তুমি শুধু আমারই হও ২ পর্ব – ১০ ও শেষ

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#অরনিশা_সাথী

|অন্তিম পর্ব|

মিনিট বিশেক হবে অর্নি আর নূর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। এতক্ষণ যাবত দুজনেই কাঁদছিলো। উৎসবের এক রাম ধমক খেয়ে দুজনেই কান্না থামিয়েছে। ওদের দুজনকে এভাবে জড়াজড়ি করে বসে থাকতে দেখে রুশানের এবার বেশ হিংসা হিংসা হচ্ছে। ওরা তিনজনে বেস্ট ফ্রেন্ড। একেবারে একে অপরের জান যাকে বলে। কিন্তু অর্নি আর নূর তো এখন ওকে পাত্তা’ই দিচ্ছে না। দুজনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেটে একাকার অবস্থা। আচমকাই রুশান নূরের হাত ধরে টান দিয়ে ওকে অর্নির থেকে সরিয়ে দিলো। অর্নি আর নূর দুজনেই অবাক চোখে তাকায়। রুশান ওদের দুজনের মাঝ খানে বসে বললো,
–“আমি’ও যে তোদের গ্রুপের একজন এটা তো মনে হয় তোরা ভুলে’ই গেছিস। দুজনে কি সুন্দর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আছিস, এদিকে আমাকে কেউ পাত্তা’ই দিচ্ছিস না।”

অর্নি ভ্রু কুঁচকে তাকায় রুশানের দিকে। রুশান দাঁত কেলিয়ে হাসে। নূর এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো,
–“তো? তাতে কি তোর হিংসা হচ্ছে?”

–“হ্যাঁ প্রচুউউউউউউউউর।”

রুশানের বলার ভঙ্গি দেখে সেখানে উপস্থিত সকলেই একসাথে অট্টহাসি হাসি দেয়। সারা ঘর জুড়ে শুধু হাসির শব্দ। অর্নি আর নূর দুজনেই রুশানকে জড়িয়ে ধরে। বেশ কিছু মাস পর আবারো তিন বন্ধু মিলে লম্বা সময় নিয়ে জড়িয়ে ধরলো একে অপরকে।

অনেক দিন বাদে সবাই এরকম মন খুলে হাসছে। সবাইকে একদম প্রাণোচ্ছল লাগছে দেখতে। পুরো বাড়িতে রমরমা ভাব। খুশির আমেজ। এতদিনে বাড়িটা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পুরো বাড়ি উৎসবমুখর হয়ে আছে। শায়লা বেগম মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। অর্নির চিন্তায় রান্নাবান্না সব লাটে উঠেছিলো। দ্রুত রাতের খাবার বসাতে হবে। বাড়িতে মেহেমান’ও আছে। অর্নির বাবার বাড়ি এবং নূরের শ্বশুর বাড়ির সকলেই আছে আজ। মিসেস অদিতি’ও শায়লা বেগম এর সাথে রান্না ঘরে যায়। এত মানুষের খাবার একা হাতে করতে গেলে রাত হয়ে যাবে অনেকটা। এমনিতেই ঘড়ির কাটা দশটার ঘরে। যদিওবা শায়লা বেগম বেশ কয়েকবার বারণ করেছে কিন্তু মিসেস অদিতি কোনো বারণ শুনেনি।

নূর ওর শ্বশুর শাশুড়ীর সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে। শান্ত’র মা এগিয়ে এসে নূরকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
–“পুলিশ যখন জানালো তুই মৃত, ওখান থেকে বেঁচে ফেরার কোনো চান্স নেই তোর, তখন থেকে আমার ছেলেটা একদম পাগল হয়ে গেছিলো রে। কোনো ভাবেই ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারিনি আমি। আমার যে ছেলেটা এত হাসিখুশি ছিলো সেই ছেলেটা তোর জন্য গুমরে গুমরে মরতো। তোর উপর তখন খুব রাগ হচ্ছিলো আমার। কেন আমার ছেলের জীবনে এসেছিলি তুই? এসেছিস’ই যখন তাহলে আমার ছেলেটাকে একলা ফেলে যাওয়ার কোনো কারণ ছিলো না।”

নূরের চোখের কোনে পানি। কিছুক্ষণ বাদে ফুঁপিয়ে কেঁদে’ও উঠলো। শান্ত’র মা মুচকি হেসে নূরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–“আমাকে ক্ষমা করিস মা, আমি ভেবেছিলাম তুই আর বেঁচে নেই। তাই আমি শান্তকে আবারো বিয়ে করানোর জন্য রীতিমতো জোর জবরদস্তি শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ছেলে একটা কথাই বলতো, শান্ত শুধু নূরের। নূরের পরে ওর জীবনে আর কেউ আসবে না। আমার ছেলের ভালোবাসা জিতে গেছে নূর। আল্লাহ আমার ছেলেকে আবার তার ভালোবাসার নূরকে ফিরিয়ে দিয়েছে।”

কান্না ভেজা চোখেই নূর আলতো হাসলো। শান্ত’র মায়ের হাতে চুমু খেয়ে বললো,
–“ধুর‍! ক্ষমা চাচ্ছো কেন? ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। এটাই তো স্বাভাবিক তাই নয় কি? কোনো মা তার সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। তুমিও তোমার ছেলের ভালোর জন্য’ই হয়তোবা ওর বিয়ে দিতে চেয়েছিলে। আমি কিছু মনে করিনি মা।”

শান্ত’র মা হেসে নূরের মাথায় চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। শান্ত’র বাবা’ও ক্ষানিকটা কথা বললো নূরের সাথে। নিশি নূরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“তুমি অনেক ভাগ্যবতী নূর।”

নূর মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
–“কেন মনে হচ্ছে এরকমটা?”

–“শান্ত তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি চলে যাওয়ার পরে’ও ওর মনে কোনো নারী জায়গা করে নিতে পারেনি। ও তোমাকে বড্ড ভালোবাসে নূর। সকল মেয়ে এমন জীবনতসঙ্গী চায় নূর। ওকে কখনো কষ্ট দিও না। অনেক ভাগ্য করে শান্ত’র মতো ছেলেকে তোমার জীবনে পেয়েছো তুমি।”

নূর প্রাপ্তির হাসি হাসলো। হ্যাঁ সত্যিই অনেক ভাগ্য করেই নূর শান্তকে পেয়েছে। এই ছেলে নূরকে তার জীবনের চাইতে বেশি ভালোবাসে। নূর মুচকি হেসে বললো,
–“চিন্তা করো না, আমি সবসময় চেষ্টা করবো আমার দ্বারা যেন শান্ত কখনো কষ্ট না পায়।”

নিশি আলতো হেসে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। শান্ত এগিয়ে গিয়ে দরজাটা লক করে নূরের পেছনে এসে দাঁড়ায়। দুহাতে নূরের কোমড় স্পর্শ করে নূরকে টেনে নেয় নিজের কাছে। নূরের পিঠ শান্ত’র বুকে ঠেকে আছে। শান্ত দুহাতে নূরের পেট আকড়ে ধরে নূরের কাঁধে থুতনি রাখে। নূরের ভিতরে উথাল-পাথাল শুরু হয়ে গেলো শান্ত’র স্পর্শ পেয়ে। কিছু সেকেন্ড গড়াতেই নূর শান্ত’র দিকে ঘুরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে। শান্ত নূরের চুল গোছাতে গোছাতে বললো,
–“আম্মু আমায় নিশিকে বিয়ে করার জন্য অনেক বুঝিয়েছে। আম্মুর কথায় কষ্ট পেও না নূর। আম্মু আসলে___আমার অস্বাভাবিক আচরণ__”

নূর শান্ত’র বুক থেকে মাথা তুলে নিয়ে বললো,
–“আমি মায়ের কথায় কষ্ট পাইনি, বরং আমার এটা ভেবে খুশি লাগছে যে আমার শান্ত আমার’ই আছে। আমার অনুপস্থিতিতেও শান্ত ওর জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারী আনেনি।”

শান্ত হেসে নূরের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মুখে হাসি টেনে বললো,
–“আমার নূর যে বলেছিলো, #তুমি_শুধু_আমারই_হও আর তাই আমি শুধু আমার নূরের মাঝেই মিশে থাকতে চাই আমৃত্যু।”

অর্নবের পাশে বসে অর্নবের বুকে মাথা লাগিয়ে বসে আছে অর্নি। অর্নব’ও আদুরে স্পর্শ এঁকে দিচ্ছে অর্নির মাথায়। বহুদিন পর একজন ভাই তার বোনের দেখা পেয়েছে। বোনকে কাছ থেকে স্পর্শ করছে। অর্নি অর্নবের বুকে মাথা রেখেই বললো,
–“আমি তোমাকে ভীষণ মিস করেছি ভাইয়া।”

–“এজন্য’ই বুঝি দূরে ছিলি? আমাকে অন্তত জানাতে পারতি অর্নি। তুই ভাবতেই পারছিস না এতগুলো মাস আমাদের কেমন কেটেছে। আম্মু আমি টায়রা কতটা চিন্তিত ছিলাম তোকে নিয়ে। এরকম কেউ করে বল?”

–“আর কোনো ওয়ে ছিলো না যে। আমাকে যে দূরে যেতেই হতো, নয়তো ইশাকে___”

–“আচ্ছা এখন ছাড় সেসব কথা। তোর জন্য একটা খুশির খবর আছে অর্নি।”

অর্নি ওর ভাইয়ের বুক থেকে মাথা সরিয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো অর্নবের দিকে। অর্নব টায়রার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,
–“তুই ফুপ্পি হচ্ছিস।”

–“কিইইইইই?”

অর্নির কন্ঠে অবাক স্পষ্ট। অর্নি টায়রার দিকে তাকিয়ে দেখলো ও লজ্জায় মাথা নামিয়ে রেখেছে। অর্নি বললো,
–“সত্যি বলছো ভাইয়া?”

–“আমি তোকে মিথ্যে কেন বলবো অর্নি? তা’ও এরকম একটা বিষয়ে।”

–“হ্যাঁ তা’ও কথা।”

অর্নি উঠে টায়রার পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। টায়রার গালে চুমু দিয়ে বললো,
–“আমি খুব খুশি টায়রা আপু। আমি ফিরে এসেই যে এমন একটা খুশির খবর পাবো এটা তো কল্পনা’ও করিনি আমি।”

টায়রা লাজুক হাসলো। আবার হঠাৎই চেহারায় গম্ভীর ভাব এনে বললো,
–“আমি তোর উপর খুব রেগে আছি অর্নি। তুই এভাবে লুকিয়ে থাকতে পারলি? আমাদের জন্য তোর মনে পুড়েনি? জানিস তোর জন্য সবসময় আমার মনটা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠতো।”

অর্নি কানে ধরে বললো,
–“স্যরি সব্বাইকে, আর কখনো এরকম কিছু করবো না। ইট’স মিসেস সা’য়াদাত আবরার উৎসব’স প্রমিস।”

অর্নির কথা বলার ভঙ্গি দেখে অর্নব আর টায়রা দুজনেই ফিক করে হেসে দেয়। উৎসবের নাম নেওয়াতে অর্নির মনে হলো উৎসব ঘরে একা আছে। উৎসব ঘরে যাওয়ার আগে বলেছিলো সবার সাথে কথা বলে যেন তাড়াতাড়ি ঘরে চলে যায় অর্নি। ও তো এতক্ষণে সেটা ভুলে’ই গিয়েছিলো। অর্নি আর এক মূহুর্ত না বসে থেকে চট করে উঠে দাঁড়ালো। অর্নব আর টায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“তোমার থাকো, আমি একটু আসছি।”

কথাটা বলে এক দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অর্নি। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অর্নব আর টায়রা দুজনেই মৃদু হাসে।

অর্নি ঘরে ঢুকতেই দেখলো উৎসব বিছানার হেডবোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে পা টানটান করে বসে আছে। কোলের উপর বালিশ। ডান পায়ের উপর বা পা তুলে রাখা। একটা হাত উল্টোভাবে কপালে আর অন্য হাতটা বালিশের উপর রাখা। চোখটা’ও বন্ধ। অর্নি নিঃশব্দে হেঁটে উৎসবের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। উৎসব ওভাবে থেকেই বললো,
–“এতক্ষণে আমার কথা মনে হলো?”

–“বুঝলেন কি করে আমি এসেছি? আপনার তো চোখ বন্ধ।”

–“তুমি আমার আশেপাশে থাকলে আমি এমনিতেই বুঝে যাই। তার জন্য আমার চোখ খোলা রাখা লাগবে না।”

–“কিভাবে?”

–“এটা সিক্রেট, বলা যাবে না।”

অর্নি আর কথা না বাড়িয়ে মৃদু হেসে উৎসবের পাশে বসে বললো,
–“শুয়ে পড়ুন তো।”

উৎসব কপাল থেকে হাত সরিয়ে চোখ মেলে তাকালো একবার। তারপর বিনাবাক্যে অর্নির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। অর্নি আলতো ভাবে উৎসবের চুল টেনে দিচ্ছে, মাথা ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। চুলে হাত ডুবিয়েই অর্নি বললো,
–“মাথা ব্যাথা করছে ডাকলেই পারতেন। কড়া করে ব্ল্যাক কফি বানিয়ে দিবো? নাকি আদা চা? কোনটা?”

–“তুমি বুঝলে কি করে আমার মাথা ব্যাথা করছে?”

–“আমি’ও বলবো না, এটা সিক্রেট। আপনি যেমন চোখ বন্ধ রেখেই আমার উপস্থিতি বুঝে যান, আমিও তেমনি আপনার সুবিধা অসুবিধা বুঝে যাই।”

–“আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে?”

–“হু, এখন কি খাবেন বলুন___ব্ল্যাক কফি নাকি আদা চা?”

–“চুমু খাবো।”

অর্নি জোরে উৎসবের চুল টেনে ধরে বললো,
–“অসভ্য।”

উৎসব মৃদু আর্তনাদ করে বললো,
–“মাথা ব্যাথা তার উপর চুল ধরে টানলে ব্যাথা লাগে তো বউ।”

–“তাহলে ওরকম কথা বলেন কেন? আমি চা/কফির কথা জিজ্ঞেস করেছি আর আপনি___”

–“বউয়ের কাছে চুমু খাওয়ার আবদার করাটা দোষের কি?”

অর্নি কিছু বললো না। আলগোছে উৎসবের মাথাটা বালিশে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। কিচেনে গিয়ে দেখলো শায়লা বেগম রান্না করছে, আর একজন সার্ভেন্ট মাছ মাংস কেটে ধুয়ে দিচ্ছে। মিসেস অদিতি সবজি কুটছে। অর্নিকে দেখে শায়লা বেগম রান্নার আঁচ কমিয়ে আঁচলে হাত মুছে অর্নিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“কত্তদিন পর মেয়েটাকে কাছে পেলাম আমি। তুই আর নূর দুজনে একসাথেই চলে গেলি আবার ফিরলিও একসাথে। আচ্ছা উৎসবের সাথে প্ল্যান করে ইশা আর মাহিরকে ধরার জন্য যে বাড়ি ছাড়লি, বাড়ি ছাড়ার আগে একবারের জন্যে’ও মনে হয়নি আমাদের কথা? আমরা তখন সদ্য নূরকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। তুই তো আমার আর একটা মেয়ে, তোর উচিত ছিলো না সেসময়ে আমাদের আগলে রাখার? যাওয়ার আগে একবার অন্তত জানাতে পারতি, তাহলে দুই দুইটা মেয়ে হারানোর কষ্ট এতদিন সইতে হতো না আমাদের।”

অর্নি এক হাত দিয়ে নিজের কান এবং অন্য হাত দিয়ে শায়লা বেগমের কান ধরে গোমড়া মুখে বললো,
–“স্যরি শাশুমা, আর হবে না এমন।”

অর্নির কথা বলার ধরনে তিনজনেই হেসে দিলো। শায়লা বেগম কপাট রাগ দেখিয়ে বললো,
–“আবার শাশুমা বলছিস?”

–“শাশুমা বললে যে তুমি রেগে যাও, তাই তোমাকে রাগানোর জন্য শাশুমা ডাকতে ভালো লাগে আমার। তুমি তো আমার লক্ষী মা, রাগ করো না।”

–“ফাজিল মেয়ে।”

কথাটা বলে শায়লা বেগম রান্নায় মনোযোগ দিলো। অর্নি পেছন থেকে মিসেস অদিতিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আম্মু, আই মিস ইউ সো মাচ।”

–“কথা বলবি না তুই আমার সাথে।”

–“স্যরি তো, তোমরা তো জানো কেন এরকম করতে হয়েছে তারপরেও রেগে থাকবে?”

–“রাগ করে থাকতে দিস তুই?”

–“তারমানে তুমি রেগে নেই? আই লাভ ইউ আম্মু। আমি তোমাকে এত্তগুলা ভালোবাসি।”

মিসেস অদিতি মুচকি হাসলো। পেছন থেকে নূর বললো,
–“কিছুটা ভালোবাসা আমার ভাইয়ার জন্য’ও বাঁচিয়ে রাখ অর্নি।”

নূরের কথা শুনে অর্নি কপাল চাপড়ে বললো,
–“এই রে! আমি যে উনার জন্য আদা চা করতে এসেছি সেটা তো ভুলেই গেছি। ভাগ্যিস তুই এসে তোর ভাইয়ার কথা মনে করিয়ে দিলি। আই লাভ ইউ দোস্ত, উম্মায়ায়াহ।”

–“আই হেইট ইউ জানু।”

নূরের এমন জবাবে অর্নি চোখমুখ কুঁচকে আদা চা’য়ের জোগাড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

চা নিয়ে অর্নি সবেই ঘরে ঢুকেছে। উৎসব ঘরে নেই, ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। অর্নি চা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে পেছন ঘুরতেই দেখলো উৎসব একদম ওর সামনে দাঁড়ানো। ভয়ে বুকে হালকা ভাবে দুই তিনটা চাপড় মেরে অর্নি বললো,
–“ভয় পাইয়ে দিয়েছেন একদম। এভাবে কেউ শব্দ না করে পেছনে এসে দাঁড়ায়।”

–“আমি দাঁড়াই।”

–“মাথা ব্যাথা কমেছে? কড়া করে আদা চা বানিয়ে এনেছি আপনার জন্য, খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে। মাথা যন্ত্রণা কমে যাবে।”

উৎসব অর্নির বাহু ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বললো,
–“আগে চুমু খাবো, তারপর চা। শুধু চা’য়ে মাথা ব্যাথা যাবে না। এই মূহুর্তে মানসিক শান্তির জন্য বউয়ের ঠোঁট চাই আমার। একদম কড়া করে বেশি না মাত্র মিনিট পাঁচেক তোমার ঠোঁটে চুমু খাবো, তাহলেই ইনাফ। চুমু দাও ফাস্ট।”

–“আমি?”

–“হ্যাঁ তো কে?”

অর্নি শুকনো ঢোক গিললো। অর্নিকে চুপচাপ দেখে উৎসব বললো,
–“আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার আশায় বসে থেকে সময় নষ্ট করে লাভ নেই, আমিই দিচ্ছি।”

কথাটা বলে উৎসব অর্নির দিকে মুখ এগিয়ে নিলো। উৎসব আর অর্নি ঠোঁট জোড়া ছুঁইছুঁই। হঠাৎ করে নূর বললো,
–“স্যরি স্যরি, আমি কিচ্ছু দেখিনি।”

চমকে দুজনে দুজনের থেকে সরে দাঁড়ালো। দরজাটা যে খোলা আছে এটা কারো মাথাতেই নেই। উৎসব চা’য়ের কাপ হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দিলো। অর্নি বললো,
–“বাইরে কেন ভিতরে আয়।”

–“নাহ, তোমরা যা করছিলে করো, আমি আসছি।”

–“ভিতরে আয় নূর।”

উৎসবের ডাকে গুটিগুটি পায়ে উৎসবের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নূর। উৎসব চা’য়ের কাপ টেবিলে রেখে বললো,
–“কিছু বলবি?”

নূর আমতা আমতা করে বললো,
–“তেমন কিছু না, তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি ভাইয়া?”

উৎসব মুচকি হেসে দুহাত মেলে দিলো। ওমনি নূর ঝাপিয়ে পড়লো উৎসবের বুকে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে নূর। উৎসবের চোখের কোনে’ও পানি। উৎসব চোখের পানি আড়াল করে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“কাঁদতেছিস কেন বোকা? চোখের পানি মোছ দেখি।”

কথাটা বলে উৎসব নিজেই নূরের চোখের পানি মুছে দিলো। নূর বললো,
–“আচ্ছা তোমরা থাকো, আমি গেলাম।”

আর না দাঁড়িয়ে অর্নির কাছে চলে এলো নূর। অর্নির দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,
–“দোস্ত চুমু’টা কন্টিনিউ কর। তবে হ্যাঁ এবার দরজাটা লাগিয়ে নিস।”

অর্নি রাগী চোখে তাকাতেই নূর একগাল হেসে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। অর্নি ঘরের দরজা আটকে বিড়বিড় করে বললো,
–“যেমন ভাই তার তেমন বোন, দুজনেই অসভ্য।”

উৎসব অর্নির হাত ধরে টেনে কোলের উপর বসালো। অর্নির চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললো,
–“তুমি শুধু আমার হয়েই থেকো, আমার আর কিচ্ছু চাই না।”

অর্নি উৎসবের বুকে মাথা রেখে বললো,
–“আমি আপনারই আছি আর থাকবো।”

–“ভালোবাসি অর্নি।”

–“আমিও আপনাকে ভালোবাসি মিস্টার সা’য়াদাত আবরার উৎসব।”

উৎসব অর্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“অসমাপ্ত চুমু’টা পূর্ণ করি এবার?”

অর্নি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। উৎসব অর্নির উত্তরের অপেক্ষায় না থেকেই অর্নি’র ঠোঁট জোড়া দখলে নিলো। অর্নি দুহাতে উৎসবের গলা জড়িয়ে ধরে উৎসবের স্পর্শ’টা গভীর ভাবে অনুভব করছে।

_______________সমাপ্ত_______________

|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here