#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬৭
সকালে মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই অর্ণবের ঘুম ছুটে যায় কিন্তু অলসেমের কারনে চোখ খুলছে না, একটু নড়েচড়ে আবার চুপ করে শুয়ে থাকে। হঠাৎ ছোট্ট একটা হাত তার গালে মুখে বিচিলিত করতে লাগলো, অর্ণব মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করেও বুঝতে পারছে এটা কে করছে। অর্ণব হাতটা ধরে বললো….
অর্ণবঃ আম্মু সকাল সকাল আমাকে জ্বালানো শুরু করলে। তুমি ও তোমার মাম্মার মতো আমাকে জ্বালাও সারাখন সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে জ্বালায় আর তুমি থেকে জ্বালাও…
কথাটা বলে সে বুঝতে পারে সে কি বলো, ফট করে চোখ খুলে দেখে আনভি কান্না কান্না ভাব নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণব তার মেয়ের চোখে জল দেখে তারাতাড়ি উঠে তাকে বুকের সাথে আগলে নিয়ে আদর করতে লাগে কিন্তু সেই আদরে মন ভরলো না আনভির, সে ফুপিয়ে কান্না করে দিলো। অর্ণব অস্থির হয়ে বললো…
অর্ণবঃ আম্মু কান্না করছো কেন? আমি বকেছি বলে কান্না করছো ঠিক আছে আমি আর বকবো না সরি। এবার একটু হাসো।
আনভিঃ আমি তোমার বকাতে কান্না করছি না। তুমি বলেছিলে আমি যদি ঘুমায় তাইলে সকালে মাম্মাম আমার পাশে শুয়ে থাকবে কিন্তু তাকে কেন এখন দেখছি না। দেখো সে নেই আমার পাশে।
বলে অর্ণবকে তার পাশের জায়গা দেখায়, অর্ণব খালি জায়গা দেখে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে এটা আজ প্রথম নাই এটা ২ মাস ধরে চলছে। আনভিকে কি করে বোঝাবে কেন তার মাম্মাম তার কাছে থাকে না। অর্ণব আনভির চোখ মুছে বললো…
অর্ণবঃ আম্মু সকাল সকাল কান্না করে না মাম্মাম চলে আসবে তুমি আমার সাথে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলো। অরু চাচী তোমার ফেবারেট খিচুড়ি রান্না করেছে চলো…
আনভিঃ আমার মাম্মার হাতে খিচুড়ি ফেবারেট। অন্য কারো না…
মুখ ফুলিয়ে বলো আনভি। অর্ণব মেয়েকে দেখে আর ভাবে এই মেয়ে আগে খিচুড়ি দেখলে পালাতো সেই মেয়ে অন্তুর হাতের একদিন খিচুড়ি খেয়ে তার ফেবারেট হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এখন অন্তু হাতের খিচুড়ি ছাড়া কারোর হাতেরটা খায় না সে। অর্ণব আর না ভেবে আনভিকে ফ্রেশ করাতে নিয়ে যায় সাথে নিজেও অফিসের জন্য রেডি হতে লাগে…..
______________________________________
ড্রাইনিং টেবিলে নাস্তা রাখছে এক এক করে অরনি। মি.চৌধুরী সেখানেই বাসে পেপার পড়ছে, আর প্রাপ্য নাস্তা করছে। অরনি কিচেনে গিয়েছে কিছু কাজে, প্রাপ্য তার বাবাকে বললো…
প্রাপ্যঃ বাবা ভাইয়া আজ কাল অফিসের সবার সাথে রাফ ব্যবহার করছে। আমি বুঝতে পারছিনা ভাইয়া হঠাৎ এতো পরিবর্তন হয়ে গেলো কি করে? আমার ভয় হচ্ছে সে নিজের রাগ কন্ট্রোল না করলে পরে যদি কিছু করে বসে তখন।
মি.চৌধুরী পেপার রেখে গম্ভীর হয়ে বললো… তোমার কাছে তো কোনো কথা অজানা না প্রাপ্য। তুমি ভালো করেই যানো অর্ণব কেন রাগ করে। কিন্তু সে পরে তো সবার কাছে সরি বলে আর অফিসর সবাই জানে অর্ণবের মেন্টাল হেল্থ কেমন তাই কেউ কিছু মনে করে না।
প্রাপ্যঃ হ্যাঁ আমি সব জানি সেদিন ভাবি…
আর বলতে পারে না সে অর্ণবকে দেখে চুপ হয়ে যায়। প্রাপ্যকে চুপ হয়ে যেতে দেখে মি.চৌধুরী সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অর্ণব আনভিকে নিয়ে আসছে। অর্ণব চেয়ার টেনে বসে আনভিকে ও বসিয়ে চুপ চাপ আনভিকে খাওয়াতে লাগে। অর্ণবকে এমন দেখে কেউ কিছু বলতে পারে না তাই চুপচাপ সবাই খেতে লাগে। আনভি খাবার দেখে মুখ ঘুড়িয়ে নিলে অর্ণব বলে…
অর্ণবঃ আম্মু জেদ করে না খেয়ে নাও আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে অফিসের জন্য।
আনভিঃ আমার মাম্মাম চাই তা না হলে আমি খাবো না।
আনভির জেদ দেখে অর্ণব হতাশ হয়। অন্তু তো চলে গেলো তার সাথে তার সব কিছু নিয়ে গেলো। অরনি কিচেন থেকে এসে বললো…
অরনিঃ জিজু আমি আনভিকে খাইয়ে দিচ্ছি আপনি খেয়েনিন।
কথাগুলি বলে অর্ণবের থেকে আনভির খাবার নিয়ে তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে খাওয়াতে লাগলো সে। অর্ণব তা দেখে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে না খেয়েই উঠে দাড়ায়, তাকে উঠতে দেখে সবাই তার দিকে তাকায় এটা নিত্যদিনের ঘটনা অর্ণব না খেয়ে চলে যায়, কেউ কিছু বলে সে তার কথা শুনে না তাই কেউ কিছু বলে না। আজ আর মি.চৌধুরী চুপ থাকতে পারলো না, তিনি বলেন….
মি.চৌধুরীঃ অর্ণব দাড়াও
অর্ণব দাড়িয়ে যায় মি.চৌধুরী কথা শুনে কিন্তু পিছনে তাকালো না সে। সবাই মি.চৌধুরীকে রাগতে দেখে অবাক হয় কেননা তিনি সহজে কারোর সাথে রাগে না আজ অর্ণবের কাজে হয়তো তিনি রেগে গিয়েছেন।
মি.চৌধুরীঃ আর কতো দিন এভাবে চলবে অর্ণব। তুমি আজ ২মাস ধরে এই আচরণটা করছো, সকালে না খেয়ে চলে যাও, সারাদিন খাও কি না খাও কেউ জানে না আর রাতে এসে অল্প কিছু মুখে দাও। এমনটা চলে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে তুমি সেটা বুঝছো না কেন? মানছি অন্তুর জন্য এমন করছো কিন্তু সেই মেয়েটা ও তো তোমাকে এমন করতে দেখে কষ্ট পাচ্ছে তাই না। তাইলে তাকে কেন কষ্ট দিচ্ছো তুমি…
অর্ণবঃ আমি কাউকে কষ্ট দিচ্ছি না বাবাই। আমি আমাকে কষ্ট দিচ্ছি তাইলে এতে কারোর কষ্ট হবার কথা না। আর আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। অরনি আনভিকে দেখে রেখো…
কথাগুলো বলে কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে সে চলে যায়। অর্ণবের আচরণ দেখে সবাই হতাশ হয়, মি.চৌধুরী না খেয়েই উঠে গেলে অরনি বললো…
অরনিঃ বাবা আপনি না খেয়ে উঠছেন কেন?
মি.চৌধুরীঃ অরুমা আমার আর গলা দিয়ে খাবার নামবে না। তুমি আনভিকে খাইয়ে দাও…
কথাটা বলে তিনি চলে যান। অরনি এই ছনছাড়া পরিবারটা দেখে কান্না করে দেয়, আগে এই বাড়িতে কতো আনন্দ ছিলো কিন্তু এখন সেটা নেই শুধু মাত্র আজাদ মির্জা জন্য। অরনিকে কান্না করতে দেখে প্রাপ্য এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে….
প্রাপ্যঃ সসসু কান্না থামাও প্লিজ অরু। তুমি তো জানো কেন এমনটা হচ্ছে তাইলে প্রতি বার কেন কান্না করো। নিজেকে মানিয়ে নাও সব কিছুর সাথে বুঝলে…
অরনিঃ আমি মানতে পারছি না প্রাপ্য। এই বাড়ির প্রান ছিলো দিদিয়া সেই সেই প্রানকে এই ভাবে তিলে তিলে মরতে দেখে সবাইতো এমনটা হবে সেটা জানা কথা কিন্তু তাও মন মানতে চায় না।
প্রাপ্যঃ কান্না থামাও আনভি আবার মাম্মাম বলে বলে কান্না করবে। আমি অফিসে যাচ্ছি দেখি ভাইয়াকে কিছু খাওয়াতে পারি কি না।
অরনিঃ আমি খাবার দিয়ে দিচ্ছি জিজুর জন্য। তুমি খেয়ে নাও।
বলে প্রাপ্যকে ছাড়িয়ে সে কিচেনে গিয়ে খাবার একটা বক্সে প্যাক করতে নিলো। এদিকে আনভিকে চুপ থাকতে দেখে প্রাপ্য বললো….
প্রাপ্যঃ আমার পরীটার কি হয়েছে? মন খারাপ করছো কেন, আজ দেখো মাম্মাম চলে আসবে।
আনভিঃ তোমরা সবাই একই কথা বলো বার বার।
প্রাপ্যঃ আজ দেখো মাম্মাম সত্যি আসবে
আনভিঃ সত্যি
প্রাপ্য মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। আনভি খুশি হয়ে তার রুমে চলে যায়। আনভিকে হাসতে দেখে প্রাপ্য ভাবে আজ আবার না মেয়েটাকে রাতে কান্না করতে হয়৷ অরনির কাছে থেকে বক্সটা নিয়ে সে অফিসে চলে যায়…..
_____________________________________
আজো অর্ণব না খেয়ে চলে গেছে। তুই কি করে তাকে না খাইয়েই অফিসে যেতে দিলি অরু… কথাগুলো রেগে বলো দিদুন অরনিকে। অরনি মিনমিন করে বললো…
অরনিঃ দিদুন আমি কি করবো বলো জিজু তো বাবার কথাও শুনছে না তাইলে আমার কথা কি ভাবে শুনবে বলো।
দিদুনঃ হে সেটাও তো ঠিক। আচ্ছা রাখ পরে কথা বলবো।
অরনি হ্যাঁ বলে ফোন রেখে দেয়। এতখন সবাই খাবার টেবিলে বসে দিদুনের কথা শুনছিলো। আদি খাবার রেখে বললো..
আদিঃ অর্ণবের আর কি দোষ বলো দিদুন যে দোষ করেছে সে তো দিবী দেখো কোথাও ভালো আছে৷ ছেলেটাকে কি করে দিলো সে…
দিদুন রেগে বললো…আদি সে তোমার বোন হয়। মানছি তুমি তার ওপর রেগে আছো তাই বলে এভাবে কথা বলবে।
আদিঃ সরি দিদুন..
আদি চুপ হয়ে যায় আর কথা বলে না সে, আদিবা দাড়িয়ে থেকে এতোখন নাতি আর দিদুনের কথা শুনছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না সে। সে যদি কথা বলে তাইলে আদি রেগে যেতে পারে তাই। এরি মাঝে নিহিতা অয়নকে কোলে নিয়ে আয়রা কাছে এসে বললে…
নিহিতাঃ তোমার কবে হুশ হবে শুনি। ছেলেকে একা রুমে কেন রেখে এসেছিলে আমি না গেলে এখনি তো খাট থেকে পরে যেতো।
নিহিতার কথা শুনে আয়রা রাগি চোখে আয়ানকে দেখে কারন সে অয়নকে আয়ানের ভরসায় রেখে এসেছিলো। কিন্তু সে আয়ানের সাথে অয়নকে না নিয়ে আসতে দেখে সে মনে করে আয়ান অয়নকে নিহিতার কাছে দিয়ে এসেছে কিন্তু না তার তো ছেলেকে আনতেই ভুলে গেছে। আয়ান নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে রাখে, আসলে সে কাজের চাপে অয়নের কথা ভুলেই গিয়েছিলো। আয়রা বললো…
আয়রাঃ আম্মু আমি আপনার গুনধর ছেলেকে বলে এসেছিলাম যে অয়ন বেডে আছে তাকে যেন নিয়ে আসে সে। কিন্তু সে আনে নি, অয়নকে না নিয়ে আসতে দেখে আমি তাই মনে করি আপনার কাছে দিয়ে এসেছে তাই আর খোজ করিনি…
নিহিতাঃ তোমার দুজন পাগল হয়ে গেছো না-কি হেয়। এখন ছেলেটা হামাগুড়ি দিতে শিখে গেছে। আমি যদি সঠিক সময় না যেতাম তাইলে অয়ন বেড থেকে পরে যেয়ে কোনো অঘটন ঘটাতো।
আয়রা মাথা নিচু করে থাকে আসলে তারি ভুল আয়ানকে বলে আসা৷ নিহিতা মির্জা আয়ানকে করা গলায় বললো…
নিহিতা মির্জাঃ আয়ান আর কখনো যদি এমন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ দেখেছি তো দুজনকে বাড়ি থেকে বের করে দেবো কিন্তু অয়নকে আমার কাছে রাখবো মনে রেখো আমার কথা। চলো দাদুভাই মা-বাবাকে বকে দিয়েছি।
নিহিতা চলে যায় অয়নকে নিয়ে। তার চলে যাবা দেখে আয়ান হাসতে লাগলো, যাকে সে কোলে পর্যন্ত নিতে নারাজ ছিলো তাকে এখন কোল ছাড়া করতে চায়না তিনি। সেদিন আয়রা সত্যি জেনে নিহিতা মির্জা অনেক অনুতপ্ত ছিলো কিন্তু আয়রা তাকে কোনো কিছু না বলে আপন করে নেয়ে তারপর থেকে তিনি আয়রা আর অয়নেক নিজের কাছের একজন করে ফেলে আর আয়ানকে দূরের। মাঝে মাঝে আয়ান আফসোস করে তার আম্মুর কাছে যে তাকে ভুলে গিয়ে তার বউ বাচ্চাকে সে কাছের মানুষ বানিয়েছে তখন নিহিতা মির্জা হাসে শুধু। অয়নের বয়স এখন ১বছর সে এখন হামাগুড়ি দেয় মা বাবা বলতে শিখেছে। আর আদি দিদুনকে বলে ৩মাস আগে আদিবাকে বিয়ে করে, তাদের বড় করে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হয় না শুধু ফ্যামেলির সাবই মিলে বিয়েটা দিয়ে দেয়। আদি আদিবাকে বলেছিলো সে শাস্তি দেবে তাকে তার করা কাজের জন্য, তাইতো তাকে বিয়ে করে তার থেকে দূরে রেখে আদিবাকে শাস্তি দিচ্ছে। আদিবাও সেটা মেনে নেয় কেননা তার ভুল ছিলো এতে, তাইতো সে আদির এতো কাছে থেকেও দূরে আছে, মাঝে মাঝে কষ্ট হয় কিন্তু আদি দূর থেকে তার সব খেয়াল রাখে তাই ভালো থাকো।
দিদুন কিছুটা ইতস্তত করে বললো… তোমাদের সাথে কিছু কথা ছিলো…
আয়ানঃ বলো দিদুন..
দিদুনঃ মানে আজাদের জন্য কাল মসজিদে দুয়া মাফিলাত রেখেছি আমি।
আজাদ মির্জা নাম শুনে আদি রেগে যায়, আদিকে রাগতে দেখে আদিবা তার পেছনে এসে তার কাধে হাত রেখে তাকে থামায়। আদি আদিবার কাজে বুঝতে পারে সে রেগে দিদুনকে কিছু উল্টো পাল্টা কিছু বলে ফেলবে তাই সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো….
আদিঃ দিদুন এতো সব হবার পরেও তুমি ওই মানুষটার জন্য দুয়া-মাফিয়া রাখবে। তুমি জানো না তার জন্য আজ সবার জীবন কি হয়েছে, আমার অন্তুপাখি আজ আমাদের…
আদির আর বলতে পারে না তার গলা ধরে আসছে। দিদুন তার চোখের জল মুছে বললো… আমি জানি আমার ছেলে পাপ করছে আর সে তার শাস্তি ও পেয়েছে। আজ ২মাস হলো ছেলেটা মারা গিয়েছে তোমরা শুধু তাকে কবর দিতে গিয়েছিলে তারপর আর কিছু করতে যাওনি। আমি আর আকাশ মিলে সব করেছি। তাই কালকেও আমি আর আকাশই যাবো তোমাদের কাউকে যেতে হবে না।
দিদুনের কথায় আয়ান বললো… দিদুন কি কি করতে হবে আমাকে বলো আমি করে দেবো আর কাল কখন যেতে হবে বলো আমি তোমাকে সাথে নিয়ে যাবোনে।
আয়ানের কথা দিদুন মাথা নাড়ায়। আয়ানের কথা শুনে আদি রেগে গেলেও কিছু বলো না আর সে দিদুনকে কষ্ট দিতে চায়না তাই সে ও হ্যা বলে তাদের সাথে যাবে বললে। হ্যাঁ সেদিন পুলিশ আজাদ মির্জাকে নিয়ে গেলে তাকে কঠন শাস্তি ভোগ করতে হয়, তার সব কালো ব্যবসা জব্দ করে নেয়ে তাকে পাটি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসব সে মানতে পারে না আর তার থেকে বড় কথা তার চোখের সামনে সে নিজের হাতে নিজের মেয়েকে মেরেছে ভেবে তিনি কেমন গুমরে যায় তারপর তার শাস্তির কার্যকর শুরু মধ্যে তিনি হার্ট অ্যাটাক মাধমে মারা যায় ২মাস আগে। সবাই তাকে মাফ করতে পারে না কিন্তু মৃতমানুষকে ঘেন্না করতে হয়না বলে তার জানাজায় দিতে গিয়েছিলো তারপর আর কিছু করে না তারা…। আদি আয়ান তাদের কাজে চলে যায় আয়ান আদির কোম্পানিতে কাজ করে এখন। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়….
_______________________________________
সারাদিনের ক্লান্ত শরীল নিয়ে রুমে ঢুকলো অর্ণব। আজ আবার অফিসে ঝামেলা হয়েছে, সে করতে চাইনি কিন্তু হয়ে যায় বার বার। রুমে এসে দেখে রুম পুরো অন্ধকার কিন্তু বেলকনিতে আলো জ্বলছে সেই আলোর রশ্মি রুমে এসে পরছে। সেই আলোর দেখে অর্ণব হাতে ব্যাগ রেখে এগিয়ে যায় কাবাডের দিকে। তার বুকের বা পাশটা চিনচিন ব্যাথা করছে কেন করছে সে জানে, তার আসে পাশে অন্তু অস্তিত্ব অনুভব করলে এমনটা হয় যেমনটা এখান হচ্ছে। এটা নতুন না প্রতিবার হয় তার সাথে এমনটা, সে আর তার মনকে প্রাধান্য না দিয়ে সে গলার টাইটা খুলতে লাগলো, এদিকে বেলকনির থেকে একটা মেয়েলি ছায়া রুমের মধ্যে প্রবেশ করে, মেয়েটা কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা অর্ণবের কাছে গিয়ে তাকে পিছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে তার পিঠে নিজের মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। হঠাৎ কেউ তাকে জড়িয়ে ধরায় হচকিয়ে যায় অর্ণব কিন্তু পরক্ষণে যে ব্যাক্তির তাকে জড়িয়ে ধরেছে তার স্পর্শ তার অতিপরিচিত হলে সে থমকে যায়। অর্ণব বললো…
অর্ণবঃ আমি জানি তুমি এখানে নেই জান। আমি তোমাকে ছুলে দিলে তুমি উধাও হয়ে যাবে কিন্তু আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না। আমি এই আলিঙ্গনকে মিস করেছি খুব, তুমি এভাবে থাকো কিছুখন প্লিজ জান চলে যেওনা।
অন্তু তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার মিহিতো কন্ঠে বললো…. যদি ভালোবেসে ছুঁতেই না পারো ভয়ে তাইলে ভালোবাসলে কেন? অর্ণব তুমি এতো ভয় পাও এখন যে আমাকে ছুঁয়ে দিলে আমি উধাও হয়ে যাবো ভেবে….একবার ছুঁয়ে দেখো আর কখনো তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো না প্রমিস…
অন্তর কথায় চমকে যায় অর্ণব, কি বলো অন্তু তাকে, সে আমাকে ছেড়ে যাবে না আদো কি সত্যি না-কি ভ্রম…
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#বোনাস পাট
অর্ণব অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অন্তুর দিকে আর অন্তু ভেজে বিড়ালের মতো মুখটা ছোট করে কুচুমুচু হয় দাড়িয়ে আছে অর্ণবের সামনে। এদিকে অর্ণব অন্তুর কিউটি মুখ দেখে নিজের রাগ গলাতে চায় না তাই দরাম দরাম পা নিয়ে রুমের লাইট অন করে দেয়। অর্ণবের এমন রাগ দেখে অন্তুর প্রানপাখি ভয়ে ছোট্ট হয়ে গেলে সে শুকনো ডোক গিলে মিনমিয়ে অর্ণবকে বললো….
অন্তুঃ জানননননন আমি সরি বলছিততততো আর হবে নননননা এমন। প্লিজজজজ আমাকে এবারের মতো ছেড়ে দাওওওও।
অন্তুর মিষ্টি কথা মনে হয় অর্ণবের মন গলানি, অর্ণব তেরে এসে অন্তুর কব্জি ধরে বললো…
অর্ণবঃ জান কাকে বলছো তুমি? আমি তোমার কেউ না যদি কেউ হতাম তাইলে এমনটা করতে না। আজ ৩ দিন পর তুমি বাড়ি ফিরলে কোথায় ছিলে কি ভাবে ছিলে আমি জানি না। আনভি কান্না করছে তোমার জন্য। অন্তু সত্যি করে বলোতো তোমার কাছে আমার আর আনভির থেকে ওই আজাদ মির্জা এতোটা ইনপন্টে হলো যে আজ ২ মাস ধরে তুমি এই নাটক করছো। কোথায় যাও, কোথায় থাকো জানি না, ওই আজাদ মির্জা তোমাকে আমার কাছ থেকে সারাজীবনের মতো কেরেনিতে চেয়েছিলো, তোমাকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছিলো, তারপরও তুমি বার বার তার কবরের কাছে চলে যাও সকাল হলে সারাদিন ওখানে থাকো রাতে বাড়ি আসো আবার মাঝে মাঝে বাড়ি আসোই না। এটা কেমন কথা অন্তু যে তোমাকে কষ্ট দিলো তাকে তুমি আপন ভাবো আর আমরা তোমাকে ভালোবাসি আর আমাদের কেই তুমি পর ভাবো। বলো…
অর্ণব যেভাবে তাকে ধরেছে এতে তার ব্যাথা লাগছে কিন্তু তার থেকে সে অর্ণবের মনের ব্যাথা বেশি করে অনুভব করছে৷ হে সে তার বাবার কবরের কাছে যায় কিন্তু ভালোবেসে না, তেনার জন্য সে অনেক কিছু হারিয়েছে তার হিসাব চেতে যায়। সে বার বার মনকে মানায় সে আর যাবে না কিন্তু সে পারে না আজাদ মির্জা তার থেকে তার সব কেরে নিয়ে কি ভাবে শান্তিতে কবরে শুয়ে থাকতে পারে তা দেখতে যায়। অন্তু নরম করে বললো….
অন্তুঃ তুমি জানো কেন আমি সেখানে যাই? আর আমি কি করি না করি সব তো তুমি জেনে যাও তাইলে এতো টেনশন করো কেন তুমি? আমার পেছনে যে গোয়েন্দা লাগিয়েছো সে কি ঠিকমতো কাজ করছে না অর্ণব।
অন্তুর কথা অর্ণব দমে যায় সে অন্তুকে ছেড়ে দেয়। অর্ণবকে ছাড়তে দেখে অন্তু হাসে, সে জানে অর্ণব এখন আমতা আমতা করবে আমি কি ভাবে এতো সব জানি। অর্ণব তাই করলো সে বললো…
অর্ণবঃ তততুমি এটা কি ভাবে জানলে? নিশ্চয় প্রাপ্য বলেছে। আজ প্রাপ্যকে ছাড়বো না কি মনে করেছে কি সে, আমার সব কথা তোমাকে বলে দেবে ভাবির চামচা কোথাকার..
বলে চলে যেতে নিলে অন্তু তাকে ধরে তার দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। অর্ণব অন্তুর দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে আজ ৩ দিন পর এই মুখশ্রী সে দেখছে, হ্যাঁ অন্তু ঠিক বলেছে সে তার পেছনে গোয়েন্দা লাগিছে যাতে তার সব খবর রাখতে পারে। অন্তু বললো…
অন্তুঃ আমি মৃত্যু মুখ থেকে শুধু তোমার কারনে ফিরে এসেছি অর্ণব, তোমার ভালোবাসার জোরে এসেছি। তোমার পাগলামির কারনে এসেছি, আমি বেঁচে আচ্ছি কিন্তু তোমার দোয়া আর তোমার জেদের কারনে। আল্লাহ কিন্তু আমাকে তার কাছে নিতে পারেনি শুধুমাত্র তোমার জেদের কারনে।
অর্ণবঃ তাইলে তুমি এতোটা চেঞ্জ কেন হচ্ছো জান। যে তোমাকে আমার কাছ থেকে সারাজীবনের জন্য দূর করতে চেয়েছিলো তাকে কেন এতো গুরুত্ব দিচ্ছো। কেন তার জন্য আমাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করছো? কেন আনভিকে আর আমাকে কষ্ট দিচ্ছো? কেন ২মাস ধরে এই খাপছাড়া আচরণ করছো অন্তু কেন?
অন্তু অর্ণবের আরেকটু কাছে এসে বলো… কারন আমি আমার প্রশ্নে উত্তর পায়নি? কারন তার জন্য আমি আমার জীবনের মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছি? তিনি তো সব কষ্ট থেকে মুক্তি নিয়েছে কিন্তু আমি তো নিতে পারিনি সব থেকে মুক্তি? কেন আমি কেন আমি শুধু তার কারনে এতোটা বছর কষ্ট পেয়ে গেলাম? শুধু কি তার মেয়ে হবার কারনে না-কি অন্য কিছু? আমার কাছে এসবের উত্তর নেই অর্ণব নেই, আমার উত্তর গুলো চাই।
বলে কান্না করতে লাগলো। অর্ণব অন্তুর কান্না করতে দেখে সে তাকে তার বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে অন্তু ও তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো৷ অর্ণব সব বোঝে, সে অন্তু কষ্ট অনুভব করতে পারে কিন্তু তার সব প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই আর না অন্য করারো কাছে আছে। অর্ণব বললো…
অর্ণবঃ জান উনি মারা গেছেন তাই সব ভুলে যাও আর নতুন করে সব গুছিয়ে নাও। আমি আনভি তোমাকে মিস করছি প্লিজ আমাদেরকে কষ্ট দিও না তার জন্য।
অন্তুঃ অর্ণব আমি আর কখনো তার কাছে যাবো না আজই শেষ ছিলো তার কাছে যাও। আমি কাল থেকে নতুন করে বাঁচবো, আমি নতুন আশা পেয়েগেছি বাঁচার জন্য। আমি তোমাকে আনভিকে আর কষ্ট দেবো না সত্যি বলছি। তোমাদের কে নিয়ে বাঁচাবো নতুন করে, আমি আনন্দ করবো, হাসবো, খুশি থাকবো। দুঃখ, কষ্ট, কান্না কি সব ভুলে যাবো সত্যি বলছি।
অন্তুর কথা শুনে অর্ণব খুশি হয়। অন্তুর সুবুদ্ধি হয়েছে তার কাছে এটাই যথেষ্ট। অর্ণব বললো… আনভির সাথে কথা হয়েছে?
অন্তুঃ সে রাগ করে আছে তার মাম্মার ওপর। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই মানতে চাইনি। অরু কাছে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
অর্ণবঃ ঠিক আছে আমি দেখে নেবো। এখন কান্না থামাও আমার খিদে লেগেছে খুব, সকাল থেকে কিছু খাইনি তোমার ওপর রাগ করে।
অন্তু অর্ণবের থেকে সরে এসে চোখ মুছে বলো… তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।
অর্ণব তাই করে সে ফ্রেশ হতে চলে যায় আর অন্তু খাবার আনতে নিচে চলে যায়। অর্ণব ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অন্তু খাবার নিয়ে বসে আছে, সে গিয়ে বসলে অন্তু নিজের হাতে তাকে খাইয়ে দেয় সাথে নিজেও খেয়ে নিলো। অন্তু প্লেট থুয়ে হাত ধুয়ে এসে দেখে অর্ণব বেড ঠিক করছে, অন্তু এগিয়ে গেলে অর্ণব লাইট অফ করে অন্তুকে তার বুকের ওপর শুয়ে তার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো….
অন্তুঃ অর্ণব তুমি কি রেগে আছো আমার ওপর?
অর্ণবঃ না রাগিনি কিন্তু কষ্ট লেগেছে। তুমি আজাদ মির্জা জন্য আমাদের কে ভুলে ২ মাস কি ভাবে এমন করতে পারলে তাই।
অন্তুঃ অর্ণব আমি আমার মধ্যে ছিলাম না তুমি জানো আমার কাছে তুমি, আনভি আমার সব। কিন্তু কি করবো আব্বু দেওয়া আঘাতগুলো কিছুতেই আমি ভুলতে পারছিলাম না আর তার করা শেষ আঘাতটাতে তো আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম তাই এসব করে ফেলেছি সরি আর হবে না।
অর্ণবঃ আমি জানি তুমি সেই আঘাতটা নিতে পারোনি। আমি কিছু মনে করিনি, তুমি ঘুমাও।
অন্তুঃ অর্ণব প্লিজ একটু ভালোবাসবে। কষ্ট হচ্ছে আমার?
অন্তু আদর মাখা আবদার অর্ণব ফেলতে পারে না, সে সব সময় অন্তুকে যে কোনো আবদার পূরন করে তাই আজো তার আবদার পূরন করে। ডুব দেয় সেই ভালোবাসার সাগরে যেখানে পৃথিবীর সকল সুখের অনুভূতি আছে…..
_______________________________________
রাত,৩ঃ৩০
নিস্তব্ধ নিবির শেষে এক ভালোবাসাময় মূহুর্ত কাটিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আর শান্তিময় স্থানে শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে অন্তু। অর্ণব এক দৃষ্টিতে অন্তুর দিকে তাকিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে, মেয়েটা কেমন শুকিয়ে গেছে কিন্তু মুখের লাবন্যতা এখনো কমেনি, সেই আগের মতোই রইয়ে গেছে। আগের মতো হাসে, খেলে কিন্তু তার মধ্যে কেমন একটা ভয় কাজ করে এই বুঝি তাদের সাথে কিছু ঘটে যাবে ভেবে কিন্তু কিছু ঘটেনা আর ঘটবেই কি করে যে ঘটাবে সেই ব্যক্তি তো আজ নেই মারা গেছে ২মাস আগে তার করার সব পাপের শাস্তি তিনি পেয়ে গেছেন। তার ছেলে মেয়ে, তার পরিবার সবাই তো তেনাকে ঘেন্না করে আর সেই ঘেন্না নিয়ে তিনি বাচতে পারেনি চলে গেছে না ফেরার দেশে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অর্ণব ভাবে আজাদ মির্জা চলে গেলেও তার করা একটা আঘাত অন্তুকে আজও বয়ে বেরাছে, তাই তো সে ২মাস ধরে বাড়িতে ঠিকমতো থাকতে পারে না, কেমন গুমরে থাকে আর আজাদ মির্জা কবরের কাছে গিয়ে বসে তাকে প্রশ্ন করে কিন্তু সে জানে সে উওর পাবে না কিন্তু তাও সে যায়। অর্ণব অন্তুর কাজে বিরক্ত, রাগ হলেও সে কিছু করতে পারে না, মেয়েটা যে তার দুর্বলতা শতো রাগ হলেও কিছু করতে পারে না তাই সব মুখ বুজে সহ্য করে নেই। অর্ণব অন্তুর গায়ে পাতলা কম্বলটা দিয়ে তার মুখে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে ভাবে ৬মাস আগে যখন ডক্টর বলো অন্তু মারা গেছে তখন অর্ণব একেবারে ভেঙ্গে যায় কিন্তু সে কিছুতেই তার অন্তুকে যেতে দেবে না বলে হসপিটালের কি পাগলামিটাই না করেছিলো ভাবতেও তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফটে….
৬মাস আগে,,,
ডক্টর কথা শুনে সবাই যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়, বিমূঢ়, স্তব্ধ তখন অর্ণব দৌড়ে কেবিনের ভেতরে চলে যায়। তাকে এভাবে যেতে দেখে সবাই তার পিছু পিছু কেবিনে চলে যায়, যেয়ে দেখে অর্ণব অন্তুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর কি কি যেন বলছে। এদিকে, অর্ণব অন্তুকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত কন্ঠে বললো…
অর্ণবঃ জান প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আর আনভি তোমার জন্য কান্না করছে সে তার মাম্মার জন্য কান্না করছে। তুমি তো আনভির কান্না সহ্য করতে পারো না তাইলে এখন এখানে নিশ্চুপ হয় শুয়ে আছো কেন? প্লিজ এভাবে শুয়ে থেকো না, আমার সাথে কথা বলো, আনভিকে আদর করো প্লিজ। অন্তু তুমি এই ভাবে আমাকে একলা ফেলে চলে গেলে আমি ও আনভিকে একলা ফেলে তোমার সাথে চলে যাবো অন্তু….
শেষ কথাটা জোরে বলো অর্ণব। অন্তু জন্য অর্ণবের পাগলামি দেখে সবাই কান্না করছে তারা জানে ছেলেটা অন্তুকে পাবার জন্য অনেক কষ্ট করেছে, অনেক লড়াই করেছে তাকে তার কাছে রাখতে। তাইলে আল্লাহ কেন বার বার শুধু তাদের সাথে এমন করবে কেন? অন্তুর বাড়ির সবার চোখে জল। ডক্টর, নার্স সবাই অর্ণবকে দেখে অবাক একটা ছেলে কি ভাবে একটা মেয়েকে নিজের অস্তিত্ব সাথে মিশিয়ে ভালোবাসতে পারে। আনভি কান্না করতে করতে বললো….
আনভিঃ পাপা মাম্মা কথা বলছে না কেন আমার সাথে। পাপা মাম্মামের কি হয়েছে তুমি কান্না করছো কেন?
অর্ণব আনভির কথা শুনে অন্তুকে তার বুকের থেকে সরিয়ে তার মুখের সামনে নিয়ে এসে জোরে জোরে বললো…
অর্ণবঃ তোমার শান্তি লাগচ্ছে তো আমাকে আর আনভিকে কাদিয়ে। কেন কাদাছো আমাদেরকে এই ভাবে? কি শান্তি পাচ্ছো অন্তু? আমার মেয়ে কান্না করছে তোমার জন্য শুধু মাত্র তোমার জন্য এর ফল কিন্তু ভালো হবে না অন্তু ভালো হবে না।
প্রাপ্যঃ ভাইয়া ভাবি আর নেই? তুমি প্লিজ শান্তো হও..
প্রাপ্য কথা পুরো হতে দিলো না অর্ণব তার আগে বাজখড়া গলায় বললো…. যা বলছিস বলছিস আর না, অন্তুর কিছু হয়নি তাই বেশি কথা বলবি না তুই। আমার অন্তু এখনি আমার সাথে কথা বলবে তাই চুপ থাক।
অর্ণবের কন্ঠে স্বর শুনে সবাই চুপ হয়ে যায় কেউ কথা বলার সাহস পাই না। অর্ণব আবার বললো…
অর্ণবঃ তুমি আমার কথা শুনবে না তাই তো, তাইলে কি ভাবে বলে তুমি শুনবে বলো কিভাবে বলে তুমি আমার কাছে ফিরবে। অন্তু তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি আমার আর আনভির সাথে থাকতে চাও, ভালোবাসতে চাও, তাইলে কি ভাবে আমাদের কে রেখে তুমি চলে যাও কিভাবে। অন্তু তোমার দু’টো পায়ে ধরি প্লিজ আমাকে মাঝ রাস্তায় একলা ফেলে যেওনা আমি এটা মানতে পারবো না আমি মরে যাবো না হলে। প্লিজ জান প্লিজ কাম ব্যাক প্লিজ…
কথাগুলো বলে অন্তুর সারামুখে চুমু দিতে লাগে পাগলের মতো। তার পাগলামি দেখে কেউ কথা বলার ভাষা পায় না। অর্ণব শক্ত করে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে তার কানের কাছে বললো…
অর্ণবঃ তোমাকে এতো মিনতি করে বলাম, কিন্তু তুমি শুনলে না। তাইলে তোমাকে আমার জীবনে রাখতে আমি সব করতে পারি, তুমি আমাকে একলা ফেলে যেতে পারবে না কিছুতেই না তাই আমি ও তোমার সাথে যাবো। একটা কথা কান খুলে শোনো আমি জানি তুমি সব শুনছো তাই বলছি, তুমি মরলে আমি ও মরবো আর তুমি বাচলে আমি ও বাচবো তাই তুমি ডিসিশন নাও তুমি কি করবে, আর হ্যাঁ আমরা দুজনে চলে গেলে আনভি কিন্তু অনাথ হবে এটা মনে রেখো। (কিছু সময় চুপ থেকে বললো) ওকে তুমি ডিসিশন নেই যখন ফেলেছো তুমি আমার সাথে বাচবে না তাইলে আমি আসছি তোমার সাথে যেতে ওয়েট…
বলে অর্ণব অন্তুকে শুয়ে যেই উঠতে যাবে তখন তার হাতে টান পরে। হাতে টান পরতে সে থমনে যায় পিছু ঘুরে যা দেখে তাতে তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে। এদিকে অর্ণবের শেষ কথায় অন্তুর হার্ট বিটের গতি বাড়তে থাকে অর্ণব তাকে ছাড়ে যেতে নিলে সে তার হাত ধরে পিটপিট করে চোখ খুলে অর্ণবের দিকে তাকায়। সবাই অন্তুকে রিস্পন্স করতে দেখে অবাক, বিস্ময়, বিস্মিত হয় সাথে তাকে ফিরতে দেখে খুশি হয়। ডক্টর, নার্স এই মিরাকেল দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়, তারা ভাবতেও পারেনি এমনটা হবে কিন্তু তারা খুশি একটা ভালোবাসার জোরাকে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরতে দেখে। অর্ণব অন্তুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বলে…
অর্ণবঃ জান তুমি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। এমনটা আর করো না প্লিজ আমার তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারনো না। আমি সত্যি মরে যেতাম তুমি না ফিরলে এমনটা করো না।
অন্তু অনেক কষ্টে বললো… আ..ন..ভি
অন্তুর কথা শুনে অর্ণব তাকে ছেড়ে দিয়ে আনভিকে নিয়ে এসে তার কাছে দিলে সে তাকে আদর করে। আনভি তার মাকে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে রাখে, যেন তাকে ছাড়লে সে আবার হারিয়ে যাবে। অর্ণব তাদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে রাখে, অন্তু এই ছোট পরিবারকে আবার ফিরে পেয়ে খুশি, সে তো মনে করেছিলো সে আর ফেরে আসতে পারবে না কিন্তু আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে এটাই হাজার শুকরিয়া। তাদেরকে এভাবে দেখে সবাই বাইরে চলে আসে, ডক্টর মাহিয়া সবাইকে এই মিরাকেলর কথা বললে বলে অর্ণবে ভালোবাসার জোরে অন্তুকে ফিরতে বাধ্য করেছে তার কাছে আসতে। তারপরে অর্ণবের নিজ প্রচেষ্টা অন্তুকে সুস্থ করে তুলতে লাগলো কিন্তু আজাদ মির্জা মৃত্যুতে সে ভেঙ্গে পরে আর এইসব করে…
অন্তুর খামচানিতে অর্ণবের ভাবনা কাটে। অর্ণব তাকিয়ে দেখে অন্তু হাতের নখ তার বুকে গিয়ে লেগেছে তাই তার ব্যাথা লেগেছে। অর্ণব হেসে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে বললো…
অর্ণবঃ তুমি আসলে একটা পাগল আর আমাকেও তোমার পেছনে পাগল করে রেখেছো। সারাদিন কষ্ট দাও আবার রাতেও ঘুমের মাঝে খামচাও, ভালোই পারো তুমি। খামচাও তুমি আমিও তো খামচায় তাই কি। জান তোমার হারানোর ভয়ে তোমার সাথে এমন করি তুমি কষ্ট পেওনা প্লিজ। একবার মৃত্যুর মুখ থেকে তোমাকে পেয়েছি তাইতো তোমাকে হারানোর ভয় আমার মনে যেকে বসেছে। আই লাভ ইউ জান…
অন্তু ঘুমের ঘড়ে বললো… আই লাভ ইউ অর্ণব। অন্তুর ঘুম জোরানো কথা শুনে অর্ণব হাসে সে জানে অন্তু তাকে ঘুমের মধ্যে বলছে কিন্তু তাও তাকে জেগে থেকে বলার থেকে এখনকার বলার মাঝে শান্তি বেশি লাগছে। অর্ণব অন্তুর কপালে গাঢ় চুমু দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুৃমায়…
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬৮
মুখের ওপর গরম উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পরতেই অন্তু নড়েচড়ে উঠে কিন্তু আবার ঘুমিয়ে যায়। তার এতো চোখে ঘুম সে তাকিয়ে দেখতে ও পারছে না। কিছুক্ষণ পর এবার তার মুখে কেউ চুমু দিয়ে আদরতে লাগলো একের পর এক, এবার সে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারলো না সে হালকা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আনভি তাকে আদর করছে। হঠাৎ আনভিকে দেখে অন্তু অবাক হয় কেননা কালকে আনভি তার সাথে কথা বলেনি কিন্তু আজ সকালে সে তাকে আদর করছে তাও সে যখন ঘুমাছে তখন। অন্তু উঠতে নিলে আনভি তাকে জড়িয়ে ধরে তার গলায় মুখ দিয়ে থাকে, অন্তু আনভিকে জড়িয়ে ধরে উঠে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো…
অন্তুঃ মা তুমি কি এখনো মাম্মার সাথে রেগে আছো। সরি মা আমি আর কোথাও যাবো না। এখন থেকে তোমার আর পাপার সাথে থাকবো সরি মা।
আনভিঃ মাম্মা আমি রাগ করিনি তুমি আর যেওনা। আমার কষ্ট হয় তুমি চলে গেলে।
অন্তু আনভির সারামুখে চুমু দিয়ে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে… আমি কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে সত্যি মা।
আনভি শক্ত করে অন্তুকে জড়িয়ে ধরে থাকলো। আজ তিনদিন পর সে তা মাম্মার আদর পেলো, জড়িয়ে ধরলো তাকে সে এই টুকুতেই খুশি যে তার মাম্মা আজ তার পাশে ছিলো আর তার মাম্মাতাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। হ্য এই কাজ অর্ণবের সে জানি আনভি অন্তুর ওপর অভিমান করেছে তাই সে রাতে আনভিকে তাদের কাছে নিয়ে আসে আর সকালে আনভির ঘুম ভাঙতেই অন্তুকে দেখে সে খুশি হয়ে যায় আর সব ভুলে আদর করতে লাগলো। এদিকে অর্ণব দরজায় দাড়িয়ে মা-মেয়ের মিলবন্ধন দেখছে। অন্তু অর্ণবকে দেখে ইশারায় থ্যাঙ্ক ইউ দিলো, অর্ণব তা দেখে মুচকি হেসে তাদের পাশে এসে বললো…
অর্ণবঃ আম্মু শুধু মাম্মাকে আদর করলে হবে আমাকে কে করবে শুনি?
আনভি অন্তুকে জড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো… তোমাকে আমি আর মাম্মা মিলে আদর করবো আসো আমাদের কাছে।
অর্ণব অন্তু চমকে যায় আনভির কথা শুনে। তারা ভেবে পায় না আনভি এতো পাকা পাকা কথা জানলো কি করে। অর্ণব গিয়ে আনভিকে অন্তুর কাছে থেকে নিয়ে তাকে কাতুকুতু দিয়ে বললো… ওরে দুষ্টু মেয়ে তুমি অনেক পাকা হয়ে গেছো। দাড়াও তোমাকে আজ দেখাছি?
কথাগুলো বলে আরো জোরে জোরে আনভিকে কাতুকুতু দিতে লাগলো আর হাসাতে লাগলো। এদিকে আনভিও খিলখিল করে হাসছে, অন্তু দুজনকে হাসতে দেখে মনে মনে বললো… আব্বু আপনার জন্য আমি সব কিছু হারিয়েছি তাই আপনাকে ক্ষমা করতে পারছি না কিন্তু আপনার আত্মা শান্তি কামনা করি। অর্ণব তুমি আমার পাশে না থাকলে হয়তো আমি এতো এতো ধাক্কা সামলাতে পারতাম না, তুমি আছো বলে আমি ভালো আছি, বেচে আছে, সুখে আছি, ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে ভালোবাসার জন্য আর আনভিকে দেবার জন্য। আমাকে এতো খুশি দেবার জন্য আজ আবার তোমাকে আমি একটা গিফট দেবো সেটা পেয়ে তুমি অনেক খুশি হবে আশা করি।
অর্ণবের ধাক্কায় অন্তুর হুস আসে। অন্তু অর্ণবের দিকে তাকালে সে তাকে জিজ্ঞেস করে.. কি হয়েছে, অন্তু মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলে। অর্ণব অন্তুকে আর আনভিকে জড়িয়ে ধরে বলে….
অর্ণবঃ ভালোবাসি দুজনকে। আই লাভ বোথ ওফ ইউ..
অন্তু+আনভিঃ আই লাভ ইউ টু..
বলে তিনজনে হাসতে লাগলো। অনেক কষ্টের পরে আজ তাদের জীবনে সুখের মুখ দেখেছে। আর কোনো দুঃখ, কষ্ট, বিচ্ছেদ কিছু নেই তাদের জীবনে এখন আছে শুধু অফুরন্ত ভালোবাসা, সুখ, হাসি। একটা দুঃখের সময় পেরিয়ে এসে তারা এক হয়েছে, তাদের ভালোবাসার যেন এভাবেই ভালো থাকে, তাদের ভালোবাসার দিকে এখন নজর দেবার মতো কেউ নেই। তাদের ভালোবাসা এভাবেই থাকবে অজীবন…..
______________________________________
দুপুর-১ঃ৩০টা
চৌধুরী বাড়ির সবাই আজ এক সাথে দুপুরে খেতে বসেছে। অন্তু আজ নিজের হাতে রান্না করেছে সবাইকে খাওয়ানোর জন্য অরনি তাকে হেল্প করেছে কিছু কাজের জন্য। আজ মেন্যুতে খাশির মাংস, ইলিশ মাছের সরিষাবাটা আর ইলিশ মাছ ভাজি, পোলাও, ডাল, বেগুন ভাজি, রোস্ট আর পায়েস মিষ্টি। সবাই হেসে খেলে খেতে লাগলো অন্তু সবাইকে পরিবেশন করছে। প্রাপ্য ইলিশ মাছের সরিষাবাটা খেয়ে বললো…
প্রাপ্যঃ ভাবি ইলিশ মাছটা আজ খেতে হেবি ভালো লাগছে। অনেক দিন পর আপনার হাতের রান্না খেয়ে পেটা ভরে গেলো, না হলে এতো দিন যা খেয়েছি বলার বাইরে।
প্রাপ্য কথায় অরনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললে… হ্যাঁ আমার রান্না এতো খারাপ তাইলে নিজে রেঁধে খেতে পারো না। কে খেতে বলেছিলো আমার রান্না হে..
অরনিকে রাগ করতে দেখে প্রাপ্য বুঝে গেছে আজ তার কপালে শনি আছে তাই আর কথা না বাড়িয়ে সে চুপচাপ খেতে লাগলো। প্রাপ্যকে ভেজে বিড়াল হতে দেখে সবাই হু হা করে হাসতে লাগলো, আর অরনি মুখ ফুলিয়ে রাখলো তা দেখে অন্তু প্রাপ্য কে বললে…
অন্তুঃ ভাইয়া এটা ঠিক না কিন্তু আমার বুনু আমার থেকে ভালো রান্না পারে এখন বুঝলেন।
অরনিঃ না দিদিয়া আমি তোমার থেকে ভালো পারিনা কিন্তু এতোটাও খারাপ হয়না যে একজন মানুষ খেতে পারে না হু। দিদিয়া খেতে বস আনভিকে দেখ সে এখনো ভাতে হাত দেয়নি তুই না খাইয়ে দিলে সে খাবে না।
অরনির কথা শুনে সবাই আনভির দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সে ভাতে হাত দেয়নি। অর্ণব অন্তুকে বলে… অন্তু আনভিকে খাইয়ে দাও। যা বাকি আছে মালা করে দেবে। অরনি তুমি ও বসো।
অরনি অর্ণবের কথায় প্রাপ্য বাসে গিয়ে বসলো। অন্তু তাই করে সে বসে আনভিকে খাইয়ে দিতে লাগলো আর আনভি লক্ষীমেয়ের মতো খেতে লাগলো। তাদের খাবার মাঝে মি.চৌধুরী বললো…
মি.চৌধুরীঃ অর্ণব তোমার কাছে অন্তু দিদুন ফোন করেছিলো কি?
অর্ণবঃ না তো বাবাই, কেন?
মি.চৌধুরীঃ তিনি ফোনে বলেন আজাদ মির্জা জন্য তিনি না-কি মসজিদে মিলাদ রেখেছে তাই যেতে বললো।
মি.চৌধুরী কথা শুনে অন্তুর হাত থেমে যায় এদিকে অর্ণব অন্তু দিকে তাকিয়ে আছে তার রিয়েকশন দেখার জন্য কিন্তু অন্তু মি.চৌধুরী কথা না শোনার মতো ভাব নিয়ে আনভিকে খাইয়ে দিতে লাগলো আর তার সাথে গল্প করতে লাগলো। অন্তুকে নরমাল দেখে অর্ণব শান্তি পায় সে মনে মনে ভয় পাচ্ছিল না জানি অন্তু কেমন রিয়েক্ট করে এই কথা শুনে, কিন্তু কিছু না হওয়ায় সে খুশি হয় এই আজাদ মির্জা চেপ্টা তাদের জীবন থেকে একেবারে দুর হয়েছে ভেবে। অর্ণব মাথা নাড়িয়ে না বলে দেয় এতে সবাই বুঝতে পারে অর্ণব এই বিষয়ে কথা বলবে না তাই কেউ কিছু না বলে খেতে লাগে। সবাই খেয়ে চলে গেলে অর্ণব অন্তুকে খাইয়ে দিতে লাগলো, সে খেতে চাইনি কিন্তু অর্ণবের রাগি চোখ দেখে খেতে বাধ্য হয়। অন্তু অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে অর্ণব বলে…
অর্ণবঃ জান এভাবে আমাকে গিলে খাওয়া বাদ দিয়ে খাবারটা খাও তাইলে পেট ভরবে আমাকে দেখলে পেট ভরবে না তোমার।
অন্তুঃ আমার পেট খাবারে ভরলেও আমার মন তোমাকে দেখে ভরবে বুঝলে আনভির পাপা।
অর্ণব অন্তুর জবাবে হাসে কিন্তু কিছু বলে না। খাবারে শেষ লোকম মুখে তুলে দিয়ে অর্ণব হাত ধুয়ে অন্তু ঠোঁটের লেগে থাকা এঁটো মুখে দিয়ে উঠতে নিলে অন্তু তার হাত ধরে আটকায়। অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে যে অন্তু তাকে কি বলবে, অন্তু পানি খেয়ে বললো…
অন্তুঃ অর্ণব তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
অর্ণবঃ হ্যাঁ বললো।
অন্তুঃ এখন না রাতে বলবো
অর্ণবঃ ঠিক আছে। এখন চলো ঘুমাবে আজ অনেক কাজ করছো তুমি।
অন্তু মাথা নাড়িয়ে অর্ণবের সাথে যেতে নিলে অর্ণব তাকে কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ কোলে তুলে নেয়াতে অন্তু অর্ণবের শার্টের ওপরে অংশ চেপে ধরে অর্ণবের দিকে জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে তাকায় যে কেন তাকে কোলে নিলো সে?। অন্তুর তাকানো মানে বুঝলে অর্ণব বাঁকা হেসে নিজের রুমের দিকে যায় অন্তু শুধু নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকে সে জানে অর্ণব তাকে ছাড়বে না তাই কিছু বললো না….
______________________________________
আদি তুমি ঠিক আছো, না মানে আয়ান ভাইয়ার আগে তুমি চলে এলে তাই বলছি ওখানে কি কিছু হয়েছে… আদিবা ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বলো আদিকে। আদি পানি খেয়ে আদিবার মুখে দিকে তাকালে সে বুঝতে পারে আদিবা তাকে ভয় পাচ্ছে তাই সে আদিবাকে গম্ভীর স্বরে বললো…
আদিঃ সব ঠিক আছে আয়ান দিদুনকে নিয়ে আসছে আর আমি আগে চলে এসেছে তাই। তুমি খেয়েছো দুপুরে?
আদিবা ভয় কেটে গেলো আদির একটা কথায়, সে খেয়েছে কি না সেটা আদি জানে তাও সে তার কাছে জিজ্ঞেস করছে ভেবে তার মানে সে ভয় নেই এখন। আদিবা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে, আদি তা দেখে বেডে শুয়ে পরে উল্টো দিকে হয়ে। আদির আচারন দেখে আদিবার খারাপ লাগলো কিন্তু কিছু বলো না সে জানে তার কষ্ট হলে আদি রাগবে তাই তাকে রাগাতে চায় না, সে চলে যেতে নিলে আদি শান্ত কন্ঠে বললো..
আদিঃ আদু রুমের দরজা জানালায় বন্ধ করে আমার কাছে এসো।
আদির কথা শুনে আদিবা বললো… কেন?
আদিঃ তোমাকে যা বলছি তাই করো। নো মোর ওয়াড
আদিবা আর কথা বাড়ায় না সে তাই করে আদির কথা মতো সব জানালা দরজা বন্ধ করে আদি কাছে আসলে আদি আদিবার হাত ধরে তার কাছে শুয়ে তার দিকে ঝুকে আসলে আদিবা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেই। আদিবার অবস্থা দেখে আদি হাসতে লাগলো মনে মনে কিন্তু কিছু বলো না। আদিবা কিছু বুঝতে না পেরে চোখ খুলে আদিকে ওভাবে তার দিকে ঝুকি থাকতে দেখে। আদি বললো…
আদিঃ তুমি কি আমার ওপর রেগে আছো কোনো কারনে আদুমনি?
আদিবা মানে না বুঝে বললো… মানে?
আদিঃ এই যে বিয়ের পর থেকে তোমার সাথে ঠিক মতো কথা বলি না, তোমার ওপর রাগ করি, ভালোবাসি না, কষ্ট দিই এসব কাজের কারনে কি তুমি আমার ওপর রেগে আছো তাই বলছি।
আদিবা আদির কথা বুঝতে পেরে বললো… আমি দোষ করেছি বলে তো তুমি এমনটা করছো তাইনা, আমি যদি দোষ না করতাম তাইলে এমনটা করতে না তুমি। আমি সত্যি কষ্ট পাচ্ছি কিন্তু সেটার মধ্যে আলাদা সুখ আছে যানো কি সুখ (আদি না বলে মাথা ঝাকায়, সে বলে) তুমি রাগ করেছো কিন্তু আমাকে তোমার সাথে রেখেছো আমাকে ছেড়ে দাওনি। তুমি আমাকে কষ্ট দাও, কাদাও কিন্তু আমার কষ্ট দেখলে তুমি ও কষ্ট পাও আমি জানি। তুমি আমাকে ভালোবাসো বলো না কিন্তু প্রতিরাতে আমাকে তোমার বুকে ঠাঁই দাও এতে আমি সব ভুলে যায়। তুমি আমাকে তোমার থেকে দূরে রাখো কিন্তু আমার আশে পাশে থেকে খেয়াল রাখো। তাইলে আমি তোমার ওপর রাগ কেন করবো…
আদিবা কথাগুলো বলার সময় তার চোখের কোন থেকে পানি গড়িয়ে পরে। এদিকে আদি আদিবার উত্তর শুনে তার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে সে বুঝতে পারে না মেয়েটাকে সে এতো কষ্টে দেয় কিন্তু সে কিছু মনে করে না কিন্তু আদিবা তার মনের কথা আনায়শে সব বুঝে নেই সে কি বলছে, করছে, তার ভেতর কি চলছে। আদি আদিবার চোখের জল মুছে তার কপালে গাঢ় ভাবে ভালোবাসার স্পর্শ দেয়, আদির স্পর্শে আদিবা চোখ বন্ধ করে নেই। আদি বলে…
আদিঃ সরি আদুমনি সরি। কি করবো বলো তোমার আমার প্রতি সব অন্যায় আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু আমার প্রতি তোমার অবিশ্বাস আমি মানতে পারছি না সরি। আমি আর তোমাকে কষ্ট দেবো না সত্যি, তোমাকে কষ্ট দিলে আমি বেশি কষ্ট পাই এই কয়েক মাসে বুঝতে পেরেছি। আদুমনি আমি তোমাকে সব সুখ, ভালোবাসা, খুশি দেবো। কখনো কষ্ট, দুঃখ কিছু ছুতে দেবো না তোমাকে।
আদিবা আদিকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে বললো… আদি প্লিজ এবারে মতো ক্ষমা করে দাও আর কখনো এমন করবো না সরি।
আদিঃ সুসস কান্না করবে না তুমি। আমি এখন তোমাকে ভালোবাসবো তাই চুপ থাকো, অনেক হয়েছে আর না। আমি বাবা ডাক শুনবো তাই সব ভুলে এখন এই কাজে মন দিতে চায়, আদিবা সেই ইচ্ছা কি তুৃমি পুরোন করবে না বললো…
আদিবাঃ পুরোন করবো তোমার সব ইচ্ছা আমি পুরোন করবো। ভালোবাসি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদি…
আদিঃ আই লাভ ইউ আদুমনি।
সব অভিমান ভুলে আবার ভালোবাসার একটা সময় উপভোগ করলো আদি আদিবা। সব কিছুর শেষে তারা বলতে পারবে তারা তাদের কষ্টের সময় পার করে তারা এখন সুখের সময় উপভোগ করছে। সবার জীবন আস্তে আস্তে সুখময় হতে লাগলো… কারো জীবন এখন আজাদ মির্জা নামক দানব নেয়ে যে তাদের জীবনকে নরক করবে। তারা এখন একে অপরের সাথে মিলে মিশে ভালোবেসে থাকে আর ভালোবাসার সময় উপভোগ করে। মন দিয়ে সময় কাটাছে, সংসার করছে, আরো অনেক কিছু করছে। তারা সবই এমন সুখেই থাকবে…
#তুমি আসবে বলে
#অপেক্ষার প্রহর
#Sondha Halder
#পর্ব-৬৯
অর্ণব আর হচ্ছে না তো, প্লিজ এবারের মতো ছেড়ে দাও পরের বার ভালো করে করবো প্লিজ আনভির পাপা…. অতি আকুতির সাথে কথাগুলো বললো অন্তু। অন্তুর কিউটি ফেস করে অর্ণবকে তার কথা মানানোর প্রচেষ্টা সে সফল হলো না, অর্ণব ভ্রু কুচকে বললো…
অর্ণবঃ হয়েছে তোমার নাটক শেষ তাইলে এখন করা যাক কাজটা। যেটা নিয়ে সন্ধ্যা থেকে বসে এখন রাত ৯টা বাজছে কিন্তু সমাধান হচ্ছে না সেটা সমাধানটা করি জান….
অর্ণবের কথা শুনে অন্তু মুখ ফুলায়, অন্তুর মুখ ফুলানো দেখে অর্ণব ধমুক দিয়ে বললো… এই মুখ ফুলাবে না তুমি। আমি জানি এখন তোমার নাটকে কোনো কাজ হচ্ছে না বলে তাই মুখ ফুলিয়ে কান্না করবে তাই তো কিন্তু সেটাতো আমি হতে দিচ্ছি না তো জান। চুপচাপ ম্যাথটা কমপ্লিট করও তুমি না হলে শাস্তি পাবে কঠিন শাস্তি।
অর্ণবের কথা শুনে অন্তু মুখ ভাংয়ে বললো… কঠিন শাস্তি দেবে আমাকে বলে সে। এই তোমাকে কে বুদ্ধি দিয়েছিলো আমাকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করাতে। আমি কি একবারো বলেছিলাম আমাকে পাড়াশোনা করাও বলিনি তো তাইলে কি মনে করে আমাকে পাড়াতে গেলে তুমি। আমি ছোট একটা জান সেই কবে এসব ম্যাথ পড়ে এসেছি এগুলো কি আমি আর পারি যে তুমি বলে আর আমি ঠেং ঠেং করে, করে দেবো হু….
অর্ণব হতাশ হয় অন্তুর কথায়। সে তো অন্তুর ভালোর জন্যই তো তাকে আবার পড়াশোনা করাতে চেয়েছিলো। আসলে ৩ মাস আগে অর্ণব একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে অন্তুকে ভর্তি করিয়ে দেয় সে শুধু এক্সাম দেবে গিয়ে আর বাকি পড়াশোনা অর্ণব তাকে করিয়ে দেবে। অর্ণব জানতো অন্তু ভালো স্টুডেন্ট কিন্তু সে তো এটা জানতো না অন্তু এই কয়েক বছরে তার পড়াশোনা সব গোলায় দিয়েছে তাইতো আজ সে একটা ম্যাথ দিয়েছিলো কিন্তু সেটা অন্তু পারেনি। অর্ণব অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললো…
অর্ণবঃ জান আমি তো তোমার ভালোর জন্য পড়াশোনা স্টার্ট করিয়েছি বললো। তুমি তো আগে অনেকটা পড়াশোনা প্রতি মনোযোগী ছিলে কিন্তু মাঝে কিছু কারন বসতো হয়নি পড়াশোনা তাই তো এখন করাতে চাচ্ছি কিন্তু তুমি তো সব খেয়ে বসে আছো। জান আমার জন্য শুধু আমার জন্য গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করও প্লিজ…
অর্ণবের আবদারটা অন্তু ফেলতে পারে না সে আবার ম্যাথটা করতে নিলো তা দেখে অর্ণব মুচকি হাসে। অনেক চেষ্টার পরে অন্তু লিফো, ফিফো করতে পেরেছে তা দেখে অর্ণব খুশি আস্তে আস্তে সব পারবে সেই আশা করে। অন্তু ম্যাথটা করে বিশ্বজয়ী হাসি দিয়ে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে বলে….
অন্তুঃ আমি তোমার আশা পূরন করবো প্রমিস…
অর্ণব অন্তুকে জড়িয়ে ধরে তার গলায় চুমু দিয়ে বললো… আমি জানি আমার জান আমাকে হতাশ করবে না। সে আমার কথা রাখবে, আমি কালকে একটা শিক্ষক এপোয়েন্ট করছি তাইলে তুমি ভালো ভাবে বুঝতে পারবে..
অন্তুঃ না। আমার টিচার লাগবে না আমার এই টিচার বর হলেই চলবে। তুমি আমাকে পড়াশোনা করিয়ে দিও তাই হবে।
অর্ণবঃ কিন্তু আমি কি করে? আমি সেই কবে পড়ে এসেছি এসব আমি আর পারবো না জান। জেদ করে না আমি টিচারকে কাল আসতে বলেছি তো।
অন্তু জেদ ধরে বললো… না মেনে না তুমি পড়ালে পড়বো না হলে না।
অর্ণব হতাশ হয়ে হ্যাঁ বলে কারন সে জানে অন্তুর একবার একটা জিনিস নিয়ে জেদ ধরা মানে সে সেই জিনিসটা সে করেই ছাড়বে তাই আর সে বেশি কিছু বললো না। অন্তু খুশি হলো অর্ণবের কথায়, অর্ণব অন্তুকে জড়িয়ে ধরেই বললো…
অর্ণবঃ জান তুমি দুপুরে বলে আমাকে কিছু বলবে রাতে। তা কখন বলবে আমাকে সেই গোপন কথাটা।
অর্ণবের কথায় অন্তুর মনে পরে তাকে অর্ণবকে কিছু কথা বলতে হবে। অন্তু জানে অর্ণব কথাটা শুনে কি রিয়েকশন দেবে তাও সে সাহস করে বললো…
অন্তুঃ আমি যা বলবো সেটাতে তোমার রিয়েকশন খারাপ আসবে কিন্তু আমি সেটা তাও বলতে চাই।
অন্তুর কথায় অর্ণব বুঝতে পারছে না অন্তুর কথায় তার রিয়েকশন খারাপ হবে কেন? সে এমন কি বলতে চাচ্ছে যে সে রিয়েক্ট করবে। অন্তু বললো….
অন্তুঃ কাল তোমাকে বলাম না আমি নতুন একটা আশা খুজে পেয়েছি অর্ণব। সেই আশাটা হলো আমাদের সন্তান, আমি মা হতে চলেছি আর তুমি বাবা। অর্ণব তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না আমি কতটা হেপ্পি….তুমি হেপ্পি না?
উচ্ছাস নিয়ে কথাগুলো বলে অন্তু অর্ণবের দিকে তাকিয়ে দেখে অর্ণব তার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার মাঝে নেই কোনো অনুভূতি না আছে কোনো প্রতিক্রিয়া সে এক ভাবে তার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছে সে জানে না। অন্তু অর্ণবের হাত ধরতেই অর্ণব এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে দেয়, অর্ণবের কাজে অন্তু অবাক সে বুঝলো না আসলে কি হলো একটু আগে। অন্তু কিছু বলতে যাবে তার আগে অর্ণব বললো…
অর্ণবঃ তুমি আবার আমার কথার অবাধ্য হয়েছো অন্তু। আমি বলেছিলাম না আমি আর বাচ্চা চাই না তাইলে কেন বাচ্চাটাকে আমাকে না বলে তুমি নিলে। তোমাকে কতো বার বলবো এক কথা তোমার শারীরিক দিক দিয়ে এখন বেবি নেওয়াটা কতোটা রিস্ক তুমি জানো তার ওপরে তুমি ২মাস ধরে না ঠিক মতো খেয়েছো, না ঘুমিয়েছো, না ঔষধ খেয়েছো আর না নিজের খেয়াল রেখেছো তাইলে কিসের জন্য তুমি এটা করলে। আমাকে মেরে ফেলতে চাও বললো একে বারে মেরে ফেলতে চাও…
অন্তুঃ অর্ণব এমন করে বলছো কেন আমি তো নিজের খেয়াল রাখছি আর তোমাকে মারতে চাইবো কেন?
অর্ণবঃ কেন মারতে চাবে না তুমি। তুমি বেবিটাকে রাখলে তুমি মরবে সাথে আমাকেও মারবে। তুমি কি ভুলে গেছো ডক্টর স্টিকলি তোমাকে বলেছিলো এখন বেবি নেওয়া যাবে না তারপরেও কেন তুমি এমনটা করলে শুনি। অন্তু যেটা হয়েগেছে সেটা ধরে রেখো না আনভির ভাই লাগবে না আর না আমার আর কোনো সন্তান লাগবে তাইলে কেন তুমি বার বার ভুল করো। আগের বার আমি না করার সত্বেও তুমি বেবি নিয়েছিলে তারপর তুমি সেটা নিজেও বুঝতে পারোনি আর এই বার তুমি সবটা জেনে বুঝে এমন ডিসিশন কেন নিলে?
অন্তুঃ তোমার সন্তান না লাগলেও আমার লাগবে। আর আগের বার দোষ হয়তো আমার ছিলো কিন্তু বেবিটা মারা যায় আব্বু জন্য তিনি যদি তোমাকে মারতে না চাইতো তাইলে আমি তোমাকে বাঁচাতে যেতাম না আর না আমার গুলি লাগতো না বেবিটা মিসকেরেজ হতো। কিন্তু এবার আমি আমার বেবিকে কিছু হতে দেবো না তুমি চাইলেও আর না চাইলেও কিন্তু আমি আমার বেবিকে রাখবো। আর একটা কথা আমার বেবি যে মারা গিয়েছিলো সেটা তুমি আমাকে বলোনি আরে তুমি কেন কেউ আমাকে বলেনি, জানো আমি যখন সত্যিটা জানলাম তখন আমার কেমন লেগেছিলো তুমিতো বাবা তাই তোমার কষ্ট হয়নি কিন্তু আমি মা ছিলাম আমার কেমনটা লেগেছিলো সেটা আমি জানি। তাই আমি সবটা জেনে বুঝে এই ডিসিশন নিয়েছি আমার বেবিকে আমি রাখবো।
অন্তুর অহেতুক কথা শুনে অর্ণবের রাগ হচ্ছে। সে কিনা তার বেবি না থাকার জন্য কষ্ট পায়নি। সে তো অন্তু কষ্ট ভালো ভাবে বুঝেছে তাইলে অন্তু কেন বুঝতে পারছে না এই বেবিটা থাকলে তার জীবন সংশয় হতে পারে। অর্ণব রেগে বললো…
অর্ণবঃ ঠিক আছে বেবি রাখবে রাখো কিন্তু তোমার কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না কাউকে না কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও…
বলে অর্ণব রেগে চলে যায় রুম থেকে। অন্তু অর্ণবের যাওয়া দিকে তাকিয়ে থেকে ফুপিয়ে কান্না করে দেয়। অন্তু পেটে হাত দিয়ে বললো…
অন্তুঃ সরি বেবি পাপা রেগে আছে তাই এমন করলো রাগ কমলে ঠিক তোমাকে ভালোবাসবে। তোমার মাম্মাকে তোমার পাপা একটু বেশিই ভালোবাসে তো তাই তোমার মাম্মার কিছু হলে তোমার পাপা সহ্য করতে পারবে না। সরি..
বলে কান্না করতে লাগলো অন্তু। সে জানে না অর্ণব রাগ করে কোথায় গিয়েছে কিন্তু সে এটা জানে অর্ণব তাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না যতোই দোষ করুক না কেন সে। রাত আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো কিন্তু অর্ণব আসলো না বাড়িতে অন্তু অনেক বার ফোন দিয়েছিলো কিন্তু ফোন ধরেনি। অরনি তাকে খাবারে জন্য ডাকতে এসেছিলো কিন্তু সে খাবে না বলে অরনিকে বলে। অন্তু আনভিকে অরনির সাথে ঘুমাতে বলে আনভি তাই করে। অন্তু অনেকখন অর্ণবের জন্য ওয়েট করে কিন্তু সে আসে না,এক সময় সে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায়…
_______________________________________
মাঝ রাতে কারোর ফুপিয়ে কান্না করার শব্দে অন্তুর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতে সে অনুভব করে তাকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে হঠাৎ এমন হওয়ায় সে ঘাবড়ে যায় কিন্তু যখন বুঝতে পারে কে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে তখন সে শান্ত হয়ে যায়। অন্তু অর্ণবকে পিঠা হাত বুলতে লাগলে অর্ণব অভিযোগ স্বরে বললো…
অর্ণবঃ তুমি ভালো না জান একটু ও ভালো না। তুমি আমাকে বার বার কাঁদাও, কষ্ট দাও আর আমার থেকে দূরে সরে যাবার ফন্দি আঁটো। এমন কেন করো বলতে পারো? তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসো না আর কেন বার বার দূরে সরে যেতে চাও আমার থেকে। জান প্লিজ আমাকে আর এভাবে কষ্ট দিও না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আর না বাঁচতে পারবো।
বলে ফুঁপাতে লাগলো। হ্যাঁ এটা অর্ণব সে রাতে বাড়ি এসে দেখে অন্তু কান্না করে ঘুমিয়ে আছে, অন্তুর ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে সে নিজেকে আঁটকে রাখতে পারেনি তার ভেতরের কষ্টকে তাই অন্তুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো তখনি অন্তু জেগে যায়। অন্তু অর্ণবের কপালে চুমু দিয়ে বললো…
অন্তুঃ আনভির পাপা আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো বললো। আমি কোথাও যেয়ে শান্তি পাবো না তাই বার বার তোমার কাছে ফিরে আসি। অর্ণব সরি আমি তোমাকে না বলে বেবিটা নিয়েছি কিন্তু একটা বাচ্চাকে বাঁচার জন্য আশা করে তোলা কি দোষ বলো তুমি। আমি ওভাবে বাঁচতে পারছিলাম না তাই বেবিটাকে নিয়েছি যাতে সব ভুলে তাকে নিয়ে থাকতে পারি। সরি অর্ণব আমি তখন রাগের মাথায় তোমাকে আমাদের বেবি মারা যাবার জন্য তুমি কষ্ট পাওনি বলেছি। কিন্তু আমি জানি তুমি আমার থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছো সরি…
অর্ণব অন্তুকে ছেড়ে তার সারামুখে পাগলেম তো চুমু খেয়ে বললো… জান আমি তোমার কথায় কষ্ট পায়নি। আমি কষ্ট পেয়েছি তুমি আমাকে না বলে আবার বেবি নিয়েছো তাই এর বেশি না। জান তোমার শরীলের আবস্থা যেমনটা ছিলো তাই ডক্টর বেবি নিতে মানা করেছিলো কিন্তু আজ বেবি কথা শুনে তোমাকে হারানোর ভয় আমার মধ্যে কাজ করছিলো তাই তখন জানি না কি কি বলেছে সরি। আমি ডক্টরের সাথে কথা বলেছি তিনি বলেছে বেবি যেহেতু নিয়েছে তাই তোমাকে সাবধানে থাকতে বলেছে আর প্রপার একটা রুটিন চেকাআপের মধ্যে থাকলে সমস্যা হবে না। সরি রাগ করার জন্য…
অন্তুঃ অর্ণব প্লিজ এমন করে বলো না আমি কষ্ট পাইনি পেয়েছে বেবিটা। সেই কখন থেকে না খেয়ে বসে আছি তোমার জন্য আর তুমি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছো একটা বার তাকে আদরো করে দিলেনা ভেরি বেড হুম হুম..
অন্তুর কথা শুনে অর্ণব হেসে অন্তুকে ছেড়ে দিয়ে তার পেটে পর পর অনেক গুলো কিস করে বলতে লাগলো… পাপা সরি বেবি। তোমাকে না খাইয়ে রেখেছে তাই না সরি আমি এখনি খাবার আনছি। তুমি মাম্মাকে কষ্ট দিও না, যা কষ্ট আমাকে দিও আমি সবটা নিয়ে নেবো কিন্তু মাম্মাকে কষ্ট দিও না। পাপা লাভ’স ইউ বেবি…
বলে অন্তুর পেটে কিস করে। এদিকে অন্তু অর্ণবের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর তার কথা শুনছে, সে জানতো অর্ণব সবটা মানবে শুধু কিছুটা সময় নিয়ে। অর্ণবের বাচ্চামি করতে দেখে অন্তু বললে…
অন্তুঃ বাহ বাহ এখন বেবিকে ভালোবাসা হচ্ছে আর তার মাম্মাকে কে ভালোবাসবে। এখনি এতো পারশিয়ালিটি বাপ-ছেলের আমি মানবো না মানছি না এটা…
অর্ণবঃ মানলে মানো আর না মানলে না মানো। আমি খাবার আনছি খেয়ে ঘুমাবে।
অন্তুঃ অর্ণব আনভি…
অর্ণবঃ তোমাকে খাইয়ে আমি আনভিকে নিয়ে আসছি। তুমি বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।
বলে সে চলে যায় খাবার আনতে। এদিকে অন্তু অর্ণবের কেয়ার গুলো দেখছে, কে বলবে এই ছেলে একটু আগে তাকে বিকছিলো আর এখন তাকে ভালোবাসছে। অন্তু মুচকি হাসে সে ভাবে এই ছেলে এখন তাকে এতো কেয়ারিং করবে যে সে সেটাতে বিরক্ত হয়ে যাবে কিন্তু ভালোও লাগবে সে তো আনভির বেলাতে এসব কেয়ারিং পায়নি কিন্তু এখন পাবে। অন্তু নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছে, এতো কেয়ারিং, লাভিং আদর করা বর, এতো কিউটি একটা মেয়ে আর এতো সুন্দর একটা ফ্যামেলি পেয়েছে সে ভাগ্যরগুনে। অর্ণব খাবার নিয়ে এসে অন্তুকে সুন্দর করে খাইয়ে তাকে শুয়ে দিয়ে আনভিকে নিয়ে এসে অন্তুর কাছে শুয়ে সে অন্তুর পিছু শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। অন্তু মিনমিয়ে বললো…
অন্তুঃ আনভির পাপা…
অর্ণবঃ হুম
অন্তুঃ তুমি খুশি তো বেবিটার জন্য?
অর্ণব অন্তুর ঘারে কিসে করে বললো… অনেক অনকে খুশি যা বলে বুঝাতে পারবো না।
অন্তু খুশি হয়ে বললো… সত্যি?
অর্ণবঃ হুম সত্যি। এখন ঘুমাও কাল ভাইয়ারা আসবে তাদেরকে এই গুড নিউজটা দিতে হবে না।
অন্তু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। কিছুখন পর অন্তু ঘুমিয়ে গেলে অর্ণব তাকে দেখে নিয়ে ভাবে তখন কর কথা, অণব রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেও তার মনে অন্তুকে হারানো ভয় ছিলো তাই সে ডক্টরের সাথে কথা বলে এই বিষয় নিয়ে তখন ডক্টর তাকে বলে অন্তুকে এখন কোনো প্রকার চাপ বা চিন্তা করতে না দিতে আর রেগুলার চেক-আপ করলে কোনো প্রবলেম হবে না। ডক্টরের কথা শুনে অর্ণব শান্ত হয় তাই সব মানিয়ে সে অন্তুকে আর তার বেবিকে নিয়ে আনন্দে আছে। অর্ণব অন্তুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো… তোমাকে আর বেবিকে কিছু হতে দেবো না জান। আমি সব ঠিক করে দেবো তোমাকে কষ্ট পেতে দেবো না। আই লাভ ইউ….
চলবে….