তুমি যে আমার পর্ব -০৮

#গল্পের_নাম_তুমি_যে_আমার
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:৮

ইলহামের কথা শুনে হেমন্তি নিজেকে সামলে ইলহামের পাশে বসে বললো,

~সেদিন কী হয়েছিলো? ইলহাম আমাকে বলুন এভাবে নিজেকে সত্য থেকে আড়ালে লাগতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

ইলহাম হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,

~বিয়ের দিন বাবা সকালে তোমাদের বাসায় চলে গিয়েছিলো কেন যাচ্ছে তা জিজ্ঞেস করতেই সে জানালো তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে তাই সে যাচ্ছে।মা আর আমি কোনো কিছুই আর জিজ্ঞেস করলাম না আমরাও ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম নিজ নিজ কাজে।১ঘন্টা পর বাবা ফিরে আসে তাকে দেখে অনেক খুশি লাগছিলো আমরাও আর তাকে নিয়ে ঘাটলাম না বরযাত্রা বের হওয়ার সময় বাবা আমার রুমে এসে বললেন এ বিয়ে হবে না।

এতটুকু বলে ইলহাম থামলো তার গলা শুকিয়ে গেছে হেমন্তি তা বুঝতে পেরে গ্লাসে করে পানি নিয়ে আসলো।ইলহাম গ্লাস টা নিয়ে সবটুকু পানি খেয়ে নিলো এরপর গভীর নিশ্বাস টেনে বললো,

~তার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম আর কারণ জিজ্ঞেস করতেই সে বললেন আমি যা বলেছি তা করতে।আমি তার কথার অবাধ্য হয়ে রুম থেকে বের হতে নিবো তখনই সে আমার মাথায় আ/ঘা/ত করে যার ফলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।মাকেও তিনি ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো আমি সকল কিছু আমার বন্ধুূদের থেকে জানতে পারি সেদিন থেকে আমি সব প্রমাণ জোগার করতে থাকি।আজ আমি সফল তো হয়েছি কিন্তু সেই মানুষটার চতুর বুদ্ধির কারণে আমি হেরে যাচ্ছি আমার দাদা তার নিজ বাবাকেও তিনি ছাড়েননি মে/রে ফেলেছেন।

ইলহামের কথা শেষ হতেই কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ আসে হেমন্তি আর ইলহাম পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলেন মাহমুদা বেগম দাড়িয়ে আছেন।ইলহাম মাকে দেখে সোফা থেকে দাড়িয়ে পরে তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বলে,

~মা,তুমি ঘুমাও নি?

মাহমুদা বেগম কেঁদে উঠলেন আর বললেন,

~বাবাকে ও ছাড়েনি ওই পা/ষা/ণটা এতো ভালো মানুষটাকে
মে/রে ফেললো।

বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন ইলহাম মাকে জড়িয়ে ধরলো হেমন্তি মাহমুদা বেগমকে ধরে বললো,

~আন্টি,এভাবে কান্না করবেন না রুমে চলুন ঘুমাতে হবে।

মাহমুদা বেগম হেমন্তির হাত ধরে রুমের দিকে চললেন ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজ রুমে চলে গেলো।এখন শুধু অপেক্ষা করতে হবে এটা ছাড়া কোনো উপায় তাদের নেই কালকে ইলহামের ইন্টারভিউ আছে তাই জলদি উঠতে হবে।হেমন্তি মাহমুদা বেগমকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।মাহমুদা বেগম হেমন্তির হাত ধরে বললেন,

~আমার ছেলেটা খুব ভালো মা ওর বাবার মতো একদমই না তুমি ওকে অবিশ্বাস করো না।

হেমন্তি কোনো কথা বললো না চুপচাপ সেখানেই বসে রইলো মাহমুদা বেগম এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে গেলেন।সকাল বেলা ইলহাম তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হতেই রান্নাঘর থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেলো।ইলহাম রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো মাহমুদা বেগম,হেমন্তি আর খালা তিনজনই আড্ডায় মেতে উঠেছে।মাহমুদা বেগম ইলহামকে দেখে বললেন,

~তুই তৈরি হয়ে গেছিস যা টেবিলে বস নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে।

ইলহাম মুচকি হেসে টেবিলে বসে পরলো হেমন্তি টেবিল সাজিয়ে দিলো সবাই একসাথে বসে নাস্তা করে নিলো।খালা নাস্তা শেষ করে বললেন,

~ইলহাম এখন আমার গ্রামে চলে যাওয়া উচিত তোর ভাইয়েরা ফোন করছে প্রতিদিন।

মাহমুদা বেগম বললেন,

~আরো কিছুদিন থেকে যা আমি তো একা হয়ে যাবো।

খালা হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললেন,

~একা কেন হবি?হেমন্তি আছে তো?

মাহমুদা বেগম বললেন,

~হেমন্তিও তো চলে যাবে কয়েকদিন পর।

মাহমুদা বেগমের কথা শুনে ইলহাম হেমন্তির দিকে তাকালো আর দেখলো হেমন্তি এক মনে নাস্তা করে যাচ্ছে এতে তার কোনো হেলদোল নেই।ইলহাম নাস্তা শেষ করে বললো,

~ঠিক আছে খালা কালকে আপনাকে বাস স্টেশনে আমি পৌছে দিবো এখন যাই সকলে দোয়া করবে আমার জন্য।

মাহমুদা বেগম হাত তুলে ছেলের জন্য দোয়া করলেন ইলহাম বাসার দরজার সামনে আসতেই হেমন্তি তাকে ডেকে বললো,

~শুনুন।

ইলহাম হেমন্তির ডাকে পিছন ফিরে তাকালো হেমন্তি বললো,

~ইন্টারভিউয়ের জন্য অ’ল দ্যান বেস্ট আর সবকিছু ঠিক হওয়া পর্যন্ত আমি আন্টির সাথেই থাকবো।

বলেই হেমন্তি নিজ রুমে চলে গেলো ইলহাম আলতো হেসে চুলগুলো নেড়ে ফাইলটা হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলো নতুন উদ্দেশ্যে। ইশরাক সাহেব হতবাক হয়ে আছেন তার সামনে হাসান সাহেব বসে আছেন মেডিকেল রির্পোট নিয়ে।হাসান সাহেব বললেন,

~যেদিন থেকে শুনেছি আপনার অসুস্থতার কথা সেদিনই বুঝতে পেরেছি এসব আপনার নাটক।তাই ডাক্তারকে ধরে এমন পা/লি/শ দিয়েছি যে সে নিজেই সব রির্পোট আমার হাতে তুলে দিয়েছে।

ইশরাক সাহেব শুকনো ঢোক গিলে বললেন,

~এমনটা করবেন না প্লিজ আমার জীবনটা শে/ষ করবেন না।

হাসান সাহেব মৃদ্যু হেসে বললেন,

~আপনার জীবন আপনিই নিজেই শে/ষ করেছেন।

বলেই হাসান সাহেব উঠে দাড়ালেন কেবিন থেকে বের হয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে সকল রির্পোট দিয়ে দিলেন পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করলেন যে ইশরাক সাহেবকে এখনই থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।হাসান সাহেব কথা শেষ করে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসলেন সে মনে মনে বললেন,

~এখন শুধু একটিই কাজই বাকি আছে।

ইলহামের ইন্টারভিউ অনেক ভালো গিয়েছে সে হয়তো চাকরিটা পেয়ে যাবে তাকে বলেছে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে।তখনই তার নজর পরলো টিভিতে তার বাবাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সকল নাটক ফাঁ/স হয়ে গেছে।ইলহাম অবাক হলো এসব কীভাবে হলো সে তো এখন পর্যন্ত কোনো রির্পোটই হাতে পাইনি।ইলহাম চিন্তিন হয়ে বসে আছে তখনই কোম্পানির লোক খাম এগিয়ে দিয়ে বললেন,

~আপনার চাকরিটা হয়ে গেছে কাল আপনার জয়েন্ট।

ইলহাম খুশি হয়ে গেলো এখন তারও নিজের পরিচয় হবে সে খামটা হাতে নিয়ে বের হয়ে আসলো।তার যে কতোটা খুশি লাগছে সে বলে বুঝাতে পারবেনা ইলহাম মানিব্যাগটা বের করে দেখলো সেখানে ৭,৫০০ টাকা আছে।সে হিসেব করলে মাহমুদা বেগম,খালা আর হেমন্তির জন্য তিনটি শাড়ি কিনবে আর কিছু বাজার হয়ে যাবে।সে তাই করলো মাহমুদা বেগমের জন্য হালকা গোলাপী রঙ্গের,খালার জন্য নীল রঙ্গের আর হেমন্তির জন্য লাল রঙ্গের শাড়ি কিনলো।বাজার করে সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।ইলহাম মনে মনে বললো,

~হেমন্তি কী আমার দেওয়া শাড়ি নিবে?

চলবে

(বিদ্র:কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here