তুমি যে আমার পর্ব -৩০+৩১

#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_30

আরিয়ান অনেক সিনক্টে করেছে নিদ্রার সাথে। ওকে কাল জোর করে বাসা নিয়ে গেছে। তারপর অভ্র কে ডির্ভোস দেওয়ার কথা বলেছে। নিদ্রা তাতে অস্বীকার করেছে এজন্য অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করেছে। রাগে আরিয়ানের কপালের রগ ফুলে উঠেছে ও রাগে পাশের ফুলদানি হাতে নিয়ে তা ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ফ্লোরে। তা দেখে আরিয়ানের মা চোখ বড় করে ফেললো। কারণ এই ফুলদানি টা তার প্রিয় ছিলো কিছুদিন আগেই এটা তিনি কিনে এনেছিলো। ইশ এই অলক্ষী মেয়েটার জন্য তার স্বাদের ফুলদানি গেলো। আফসোস করতে লাগলো। কটমট করে তিনি একবার ছেলের দিকে তো একবার নিদ্রার দিকে তাকাচ্ছে।
নিদ্রা কে তিনি একটু ও সহ্য করতে পারে না। তাকে নিজের পুত্র বধু করার একটু ও ইচ্ছে নাই। কিন্তু এই যে তার ছেলে তিনি এই অনাথ মেয়ের প্রেমে মশগুল হয়ে আছে। সম্পত্তি না থাকলে এই মেয়েকে নিজের ছেলের মাথা থেকে বের করতোই কিন্তু ওই কারণে তা করে না। কিন্তু ছেলে তার সত্যি ভালোবাসে এই মেয়েকে এজন্য একটু অত্যাচার ও করতে পারেনা।আগে এমন ছিলোনা। আরিয়ান ও নিদ্রাকে পছন্দ করতো না। সব সময় ওকে মারতো ধমকাতো। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিদ্রার রুপ যৌবন দেখে আরিয়ানের নেশা ধরে যায়।
তারপর থেকে আর খারাপ ব্যবহার করে না নিদ্রার সাথে। মনে মনে আরিয়ান নিদ্রাকে বিয়ের করার স্বপ্ন দেখে। আরিয়ান এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা ও করে না। আর মেয়েরা তো ওর প্রতি রাতে সঙ্গি। মেয়েদের মাঝেই ডুবে থাকে। আর নারী পাচার, শিশু পাচার নানা ধরনের খারাপ কাজে লিপ্ত আছে আরিয়ান। এজন্য ওর টাকাও কম নাই।আরিয়ান কাউকে ভয় পায় না উল্টা ওকে সবাই ভয় পায় শুধু একজন বাদে। যাকে ও নিজেও ভয় পায়। সে হলো তূর্য। এখনো তূর্য কে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আরিয়ান এর। ওর যত লোক তূর্য কে দেখেছিলো সবাইকে ওই তূর্য মেরে ফেলেছে। তাই ওর এক মাত্র শত্রু তূর্য। যার চোখ দেখেছে শুধু। আরিয়ান হাজার মেয়েকে বেড পার্টনার করলেও ব‌উ শুধু নিদ্রাকেই করবে। কিন্তু সেই নিদ্রা কিনা অন্য কাউকে বিয়ে করে বসে আছে। আবার এখন ডির্ভোস ও দেবে না।
আরিয়ান নিদ্রাকে ধমকিয়ে একটা রুমে বন্দি করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। এখন যাবে ওর আস্তানায় মেয়ের কাছে মেয়ে ছাড়া ওর কোন রাতেই যায় না।

সারা রাত নিদ্রা বিছানায় কোণায় বসে কাঁদে তারপর ওইভাবেই ঘুমিয়ে পরে। ওর ফোনটাও নিয়ে গেছে তাই অভ্রকে কল করতে ও পারছে না।এখানে পরে থাকা ছাড়া কিছু করার নাই। আরিয়ান ও তার বাবা মাকে নিদ্রা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। ও অভ্রকে ছাড়লেও এই নরপশুকে বিয়ে করবে না। কখনো না।
সকালে উঠে ও প্লান করেছে বারান্দায় দিয়ে কাপড় দিয়ে নিচে নেমে পালাবে।রাতে ইচ্ছে করেই কিছু করেনি। কারণ রাতে রাস্তায় বিপদ আপদ এর কথা ভেবেছে।
উঠে ওয়াশরুম থেকে চোখে মুখে পানি দিয়ে আলমারি খুলে ওর শাড়ি বের করলো। ওর রুমেই ওকে বন্দি করে রেখেছে। নিজের একটা শাড়ি এটা আম্মুর সেটাই নিয়ে সাথে দুইটা ওড়না গিট্টু দিয়ে বারান্দার চলে আসে।
তখন ওর চোখ যায় নিচে অফিসার আদিল ও অভ্র এগিয়ে আসছে বাসার দিকে। ও তাদের দেখেই চেঁচিয়ে উঠে। আর সাথে সাথে দুজনে মাথা উঁচু করে নিদ্রা দেখতে পায়।

অভ্র নিদ্রাকে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিদ্রার এলোমেলো হয়ে ফর্সা লাল মুখটার দিকে। সারা রাত ওর নিদ্রার চিন্তার পাগল প্রায় হয়ে গেছিলো। নিদ্রা কে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিদ্রা ঠিক আছে তা দেখেই ওর চিন্তা কমতে লাগে।
আদিল আর অভ্র তারাতাড়ি বাসায় ঢুকে যায়। দরজা খুলতেই অভ্র কোন দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে উপরে চলে যায়।নিদ্রা কে ছুঁয়ে দেখা না পর্যন্ত ওর শান্তি লাগছে না। দরজার কাছে এসে থমকে যায় দরজা লক করা। নিদ্রা কে বন্দি করেছে এবার ক্লিয়ার হয় সব ওর। ও দরজায় লাথি দিয়ে খুলার চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেনা। দরজা খুলে দিয়েছে কাজের মহিলা।

এদিকে তূর্য বাসায় ঢুকে সোফায় বসে আছে। পায়ের উপর পা তুলে চারপাশে তাকাচ্ছে। তখন ছুটে এলো আরিয়ানের মা পুলিশকে বসে থাকতে দেখে তিন ঘাবড়ে গেলো। আরিয়ানের বাবা ও এক‌ই অবস্থা। তারা ঢোক গিলে তূর্য এর সামনে এসে বললো,

‘ অফিসার আপনি এখানে কি করছেন?’

তূর্য রাগী চোখে তাকালো আরিয়ানের বাবা মায়ের দিকে তা দেখে তারা ভয় পেয়ে গেলো। তখন কিছুর শব্দ কানে এলো দুজনেই দুতালার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

‘ উপরে কে শব্দ করছে?’ বলে উঠলো আরিয়ান এর মা‌।

মনে মনে ভাবছে আরিয়ানের বাবা নিদ্রাকে উপরের রুমে আরিয়ান বন্দি করে গেছে। পুলিশ কি নিদ্রার জন্য এসেছে নাকি। লেখিকা নন্দিনী নীলা।
উনি ঘামতে শুরু করে দিলেন। তূর্য দুতালায় দিকে শব্দ পেয়ে সেদিকে ছুটলো কথা না বলেই। তা দেখে আরিয়ানের বাবা মায়ের অবস্থা নাজেহাল। পুলিশ যদি দেখে নিদ্রাকে আটকে রেখেছে তাহলে কি হবে।

পেছন পেছন নিজেরাও গেলো।
নিদ্রা দরজা ধাক্কা শুনে দরজার কাছে এসে ডাকছে। তূর্য তা দেখে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরিয়ান এর বাবা মায়ের দিকে আর বলে উঠে,

‘এসব কি?’

আরিয়ান এর বাবা মা মুখ নিচু করে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না। ছেলে তাদের কি ঝামেলা ফাঁসিয়ে গেলো। আরিয়ানের বাবা আরিয়ান কে কল করতে গেলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ পেয়ে উনি হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।

‘ রুমে চাবি দিন।’

‘ আমাদের কাছে চাবি নাই। আরিয়ান এর মা বললো।

‘ কিহহ, মিথ্যা বলার জায়গা পাস না। চাবি দে এইভাবে মিসেস অভ্রকে আটকে রাখার জন্য তোদের জেলে নিতে পারি জানিস।

‘আমরা সত্যি বলছি অফিসার। চাবি আমাদের ছেলের কাছে। আমাদের কাছে নাই‌। আর নিদ্রা কে আরিয়ান তুলে এনেছে আমরা না‌। আমাদের কোন দোষ নাই আমাদের জেলে নিবেন না দয়া করে।’

রাগে তূর্য দুই লাথি মারতেই দরজা খুলে গেলো। নিদ্রা দৌড়ে এসে অভ্রকে জরিয়ে ধরলো। অভ্র ও ধরলো। খুব ভয় পেয়ে গেছিলো ও। স্ত্রী না মানলেও ও নিদ্রাকে খুব ভালোবাসে ও এক মাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড ওর।
আরিয়ান এর বাবা মাকে শাসিয়ে তূর্য নিদ্রা ও অভ্রকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।
বাইরে এসে তূর্য নিদ্রার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আর ইউ ওকে?’

নিদ্রা বললো, ‘ আমি ঠিক আছি। ধন্যবাদ হেল্প করার জন্য।’

‘ আমরা তো আপনাদের সাহায্য করার জন্য ই আছি।’ বলেই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।
তূর্য গাড়ি উঠে গেলো আর বাই বলে চলে গেলো।

এদিকে আরিয়ান বাসায় এসে এসব শুনে রাগে গজগজ করতে লাগলো।

.
পরিক্ষার ফিশ দিতে আজ প্রায় এক মাস পর কলেজ এ যাচ্ছে বর্ষা। বাপি সুস্থ এখন আল্লাহর রহমতে। আজ সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করলো। বাপির মুখের দিকে তাকানো যায় না। কিন্তু বর্ষার দিকে তাকিয়ে ঠিক হাসি দেয় বাপি। যেন কোন চিন্তা নাই তার। কিন্তু বর্ষা জানে এই হাসির আড়ালে কতো কষ্ট লুকিয়ে আছে। ওর জীবন ওর বাপি। তাকে কষ্ট দিয়েছে ওই তূর্য। কোন দিন যদি সুযোগ পায় তাহলে নিজের হাতে শাস্তি দেবে ওই নির্দয়, পাষাণ লোকটাকে।

আনমনে রুটি হাতে এসব ভাবছিলো বাপির ডাকে ভাবনা থেকে ফিরে আসে,

‘ কি ভাবছো বর্ষা মা?’

‘ কিছুনা বাপি।’

বলেই পানি খেয়ে উঠে পরলো বর্ষা।

‘ উঠছিস কেন? খাবার তো শেষ হয়নি।’

বর্ষা মাম্মার কথা শুনলো না বাসা থেকে বেরিয়ে এলো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে। ওর জন্য এসব হয়েছে মনে পরলেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।

পেছনে বর্ষার বাবা নিবিড় চৌধুরী মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো? তাকানো যায় না। চিন্তা করতে করতে চোখ নিচে কালো করে ফেলছে। ঠিক মতো ঘুমায় না।কতো শুকিয়ে গেছে।বাসায় আসার পর আর ওর মুখে আমি হাসি দেখিনা। আমাদের বর্ষা কতো প্রাণবন্ত দিলো, সব সময় লাফালাফি ছুটাছুটি করতো, মুখে থেকে ওর হাসি সরতো না। কি সুন্দর সেজেগুজে থাকতো আর কলেজে যাওয়ার আগেই টাকার জন্য আমার কাছে বসে পরতো। তার বন্ধু দের সাথে এখানে যাবে, ওখানে যাবে, রেস্টুরেন্টে খাবে। সপ্তাহে দুই তিন বার বেড়াতে না গেলে পাগল হয়ে যেতো। আর সে পনেরো দিন ধরে এক ঘরে বসে আছে‌। বললেও কোথাও যায় না। আমাদের সেই আগের চঞ্চল মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো। এই বয়সে কতো ঝড় বয়ে গেলো মেয়েটার জীবন এ।’

বর্ষার বাপিও বেশি খেতে পারলো না।তিনি সোফায় বসে একজন কে কল করলো। এই মানুষটাকে তিনি একমাত্র বিশ্বাস করে। বর্ষাকে রাত দিন এক করে খুঁজেছিল।

তূর্য আরিয়ানের আস্তানায় এসেছিলো। সাথে ছিলো ওর সাঙ্গপাঙ্গ। আরিয়ানের সাথে বসে ডিল করেছে যে শিশুদের আরিয়ান পাচার করতে আটকে রেখেছে তাদের ছেড়ে দিতে। নাহলে ওর বিরুদ্ধে যে প্রমাণ ওর কাছে আছে সব মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করে দিবে। এই প্রমাণ গুলা বর্ষার দেওয়া সেই ফাইল এ ছিল। তূর্য এগুলো আরিয়ান কে দেবে না।এটা জাস্ট মন গড়া কথা। কারণ ও অনেক চেষ্টা করেও শিশুদের নাগাল পাচ্ছে না আরিয়ান যে ওদেরর কোথায় বন্দি করে রেখেছে। আর তিন দিন বাদে ওদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাই এই ডিল।

আরিয়ান বললো, ‘ তোর কাছে আমার কোন প্রমাণ নাই আমি জানি তুই মিথ্যে বলে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস কিন্তু আমি আরিয়ান কাউকে ভয় পাইনা। সবাই আমাকে ভয় পায় আর তুইও পাস তাই তো মুখে মাস্ক দিয়ে লুকিয়ে আমার কাছে আসিস। ভীতু একটা।’

আরিয়ান তূর্য কে রাগিয়ে ওর মুখ দেখতে চায়‌। তাই এসব বলছে। কিন্তু তূর্য ওর কথার ঝালে ফাসবে না ও একটা ভিডিও দেখালো যা দেখে আরিয়ানের হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। কপালে ঘাম ঝড়তে লাগলো।রুমাল দিয়ে ঘাম মুছল আর বললো,

‘ ওটা আমাকে দিয়ে দে তূর্য। ‘

‘ দেবো তো। আমাকে আমার জিনিস দে আমিও তোর প্রমাণ দিয়ে দেবো। ডোন্ট ওয়ারি।’#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_31

আরিয়ান ঝামেলা শুরু করে দিলো। রিভলভার বের করে তূর্যর কপালে ঠেকাল। তাতে তূর্য এর মুখে ভয়ের কোন রেশ পাওয়া গেলো না। স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে। আরিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে চেঁচিয়ে বললো,

‘ ওই মেমোরি কার্ড আমাকে দিয়ে দে। না হলে তোকে মারতে আমি এক সেকেন্ডও সময় নেবো না তূর্য।’

তূর্য আরিয়ানের কথা শুনে তাচ্ছিল্য করে হেসে উঠলো। তূর্য এর লোকেরা এসব দেখে তো সবাই বন্দুক বের করে আরিয়ান দের দিকে তাক করে রেখেছে। তা দেখে তূর্য বাম হাত উঁচু করে রিভলবার নিচে নামাতে বললো। সবাই অবাক হয়ে নামালো।

আরিয়ান তূর্য এর হাসির মানে বুঝতে পারছে না।
‘ তোর ভয় করছে না! তুই এমন করে হাসছিস কেন?’

‘ তোকে আমি ভয় পাবো হা হা হা। হাসির কথা বলিস না। তুই আমার কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে কি ভয় দেখাচ্ছি মৃত্যুর? আমি যে মৃত্যুর ভয় পায় না খুব ভালো করে এতো দিনে বুঝা উচিত তোর‌। আর আমাকে মেরেও তুই নিজের কাজে সফল হবি না। কারণ এর কপি আমার লোকের কাছে আছে। আমার কিছু হলে ওরা এটা ভাইরাল করে দিবে। আমি মরলেও দুই বাচবি না।’

আরিয়ান এসব শুনে বন্দুক নামিয়ে ফেললো। সাথে ওর লোকরাও। তূর্য মুখ বাঁকা করে হাসছে।
আরিয়ানের শরীর জ্বলে যাচ্ছে এই হাসি দেখে। কি করবে ও এখন। ওই শিশুদের কাল বিদেশে না পাঠালে ওর অনেক বড় লস হয়ে যাবে। কতো কোটি নিয়েছে সেসব সুদ করবে কি করে। দুশ্চিন্তায় হাত পা অবশ হয়ে আসছে।
তূর্য পায়ের উপর পা তুলে আরিয়ানের মুখটা দেখছে আর তাচ্ছিল্য হাসি দিচ্ছে।

আরিয়ান তূর্য কে সব বলে দিলো। এছাড়া উপায় নেয়। এসব ভাইরাল হলে ওকে জেলে গিয়ে পচে মরতে হবে। এখন এই তূর্যর কাছে নিচু হতে হবে। কিন্তু পরে এর প্রতিশোধ নিয়েই ছারবে ও।
তূর্য আরিয়ানের থেকে খবর নিয়ে সাথে সাথে শাওন কে কল করলো। আর জায়গায় ঠিকানা দিয়ে দিলো।

‘ এবার প্রমাণ দে।’

‘ ওয়েট এতো তারা কিসের।’

বলেই তূর্য উঠে দাঁড়ালো। আরিয়ান তা দেখে বললো,

‘ না দিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?’

‘ কি দেবো?’

‘ কি দিবি মানে! ইয়ার্কি হচ্ছে আমার সাথে! প্রমাণটা তাড়াতাড়ি দে না হলে বেচে ফিরতে পারবি না এখান থেকে!আমার সাথে চালাকি!’

‘এতো ভয় পাস না। এটা আমি ভাইরাল করবো না। কিন্তু এই প্রমাণটা আমি তোকে দিয়ে দেবো না।’

বলেই তূর্য চলে যেতে নেই আরিয়ান রেগে ওর কলার চেপে ধরে। তা দেখে রাগে তূর্য এর কপালের রগ ফুলে উঠে আর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আরিয়ানের গাল বরাবর ঘুসি মারে আরিয়ান ছিটকে পড়ে টেবিলের উপর। ছোটখাটো যুদ্ধ লেগে যায়। আরিয়ান ও ওর লোকদের আধমরা করে তূর্য ওর লোকদের নিয়ে বেরিয়ে আসে। ঘুসাঘুসি করতে গিয়ে ওর সানগ্লাসটা ভেংগেছে ভাংগা সানগ্লাস টা দেখতে দেখতে গাড়িতে উঠে বসে। শাওন কল‌ করে জানায় বাচ্চা দের উদ্ধার করেছে।

শাওন এর কাছে যায়। বাসায় আসতে রাত এগারোটার বাজে। একসাথে দুজন আসে।
বাসায় এসে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল সেরে নেয়।
রুমে আসতেই ওর কল আসে। নাম্বার দেখেই ওর ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসে।

‘ হ্যালো অফিসার আদিল।’

‘ ইয়েস। কি খবর স্যার?’

‘তোমাকে আসতে বলেছিলাম বাসায় কিছু দরকারি কথা ছিলো।’

‘ ও হ্যা। আসলে একটা জরুরী কাজে গেছিলাম তাই আপনার ব্যাপারটা একদম ভুলে গেছি। আজকে বোধহয় আসতে পারবো না। আমি আপনার সাথে কাল মিট করি স্যার!’

‘ ওহ আচ্ছা সমস্যা নাই। কিন্তু আমি কি জন্য তোমাকে আসতে বলেছি তুমি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছ কি?’

‘ আমার মনে হয় পেরেছি। আমি আপনাকে সাহায্য করবো। আপনাকে আমি বিশ্বাস করি আর কেউ পাশে না থাকলেও আপনি আমাকে পাশে পাবেন স্যার।’

‘ থ্যাংক ইউ অফিসার এজন্যই তো আপনার সাথে আমি কথা বলি। আপনি আমাকে ওই লম্পটায খুঁজে এনে দিন। যে আমাকে নিঃস্ব করেছ।’

‘ চিন্তা করবেন না। তাকে খুব তারাতাড়ি পেয়ে যাবো।’

‘ মেয়েটার দিকে তাকাতে পারি না।’

‘ ও আচ্ছা রাখছি। কাল দেখা হচ্ছে কেমন।’

‘ আচ্ছা।’

তূর্য কল কেটে দিলো।

‘ আমার সাহায্যে আমাকেই খুঁজতে চায়। ও গড! কিন্তু আমি আপনার বিশ্বাস যোগ্য পাত্র হয়ে থাকব স্যার।আপনার বিশ্বাসযোগ্য না হলে যে আপনার কলিজাটা আমার হবে না। আপনি নিজের হাতে আমার হাতে তুলে দিবেন তাকে।’

শাওন ওর দিকে তাকিয়ে আছে সন্দেহ চোখে।

‘ ওই কি ভেবে হাসছিস?’

‘ কিছুনা।’

শাওন ওর ব্যাপার বাদ দিয়ে তিশাকে কল করলো।

.
নিদ্রা এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে যাচ্ছে না। আরিয়ানের ভয়ে যাওয়ার সাহস করতে পারছে না। ও বারান্দায় বসে ছিলো অভ্র ওর পাশে এসে বসলো। ওকে চিন্তিত দেখে বললো,

‘ কি হয়েছে? কি এতো চিন্তা করছিস?’

নিদ্রা চমকে উঠে তাকায়।

‘ কিছুনা।’

‘ মিথ্যা বলছিস?’

‘ আমার একা বাইরে যেতে ভয় করে আমি এখন কি করবো?’

‘ একা যাবি কেন? দরকার হলে আমাকে সাথে নিয়ে যাবি একা যাওয়ার দরকার কি?’

‘ হাসপাতালে যাব কি করে?’

‘ চাকরি ছেড়ে দে। তোর চাকরি করার কি দরকার। আমার ইনকাম এ কি তোর চলবে না।’

‘ তোর ইনকাম এ আমি চলবো কেন?’

‘ তো কার ইনকাম এ চলবি? বর এর ইনকাম এই তো ব‌উ চলে।’

‘ হুম জানি। কিন্তু আমি তোর ইনকাম এ চলবো কেন? তুই কি আমাকে ব‌উ মানিস?তুই তো আমাকে যেকোনো সময় ডির্ভোস দিয়ে দিবি।’

‘ আমি তোকে ডির্ভোস দেবো না।’

নিদ্রা অবাক হয়ে তাকালো,’ কেন? ভালোবাসিস আমাকে?’

‘ জানিনা। কিন্তু আমি তোকে ছারবো না। সারাজীবন তুই আমার ব‌উ থাকবি আর আমি তোর বর।’

‘ কি সব বলছিস? পাগল হয়ে গেলি নাকি? আর তোর বর্ষার কি হবে?’

‘ ওর আবার কি হবে?’

‘ তুই তো ওকে ভালোবাসতি। আরেকটা কথা তুই বর্ষার সাথে দেখা করেছিস আর?’

‘ না।’

‘ কেন?’

‘ ওর সাথে কেন দেখা করবো?’

‘ তুই ওকে ভালোবাসিস। বিয়ে করতে চাস এসব বলবি।’

‘ জোর করে সংসার ভাঙতি চাইছিস কেন? আমি বলছি তো আমি তোর সাথেই থাকতে চাই। বর্ষাকে আমি ভুলে যেতে চাই।’

‘ জোর করে আমাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করিস না। আর আমাকে দয়া করিস না। আমি কারো দয়া নেবো না‌‌।’

‘ আমার ভালোবাসা তোর কাছে দয়া মনে হচ্ছে।’

‘ তুই ভালোবেসে এসব বলিস নি। তুই দয়া করে বলছিস।আমি কারো দয়া চাই না।’

অভ্র নিদ্রার এক হাত ধরে বললো।
‘ তোর মুখে ভালোবাসার কথাটা জানার পর থেকে আমার নিজের মধ্যে আমি পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। তোকে যখন সেদিন পাওয়া গেল না। আমার মনে হয়েছিল তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি মরে যাব। কিছুক্ষণের জন্য আমার দুনিয়া থমকে গিয়েছিল। তোকে দেখে আমি আবার জীবন ফিরে পেয়েছিলাম। তোকে আমি ভালবাসি কিনা জানিনা কিন্তু আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না সেটা বুঝে গেছি। সারাক্ষণ তোর চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। বিশ্বাস কর। বর্ষা ফিরে এসেছে জানা সত্ত্বেও আমার ওকে দেখতে যেতে ইচ্ছে করে নি। ওর জন্য সে আগের ফিলিংস আমি পাইনা। আর মনে হয় বর্ষার প্রতি শুধু আমার চোখের ভালোলাগা ছিল ভালোবাসা না। আমার ভালোবাসা অন্য কেউ। সেই অন্য কে ও টা…..

‘সে অন্য কেউটা আমি অন্তত না আমি জানি।’

বলেই নিদ্রা ভেতরে চলে গেল। আর অভ্র অসহায় মুখ করে বসে রইলো।

#চলবে……….

#চলবে…….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here