#তুমি_নামক_প্রাপ্তি(আরিশ😘আরু)
#part:2
#Suraiya_Aayat
5.
সকাল সকাল ছেলেকে নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রেডী হয়ে গেছে আরু, আজকে এই বাড়িতে ওদের শেষ দিন, বাড়ি ছেড়ে দেবে, ঘরটা একবার শেষবারের মতো চোখ বুলিয়ে নিয়ে তালা মেরে দিয়ে চাবিটার দিকে একবার নিষ্পলক ভাবে তাকালো ৷
আরশিয়ান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আদো আদো কন্ঠে বলল
‘ মামমাম আমলা কোতায় যাবো ?’
আরু ছেলের দিকে একটু তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
‘ জানিনা কোথায় যাচ্ছি, তবে আল্লাহ নিশ্চয়ই কোন না কোন একটা রাস্তা আমার জন্য ঠিকই খোলা রেখেছে আর আমরা সেদিকেই যাব ৷’
মায়ের এমন জটিল কথা যেন আরশিয়ানের সরল মস্তিষ্কে গেল না, তাই অন্যথায় চুপ করে থাকলো, আরশিয়ান মনে করে তার মা সুপারওম্যান , তার মা যা করে তাই ভালো হয় ৷
হাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে আরু আশিয়ানকে ওর হাত ধরতে বললে আরশিয়ান আরুর হাত ধরলো, দুজনে নীচে নেমে রিসিপশনিস্টে থাকা আবির নামের ছেলেটার কাছে গিয়ে চাবিটা দিতেই আবির মৃদু স্বরে বলে উঠলো
‘ আজকেই চলে যাচ্ছেন? এখানে কি আপনার কোন সমস্যা হচ্ছিল?’
আরু মুচকি হেসে বলল
‘ সময়ের সাথে সাথে খানিকটা হাওয়াবদলের ও প্রয়োজন আছে তাহলে মনটাও তরতাজা হয় , সেজন্যই আরকি ! আর এ শহর যেন আমার জন্য বিষাক্ত, কোন কিছুতেই যেন আর ভালো থাকাটা হয়ে উঠছে না, আমি চাইনা সেই বিষ আমার ছেলে অবধি আসুক ৷ আমরা আসি তাহলে, ভালো থাকবেন ৷ আপনার মত একজন বন্ধুকে এই অসময়ে পাশে পেয়ে খুবই ভালো লেগেছে, সময় অসময়ে আপনি পাশে থেকেছেন ,ধন্যবাদ বললেও তা কম হবে ৷’
আবির আরুর কথার পরিবর্তে মুচকি হাসলো , কিছু বলল না ৷ বারবার বলতে ইচ্ছা করছে যে আরু এখান থেকে কোথায় যাচ্ছে তা জানার ইচ্ছেটা প্রবল আবিরের মাঝে, তাহলে পরবর্তীকালে আবির আরুর সঙ্গে দেখা করে আসতে পারবে ৷ অনেকটা সময় ধরে কিন্তু কিন্তু মনোভাব নিয়ে আবির বলেই ফেলল
‘ আচ্ছা আপনার নতুন এড্রেস টা বলতে পারবেন ? না মানে আমি বলতে চাইছি যে যদি কখনো আপনাদের অসময়ে আপনাদের কোন সাহায্য লাগি, পাশে থাকতে পারি সেজন্য আর কি !’
আরু মুচকি হেসে বলল
‘ আমরা কোথায় যাবো তা আমি নিজেও জানিনা ! আসি ভাইয়া !’
বলে আরশিয়ানকে নিয়ে রাস্তার দিকে হাটা দিলো আরু ৷
আরুর কথা শুনে আবির বেশ অবাক হল ৷ একটা মেয়ে হুট করে কোথায় চলে যাচ্ছে কোন বিপদ-আপদ হয় নাকি তা নিয়ে আবিরের মুখে চিন্তার ছাপ ৷
আবির নিষ্পলক ভাবে মা আর ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে, কতোটা সাহসী আর কতোটা মনের জোর তাদের, জীবনের সংগ্রামে কাউকে পাশে পেতে চাইনি, তপ্ত রোদের মাঝখানে গরম পিছচের রাস্তার উপর মা আর ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে , আবিরের যতদূর জানা মতে আরু অত্যন্ত সাহসী একজন মহিলা, সকলের সামনে নিজেকে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে পরিচয় দিতেও দ্বিধাবোধ করে না কখনো, এই পাঁচটা বছর কিভাবে আরু নিজের জীবনের সাথে কিভাবে যুদ্ধ করেছে আবির সেটা না জানলেও কল্পনা করতে পারে ৷
6.
রণচন্ডী রূপ ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে আরু সকলের মাঝে ৷ সমাজের নারীদের প্রতি হওয়া ব্যভিচার থেকে সকলকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই হয়ত ওর আবির্ভাব ৷ সকলে আর ওদিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে ৷
আরুর চুল গুলো উস্কখুস্ক ,শাড়ির আঁচলটাও মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে ৷
দ্রুত পায়ে সকলের মাঝখানে ফ্লোরে পড়ে থাকা মানুষটার কাছে গিয়ে তার শার্টের কলার ধরে তুলে দুটো সপাটে থাপ্পর মেরে উঠল, জোরে হুংকার দিয়ে সকলকে উদ্দেশ্যে করে বলল’
‘ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছেন? এখানে পুলিশকে কল করতে পারছেন না নাকি ! এই সমস্ত রঙ্গ-তামাশা দেখেই তো আপনারা ভালোবাসেন, সমাজে যখন একটা নারীকে অপমান করা হয় তখন তো আপনারা সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে দৃশ্যটাই তো বেশি উপভোগ করেন ৷ বেশি তাইতো আজ আমাদের এই সমাজে এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ৷ আপনারা কল করবেন নাকি আরো তমাশা দেখবেন কোনটা? আরু ওর সামনে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল’
‘কি হলো লারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেন ? ফোনটা করতে পারছো না ! নাকি তোমার ভয় লাগছে কোনটা যে ফোন করলেই বুঝি জবটা না চলে যায় !’
আরুর ধমক শুনে লারা কাঁপা কাঁপা হাতে তাড়াতাড়ি পুলিশের কাছে ফোন করলো আর বলল যেন সেখানে তাড়াতাড়ি আসে ৷
লোকটার আরুর সামনে হাত জোড় করে কাকুতি-মিনতি করে বলল
‘ প্লিজ আমাকে এবারের মত ছেড়ে দিন, এমন ভুলটা আর কখনো হবে না !’
কথাটা আরুর কানে যাওয়ার সাথে সাথেই আরু সপাটে আরেকবার একটা গালে চড় মারতেই উনার মাথাটা যেন মন ভন করে উঠলো ৷
‘ এই সমস্ত কথা তখন মনে ছিল না যখন আপনি বাজে ভাবে আমার শরীরটাকে চাট করছিলেন, খারাপ নজরে আমাকে দেখেছিলেন, আমাকে একান্তে প্রমোশনের লোভ দেখিয়ে আমার শরীরটাকে ভোগ করতে চেয়েছিলেন , আর এখন কি মনে করেছেন যে আপনাকে আমি ছেড়ে দেবো ? কখনো না ! না জানি অফিসের আর কত স্টাফের সাথে এমন করেছেন ৷’
আরু এমন বলার সাথে সাথেই শেফালী নামের একটা মেয়ে হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে আচমকা বলে উঠলো
‘ বিগত তিন মাস ধরে আমার সাথে উনি এমন টা করৈ চলেছেন, আমি প্রতিবাদ করতে গেলেই উনি আমার জব সহ আমার পরিবারের কে পথে নামানোর হুমকি দিয়েছেন , সেই জন্য আমি কখনো কাউকে কিছু বলতে পারিনি , কিন্তু তুমি যখন আজ প্রতিবাদ করলে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না ৷’
আরু এবার লোকটাকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে শেফালির হাত ধরে টেনে নিয়ে লোকটার সামনে দাঁড় করিয়ে বলল
‘ নাও এবার নিজের মনের সকল রাগ ঝেড়ে ফেলো, তোমার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করো ৷ পায়ের জুতো খুলে ওনার মুখে মারো, সমাজে এমন মানুষের বাচার অধিকার নেই যারা নারী পুরুষ নির্বিশেষে কাউকেই সম্মান দিতে জানে না ৷’
শেফালী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ,ও আরুর মতো অতো সাহসী নয় , তাই জন্য হয়তো আজ ও ওর হাতটা উঠাতে পারছেনা ৷
শেফালী কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না দেখে আরু জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো
‘কিছু করছো না কেন, ভয় লাগছে তোমার জব চলে যায় কি ! আচ্ছা দাঁড়াও তোমার হিসাব নিকাশ টা আমি বুঝে নিই বলে লোকটার গালে সপাটে আরু দুটো চড় মারলো, আরু যেন নিজের রাগটাকে শান্ত করার আপ্রান চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, সমাজে যারা এই সমস্ত মেয়েদের সাথে ব্যভিচার করে আর তাদেরকে একদম সহ্য করে না আরু ৷
লোকটা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে,ওনার গালদুটো রক্তবর্ণ হয়ে গেছে আরুর হাতে চড় খেয়ে ৷আজ ওনার কুকীর্তি সকলের সামনে ফাঁস হয়ে গেল ৷
আরু এবার জোরে হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠল
‘ কাল আমার ছেলের স্কুলের প্রিন্সিপাল এমনটা করেছিলেন আর আজ আপনিও, আমি আপনাকে যদি জেলের ভাত না খাইয়েছি ও আমিও মিসেস আরিশ খান নই ৷( মানুষটা কাছে না থকলেও আজও আরিশের নামটা নিজের নামের পরিবর্তে বলতেই আরু বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করে )
সমাজে মেয়েদেরকে আপনি মানুষ বলে মনে করেন না, তাই না আপনার এই মনোভাবটা আগে দূর করা দরকার ৷
ওদের এমন কথায় কথায় পুলিশ আসলো এসে অফিসের বস কে ধরে নিয়ে গেল ৷
সবাই আরুর এমন কাজে আরুর দিকে নিষ্ঠার সঙ্গে তাকিয়ে আছে, আরুর সাহসিকতার সত্যিই কোন তুলনা হয়না , মেয়েটা একটা বিজয়ী ৷ জীবনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে নিজেকে শক্ত পাথরের মত বানিয়ে নিয়েছে ৷ আরু সকলের এসমস্ত প্রসংশার মুখাপেক্ষী না হয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল,ওর মনটা আনচান করছে ওর ছেলের জন্য , ছেলেটাকে এক মুহূর্তের জন্যও ছেড়ে শান্তিতে থাকতে পারে না , শুধু মনে হয় এই বুঝি আরশিয়ান ও তার পাপার মতো আচমকাই হারিয়ে গেলো ৷আরশিয়ানের কিছু হয়ে গেলে আরু আর বাঁচবে না ৷
7.
আরো হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে অঝোর ধারায়, আজ প্রিয় মানুষটাকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে ওর তবে মানুষটাকে আলতো করে হাত দিয়েছে ছুয়ে বলতে পারিনি যে
‘ ভালবাসি আপনাকে ! কেন আপনার আর আমার মাঝে এই দূরত্ব ! কেন আপনি আর আমি এত দূরে ?কেন আরশিয়ান আজ আপনাকে বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত? কেন আপনি আমাদেরকে ছেড়ে এতোটা দুরে সরে গেলেন? আমার তীক্ততাময় অতীতটাকে আপনি কি একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আমাকে নিজের করে রাখতে পারেননি? ভালোবাসার তুলনায় কি অভিমানের পাল্লাটা সেদিন বেশি ভারী ছিলো?’
কয়েক ঘন্টা আগের কথা,,,
আরু আরশিয়ানের হাত ধরে রাস্তার ধারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে তখনই হঠাৎ ওর ফোনে ফোন আসতেই আরু ফোনটা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফোনটা ধরলো ৷ এই মুহূর্তে এত কাঠফাটা গরমে তার মধ্যে রাস্তায় জ্যাম এর মাঝখানে ফোনটা ধরার কোনো ভাবেই কোনো রকম কোনো ইচ্ছা নেই,
ফোনটা বার করতেই আতিফ sir পাশে বস নামটা ভেসে উঠতেই আরু চরম বিরক্ত হল, মানুষটাকে দেখে সুবিধার মনে হয় না ওর ৷ ওর দিকে খুব খারাপ দৃষ্টিতে তাকায়, তবুও ওর না চাইতেও আরু ফোনটা কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে উনি বলে উঠলেন
‘ আরুশি তোমার জন্য একটা গুডনিউজ আছে৷’
কথাটা শুনে আরুর জোড়া কুঁচকে গেল, তবু খানিকটা সন্দেহের সুরে বলল
‘ কিসের গুডনিউজ sir?’
‘ আমি ঠিক করেছি আমি তোমাকে প্রমোশন দেব কিন্তু তার জন্য এই মুহূর্তে তোমাকে যে অফিসে আসতে হবে ডিয়ার ৷’
আরুর অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল প্রমোশন পাওয়ার, তাতে টাকার পরিমানটা বাড়বে তাতে বাড়ি ভাড়া দিয়ে সবকিছু ভালোভাবে ম্যানেজ করা যাবে , তাছাড়া আরশিয়ানকে এখন নতুন স্কুলে ভর্তি করাতে হবে আর সেখানে আলাদা একটা খরচ সেই কথাটা শুনে আরু ওর বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথাটা মাথায় নিল না, আর উনার কথায় সায় দিয়ে
‘ বলল আচ্ছা স্যার আমি আসছি ৷’
আরশিয়ানকে আবিরের কাছে ক্ষণিকের জন্য রেখে দিয়ে আরু অফিসে এল ৷ আসার সময় আবিরকে বার বার বলেছে যেন আরশিয়ানকে কোথাও যেতে না দেয় ,খেয়াল রাখে , ছেলেটাকে নিয়ে সারাদিন চিন্তায় চিন্তায় থাকে আরু ৷
অফিসের বসের রুমের ভিতর চেয়ারে বসে আছে আরু অনেকক্ষণ ধরে উনি কিছু বলছেন না দেখে আরু চুপ করে আছে ৷ হঠাৎ করে উনি ওনার চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতটা আরুর কাধে রেখে বললেন
‘ তোমার প্রমোশন চায় তাই না ? ঠিক আছে প্রমোশন দেবো তবে একটা শর্তে , তুমি যদি আমার সাথে ,,,,,,
উনার স্পর্শে যেন আরুর সারা শরীর ঘিনঘিন করে উঠলো , আরিশ ওর জীবনের প্রথম ব্যক্তি যে ওকে ভালোবাসার সাথে স্পর্শ করেছে , আর এই লোকটা আজ সেই শরীরের নোংরা হাত বসিয়েছে ৷ আরু বোঝা হয়ে গেছে যে উনি কি বলতে চান তাই আর কিছু বলার অপেক্ষা না রেখে সঙ্গে সঙ্গে উঠে নিজের কাধ থেকে হাতটা সরিয়ে দিয়ে ঠাস করে দুই গালে দুটো চড় মারতেই উনি অবাক হয়ে বলল
‘ তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাকে চড় মারো, তুমি কি জানো এর জন্য তোমার আমি কি হাল করতে পারি ৷’
উনার এই কথাটা বলা মাত্রই আরু সপাটে আরেকটা চড় মেরে দিয়ে উনার জামার কলার ধরে টানতে টানতে অফিসের মাঝখানে নিয়ে ফের ধাক্কা মেরে ফেলে দিল ,তারপরে সমস্ত কিছু ঘটলো ৷
ফেরার পথে আরূ দ্রুত পায়ে হাটছে, ওর ফ্ল্যাট থেকে অফিসের দূরত্ব মাত্র কুড়ি মিনিটের তাই হেটেই অফিসে যাই, দ্রুত হাঁটতে দেখল রাস্তার মাঝখানে একটা কালো রঙের গাড়ি দাড়িয়ে রয়েছে আর গাড়ি থেকে সিগারেটের ধোঁয়া বের হচ্ছে ,গাড়ির ভিতরে লোকটা স্মোক করছে তা দেখেই. বোঝা যাচ্ছে, আরু দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো
‘ এই সমস্ত মানুষরা কেন বোঝেনা যে নিজের জীবনটা অনেক দামী ৷’
কথাটা বলে গাড়ির লুকিং গ্লাসের দিকে চোখ পড়তেই দেখল তার নিজের প্রিয় মানুষকে,আরিশ smok করছে , সেই আগের মতোই গঠন আকৃতি চেহারার কোন পরিবর্তন হয়নি ৷ সিগারেটটা বেশ খানিকটা থাকতে থাকতেই সিগারেটটা ফেলে দিয়ে আরিস্ গাড়ি নিয়ে চলে গেল ৷ আরিশ কে দেখার কিছুক্ষণ আরু যেন নিস্তব্ধ আর বাকরুদ্ধ হয়ে গেল , মানুষটাকে এতদিন পর দেখল ও কিন্তু মানুষটাকে একবারও ডাকতে পারল না ৷ মানুষটা এই শহরেই আছে কিন্তু ওর সাথে একবার যোগাযোগ করেনি , কখনো যাতনে চাইনি যে কেমন আছে , আজ মানুষটা ওর কাছে নেই , ক্ষণিকের দূরত্বের জন্য মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে তাঁর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে পারল না আরু, প্রকাশ করতে পারলো না ওর কথাগুলো ৷
এগুলো ভেবে আরু অঝোরে কাঁদছে তখনই হঠাৎ করে আরশিয়ান ছুটে এসে আরুকে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ও মামমাম তুমি কাঁদতো কেন? তুমি এমন করে কাদলে আমাল কষ্ট খুব হয় যে !’
আরু আরশিয়ানকে ওর বুকের সাথে জাপটে ধরে বলল
‘ তোমার মামামাম খুব খারাপ আরশিয়ান , তাই জন্যই তো তোমার পাপা তোমার মামমামকে আর তোমাকে ভালোবাসে না, সবসময় দূরে দূরে থাকে ৷’
বলে আবার কাদতৈ লাগলো ৷
ধরে কাঁদতে লাগলো ৷
‘ তুমি কেঁদোনা ,পাপা আসলে আমি খুব বকা দেবো কিন্ত তুমি কেদোনা ৷’
বলে দুজনেই কাদতে লাগলো ৷
8.
__” তোমাকে হারানোর ব্যাথাটা বড্ড কষ্ট দেই আরুপাখি ! আমিও আর পারছিনা, আবরার আরিশ খান ও আর পারছেনা তার আরুপাখিকে ছেড়ে থাকতে ৷ খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আর আমার চ্যাম্পকে নিজের করে নেবো শুধু নিজের ওপর একটু বিশ্বাস রেখো ৷’
কথাটা বলে আরিশ গিটারটা বাজিয়ে সুর মেশালো
‘ তুমি বুঝোনি আমি বলিনি
তুমি স্বপ্নতে কেন আসোনি
আমার অভিমান তোমাকে ঘিরে
সব গেয়েছি
কানে কানে সুরে সুরে
কতো কথা বলেছি তোমাকে
তুমি বুঝোনি, বুঝোনি !’
#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:3
#Suraiya_Aayat
9.
রাতে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে নিয়ে কোনোরকম ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল আরু , ও নিজে কিছু খাইনি তার সাথে আরশিয়ান ও কিছু খাইনি , তার দাবি তার তার নাকি খিদে পাইনি ৷ আরশিয়ানের কথার পরিবর্তে আরশিয়ানকে একটা রাগী কন্ঠে বলতেই আরশিয়ান বলল
‘ তার মাম্মামের খিদে না পেলে নাকি তারও খিদে পায়না ৷’ কথাটা বলে আরুর কোলে মাথা রেখে আরশিয়ান ঘুমিয়ে পড়েলো , জোর করেও ছেলেটাকে খাওৎঅতে পারলো না ৷
সকালে আরূর ঘুম ভাঙতেই মনে পড়ে গেল যে আশিয়ান রাতে কিছু খাইনি ৷ কোলে মাথারত আরশিয়ানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরু, ছেলেটা কত বোঝে আরুর কষ্টটা সেটা ভাবলেই আরু অবাক হয়ে যাই ৷
আরু আরশিয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল ‘সেদিন যদি একটি বারের জন্য হলেও আপনার হাত ধরে আটকাতে পারতাম তাহলে হয়তো আজকে আমাদের এতটা কষ্ট পেতে হতো না ৷’
একটা ত্রিকোন প্রেমের সম্পর্ক যেম
জীবনটাকে এতোটা কষ্ট দিতে পারে তা আমি জানাতাম না ৷
যেখানে সামিল ছিলো আরিশ , আরু আর ইলমাজ নামক মানুষটি ৷
(ইলমাজ আরুর প্রাক্তন প্রেমিক ৷ আপাতত এটুকু জানুন বাকিটার সত্যতা ধীরে ধীরে উৎঘাটিত হবে )
আরশিয়ান এর জন্য ওভেনে ডিমের পোচটা বসিয়ে দিয়ে আরু কিছু একটা ভেবে হঠাৎ ব্যালকনিতে গেল তারপরে হতাশ হয়ে আবার কিচেনে ফিরে এলো ৷ কালকের সেই কালো গাড়িতে বসে থাকা মানুষটা ছিল হুবহু আরআশের মতো, আর ওর নিচের ফ্লোরে যে মানুষটা সেদিন গিটার হাতে বসেছিল তাকে পিছন থেকে দেখতেও অনেকটা আরিশের মতই, তাই দুটি মানুষের মধ্যে এমন হুবহু মিল থাকায় আরু দেখতে গিয়েছিল ব্যালকনিতে যে কেউ আছে কি, কিন্তু ব্যালকনিতে কেউ নেই, তাই আরুকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হলো ৷
আরশিয়ান এর জন্য ডিমের পোচ আর ব্রেড রেডি করে ডাইনিং টেবিলের উপর রাখতেই চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে তাকিয়ে দেখে নিল আরু, জিনিসপত্র সব গুছিয়ে নিয়েছিল , এখনো কোনো কিছুই আবার নতুন করে সাজানো হয়নি, পুনরায় আবার গোছাতে হবে, যে শহর আরু একবার তার প্রিয় মানুষের আভাস পেয়েছে সেখান থেকে প্রিয় মানুষটাকে খুঁজে না পেয়ে আরু কোথাও যাবে না ৷
আরুর এই 5 বছরের দীর্ঘ জীবনটা কত অগোছালো কতটা কষ্টে পার করেছে আরশিয়ান কে নিয়ে ,আর কিভাবে সমাজের প্রত্যেকটা মানুষকে ভুল প্রমাণ করে নিজেকে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেটা আরু নিজে খুব ভালো করেই জানে, এখন আর আগের মতো আরিশের ভালোবাসার পরশ নেওয়া হয়না,আরিশকে দুবাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরা হয় না ,নানান ধরনের আবেগমাখা কথা বলে তাকে আবেগে আপ্লুত করে দেওয়া হয় না , মানুষটার হাতে হাত রেখে কতদিন পথ চলা হয়না, হয়তো যেদিন আরিশ ফিরে আসবে সেদিন অভিযোগের বন্যায় ভাসিয়ে দেবে আরিশ ,নিজেকে লুটিয়ে দেবে আরিশের বুকে ৷
10.
একটা সিএনজিতে বসে আছে আরু আর আরশিয়ান দুজনেই ৷ কিছুক্ষন আগেই আরুর বাবা আরুকে ফোন করে তার বাড়িতে দ্রুত যাওয়ার কথা জানাতেই আরু প্রথমে যাবেনা বলে কিন্তু কিন্তু করলেও পরে তিনি বলেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য তিনি নাকি আরুকে ডেকেছেন সেই জন্যই ৷ খুব একটা দরকার ছাড়া আরু ওর বাপের বাড়িতে যায় না, নিজের মানুষের মায়া ত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছে অনেকদিন আগেই, এখন আর খুব একটা কষ্ট হয় না তাদেরকে ছেড়ে থাকতে ৷
ছোট্ট আরশিয়ান আরুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি করে তাকাতেই আরূ আরশিয়ানকে জিজ্ঞাসা করে উঠলো ‘ ‘আমার চকলেট বয়টা কি আমাকে কিছু বলবে?’
‘ মাম্মাম কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
‘আমারা তো নানুর বাসায় যাচ্ছি ৷’
‘ নানু আমাকে খুব ভালবাসে তাই না?’
আরু আরশিয়ানের দিকে একটা মুচকি হেসে বলল ‘সবাই তোমাকে ভালবাসে, শুধু তোমার পাপা ছাড়া, সে তোমাকে ভালবাসলে একদিন তোমাকে ছেড়ে দূরে সরে থাকতে পারত না ৷’
আরশিয়ান তার মায়ের মুখে কষ্টের ছাপ বুঝতে পেরে বলল
‘ তুমি কষ্ট পেয়ো না,পাপা একদিন ঠিক ফিরে আসবে সেদিন তোমার আশিয়ান তার পাপাকে অনেক বকে দিবে ৷’
আরশিয়ানের এমন আবেগমাখা কথা শুনে আরু ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো,সেই যে আরুর বেঁচে থাকার সম্বল ৷
11.
‘ কতবার বলেছিনা তুমি আমাকে এসব কথা বলবেনা , আর তাছাড়া এমন তো না যে আমি টাকায় বসে বসে খাচ্ছি , আমি নিজেকে যেমন single mother বরে পরিচয় দিতে পারি তেমনি আমি একজন কর্মীজিবী,নিজে উপার্জন করি তাই আমার নিজের জীবনের সব ছোট বড়ো সব সিদ্ধান্ত আমার, তাই আমার ব্যাপারে কোন কথা বলার অধিকার আমি তোমাদেরকে দিইনি ৷'( আরু উচ্চস্বরে )
‘ তুই কি আরশিয়ানের চিন্তা করছিস? তাই যদি হয় তাহলে এটা কোন ভাবার বিষয় আরশিয়ান আমাদের সাথে থাকবে , যতই হোক ও আমাদেরই একজন!’
কথাটা শুনে ছোট্ট আরশিয়ান তার মায়ের আঁচল খামছে ধরলো ভয়ে, ওর মা ওর প্রান , মা কে ছাড়া থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয় ৷
আরুর মাথায় যেন আগুন চড়ে গেল ৷ আরিশ ছাড়া ও ওর জীবনে কোন দ্বিতীয় পুরুষের কথা ভাবেনি আর সেখানে ওর বাবা ওর 2য় বিয়ের কথ বলছে তাও আবার কার সাথে তার প্রাক্তন প্রেমিক ইলমাজের সাথে ৷ আবার তার ওপর তার জীবনের অংশ আরশিয়ানকে ওর থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ৷
আরু এবার হুংকার দিয়ে বলল
‘ একদম চুপ ! আর একটাও কথা না, আর একটাও কথা বললে এখানে আমি রক্তের বন্যা বইয়ে দেবো ৷ আর একটাও কথা না ৷ আরশিয়ান আমার জীবন, আরশিয়ান আমার কলিজার টুকরা,ওকে আমার থেকে দূরে সরানোর কথা যে ভাববে তাকে দুনিয়া থেকে সরানোর দায়িত্ব আমি নিয়ে নেব ৷ আরশিয়ান আমার জান, কেও ওকে দূরে সরানোর কথা ভাবলে তার অন্তিম সময় ঘনিয়ে আসবে ৷ (আরশিয়ানকে জাপটে ধরে)
আরুর চোখে জলের সাথে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে ৷ ছোট্ট আরশিয়ান ভয়ে আরুর কোমর জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো ৷
আরু ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
‘ আম্মু আমি আসছি ৷ আর এই অমানবিক মানুষটাকে বলো যেন আমার আর আমার ছেলের জীবন থেকে দূরে থাকে অন্যথায় আমার হাতে প্র হারাবে ৷’
কথাটা বলে আরু আরশিয়ানকে কোলে করে নিয়ে যেতেই আরুর বাবা বলে উঠলো
‘ আমিও দেখবো একা একটা মেয়ে মানুষের তেজ কতোদূর যাই !’
আরু একটা তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলল
‘ অযথা নিজেকে ধ্বংস করতে এসো না , ভষ্ম হয়ে যাবে !’
কথাটা বলে আরশিয়ানকে নিয়ে চলে গেল ৷
ছোট্ট আরশিয়ান আরুর গলা জড়িয়ে ধরে আছে, আর আরূ ওকে জাপটে কোলে ধরে আছে ৷
রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে আরু ছেলেকে কোলে নিয়ে আর চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, সামনের রাস্তাটা ক্রমশ ঝাপশা হয়ে আসছে ৷ না পেরে চোখের পলক ঝপকাতেই টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল, এবার লক্ষ স্পষ্ট ৷ ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে ওর জীবন সংগ্রাম তা যে সহজ নই তা আরু বুঝতে পারলো আজ ৷ এতদিন বাইরের মানুষের কাছ থেকে অপদস্থ হয়েছে আজ তার নিজের মানুষ, নিজের বাবা এমনটা করলো ৷ আর কারোর প্রতি আরুর বিশ্বাস নেই ,এ সমাজ ওকে ভালোভাবে বাচতে দেবে না ৷এখন একটাই অপেক্ষা তা কেবল আরিশের ৷ আদেও কি সে কখনো ফিরবে নাকি অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে একদিন ও শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে ৷
………..
সারাটা রাস্তা আরু হেটেই এসেছে, এতোটা পথ আরশিয়ানকে কোলে করে আনতে আনতে আরশিয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে ৷
আরু গেট দিয়ে ঢুকতেই আবির বলে উঠলো
‘ কোথায় গিয়েছিলে ? আর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? অনেকটা পথ কি হেটেই এসেছো?’
আরু ক্লান্ত , আবিরের করা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার শক্তিটুকু ওর মাঝে নেই ৷
অবুও ভদ্রতার খাতিরে সব প্রশ্নের উত্তর একেবারে দিয়ে বলল
‘ হমম ৷’
কথাটা বলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই আরুর চোখে পড়ল সেই কালো গাড়িটা যেখানে ও আরিশের মতো একজনকে দেখেছিলো ৷
আরুর শরীর কাপছে , এজানা এক প্রাপ্তি খুজে
পেল ৷ তাড়াতাড়ি করে কম্পিত কন্ঠে আবিরকে বলল
‘ ওইই ওইইই কালো গাড়িটা কার?’
আবির আরুর কথায়া খানিকটা অবাক হয়ে বলল
‘ ওটা তো তিতাশ বলে একজনের ,নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে ৷ কেন?’
‘ আপনি সিওর ওটা তিতাশ? উনার নাম কি আরিশ না?’
‘ না না, ওনার নাম তিতাশ ৷’
‘ আপনি একটু ভেবে বলেন না, আরিশ কিনা !’
‘ নাহ তিতাশ ৷’
এটাহতে পারে না , উনি আরিশ ৷ উনি আমার আরিশ ৷ কথাটা বলে আরু আরশিয়ানকে দিয়ে দৌড়াতে লাগলো ৷ প্রিয় মানুষের খোজ ও পেয়ে গেছে !
#চলবে,,,,
বাসায় অনেক মেহমান এসেছে তাই ছোট করে লিখলাম , আর পরের পর্বে ধামাকা আছে ৷ আপনাদের কতোটা ভালো লাগছে জানি না, তবে আমি এমন একটা গল্প লিখতে পেরে আমি খুশি ৷
Suraiya Aayat
#চলবে,,,,,
কেমন লাগছে গল্প?😕ভালো না লাগলে তাড়াতাড়ি শেষ করে দেবো ৷