তুমি যে আমার পর্ব -০৬+৭

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_6

বর্ষা বিছানায় জরোসরো হয়ে বসে আছে। আর লোকটা বাথরুমে ঢুকে গেছে। লোকটা ওকে দরজার বাইরে বের করে দেওয়াতে। ও মনে মনে খুশি হয়েছিলো। এই বুঝি ছাড়া পাওয়ার একটা সুযোগ পেলো। এখান থেকে বের হওয়ার কোন রাস্তা পাওয়া জন্য ঠোঁটের কোনে হাসি চলে এসেছিলো। কিন্তু বর্ষার সমস্ত আশায় জল ঢেলে দিয়ে আবার রুমে নিয়ে আসলো। আচমকা টানে বর্ষা ভয় পেয়ে যাই। আর লোকটার বুকের উপর আছড়ে পরে।লোকটা নিজের থেকে সরিয়ে বিরক্ত মুখ করে বলে,

‘ তোমার মতলব আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি?’

বর্ষা বিস্মিত হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবার কি মতলব করলাম?

লোকটা আবার আমার দিকে এগিয়ে এসে একদম আমার গা ঘেষে দাড়িয়ে বলল, ‘নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না। আমাকে রাগিয়ে এখান থেকে পালানোর সুযোগ খুঁজছিলে! বাট ইট ইজ নট সো ইজি টু ফল দি ট্রাম্পেট।’

বর্ষা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। বর্ষা পালাতে চাই ঠিক কিন্তু তখন বর্ষা এসব ভাবিনি কিন্তু লোকটা উল্টা ভাবছে। নিজে বোকামো করে ওকে ধমকাচ্ছে।

বর্ষা কিছু বলতে যাব তখন তূর্য নিজের হাত বারিয়ে বর্ষার কপালে হাত রেখে গালে সাইড করতে করতে বলে,

‘ আমার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ না হ‌ওয়া পর্যন্ত তুমি এখানে থেকে এক পাও নড়তে পারবে না। কাজ শেষ হলে আমি নিজেই তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে দিয়ে আসব।’

বর্ষা ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো, ‘আপনার উদ্দেশ্য কি? আর কেন আমাকে……

তূর্যের আগুল বর্ষার গাল বেয়ে গলায় এসে থেমেছে। তূর্য এর এমন স্পর্শে বর্ষা হার্টবিট ঝড়ের গতিতে লাফাচ্ছে। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে শরীরে প্রত্যেকটা লোম খাড়া হয়ে উঠছে। বর্ষাকে সম্পুর্ণ কথা শেষ করতে দিল না তূর্য। কথার মাঝেই তূর্য নিজের মাথা হেলিয়ে বর্ষার কানের কাছে নিয়ে গেল নিজের মুখ,
বর্ষার ঘাড়ের তূর্যের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। তাতে ওর সারা শরীর কেঁপে উঠছে।

‘আমার উদ্দেশ্য তুমি।’

তুর্যের ফিসফিসে কথাটা শুনে বর্ষা থমকে গেল বিষ্মেয় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুর্য ফট করে ওর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলল,,

‘ইউ লুক সো হট ইন মাই শার্ট।’

বর্ষা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে কথাটা বলে অসভ্য লোকটা ঠোট কামড়ে হেসে বাথরুমে চলে গেলো। এক নম্বরে অসভ্য লোক। সামনে কিছু না বলতে পারলে মনে মনে লোকটা চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে বর্ষা। কিন্তু লোকটা কাছে এলে ভয়ে গুটিয়ে যায়।

তখন থেকে বর্ষা বিছানার উপর বসে আছে। লোকটার ফোন ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা। বর্ষা এক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একবার ফোনটা হাতে নিয়ে বাপি কে কল করতে পারলে ভালো হতো। দু’দিন চলে গেল ও মাম্মা বাপ্পির থেকে দূরে আছে। তারা নিশ্চয়ই ওর জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে ও তো পাচ্ছে। খুব মিস করছি মাম্মা বাপ্পীকে।দুদিন ধরে না গোসল করতে পারছি। না খেতে পারছি। দুদিন বর্ষা একবার খেয়েছে। পেটের ভেতর যন্ত্রণা করছে খিদের জন্য। ইঁদুর দৌড়াচ্ছে মনে হয়। লোকটা তো গোসল করছে এই সুযোগে আমি ফোনটা নিয়ে একবার কল করে দেখি‌। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বাথরুমের দরজার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো বর্ষা। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ছে। যেন বাপির সাথে কথা বলতে পারে। কাঁপা পায়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। আর ফট করে ফোনটা হাতে তুলে নিলো। হাত কাঁপছে লোকটা যদি বেড়িয়ে যায় তাহলে তো আমাকে খুব বকবে?
একদিকে ভয় ও মিইয়ে যাচ্ছি অন্যদিকে শেষ একটা চেষ্টা করার জন্য সাহস পাচ্ছে। এই সুযোগে দ্বিতীয়বার পাব কিনা জানিনা। মোবাইলের স্ক্রিনে আলো জ্বলতেই লোকটা মাক্স পরিহিত চেহারা ভেসে উঠলো। লোকটা সব জায়গায় খালি মাক্স পরা ছবি দিয়ে রাখা। এই মাক্স পরা লোকটা তো ওকে প্রথম দিন কিডন্যাপ করেছিল। তার মানে এই লোকটা ওকে সেদিন তুলে এনেছে। আর ও ভেবেছিল দুইজন দুই কিডন্যাপার। এই লোকটা ওকে চড় মেরেছিলো। সাথে সাথে বাম গালে আমার হাত চলে গেলো।

জীবনে ফার্স্ট কেউ ওকে আঘাত করেছিল। আর সেই লোকটার হলো ইনি। বর্ষা সবকিছু মনে করে রাগ পুষে রাখলে মনে। কখনো সুযোগ পেলে এই লোকটাকে ও ছাড়বে না। কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবে। কিন্তু সেই সুযোগ কি ও কখনো পাবে? পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা। চার বার ট্রাই করলো কিন্তু কিছুতেই খুলছে না। বর্ষা তুই এত বোকা। একবারও ভাবলিনা লোকটা অবশ্যই ওনার ফোনের লক দিয়ে রেখেছে। আর ও কি সুন্দর খুশিমনে এখানে চলে এলো।
বর্ষা পঞ্চম বার ট্রাই করে রেগে ফোনটা শব্দ করে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখল। চোখের কোনায় জল চলে এসেছে। মাম্মা বাপির সাথে কথা বলতে পারল না। ও ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়েই নিচু হয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো।

এদিকে তুর্য বাথরুমে থেকে শব্দটা শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি টাউজার আর টি-শার্ট পরে বেরিয়ে এসেছে। বেরিয়ে এসে দেখতে পায় বর্ষা ফোনের উপর হাত থেকে নিচু হয়ে কাঁদছে। ওর বুঝতে বাকি থাকলো না কি করতে গেছিলো মেয়েটা। রাগ হয় ওর খুব। ও রেগে বর্ষার কাছে গিয়ে হাতের কবজি ধরে ওর দিকে ফিরিয়ে বলে,

‘তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার ফোন ধরেছে?’

বর্ষা ইমোশনাল হয়ে ওই খানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। আর এই রাক্ষস লোকটার কথা ভুলেই গেছিলো। তবুও এখন যেন ভয় হচ্ছে না। ও নিজেও তূর্যের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।

‘আপনার থেকে কম। আপনার ও তো সাহস কম না আপনি আমাকে ধরে এনেছেন।কিডন্যাপ করেছেন আমার বাপিকে চেনেন। খুব তাড়াতাড়ি বাপি আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করবে আর তখন আপনাকে কঠিন শাস্তি দেবে?’

‘আমাকে শাস্তি দিবে তোমার বাপি?’
তিরস্কার গলায় বলল তূর্য। ওর মুখে তিরস্কারের হাসি।

‘হ্যাঁ আমার বাপি আপনাকে কঠিন শাস্তি দেব এর জন্য। আপনি তার একমাত্র মেয়েকে কিডন্যাপ করেছেন। এর জন্য আপনার কি হাল করে দেইখেন। খুব তাড়াতাড়ি বাপি আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।’

‘তোমার বাপি আমাকে শাস্তি দেবে। হাহাহা তোমার এই বোকা বোকা কথা শুনে আমার সাথে এখন হাসি পাচ্ছে।আর কি বললে তোমাকে উদ্ধার করবে খুব তাড়াতাড়ি করতে পারলে তো এই দুই দিনেই করতে পারত। দুইদিন যেহেতু পারেনি দু’বছরেও পারবে না। আমি না চাইলে তোমার নাগাল কেউ পাবে না।’

আচমকা বর্ষা তূর্য এর কলার চেপে ধরলো,

‘ কেন পাবে না ঠিক পাবে। আপনি একটা ফাজিল, অসভ্য, হনুমান,বাঁদর লোক আমাকে কিডন্যাপ করেছেন বাপির সাথে কথা বলতে দিচ্ছেন না। তারা আমার চিন্তায় কি করছেন আল্লাহ জানে। আপনার মতো খারাপ লোক জীবনে দেখি নি। এভাবে একটা নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়েকে অত্যাচার করছেন।’

বর্ষা তুর্যের কলার ধরায় তো তূর্য রাগে আগুন হয়ে গেছে। চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে। আর বর্ষার এতসব কথা শুনে ওর রাগ আরো বেড়ে মাথায় উঠে গেছে।

ও রাগে দাতে দাঁত চেপে বর্ষার উদ্দেশ্যে বলল,,

‘মুভ ইউর হ্যান্ড।’

‘না ছাড়বো না। আপনি আমাকে এই মুহূর্তে আমার বাসায় দিয়ে আসুন। আমি আর এক মুহূর্তে এখানে থাকবো না।’

‘লাস্ট বার বলছি হাত সরাও আমাকে রাগিও না।’

‘ছাড়বো না বলছি তো।’

বর্ষা দ্বিতীয়বারের মতো না করায় তূর্য রেগে ওর হাত কলার থেকে ঝামটা মেরে ছাড়িয়ে বর্ষার গালে চড় মেরে দিল। বর্ষার গালে হাত দিয়ে চোখের জল ফেলছে। আর বিড় বিড় করে বলছে,

‘আপনি দ্বিতীয়বার আমাকে মারলেন।’

বলে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। আর তূর্য রেগে চিৎকার করে বলল,,

‘আর কখনো এমন সাহস দেখাতে গেলে দুই হাত কেটে রেখে দেবো। তূর্য এর কলারে হাত দেওয়ার শাস্তি পাবে তখন। আমার যখন সময় হবে আমি নিজেই তোমাকে বাসায় দিয়ে আসব তোমাদের মত মেয়েকে আমি আমার জীবনে রাখি না। আমার উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে এখানে থাকতে হবে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাই বাড়াবাড়ি করে লাভ নাই নিজের ক্ষতি হবে শুধু।’

এবার আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’আপনার কোনদিন ভাল হবেনা কোনদিন না।’

‘আজ অব্দি আমার ভালো হয়নি এখন আর ভালো হওয়ার আশা রাখি না। তোমার যত খুশি বলতে পারো। আই ডোন্ট কেয়ার। তোমার ওই সব ফালতু কথা তুর্য কেয়ার করে না।’

বর্ষা ঘৃণার দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাকালো। এই মানুষটা যতটা সুন্দর বাইরে থেকে তার মনটা তো টাই কুৎসিত।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_7

তুর্য খাবারের প্লেট এনে বর্ষার হাতের উপর দিল।

‘নাও খাও তোমাকে অত্যাচার করতে চাই। কিন্তু তার জন্য না খাইয়ে অসুস্থ করার কোনো রকম ইন্টারেস্ট আমার নাই। পরে তোমাকে নিয়ে অশান্তিতে আমাকেই ভুগতে হয়।’

খাবার দেখেই বর্ষার খিদে যেন তিনগুণ বেড়ে গেল। কিন্তু এই খারাপ লোকটার খাবার ও খেতে চায় না। ও খাবারের প্লেট হাতে শক্ত হয়ে বসে আছে। তূর্য ওর সামনে দাঁড়িয়ে এইসব দেখে দাঁত চেপে বললো,

‘এই না বললে সারাদিন না খাইয়ে তোমাকে অত্যাচার করেছি। এখন খাবার দিলাম খাচ্ছ না কেন?’

বর্ষা তূর্য এর দিকে অশ্রু নয়ন চোখে তাকিয়ে বললো,

‘আপনার দেওয়া কোন খাবার আমি খাব না।
দরকার হলে না খেয়ে মরে যাব।’
বলেই বর্ষা খাবার নিচে নামিয়ে রাখে।

তূর্য বর্ষার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল এটা দেখে ও শান্ত ভঙ্গিতে বলে, ‘ অ্যাটিটিউড না দেখিয়ে চুপচাপ খাবারটা খেয়ে নাও। আমি তোমার আপন কেউ না যে তোমার মরে যাবার কথা শুনে ভয় পেয়ে যাব। আর তোমাকে আহ্লাদ করে খাওয়াবো।’

আপনাকে বলেছি কি আমি আপনি আমাকে আহ্লাদ করে খাওয়ান।’ রেগে।

‘তোমার ভাবভঙ্গি দেখে তো আমার তাই মনে হচ্ছে। মানে আমার হাতে খেতে চাইছো। সব মেয়েরা এক রকম ছেচরা টাইপের। সকালে জ্বরের অজুহাতে আমার হাতে খেয়েছ আবার এখন খাবে না বলে ঢং করছ।’

‘কি আমি আপনার হাতে খেয়েছি জ্বরের অজুহাতে। আর এখন ঢং করছি মনে হচ্ছে?’

‘অফকোর্স। না খেয়ে অসুস্থ হয়ে সেবা পাওয়ার ধান্দা।’

‘আপনি আমাকে অপমান করছেন?’

‘এখন বুঝতে পারলে।’

রাগে বর্ষা কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। অতি আদরের মেয়ে হ‌ওয়ার বর্ষার অধিক মাত্রায় রাগ। তূর্য বর্ষা কে রাগিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে হাসছে। আর এতে বর্ষা যেন শরীরের আগুন ধরে যাচ্ছে। তূর্যের মুখের হাসি দেখে হা হয়ে গেছিল বর্ষা। মারাত্মক সুন্দর হাসি। যে কোন মেয়ে প্রেমে পরতে বাধ্য এই হাসিতে। কিন্তু বর্ষা পারল না ও রেগে তাকিয়ে আছে।
রাগে ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। লোকটা কে উচিত শিক্ষা দিতে না পারা পর্যন্ত শান্তি পাবে না।
আচমকা খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে তূর্যের মুখ বরাবর ছুড়ে মারল। সমস্ত খাবার তূর্য এর শরীরে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। আচমকা কাজে তূর্য স্ট্যাচূ হয়ে গেল। মুহুর্তের মাঝে যেন একটা ঝড় বয়ে হয়ে গেল।

তূর্য রাগে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। বর্ষা কাজটা করে আনন্দ পেলেও কষ্ট পেলো খাবার নষ্ট হলো লোকটার জন্য। আল্লাহর কাছে মনে মনে ক্ষমা চাইছে রাগের মাথায় খাবারটায় নষ্ট করে দিয়েছে।
তূর্য অগ্নিদৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকালো। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন বর্ষাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারলে। তাহলে ওর শান্তি লাগবে। রাগে তূর্যের কপালের রগ ফুলে উঠেছে। মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে,

‘You put so much courage on me.’

তূর্য এর ককর্শ গলায় আওয়াজ শুনে বর্ষা শুকনো ঢোক গিলে। ও ভয় পেলেও নিজেকে সাহসি প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বলে,

‘আপনার জন্য এটাই ঠিক হয়েছে। আমার তো মন চাইছে আপনাকে….

আর বাকিটুকু বলতে পারল না। তূর্য এগিয়ে আসতে লাগলো রাগী চোখে তাকিয়ে ওর দিকে। বর্ষা দাঁড়িয়েছিল তূর্যের এগিয়ে আসা দেখে ভয় পিছিয়ে যেতে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।

‘আমার দিকে এরকম রাক্ষসের মত তাকিয়ে এগিয়ে আসছেন কেন? দূরে যান একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না‌।’

ভয়ে বর্ষার মুখে একটুখানি হয়ে গেছে।

‘অনেক সাহস দেখিয়ে ফেলেছো তুমি!’

বলে একদম বর্ষার কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় তূর্য। বর্ষার পেছনে যাওয়ার আর জায়গা নাই তাই নিজের মাথায় পেছনে হেলিয়ে দেয় আর তূর্য ফট করেই হাত উঁচু করে। বর্ষা ভয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠে,

‘ দুইবার আমার গায়ে হাত তুলেছেন। এটা নিয়ে তিনবার হবে।’

বর্ষা চোখে খিচে বন্ধ করে আছে ভয়ে। অপেক্ষা করছে থাপ্পর খাওয়ার জন্য। তূর্য কথাটা শুনে হাত থামিয়ে ফেললো। আর বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে টান মেরে দাড় করিয়ে ফেললো। বর্ষা আচমকা টানে ভয় পেয়ে তূর্য এর শার্ট খামচে ধরে। পিটপিট করে চোখ মেলে ভীতু মুখ করে। তূর্য দাঁত চেপে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।বর্ষা ঢোক গিলতে বাস্ত।

‘ প্রথম অন্যায়, তুমি খাবার গুলো ফেলে নষ্ট করেছো। তোমার দ্বিতীয় অন্যায়, আমার গায়ে খাবার ছুড়ে মারার সাহস দেখিয়েছে। দুই দুটো অন্যায় এর জন্য তোমাকে শুধু মারলে হবে না।’

‘মানে কি বলতে চাইছেন আপনি?আমি খাবার ফেলে অন্যায় করেছি ঠিক আছে। কিন্তু আপনার উপর ফেলে আমি কোনো অন্যায় করিনি একদম ঠিক কাজ করেছি।’

তেজি গলায় বললো বর্ষা। তূর্য শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। নিজের হাত বর্ষার কোমরে ধরা ছিল। বর্ষার এমন তেজি কন্ঠ শুনে তূর্য আরো শক্ত করে চেপে ধরে কোমর যাতে বর্ষা নিজে কোমরে ব্যথা অনুভব করে। আর ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগে। ব্যথায় ওর চোখে অশ্রু চলে আসে। তুর্য সে দিকে তোয়াক্কা না করে নিজের হাত আরো শক্ত করে কোমর চেপে ধরে বলে,

‘ I can’t imagine what I will do to show you such courage.’

‘ছারুন আমাকে আমি ব্যাথা পাচ্ছি।’

ব্যথায় একটুখানি মুখ করে বলল বর্ষা। তূর্য কোমর ছেড়ে দিলো ঠিক‌ই। কিন্তু হাত আরো শক্ত ধরে টেনে বাথরুমে নিয়ে এলো। বর্ষা বলছে,

‘ছারুন আমার হাত। আমাকে এভাবে কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

তূর্য উওর দিলো না। বর্ষাকে টেনে বাথরুমে এনে ছারতেই বর্ষা বিস্মিত হলো। এখানে নিয়ে এলো কেন? পাগল নাকি!

মুখে বলেই ফেললো, ‘ আর ইউ ম্যাড। আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন মাথা গেছে নাকি আপনার।’

‘And if I say a bad word, I will bury this idiot girl here.’

বলেই বর্ষার গলা চেপে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড় করালো। বর্ষা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর কথা বলতে পারছে না।হাত বাড়িয়ে তূর্য এর হাত সরানোর চেষ্টা করছে। শেষ সময়ে তূর্য গলা থেকে হাত সরিয়ে নিলো আর বর্ষার দুপাশে দেয়ালের দুহাত রেখে বর্ষার উপর সামান্য ঝুকে বলতে লাগলো,,

‘আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে আসলে তার ফল তোমার জন্য ভালো হবে না। তাই নিজের মুখটা বন্ধ রাখ। এটার তোমার জন্য বেটার।’

বর্ষা গলায় হাত দিয়ে খুকখুক করে কেঁশে উঠলো। এতো ভয় পেয়েছে যে ও কথা বলতে পারছে না।ভয়ে ওর শরীর কাঁপছে। কিছু ক্ষনের জন্য মনে হয়েছিলো এইখানে বুঝি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে।
ভয়ে আর তূর্য এর দিকে মাথা তুলে তাকাতে পারলো না। বর্ষা নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে।

তূর্য বর্ষা থেকে সরে এসে নিজের শার্ট এর বোতাম খুলতে লাগলো। এই শার্ট এই মেয়েকে ধুয়াবে ও। এজন্য এটাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
বর্ষা দেয়ালে হেলান দিয়ে কাঁদছে। আর এক হাত গলায় বুলাচ্ছে। আরেক হাত পাশে ঝর্নার হ্যান্ডেল ধরে কাঁদছে ঠোঁট কামড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। তূর্য শার্ট খুলে বর্ষার মুখে ছুড়ে মেরে এগিয়ে এলো। আর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘ নষ্ট করেছো তুমি। নিজে তাই নিজেই এটা পরিষ্কার করবে ওকে।’

বর্ষার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো।
বর্ষার মুখে আচমকা কিছু ছুটে আসতেই চমকে মাথা তুলে তাকায় আর দেখতে পায়। তূর্য এর শার্ট তা ওর দিকে ছুঁড়ে মেরেছে। ও ঝর্না হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে ছিলো। তাই এসবের হাত মুচার লেগে ঝর্না চালিয়ে ফেলে ভুল বশত। আর এতে ঝমঝম করে পানি বর্ষা ও তূর্য এর গায়ে পরে শরীর ভিজিয়ে দেয়। বর্ষা চমকে উপর দিকে তাকিয়ে ভয়ে আতকে উঠে। ওর হাতের চাপ লেগে এসব হয়েছে বুঝতে পারে। বর্ষা ভয় পেয়ে যায় ভয়ার্ত চোখে তূর্য এর দিকে তাকায়। তূর্যের কপাল বেয়ে পানি মুখ থেকে গলায় পরছে সারা শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। ও নিজেও ভিজে যাচ্ছে।ওর জন্য ঝর্না চালু হয়ে গেছে। এখন কি এর জন্য ওকে শাস্তি দিবে কিনা! ভেবে বর্ষা কুঁকড়ে যাচ্ছে ভয়ে। গলা চিনতে চেপে ওকে তো মেরেই ফেলছিলো।এখন যদি রেগে সত্যি মেরে ফেলে তাহলে কি হবে? বাপি, মাম্মার আর‌ দেখা হবে না।

তূর্য এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। এইসব বর্ষার জন্য হয়েছে ও বুঝতে পারছে। রেগে বর্ষার দিকে তাকালো। বর্ষা ওর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ পিটপিট করছে।বন্ধ করছে তো খুলছে আসলে বর্ষা তো ভিজে যাচ্ছে ওর কপাল বেয়ে চোখে পানি পড়ছে চোখে আর ও তার জন্য চোখ বন্ধ করে আবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। মনে মনে বর্ষা শুকনো ঢোক গিলছে। তূর্য কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। দুজনে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। বর্ষার সাদা শার্ট ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। তূর্য নেশাতুর দৃষ্টিতে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য কে এমন নিজের দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বর্ষার সন্দেহ হচ্ছে। না বকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? বর্ষা চোখ নামিয়ে ভাবছে এমন হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে কেন? এই গন্ডার টার আবার টা হলো? হুট করেই ও নিজের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। তূর্যের এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ বুঝতে পেরে লজ্জায় পেছনে ঘুরে যায়। আমার বিরবির করে বলে,

‘ নির্লজ্জ, চরিত্রহীন লোক একটা।’

#চলবে….
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here