তুমি হলেই চলবে পর্ব ৮+৯+১০

৮+৯+১০
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
৮.
.
.
চোখের উপড় মিষ্টি রোদের অনাগোনা।রোদের প্রথম উজ্জ্বল হলুদ আভাটা মুখে পড়তেই আমার চোখ নড়েচড়ে উঠে..বিরক্তি নিয়ে আমি কিন্চিত চোখমুখ খিঁচে আধোআধো চোখে তাকিয়ে পরিবেশ বুঝার চেষ্টা করছি।ঝিমঝিম চোখে তাকাতেই বুঝতে পারছি আমি আমার নিজের একমাএ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত রুমে আছি।যদিও প্রতিষ্ঠাতা আমি না।চোখ কচলাতে কচলাতে আমি উঠে বসলাম। হঠাৎ মনে পড়ে যায় এটাত আমার রুম কিন্তু আমি ত এখানে থাকার কথা না।আযমান ভাইয়ার কথা মনে পরতেই আশেপাশে চোখ বুলাতে শুরু করলাম।আমিত তার সাথে টেরেসের উপড় ছিলাম।কিন্তু এখানে কিভাবে এলাম।তাহলে কি আমি স্বপ্নে দেখেছি??কিন্তু আমার তো তা মনে হয় না।ডুলডুল পায়ে উঠে দাড়িয়ে ওয়াসরুমের দিকে পা বারাতেই বেড টেবিলে আমার কালকের সেই কৃষ্ণচূড়া গুলো চোখে পড়ল।এগুলো এখানে তার মানে স্বপ্ন না কিছুই ইশশ্ ভাবতেই এক অদ্ভুত অনুভুতি মনে কড়া নাড়ছে।আমি ধীর পায়ে হেঁটে ফুলগুলো ছুঁয়ে দিতেই তার নিচে নীল কাগজ দেখতে পেলাম।হাতে নিয়ে ভাজঁ খুলতেই কালো কালিতে খুব সুন্দর হাতের লেখা ভেসে উঠেছে।যে ব্যক্তির এই লেখা সে আসলেই পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর হাতের লেখার অধিকারি। সুন্দর হাতের লেখার জন্যে ছোটবেলায় স্যারেরা যে পাচঁ নাম্বারের লোভ দেখাত তা এই লেখক অনায়াশেই নিজের করতে সক্ষম….আমি এবার পড়তে শুরু করলাম….
.
প্রিয়সি এটা মোটেও ঠিক করলেনা।জীবনে প্রথম প্রেম ব্যক্ত করেই মানুষ লিপ কিসস করে আর আমি হালকা ঝুঁকেই দেখলাম আমার প্রেমলতা ঘুমে অচ্ছন্ন। ইটস্ নট গুড বেইবি… কোথায় ভেবেছি একসাথে কেক কাটব খাওয়া দাওয়া করব আর একটা দুইটা টুপুস টাপুসস চুমুও খাব আর তুমি সব কিছুতে একগুচ্ছ আবেগি ঘুম ডেলে দিলে।বল কিভাবে পারলে??একটুও মায়া হল না আমার উপড়??তুমি বড্ড হার্টলেসস্ আয়ু…একটুত মায়া দয়াকে কাজে লাগাতে পারতে।কালকে কত প্লানিং ছিলল জানো??এটা ঠিক করলে না…একদম বুকের বা পাশে চুবেছে..কিন্তু সব কিছুর উর্দে যা দিলে তাতে আমি ফিদা…তোমার ওই ঘুমন্ত মুখ..ইশশ্ বারবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করেছে।কিন্তু ছুঁই নি যদি তোমার মিষ্টি ঘুম.. আমার দুষ্টু আবেগে ভেঙে যায়!!!তখনত আরো কষ্ট লাগবে বুঝলে…হৃদয়ে ভাঙচুর হবে।
🍁তুমিত আমার আঠারোর আবেগ নও গো প্রানলতা..
তুমি আমার ছয়ের কোটায় জাগিয়েছ ব্যথা…
যা ক্রমশ বারিয়ে করছ ঝাঝড়া….
হৃয়ের ফটক তোমাতেই বন্ধি…
তোমাতেই আমি কৃষ্ণচূড়ার সাথে করিয়াছি ভালোবাসার সন্ধি…..🍁
বুঝলে… ওও তুমি সবই দেড়িতে বুঝ..যেমন আমাকে বুঝেছ ১৯ শের কোটায় এসে..হা!হা!…তুমি এক ভয়ঙ্কর আবেগ যাতে নিজেকে জড়িয়ে এখন আমি সব হারা। এবারত বুঝলে??নাকি এখন কনফিউশন কনফিউশন ফিলিংস হচ্ছে?? যে ফিলিংসই হোক তাড়াতাড়ি ভার্সিটি এসো…আমার হৃদয়ত বহু আগেই ছিন্ন ভিন্ন করেছ এখনত দেখছি বেচারা বই খাতাকেও ছিন্নভিন্ন করার প্লান আছে।ওই সব বাদ…রেডি হও আর চলে আস..আর সরি দেখা না করেই চলে এসেছি।আসলে তুমি যে ঘুম দেয়েছ কি বলব টেরেস থেকে কোলে করে নামানোর সময়ও তুমি একটুও নড়াচড়া করলে না।কত আবেশে আমার শার্ট খামছে ঘুমাচ্ছিলে…ইশশশ্ আমিত জীবন পাড় করতে পাড়তাম এভাবে।এত এত কিউট আবেগ জড়িত ঘুম হিটলাররো ভাঙতে পারবেনা আর আমিত এ ঘুমের সদ্ধ হওয়া নতুন প্রেমিক..এটাত আমার জন্যে অসম্ভব ছিলল…. সব শেষে একটাই বলার আছে…..ভালোবাসি বোকা পিচ্চি বউকে…. আবার বোকা বলেছি বলে গাল ফুলাবে না প্লিজজ….বাই
.
আমি এখনো চিঠির দিকে তাকিয়ে আছি।একবার নাকের সামনে নিয়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে দেখছি তার ছোঁয়ার ঘ্রাণ পাওয়া যায় কি না??সত্যিই পাওয়া যাচ্ছে। এজেনো এক অজানা অনুভুতিতে আমি সিক্ত.. যা ক্রমশ বাড়িয়ে দিচ্ছে এ মনের ধুকপুকানি…….
.
…🍁
আমি ভার্সিটির মাঠের এক সাইডের বট গাছটার উপড় পা ঝুলিয়ে বসে আছি।হালকা হালকা বাতাস হচ্ছে।আসলে ঋতুটাই এমন।বাতাস হবে বৃষ্টি হবে সাভাবিক। কিন্তু আমার পাশের ব্যক্তি অসাভাবিক কান্ড করে বেড়াচ্ছে।যা প্রচণ্ড ভাবে আমাকে ভাবাচ্ছে। সে মহান কার্যকরী ব্যক্তি দিল..তার আমার ভাবনায় কোন কিছু যায় আসেনা।সে তো সটাং হয়ে বসে বসে মোবাইল গুতাচ্ছে। আরে বলি হারি প্রেম টেমত করছনা।কিন্তু মোবাইল নিয়ে কিসের এত লুতুর ফুতুর যতসব..এবার কিছুটা রাগ নিয়েই বলে উঠলাম…..
.
ওই হারামি বলবি সারফারাজ ভাইকে তুই এত এত কেন ভয় পাশশ…
.
ভয় পাই কে বলল..(মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে)
.
অবশ্যই তুই ভয় পাশ।তা না হলে এত কাচুরমাচুর করতি না। তাড়াতাড়ি বলবি নাকি আন্টিরে বলে দিমু তুই প্রেম করস..
.
কিককককি..আমি প্রেম করি মানে??
.
হুম.. করছ… আমার তো তাই মনে হয়..তুই বলবি না কি আন্টিকে বলমু??আন্টি এমন কথা শুনে নিশ্চুই তোকে চুমু খাবে না??সোজা আঙ্কেল.. বুঝ তুমি কি হতে পারে…??(দলি তার বাপরে বাঘের মত ভয় পায়।এটা দিয়ে এই ভয়ঙ্কর মাইয়ারে জব্দ করা যায়।হিহি)
.
আরে তাদের কি বলবি তারাইত জীবন পুরা তেজ পাতা করে দিছে।ওই বাঘের সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আর ওই পলাজে কত নাম্বার কি তা আমি ভালোই জানি..

.
আমি হতভম্ভ নয়নে তাকিয়ে আছি এই মেয়ে তোলে তোলে রিকশা চালায় আর আমি বললেই হরতাল..শালি তোর হাজারটা জমজ বাচ্চা হবে আভিশাপ দিলাম।এত কিছু করে এখন আমার ভাইটারে এভাবে বলা হচ্ছে দাড়া…
.
খবরদার দিলবার আমার ভাইকে নিয়ে নো উল্টাপাল্টা কথা।আমার ভাইয়ের চরিএ ফুলের মত পবিএ বুঝলি।তুই তো লাকিরে ও তোর জামাই.. ওয়াওও তুমি হবি আমার ভাবি.. ইশশশ্ কি মজা।দেখ সব ভাবির মত কুটনামি করবি না।তা না হলে তোরে আমি তুলে আছাড় দিমু বুঝলি..আয় এদিকে আয়..
.
কেন??
.
আরে হাগ করমু তুই এখন থেকে আমার দিলবার ভাবি..দিলবার দিলবার…টিংনিং নিং নিং….
.
.
দিলের মুখ দেখার মত ।ওর মত ডেন্জারাস মেয়েকে এমন সিচুয়েশনে ফেলতে পারাই বড় বেপার।আমার ভাইটার কপালে যে কি আছে আল্লাহ মালুম।এই মেয়ে তাকে মারতে মারতেই বেচারার হাড্ডি টাড্ডি ভেঙে গুড়িয়ে দিবে…আহারেরেররের্
.
আমি আবার পা ঝুলানোতে মনযোগ দিলাম।কিন্তু বেশিক্ষণ পারলাম না।হঠাৎ ঝড়ের গতিতে ওই দিনের ইফত্তি নামের সেই ব্যক্তি হাজির।আমিত অবাক হয়ে দাড়িয়ে পরেছি..সে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠে…..
.
আরে হায়াত কেমন আছ??
.
ভালো।কিন্তু আপনি এখানে??
.
তোমার জন্যেই আশা(বিড়বিড় করে বলে উঠে)
.
কি বললেন??
.
আরে আমি এই ভার্সিটির নতুন টিচার।আসলে আমি আগেই জয়েনিং লেটার পেয়েছি কিন্তু ভেবে ছিলাম চাকরিটা করবো না। আমি এখানকার পুরাতন স্টুডেন্ট তো তাই সবাই বলেছে করতে তাই করবো বলে এসেছি আজকেই প্রথম দিন আমার সাবজেক্ট হিসাববিজ্ঞান…
.
আল্লাহ এই আহাম্মকে আযমান ভাইয়া দেখলে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে।শালা পৃথিবীতে কি ভার্সিটির অভাব পরেছে নাকি যে এখানেই আসতে হল..শালা গরু চোর..হাদারাম(মনে মনে)ওও তাই তাহলে ত আপনি আমাদের স্যার হবেন তাই না।তো স্যার এখন আসি।কালকে নবীন বরণ ত তাই কাজ আছে।
.
দিলের হাত ধরে দিলাম এক ছুট।শালা যে কি পরিমান প্যারা দিয়েছে কালকে কি বলবো।আল্লাহ বাচ্চাও।ইফতার টেবিলেও কি পরিমান ডিস্টার্বইনা করেছে।হায়াত এটা নিবে, ওটা খাবে,এটা দি..ব্লা ব্লা..আজাইরা পাবলিক শুধু আমারেই পায়।
.
আমি সারা ভার্সিটি উঁকিঝুঁকি দিয়ে আযমান ভাইয়াকে খুজে পেলাম। সে অডিটোরিয়ামে গিটার নিয়ে বিজে।ধীর পায়ে তার পাশে দাড়াঁতেই। সারফারাজ ভাইয়া এসে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে…..
.
লিটেল পরী কেমন আছ??
.
ভালো..
.
শুনো আজ থেকেই প্যাকিং শুরু করো কিছু দিন পরেই আমরা চাদঁপুর যাবো।
.
চাঁদপুর কেন ভাইয়া??
.
আরে নানু বাড়ি চাঁদপুর।
.
ওও..লঞ্চে করে যেতে হয় বুঝি?? শুনেছি..তাই জিগ্যেস করছি।
.
হুম..বসো আমি একটু আশি…..
.
.
আমি তার কথা শুনে পিছনে তাকাতেই দেখি দিল গায়েব।এবার বুঝতে পারচ্ছি ভাইয়া কথায় গেছে।হিহি..আমি এবার অডিটোরিয়ামের দিকে চোখ বুলাতে লাগলাম।আযমান ভাইয়া নিজের গিটার নিয়ে টুংটাং সাউন্ড করছে।তার আশে পাশে মেয়েদের আনাগোনা। দেখে মনে হচ্ছে মিষ্টির আশেপাশে পিঁপড়া.. উনি একবার ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকায়।আবার তার নিজের মত কাজ করছে।আশ্চর্য একটু পাত্তাও দিচ্ছে না।আমি মন খারাপ করে আবার বাহিরে যাওয়ার জন্যে পিছন ঘুড়তেই নিলয় নামের ওই দিনের ছেলেটা এগিয়ে এসে বলে উঠে…..
.
ভাবি এখানে বসেন..
.
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।ওই দিনত ভা ভা করে মাথা খাচ্ছিল আর আজকে ডিরেক্ট ভাবি।ওওও এইটাই ছিলল ভাভার মানে।কিন্তু তখন কেন ভাভা করেছে কে যানে।আমি ওনাকে সরু গলায় বলে উঠলাম…
.
ভাইয়া আপনার কি ভাই আছে??
.
হ্যাঁ আছে তো কেন ভাবি??
.
একটু কল করে আসতে বলবেন প্লিজজ…
.
অবশ্যই.. (মোবাইল পকেট থেকে বাহিরে এনে ডায়েল করতে করতে বলে উঠে..)কিন্তু কেন ভাবি তা ত বলেন??
.
ওওও আসলে উনিত আমার জামাই তাকে একটু দেখবো.. সাথে এখনোই বিয়ে করে আপনার লিগাল ভাবি হব..আইডিয়াটা কেমন নীল ভাইয়া??
.
.
নিলয় ভাইয়া এবার নিজের মোবাইল আবার পকেটে পুরে নেয়.. চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে..দুই তিনটা শুকনো ঢোকও গিলে..তারপর বলে উঠে….
.
কি যে বলেন ভাবি।আপনার ভাইয়া না মনে আপনার জামাই ত এখানে আছে।আমি বরং যাই পরে দেখা হবে ভাবি..আল্লাহ হাফেজজজ..
.
.
নিলয় ভাই তো গেয়া আমার খুব হাসি পাচ্ছে।আসলে এত এত দুঃখের মাঝে উনিই একটু হাসাতে পেরেছে।আহারে আমি বেচারি।দলিরে বাচ্চাটাও ধোকা দিল।কিভাবে পারল নিজের বিয়ার কথাটা গিলে যেতে?? হু..আমি আবার পা বাড়ালাম এখানে থেকে কি হবে জনাব তো পাত্তাই দেয় না।আমি হাঁটা দিতে গিয়েই বুঝতে পাড়লাম কেউ আমার ওড়না ধরে রেখেছে। চট করে পিছনে তাকাতেই বুঝতে পাড়লাম আযমান ভাইয়া।আমি ওড়না ছাড়াতে টানাটানি করছি।উনি আমার হাত ধরে এক টানে তার পাশে বসিয়ে দিল।আমার তো রাগ লাগছে।সবাই অতি আগ্রহ নিয়ে আমাদের দেখছে।আশ্চর্য এভাবে দেখার কি আছে…আমি আবার কাচুমাচু করে নিজেকে ছাড়াতে শুরু করি উনি এবার আমার কানের কাছে এসে সামনে তাকানো অবস্থায় ফিসফিসিয়ে বলে উঠে……….
.
বিয়ে করার কি খুব সখ হয়েছে??আমাকে ত একবার করেই শেষ করেছ।কত কত দুঃখ বুঝলে না?? তার আগেই উল্টাপাল্টা কথা না।দাড়াও দেখাবো.. আগেরটার শাস্তি আগে পরেরটা পরে..
.
আমি হা করে তাকিয়ে আছি।উনি টুংটুং করে গিটার বাজিয়ে উঠে..এটা কি হল আমি আবার আগে কিছু করেছি নাকি?? আমি এবার ভয়ে কাচুমাচু করছি…উনি আবার বলে উঠে….
.
গিটার বাজাবে..
.
আমিত পাড়িনা..
.
পাড়িনা বলতে কিছু নেই আয়ু.. আমি শিখিয়ে দিব..তোমার না খুব সখ ছিলল??
.
হুম(আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠি)
.
উনি নিজের বাহু থেকে গিটার খুলে আমাকে পড়িয়ে দিল।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।এটা কোন নরমাল গিটার না এটা আযমান ভাইয়ার সবচাইতে প্রিয় গিটার।উনার দাদার দেওয়া শেষ গিফট। এটা উনি কাউকেই ধরতে দেয় না।আমি তো ভয়েই কখনো ধরতাম না।একবার উনার এক বন্ধু ধরেছে বলে উনি তাকে সেই লেভেলের মার দিয়ে ছিল।আমি তো ভয়ে তারপর থেকে এই গিটারের আশেপাশেই আসি না।উনাকে ত বাবা দামি দামি গিটার কিনে দেয় কিন্তু এটা তার সবচাইতে প্রিয়।আর এটা উনি আমাকে পড়িয়ে দিল।আমি হতবাগ….উনি আমার ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে গিটারের মাঝের তার আর বাম হাত দিয়ে গিটারের উপড়ে পিনগুলোতে রেখে দিয়ে বাজাতে শুরু করে আমি এখনো অবাক।সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
হাত দিয়ে বাজাতে ব্যথা লাগছে তাইনা??আমি বাজাই তুমি উপরের পিনগুলো বাজাও মানে বুঝতে পারছ…
.
আমি মাথা ঝাঁকালাম। উনি আমার সব ব্যথা নিজের কেন করতে চায়??ভালোবাসা মানেই কি এটা??আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে কোথাথেকে মালিহা আপু এসে চেঁচিয়ে বলে উঠে…..
.
আযমান তুমি এই গিটার ওকে ধরতে দিলে??কিভাবে??
আমি ধরে ছিলাম দেখেত তুমি অনেক ঝাড়ি দিয়েছ।আর এখন ওকে বাজাতে দিচ্ছ। যদি ছিঁড়ে ফেলে বা ভেঙে ফেলে..
.
ফেললে ফেলবে আমার জিনিসস ও ভাঙলে ভাঙবে কার কি।
.
.
আযমান ভাইয়া ভাবলেশহীন ভাবে কথাটা বললেও মালিহা আপুর তা মোটেও পছন্দ হল না আমি তো তার লাল লাল মুখ দেখে ভয় পাচ্ছি। সব মেয়েরা এবার নিজেদের আগ্রহ আরো দুই ধাপ বাড়িয়ে দিলো এদিকে।এখানের সব ভাইয়া আপুরা সিনিয়ার…সবারই চোখ এখন আমাদের দিকে… তারা হয়ত এটা বুঝতে চাচ্ছে আযমান ভাইয়া আমাকে কেন তার এত মূল্যবান বস্তু ধরতে দিয়েছে…..আমি এবার আযমান ভাইয়ার দিকে তাকালাম উনি তো আমার আঙ্গুল নিয়ে খেলতে বিজি..আমি হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে এবার উনি বলে উঠে…….
.
তোমার আঙ্গুল গুলো খুব সুন্দর আয়ু..আগে কেন খেয়াল করলাম না.. চিকন চিকন গোলাপি গোলাপি আঙ্গুল….ইশশ্ কত কিউট…
.
আমি আর কি বলবো সবার আতঙ্কিত মুখ দেখতে থাকি আর উনি দেখুক আমার আঙ্গুল জনমের মত………

#চলবে….
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন……..🍁
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
৯.
.
.
সবার আতঙ্ক থেকে বেচেঁ ফিরলেও আমি আর এক আতঙ্কিত অবস্থার মুখে পড়লাম। আল্লাহ এইডা কি চলে…আমার দিলবারকে ভাইয়া অতিব ভালোবাসায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তার সামনে দাড়িয়ে আছে।দিলের অবস্থা শোচনীয়.. বেচারি হাত মোচড়াতে মোচড়াতেই অবস্থা খারাপ।আর ভাইয়া!! সে তো হেসেঁ কুটাকাটা…আমি আগ্রহের মাএা দুই ডিগ্রী বাড়িয়ে দিয়ে তাকিয়ে আছি। তাদের কথা শুনা যাচ্ছে.. দিলের একটাই কথা….
.
এই এই হাত ছাড়েন ভালো হবে না বলেদিচ্ছি…আমি কিন্তু ক্যারাটে চেম্পিয়ান মেরে মাথা ফাটিয়ে দিব…
.
তার কথা শুনে ভাইয়া হেসেঁ হেসেঁ বলে উঠে…..
.
অবশ্যই ফাটাও কেন নয়..তুমি আমার এক মাএ বউ..আর একমাএ বউ পিটাবে এটা সাভাবিক….
.
আমিত আশ্চর্য চোখে দেখছি আর মনে মনে বলছি..আব তেরা কেয়া হোগা দিলবার…দিল এমন একটা চিজজ কি বলব..ছেলেরা প্রপোজাল দিতে আসলেই ধাড়াম ধাড়াম পিটা…ওহহহহ্ কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার।শুধু যে ছেলে গুলারে পিটে তা নয় যে তাকে ডেকে নিয়ে যাবে তাকেও মেরে অবস্থা খারাপ করে দেয়।আমিও একবার খাই ছিলাম…হি হি হি..সেই মেয়ের এমন ভায়াবহ অবস্থা হবে ভাবা যায়??দিল এবার চুপসে গেছে….. ইশশশ্… কিন্তু বিরক্তি কর ব্যাপার কেউ অতি বিরক্তি নিয়ে বার বার আমার পিঠে হাত দিয়ে ডাকছে।আমি বার বার হাত সরিয়ে দিচ্ছি।আর সে বার বার দিচ্ছে।আশ্চর্য.. যখন ইন্টেরেস্টিং জিনিসস এত মন দিয়ে দেখছি আর তখনোই এই বিরক্ত কোথা থেকে এসে হাজির..আমি আবার বিরক্তি নিয়ে হাত সরাতেই কেউ কানের কাছে ফিসফিসস করে বলে উঠে…….
.
ছিই আয়ু নিজের ভাইয়ের পার্সোনাল ব্যাপার এভাবে দেখতে নেই…..
.
আমি তড়াত করে তাকিয়ে দেখি আযমান ভাইয়া..আমি তো চিৎকার দিব বলে মুখ হা করতেই আযমান ভাইয়া মুখ চেপে পাশের খালি রুমে নিয়ে গেলেন আর বলে উঠলেন…..
.
ডোন্ট শাউট..বেবসসস..
.
আমি উম্ম্ উম্ম্ করে মুখ ছাড়তে বলছি। ওনি মুখ ছেড়ে বলে উঠে…
.
ওপসস সরি..
.
এভাবে মুখ চেপে ধরার মানে কি??আর বিরক্ত করছেন কেন??কি ইন্টেরেস্টিং পার্ট চলছে ইশশ্ আপনার জন্যে মিসসস্..
.
আবার এসব ছিই আয়ু.. ব্যাপারটা খুবই বাজে..নিজের ভাইয়ের রোম্যান্টিক সিন দেখার কি দরকার.??
.
দরকার আছে..ওটা শুধু ভাইয়ার রোম্যান্টিক সিন না ওটা দিলেরও ব্যাপার..আপনি ভাবতে পাড়বেন না ওও তোলে তোলে কি কি করে??শালি..আমি
.
আবার উল্টাপাল্টা কথা..এমন কিছুই না সারফারাজ ওকে পছন্দ করে তাই ডিরেক্ট বিয়েতে চলে গেছে।
.
আপনি জানেন?? উনি কোথায় দেখেছে ওকে মানে পরিচয় কি ভাবে??
.
একদিন তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম তখন সারফারাজও ছিলল তখন তোমার সাথে ওকে দেখেই সারফারাজের পছন্দ হয়ে গেছে ব্যশশ্ শালা আমার জন্যে মেয়ে পাইছে বলে কিনা আমি যদি জানতাম তুই আমার বোনের পিছনে ঘুড়ছ তবে কিন্তু তোকে পিটাইয়া বারোটা বাজাতাম..শালা বন্ধু মানেই হারামি…
.
আযমান ভাইয়া হাসছে..ক্লাসের জানালা দিয়ে রোদের আলো ডুকছে যা ওনার মুখে বারি খেয়ে এক অপূর্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি করছে… উনাকে খুব সুন্দর লাগছে যেন রোদের আলোয় চিক চিক করা বালু কণা।ইশশশ্…আযমান ভাইয়া এবার নিজের হাসা বাদ দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আশে।আমিত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।আর একটু এগিয়ে আসতেই আমার প্রান উড়ে যায় যায়।
.
ভায়ের রোম্যান্টিক সিন দেখার চাইতে নিজে ক্রিয়েট করলে কেমন হয়??
.
মানে
.
খুব ইজি..তুমি আর আমি মিলে আমরা….(আমাকে চোখ মেরে বলে উঠে)
.
আমি দেয়ালের সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে আছি।আর উনি আমার দুই পাশে হাত দিয়ে রেখেছে..আমি ভয়ে আরো দুই কদম পিছাতে গিয়েই বুঝতে পারছি জায়গা নাই..
.
আছে এখানে অনেক বেশিই আছে(বুকে হাত দিয়ে)
.
আমি হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছি..উনি এবার আরো এক কদম এগিয়ে এসে দাড়িয়েছে।ভয়েত এবার আমার হাত পা কাপঁছে। কান গুলো দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। গাল নাক জলে যাচ্ছে টেনশনে.. নিশ্চুই লাল হয়ে গেছে।আমার গলা শুকিয়ে আসছে।উনি এবার তার মুখ আমার মুখের একদম কাছে নিয়ে আসতেই আমি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছি…ঘাম গুলো হেজাবের কোনা বেয়ে গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে..হাত পা কাঁপাকাঁপি করছে।আচ্ছা উনিকি সাঙ্ঘাতিক কিছু করবে??করতেও পারে। উনিত আযমান ভাইয়া। তার দাড়া সবই হয়…
.
.
অনেক সময় হয়েগেছে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না..ইয়ে মানে আমি একটু উল্টাপাল্টাই ভেবে বসেছি….আচ্ছা উনিকি চলে গেছে??কই আমি ত উনার নিশ্বাসের গতি মাফতে পারছি..আমি হঠাৎ ঠাসসস্ করে নিজের চোখজোড়া খুলে তাকালাম..উনি আগের মতই দাড়িয়ে আছে।তার সাদা আবরণে আবৃত চোখের মাঝের কালো মনি খুবই আকর্ষণীয় লাগছে।দেখে মনে হচ্ছে সাদা আকাশে কালো চাদঁ.. ইশশশ্ কি মায়ার চোখ তার.. তার চাহনি নেশা ধরানোর মত…আমি তাকিয়েই আছি..এ চোখে হারাতে কোন মেয়েরই বেশি সময় লাগার কথা না।আমি তাকিয়ে আছিত আছি..এবার মনে হচ্ছে কোমড়ে কেউ হাত দিয়েছে।ভালো করে তাকিনোর আগেই আযমান ভাইয়া খুব জোড়ে আমার কোমড় জড়িয়ে আমাকে তার আরো একটু কাছে নিয়ে আশে। এবার আমি ভয়ে আবার চোখ কুঁচকে নিয়েছি।হঠাৎ ছোট একটা শব্দ কানে ভেসে আসে।সাথে সাথে আমার কপালে নরম কিছুর অনুভব হয়।আমি তাকিয়েই বুঝতে পারি উনি আমার কপালে চুমু খেয়েছে..উনি কিছুটা শরে এসে হু হা করে হেসেঁ উঠে…চোখ বুজে হাসছে সে….
.
তুমি কি ভেবে ছিলে বেবি??(ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠে)
.
আমি লজ্জায় মাথা নিচে নামিয়ে ফেললাম।আসলেই আগে উল্টাপাল্টা ভাবা উচিত হয় নি।আমি এমনই আগেই মানুষকে না চিনেই মন্তব্য করি..ডাফার একটা…
.
এতটা ভয় দেখানোর মানে কি??
.
এটাতো ট্রেইলার ছিলল..ওই ইফত্তি না কি টিফত্তির সাথে আর যদি দাতঁ কেলিয়ে হেসেঁ হেসেঁ কথা বলতে দেখি তবে আর কি কি করতে পারি ভাবো জানেমান…. ইশশশ্ ভয়েত তুমি লাল হয়ে গেছ..একদম আগের তোয়ালে পিচ্চির মত..হি!হি!
.
উনি আবার হেসেঁ উঠলল..আশ্চর্য এত হাসার কি আছে??উনি নিজেইত ভয় দেখিয়ে জান যায় যায় টাইপের অবস্থা করেছে..হু..উনি হাসি থামিয়ে বলে উঠে….
.
আরো কি রোম্যান্টিক সিন দেখার আছে..নাকি যাবে..
.
.🍁
.
আমি আযমান ভাইয়ার গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি।এটাই বলা হয়েছে করতে।মানে দাড়িয়ে থাকতে..আযমান ভাইয়া সানগ্লাস হাতে নিতে নিতে এগিয়ে এসে বলে উঠে…
.
দাড়িয়ে আছ কেন চল..
.
আপনিইত বলেছেন দাড়িয়ে থাকতে..
.
উনি হেসেঁ গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলে উঠে..বোকা পিচ্চি বউ আমার….
.
এই কথায় কথায় বোকা পিচ্চি বলবেন না আমি কি পিচ্চি নাকি??১৮+ বুঝেন কত বড়..
.
হুম বুঝি বুঝি (আবার হেসেঁ বলে উঠে)
.
.
আমি সিটে বসতেই উনি পিছনের সিট থেকে একটা ঝুঁড়ি হাতে ধরিয়ে দিল..তারপর পাশের সিটে বসে বলে উঠে…
.
খোলো.
.
আমি অতি আগ্রহ নিয়ে খুলতেই এক ঝুঁড়ি চুড়ি দেখতে পাচ্ছি। সব কাঁচের.. ইশশশ্ কি সুন্দর..
.
আপনার মনে আছে আমার কাঁচের চুড়ি প্রিয়??
.
তোমার সাথে যুক্ত কিছু ভুলা অসম্ভব.. এটা তোমার 17wedding anniversary gift..আরো একটা জিনিস আছে..
.
বলে পকেট থেকে একটা বক্স বের করে তা থেকে সবুজ পাথরের একটা আংটি হাতে নিয়ে বলে উঠে…
.
এই সব আমার নিজের টাকা দিয়ে কিনা….বাবাইয়ের অফিসে আমি কাজ করি..আর্কিটেক্ট হিসেবে..যদিও আমি মাএ এক মাস কাজ করেছি কিন্তু ডুবাইয়ে বাবাইয়ের কিছু বিল্ডিং এর ডিজাইন করেছি যা তার অতি মাএায় পছন্দ হয়েছে তাই ত টাকাও বেশি দিয়েছে আর তোমার জন্যেও এটা নিতে পেরেছি…সুন্দর না..
.
অনেক অনেক সুন্দর। তবে চুড়ি গুলো বেশি সুন্দর আমিতো প্রতিদিন পড়ে পড়ে ঘুড়বো একদিন এক ঝাঁক..ইশশশ্ কত কত কিউট..
.
.
উনি হাতে আংটি নিয়ে আশ্চর্য ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হয় আমি ভয়ঙ্কর কিছু বলেছি..আমি একটু নিচু গলায় বলে উঠি…
.
কিছু কি ভুল বলেছি…
.
উনি হেসেঁ উঠে আমার হাতটা টেনে নিয়ে সবুজ পাথরের আংটিটা পরিয়ে দিয়ে বলে উঠে….
.
না..কিন্তু তুমি কি যানো এটা কি পাথরের তৈরি..(রং দেখিয়ে)
.
না
.
পৃথিবীর কিছু অতি দামি ডাইমন্ড হয়.. যেমন কালো ডাইমন্ড এমনই একটা পাথর পান্না… যাই হোক তোমাকে অত বুঝতে হবে না তুমি কিন্তু আংটিটা নিজের হাতেই পরে থাকবে..যানো প্রথম বছর মানে বিবাহের প্রথম বছর আমি তোমাকে নিজের ব্যাট কিনার টাকা দিয়ে পুতুল কিনে দিয়েছিলাম তুমি তা কামড়ে কামড়ে ছিড়ে ফেলেছিলে….ব্যাপারটায় আমার প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল.. বাবাই তখন বুঝিয়েছে যতদিন তুমি বড় না হবে তোমার গিফট আমি কিনে কিনে রাখতাম। যখন বড় হবা আমি সব এক সাথে দিয়ে দিবো।আমার কাছে কিন্তু এখনো ১৬টা গিফট আছে তোমার….
.
.
আমি হতবম্ভ হয়ে বলে উঠি….
.
আপনি তখন কিভাবে জানতেন wedding anniversary তে গিফটও দিতে হয়??
.
বাবাই থেকে শিখেছি…মাম্মামকে দিতে দেখেছি।আর.সে বলেছে বউকে গিফট দিতে হয়। আমাদের নবীও দিত… এতে বউয়েরা খুশি হয়। আর বউদের খুশি রাখা আমাদের কাজ মানে স্বামীদের কাজ….
.
আল্লাহ আপনি এই নয় বছর বয়সে এত কিছু জানতেন আর বুঝতেন.!!আমিত শিহরিত আপনার কথা শুনে আল্লাহ দড়ি দেও.. এই পৃথিবী বড়ই ভয়ঙ্কর আমার মত নাদুসনুদুস বাচ্চার জন্য উপযুক্ত নহে….
.
তুমি কি ভেবেছ আমিও নিজের পিচ্চি বউয়ের মত বোকা নাকি……হা!হা!
.
.
উনি আবার হাসিতে ফেটে পরে।আর আমার মাথা ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘুড় পাক খাচ্ছে। এই পোলা যে কত কত সাঙ্ঘাতিক আল্লাহ মালুম…….
.
#চলবে……..🍁
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন……..🍁
#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
১০.
.
.
বাসায় এসেই আর এক পাগলের পাল্লায় আমি।বুঝলাম না এই মেয়ে আমার বাসায় কখন বা কি ভাবে এসে হাজির হয়েছে।আমি জুতা খুলে ভিতরে ডুকে দেখি আম্মু মহারাণীর মাথায় আইসব্যাগ দিয়ে ঠান্ডা করার অপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে।অজিব মাইরি।এই মেয়ের শেষ গতি কি কে জানে।আমি ধির পায়ে দিলের পাশে সোফায় বসতেই দিল চেঁচিয়ে বলে উঠে….
.
দেখেছেন আন্টি কেমন বেয়াদোপ মেয়ে। এসেই পাশে বসে পরেছে।আরে বলি হয়রি একটা দুইটা কথাত বলবি তা না নিজের মন মত.. হু..আমার যে এত এত খারাপ অবস্থা সেদিকে তোর একটুও চিন্তা আছে??
.
এত চিন্তা করে কি করবো।তুইও করিস না।শালি বিয়া ঠিক। এখন বিয়া সাদি করবি তারপর বাচ্চা কাচ্চা তারপর নাতি নাতনি তারপর
.
থাক থাক আর তারপর তারপর করতে হবে না।তারপরের গুলো আমি ভেবে নিবো।এবার বল আমি পালামু কেমনে??
.
আমি রিমটে টিপ দিতে গিয়েই থেমে গেলাম।আমি দিলের দিকে ভুত দেখার মত করে তাকিয়ে আছি..কি কয় মাইয়া বিয়া থেকে পালাবে নাকি??
.
এই বিয়া টিয়া থেকে পালানোর প্লান আছে নাকি??(ভ্রু কুঁচকে)
.
অবশ্যই. নাইলে কি ওই লুচু টাইপ পোলারে আমি বিয়া করমু না কি.. নো নেভার..
.
আসতাগফিরুল্লা.. আমার ভাই লুচু??হারামি তুই এইটা বলতে পারলি… তোর জমজের কারখানা হবে দেখিস..
.
মানে
.
মানে তোর জমজ পোলা পাইনের কারখানা হবে।বুঝলি…
.
আয়ানা……….
.
.
দিল হঠাৎ চিৎকার করেই চুপ হয়ে গেছে।আমি একটু অবাক হয়ে যেই না টিভির দিকে তাকাতে যামু তার আগেই ভাইয়া মাথায় গাড্ডা মেড়ে বলে উঠে….
.
হায়াত অসভ্যতারও লিমিট আছে।এসব কি দিয়ে রেখেছিসস টিভিতে।আম্মু পাশে বসে আছে দেখছিস না। ফাউলল মাইয়া..রিমট দিয়া যা ভাগগ…
.
আমি এবার টিভির দিকে তাকিয়ে হতবাগ। টিভিতে চুমাচুমির এক বিস্তর সিন চলছে।আর আমার অপর প্রান্তে আম্মু নাক ফুলাতে শুরু করেছে।ভাইয়া তো রেগে মেগে ফায়ার।ঝাঁড়ি মেড়ে আমার হাত থেকে রিমট নিয়ে আমার আর দিলের মাঝের পাকা জায়গায় বসে পড়ে আর বলে উঠে..
.
দিনে দিনে বড় হস আর বুদ্ধি গুলো গায়েব করছ।আবুল মাইয়া।যা আমার জন্যে লেবু শরবত নিয়া আয়। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডাটা আনবি..এবার মুখের দিকে না তাকিয়ে যায়।
.
.
আমি উঠে পড়লাম।আম্মু তার ভাঙা রেকর্ডিং যে কোন সময় চালু করে দিতে পারে।ভালো হবে তার থেকে দুরে থাকা।এখন একটাই উপায় এই হিটলার ভাইয়ের আদেশ শিরোধার্য করে পালন করা।এখনকার টিভি চ্যানেলে কি কি যে দেয়।হুট করে ভুলে এমন জায়গায় গিয়ে থামল তার উপড় আম্মু ভাইয়ার সামনে ছিইইইই কি বিচ্ছড়ি ব্যাপার।
.
লেবুর শরবত ভাইয়াকে দিয়ে আমি তার পাশে বসলাম।দিলবার নিজের চুলের খাজে খাজে বরফ দিচ্ছে। মাথা ঠান্ডা রাখা তার এখন অতিব জরুরী। মাথা ঠান্ডা না রাখলে চলবে না।পালাতেত হবে।কিন্তু চান্দু সোনা আমি তো তা হতে দিব না আমি তো তোরে সারফারাজ ভাইয়ের গলায় ঝুলামু।দিলের হঠাৎ কি হল সে উঠে দাড়িয়ে পড়ল।সাথে আমার একমাএ রক্তের ভাইয়ের কলার ধরে তাকেও দাড় করিয়ে দিল।ঘটনার আকর্ষীকতায় ভাইয়া হতবম্ভ নয়নে তাকিয়ে আছে।সাথে আমিও।দিল এবার চেঁচিয়ে বলে উঠে….
.
শালা উখান্ডা তুই এখানেও হাজির..তোরে তো আজ আমি নিজ হাতে আলুর ভড়তা বানামু। খুব জ্বালাই ছস।এই দিল কি এবার বুঝবি…(বলে ঘুষি উঠায়)
.
আমি দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠি….ভাই ভাই ওকে ছাড়। ও তো আমার একমাএ রক্তের ভাই(দিল ভ্রু কুচঁকে তাকাতেই আবার বলে উঠলাম)রক্তের মানে নিজের ভাই..ওপসস সরি সারফারাজ ভাই ও ত নিজে না মনে এটা আজিম ভাইয়া আমার মায়ের পেটের একমাএ ভাই।যদিও এরে মারার বহুত ইচ্ছা আছে তবে সেটা আমি নিজেই মেরে দিতে পারবো। কিন্তু তুই ডাইনি ওরে মারিস না।ওর কিছু হলে আমার তোর বিয়ার দায়িত্ব কে নিবে বল ওরেইত চাকরের মত খাটামু।আর গিফটও তো ওর থেকেই নি বল ওরে ছাড় মা…
.
দিল হু হা করে হেসেঁ ছেড়ে দিল। আমি আবুল এবার বুঝতে পারলাম হালি মজা করছে।কিন্তু আমিত উত্তেজনার বসে ভাইয়ারে কি কি বলে দিলাম এবার ভাইয়া আমার বারোটা বাজাবে নিশ্চিত। আমি ভয়ে ভয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আবাক হলাম।সে নিজেও হাসতে হাসতে বলে উঠে….
.
হায়াত তোর যে বিয়ের জন্যে মন আকুপাকু করতাছে বুঝতাম পারছি।আব্বু আসুক আজকে বলে পাএ ডাকতে বলমু আর তোরে কান ধরে দরজা দিয়া বেইরে ফালাই দিয়া আসমু মানে তোর জামাইয়ের ঘাড়ে দিয়া দিমু।
.
.
আমি ভাইয়ার দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম…….
.
🍁
.
ছাদের এক সাইডে রেলিং দেওয়া হয় নাই।আমিই আব্বুকে নিষেধ করেছি।ছাদের চারপাশ বন্ধ হলে ব্যাপারটা কেমন দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে।তাই আব্বুকে বলেছি ছাঁদের দক্ষিণের সাইড খোলা রাখতে।মাঝে মাঝেই আমি পা ঝুলিয়ে বসে বাতাস খাই।ভালোই লাগে।মন খারাপ হলেই আমি এখানে বসি ব্যাপারটা তেমন না মন ভালো থাকলেও বসি।বই পরার জন্যে একটা অসাধারণ জায়গার প্রয়োজন। আসলেই ব্যাপারটা সত্য।আমি ছাঁদে এই সাইডে বসেই বই পড়ি দিনে বা রাতে যখন মন আকুপাকু করে বইয়ের সাথে প্রেম করতে তখনই।আব্বু ছাদে বিশেষ লাইটের ব্যবস্থা করেছে যাতে আমার রাতে পড়তে কষ্ট না হয়।তবে আমি বোড বই পড়িনা ভালো লাগেনা। গল্পের বই ভালো লাগে।নতুন জীবন, নতুন লেখা,নতুনত্বের ঘ্রাণ পাওয়া যায় বইয়ে।আমি এখনো একটা বই নিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে বসে পড়ছি।রাস্তার আলো গুলো রাস্তার সাথে সাথে আমাদের ছাদেও পরছে।ঝিঝি পোকা পিনপিনে শব্দ করছে।আমি আরাম করে বসে বইয়ের এক এক পাতা উল্টাচ্ছি.. আমার অপর পাশে দিল মনের সুখে পা দুলাচ্ছে।কিন্তু আসলেই যে তার মনে সুখ আছে ব্যাপারটা সত্য নহে।তার মনে এখন বিরক্তি আর বিরক্তির বসবাস।বেচারির জান ফোনটাও অফ করে রেখেছে। সারফারাজ ভাইয়া কল দিতে দিতে ওর মাথা খারাপ করে ফেলেছে।আজ সে আমাদের বাসায় থাকবে বলে ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে হাজির।
.
এই তোর মনে হয় না আমার সত্যিই পালিয়ে যাওয়া উচিত..
.
না মনে হয় না।তুই বল আমার কিউট ভাইটার মাঝে কিসের কম আছে যে তোর এত এত ভয় করে ওনারে..
.
আমি মোটেও ওই ফারফারাজকে ভয় পাইনা।কিন্তু কেমন কেমন জানি লাগে তার সামনে গেলে..
.
কেমন কেমন মানে?? (ভ্রু কুঁচকে)
.
এই যেমন হার্টবিড ফার্স্ট হয়ে যায়..নিশ্বাস আটকে আসে..হাতপা ক্রমশ কাপাঁ কাপিঁ করে,আর মাঝে মাঝেত চোখ গুলোও প্রবলেম করে..
.
কেমন প্রবলেম..??
.
আরে কেমন কেমন যানি..অত সত বুঝিনা।পালামু কেমনে.ক…
.
আচ্ছা যদি থাকতে থাকতে বা উনারে দেখতে দেখতেই প্রেমে পড়ে যাচ তখন তো পস্তাইবি।আহারে কেন যে পালাইতে গেছি..ব্লা ব্লা..তার চাইতে বিয়া কইরা হালা..আমিও ভাইয়ারে জিজু বানাইয়া হেব্বি শপিং করমু..হু হা হা..
.
আমি মনের খুশিতে হাসছি দিল বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে।আমি ওর ফোন অন করে ওর পাশে রাখতেই তা কিং কিং করে বেজে উঠে..ও আমার দিকে রাগি লুক দিতেই আমি বইটা মুখে গুঁজে নি..পড়ার ভান করে আরাম করে পা তুলে ছাদের দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়ি..বান্ধু নামের এই বস্তু গুলার বিয়া খাওয়ার মজাই আলাদা।ওওপসস বিয়াত খাওয়া যায় না দাওয়াত খাওয়া যায়..হি!হি!মজাই মজা.. ইয়াহু….
.
.
রাত কয়টা বাজে জানিনা কিন্তু আমি প্রচণ্ড বিরক্ত নিজের কোচুর ফোনের উপড়..শালারে বালিশের নিচে রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু এত এত সাউন্ড করছে সাস্ট অসজ্জকর.. ঘুমের মত প্রান প্রিয় জিনিসের সাথে কম্পোমাইজ করা মানে যে কলিজার সাথে কম্পোমাইজ করা এটা কেন অপর পাশের শয়তান ব্যক্তি বুঝতে পারেনা কে যানে।আমি কয়েকবার কেটেঁ দেওয়ার পরেও বান্দা আমার কষ্ট বুঝতে নারাজ..আজব..আমি এবার এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে কেউ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে…..
.
আয়ু ফোন কাটাঁর মানে কি??তুমি যানো আমি কত টেনশনে ছিলাম..আর এত রাতে তুমি জেগে আছ কেন?? না ঘুমিয়ে কি কর??ফোন টিপ না..??
.
মোটেও না আপনি এমন একটা টাইমে কল দেওয়ার মানে কি?? আশ্চর্য মানুষত আপনি.. নিজে দিয়ে নিজেই কথা শুনাচ্ছেন। আমি কত সুন্দর ঘুম দিয়ে ছিলাম আর আপনি তা কত অনায়াসেই ভেঙে দিলেন।কেন বলেন ত??
.
সরি জানপাখি.. একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছে..একটুই বলবো..প্লিজজজ..
.
মানে কি??আপনি কি রাতের একটা বাজে আমাকে কল করেছেন প্রেম আলাপ করতে??
.
অবশ্যই না।নিজের বউয়ের সাথে প্রেম আলাপ করার মানে হয়??আমি ত ভালোবাসার আলাপ করতে কল করেছি..একটু বারান্দায় আসবে প্লিজজজজ
.
না পারবো না আমার ঘুম আসছে ঘুমাই প্লিজজ…
.
ঘুমাবে… ঘুমাও..আমি তাইলে চলে যাই…
.
চলে যাই মানে আপনি কোথায়??(অবাক হয়ে)
.
নিচে
.
কোন নিচে তোমাদের বাসার নিচে…
.
.
আমি এবার ফোন কানে রেখে এক প্রকার দৌড়ে ব্যালকুনিতে গিয়ে দেখি উনি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে..তাকে প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে মনে হয়।আমাকে দেখেই ঠোঁটে এক বিশাল হাসি টেনে হাত নাড়িয়ে বলে উঠে…..
.
আমার না খুব মন খারাপ আজ..তোমাকে না দেখলে ঘুম আসবে না তাই চলে এসেছি.. সরি বউ..ঘুম ভাঙাতে চায়নি তোমার রুমের লাইট জ্বালানো দেখে মনে করেছি তুমি জেগে আছ..আমি আগে জানলে নিজেই ব্যালকুনি বেয়ে উঠে তোমাকে দেখে যেতাম এত কষ্ট কখনো দিতাম না..
.
আপনার মন কেন খারাপ??আর এত ক্লান্ত কেন আপনি?? কিছু কি হয়েছে??
.
ক্লান্ত কারন আমি অফিসস থেকে এসে আর ফ্রেশ হয়নি…তাই এমন লাগছে..অনেক বড় কিছু হয়েছে..আমাদের কাজের মেয়েটা আছে না রূপা..
.
হুম কি হয়েছে ওর
.
ওর কিছু হয় নি কিন্তু ও আমার অনেক কিছু করেছে…ও তোমার একটা ছবি ভেঙে ফেলেছে।ওটা আমার খুব প্রিয় একটা ছবি ছিলল তাই মনটা খারাপ।যদিও ঘুম আসবে না তবুও শান্তি লাগছে তোমাকে দেখে।এবার রুমে গিয়ে ঘুমাও.. ওও আর একটা কথা কাল কি তুমি শাড়ি পড়বে…
.
জানি না কিন্তু কেন??
.
এ মনেতেই….চাঁদের আলোয় তোমায় খুব সুন্দর লাগছে।মনে হচ্ছে মুক্তা ঝড়ছে…বড্ড শীতল তোমার চাহনি..মন চায় ছুটে এসে একটু জড়িয়ে নি..আচ্ছা এখন আসলে কি তোমার বাবা কিছু বলবে??
.
এই কি বলছেন আপনি এত রাতে বাসায় আসবেন মানে কি তার চেয়ে আমি বরং আসি…
.
এই না না।তুমি এখানেই থাকো।আরো একটু দেখে চলে যাবো…
.
আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে ক্লান্ত চোখে দেখছে আমাকে। সামান্য ছবি ভেঙেছে বলে সে এত রাতে এখানে ছুটে চলে এলো…এতটা পাগলের মত ভালোবাসার মানে কি… ।অদ্ভুত ভালোবাসা।
.
হুম বড্ড অদ্ভুত কিন্তু কি করবো বল তুমিইত এটার জন্যে দায়ি।তোমাতে আমি আসক্ত বড্ড বাজে ভাবে আসক্ত।কিন্তু এই আসক্তি আমি কাটাতে চাইনা।সারা জীবন আমি তোমার এই আসক্তিতে ডুবে থাকতে চাই।
আমি তোমার প্রেমে পড়েছি.
এই প্রেম ভয়ঙ্কর
যা মনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত নিজ দখলে নিয়েছে।
যা কমার নয় শুধুই ক্রমশ বাড়ছে..
তোমার বিরহ আমার মনকে দহন যন্ত্রনায় কাতর করছে..
হ্যাঁ আমি পুড়ছি..
খুব করে পুড়ছি
জঘন্য ভাবে পুড়ছি…
তুমি হীনা আমি পুড়ে ছাই…..
তুমি হীনা আমি এক ডানা বিহিন প্রজাপতি..
তুমি হীনা জীবন আমার রং বিহিন কৃষ্ণচূড়া..
আমি তোমাতেই ডুবি সূর্যের দীপ্তির মত…
তুমিই আমার ওই চাঁদের আলো..
তুমি হীনা নিঃশ্ব আমি
পথ হারা পথিক যেমন..
তুমি রবে যতনে এ মনের কোটারে..
যেমন বন্ধি আমি তোমার কোমল হৃদয়ে…..
আমি তোমার সুপ্ত প্রেমেই থাকতে চাই..
লুকিয়ে যতনে রাখবে আমায় মনের জানালা বিহিন ঘরে…
আমি বরং তোমায় উড়ালচন্ডীর মত ভালোবাসবো
আমার সমুদ্রের মত হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে শুধু তুমিই থাকবে.
ভালোবাসি..গো প্রিয়সি
তোমার মলিন মুখ আমার আঁখি তে যেন কখনো না দেখি…
তোমার খিলখিল হাসি…
হৃদয় জুড়ে শুধু আসে ভালোবাসি………
.
.
#চলবে………..🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here