তুমি থেকে যাও আমি রেখে দিব পর্ব -০১

দেখো অধরা মা আমি জানি তুৃমি পারবে।আমার ছেলে টাকে আবার আগের মতো করে দিতে।বিশ্বাস করো মা।আমার ছেলেটা এমন ছিলো না।আমার ছেলেটা ভিষণ ভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে।রুহি নামের একটা মেয়েকে আমার ছেলে ভিষন ভালোবাসতো।মেয়েটা তার ক্যারিয়ারের জন্য আমার ছেলে-কে ঠকিয়ে চলে গেছে।সাথে কেঁড়ে নিয়ে গেছে।আমার ছেলের মুখের হাসি।যে ছেলে’টা পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখতো।সে,ছেলেটা আমার এখন সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকে।কিছু বললে’ই রেগে যায়।আমি চাই তুৃমি আমার ছেলেকে বিয়ে করো।আবার আগের মতো করে দাও।

–দেখুন স্যার এখানে আমি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছি।বিয়ের ডিল করতে আসি নাই।আপনি আমার সাটিফিকেট গুলো দেখুন।যদি আমাকে যোগ্য মনে হয়।তাহলে চাকরি টা আমাকে দিবেন।না হলে দিবেন না।এখানে বিয়ের কথা আসছে কোথায় থেকে।

–তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে সব দিব।তোমার সব অপূর্ণ ইচ্ছে আমি পূর্ণ করে দিব।তুমি শুধু আমার ছেলের হাসি ফিরিয়ে দাও।আমার ছেলে টাকে আগের মতো শান্ত আর চঞ্চল বানিয়ে দাও।বাবা হয়ে ছেলের কষ্ট টা সয্য করতে পারছি না।

–স্যার আপনি বোঝার চেষ্টা করুন।আমি আমার পরিবারের বড় মেয়ে।আমার বাবা দু’বছর হলো বিছানায় পরে আছে।আমার আম্মু হার্টের রোগী।আমার একটা বারো বছরের ভাই আছে।আমি তাদের সুখের জন্য,তারা একটু ভালো থাকবে বলে।চাকরির জন্য গ্রাম থেকে শহরে এসেছি।নিজের জীবন সুন্দর করার জন্য আসি নাই।

–তোমার বাবা-মার দায়িত্ব আমি নিব কথা দিলাম।তোমার বাবা’কে ভালো চিকিৎসা আমি করাবো।শহরের সবথেকে বড় হসপিটালে তোমার বাবার চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।তোমার আম্মুকে ভালো রাখার জন্য যা যা করা লাগে আমি করবো।তোমার ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব আমি নিব।তবু’ও তুমি আমার ছেলে’কে বিয়ে করো মা।

–এই স্বার্থপর দুনিয়ায়,স্বার্থ ছাড়া কেউ এক পা হাঁটে না স্যার।আমি আমাদের গ্রামে অনেক বিয়ে দেখেছি।যারা বলেছে বিয়ের পরে।তারা মেয়ে’কে পড়াশোনা করাবে।চাকরি করতে দিবে।বিয়ে করে নিয়ে যাওয়া সময় কি ভালো ব্যবহার।বিয়ে-টা যখন হয়ে যায়।তখন সবার আসল রুপ বেড়িয়ে আসে।মেয়ে মানুষ বিয়ে হয়ে গেছে।এখন কিসের পড়াশোনা করা লাগবে।জামাই থাকতে কেনো চাকরি করা লাগবে।মেয়েরা ঘরের কাজ করবে।মেয়েদের শুধু রান্না ঘরে মানা-ই এসব কথা শুনতে হয়।

–দেখো মা।সবাই এক না।এটা তোমার গ্রাম না।এটা শহর এখানে যেমন ভালো আছে।ঠিক তেমনি খারাপ আছে।তুমি আমাকে ভরসা করে দেখতে পারো।নিরাশ হবে না।

–সরি স্যার।আমি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই।তাদের খারাপ সময়ে তাদের পাশে থাকতে চাই।আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারি না স্যার।আমার পরিবার খুব আশা করে আছে আমাকে নিয়ে।আমি ছাড়া ওদরে পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।আমার ভাই টা খুব ছোট।পড়াশোনা করিয়ে ওকে মানুষ করতে চাই।আমি না থাকলে-ও সে বাবা-মার পাশে থাকতে পারে।আমার এখন নিজের কথা ভাবলে চলবে না স্যার।আপনি আমার সার্টিফিকেট গুলো দেখুন।আমার ইন্টারভিউ নিন।যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তাহলে সিলেক্ট করে নিবেন।

–আমার কথা টা একবার ভেবে দেখো অধরা।আমি তোমাকে সময় দিলাম।তোমার সাটিফিকেট গুলো রেখে যা-ও।রাতে তোমার ফোনে মেসেজ চলে যাবে।

–স্যার ভাবার কিছু নেই।আমি আমার জীবন নিয়ে এখন ভাবছি না।ভালো থাকবেন।ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে।আসি আল্লাহ হাফেজ।আসসালামু আলাইকুম স্যার।বলে-ই অধরা বেড়িয়ে গেলো।

অধরা চলে যাওয়ার পরে আশরাফ চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।তোমাকে রাজি হতে-ই হবে,অধরা মা।আমার ছেলের সুখের জন্য যদি একটু স্বার্থপর হতে হয়।তাহলে আমি তাই হবো।তবুও তোমাকে আমি ছেলের বউ বানিয়ে নিয়ে আসবো।

অধার দ্রুত অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়ার জন্য জোরে জোরে হাঁটছিল।তখন আহান অফিসে আসছিলো তার বাবার কাছে থেকে টাকা নেওয়ার জন্য।অধরার হাত লেগে আহানের ফোন নিচে পড়ে গেলো।ফোন পড়ে যেতে দেরি হলে-ও ভেঙে যেতে এতটুকু সময় নিলো না।আহান রাগী দৃষ্টিতে আধরার দিকে তাকিয়ে আছে।

–চোখ কি চুলে মধ্যে নিয়ে হাটো।নাকি আমাকে দেখলেই তোমার ঝামেলা সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করে।

–আপনি চোখ কি কপালে তুলে নিয়ে হাঁটেন।আজ-কাল ছেলে-মেয়েদের স্বভাব রাস্তা দিয়ে হাঁটবে।ফোনের দিকে চোখ থাকাই লাগবে।ফোনের নেশায় এত মগ্ন থাকেন।চারপাশে কেয়ামত হয়ে গেলে’ও টের পাবেন না।আসছে আবার আমাকে বলতে।

–তুমি জানো আমি কে তুমি আমার বাবা অফিসে দাঁড়িয়ে আমাকেই যা নয় তা বলে যাচ্ছো।

–এটা আপনার বাবা অফিস।আপনার না।এখানে নিজের যোগ্যতা প্রমান দিতে এসেছি কারো কথা শুনতে আসি নাই।

–তুমি আমার ফোনের ডিসপ্লে ভেঙে দিয়েছো।এখন মেরামত করার টাকা তুমি দিবে।না হলে তোমাকে এখানে থেকে এক পা নড়তে দিব না।

–আমাকে কি বোকা পেয়েছেন।শুনুন আমি গ্রামের মেয়ে হতে পারি।কিন্তু আমাকে এতটা বোকা ভাববেন না।এক কানা কুড়ি আপনাকে দিব না।বলে-ই অধরা চলে গেলো।আশরাফুল চৌধুরী সবকিছু-ই দেখে দূর থেকে হাসছিলেন।আহান রেগে বাবা কাছে গেলো।

–বাবা এখনি একটা মেয়ে আসছিলো।কি করতে আসছিলো।যদি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসে থাকে।ঐ মেয়ের চাকরি যেনো কোনোভাবে-ই না হয়।

–কি ব্যাপার তুমি মেয়ের কথা বলছো।আবার নতুন করে প্রেমে পড়লে নাকি।মেয়েটা চাকরির জন্য এসেছিলো।মেয়েটা খুব ভালো।পড়াশোনা’ও অনেক ভালো।তাছাড়া মেয়েটা খুব দায়িত্ববান এমন একজন আমাদের অফিসে থাকলে আমাদের ভালো হবে।

–বাবা তুমি জানো ঐ আমার সাথে কি করছে।

–আমি জানতে চাই না।অধরা তোমার সাথে কি করছে।আমার একজন দায়িত্ববান পিএ চাই।তাই নিয়োগ দিয়ে ছিলাম।অধরার সাথে কথা বলে আমার ভালো লাগছে।যথেষ্ট মেধাবী ছাত্রী ছিলো অধরা।ওকে না নেওয়ার কোনো কারন দেখছি না।

–নিজের ছেলের থেকে ঐ মেয়ে তোমার আগে হয়ে গেলো।

–তুমি নিজের ছেলে হয়ে।আমাকে কোন কাজে সহযোগিতা করেছো বলতো।তোমার বড়ভাই তার ব্যবসা নিয়ে বস্ত থাকে।তুৃমি সারাদিন নিজের মতো থাকো।একটা বার ভেবে দেখেছো।তোমার বাবার বয়স হয়েছে।এই বয়সে এত কাজ করতে কষ্ট হয় কি না।একটা বার কোনোদিন জানতে চেয়েছো আহান।হঠাৎ করে আজ কি মনে করে অফিসে আসলে।এখন এসে-ই বলছো।অধরা-কে নেওয়া যাবে না।আমি কাকে নিব আর না নিব এখন সেটা তুমি ঠিক করে দিবে।

আহান রেগে গটগট করে বেড়িয়ে যায়।তার বাবার অফিস থেকে।বর্ষাকাল চলছে।বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।যার কারণে গাড়ি পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে।অধরা গাড়ির জন্য অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

আশরাফুল চৌধুরী অফিসের কাজ শেষ করে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।বাহিরের প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে দেখে তিনি অফিস থেকে একটি ছাতা নিয়ে বের হলেন।আহান রাগে গজগজ করতে করতে বাহিরের দিকে আসছিলো।অধরা’কে দেখে রাগ পুরো মাথায় চরে গেলো।অধরা’কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে যাবে।তখনি অধরা পেছনে কারো উপস্থিতি পেয়ে।সরে দাঁড়ালো।আহান টুস করে নিচে পড়ে গেলো।কাঁদা দিয়ে পুরো মুখ মেখে গেছে।অধরা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছিলো না।

এগিয়ে গিয়ে বলল দেখলেন তো অন্যের জন্য কুয়া খুরতে গিয়েছিলেন না।এখন সেই কুয়োই নিজে-ই পড়ে মরুন।

–অসভ্য মেয়ে একটা।তোমাকে আমি ছাড়বো না।তোমাকে আমি দেখে নিব।এই অফিসে কাজ করবে না তুমি।দেখো তোমার কি অবস্থা আমি করি।

–আমি অধরা আমাকে শাস্তি দিতে এসে।আপনি আবার নিজেই না শিক্ষা পেয়ে যান।একটু ভাব নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল।আমি অধরা দুঃসময়ে সবার পাশে থাকতে পছন্দ করি।উঠে আসুন।

–আমার এখনো এতটা খারাপ সময় আসে নাই।তোমার মতো পেতনীর হাত ধরে উঠতে হবে।

–আমি পেতনী হলে আপনি কোন লাজ সাহেব এসে গেছেন।আপনার থেকে আমার দেব যথেষ্ট সুন্দর।চার পা আলা দেব আমার আপনার থেকে ভালো বুঝে।আমি খেতে দিলে সব সময় আমার পিছু ঘুরে।

আহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো অধরার দিকে।এই চার পা আলা দেব টা কে আবার।

–চার পা আলা দেব টা হচ্ছে আমাদের এলাকার হৃষ্টপুষ্ট কুত্তা।সবাই তাকে ভালোবেসে দেব বলে ডাকে।

–তুৃমি আমাকে কুত্তার সাথে তুলনা করছো।তুমি জানো না মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।আর তুমি মানুষের সাথে কুত্তার তুলনা করছো।কুকুর একটা হারাম প্রানী।

–এই যে,চার পা আলা দেব।মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।তাহলে আপনি আমাকে ভুতের সাথে তুলনা করলেন কেনো।ভুত কারা হয়।যারা নিজের জীবন নিজে দিয়ে দেয়।আপনার মনে হয় আমি এসব পাপ কাজ করবো।

আহান কোনো কথা বলছে না।রাগে দুই হাত মাটিতে খামচে ধরে আছে।একটু পরে উঠে অধারর দিকে এগিয়ে আসলো।দুই হাতে থাকা কাঁদা গুলি অধরার মুখে মাখিয়ে দিয়ে দে দৌড়।আহান’কে আর পায় কে।মেয়েটা’কে একটু হলে-ও শিক্ষা দিতে পেরেছে।গায়ের জ্বালা একটু হলে-ও কমেছে।

–চার পা আলা দেব।আমি যদি আপনাকে জন্মের শিক্ষা না দিয়েছি।তাহলে আমার নাম’ও অধরা না।বলে-ই বাহিরের কল থেকে নিজের মুখ ধুয়ে নিলো।বৃষ্টির পানি শরীরের পড়ছে না।দেখে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো আশরাফুল চৌধুরী ছাতা ধরে আছে।

–তুমি এখনো বাসায় যাও নাই।বলল আশরাফুল চৌধুরী।

–বৃষ্টির জন্য গাড়ি পাচ্ছি না স্যার।একটা গাড়ি পেলেই চলে যাব।

–কিছু মনে না করলে,আমি তোমাকে পৌঁছে দিতে পারি।আমাকে বলো তুমি কোথাস থাকো।

–ধন্যবাদ স্যার লাগবে না।আমি চলে যেতে পারবো।বলে-ই অধরা বাহিরের দিকে হাঁটা শুরু করলো।এমনিতে-ই ভিজে গেছে।আর ভেজার ভয় করলে চলবে না।

–বাবা আমি বুঝি না।বাহিরের মানুষের জন্য তোমার এত দরদ কিসের।বাসায় যাব চলো।আমার গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে।আহান-কে দেখে অধরা তেরে যাবে।তখনি খেয়াল হলো আশরাফুল চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে।উনার সামনে একদম বাজে মেয়ে হওয়া যাবে না।একদম লক্ষি মেয়ে হয়ে থাকতে হবে।এই ছেলের সাথে যুদ্ধ করার থেকে,চাকরিটা আগে দরকার অধরার কাছে।

–আহান তুমি বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো।ঠান্ডা গেলে যাবে।

–কিছু হবে না বাবা।

–আমরা যদি অধরা’কে ওর বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসি।তোমার কি খুব বেশি সমস্যা হবে।বলল আশরাফুল চৌধুরী।

–অধরা আর আহান দু’জন মিলে বলল অসম্ভব।

–স্যার দরকার পড়লে আমি কাক ভেজা হয়ে।পায়ে হেঁটে বাড়ি যাব।তবু্ও এই চার পা আলা দেবের সাথে যাব না।

–বাবা আমি রিক্সা করে যাব।তবু্ও এই পেতনীর সাথে যাব না।

বলে-ই দুজন দুই দিকে হাঁটা শুরু করলো।আশরাফুল চৌধুরী দুজনের কথায় হতভম্ব হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।

চলবে…..

#তুমি_থেকে_যাও_আমি_রেখে_দিব
#পর্ব_০১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here