারে না। কিন্তু সে অন্তুকে সাফ সাফ বলেছে সে যেন তার আসেপাশে অন্য ছেলেকে আসতে দেয় না, অর্ণবের পাগলাম দেখে অন্তু নির্ববাহে মেনে নেয়। অর্ণবের ছোট্ট ছোট্ট কেয়ারিং, তাকে শাসন করা, রাগ হলে রাগ ভাঙ্গা, তাকে প্রটেক্ট করা, সব কেমন অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। দেখতে দেখতে তাদের ভালোবাসর খুনসুটি তে অনেক গুলো মাস চলে গেছে। সমনে অন্তর এক্সাম তার কয়েক মাস পরে অর্ণবে। অর্ণব বলেছে এক্সাম শেষে ভালো জব করবে তার সাথে মাস্টার্স কমপ্লিট করবে।

কেন্টিনে বসে আছে আদিবা, নাহিদ আর অন্তু অপেক্ষা শুধু অর্ণবের। নাহিদ বসে বসে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অর্ণবের আসার নাম নেয়। নাহিদ বিরক্তর একটা শ্বাস ছেড়ে বললো..

নাহিদঃ আর ভাই নিজের জিফর জন্য এতো ওয়েট করতে হয় না যতটা এই অর্ণবের জন্য করতে হচ্ছে ধুর ভালো লাগে না। এই শালা আজ আসুক তারপর মজা বুঝাবো।

নাহিদের কথা শুনে আদিবা আর অন্তু মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলো। হাসার বিষয়ই আজ অর্ণবের একটা ইন্টারভিইউ ছিলো তাই সে বলেছিলো তার আসতে দেড়ি হবে কিন্তু নাহিদের ওয়েটে এলার্জি আছে। সে সারার জন্য ওয়েট করে না সারা তার জন্য ওয়েট করে। ভেবেই হাসি পেলো অন্তুর, অন্তুকে হাসতে দেখে নাহিদ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলো..

নাহিদঃ বোনু হাসো কেন?? ও বুঝলাম আমাকে ওয়েট করতে দেখে হাসি পাচ্ছে তাই তো। কি আর করবো বলো বোনু বন্ধুর জন্য সব করতে হয়। আজ সারার কষ্ট বুঝতে পারলাম আমি, কেন মেয়েটা রাগ করে আমার ওপর। আমি আর কখনো মেয়েটাকে ওয়েট করাবো না প্রমিস

নাহিদের বলার ভঙ্গি দেখে অন্তু খিলখিল করে হেসে দিলো। আদিবা বলো…

আদিবাঃ ভাইয়া আজ বুঝলেন তো ওয়েট করতে কেমন লাগে। তাইলে আজ আপুকে গিয়ে টাইটলি জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইবেন তাইলে আপু আর কখনো রাগ করবে না।

বলে অন্তু আর আদিবা হাসতে লাগলো। নাহিদ মিনমিন করে বলো…

নাহিদঃ তোমরাও আমাকে নিয়ে মজা করছো

তারা মাথা নেড়ে না বলে হাসতে লাগলো। অন্তু হাসি থামিয়ে বলো…ভাইয়া আপুকে তো এখনো পর্যন্ত দেখালেন না আর না ট্রিট পেলাম। এখন কি বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে আপুকে দেখাবেন। হুম হুম

নাহিদঃ আর বিয়ে মেয়ে আমার মেডিকেল পড়ে পড়ে শহীদ হচ্ছে তার ওপর খালু প্যারাই প্যারাই একা কার করছে। না জানি কবে বিয়ে হবে

অর্ণবঃ কার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে শুনি।

অর্ণবের গলার স্বর শুনে সবাই সেদিকে তাকায়, অর্ণব এসে অন্তুর কাছে বসে। অর্ণব আবার বলো..

অর্ণবঃ কি হলো বলি না কার বিয়ে হচ্ছে

অন্তুঃ আর কার আমাদের নাহিদ ভাইয়ার

অর্ণবঃ ও মা এটা আবার কবে হলো। শুনলাম তোর জল্লাদ খালু নাকি বলছে তুই জব না পাওয়া পর্যন্ত সারার সাথে তোর বিয়ে দেবে না। তাইলে কমনে কি ভাই

বলে হাসতে লাগলো সবাই। নাহিদ মরচিয়ে পরা গলায় বলো…হেসে নে হেসে নে আমারও সময় আসবে যখন তোর অন্তুর পলিটিক্স করা বাপ তোর হাতে মেয়ে দেবে না তখন বুঝবি আমার জালা

নাহিদ কথাটা মজার ছলে বলেও কথাটার গভীরতা অনেক অর্ণবের মুখ ছোট হয়ে যায় সাথে অন্তুর ও। অন্তু অর্ণবের হাতে হাত রাখতেই অর্ণব তার দিকে তাকায়। অন্তু ইশারায় অশ্বাস্য করে কিছু হবে না, অর্ণব মুচকি হেসে অন্তর হাত শক্ত করে ধরে। নাহিদ বুঝতে পারে সে ভুল সময় ভুল কথা বলেছে তাই কথা ঘোড়াতে বলে..

নাহিদঃ তা যে কাজে গিয়েছিল হয়েছে। মানে জব কনফার্ম হয়েছে।

অর্ণবঃ হ্যাঁ হয়েছে সামনের মাস থেকে যেতে হবে।সেলারি ও ভালো, পার্ট-টাইম জব ভালো আমার সময়ের সাথে মিলবে। জব পেয়ে এখানে এসেছি মাদারকে বলেছি তিনি খুশি হয়েছে।

আদিবাঃ কংগ্রাচুলেশনস ভাই

অর্ণবঃ থেঙ্কংইউ আদিবা

নাহিদঃ মামা ট্রিট চাই কিন্তু

অর্ণবঃ হবে আগে প্রথম মাসের সেলারি আসুক তার পর। অন্তু তোমার কি লাগবে বলো

অন্তুঃ কিছু না তুমি শুধু নিজের পড়ার কোনো ক্ষতি করবে না তাই হবে।

অর্ণব অন্তুর কথা শুনে শুধু মুচকি হেসে মাথা নাড়ে। তাদেরকে দেখে আদিবা নাহিদ বলো…ও মা গো টুরু লাভ। বল হসতে লাগলো অন্তু তাদের কথা শুনে অর্ণবের বুকে মুখ লুকায়। অর্ণব এক হাতে তাকে আখড়ে ধরে….
________________________________

পরেরদিন দুপুরে,,,

দিদিয়া আর পারছি না বেলুন ফোলাতে অরনি কথাটা বলে বেলুন গুলো রেখে দিলো। তা দেখে আয়ান বলো…

আয়ানঃ এই অরু কাজ কর না হলে কেক দেবনা বলে দিলাম তখন কান্না করে কেক চেতে আশিস না হু

অরনিঃ ভাইয়ু আমি এখন ছোট্টি নেই। আমি এখন বড় হয়েছি বুঝলে, আমি ইন্টার পড়ছি তাই আমাকে ছোট মনে করে কথা বলবে না। আর কেক ওই কেক তুই খা আমি খাবো না

বলে তার দিদুনের কাছে চলে যায়। দিদুন তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলো…

দিদুনঃ আয়ান দাদুভাই অরুকে কিছু বলবে না। আর কেক আমার আমি কাকে দেবো সেটা আমি বুঝে নেবো।

অরনি আয়ানকে দেখে ভেংচি কেটে, তা দেখে আয়ান চোখ লাল করে তাকায় অরনির দিকে। এদিকে অন্তুর আশেপাশে কি হচ্ছে তার খেয়ালি নেই তার সে তো ফোনে মেসেজ দিতে ব্যস্ত অর্ণবকে। আদি ফোন দিতেই সে ফোন রিসিভ করে বলো..

অন্তুঃ দাদাভাই এখন বুঝি মনে পড়লো তোমার অন্তুপাখির কথা…[অভিমান করে বলো]

আদিঃ সরি অন্তুপাখি কাজে ব্যস্ত তাই। কেমন আছো

আদিঃ ভালো বাড়ির সবাই কেমন আছে। আর বার্থডেগাল কেমন আছে।

অন্তুঃ সবাই ভালো আছে আর বার্থডেগাল ও ভালো আছে এই নাও কথা বলো..

বলে তার ফোন দিদুনের কাছে দিলো। দিদুন ফোন নিয়ে বলো….দাদুভাই কেমন আছো। কবে আসবে

আদিঃ ভালো আছি দিদুন। কাজ শেষ হলে চলে আসবো। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। আর হেপ্পি বার্থডে দিদুন

দিদুন শুধু হাসলো, অরনি ফোন নিয়ে বলো..দাদাভাই তুমি কবে আসবে। জানো ছোট ভাইয়ু আমাকে বোকে বোকে মেরে ফেলছে। তুমি এসো তাড়াতাড়ি

অরনি কথা শুনে আদি শব্দ করে হসে দেয়। এদিকে আয়ান রেগে ফেটে পরে। আদি বলো..বুড়ি আমি কাজ শেষ হলে চলে আসবো। তুই চিন্তা করিস না আমি আর তুই মিলে আয়ান কে অনেক বোকবো

অরনি এতেই খুশি। অরনির হাত থেকে ফোন নিয়ে আয়ান কাঠ গলায় বলো… দাদাভাই তোমার সবাই এক দলে হলে আমার দলে কে থাকবে। আর এই অরু যা বলে তুমি তাই বিশ্বাস করে নাও। এটা ঠিক না কিন্তু।

আদিঃ ও ছোট আয়ান রাগ করিস না। আচ্ছা আমি রাখবো। তোরা ভালো থাকিস বাই

বলে ফোন রেখে দিলো। আয়ান সবার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে তার কাজ করতে লাগলো। আর এদিকে অন্তু অরনি দিদুন ঠোঁট চেপে হাসছে আয়ানের রাগ দেখে। সবাই যার যার কাজ করছে, আজ আয়েশা মির্জা জম্মদিন তিনি এসব করতে চায় না কিন্তু নাতি নাতনীরা ছোট খাটো আয়োজন করে তাই। বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আয়ানের ফোনে ফোন আসে সে ফোন তুলে ওপাশ থেকে কি বলো সেটা শুনে তার চোখ লাল হতে লাগলো কিন্তু তার ভেতরটা কেঁপে উঠলো, শরীরে ঘামতে থাকে চিন্তায়। আয়ান কাঁপা কাঁপা গলায় বলো…

আয়ানঃ আমি এখনি আসছি তুমি চিন্তা করবে না। আর নিজেকে রুমে বন্ধ করে রাখো কেও যেন রুমে না আসে। শুধু ১৫মিনিট সময় দাও জস্ট ১৫ মিনিট এখনি আসছি। আর সাবধানে থাকবে

বলে ফোন কেটে দিয়ে অন্যত্র ফোন করে বজ্রকন্ঠে বলো…সবাইকে নিয়ে তোর ভাবির বাড়ি যা। আমি ১৫ মিনিটের মধ্যে আসছি। ভেতরে যেতে না দিলে সব গুলারে মারবি আমি আসছি।

বলে ফোন কেটে দিয়ে সামনে তাকায় দেখে অন্তু আর অরনি তার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান কাপা কাপা গলায় বলে…কি এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন।

অন্তুঃ তুই কার সাথে কথা বলছিলি। কাকে সাবধানে থাকতে বলি। আর ভাবি কে

অন্তুর প্রশ্ন শুনে আয়ান ঘাবড়ে যায় কিন্তু নিজেকে সামলে তাড়াহুড়ো করে বলো…আমার কাজ আছে তুই সব দেখে নিস আসতে রাত হতে পারে। অন্তুকে না বলতে দিয়ে সে চলে গেলো। আর অন্তু আয়ানের যাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো কি এমন হলো যে আয়ান ভাইয়ু এমন উদভাট ব্যবহার করলো সে ভাবতে থাকে…….
___________________________________

রাত-১০ঃ৩০

দিদুনের জন্মদিন ভালো ভাবে মানিয়ে অন্তু তার রুমে আসে। দরজা হলকা ভাজিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো আজকের কথা। আয়ান তখন তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো বলো রাতে আসবে কিন্তু সে আসেনি অনেক বার ফোন করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ কি এমন কাজে গেছে যা দিদুনের জন্মদিনের থেকেও ইম্পটেন্ট। এসব ভাতে ভাবতে তার ফোন আসে ফোন হাতে নিতেই ফোনের উপর ভেসে থাকা নাম দেখে সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষে শেষ হয়ে যায় আর ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে। ফোন ধরতেই অর্ণবের মিহিত কন্ঠ শোনা যায় সে বলে…

অর্ণবঃ জান সারাদিন কি একটা বারও আমার কথা মনে পরেনি তোমার।

অন্তুঃ পরেছে তো কিন্তু কি করবো দিদুনকে ও তো আজ সময় দিতে হবে তাই না।

অর্ণবঃ সব ভালো ভাবে হয়েছে..

অন্তুঃ হুমম দিদুন আর অরনির তোমার কথা বলো। আমি বলছি তুমি ব্যস্ত থাকায় আসতে পারো নাই

অর্ণবঃ দিদুনকে সরি বলো আসলে কাজ ছিলো তাই দেখে করতে পারি নাই। সময় হলে দেখা করে নেব। তুমি খাইছো

অন্তুঃ হু তুমি

অর্ণবঃ হুমম

কিছু সময় নিরবতা নেমে আসে তাদের মাঝে। অর্ণব বলে…অন্তু একটা কথা বলি

অন্তুঃ হুমম

অর্ণবঃ কখনো যদি তোমার ফ্যামেলি আমাকে না মানে তখন তুমি কি করবে।

অর্ণবের প্রশ্নে অন্তু থমকে যায়। এই প্রশ্নের উত্তর তার কাছে কি আদো আছে। অন্তু কাঁপা কাঁপা গলায় বলো

অন্তুঃ অর্ণব আমি জনি না তখন কি করবো কিন্তু আমি এটা জানি তোমাকে হারালে আমি নিজের অস্তিত্বকে হারাবো।

অর্ণবঃ অন্তু চলো বিয়ে করে নেয়, তারপর ছোট একটা সংসার করবো আমরা। যেখানে অফুরন্ত ভালোবাসা থাকবে, থাকবে না ধনী-দরিদ্র বৈষম্য। এমন একটা পৃথিবী গড়বো সেখানে তুমি আর আমি থাকবো আর থাকবে আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী, আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন। তোমার মধ্যে বেরে উঠবে সেই প্রান। অন্তু আমি তোমাদের নিয়ে বাচতে চায়, আমি ছোট থেকে যা পাইনি তা আমার সন্তানকে দিতে চাই। আমার বলতে কাওকে চায় যাতে কেও বলতে না পারে অর্ণব তুমি তো একা তোমার আপন বলতে কেও নাই। অন্তু আমাকে আপন বলতে কাওকে দেবে যাকে আমার নামে বড় করবো। প্লিজ অন্তু

অর্ণবের আবদার মাখা কন্ঠে প্রতিটা শব্দ, কথা অন্তুর ভেতরটা নাড়া দিতে লাগে। বুক প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতে লাগে। অর্ণবের কাতর কন্ঠে বলা শব্দ তার বুকের বা পাশটা পুরাতে লাগে। সে তো অর্ণবের আপন কেউ হতে চায়, সে হয়েও গেছে কিন্তু তার অংশকে বহন করে তার মাধ্যমে অর্ণবকে আপন হতে চাওয়া পূরণ করা তার কর্তব্য। অন্তু মিটিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলো…

অন্তুঃ অর্ণব আমি তোমার সব আশা পূর্ণ করবো। আমার কাছে করা তোমার সব আবদার পূর্ন হবে। আমি নিজে সব করবো। তোমার সাথে সংসার করা আমার জন্য কি তুমি নিজেও জানো না। তোমার ছোট একটা আংশ আমার মধ্যে থাকাবে কি সুখ তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারনো না। আমি তোমার জন্য সব ছাড়তে রাজী, তোমার জন্য পৃথিবীর সবার সাথে লড়াই করবো তুমি দেখো। শুধু তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো এই টুকু চাওয়া

অর্ণবঃ #তুমি আসবে বলে যখন বলে আমি এখন থেকে #অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করলাম। অন্তু আমি তোমার সব কথা শুনবো তুমি শুধু দিন শেষ আমার নীড়ে ফিরে এসো তাই হবে..

অন্তুঃ আই লাভ ইউ অর্ণব

অর্ণবঃ আই লাভ ইউ জান

এমন নানান কথা বলতে বলতে থাকে তার। নিজের তৈরি পৃথিবী গড়তে অনেক অপেক্ষা প্রহর গুনতে হবে তাদের এই তো শুরু শুধু। তাদের ভালোবাস অনেক কঠিন পরীক্ষা পাড়ি দেবে…….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here