তুমি আসবে বলে পর্ব -২৪+২৫+২৬+২৭

#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-২৪

গাড়ি আপন গতিতে চলছে,,, সকাল ৯টার কাছাকাছি। অরনি অন্তু গাড়িতে বসে আছে। উদ্দেশ্য অরনির কলেজ আর নিজের ভার্সিটিতে গিয়ে এডমিট কার্ড তোলা। সামনে তার এক্সাম পড়াশোনা চাপে সে ঠিক মতো কথা বলতে পারছে না অর্ণবের সাথে। তাই সারাটা দিন সে আজ অর্ণবের সাথে কাটাবে। অরনির কথা শুনে তার দিকে তাকলে সে ইশারায় বাইরে তাকাতে বলে, অন্তু বাইরে তাকালে দেখতে পায় অর্ণব বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে পরনে ব্ল্যাক শার্ট আর ব্লু জিন্স পুরোই হিরো। অরনি বললো…

অরনিঃ দিদিয়া তোমার হিরোকে তো আজ হেবি লাগছে। মনে হচ্ছে আজ সব মেয়ের নজর লেগে যাবে। তুমি একটু সাবধানে রেখো না হলে কি হবে জানি না পারলে আঁচলে বেধে রাখো।

বলে সে গাড়ি থেকে নেমে অর্ণবের কাছে যেতে লাগলো। অরনির কথা শুনে আমি আশেপাশে দেখলা সতি কিছু মেয়েরা আমার কিউটি বরকে চোখ দিয়ে গিলছে অন্তু বিড়বিড় করে বললো…

অন্তুঃ এতো সেজেগুজে কে আসতে বলেছে তাকে হু। সব মেয়েরা তাকে গিলছে আর বাবুর সেদিকে খেয়াল নেই। সত্যি অরনির কথা রাখতে হবে আঁচল দিয়ে বাধতে হবে দেখছি তাকে। হু হু

বলে নিচে নামতে লাগলো এদিকে,,,অর্ণব অন্তুকে রেগে আসতে দেখে অরনিকে বলো…

অর্ণবঃ অরু তোমার দিদিয়া এতো রেগে কেন আসছে।

অরনিঃ কেন বুঝতে পারলে না

অর্ণব মাথা নেড়ে না বলে অর্থাৎ সে বোঝে নিই। অরনি বলো…ভাইয়া আপনার আশেপাশে পাশে অনেক মৌমাছি ঘুড়ছে তা দেখে আপনার মধু রেগে মেগে ফায়ার বুঝলেন।

অরনির কথা শুনে অর্ণব তার আশেপাশে খেয়াল করলো আসলেই তাকে সবাই গিলছে। আর অন্তু এসব দেখে রেগে গেছে আজ না জানি কতো খাটনি করতে হবে। অর্ণব করুন মুখে অরনির দিকে তাকালে অরনি খিলখিল করে হেসে দেয়। অন্তু এসে তাদের সামনে কাটকাট করে বলো…

অন্তুঃ এই মিয়া তুমি এতো সেজেগুজে এসেছো কেন?? হ্যাঁ আরেকটা লাগবে তোমার হু আমার দিয়ে হচ্ছে না তাই না

অর্ণব অন্তুর কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে যায়। এদিকে অরনি হেসে হেসে মরে যাবা আবস্থা। অর্ণব অসহায় মুখে বলো…

অর্ণবঃ সত্যি জান আমি সেজেগুজে আসি নি। আমি জাস্ট তোমার সাথে দেখা কারা জন্য ব্ল্যাক শার্ট পড়ে এসেছি এর বেশি কিছু না সত্যি জান

অন্তু তাও শান্ত হলো না, অর্ণব উপায় না পেয়ে সেখানেই একটা ঘটনা ঘটায় তা দেখে অন্তুর চোখ কপালে। অরনি হা হয়ে যায়, আর বাকি সবাই দেখে চলে যায় সেখান থেকে। অর্ণব অন্তুকে টাইলি হাগ করে এতে অন্তু লজ্জায় নুয়ে যায়, কি লজ্জার বেপার ছি মানুষ কি ভাবলো। অর্ণব ছেড়ে বলো.. এখন রাগ কমলো জান। অন্তু আর কথা বলতে পাড়লো না সে চুপ করে থাকলো। তা দেখে অর্ণব হাসলো। অরনি বললো…

অরনিঃ অর্ণব ভাইয়া আপনি কি শুধু ফুল ঘাড়বালি কেই দেখবেন না কি এই যে আমি আপনার ওয়ান লি ওয়ান আধিঘাড় বালি আছি সেই খেয়াল কে রাখবে শুনি।

অর্ণবঃ সরি অরু আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমার আধিঘার বালি ও এখানে আছে।

বলে তার তাদের মধ্যে মেতে ওঠে খুনসুটি করতে। অন্তু তা একমনে দেখে। অর্ণব অরনিকে নিজের ছোট বোন মনে করে, অরনি ও তাকে দাদাভাই, ভাইয়ুর পরে অর্ণবকে ভাইয়া ভাবে। তাদের সম্পর্ক অনেকটা মিষ্টি সব কথা শেয়ার করতে পারে, অরনি অর্ণবের কাছে বেশ ছাতছন্দে আবদার করতে পরে। অন্তুর এখন মনে পরে যখন অর্ণবের কথা তার দিদুনকে আর অরনিকে বলে।

দিদুনকে যখন বলি আমি অর্ণবকে ভালোবাসি আর অর্ণবও তাকে ভালোবাসে তখন দিদুন চমকে যায়। কিছুক্ষণ চাপ থাকো, দিদুনকে চুপ থাকতে দেখে অন্তু ধরেই নিয়েছিলে দিদুন অর্ণবকে মেনে নেবে না। কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করে দিদুক হেসে বলে…

দিদুনঃ কি দিদিভাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলে যে আমি অর্ণবকে মন বো কি না ভাবে। ভয়ের কোন কারন নেই আমি জানি তুমি কখনো ভুল মানুষকে ভালোবাসবে না আর আমি যতদূর জানি অর্ণব অনেক ভালো ছেলে তাই আমার আপত্তি করার প্রশ্নই আসে না

সেই কথা শুনে অন্তুর খুশিতে কান্না করে দেয়। সে দিদুনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে পরে অর্ণবের সাথে তার কথা বলিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে ভাব হয় অনেক। দিদুনের মতো অর্ণব হীরের টুকরো ছেলে। অরনি তো অর্ণবের সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলো। তাই তাকে ও দেখা করিয়ে দেয় পরেরদিন ভার্সিটিতে। অর্ণবের সাথে অরনির সেই খাতির হয়, দুজনকে দেখে মনেই হলো না তারা প্রথম দেখা করছে বা প্রথম কথা বলছে। এর মাঝে অরনির একটা কথা শুনে অন্তু টাস্কি খায়….

অরনিঃ ভাইয়া আপনার কথা অনেক শুনেছি দিদিয়া কাছ থেকে আজ সামনা সামনি দেখা করে মনে হচ্ছে দিদিয়া যা বলছে একটু কম বলছে। আপনি তো পুরো সাউথ ইন্ডিয়ার হিরো। ভাইয়া কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি…

উচ্ছ্বস নিয়ে একের পর এক বলেই যাচ্ছে অরনি। অরনির লাস্ট কথা শুনে অর্ণব একটু বিভ্রান্ত হলো। সে মুচকি হাসি দিয়ে বলো..

অর্ণবঃ তুমি তো আমার ছোট বুনু বলো কি বলবে

অরনিঃ ভাইয়া সত্যি আপনার কোনো ভাই নাই

অর্ণব মাথা নেড়ে না বলে। অরনি আবার বলো…ইস যদি থাকতো তাইলে তাকেই আমি বিয়ে করে নিতাম। [আফসোস করে বললো]

অরনির কথা শুনে অর্ণবের আর অন্তুর চোখ কপালে ওঠে। বলে কি মেয়ে এই বয়সে ডাইরেক্ট বিয়ে। অর্ণব অন্তুর দিকে তাকায় তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না একটু আগে অরনির বলা কথা। অর্ণব অরনিকে দেখে বুঝতে পারে তার চঞ্চলতা। অরনি আবার বললো..

অরনিঃ কোন আফসোস নেই আপনি তো আছে আপনাকে দিয়ে চলবে

অর্ণব অরনির কথা বুঝতে না বেরে কিঞ্চিৎ জোরে বলো…মানে

অরনি লাজুক হেসে বলো…মানে এই যে আপনি যদি দিদিয়াকে বিয়ে করেন তাইলে তো আমি আপনার শালিকা হবো তাই না (বলে অর্ণবের দিকে তাকায় অর্ণব বোকার মতো মাথা নাড়ায়) তাইলে শালি তো আধিঘার বালি হে না জিজু। আপনার ওপর আধেক অধিকার আমার আছে তাই না জিজু।

অরনির কথার মানে বুঝতে পেরে অর্ণব কিছুটা ইতস্তত পরে গেলো তার ওপর জিজু বলে ডাকায় কিছুটা লজ্জা পেলো। এদিকে অরনির কথা ধাচ্ছ শুকে অন্তু হো হো করে হসে দেয়। অর্ণব জোরপূর্বক হেসে মাথা নাড়ায় যে অরনি যা বলো তাই সত্যে। তারপর থেকে অরনি অর্ণবকে আধিঘারবালি বলে জালাতন করে। অরনির ডাকে অন্তুর সম্মতি ফেরে, অরনি তাড়াহুড়ো করে বলো…

অরনিঃ দিদিয়া কলেজের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে আমি গেলাম তোমার লাভবার্ডস ইনজয় করো। বাই জিজু

বলে চলে যায়। অর্ণব অন্তুর কাছে এসে বলো…তোমার বোন মাশাআল্লাহ একটা জিনিস। বলে হাসতে লাগে। অন্তু তার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে চলে যায়। অর্ণব বোকার মতো দাড়িয়ে থাকে ভাবে,,যা বাবা আমি আবার কি বলাম। বলে অন্তুর পেছনে যেতে লাগলো…
__________________________________

সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না। তেমন অন্তু অর্ণবের ভালোবাসাও থেমে নেই। দেখতে দেখতে অন্তুর এক্সাম শুরু হয়ে গেছে। অন্তুর এক্সামের জন্য অর্ণব যথেষ্ট সাপোর্ট করেছে, পড়াশোনা, তার টাইম দেওয়া সব সুন্দর ভাবে সামলে নিয়েছে সে। অন্তুও পরীক্ষা নিয়ে উঠেপড়ে লাগেছে তার ভালো রেজাল্ট চায়, অর্ণব কতো সখ করে তাকে ভালোভাবে গার্ড করেছে। এক এক করে সব এক্সাম শেষ হয়ে যায় তার, এবার শান্তির নিঃশ্বাস নিলো। এই এক্সাম এক্সাম করে খাওয়াদাওয়া অনিয়ম হয়েছে তার, কিন্তু দিদুন সব মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। আদি প্রতি নিয়ত ফোন করে তার এক্সাম কেমন হলো, খাওয়া দাওয়া হচ্ছে না কি, সব খোঁজ খবর নিতো। এক্সাম শেষ করে বাড়ি এসে ফ্রেশ না হয়ে ফোন হাতে অর্ণবকে টেক্সট করে কেননা সে এখন কাজে। ফোন রেখে চোখ বন্ধ করতেই অরিন এসে তাকে ডাক দিলো। অন্তু বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ খিঁচে বলো…

অন্তুঃ অরু দেখছিস না রেস্ট নিচ্ছি তাইলে কেন ডিসটার্ব করলি।

অরনিঃ দিদিয়া রেস্ট পরে নিও নিচে চলো বড় আব্বু ডাকছে তোমাকে।

অন্তু না চাইতেও নিচে যেতে হয়। নিচে এসে তার আব্বুর গায়ে গা লাগিয়ে তার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে কিছু বলো না। আজাদ মির্জা হালকা হাতে অন্তুর মাথায় হাত বুলায় এতে অন্তু ঠোঁটে হাসি ফোটে তার আব্বু প্রতি বার এমন করে তার কাছে এসে বসলে। আজাদ মির্জা নরম সুরে বলো…

আজাদ মির্জাঃ ছোট আম্মাজান তোমার এক্সাম কোমন হলো?

অন্তুঃ ভালো আব্বু

আজাদ মির্জাঃ ছোট আম্মাজান তোমার তো পরশু জন্মদিন তোমার কি লাগবে বলো। আমি আসার সময় নিয়ে আসবো।

অন্তু আজাদ মির্জা কথা শুনে চোখ খুলে মাথা উঁচু করে বিস্ময় চোখে বলো…মানে তুমি কোথায় যাচ্ছো আব্বু

আজাদ মির্জাঃ ছোট আম্মাজান কিছু কাজে ঢাকার বাইরে যেতে হবে তাই তোমার জন্মদিনে থাকতে পারবো না সরি

অন্তু আজাদ মির্জা কথা শুনে কাঁদো কাঁদো গলায় বলো.. আব্বু তুমি জানো জন্মদিনে সবাইকে আমার চাই, দাদাভাই তো এবার নেই তাই বলে তুমিও থাকবে না এমন করো না

আজাদ মির্জা মেয়ের মুখ দেখে মলিন মুখ বলো..এবারের মতো মাফ করো আম্মাজান, আর হবে না

অন্তু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলো..
________________________________

পরেরদিন দুপুরে,,,

আদিবা অন্তু কেন্টিনে বসে আছে অপেক্ষা নাহিদ আর অর্ণবের জন্য। তাদের ক্লাস হচ্ছে তাই তারা ওয়েট করছে। আদিবা অন্তুকে বলো…

আদিবাঃ দোস্ত অগ্রিম পয়দাদিবস। সারা জীবন এভানেই হাসি খুশি কাটাস

অন্তু মুচকি হেসে বলো…থেঙ্কংইউ বেস্টু। কাল কিন্তু বাড়িতে আসবি সন্ধ্যায় আমি ওয়েট করবো। আব্বু নেই তাই বাড়ির সবাই মিলে শুধু কেক কাটা হবে

আদিবাঃ না দোস্ত মার শরীর ভালো না তাই যেতে পারবো না পরে যাবো। রাগ করিস না প্লিজ

অন্তু রাগি চোখে তাকায় আদিবার দিকে। আদিবা কিউট ফেস করে কান ধরে তা দেখে অন্তু হেসে বলে..ওকে যা মাফ করলাম। বলে দুজনে হাসতে লাগলো। তাদের কথার মাঝে নাহিদ এসে বসে বলো..

নাহিদঃ কি নিয়ে হাসছো আমাকে ও বলো। স্যার যে প্যারা দিয়েছে এখন হাসা দরকার।

অন্তুঃ কিছু না ভাইয়া। ভাইয়া আপনি এখানে কিন্তু অর্ণব কোথায় তাকে তো দেখছি না।

নাহিদ পানি খেতে খেতে বলো…আমরা এক সাথে আসছিলাম কিন্তু কর্ণা সাথে কথা বলছে। কি ম্যাথ যেন মিলছে না তাই মিলাছে। ওই দেখো তারা দুজনে

নাহিদের কথা শুনে অন্তু সে দিকে তাকায়। অর্ণবের হাতে বই নিয়ে কর্ণাকে কি যেন বোঝাছে আর কর্ণা মুগ্ধ নয়নে অর্ণবের দিকে চেয়ে আছে। তা দেখে অন্তু বুকটা ধক করে ওঠে। ভার্সিটির কম বেশি সবাই জানে কর্ণা অর্ণবকে লাইক করে কিন্তু অর্ণব এসবের ধার ধারে না। অন্তুর রাগে হচ্ছে অনেক বার বলেছে এই কর্ণার কাছে থেকে দূরে থাকতে না সে শুনলো না। অন্তুর রাগে, দুঃখে, অভিমানে চোখ দিয়ে জল পরতে লাগে। অন্তুর এই আবস্থা দেখে নাহিদ, আদিবা হতভম্ব হয়ে যায়। এই মেয়েটা একটুতেই কষ্ট পায়। অর্ণব কর্ণাকে বুঝিয়ে চলে আসে, হাসি মুখে সামনে তাকালে অন্তুর চোখে জল দেখে বুঝতে বাকি রইলো না তার সাথে কর্ণাকে দেখে ফেলেছে। অর্ণব করুনার চোখে অন্তুর দিকে তাকায় অন্তু অভিমানে চোখ ফিরিয়ে নিলো। তা দেখে অর্ণবের কষ্টের সীমা থাকলো না, বুকটা পিঁড়া দিচ্ছে। অন্তুর চোখের জল সে সহ্য করতে পারছে না। নিজেকে গালা গালি দিতে লাগলো মেয়েটা যা পছন্দ করে না সে সেটাই বেশি করে করে। অর্ণব অন্তুর দিকে এগতে লাগলে ঝড়েরবেগে অন্তু সেখান থেকে চলে যায়। অর্ণব অন্তুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, মেয়েটার মনে অভিমানে পাহাড় জমেছে দেখেই বুঝতে পারে। নাহিদ তার কাধে হাত রাখলে অর্ণব করুনার চোখে তাকায় নাহিদ বলো..

নাহিদঃ অর্ণব কাজটা ঠিক হলো না অন্তু কান্না করছিলো। তুই কেন করলি এটা, জানিস তোর জন্য কতোসময় ওয়েট করছিলো মেয়েটা। কাল ওর জন্মদিন আর আজ তোর কারনে তার চোখে জল আসলো।

অর্ণবের এখন মনে পরলো সত্যি তো তার মনে ছিলো না কাল অন্তুর জন্মদিন। ইস কি করলাম এটা মেয়েটা না জানি বাড়ি গিয়ে কি কান্না কাটি করছে। ভাবতেই হতাশ নিঃশ্বাস নিলো। তাকে যেভাবেই সম্ভব তার রাগ ভাঙ্গাতে হবে….
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#বোনাস পাট

একটা ব্রেঞ্চে বসে আছে অন্তু পরনে মিষ্টি রঙের শাড়ি, হাতে চুরি, কপারে টিপ, খোলা চুলে দেখতে এক পরী লাগছে। হাতে ফোনটা আবার বেজে উঠলো তার, সামনে নিয়ে দেখে অর্ণব ফোন করেছে ফোনটা কেটে দিলো। এই প্রথম না আরো অনেক বার এভাবে কেটেছে সে। সে ওভাবেই বসে রইলো কিছুক্ষণ একটুপর নাহিদ এসে বলো..

নাহিদঃ অন্তু সব কাজ হয়ে গেছে ৩০মিনিট পর তোমার টান। অর্ণবকে বলছো?

অন্তু মাথা নাড়িয়ে না বলে। নাহিদ হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলো…

নাহিদঃ ওকে বলো আমি সামনে আছি। আর আদিবাকে?

অন্তুঃ আমি কাওকে কিছু বলি নি। যা করার আপনি করুন আমি অর্ণবকে বলছি আসার জন্য।

নাহিদ চলে যায়। অন্তু ছোট একটা মেসেজ করে তাকে ফোন করে অর্ণবকে কিছু বলতে না দিয়ে সে বলো…তোমার ফোনে একটা মেসেজ গেছে ওখানে একটা ঠিকানা আছে। ওই ঠিকানায় ১৫ মিনিটের মধ্যে আসতে হবে না হলে তুমি জানো আমি কি করতে পারি। বলে ফোন কেটে দেয় এদিকে অর্ণব বেকুপের মতো চেয়ে আছে তার কিছুই মাথাতে গেলো না। সে মেসেজ টা দেখে আরো অবাক হয় অন্তু তাকে এখানে কেন ডাকছে। সে কিছুখন ওভাবে থেকে তারাতাড়ি করে বাইক নিয়ে চলে গেলো সেখানে।

এদিকে অন্তু এখনো বসে আছে আর আজ যা হবে সে ভাবছে। হাতের উল্ট পিঠ দিয়ে চোখ মুছে ভাবতে লাগলো কালকের কথা।

কাল ওভাবে আসার পর অর্ণব অনেক বার ক্ষমা চায় বলে সে আর করবে না এমন কিন্তু অন্তু কথা না বলে ফোন রেখে দেয়। রাতে কোনমত খেয়ে রুমে এসে নাহিদকে ফোন করে বলে..

অন্তুঃ ভাইয়া একটা কাজ করে দিতে পারবেন?

নাহিদ সবে মাত্র সারার সাথে কথা বলে ঘুম আসছিলো। অন্তুর কথায় তার ঘুম সব উড়ে যায়। সে ব্যস্ত সুরে বলো..

নাহিদঃ কি হয়েছে তোমার অর্ণবের সাথে কি আবার কিছু হয়েছে। ছেলেটা আমাকে বলো তুমি না-কি ফোন ধরছো না। কি হয়েছে বোন

অন্তুঃ ভাইয়া এমন কিছু না আপনাকে একটা কাজ করতে হবে পারবেন না কি বলেন।

নাহিদ অন্তুর কথা শুনে চিন্তিত গলায় বললো…ওকে বলো কি করতে হবে।

অন্তুঃ—————-পারবেন কি না বলুন?

অন্তুর কথা শুনে নাহিদে কাশি উঠে গেলো পানি খেয়ে বলো…বোন তোমার মাথা ঠিক আছে তো। কি বলছো কি এসব তুমি। অন্তু বিরক্ত হয়ে বলো..ভাইয়া পারবেন কি না বলুন। না হলে আমি অন্য ব্যবস্থা করছি। নাহিদ বলো…না আমি করছি তুমি চিন্তা করো না এখন ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও না জানি ঘুম হবে না কি আল্লাহ জানে। বলে ফোন কেটে দেয়।

অন্তু মনে মনে বলে…তোমাকে অনেক ছাড় দিয়েছি এবার না ওই কর্ণা পেত্নী গায়ে গা লাগিয়ে ম্যাথ বোঝাও তাই না এখন আমি তোমাকে ম্যাথ বোঝাব হু হু। অন্তু ফোনে ফোন আসে দেখে আদি ফোন করছে তারপর ঘড়িতে দেখে ১২টা বজে। ফোন তুলে আদির হাসোজ্জল মুখ দেখে অন্তুর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আদি বলো..

আদিঃ হেপ্পি বার্থডে অন্তুপাখি।

অন্তুঃ থেঙ্কংইউ দাদাভাই

আদিঃ পাখি বার্থডেতে কি নেবে বলো আজ তাই দেবার চেষ্টা করবো।

অন্তু কিছুক্ষণ ভেবে বলো…দাদাভাই আমি যদি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশন নিয়ে নিই তাইলে কি তুমি রাগ করবে। আদি অন্তুর কথা শুনে ভ্রু কুচকে কি এমন করতে চায় যার জন্য সে রাগ করবে। অন্তু মাথা নিচু করে আছে আদি মুচকি হাসি দিয়ে বলো..

আদিঃ অন্তুপাখি আমার দিকে তাকাও। তাকাও (অন্তু আদির দিকে তাকায়) শোন তুমি কি করবে আমি জানতে চায় না না জানার ইচ্ছা আছে। আমি জানি আমার পাখি কখনো ভুল কাজ করবে না। আর যদি করেও থাকে আমি কখনো আমার অন্তুপাখির ওপর রাগ করতে পারবো না। বুঝেছো এখন একটু হাসো প্লিজ দেখি কই সেই মিষ্টি হাসি।

বলে অন্তু হাসতে লাগলো তা দেখে আদি শান্তি পেলো। অন্তুর মলিন মুখ সে সহ্য করতে পারে না। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন দেখে দিলো…

তুমি আমাকে কাজী অফিসে কেন ডাকলে বলো অন্তু। অর্নবের কথা শুনে অন্তু চিত্ত ফেরে। সে মাথা তুলে অর্ণবের দিকে তাকায় অর্ণবের গায়ের শার্ট ঘেমে জবজব করছে দেখে বোঝাই যাচ্ছে কতো তাড়াতাড়ি আসছে সে, অর্ণবে বাদামি চোখে তার জন্য অস্থিরতা বোঝা যাচ্ছে। এদিকে অর্ণব অন্তুকে দেখলে বুকে মচুর দেয় এক রাতে কি অবস্থা করেছে কেঁদে। অর্ণব নিচে বসে অন্তর হাত ধরে বলে…

অর্ণবঃ জান আমি সরি বলছি তো আর কখনো এমন হবে না এবারে মতো মাফ করো। নেক্সট টাইম আমার ধারের কাছে কাওকে ঘেঁষতে দেবো না। আর তুমি এখানে কেন…..

অন্তুঃ অর্ণব আমি কিছু শুনতে চায় না। ভেতরে চলো আমাদের যেতে হবে

অর্ণব বুঝতে পারলো একে বলে কিছু হবে না। অন্তু যখন জেদ ধরেছে তার মানে সে সেটা পূরন করেই ছাড়বে। সে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় তারপর অন্তুর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যায়। গিয়ে দেখে নাহিদ কথা বলছে কাজীসাহেবের সাথে। তাদেরকে দেখে মুচকি হাসি প্রদান করে। কাজী তাদের বসিয়ে বিয়ে পড়ানো শুরু করে। ৩ কবুলে মাধ্যমে বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।

নাহিদ অর্ণব অন্তু কাজীঅফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়ায়। নাহিদ খুশি-খুশি মেজাজে বলো…

নাহিদঃ মামা কাল রাতে বোন আমাকে অনেক ভয় পাইয়ে দিয়েচ্ছে। সারা রাত ঘুম হয় নি এখন বাড়ি যে শান্তিতে ঘুমাবো। এখন তোরা কি করবি তোরা বোঝ নতুন বিয়ে করলি অনেক কিছু করা বাকি আছে। কিন্তু আজ আর ট্রিট চাই না পরে দিলে হবে।

নাহিদে কথা শুনে অন্তু লজ্জা মাথা নিচু করে নেয়। নাহিদ কি মিন করছে সে জানে। অর্ণব অন্তুকে দেখে নিয়ে নাহিদের পেটে মেরে বলে…

অর্ণবঃ শালা চুপ থাক দেখছিস না আমার বউ লজ্জা পাচ্ছে। তোর কাজ শেষ এখন ফোট।

অর্ণবের মুখে বউ ডাক শুনে অন্তু শরীরের শীতল প্রবাহ বেয়ে গেলো। কি মিষ্টি ডাক মনে মনে আবার ডাকটা বলো বউ, সে তো এখন অর্ণবের বিয়ে করা বউ ভাবতেই আরো লজ্জায় নুয়ে যায়। নাহিদ আপসোস সুরে বলো..

নাহিদঃ হাই রে দুঃখ। বন্ধু বউ পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে এই দুঃখ কই রাখবো। থাক আর এখন বলবো না পরে হিসাব মেটাবো। অর্ণব আকাশের অবস্থা ভালো না তাই যেখানেই যাস সাবধানে যাস। অন্তর খেয়াল রাখিস। অন্তু সাবধানে থেকে আমি গেলাম।

বলে চলে গেলো সে। অর্ণব সত্যি দেখলো আকাশের অবস্থা ভালো না। সে অন্তুকে বাইকে বসতে বলে। অন্তু বসলে সেও বসে বাইক স্টার্ট করে বলো..

অর্ণবঃ এখন খুশি তো নাকি আরো কিছু করতে হবে মহারানী।

অন্তুঃ না করতে হবে না। [বলে অর্ণবের পিঠে মাথা এলিয়ে দেয়। তা দেখে অর্ণব মূদু হেসে বলে]

অর্ণবঃ কোথায় যাবে বলো। আকাশ দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে।

অন্তুঃ তোমার ইচ্ছা আমি শুধু তোমার সাথে কিছুটা সময় একান্তে চায়।

অর্ণব হেসে তার ফ্ল্যাটের রাস্তায় নেয়। অন্তু চোখ বন্ধ করে নেয়। বাতাসে তার খোলা চুল উড়তে থাকে। মাঝ রাস্তায় বাইক ঠেকায় অর্ণব তা দেখে ভ্রু কুচকে তাকা অন্তু কিছু বলতে যাবে তখন অর্ণব বলে..

অর্ণবঃ তুমি এখানে থাকো আমি সামনের দোকান থেকে আসছি।

বলে সে সামনের সোনার দোকানে গেলো। অন্তু শুধু তাকিয়ে দেখলো। কিছুসময় পর অর্ণব একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো ঠিক তখনি বৃষ্টি শুরু হলো। অর্ণব দৌড়ে এসে অন্তুকে বলে…

অর্ণবঃ অন্তু এই ব্যাগটা আর আমার ফোন তোমার ব্যাগে রাখো। (বলে ব্যাগ আর ফোন অন্তু কে দেয়ে দেয়। অন্তু সব নিজের ব্যাগে রেখে দেয় তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে)
_______________________________

বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো সাথে ঝড় হাওয়া। বাইক এসে ফ্ল্যাটের কাছে থামে। অন্তুকে নামতে বলে অর্ণব সাথে এটাও বলে সে বাসায় গিয়ে বসুক সে বাইক পার্ক করে আসছে। অন্তু মাথা নেড়ে ওপরে গিয়ে দরজা খুলে দরজা ভাজিয়ে রাখে। তার ব্যাগ থেকে অর্ণবের ফোন আর একটা টিফিন বক্স বার করে। বক্সটা ফ্রিজ রেখে রুমে গিয়ে ফোনটা বেড সাইয়ে রাখে। ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ি চিপে পানি ছেড়ে বেরিয়ে এসে মাথা মুছতে লাগলো টাওয়াল দিয়ে। হঠাৎ ঘাড়ে গরম উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পড়তেই সে কেঁপে কেঁপে উঠলো, তার বুঝতে বাকি রইলো না অর্ণব তার পিছনে দাড়িয়ে আছে। ক্রমশ উষ্ণ নিশ্বাস বাড়তে লাগলে তার হৃৎস্পন্দন বাড়তে লাগলো, অন্তু জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেতে লাগলো। অন্তু সরে আসতে নিলে অর্ণব অন্তুর উন্মুক্ত পেটে তার হাত রেখে তাকে তার সাথে জড়িয়ে নেয়। অর্ণবের এই স্পর্শে অন্তু জমে যায় নড়ার শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলে, অজানা এক অনুভূতি অনুভব করতে লাগলো। অর্ণব অন্তুর ভেজে চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে তার ঘাড়ে ছোট ছোট কিস করতে লাগলো আর তার হাত অন্তুর পেটে তার হাত বিচলিত করতে লাগলো। অন্তু চোখ বন্ধ করে সেই স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো কিন্তু যখন স্পর্শ শুলো গভীর হতে লাগলো তখন অর্ণবের হাত খামচে ধরে কাপা কাপা গলায় বলে…

অন্তুঃ অঅঅর্ণব কি করছো

অর্ণব নেশাগ্রস্ত কন্ঠে বলো.. জান প্লিজ বাধা দিওনা আজ।

বলে অন্তুকে তার দিকে ফিরেয়ে নেয়। অন্তু অর্ণবের চোখে আজ অন্য কিছু দেখতে পায়, তাকে পাবার নেশা, আজ কোন বাধাই তাকে আটকানো যাবে না অন্তু জানে। অন্তু ভাবলো এতে কোন দোষ নেয় অর্ণব তার স্বামী, তার অধিকার আছে সম্পূর্ণ রুপে তাকে আপন করে পাবার তাইলে বাধা কেন দেবে। অন্তু মাথা নিচু কে নেয় এতে অর্ণব অন্তুর উত্তর পেয়ে যায়। অর্ণব অন্তুর গালে দু’হাতে দিয়ে মাথা উঁচু করে তুলে তার ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা অন্তুর ওষ্ঠদ্বয় আয়তনে নিলো। অন্তু অর্ণবের ঘাড় খামচে ধরে এতে অর্ণব অন্তুকে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে। কিছুসময় পর অন্তুকে ছেড়ে তাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তার উপর তার ভর ছেড়ে অন্তুর গলায় মুখ ডুবায়। অর্ণবের উন্মাদ হতে দেখে অন্তু চুপ করে থাকে, অর্ণব গায়ের শার্ট খেলে বিছার শেষ প্রান্তে রাখে অন্তুর শাড়িতে হাত দিয়ে খুলে নিচে ফেলে দিয়ে অন্তুকে গভীর ভাবে তার সাথে জড়াতে লাগলো। সব ভালোবাসা তাকে দিতে লাগলো…. আজ তাদের ভালোবাসার নতুন ধাপের সূচনা ঘটলো। আস্তে আস্তে ডুপতে লাগলো একে ওপরকে মধ্যে। বাইরে বৃষ্টি বেগ বেরতে লাগলো সাথে তাদের ভালোবাসার গভীর হতে লাগলো…
________________________________

ঝড় বৃষ্টি এখন আর হচ্ছে না কিন্তু গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। অন্তু অর্ণবের শার্ট পরে তার বুকে মাথা রেখে তার বুকের বা পাশে হাত বুলাতে বুলাতে বলো…

অন্তুঃ তুমি সত্যি পাগলো এমন কেও করে বলো তো। দেখতো কি হয়ে আছে বুকটা।

অর্ণব নিঃশব্দে হাসলো। কেননা সে জানতো অন্তু যখন এইটা দেখবে তখন এমন করে বলনে। (আসলে অর্ণব তার বুকের বা পাশে অন্তু নাম লিখেছে তাই অন্তু বলো) অর্ণব বললো..

অর্ণবঃ তোমাকে কিছু দিতে পারি না আর দিলেও তুমি নিতে চাওনা তাই ভাবলাম এমন কিছু তোমাকে দেয় যা তুমি নেবেও না আবার ফেরাতেও পারবে না। তাই ২ সপ্তাহ আগে এই নাম টা লিখেছি তোমার জন্মদিনে উপহার হিসেবে। কিন্তু তুমি যা উপহার দিলে এতে এটা সামান্য।

অন্তু অর্ণবের কথা শুনে একটু উঠে অর্ণবের বা পাশে নিজের নাম লেখে জায়গায় ঠোঁট ছোঁয়ায়। অর্ণব অন্তুর এলোমেলো চুল ভালোভাবে গুছিয়ে কানে গুজে দিয়ে বলো…

অর্ণবঃ সরি জান তখন মাথা ঠিক ছিলো না। তোমাকে ওই আবস্থাতে দেখে মাথায় ভূত ঢুকেছিলো তোমার মানা করা শর্তেও ঠিক থাকতে পারিনিই সরি।

অন্তু অর্ণবের বুকে মাথা রেখে মৃদু হেসে বলো… এতে সরি বলার কি আছে শুনি। তুমি তোমার অধিকার চেয়েছো আমি না দিলে সেটা ভুল হতো। তাই এত সরি বলতে হবে না।

অর্ণব কিছু বলতে যাবে তার আগে তার ফোন ভাইব্রেশন হতে লাগলো। অর্ণব হাত দিয়ে ফোন নিয়ে দেখে অরনি ফোন করছে। অন্তু জিজ্ঞেস করে কে ফোন করেছে সে বলে অরনি। অর্ণব ফোন ধরে অর্ণবকে কিছু না বলতে দিয়ে বলো…

অরনিঃ ভাইয়া দিদিয়া আপনার সাথে কি। সেই কখন থেকে ফোন করছি ফোন ধরছে না আপনাকে অনেক বার দিয়েছি কিন্তু আপনি ধরে নি। ভাইয়া যদি দিদিয়া থাকে তাইলে তাকে একটু ফোন দেবেন কথা আছে।

অর্ণব কিছু না বলে অন্তুকে ফোন দিয়ে কথা বলতে বলে। অন্তু হ্যালো বলতেই অরনি বলো..

অরনিঃ কই থাকে তোর ফোন জানো আমি কতটা টেনশনে আছি। বিকেল ৪ঃ৩০ বাজে ছোট ভাইয়ু একটু পর চলে আসবে আম্মু অনেক বার তোর কথা জিজ্ঞেস করেছে। আমি বলেছি তুই আদিবা আপুর বাসায় গেছো। তারাতাড়ি আস দিদিয়া নাহলে আজ কি হবে জানি না তারাতাড়ি আয়

অন্তুঃ আমি ৩০ মিনিটের মধ্যে আসছি রাখ ফোন।

ফোন কেটে অর্ণবকে বলো…বাড়ি যেতে হবে ভাইয়ু কিছুখনের মধ্যে বাড়ি চলে আসবে তার আগে আমাকে যেতে হবে।

অর্ণবঃ তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।

অর্ণবের কথায় মত জানিয়ে উঠে দাড়িয়ে তার শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুম গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে অর্ণবের শার্ট বিছানায় রাখলে দেখে অর্ণব তার ব্যাগ নিয়ে এসে ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে তাকে দেয়। অন্তু ভ্রু কুচকে সরু চোখে অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব খুলতে বলে অন্তু প্যাকেটা খুলে ভেতর থেকে সোনার একজোড়া চুরি আর ছোট একটা নাকফুল তা দেখে অন্তু বিস্মিত হয়। অন্তু অবাক কন্ঠে বলো…

অন্তুঃ এগুলো কেন

অর্ণবঃ বিয়ে করেছি তাই আমার তরফ থেকে আমার বউয়ের জন্য। তোমার ইচ্ছে হলে পড়ো না হলে পড়ো না।

অন্তু প্যাকেটা রেখে নাকফুলটা পড়ে নিলো। তা দেখে অর্ণব খুশি হলো। অন্তুকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে কিছুটা সময় নিয়ে চুমু দিলো। অর্ণব তাকে ছাড়িয়ে বলো….

অর্ণবঃ আই লাভ ইউ

অন্তুঃ আই লাভ ইউ টু

অর্ণবঃ চলো তোমাকে দিয়ে আসি

অন্তুঃ না তোমাকে যেতে হবে না। তুমি একটা সিএনজি ডেকে দাও আমি চলে যাবো

অর্ণবঃ কিন্তু

অন্তুঃ কিন্তু কিছু না। ও আর শোনও ফ্রিজে একটা টিফিন বক্স আছে তাতে বিরানি আছে নিজে করেছি। প্লিজ খেয়ে নিও চলো চলো..

বলে অর্ণবকে নিয়ে বাইরে আসলো। অর্ণব না চাইতেও অন্তুকে একাই যেতে দিলো। অন্তু মুচকি হসে অর্ণবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য যেতে লাগলো। রাস্তা যতো যাচ্ছে আজকের দিনের সব ঘটনা তার মনে পরছে। প্রথমে বিয়ে তারপর তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা আর সব শেষে অর্ণবের উপহার। অর্ণবের পাগলামর কথা ভাবতেই লজ্জায় লাল হতে লাগলো ছেলেটা তাকে এতো ভালোবাসে সে সব প্রমান করে দেয় তার ভালোবাসার মাধ্যমে। সে মুচকি হেসে বাড়ি চলে যায়…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-২৫

চোখের পলকে সময় চলে যায় নিজের গতিতে। দেখতে দেখতে ২ মাস কেটে গেছে। এই দুই মাসে অন্তু অর্ণবকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করে তার জীবনে। অর্ণবের পাগলামি দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে আর সেই পাগলামি সব সহ্য করে নেয় অন্তু। অর্ণব অন্তুর বিয়ে কথা নাহিদ ছাড়া কেও জানে না। অন্তু আদিবাকে বলতে চায় তো কিন্তু আদিবার যে ভুলো মন কখন না জানি দাদাভাই কে বলে দেয় বিয়ের কথা তাই আর বলেনি তাকে। অর্ণবের এক্সাম পরশু থেকে তাই সবাই মিলে ফুচকা খেতে এসেছে এক সাথে। নাহিদ আর অর্ণব পড়াশোনা নিয়ে কথা বলছে আর ফুচকা খাচ্ছে। অন্তু বেশি করে টক দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর চোখ মুখ খিচে নিচ্ছে তাও আবার খাচ্ছে। অন্তুর এমন আবস্থা দেখে আদিবা অন্তুর দিকে বিস্মিত কন্ঠে বললো…

আদিবাঃ দোস্ত আস্তে খা ফুচকা পালিয়ে যাচ্ছে না। আর তুই কবে থেকে এতো টক দিয়ে খাওয়া ধরলি বলতো। আগে তো টক দেখলে দূরে পালাতি।

অন্তু আরেকটা ফুচকা মুখে নিয়ে খেতে খেতে বলো… বেস্টু কি বলবো তোকে ফুচকা পালাক বা না পালাক আমার তো এমন করে খেতে মজা লাগছে। আর কি যেন বলি বল জানি না রে বেস্টু আমার কি যে হয়েছে কিছু দিন ধরে টকের প্রতি বেশি ঝোঁক হয়েছে। এতো না বলে ফুচকা খা

বলে অন্তু এক প্লেট ফুচকা খেয়ে দ্বিতীয় প্লেট নিয়ে খেতে লাগলো। আদিবা যত অন্তুকে দেখছে তত হতভম্ব হচ্ছে। হঠাৎ করে আদিবা কিছু একটা দেখে সে অন্তুর দিকে অবিশ্বাস্য সুরে বলো…

আদিবাঃ অন্তু তোর ঘাড়ে ওটা কিসে দাগ। দেখে মনে হচ্ছে কোন কামরের দাগ।

আচমকা আদিবার কথা শুনে অন্তুর গলায় ফুচকা আটকে যায়। অন্তু কাশতে থাকে অন্তুর এমন আবস্থা দেখে আদিবা ভয় পেয়ে যায়। অর্ণব অন্তুর এমন আবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি পানির বোতল নিয়ে এসে অন্তুকে পানি খাওয়াতে লাগে কিছু সময় পর অন্তু স্বাভাবিক হলে অর্ণব অন্তুর গলার স্কাফটা ভালোভাবে গলায় জড়িয়ে দেয়। অন্তু অর্ণবের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে তা দেখে অর্ণব ইশারায় তাকে শান্ত হতে বলে। এদিকে আদিবার কথা শুনে নাহিদ মিটমিট করে হসছে তা দেখে অর্ণবের রাগি চোখে তার দিকে তাকায়। নাহিদ বলো..

নাহিদঃ আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নেয়। আমি বিল দিয়ে আসছে।

বলে চলে গেলো এদিকে আদিবা এখন কৌতুহল চোখে তাকিয়ে আছে অন্তুর দিকে যে অন্তু কি জবাব দেয় দেখে। অন্তু আমতাআমতা করে বলো…

অন্তুঃ আসলো বেস্টু হয়েছে কি অরনি কামর দিয়েছে ওকে কাল মেরেছি তো তাই।

আদিবা অন্তুর কথায় সন্তুষ্ট প্রসন্ন না করে সে আবার বলো…সত্যি কি তাই। না-কি তুই আমার থেকে কিছু লুকাছিস?

অন্তুঃ না বেস্টু আমি কি লুকাব। ছাড় এসব কথা আমি বাড়ি যাব ভালো লাগছে না। অর্ণব আমাকে বাড়ি দিয়ে আসো।

অর্ণবঃ ওকে চলো।

ততখনে নাহিদ ও বিল মিটিয়ে চলে আসে সবাইকে বিদায় দিয়ে অর্ণব অন্তুর নিয়ে বাইকের কাছে আসলে অন্তু রাগ দেখিয়ে বলে…

অন্তুঃ তোমাকে কত বার বলবো আমাকে কামর দেবে না হুম কতবার বলবো। দেখছো আজ কি হলো আদিবা সন্দেহ করেছে আমি তার কাছে কিছু লুকাছি। আজ থেকে তোমার সব পাগলামি বন্ধ আমি বাড়ি যাব আজ তোমার সাথে যাবো না।

অর্ণবঃ আমি কি করলাম আবার। মানছি কামর দেয়াটা ভুল হয়েছে তাই বলে আমার সাথে তুমি যাবে না সেটা মানছি না। আর পরশু এক্সাম শুরু তখন তো তোমার সাথে দেখা পর্যন্ত হবে না।

অন্তু তাও তার কথাতে আটুল সে যাবে না মানে যাবে না। অর্ণব হার মেনে তাকে বাইকে উঠতে বলে। অন্তু বাইকে উঠলে অর্ণব বাঁকা হেসে বাইক স্টার্ট দিয়ে তার ফ্ল্যাটের দিকে যায় তা দেখে অন্তু অর্ণবের পিঠে দুমদুম করে দুটা কিল দিয়ে বলো..

অন্তুঃ ভালো হলো না কিন্তু অর্ণব।

অর্ণবঃ ভালো হলো কি না সেটা সেখানে গিয়ে বোঝা যাবে। তাই চুপ থাকো।

অন্তু মুখ বাকিয়ে অর্ণবের পিঠে মাথা এলিয়ে চুপ করে থাকে। তা দেখে অর্ণব মুচকি হেসে চুপচাপ চলে যায়। এতখন এখানে যা কিছু হলো সব একজনের চোখে এরোই নিই তিনি ফোন হাতে নিয়ে কাওকে ফোন করে বললো.. একটা ছবি তোমাকে দিয়েছি তোমার ফোন সব খবর নিয়ে আমাকে বলো। বলে কিছু না বলে ফোন রেখে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
______________________________

বিকেল-৫টা

ফুরফুরে মন নিয়ে অন্তু বাড়ি আসে। অর্ণবকে না বলে সে চলে এসেছে তাকে বলবে কি করে সে তো মনের সুখে ঘুম পারছে। ভেবেই মনে মনে হাসতে লাগলো। বাড়িতে ঢুকতে আয়ানের সাথে তার ধাক্কা লাগায় হঠাৎ ধাক্কা লাগায় আয়ানের হাত থেকে কিছু জিনিস পড়ে গেলো। আয়ান তা তুলতে ব্যস্ত হয়ে যায় অন্তু ও সাহায্য করতে লাগলো। অন্তু ভালো করে খেয়াল করে দেখে ব্যাগের ভেতর অনেক টাকা। তা দেখে অন্তু ভ্রু কুচকে বললো….

অন্তুঃ ছোট ভাইয়ু এতো টাকা দিয়ে তুমি কি করবে। আর এখন তুমি এতো টাকা নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস। পরশু না তোমার এক্সাম তাইলে এখন কোথায় যাচ্ছিস।

অন্তুর কথা শুনে আয়ান ভড়কে যায়। আমতাআমতা করে বলে…দরকারি কাজ আছে আমি গেলাম।

অন্তুকে কিছু না বলতে দিয়ে সে চলে যায়। অন্তু আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো..কিছু দিন ধরে আয়ান কেমন পাল্টে গেছে আগের মতো হাসে না, কেমন গুমরে গুমরে থাকে, আর চাচ্চুর কাছ থেকে এখন পর্যন্ত অনেক টাকা নিয়েছে। কেন নিচ্ছে সেটা বলে না আর চাচ্চু ও কিছু জানতে চায় না চাচির জন্য। এসব ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাড়িতে ঢুকতেই তার আব্বু তাকে ডাকে। সে তার কাছে গিয়ে বসলে তিনি বলেন…

আজাদ মির্জাঃ ছোট আম্মাজান তোমার ক্লাস কেমন হচ্ছে

অন্তুঃ ভালো আব্বু

আজাদ মির্জাঃ আজ তোমার ভার্সিটিতে গিয়েছিল কিন্তু তোমাকে তো দেখলাম না। কোথায় ছিলে ছোট আম্মাজান?

অন্তু তার আব্বুর কথা শুনে ঘাবড়ে যায়। তার আব্বু কি সব বুঝে গেছে না-কি কিছু বোঝে নিই। অন্তু ঘাম মুছে বলো..

অন্তুঃ আব্বু আমি আদিবার সাথে ছিলাম। ওখান থেকেই এইমাত্র আসলাম।

আজাদ মির্জাঃ ওও

কিছুখন নিরব থেকে আজাদ মির্জা বলে….ছোট আম্মাজান আমি যদি তোমাকে না জানিয়ে কিছু করি তোমার কি তাতে মানতে কষ্ট হবে।

অন্তুঃ না আব্বু তুমি তো সব সময় আমার ভালো চাও তাই আমি কেন ভুল বুঝব।

আজাদ মির্জা তার কথা শুনে খুশি হলেন। অন্তুকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এদিকে আজাদ মির্জা তার বলা কথার জালে কেমন করে অন্তু ফেসে গেলো সেটা অন্তু বুঝতে ও পারলো না। অবুঝ মনে তার বলা প্রতিটা কথা তার কতটা কষ্ট সামনে অপেক্ষা করছে সে নিজেও জানে না। অন্তু তার আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে রুমে এসে গোসল করে একটা লম্বা ঘুম দিলো…..
______________________________

পরেরদিন বিকেলে,,,,

পড়ার টেবিলে বসে মনযোগ সহকারে ম্যাথ করছে অন্তু। হঠাৎ তার মুখের ভাব পাল্টে গেলে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দৌড়ে ওয়াশরুম গিয়ে হরহর করে বমি করতে লাগলো। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে মুখ মুছতে লাগলো,,এটা প্রথম না ইদানীং এমন হচ্ছে তার সাথে, বমি হচ্ছে, খাওয়ায় অরুচি, একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। সে এসব নিয়ে ভাবে কিন্তু পড়ার চাপে ভুলে যায়। অন্তু মুখ মুছতে মুছতে বাইরে এসে দেখে তার দিদুন গম্ভীর মুখ করে দাড়িয়ে আছে আর অরনি তার পাশা মলিন মুখে। সে কিছু বলবে তার আগে তার চাচি হাতে একটা শাড়ি দিয়ে বলো..

নিহিতা মির্জাঃ অন্তু শাড়িটা পড়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসো তো তোমার আব্বু যেতে বললো।

অন্তুর চাচির কথা শুনে ভ্রু কুচকে। সে বুঝতে পারছে না এখানে কি হচ্ছে। আর তাকে কেন শাড়ি পড়তে বলা হচ্ছে। সে তার দিদুনের দিকে তাকালে তার দিদুন ইশারায় শাড়ি পড়া আসতে বলে। অন্তু চুপচাপ শাড়ি টা নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। ১৫ মিনিট পর শাড়ি পড়ে বাইরে আসলে চাচি কে না দেখে অন্তু তার দিদুনকে বলে…

অন্তুঃ দিদুন কি হচ্ছে এসব আর হঠাৎ আব্বু শাড়ি পড়ে নিচে যেতে বলো কেন।

দিদুনঃ তোমাকে দেখেতে এসেছে নিচে।

দিদুনের কথা শুনে অন্তু যেন মাথায় বাজ পরলো। কি বলে এসব তাকে দেখতে হঠাৎ লোক আসবে আর আব্বু তো কখনো বলে নিই। না না আমি কিছুতেই এসব হতে দেবো না একজনের স্ত্রী হয়ে পরপুরুষের সামনে কেমনে যাবো না না। অন্তু ছলছল চোখে তার দিদুন দিকে তাকিয়ে বললো…

অন্তুঃ দিদুন আমি কিছুতেই নিচে যাবো না তুমি আব্বু কে বলো এখন আমি বিয়ে করবো না।

দিদুনঃ আমি অনেক বার বলছি কিন্তু তোমার আব্বু কিছুতেই কথা শুনছে না। কি করবো বলো তো আমি তুমি নিচে না গেলে তোমার আব্বু সন্মান নষ্ট হবে।

অন্তুঃ কিন্তু আমি অর্ণবকে ছাড়া অন্য কারোর সামনে যাবো না। আর আব্বু হঠাৎ এমন করছে কেন আমার সাথে।

অরনিঃ দিদিয়া অর্ণব ভাইয়াকে বলো সব দেখো সে কিছু করতে পারে কি না।

দিদুনঃ হ্যা অরু ঠিক বলেছে তুমি তাহলে অর্ণবকে ফোন করো।

অন্তুঃ না দিদুন কাল ওর এক্সাম আমি কিছুতেই এসব বলে তার মনযোগ নষ্ট করতে চাই না। ওর ৪বছর নষ্ট হয়ে যাবে এসব নিয়ে।

দিদুনঃ তাইলে আর কি চলো নিচে।

বলে অরনিকে নিয়ে নিচে যায়। এদিকে অন্তু কি করবে দ্বিধায় ভুকছে। অর্ণবকে বলে সে এখন সব ছেড়ে তার কাছে চলে আসবে আর সে এটা চাই না আর না নিচে যাতে চাই। চোখ দিয়ে জল মুছে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিচে যায়।
______________________________

আজাদ মির্জাঃ আশিক তুমি তো কিছু নিচ্ছ না। একটু মিষ্টি নাও।

আশিক সৌজন্যেমূল হাসি দিয়ে একটা মিষ্টি মুখে দিলো। ড্রইংরুমে পিনপিন নিরবতা। অন্তু মাথা নিচু করে আছে তার দিদুনের সাথে বসে। অরনি তার মার পিছনে লুকিয়ে আছে। অরনির কাছে আশিক এতটা সাদাশিদ্ধে লাগছে না কেমন নেগেটিভ ভাইব আসছে তার কাছ থেকে তাই লুকিয়ে আছে। তার দিদিয়ার জন্য কষ্ট হচ্ছে কেমন চুপ করে গেছে তার দিদিয়া আর বড় আব্বুকে ভিলেন লাগছে। আশিক বললো…

আশিকঃ আঙ্কেল আপনি তো জানেন আমার বিষয়ে সব। আমার আপন বলতে শুধু চাচা তাও বিদেশ থাকে। আর আমি ছোট খাটো ব্যবসায় করি সাথে রাজনীতিতে আছি।

আজাদ মির্জাঃ জানি তো আশিক বাবা। তুৃমি আমার পাটির ফ্রান্ড দাও আর আমি জানবো না তোমার বিষয়ে এতটা দ্বায়িত্বহীন্তা আমি না। তাইতো তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো বলে তোমার চাচার সাথে সব কথা ঠিক হয়ে গেছে শুধু তুমি হ্যা বলে হবে।

আজাদ মির্জা কথা শুনে অন্তু চোখ তুলে তাকায়। তার এখন বিশ্বাষ হচ্ছে না তার আব্বু তাকে না বলে তার বিয়ে ঠিক করে দিলো। আজাদ মির্জা অন্তু দিকে তাকিয়ে বলে….

আজাদ মির্জাঃ আম্মাজান কাল আপনাকে বলেছিলাম না তোমাকে না জানিয়ে যদি কিছু করি আপনি রাগ করবেন কি আপনি না বলেন। তাই আমি আপনার বিয়ে আশিকের সাথে ঠিক করে দিয়েছে। আপনি খুশি তো।

অন্তু এখন বুঝতে পারে কেন তার আব্বু তখন এ কথা বলো। সে কথা দিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। অন্তু একেবারে চুপ হয়ে গেলো। আশিক মুচকি হেসে বলো…

আশিকঃ আঙ্কেল আমার অন্তু পছন্দ হয়েছে এখন আপনি চাচার সাথে কথা বলে নেবেন। আজ তাহলে আসি।

আজাদ মির্জাঃ ঠিক আছে। ছোট আম্মাজান আশিকে এগিয়ে দিয়ে আসো।

অন্তুর অনিচ্ছা থাকা শর্তেও তাকে যেতে হয় আশিকের সাথে। আশিক পিছনে আর অন্তু সামনে যাচ্ছে। হঠাৎ অন্তুর শরীরে আপতিতকর জায়গায় কারোর হাত লাগায় অন্তু স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু বুঝে উঠতে পারলো না সে। কিছু সময় পর যখন বুঝলো আসলে কি হয়েছে তখন তার শরীর ঘিনঘিন করতে লাগলো রাগে ঘিন্নায়। চোখ তুলে তাকাতেয় বিচ্ছিরি ভাবে হাসতে দেখে আশিকে রাগ যেন আরো বেরে গেলো। আশিক কাম দৃষ্টিতে অন্তুর দিকে তাকিয়ে বলো…

আশিকঃ তোমাকে শাড়িতে সেক্সি লাগছে। মনে হচ্ছে এখনি তোমার সাথে সে* করি। তোমার উন্মুক্ত পেটে দেখে জাস্ট নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনিই। আর তোমার সাথে তো আমার বিয়ে তাই হাতটা ওখানে চলে গেছে। এখন হাত গেছে পরে আরো অনেক কিছু তোমাকে সহ্য করতে হবে সুইটহার্ট।

বলে ফ্লাইন কিস দিয় সে। অন্তুর কাছে আশিকের কথা বলার সভাব ভালো লাগলো না। তার কাছে আশিকের চরিত্র খারাপ লাগছে, না হলে প্রথাম দেখতে আসা মেয়েকে কেও বাজে ভাবে ছোঁয় আর না বাজে কথা বলে। অন্তু কিছু না বলে দৌড়ে তার রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ওয়াশরুমে চলে যায়। তার শরীর এখন ঘেন্না লাগছে, অপবিত্র লাগছে। শাওয়ারে নিচে দাড়িয়ে ভিজতে লাগলো আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো…. সরি অর্ণব আজ তুমি ব্যতিত ওই জানোয়ারটা আমাকে কেমন ছুলো। আমি কেন সতর্ক অবলম্বন করলাম না। নিজেকে ঘেন্না লাগছে এখন। বলে কান্না করতে লাগলো…..
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-২৬

স্তব্ধ হয়ে বসে আছে অন্তু চোখের কোণে চিকচিক করছে পানি। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি। কিছু পাওয়ার খুশি তার মুখে, ডান হাত এখন পেটে রাখা। কি সব বিড়বিড় করছে একলা একা। চোখের পানি মুছে আবার ওয়াশরুমে যায় ৫ মিনিট পর হাতে পজিটিভ প্রেগ্ন্যাসি কিট নিয়ে বের হয়, প্রতি বার একই রেজাল্ট আসছে। এবার অন্তু শব্দ করে কান্না করতে লাগে এটা দুঃখের কান্না না সুখের কান্না। প্রথম বার তার গর্ভে তার ভালোবাসার চিহ্ন এসেছে, তার সন্তান, অর্ণবের আংশ তার পেটে ভাবতেই অনমনে পেটে হাত চলে যায়। মা হবার সুখ কি সেটা শুধু যে মা হয় সেই জানে, তার অস্তিত্ব মিশে যায় সেই নিষ্পাপ শিশু। আজ অন্তুর ও জীবনে অনেক বড় প্রাপ্তি হিসাবে এসেছে এই বাচ্চাটি।

(সেদিনে আশিকের ঘটনার পরে ১ সপ্তাহ হয়ে গেছে। অন্তু শরীর আরো খারাপ হতে লাগলো কিন্তু সে কাওকে বলে না। তার তীব্র অভিমান হয় তার আব্বুর সাথে। সে কথা বলা বন্ধ করে দেয় সবার সাথে অরনি আর দিদুন ছাড়া। অরনি তাকে বলে আশিক ১মাসের জন্য বিদেশ গেছে এটা শুনে অন্তু খুশি হয়। তার মতে অর্ণবের এক্সাম হলে সে তার আব্বুর সাথে কথা বলবে ওদের নিয়ে। আজ সকালে হঠাৎ করে অন্তুর মনে পরলো তার পিরিয়ড মিস হয়েছে ২ মাস। তাই সকালে ফার্মেসি থেকে কিট কিনে নিয়ে এসে টেস্ট করালে পজিটিভ রেজাল্ট)

অন্তু ফোন হাতে নিয়ে অর্ণবকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পায় তার মনে পরে আজ অর্ণবের পরীক্ষা আছে। অন্তু ফোন রেখে বলতে লাগলো..

অন্তুঃ অর্ণব তোমার আপন বলতে কাওকে চাইতে না দেখও সে আমার পেটে আছে (বলে পেটে হাত দেয়) তোমাকে খবরটা দেবার জন্য মন ছটফট করছে কিন্তু এখন বলবো না দেখা হলে বলবো। তোমার মুখের সেই খুশি আমি দেখতে চাই। বেবি তোমার পাপা তোমার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানলে খুব খুশি হবে। তোমার পাপা তোমাকে মাথায় করে রাখবে বেবি পাপা লাভস ইউ। তাড়াতাড়ি চলে এসো আমাদের মাঝে তোমার পাপাকে তোমার প্রয়োজন সোনা। মাম্মা লাভস ইউ

বলে চোখের কোণে পানি চলে আসে কিন্তু ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি। এ এক নতুন অনুভূতির সাথে অবগত হয়েছে অন্তু। মা হবার খুশি পৃথিবীর সব থেকে বড় সুখ সে আজ বুঝেছে। অর্ণব নিউজটা পেলে কি করবে ভাবতেই অন্তু খুশি হতে লাগলো।
_________________________________

অন্তুঃ কি হয়েছে বেস্টু তোর আমার কথা শুনছিস না কেন??

অন্তুর কথায় আদিবা হচকে যায়। আদিবা ঘাবড়ে গিয়ে আমতাআমতা করে বললো…

আদিবাঃ কই কিছু না তো দোস্ত।

অন্তু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো… তাইলে এতো টেনশন কেন দেখাচ্ছে তোকে। আমি কথা বলছি কখন থেকে কিন্তু তুই কি এত মনযোগ সহকারে ভাবছিস। আমি ডাকাতে তুই ঘাবড়ে গেলি কেন। বল কি হয়েছে দাদাভাইর সাথে কি কিছু হয়েছে।

আদিবা জোরপূর্বক হেসে বললো…এমন কিছু না আসলে বাসায় একটু প্রবলেম আছে তাই। তুই চিন্তা করিস না। আমার কথা বাদ দেয় তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন কেমন যেন হয়ে গেচ্ছিস। কি হয়েছে তোর?

অন্তুঃ তেমন কিছু না খাওয়াদাওয়া অনিয়ম হচ্ছে বলে এমন হচ্ছে।

আদিবাঃ ওও

বলে চুপ করে থাকে এদিকে আদিবাকে শান্তু দেখে অন্তু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অন্তু নিজের প্রেগ্ন্যাসির নিয়ে অর্ণবকে আগে বলবে তার পর সবাই কে তাই সে কাওকে বলে নি। তারা কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসে দিয়ে যাচ্ছিল তখন অন্তু নাহিদ কে দেখে তার দিকে আদিবাকে নিয়ে গিয়ে বললো…

অন্তুঃ নাহিদ ভাইয়ার আপনি এখানে কেন আপনার না পরীক্ষা চলছে।

নাহিদঃ আর বলো না বোন একটা ছোট কাজে এসেছি হয়ে গেছে এখন বাড়ি গিয়ে পড়তে বসতে হবে। তুমি কেমন আচ্ছো অন্তু আদিবা

আদিবা+অন্তুঃ ভালো ভাইয়া আপনি

নাহিদঃ ভালো

নাহিদ তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলো৷ অন্তু তাদের পরীক্ষা কেমন হচ্ছে সব জানতে চাইলে সে বলে। কথা বলার এক পর্যায় হঠাৎ কেউ নাহিদে কলার ধরে তার পেটে আঘাত করে। আকাম্মসিক ঘটনা নাহিদ সহ অন্তু আদিবা হতবিহ্বল হয়ে পরে। অন্তু নাহিদ দিকে তাকিয়ে যে নাহিদকে মারছে তাকে দেখে ঘাবড়ে যায়। কেননা নাহিদকে আর কেও না আয়ান মেরেছে। আয়ান রেগে বলে..

আয়ানঃ তোর সাহস কি করে হয় আমার বোনুর সাথে কথা বলা হ্যা। আজ তোমাকে মেরে ফেলবো

বলে মারতে যাবে তখন অন্তু এসে থামায়। এদিকে নাহিদ কিছু বুঝতেও পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে। সে কি এমন করলো যাতে আয়ান তাকে মারবে। অন্তু নাহিদকে ছাড়িয়ে বললো…

অন্তুঃ ভাইয়ু কি করছো কি তুমি। নাহিদ ভাইয়াকে কেন মারছো। সে আমার সিনিয়ার ভাই তাই আমার সাথে কথা বলছে। তুমি তার কাছে ক্ষমা চাও না হলে আমি কিন্তু কিছু করে ফেলবো কি হলো ক্ষমা চাও।

আয়ানঃ সরি আমার বুঝতে ভুল হয়েছে। আমি মনে করেছিলাম তুমি অন্তুকে ডিসটার্ব করছো তাই এমন কাজ করেছি সরি।

নাহিদঃ না না এতে ক্ষমার চেতে হবে না। ভুল সবার থেকেই হয়। আমি কিছু মনে করি নিই।

আয়ানঃ অন্তু আমি গাড়িতে ওয়েট করছি তাড়াতাড়ি আসবি।

বলে কাওকে বলতে না দিয়ে চলে যায়। অন্তু এই ঘটনা সত্যি লজ্জিত। অন্তু অসহায় মুখ করে নাহিদকে বলে…

অন্তুঃ ভাইয়া ভাইয়ুর কাজ আমি সত্যি লজ্জিত। পারলে ক্ষমা করবে প্লিজ আর অর্ণবকে কিছু বলবে না।

নাহিদঃ না বোন আমি কিছু মনে করিনি। তুমি বাড়ি যাও আর আমি অর্ণবকে কিছু বলবো না।

অন্তু তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে চলে আসে। আয়ান অন্তুকে নিয়ে সোজা বাড়ি এসে। আয়ান অন্তুর হাত ধরে নিয়ে আসতে দেখে অরনি দিদুন নিহিতা সবাই হতভম্ব। এখানে হচ্ছে কি সেটা তারা বুঝতে পারছে না, অন্তু কান্না করতে করতে বার বার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু আয়ান ছারচ্ছে না। অন্তুকে সোজা তার রুমে নিয়ে এসে দাড় করায় অন্তু কান্না করতে করতে বললো…

অন্তুঃ ভাইয়ু কেন এমন করছি তুই। তুইতো কখন আমার সাথে এমন করিস না তাইলে আজ কেন করছি।

আয়ানঃ তোর সাহস কেমন করে হয় বিয়ে ঠিক হওয়া শর্তে তুই অন্য কারোর সাথে প্রেম করছিস। একবারও বড় আব্বুর সম্মানের কথা ভাবলি না তোকে তো আমার মারতে ইচ্ছে করছে…[মারার জন্য হাত ওঠায়]

অন্তু এতোখন আয়ানের কথা শুনে কান্না করতে লাগলো কিন্তু শেষ কথা শুনে বিস্মত হয়। আয়ান তার আর অর্ণবের কথা যেনে গেছে তাইলে সবাই যেনে গেছে। আর সব থেকে আশ্চর্যজনক জিনিস হলো আয়ান এই প্রথম অন্তুকে মারার জন্য হাত উঠিয়েছে। ভাবতেই শব্দ করে কান্না করতে লাগলো। এতখনে সবাই চলা আসে আয়ানকে অন্তুকে মারার জন্য হাত তুলতে দেখে সবাই হতভাগ্য কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। দিদুন তেরে এসে আয়ানর হাত ধরে বললো…

দিদুনঃ আয়ান এটা কি করছিস তুই পাগল হয়ে গেছি তুই অন্তুকে মারতে যাচ্ছি। অন্তু কি এমন করছে তুই ওকে মারতে যাচ্ছি।

আয়ানঃ কি করেনি তাই বলো। এই মেয়ে বিয়ে ঠিক হওয়া শর্তে কেন তার ডিপার্টমেন্ট সিনিয়ারের সাথে প্রেম করছে। ওর সাহস কেমনে হয় ওকে মারাই উচিত। আজ থেকে ও ঘরে থাকবে আশিক সামনের সপ্তাহে আসবে তারপর ওর বিয়ে। সেই পযন্ত ও ঘরে থাকবে।

আয়ানের কথায় সবাই হতবিহ্বল হয়ে পরে। অন্তু কান্না করতে করতে বলে…

অন্তুঃ ভাইয়ু আমি অর্ণবকে অনেক ভালোবাসি প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। ওর এক্সাম হলে আব্বুর সাথে কথা বলতে আসবে৷ আর আমি কিছুতেই ওই চরিত্র হীন আশিকে বিয়ে করবো না।

অন্তুর কথা শুনে আয়ান রেগে যায়। আয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলো…তোকে তো ওই আশিকের সাথেয় বিয়ে হবে। সব ভুলে যায় আর বিয়েতে মন দে।

বলে অন্তুর হাত থেকে ফোন নিয়ে নিলো৷ অন্তু ফোন নেবার চেষ্টা করলে আয়ানের সাথে পেরে ওঠে না। দিদুন অরনি কিছু বলতে যাবে তার আগে আয়ান তাদের কে নিয়ে রুমের বাইরে চলে যায়। বাইরে থেকে লক করে দেয় আর রুম খুলতে সবাইকে মানা করে দেয়। সবাই বুঝে গেছে এখন কথা বলে লাভ নেয় তাই সবাই একে একে চলে যায়। আয়ানের চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরে বিড়বিড় করে বলে…সরি বোনু আমি অসহায় ক্ষমা করে দিস তোর ভাইয়ুকে। বলে সোজা আজাদ মির্জা রুমে চলে যায়। আয়ানকে দেখে আজাদ মির্জা মুচকি হেসে তার সামনে অনেক গুলো টাকা টেবিলে রাখে। আয়ান ঘেন্না দৃষ্টি প্রয়োগ করে টাকা গুলো নিয়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে কাওকে ফোন করতে করতে। সে বলে..

আয়ানঃ টাকার জোগাড় হয়েছে এখনি আমি হসপিটালের আসছি আপনার চিকিৎসা শুরু করুন।

বলে হতদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যায়। এদিকে কেও খুশির হলো আর এদিকে অন্তু কান্না করতে করতে ফ্লোরে শুয়ে পরে। আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো…

অন্তুঃ ভাইয়ু আমি অর্ণবকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো কেউ দরজা খোলো আমি অর্ণবের কাছে যাবো। তাকে আমার অনেক কথা বলার আছে প্লিজ।

বলে কান্না করতে লাগলো। এদিকে কেও কিছু করতে পারছে না সবার হাত গুটিয়ে গেছে। অন্তুর কষ্ট কেউ দেখতে পারছে না কিন্তু কেও কিছু করতে পারে না।
_______________________________

আজ ৫দিন হলো কেও অন্তুর খোজ খবর নিতে পারে না। সঠিক সময়ে তার খাবার দিয়ে দেয় তাই হয়। এদিকে আয়ান তার এক্সাম শেষে করে কি করে না করে তা কেও জানে না আর না এতো সব হবার পরেও আজাদ মির্জা এসব নিয়ে কথা বলে। তার দিদুন অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু তার বাবা কিছু শোনে না। এদিকে আদির সাথেও কারোর যোগাযোগ হচ্ছে না ভালো করে তাই তাকে অন্তুর বিষয়ে বলা হচ্ছে না। অন্তু ফ্লোরে শুনে আছে তখন অরনি দৌড়ে এসে যা বলো এতে অন্তুর সারা পৃথিবীর ঘুরে যায়। অন্তু দৌড়ে তার রুম থেকে বেড়িয়ে আসে এই সময় বাড়িতে কেও নেই তাই সে বেরতে পারে।
_______________________________

হসপিটালের করিডোর দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে অন্তু চোখ দিয়ে অঝরে অশ্রু পড়ছে থেকে। তখন অরনি এসে বলে এক্সাম শেষে কারা বা কেউ অর্ণবকে মেরেছে নাহিদ ভাইয়ার তাকে হসপিটালে নিয়ে যায় আর তাকে ফোন করে বলে। অন্তুর বুঝতে অসুবিধা হয় নি এ কাজ কে করেছে। আয়ান ছাড়া কেও এটা করবে না। অন্তু দ্বিতীয় তলার ২০৭ নম্বর রুমের সামনে নাহিদকে দেখে বুঝল সেই রুমে অর্ণব আছে। নাহিদকে কিছু না বলে সে রুমে চলে যায় এদিকে নাহিদ ও কিছু বলো না থাক তারা দুজনে কিছু সময়। এদিকে অন্তু রুমে এসে দেখে অর্ণব বেডে শুয়ে আছে তার মাথায় বেন্ডেজ করা, হাতে বেন্ডেজ করা ঠোঁটের কোণে কাটা, রুমে কারোর উপস্থিত টের পেলে অর্ণব সামনে তাকিয়ে দেখে অন্তু অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অর্ণব হালকা হেসে অন্তুর দিকে হাত বাড়াতেয় অন্তু দৌড়ে গিয়ে অর্ণবের বুকে আছড়ে পড়ে কান্না করতে লাগলো৷ অন্তুকে তার বুকে এতোদিন পর পেয়ে অর্ণবের অশান্ত বুক শান্ত হয়ে যায়। অর্ণব অন্তুর সারা মুখে চুমু দিতে লাগলো তারপর বুকের সাথে আখড়ে ধরে। কিছুসমায় পর অর্ণব নরম সুরে বললো…

অর্ণবঃ জান আমার কিছু হয় নি তুমি টেনশন করো না। তুমি জানো না জান এতোদিন তোমাকে হাজার ফোন করছি ফোন বন্ধ অরনিকে ফোন করে জানতে পাড়ি তুমি একটু অসুস্থ তাই আর কিছু করি নাই। জান এমন করো না আর প্লিজ তোমার সাথে কথা না বলে আমার মৃত্যু হয় বার বার। আজ এতো দিন পর এই বুকে তোমাকে পেয়ে কতটা তৃপ্তি পেযেছি বলে বুঝাতে পারবো না তোমাকে। আই লাভ ইউ জান

অর্ণবের কথা শুনে অন্তু বুঝতে পারে অরনি তাকে আয়ানের করা সব কথা বলে নিয়। অন্তু অর্ণবের বুক থেকে মাথা সরিয়ে চোখ মুছে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো…

অন্তুঃ অর্ণব তোমাকে কিছু বলার আছে আমার।

অর্ণব স্বাভাবিক ভাবে বলো…বলো আমি শুনছি

অন্তু অর্ণবের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শুকনো ঢোক গিয়ে বলতে লাগলো.. তার সাথে কি হয়েছে? আয়ান নাহিদের সাথে কি করেছে? আয়ান তাদের বেপারে জেনে গেছে? এমনকি তার আব্বু বিয়ে ঠিক করেছে তাও বলো কিন্তু আশিকে করা তার সাথে খারাপ ব্যবহার কথা বলে না। সব বলার পর অন্তু চুপি সারে কান্না করতে লাগলো। এদিকে সব শুনে অর্ণব রেগে যায়। তার হাত পা কাপতে থাকে রাগে সে এটা ভেবে ভীষণ রাগ হচ্ছে যখন অন্তুর তার প্রয়োজন ছিলো তখন সে তার কাছে ছিলো না। অর্ণবে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে অন্তু তার দিকে তাকিয়ে দেখে অর্ণব রাগে কাপছে। অন্তু অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে কান্না রত কন্ঠে বলে…

অন্তুঃ অর্ণব প্লিজ রাগ করো না আমাদের ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে প্লিজ।

অর্ণবঃ আমার এটা ভেবে কষ্ট লাগছে তোমার প্রয়োজনে আমি তোমার পাশে ছিলাম না, কি ভালোবাসলাম আমি তোমাকে যেখানে তোমাকে আগলে রাখতে পারলাম না। অন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে বুকে মাঝে।

অন্তু অর্ণবের বুকে ছোট ছোট কিস করতে লাগলো। অর্ণব কিছুটা শান্ত হলে অন্তু সরে এসে আবার বলো…

অন্তুঃ তোমাকে আর একটা কথা বলা হয় নি।

অর্ণব ভ্রু কুচকে সরু চোখে বলো…কি কথা

অন্তুঃ আমি প্রেগন্যান্ট অর্ণব। তুমি বাবা হবে….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here